নওশাদ জামিল

আপনি প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশে বসবাস করছেন। মূলত বিদেশেই শিল্পচর্চা করছেন। নিজেকে কীভাবে (বাংলাদেশি/প্রবাসী) দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়। বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করলেও আমার শিল্পকর্ম ও সমস্ত সত্তাজুড়েই আছে বাংলাদেশ। মূলত আমার চিত্রকর্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই বহন করে। চিত্রকর্মের মধ্য
দিয়ে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে চাই।
বিদেশে অনেকগুলো একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। বিদেশের অসংখ্য আর্ট গ্যালারি, বিভিন্ন শিল্পীর কাজ দেখেছেন। সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হয়েছেন। বিদেশে প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন শহরে অনেকগুলো প্রদর্শনীতেই অংশ নিয়েছি। আমি আন্তর্জাতিক মানের ও বড় আকারের প্রদর্শনীতে অংশ নিতেই বেশি পছন্দ করি। আন্তর্জাতিক মানের আর্ট বায়েনিয়াল, আর্ট মিউজিয়াম, বিভিন্ন গ্যালারিতে যখন প্রদর্শনী করা হয়, তখন বড় স্পেস ও সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়। তাতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের আধুনিক সুব্যবস্থাও করা হয়; যার ফলে আমার বড় কাজগুলো, ইনস্টলেশনগুলো প্রদর্শন করতে সুবিধা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিমান ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর সঙ্গে ছবি প্রদর্শিত হলে নিজের অবস্থান বোঝা যায়, পাশাপাশি নতুন অনেক কিছুর অংশী হওয়া যায়।সাধারণত প্রদর্শনীর স্থান, আয়তন, সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে আর্টওয়ার্ক ইনস্টল করা হয়। বিদেশে যেহেতু বড় স্পেস থাকে, সেহেতু আমি বড় আকারের ইনস্টলেশন আর্ট করি। বিদেশের গ্যালারি, শিল্প জাদুঘর, বায়েনিয়ালে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এটা খুবই ভালো দিক।
সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আগামী দুই বছর মেয়াদে কাজ করার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর তৃতীয় আসর আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে ইচ্ছুক শিল্পী, স্থপতি, শিল্প ইতিহাসবিদ এবং সমালোচকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাও দেব। যেখানে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ড. কোয়ান জেফ বেইস এবং ক্যামেরুনের বারথেলেমি টগুওর নাম উল্লেখ করা হয়। কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসায় অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আফ্রিকা এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের মেলবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করি।
আপনার চিত্রকর্মে ঔপনিবেশিক, উত্তর-ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। ইতিহাসের আলোকে বৃহত্তর বাংলাকে দেখার প্রয়াস রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও কৌতূহল সম্পর্কে জানতে চাই।
বৃহত্তর বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমার চিত্রকলার একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে। এ বিষয়টার প্রতি আগ্রহ ও কৌতূহল তৈরি হয়েছিল ছোটবেলাতেই। আমার নানা ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক ছিলেন। এক অর্থে সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আমার বাবাও প্রাথমিকভাবে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। তিনি পরে আইনজীবী হয়েছিলেন। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশ অঞ্চলের গল্প ও ইতিহাস, পুরাণ আমাদের শোনাতেন। ছোটবেলায় মনের গহিনে যে বীজ বপন হয়েছিল, বড় হওয়ার পর তার ডালপালা, শেকড়বাকড়, লতাপাতাই বিস্তৃত হয়েছে ক্যানভাসে। আমি সাধারণত নিজস্ব শৈলী দিয়ে, শিল্প-প্রকরণ ও আঙ্গিক দিয়ে ইতিহাসের বাঁকে আলো ফেলতে চেষ্টা করি। মুঘল আমল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান শাসনামল ছাড়াও প্রাচীনকালের বৃহত্তর বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলগুলো উপলব্ধি করি, তারপর কাগজে কিংবা ক্যানভাসে তা তুলে ধরারও চেষ্টা করি।
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নাকি ‘মানুষের জন্য শিল্প’—আপনি কোন ধারাকে বিশ্বাস করেন? আপনার ছবি কোন শ্রেণির মানুষের (দর্শক) জন্য?
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ ধারাকে বিশ্বাস করি। পাশাপাশি মনে করি, সাধারণ মানুষের জন্যই আমার শিল্পকর্ম। আমার আর্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রায় ১২ হাজারের বেশি স্কেচ, জলরং, প্যাস্টেল রং এবং মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছি। কাজগুলো কোথাও প্রকাশ করিনি। শিল্পের জন্য তা এঁকেছি। ভবিষ্যতে তা হয়তো প্রদর্শন করা হবে।
শিল্পকর্মে আপনি জাতীয়তাবাদ, নাকি আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী?
শিল্পকর্মে আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বিদেশে বসবাস ও বিদেশে প্রদর্শনী বেশি করলেও দেশাত্মবোধ আমার মনেপ্রাণে সব সময় কাজ করে। বিদেশ শুধু নয়, দেশেও আমি প্রদর্শনী করেছি। দর্শনার্থী ও শিল্পপিয়াসীদের সাড়াও পেয়েছি। ভবিষ্যতে নিয়মিতই দেশে প্রদর্শনী করতে চাই, দেশের মাটিতে স্বাধীনভাবে কাজও করতে চাই।
এস এম সুলতানের চিত্রকলা আপনার বেশ প্রিয়। তাঁর কাজে আমাদের সাধারণ মানুষের বয়ান যেমন উঠে এসেছে, তেমনি নন্দনবোধের খোরাক হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনার কাজের ব্যাখ্যা কী?
সুলতান বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর মতো আপাদমস্তক সাধক শিল্পী আমাদের আর আসেনি। তিনি আমাদের গ্রামীণ জীবন, সাধারণ মানুষ, ঐতিহ্য, লোকাচার-ব্রতকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন, চিত্রকর্মে অন্য রকমভাবে তুলে ধরেছেন। সুলতানের চিত্রকলা ও শিল্পদর্শন আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার ক্যানভাসে তৈলচিত্র কাজকে ‘লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস’ বলছেন। এ ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস আমার অন্যতম সিগনেচার ধারা। এ ধারায় আমিই প্রথম কাজ করেছি, বিশ্বে তা পরিচিত করেছি। এ ধারায় সাধারণত ক্যানভাস মসৃণ থাকে না, থাকে অসম ও একটু উঁচু-নিচু ক্যানভাসের পার্শ্ব। এ ধারার কাজগুলো সাধারণত বড় আকারের হয় এবং প্রতিটি পেইন্টিংয়ের এক প্রান্তে অসম আকৃতি থাকে। লেপা স্টাইলটা আমি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে পেয়েছি। দক্ষিণ বাংলার মানুষেরা যেভাবে মাটির ঘর করে, তার দেয়ালে মাটির লেপা থাকে, গোবর, কাদামাটি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে লেপা দেওয়া হয়। আমি তা থেকে উৎসাহিত হয়ে মোটা তেলরঙের আস্তর দিয়ে ক্যানভাসে প্রলেপ দিই, যা আমি স্টেনসিল প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করি। লে-আউট অনুযায়ী স্টেনসিল কাটতে আমি ক্যানভাসে আঠালো টেপ লাগিয়ে রাখি। সেগুলো খোসা ছাড়ার পর, মাটির দেয়ালে যেমন মাটির মিশ্রণ প্লাস্টার করা হয়, তেমনি আমি পুরু তেল রঙের স্তর প্রয়োগ করি।
যতদূর জানি চারুকলায় মেধাবী শিল্পী ও শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ তিন পর্যায়েই আপনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। পরে ইউরোপ-আমেরিকায় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, পেয়েছেন খ্যাতি ও সম্মান। চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কেন যোগ দেননি? কিংবা দেশে থাকেননি কেন?
নিজের মতো শিল্পকর্মচর্চা করতেই আগ্রহী ছিলাম বরাবরই। আমার প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) তো অনেক দিন আগের কথা! এখন শুধু ভবিষ্যতের কথাই হোক। স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা এবং প্রদর্শনী করতে চেয়েছি। এ জন্যই পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সাধনায় নিজের পথ করে নিয়েছি। অতীত নয় শুধু ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আমার মুখ্য চিন্তা। আমেরিকায় থাকলেও প্রায় নিয়মিতই আসার চেষ্টা করি দেশে, ভবিষ্যৎতে দেশে বড় আকারের আর্ট স্টুডিও করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া বিদেশে থাকলেও মনের গহিনে থাকে বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশে সমসাময়িক শিল্পচর্চা ও শিক্ষা সম্পর্কে কিছু বলুন।
চিত্রকলা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আগে ধারণা ছিল সীমিত পর্যায়ের, বর্তমানে ওই ধ্যান-ধারণা বিস্তৃত হয়েছে। চারুকলার সীমাও বৃদ্ধি পেয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। চিত্রকলার নতুন ভাষার সন্ধান করছেন তরুণেরা। বিভিন্ন মাধ্যমেও কাজ করছেন দারুণভাবে। তরুণদের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না পারলেও আধুনিক শিল্পকলার ভাষা ও ব্যাপ্তি বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো এক দশক ধরে প্রসারিত করেছে। আমাদের চারুকলার পৃষ্ঠপোষকতা, চর্চা ও প্রদর্শনী বৃদ্ধি করেছে শুধু তারাই। দর্শনার্থী ও সমঝদারও বেড়েছে বাংলাদেশে। সর্বোপরি বাংলাদেশের শিল্পকলা অনেক প্রসারিত হয়েছে শুধু নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনগুলোর কারণে।

আপনি প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশে বসবাস করছেন। মূলত বিদেশেই শিল্পচর্চা করছেন। নিজেকে কীভাবে (বাংলাদেশি/প্রবাসী) দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়। বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করলেও আমার শিল্পকর্ম ও সমস্ত সত্তাজুড়েই আছে বাংলাদেশ। মূলত আমার চিত্রকর্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই বহন করে। চিত্রকর্মের মধ্য
দিয়ে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে চাই।
বিদেশে অনেকগুলো একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। বিদেশের অসংখ্য আর্ট গ্যালারি, বিভিন্ন শিল্পীর কাজ দেখেছেন। সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হয়েছেন। বিদেশে প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন শহরে অনেকগুলো প্রদর্শনীতেই অংশ নিয়েছি। আমি আন্তর্জাতিক মানের ও বড় আকারের প্রদর্শনীতে অংশ নিতেই বেশি পছন্দ করি। আন্তর্জাতিক মানের আর্ট বায়েনিয়াল, আর্ট মিউজিয়াম, বিভিন্ন গ্যালারিতে যখন প্রদর্শনী করা হয়, তখন বড় স্পেস ও সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়। তাতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের আধুনিক সুব্যবস্থাও করা হয়; যার ফলে আমার বড় কাজগুলো, ইনস্টলেশনগুলো প্রদর্শন করতে সুবিধা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিমান ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর সঙ্গে ছবি প্রদর্শিত হলে নিজের অবস্থান বোঝা যায়, পাশাপাশি নতুন অনেক কিছুর অংশী হওয়া যায়।সাধারণত প্রদর্শনীর স্থান, আয়তন, সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে আর্টওয়ার্ক ইনস্টল করা হয়। বিদেশে যেহেতু বড় স্পেস থাকে, সেহেতু আমি বড় আকারের ইনস্টলেশন আর্ট করি। বিদেশের গ্যালারি, শিল্প জাদুঘর, বায়েনিয়ালে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এটা খুবই ভালো দিক।
সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আগামী দুই বছর মেয়াদে কাজ করার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর তৃতীয় আসর আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে ইচ্ছুক শিল্পী, স্থপতি, শিল্প ইতিহাসবিদ এবং সমালোচকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাও দেব। যেখানে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ড. কোয়ান জেফ বেইস এবং ক্যামেরুনের বারথেলেমি টগুওর নাম উল্লেখ করা হয়। কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসায় অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আফ্রিকা এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের মেলবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করি।
আপনার চিত্রকর্মে ঔপনিবেশিক, উত্তর-ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। ইতিহাসের আলোকে বৃহত্তর বাংলাকে দেখার প্রয়াস রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও কৌতূহল সম্পর্কে জানতে চাই।
বৃহত্তর বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমার চিত্রকলার একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে। এ বিষয়টার প্রতি আগ্রহ ও কৌতূহল তৈরি হয়েছিল ছোটবেলাতেই। আমার নানা ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক ছিলেন। এক অর্থে সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আমার বাবাও প্রাথমিকভাবে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। তিনি পরে আইনজীবী হয়েছিলেন। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশ অঞ্চলের গল্প ও ইতিহাস, পুরাণ আমাদের শোনাতেন। ছোটবেলায় মনের গহিনে যে বীজ বপন হয়েছিল, বড় হওয়ার পর তার ডালপালা, শেকড়বাকড়, লতাপাতাই বিস্তৃত হয়েছে ক্যানভাসে। আমি সাধারণত নিজস্ব শৈলী দিয়ে, শিল্প-প্রকরণ ও আঙ্গিক দিয়ে ইতিহাসের বাঁকে আলো ফেলতে চেষ্টা করি। মুঘল আমল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান শাসনামল ছাড়াও প্রাচীনকালের বৃহত্তর বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলগুলো উপলব্ধি করি, তারপর কাগজে কিংবা ক্যানভাসে তা তুলে ধরারও চেষ্টা করি।
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নাকি ‘মানুষের জন্য শিল্প’—আপনি কোন ধারাকে বিশ্বাস করেন? আপনার ছবি কোন শ্রেণির মানুষের (দর্শক) জন্য?
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ ধারাকে বিশ্বাস করি। পাশাপাশি মনে করি, সাধারণ মানুষের জন্যই আমার শিল্পকর্ম। আমার আর্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রায় ১২ হাজারের বেশি স্কেচ, জলরং, প্যাস্টেল রং এবং মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছি। কাজগুলো কোথাও প্রকাশ করিনি। শিল্পের জন্য তা এঁকেছি। ভবিষ্যতে তা হয়তো প্রদর্শন করা হবে।
শিল্পকর্মে আপনি জাতীয়তাবাদ, নাকি আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী?
শিল্পকর্মে আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বিদেশে বসবাস ও বিদেশে প্রদর্শনী বেশি করলেও দেশাত্মবোধ আমার মনেপ্রাণে সব সময় কাজ করে। বিদেশ শুধু নয়, দেশেও আমি প্রদর্শনী করেছি। দর্শনার্থী ও শিল্পপিয়াসীদের সাড়াও পেয়েছি। ভবিষ্যতে নিয়মিতই দেশে প্রদর্শনী করতে চাই, দেশের মাটিতে স্বাধীনভাবে কাজও করতে চাই।
এস এম সুলতানের চিত্রকলা আপনার বেশ প্রিয়। তাঁর কাজে আমাদের সাধারণ মানুষের বয়ান যেমন উঠে এসেছে, তেমনি নন্দনবোধের খোরাক হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনার কাজের ব্যাখ্যা কী?
সুলতান বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর মতো আপাদমস্তক সাধক শিল্পী আমাদের আর আসেনি। তিনি আমাদের গ্রামীণ জীবন, সাধারণ মানুষ, ঐতিহ্য, লোকাচার-ব্রতকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন, চিত্রকর্মে অন্য রকমভাবে তুলে ধরেছেন। সুলতানের চিত্রকলা ও শিল্পদর্শন আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার ক্যানভাসে তৈলচিত্র কাজকে ‘লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস’ বলছেন। এ ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস আমার অন্যতম সিগনেচার ধারা। এ ধারায় আমিই প্রথম কাজ করেছি, বিশ্বে তা পরিচিত করেছি। এ ধারায় সাধারণত ক্যানভাস মসৃণ থাকে না, থাকে অসম ও একটু উঁচু-নিচু ক্যানভাসের পার্শ্ব। এ ধারার কাজগুলো সাধারণত বড় আকারের হয় এবং প্রতিটি পেইন্টিংয়ের এক প্রান্তে অসম আকৃতি থাকে। লেপা স্টাইলটা আমি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে পেয়েছি। দক্ষিণ বাংলার মানুষেরা যেভাবে মাটির ঘর করে, তার দেয়ালে মাটির লেপা থাকে, গোবর, কাদামাটি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে লেপা দেওয়া হয়। আমি তা থেকে উৎসাহিত হয়ে মোটা তেলরঙের আস্তর দিয়ে ক্যানভাসে প্রলেপ দিই, যা আমি স্টেনসিল প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করি। লে-আউট অনুযায়ী স্টেনসিল কাটতে আমি ক্যানভাসে আঠালো টেপ লাগিয়ে রাখি। সেগুলো খোসা ছাড়ার পর, মাটির দেয়ালে যেমন মাটির মিশ্রণ প্লাস্টার করা হয়, তেমনি আমি পুরু তেল রঙের স্তর প্রয়োগ করি।
যতদূর জানি চারুকলায় মেধাবী শিল্পী ও শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ তিন পর্যায়েই আপনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। পরে ইউরোপ-আমেরিকায় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, পেয়েছেন খ্যাতি ও সম্মান। চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কেন যোগ দেননি? কিংবা দেশে থাকেননি কেন?
নিজের মতো শিল্পকর্মচর্চা করতেই আগ্রহী ছিলাম বরাবরই। আমার প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) তো অনেক দিন আগের কথা! এখন শুধু ভবিষ্যতের কথাই হোক। স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা এবং প্রদর্শনী করতে চেয়েছি। এ জন্যই পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সাধনায় নিজের পথ করে নিয়েছি। অতীত নয় শুধু ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আমার মুখ্য চিন্তা। আমেরিকায় থাকলেও প্রায় নিয়মিতই আসার চেষ্টা করি দেশে, ভবিষ্যৎতে দেশে বড় আকারের আর্ট স্টুডিও করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া বিদেশে থাকলেও মনের গহিনে থাকে বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশে সমসাময়িক শিল্পচর্চা ও শিক্ষা সম্পর্কে কিছু বলুন।
চিত্রকলা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আগে ধারণা ছিল সীমিত পর্যায়ের, বর্তমানে ওই ধ্যান-ধারণা বিস্তৃত হয়েছে। চারুকলার সীমাও বৃদ্ধি পেয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। চিত্রকলার নতুন ভাষার সন্ধান করছেন তরুণেরা। বিভিন্ন মাধ্যমেও কাজ করছেন দারুণভাবে। তরুণদের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না পারলেও আধুনিক শিল্পকলার ভাষা ও ব্যাপ্তি বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো এক দশক ধরে প্রসারিত করেছে। আমাদের চারুকলার পৃষ্ঠপোষকতা, চর্চা ও প্রদর্শনী বৃদ্ধি করেছে শুধু তারাই। দর্শনার্থী ও সমঝদারও বেড়েছে বাংলাদেশে। সর্বোপরি বাংলাদেশের শিল্পকলা অনেক প্রসারিত হয়েছে শুধু নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনগুলোর কারণে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে