আরাফাত কবির
‘এ শহর না আমায় ধারণ করতে পারবে, না পারবে উপেক্ষা করতে’, কৌস্তভ বকশীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের শহর কলকাতা সম্পর্কে এভাবেই বলেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। সময়ের সবচেয়ে সাহসী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। এ জন্য তাঁকে মূল্য দিতে হয়েছে অনেক বেশি। প্রথার বাইরে যাপন এবং নির্মাণ করতে গিয়ে লড়তে হয়েছে অবিরাম। ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুর ৯ বছর পেরিয়ে এসে দেখা যাচ্ছে, তাঁর কথাই সত্যি হয়েছে। কলকাতা শহর, এমনকি সমগ্র বাংলাভাষী অঞ্চল তাঁকে ফেলে দিতে পারেনি; বরং সময়ের সঙ্গে তাঁর চলচ্চিত্রের এবং নিজের—দুটোরই কদর বেড়েছে।
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নির্মাতাদের অন্যতম ঋতুপর্ণ ঘোষকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ—‘ঋতুপর্ণ ঘোষ: চলচ্চিত্র, জীবন ও সাক্ষাৎকার’। তরুণ গবেষক নাফিস সাদিকের লেখা এ বইটিতে রয়েছে ঋতুপর্ণ ঘোষের নির্বাচিত কয়েকটি চলচ্চিত্রের বিশ্লেষণ, তাঁর জীবন, অভিনয়, উপস্থাপনা ও পত্রিকা সম্পাদনা নিয়ে আলোচনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার।
১৯৯২ সালে শিশুতোষ ছবি ‘হীরের আংটি’র মাধ্যমে চলচ্চিত্রজগতে পা রেখেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত ২১ বছরে তিনি নির্মাণ করেছেন মোট ২০টি চলচ্চিত্র। জীবদ্দশায় মোট ১৩ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, বাংলা ও মৈথিলী ভাষায় লিখেছেন অনন্য সব গান, উপস্থাপনা করেছেন দুটি তুমুল জনপ্রিয় আলাপচারিতার অনুষ্ঠানের। ঋতুপর্ণ ঘোষ ও সৃষ্টিজগৎকে লেখক গভীরভাবে বুঝতে চেয়েছেন এ বইয়ে। শুরুতে বইয়ের ভূমিকায় অল্প কথায় তুলে ধরেছেন বইটি লেখার পেছনে তাঁর অনুপ্রেরণা, পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত থেকে বই প্রকাশে দীর্ঘ যাত্রা এবং সহজ অথচ গভীর আলোচনার দিকে পাঠককে ধাবিত করার প্রয়াসের কথা।
‘ঋতুর উনপঞ্চাশ বছর’ শিরোনামে প্রথম অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে ঋতুপর্ণ ঘোষের জীবনের রূপরেখা। তাঁর ছবির কেন্দ্রবিন্দু ও জনপ্রিয়তার উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে লেখক যথার্থই লিখেছেন, ‘ঘটনার ঘনঘটায় নয়; বরং অনুভবের গভীরতায় প্রবেশ করার প্রবল শক্তি ছিল তাঁর। এ জন্য সময়ের সঙ্গে একটি স্বতন্ত্র দর্শকশ্রেণি তৈরির পাশাপাশি মধ্যবিত্ত বাঙালির হৃদয়ে আলাদাভাবে প্রভাব রেখে গেছেন তিনি।’ এখানে শৈশব থেকে শুরু করে ঋতুপর্ণ ঘোষের বেড়ে ওঠা, মহাভারত ও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নিবিড় সখ্য, চলচ্চিত্রজগতে পদার্পণ, সময়ের সঙ্গে তাঁর ছবির বিষয় ও নির্মাণ-আঙ্গিকের বিবর্তন এবং শেষ জীবনে তাঁকে ঘিরে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, সেই দিকগুলো চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এরপর ‘ঋতুর চলচ্চিত্র’ অংশে ঋতুপর্ণ ঘোষের নির্বাচিত সাতটি চলচ্চিত্র নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন লেখক। এই আলোচনাগুলোয় সেই ছবি নির্মাণের ইতিহাস থেকে শুরু করে ছবির অন্তর্গত রূপকসহ প্রতিটি বিষয় এমন সুনিপুণভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রে ছবিগুলো আবার নতুন চোখে দেখার সুযোগ তৈরি হয়। ঋতুপর্ণ ঘোষের বাকি ১৩টি ছবি নিয়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনা রয়েছে এ অংশের শেষে। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়াও তিনি আরও যেসব কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেমন অভিনয়, উপস্থাপনা, তথ্যচিত্র নির্মাণ, পত্রিকা সম্পাদনা এবং তাঁর অনন্য আত্মজৈবনিক গদ্য ‘ফার্স্ট পার্সন’ নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে পরের অংশে।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, বাংলা ভাষায় ঋতুপর্ণ ঘোষকে নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ এটি। তাঁর সব সৃষ্টির একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বিন্যাস এখানে দিতে চেয়েছেন লেখক। শ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে বইজুড়ে লেখক যে কাজটা করতে চেয়েছেন, তা অনেকাংশেই সফল হয়েছে বলে মনে করি। কিছু তাত্ত্বিক আলোচনা কারও কারও কাছে কঠিন মনে হলেও সর্বোপরি যেকোনো চলচ্চিত্রপ্রেমী পাঠকের কাছে বইটি উপভোগ্য হবে। প্রথম বই হলেও লেখকের যে একনিষ্ঠতা ও পরিপক্বতার স্বাক্ষর এখানে পাওয়া যায়, তা আলাদা মুগ্ধতা জাগায়। দুই বাংলাতেই ঋতুপর্ণ ঘোষকে ঘিরে চর্চার ক্ষেত্রে এটি একটি আকর গ্রন্থ হবে বলে ধারণা করি।
‘এ শহর না আমায় ধারণ করতে পারবে, না পারবে উপেক্ষা করতে’, কৌস্তভ বকশীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের শহর কলকাতা সম্পর্কে এভাবেই বলেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। সময়ের সবচেয়ে সাহসী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। এ জন্য তাঁকে মূল্য দিতে হয়েছে অনেক বেশি। প্রথার বাইরে যাপন এবং নির্মাণ করতে গিয়ে লড়তে হয়েছে অবিরাম। ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুর ৯ বছর পেরিয়ে এসে দেখা যাচ্ছে, তাঁর কথাই সত্যি হয়েছে। কলকাতা শহর, এমনকি সমগ্র বাংলাভাষী অঞ্চল তাঁকে ফেলে দিতে পারেনি; বরং সময়ের সঙ্গে তাঁর চলচ্চিত্রের এবং নিজের—দুটোরই কদর বেড়েছে।
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নির্মাতাদের অন্যতম ঋতুপর্ণ ঘোষকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ—‘ঋতুপর্ণ ঘোষ: চলচ্চিত্র, জীবন ও সাক্ষাৎকার’। তরুণ গবেষক নাফিস সাদিকের লেখা এ বইটিতে রয়েছে ঋতুপর্ণ ঘোষের নির্বাচিত কয়েকটি চলচ্চিত্রের বিশ্লেষণ, তাঁর জীবন, অভিনয়, উপস্থাপনা ও পত্রিকা সম্পাদনা নিয়ে আলোচনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার।
১৯৯২ সালে শিশুতোষ ছবি ‘হীরের আংটি’র মাধ্যমে চলচ্চিত্রজগতে পা রেখেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত ২১ বছরে তিনি নির্মাণ করেছেন মোট ২০টি চলচ্চিত্র। জীবদ্দশায় মোট ১৩ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, বাংলা ও মৈথিলী ভাষায় লিখেছেন অনন্য সব গান, উপস্থাপনা করেছেন দুটি তুমুল জনপ্রিয় আলাপচারিতার অনুষ্ঠানের। ঋতুপর্ণ ঘোষ ও সৃষ্টিজগৎকে লেখক গভীরভাবে বুঝতে চেয়েছেন এ বইয়ে। শুরুতে বইয়ের ভূমিকায় অল্প কথায় তুলে ধরেছেন বইটি লেখার পেছনে তাঁর অনুপ্রেরণা, পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত থেকে বই প্রকাশে দীর্ঘ যাত্রা এবং সহজ অথচ গভীর আলোচনার দিকে পাঠককে ধাবিত করার প্রয়াসের কথা।
‘ঋতুর উনপঞ্চাশ বছর’ শিরোনামে প্রথম অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে ঋতুপর্ণ ঘোষের জীবনের রূপরেখা। তাঁর ছবির কেন্দ্রবিন্দু ও জনপ্রিয়তার উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে লেখক যথার্থই লিখেছেন, ‘ঘটনার ঘনঘটায় নয়; বরং অনুভবের গভীরতায় প্রবেশ করার প্রবল শক্তি ছিল তাঁর। এ জন্য সময়ের সঙ্গে একটি স্বতন্ত্র দর্শকশ্রেণি তৈরির পাশাপাশি মধ্যবিত্ত বাঙালির হৃদয়ে আলাদাভাবে প্রভাব রেখে গেছেন তিনি।’ এখানে শৈশব থেকে শুরু করে ঋতুপর্ণ ঘোষের বেড়ে ওঠা, মহাভারত ও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নিবিড় সখ্য, চলচ্চিত্রজগতে পদার্পণ, সময়ের সঙ্গে তাঁর ছবির বিষয় ও নির্মাণ-আঙ্গিকের বিবর্তন এবং শেষ জীবনে তাঁকে ঘিরে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, সেই দিকগুলো চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এরপর ‘ঋতুর চলচ্চিত্র’ অংশে ঋতুপর্ণ ঘোষের নির্বাচিত সাতটি চলচ্চিত্র নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন লেখক। এই আলোচনাগুলোয় সেই ছবি নির্মাণের ইতিহাস থেকে শুরু করে ছবির অন্তর্গত রূপকসহ প্রতিটি বিষয় এমন সুনিপুণভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রে ছবিগুলো আবার নতুন চোখে দেখার সুযোগ তৈরি হয়। ঋতুপর্ণ ঘোষের বাকি ১৩টি ছবি নিয়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনা রয়েছে এ অংশের শেষে। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়াও তিনি আরও যেসব কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেমন অভিনয়, উপস্থাপনা, তথ্যচিত্র নির্মাণ, পত্রিকা সম্পাদনা এবং তাঁর অনন্য আত্মজৈবনিক গদ্য ‘ফার্স্ট পার্সন’ নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে পরের অংশে।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, বাংলা ভাষায় ঋতুপর্ণ ঘোষকে নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ এটি। তাঁর সব সৃষ্টির একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বিন্যাস এখানে দিতে চেয়েছেন লেখক। শ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে বইজুড়ে লেখক যে কাজটা করতে চেয়েছেন, তা অনেকাংশেই সফল হয়েছে বলে মনে করি। কিছু তাত্ত্বিক আলোচনা কারও কারও কাছে কঠিন মনে হলেও সর্বোপরি যেকোনো চলচ্চিত্রপ্রেমী পাঠকের কাছে বইটি উপভোগ্য হবে। প্রথম বই হলেও লেখকের যে একনিষ্ঠতা ও পরিপক্বতার স্বাক্ষর এখানে পাওয়া যায়, তা আলাদা মুগ্ধতা জাগায়। দুই বাংলাতেই ঋতুপর্ণ ঘোষকে ঘিরে চর্চার ক্ষেত্রে এটি একটি আকর গ্রন্থ হবে বলে ধারণা করি।
সামগ্রিকভাবে পশ্চিমা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকর্মকে ‘বুর্জোয়া’ ও ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বলে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করা হয় চীনে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই শেকসপিয়ারের সব সাহিত্যকর্ম—যেমন হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট, ওথেলো ইত্যাদি—চীনে নিষিদ্ধ হয়, কারণ সেগুলোতে চীনা কমিউনিস্ট আদর্শের ‘সঠিক রাজনৈতিক
১৩ দিন আগেকবি নজরুল ইসলামের বহুল পরিচিতি ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে, কিন্তু নজরুল উঁচুমার্গের ‘সাম্যবাদী কবি’ও বটেন। নজরুলের সাম্যচিন্তা তাঁর জীবনের বাস্তবতা থেকে উদ্ভূত। তাঁর শৈশব-কৈশোরের জীবন-অভিজ্ঞতা, তাঁর যৌবনের যাপিত জীবন তাঁকে বাস্তব পৃথিবীর দারিদ্র্য, অসমতা ও অসাম্যের সঙ্গে পরিচিত করেছে অত্যন্ত নগ্নভাবে...
১৩ দিন আগেবাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
১৩ দিন আগেনজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে।
১৪ দিন আগে