Ajker Patrika

সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব বাধানোর চেষ্টা করেছিলেন অনেকেই

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ০১
সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব বাধানোর চেষ্টা করেছিলেন অনেকেই

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী ২৭ সেপ্টেম্বর। এ উপলক্ষে তাঁর সাহিত্যচর্চা, ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন লেখকপত্নী, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নওশাদ জামিল

সৈয়দ শামসুল হক ও আপনার যৌথ জীবন এবং দীর্ঘ জার্নির সমাপ্তি হয়েছে ছয় বছর হয়ে গেল। নিশ্চয় খুব মিস করেন তাঁকে। সৈয়দ হকবিহীন সময়গুলো কেমন কাটছে আপনার?

ব্যক্তিগতভাবে বলি, একটা দিনও তাঁকে ভুলিনি। কারণ, প্রতিদিনই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাঁকে নিয়ে। তাঁর বই পুনর্মুদ্রণ হচ্ছে, নতুন সংস্করণ হচ্ছে, বিভিন্ন সংগঠন তাঁকে নিয়ে কাজ করছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে লেখা চাচ্ছে—এসব কাজে নিজেকেও জড়াতে হচ্ছে।

সম্প্রতি তাঁর ৩৫ খণ্ডের রচনাবলি বের হয়েছে, পুরো পাণ্ডুলিপি দেখে দিতে হয়েছে। সৈয়দ হক সশরীরে নেই, দেখতে দেখতে ছয়টা বছর কীভাবে যেন চলে গেল। জীবন তো একটা চলমান প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়ার ভেতর আমরা এখনো বর্তমান আছি, তিনি তাঁর কর্মগুণেই আমাদের মাঝে বর্তমান হয়ে আছেন, এক দিনের জন্যও অতীত হননি।

আপনাদের তো একসঙ্গে পথচলার শুরু হয়েছিল ষাটের দশকের গোড়ার দিকে। নিঃসন্দেহে দীর্ঘতম জার্নি। আপনাদের কীভাবে পরিচয় হয়েছিল?

মূলত লেখার মাধ্যমে আমাদের পরিচয়। ‘সচিত্র সন্ধানী’ নামের মাসিক পত্রিকায় তাঁর একটি লেখা পড়েছিলাম, ‘তিন পয়সার জ্যোছনা’। লেখাটি আমার কাছে নতুন ও আধুনিক মনে হয়েছিল। পড়ার পর চিন্তা হলো, লেখকের সঙ্গে দেখা হলে তো ভালোই হয়। আমিও তখন লিখি, বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা ছাপা হচ্ছে।

ফলে লেখকের সঙ্গে লেখকের দেখা-পরিচয় হতেই পারে। তারপর তাঁর ঠিকানায় চিঠি লিখেছিলাম। মাসখানেক পর আমার হোস্টেলের চিঠির বাক্সে হলুদ খামে একটা চিঠি এসে হাজির! আরে, এত সুন্দর ইংরেজি হাতের লেখায় কে আমাকে চিঠি পাঠাল? লেখার কালিটিও ভীষণ সুন্দর! গাঢ় চায়নিজ ইঙ্ক দিয়ে মোটা করে ছবি আঁকার মতো করে আমার নামটি লেখা—আনোয়ারা বেগম চৌধুরী। চিঠি খুলে বিস্ময় আরও বাড়ল। প্রেরক সৈয়দ শামসুল হক, যাঁর লেখা পড়ে আবেগতাড়িত হয়ে চিঠি লিখেছিলাম। তারপর কোনো উত্তর না পেয়ে ভুলেও গিয়েছিলাম। চিঠিটা কী যে সুন্দর ছিল!

তারপর কি একে অপরের মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু হয়? সৈয়দ হকের চিঠি নিশ্চয় খুবই সাহিত্যমানসম্পন্ন ছিল?

মাঝে-মধ্যে আমরা একে অপরকে চিঠি লিখতাম। আমি তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। চতুর্থ বর্ষে পড়ি। বিভিন্ন পত্রিকায় টুকটাক লেখালেখি করি।

সৈয়দ শামসুল হক তখনই নামকরা লেখক ও সিনেমাব্যক্তিত্ব। প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো পত্রিকায় নাম ওঠে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, আমি তাঁকে কোনো দিন চোখে দেখিনি। কোনো পত্রিকাতেও তাঁর ছবি চোখে পড়েনি। ফলে তাঁকে দেখার একটা গোপন বাসনা ছিল মনে।

আপনাদের প্রথম দেখার স্মৃতি নিশ্চয় ভোলার নয়। প্রথম দেখার স্মৃতি পাঠকদের কি বলা যায়?

১৯৬৪ সালের দিকে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। একদিন বিকেলে পুরান ঢাকার একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল।

যখন তাঁকে প্রথম দেখলাম, তখন তাঁর চোখ দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম—এমন চকচকে বুদ্ধির ছটায় উদ্ভাসিত চোখ আমি জীবনে দেখিনি। আমার সঙ্গে প্রথম দিনের আলাপে তাঁর সে কী স্বতঃস্ফূর্ত বাক্যালাপ! যেন তিনি আমাকে বহুদিন ধরে চেনেন, বহুদিন ধরে তাঁর সঙ্গে আমার পত্রালাপ। মেয়েদের খুব ভালো বুঝতেন, পটাতেও পারতেন। মেয়েদের পটাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। হা হা হা!

সামনা সামনি সৈয়দ হককে প্রথম দেখার পর আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? প্রথম দেখাতেই কি প্রেমে পড়েছিলেন?

আরে নাহ! প্রথম দেখায় প্রেমে পড়িনি, তবে তিনি পড়েছিলেন, সেটা বুঝতে পারছিলাম।

তাঁকে দেখার পর মনটা দোনোমনা হয়ে ছিল। হ্যাঁ কি না, না কি হ্যাঁ অবস্থা আরকি। তিনি ছিলেন রোগা প্রকৃতির, তারপর চোখেও কম দেখতেন। ছিলেন চালচুলোহীন, বোহেমিয়ান মানুষ। জানো তো, তিনি ষোলো বছর বয়সে বাবার ক্যাশবাক্স ভেঙে টাকা হাতিয়ে মুম্বাই চলে গিয়েছিলেন বড়মাপের চলচ্চিত্রকার হবেন বলে। মোটামুটি একরোখা ছিলেন। তারপর দেশে ফিরলেও পড়াশোনা শেষ করেননি—তো, তাঁর সঙ্গে জড়ানো একটু কঠিন ছিল বৈকি। আগে ভাবতাম, আমাকে একজন চিকিৎসককে বিয়ে করতে হবে, নিদেনপক্ষে একজন প্রকৌশলী, মনটা কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে উঠেছিল। আর আমার ভাগ্যে এমন একজন ক্যান্ডিডেট! এ তো চোখেই দেখে না, রোজগার করবে কী! ফলে প্রেমের শুরুতে আমার মধ্যে কিছুটা দ্বিধা ছিল। কিছুদিন পর সেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব উবেও গিয়েছিল।

যত দূর জানি, বিয়ের ক্ষেত্রে আপনার পরিবারের অসম্মতি ছিল। বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এই সাহসিকতার পেছনে অনুপ্রেরণা কী ছিল?

তারুণ্যের একটা শক্তি আছে, যৌবনের একটা শক্তি আছে, আমি সেই শক্তির ওপর ভর করেই তাঁর সঙ্গে জড়িয়েছিলাম। তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে যে ভুল করিনি, এটা আমার সব সময়ই মনে হয়। বাবা-মা তো জানতেন না, বুঝতেন না তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের অমত ছিল। সৈয়দ হককে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি ওই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলাম, বিয়েও করেছিলাম। আমি অসাধারণ একজন মানুষকেই বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবেছি, আমি যেহেতু ডাক্তার, সেহেতু দুবেলা খাওয়ার অভাব হবে না। নিজে উপার্জন করতে পারব, পরিবারের হালও ধরতে পারব। ফলে পরিবার প্রাথমিকভাবে রাজি না থাকলেও আমার সাহসিকতায় সবাই সম্মত হয়েছিল।

সৈয়দ শামসুল হকের স্ত্রী হিসেবে কোনো বিশেষ সুবিধা বা অসুবিধায় পড়তে হয়েছে? অনেকে বলেন, আপনার লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন পুরস্কারপ্রাপ্তির পেছনে তাঁর ভূমিকা ছিল।

মানুষ কত কিছুই তো বলে আড়ালে-আবডালে! অনেক মেয়ে ঈর্ষান্বিত হয়ে বলেছেন, এমন লেখা আমরাও লিখতে পারি, যদি আমাদের সৈয়দ হকের মতো স্বামী পাশে থাকতেন। এটা যে কত বড় ভুল কথা! সৈয়দ হকের সঙ্গে বিয়ের অনেক আগে থেকেই আমি লেখালেখি করি। তারপর যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়তাম, তখন তো অনেক লিখেছি। বিয়ের পর এক ছাদের নিচে থাকলেও আমরা লেখক হিসেবে ছিলাম সম্পূর্ণ আলাদা। তুমি শুনে অবাক হবে, আমরা একে অপরের পাণ্ডুলিপি পড়তাম না। লেখা বা বই প্রকাশ হওয়ার পর পড়তাম। লেখার ক্ষেত্রে তিনি কখনো আমাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেননি। পুরস্কারের কথা বললে তো, আমার কোনো পুরস্কারপ্রাপ্তিতে তাঁর ভূমিকা নেই। আমি তো অনেক পরে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলাম, আমার ৭০ বছর বয়সে। অথচ সৈয়দ শামসুল হক ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি এত প্রভাবশালী লেখক ছিলেন যে আমি ৪০ বছরের মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার তদবির করাতে পারতাম। তা আমি করিনি। তিনি মারা যাওয়ার পর আমি একুশে পদক পেয়েছি। তখন তো আমার ধরাধরি করারও কেউ নেই। আমি মনে করি, আমি কষ্ট করে এসব অর্জন করেছি। এখন এসে আমি বুঝি যে সৈয়দ হকও সেটাই চেয়েছিলেন।

লেখক হিসেবে, স্বামী হিসেবে কীভাবে সৈয়দ হককে মূল্যায়ন করবেন? তাঁর লেখক সত্তা ও ব্যক্তিসত্তার মধ্যে কি সাঁকোবন্ধন ছিল? নাকি দুটি সত্তা আলাদা ছিল?

লেখক সত্তা ও ব্যক্তিসত্তা অধিকাংশ সময় এক হয় না, কিছুটা ভিন্নতা হয়। সৈয়দ হকের দুটি সত্তার মধ্যেও কিছুটা ভিন্নতা ছিল। তাঁর লেখক সত্তাকে আমি শ্রদ্ধা করেছি সব সময়। লেখক হিসেবে তিনি কোন মাপের ছিলেন, সেটা আমার বলা ঠিক হবে না। লেখক হিসেবে তাঁর বিশালত্ব আমি ব্যাখ্যা করব না। পাশে থাকলেই একজন মানুষের সব বিষয়ে, সবকিছু মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না। রবীন্দ্রনাথের আশপাশেও তো অনেকে ছিলেন। তাই বলে সবাই কি রবীন্দ্রনাথের বিশালত্বকে যথাযথ মূল্যায়ন বা ধারণ করতে পেরেছেন? না, পারেননি। ব্যক্তিগতভাবে বলব, তিনি লেখক হিসেবে যত বড় ছিলেন, স্বামী হিসেবে তার চেয়েও বড় মাপের মানুষ ছিলেন। আমাকে কখনো অশ্রদ্ধা করেননি, অসম্মান করেননি। আমার যে একটি লেখক সত্তা আছে, সেটা তিনি কোনো দিনই কোনো দিক থেকে বাধাগ্রস্ত করেননি। তাঁর সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব বাধানোর চেষ্টা করেছিলেন অনেকেই। সেসব নাম বললে তোমরা অবাক হবে। কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব হয়নি, ব্যক্তিত্বের সংঘাত হয়নি। আমরা একে অপরকে কখনো প্রতিযোগী মনে করিনি, সহযোগী মনে করেছি। তোমাকে একটা কথা বলি, সৈয়দ হকের মুখে আমি কোনো দিন কোনো গালি শুনিনি। আমাকে তো গালি দেননি, কখনো কাউকে গালি দিতেও শুনিনি। তাহলে বোঝো, তিনি কেমন মানুষ ছিলেন। সব মিলিয়ে আমাদের জার্নি ছিল সুখে-দুঃখে মিলিয়ে রোমাঞ্চকর ও সৃষ্টিশীল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।

মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’

১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।

মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।

নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।

বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল যেন তাঁর দীর্ঘ কোনো বাক্যের সমাপ্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।

১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।

তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।

ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।

তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।

২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।

চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।

তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ১০
সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।

লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।

লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।

১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।

লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।

‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।

এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত