বিভুরঞ্জন সরকার
আনিসুল হকের ‘রক্তে আঁকা ভোর’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে বছরখানেক হলো। পড়ব পড়ব করেও পড়া হয়ে ওঠেনি। পড়ার জন্য যখন হাতে নিলাম, তখন মনে হলো, ওরে বাপ, এত মোটা বই, পড়ে শেষ করতে পারব তো? আমার একটা বদ অভ্যাস হলো কিছু পড়তে শুরু করলে পুরোটা, মানে প্রথম কভার থেকে শেষ কভার পর্যন্ত না পড়লে, স্বস্তি পাই না।
বইটির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না। ৫৮৪ পৃষ্ঠার বইটি পড়ে শেষ করে মনে হলো, হ্যাঁ, এমন একটি বইয়ের প্রয়োজন ছিল। ইতিহাস না জেনে, ইতিহাস বিকৃত করে, ইতিহাস ফাঁকি দিয়ে আমরা বড়াই করতে পছন্দ করি। কিন্তু আনিসুল হক বলেছেন ইতিহাসের গল্প, হ্যাঁ, গল্প, কিন্তু গালগল্প নয়। অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুখপাঠ্য গদ্যে তিনি যেভাবে ইতিহাসের খুঁটিনাটি বর্ণনা করেছেন, তা পাঠকের কাছে বিরক্তির কারণ হবে না। বইটি আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ও সমাপ্তির নির্মোহ বয়ান। উপন্যাস বলতে যে প্রেম-বিরহের আকুলিবিকুলির চিত্র আমাদের কল্পনায় ভাসে, এ উপন্যাস ঠিক তেমন নয়। তবে এতেও প্রেম-ভালোবাসা আছে, আছে ভিলেন বা দুষ্ট চরিত্রের মানুষের শঠতা-প্রবঞ্চনা ও বিশ্বাসভঙ্গের বিশ্বস্ত বয়ান। এখানে প্রেম দেশের জন্য, ভালোবাসা গরিবদুঃখী মানুষের জন্য আর দুষ্ট চরিত্রের চরিত্রগুলো পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি ভোর পর্যন্ত এর কাহিনি বিস্তৃত। বন্দিত্ব থেকে মুক্তি। আঁধার থেকে আলো। রাত থেকে ভোর। রক্তনদী সাঁতরে সফলভাবে তীরে পৌঁছে যাওয়ার বীরত্বগাথা। মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান, তা আনিসুল হক তুলে এনেছেন গল্প বলার এক নতুন ঢঙে।
সবাই গল্প বলতে পারে না। শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে রাখার মতো করে গল্প বলতে পারতেন একজন মানুষ, যাঁকে কেন্দ্র করেই ‘রক্তে আঁকা ভোর’-এর কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। তিনি টুঙ্গিপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের বড় ছেলে শেখ মুজিব, মা-বাবার আদরের খোকা। খোকা বড় হয়ে হলেন বাঙালির চোখের মণি বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দিয়ে হয়েছেন জাতির পিতা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবেও তিনিই স্বীকৃত। তো, এই মানুষটিকে আমি কেন ভালো গল্প বলিয়ে বলছি? কারণ, ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ তিনি এক ইতিহাস সৃষ্টিকারী গল্প বলে বাঙালি জাতিকে মাতিয়ে তুলেছিলেন। কী তাঁর গল্পের গাঁথুনি, কী অপূর্ব শব্দচয়ন! বাছাই করা শব্দে অল্প কথায় মানুষের সামনে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস বর্ণনা করেছিলেন, এমন সব অকাট্য যুক্তি ও তথ্য গল্পের মতো করে বলেছেন যা কাউকে ভারাক্রান্ত করেনি, বরং উদ্দীপিত করেছে। যেন তিনি একা বলছেন না, সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব...কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। যদি আর একটা গুলি চলে, যদি বাঙালিদের হত্যা করা হয়, তাহলে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার মুহূর্তটি যখন এল, তখন থেকেই আনিসুল হকের উপন্যাসের শুরু।
হ্যাঁ, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের আকাশে যখন হাজার তারারা জ্বলজ্বল করছিল, তখন ঢাকার ‘আকাশে ট্রেসার বুলেট জ্বলছে। কালো আকাশ বিদ্যুৎ-চমকিত হয়ে পুড়ে যাচ্ছে। বোমা বিস্ফোরণের শব্দে রাতের ঘুম ভেঙে কাক উড়তে শুরু করেছে আকাশে’। ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে শেখ মুজিবকে বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানি সৈন্যরা।
তারপর কি হলো? তারপর ৯ মাস ধরে যুদ্ধ। ‘আমি ভেতরে, তাজউদ্দীন বাইরে’ এমন কথা বহু বছর আগে শেখ মুজিব বলেছিলেন। সেই পথেই এল বিজয়। শেখ মুজিব ফিরে এলেন স্বাধীন দেশের মাটিতে। ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা। আশা একটাই: আবার সব হবে। এই দেশের মাটি সোনার। তাই প্রত্যয়: আমরা সোনার বাংলা গড়ব।
সবার গল্পের উপস্থাপন সমান প্রসাদগুণসম্পন্ন হয় না, আনিসুল হকের এই উপন্যাসটি হয়েছে। পড়ুন, আপনি যদি তর্কপ্রিয় হয়ে থাকেন, তাহলেও যুক্তি শাণ দিতে কাজে লাগবে।
রক্তে আঁকা ভোর
আনিসুল হক
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা
মূল্য: ১০৫০ টাকা
প্রকাশ: ২০২১
প্রথমা প্রকাশন
আনিসুল হকের ‘রক্তে আঁকা ভোর’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে বছরখানেক হলো। পড়ব পড়ব করেও পড়া হয়ে ওঠেনি। পড়ার জন্য যখন হাতে নিলাম, তখন মনে হলো, ওরে বাপ, এত মোটা বই, পড়ে শেষ করতে পারব তো? আমার একটা বদ অভ্যাস হলো কিছু পড়তে শুরু করলে পুরোটা, মানে প্রথম কভার থেকে শেষ কভার পর্যন্ত না পড়লে, স্বস্তি পাই না।
বইটির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না। ৫৮৪ পৃষ্ঠার বইটি পড়ে শেষ করে মনে হলো, হ্যাঁ, এমন একটি বইয়ের প্রয়োজন ছিল। ইতিহাস না জেনে, ইতিহাস বিকৃত করে, ইতিহাস ফাঁকি দিয়ে আমরা বড়াই করতে পছন্দ করি। কিন্তু আনিসুল হক বলেছেন ইতিহাসের গল্প, হ্যাঁ, গল্প, কিন্তু গালগল্প নয়। অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুখপাঠ্য গদ্যে তিনি যেভাবে ইতিহাসের খুঁটিনাটি বর্ণনা করেছেন, তা পাঠকের কাছে বিরক্তির কারণ হবে না। বইটি আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ও সমাপ্তির নির্মোহ বয়ান। উপন্যাস বলতে যে প্রেম-বিরহের আকুলিবিকুলির চিত্র আমাদের কল্পনায় ভাসে, এ উপন্যাস ঠিক তেমন নয়। তবে এতেও প্রেম-ভালোবাসা আছে, আছে ভিলেন বা দুষ্ট চরিত্রের মানুষের শঠতা-প্রবঞ্চনা ও বিশ্বাসভঙ্গের বিশ্বস্ত বয়ান। এখানে প্রেম দেশের জন্য, ভালোবাসা গরিবদুঃখী মানুষের জন্য আর দুষ্ট চরিত্রের চরিত্রগুলো পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি ভোর পর্যন্ত এর কাহিনি বিস্তৃত। বন্দিত্ব থেকে মুক্তি। আঁধার থেকে আলো। রাত থেকে ভোর। রক্তনদী সাঁতরে সফলভাবে তীরে পৌঁছে যাওয়ার বীরত্বগাথা। মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান, তা আনিসুল হক তুলে এনেছেন গল্প বলার এক নতুন ঢঙে।
সবাই গল্প বলতে পারে না। শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে রাখার মতো করে গল্প বলতে পারতেন একজন মানুষ, যাঁকে কেন্দ্র করেই ‘রক্তে আঁকা ভোর’-এর কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। তিনি টুঙ্গিপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের বড় ছেলে শেখ মুজিব, মা-বাবার আদরের খোকা। খোকা বড় হয়ে হলেন বাঙালির চোখের মণি বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দিয়ে হয়েছেন জাতির পিতা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবেও তিনিই স্বীকৃত। তো, এই মানুষটিকে আমি কেন ভালো গল্প বলিয়ে বলছি? কারণ, ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ তিনি এক ইতিহাস সৃষ্টিকারী গল্প বলে বাঙালি জাতিকে মাতিয়ে তুলেছিলেন। কী তাঁর গল্পের গাঁথুনি, কী অপূর্ব শব্দচয়ন! বাছাই করা শব্দে অল্প কথায় মানুষের সামনে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস বর্ণনা করেছিলেন, এমন সব অকাট্য যুক্তি ও তথ্য গল্পের মতো করে বলেছেন যা কাউকে ভারাক্রান্ত করেনি, বরং উদ্দীপিত করেছে। যেন তিনি একা বলছেন না, সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব...কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। যদি আর একটা গুলি চলে, যদি বাঙালিদের হত্যা করা হয়, তাহলে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার মুহূর্তটি যখন এল, তখন থেকেই আনিসুল হকের উপন্যাসের শুরু।
হ্যাঁ, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের আকাশে যখন হাজার তারারা জ্বলজ্বল করছিল, তখন ঢাকার ‘আকাশে ট্রেসার বুলেট জ্বলছে। কালো আকাশ বিদ্যুৎ-চমকিত হয়ে পুড়ে যাচ্ছে। বোমা বিস্ফোরণের শব্দে রাতের ঘুম ভেঙে কাক উড়তে শুরু করেছে আকাশে’। ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে শেখ মুজিবকে বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানি সৈন্যরা।
তারপর কি হলো? তারপর ৯ মাস ধরে যুদ্ধ। ‘আমি ভেতরে, তাজউদ্দীন বাইরে’ এমন কথা বহু বছর আগে শেখ মুজিব বলেছিলেন। সেই পথেই এল বিজয়। শেখ মুজিব ফিরে এলেন স্বাধীন দেশের মাটিতে। ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা। আশা একটাই: আবার সব হবে। এই দেশের মাটি সোনার। তাই প্রত্যয়: আমরা সোনার বাংলা গড়ব।
সবার গল্পের উপস্থাপন সমান প্রসাদগুণসম্পন্ন হয় না, আনিসুল হকের এই উপন্যাসটি হয়েছে। পড়ুন, আপনি যদি তর্কপ্রিয় হয়ে থাকেন, তাহলেও যুক্তি শাণ দিতে কাজে লাগবে।
রক্তে আঁকা ভোর
আনিসুল হক
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা
মূল্য: ১০৫০ টাকা
প্রকাশ: ২০২১
প্রথমা প্রকাশন
হিমালয় পাই এর নতুন বই’ ডিটাচমেন্ট টু ডিপার্চার’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি বাজারে এনেছে জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ প্রকাশনী। বইটিতে মূলত উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমণের প্রেক্ষিতে লেখকের সোশিওলজিকাল, পলিটিক্যাল কালচারাল, হিস্টরিকাল, এনথ্রোপলজিকাল যেসব পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়েছে সেগুলোকেই সোশ্যাল থিসিসরূ
১৫ দিন আগে‘স্বাধীনতা সাম্য সম্প্রীতির জন্য কবিতা’ স্লোগান নিয়ে শুরু হচ্ছে জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২৫। আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কবিতার এই আসর। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এটি জানানো হয়েছে...
২১ দিন আগেবাংলা একাডেমি ২০২৪ সালের ষাণ্মাসিক ফেলোশিপ এবং ছয়টি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিল্পকলা এবং ভাষা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ফেলোশিপ পাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য, নাটক এবং কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য মোট ছয়টি পুরস্কার দেওয়া হচ্
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪সূক্ষ্মচিন্তার খসড়াকে ধারণ করে শিল্প-সাহিত্য ভিত্তিক ছোটকাগজ ‘বামিহাল’। বগুড়ার সবুজ শ্যামল মায়াময় ‘বামিহাল’ গ্রামের নাম থেকেই এর নাম। ‘বামিহাল’ বিশ্বাস করে বাংলার আবহমান জীবন, মানুষ-প্রকৃতি কিংবা সুচিন্তার বিশ্বমুখী সূক্ষ্ম ভাবনার প্রকাশই আগামীর সবুজ-শ্যামল মানববসতি বিনির্মাণ করতে পারে...
২১ ডিসেম্বর ২০২৪