ইশতিয়াক হাসান
ভারতের বর্ধমানের খনি এলাকা ভৈরবগড়ে কয়েক দিনের মধ্যে ঘটে তিনটি হত্যাকাণ্ড। খুন হওয়া ব্যক্তিদের দুজন ব্যবসায়ী, একজন অবসরপ্রাপ্ত খনি প্রকৌশলী। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, মৃত্যুর আগের দিন তিনজনের কাছেই এসেছিলেন এক তান্ত্রিক সাধু বাবা। প্রতিটি লাশ পাওয়া গিয়েছে ভৈরব মন্দিরের চত্বরে, সবার হার্টের পেছনে পিঠের দিকে ছিল তিনটি গভীর ক্ষতচিহ্ন। হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে আরও একটি যোগসূত্র আছে। প্রতিবারই খুনের পর ভৈরব মন্দিরের চূড়ায় আটকানো ত্রিশূলে মিলেছে টাটকা রক্ত। বিংশ শতকেও নরবলি! নাকি আরও জটিল কোনো রহস্য! ব্যাস, খনি এলাকা ভৈরব গড়ে গন্ধ শুঁকে শুঁকে হাজির টাক মাথার এক বৃদ্ধ।
কিংবা ধরমপুর রিজার্ভ ফরেস্টের রোমাঞ্চকর সেই কাহিনির কথাও বলতে পারি। ভয়ানক চেহারার একটি আফগান হাউন্ডকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছিল সেখানে। তার পরই রাকেশ শর্মা নামের এক ব্যক্তিকে মাছ ধরার সময় কুকুরটা গলা কামড়ে নিয়ে যাওয়ার খবর মিলল। আপাতদৃষ্টিতে একেবারে সোজা-সাপটা কেস। কিন্তু কী ভাগ্য! তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই বৃদ্ধ। আর তদন্তেই বেরিয়ে এল থলের ভেতরের বিড়াল। গল্পটার আরও খানিকটা বলা যেত। কিন্তু তাহলে হয়তো না পড়া থাকলে আগ্রহটা কমে যাবে আপনার!
এই বুড়োর পরিচয় যাঁরা এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি, তাঁদের বলছি, ইনি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অনবদ্য সৃষ্টি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। বাংলা-ইংরেজি রহস্যসাহিত্য মিলিয়ে হিসাব করলে আমার সবচেয়ে পছন্দের দুই-তিনটি চরিত্রের একটি এই নীলাদ্রি সরকার। মন খারাপ করা ব্যাপার হলো, রহস্যপ্রিয় পাঠকেরা ফেলুদা, শার্লক হোমস, মিস মার্পলের মতো চরিত্রগুলোকে যতটা চেনেন, ততটা চেনেন না নীলাদ্রি সরকারকে। অথচ স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ও নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটির ভক্ত ছিলেন। এমনকি মুস্তাফা সিরাজকে সন্দেশ পত্রিকায় কর্নেলকে নিয়ে লেখার জন্য অনুরোধ করে চিঠিও লিখেছিলেন।
বলতে পারেন, নীলাদ্রি সরকার আর দশটা গোয়েন্দা চরিত্রের থেকে একেবারেই আলাদা। গোয়েন্দা বলে পরিচয়ও দেন না নিজের। তবে কথা হলো, রহস্যই সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তার ধ্যান-জ্ঞান। মাথার টাকটা বেশির ভাগ সময় ঢাকা পড়ে থাকে টুপিতে, মুখভর্তি লম্বা সাদা দাড়ি-গোঁফ। বয়সে বৃদ্ধ হলে কী হবে, গায়ে প্রচণ্ড শক্তি। অনায়াসে পাহাড় বাইতে পারেন, হাঁটতে পারেন অনেকটা পথ, পিঠের কিটব্যাগ থেকে উঁকি দেয় প্রজাপতি ধরার জাল, গলায় ঝোলে বাইনোকুলার আর ক্যামেরা। প্রথম দেখায় মনে হবে বিদেশি ট্যুরিস্ট, আসলে বাঙালি।
এই চরিত্র সৃষ্টির গল্পটাও ভারি মজার। ১৯৫৬ সালের এক শীতকাল। মুর্শিদাবাদের লালবাগের ঐতিহ্যবাহী হাজার দুয়ারি প্রাসাদে গিয়েছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। হঠাৎ চোখ আটকে গেল সান্তার মতো পাকা গোঁফ-দাড়ির এক বৃদ্ধে। টকটকে ফরসা রং। প্যান্ট-শার্ট পরনে। পিঠে কিটব্যাগ। বাইনোকুলার দিয়ে দূরের কোনো কিছুতে ছিল নজর। মুখ তুলতেই টুপি খসে বেরিয়ে পড়ল টাক, রোদ পড়ে ঝলমল করছিল। হামাগুঁড়ি দিয়ে রহস্যজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন একটা ঝোপের দিকে। আশপাশে ওত পেতে থাকা গাইডদের একজন সামনে উদয় হয়ে বিদেশি ভেবে তাঁকে একটা ধ্বংসস্তূপের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ভুলভাল ইংরেজিতে। তখনই বুড়ো উঠে দাঁড়িয়ে বাংলায় বলে উঠলেন, এই প্রজাপতিগুলো বড্ড সেয়ানা। গাইডের তো রীতিমতো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়, এমনকি চোখ কপালে মুস্তাফা সিরাজেরও। তিনিও যে এই বৃদ্ধকে বিদেশিই ভেবে বসেছিলেন!
এর বহু বছর পর এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকের তাড়ায় ধারাবাহিক উপন্যাস লিখতে গিয়ে লেখকের মাথায় চলে এল ওই বুড়োর কথা। ব্যাস, তার আদলে বানিয়ে ফেললেন কর্নেল নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটি। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ওই রহস্যোপন্যাসের নাম ‘ছায়া পড়ে’।
কর্নেলকে নিয়ে আরও কিছু লেখার আগে আজ কেন চরিত্রটিকে আপনাদের সামনে হাজির করছি তা বলছি। ২০১২ সালের আজকের দিনে মানে ৪ সেপ্টেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেন কর্নেল চরিত্রের স্রষ্টা ও বইয়ের লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। অর্থাৎ আজ তাঁর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আবার কর্নেল নীলাদ্রি সরকারে ফিরে আসা যাক। ভারতের কোথাও কোথাও দুর্লভ প্রজাপতি, পাখি, অর্কিড, ক্যাকটাসের খবর পেলেই হলো, হাজির হয়ে যান। তা সেটা যতই দুর্গম পাহাড় কিংবা অরণ্যই হোক না কেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় খেয়াল রহস্যের পিছু নেওয়া। লালবাজারের (কলকাতা পুলিশের প্রধান কার্যালয়) দুঁদে গোয়েন্দারা যেখানে ব্যর্থ, সেখানেই শুরু নীলাদ্রি সরকারের। কখনো তাঁর সাহায্য চাইতে হাজির হয়ে যান গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি ডিবি অরিজিৎ লাহিড়ী, কিংবা অন্য কোনো গোয়েন্দা। কর্নেল হয়তো তখন তাঁর ইলিয়ট রোডের তিনতলা দালানটার প্রিয় ছাদবাগানে শত মাইল দূরের কোনো পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে আনা গাছের যত্ন নিচ্ছেন। অতিথিকে অভ্যর্থনা জানায় কর্নেলের একান্ত বিশ্বস্ত ভৃত্য ও গাছ পরিচর্যার সঙ্গী ষষ্ঠীচরণ।
মোটামুটি বেশির ভাগ অভিযানে কর্নেলের সঙ্গে থাকে দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার জয়ন্ত চৌধুরী। দুর্ধর্ষ অ্যাডভেঞ্চারগুলো জয়ন্তর মাধ্যমেই জানতে পারেন পত্রিকার পাঠকেরা। তবে সাংবাদিক হিসেবে তুখোড় হলেও জয়ন্তর রহস্যভেদী বুদ্ধি মোটেই আহামরি কিছু নয়। অবশ্য বেশির ভাগ বিখ্যাত গোয়েন্দাকাহিনির পার্শ্ব চরিত্ররাই গল্পের প্রয়োজনে খুরদার বুদ্ধির হন না। কর্নেলের বইগুলোর আরেক অসাধারণ সংযোজন অবসরপ্রাপ্ত দারোগা এবং পরবর্তী সময়ে প্রাইভেট ডিটেকটিভ কৃতান্ত কুমার হালদার। অনেক সময়ই দেখা যায় নিজের কোনো কেসে কিংবা কর্নেলকে সাহায্য করতে গিয়ে নানান অদ্ভুত কাণ্ডকীর্তি ঘটাচ্ছেন হালদার মশাই। পাঠকেরা এসব ঘটনার বর্ণনা পড়ে কখন হাসতে শুরু করেছেন নিজেরাই টের পান না। বলা চলে এই চরিত্রের উপস্থিতি কাহিনিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ করে। মুস্তাফা সিরাজ নিজেই হালদার মশাইকে উল্লেখ করেছেন তাঁর রিলিফ হিসাবে। কে কে হালদারের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার স্টাইলটাও কিন্তু দারুণ।
কর্নেলের বইগুলো পড়তে গিয়ে তার সঙ্গে অসাধারণ সব জায়গায় ভ্রমণও হয়ে যাবে আপনার। আমার যেমনটা হয়। কখনো নেপাল সীমান্তের ডমরু পাহাড়ে, কখনো পার্বত্য শিল্প এলাকা রানীডিহি বা বিহার সীমান্তের খনি এলাকা বারাহিয়া কিংবা ওডিশার সাগর তীরবর্তী গোপালপুর অন সি, চন্দনপুর অন সি, নতুবা ধরমপুরের ধরিয়া ফলসে পৌঁছে যাই। বুড়োর সঙ্গে সারস পাখির খোঁজ করতে গিয়েও রহস্যের পাকে আটকা পড়ি। এসব দুর্গম জায়গায় গিয়ে অসাধারণ সুন্দর কোনো সেচ বাংলো কিংবা সরকারি অন্য কোনো বাংলোয় থাকার সুযোগ হয়ে যায় কর্নেল আর জয়ন্ত চৌধুরীর বদন্যতায়।
তবে কর্নেলের সঙ্গে জোট বাঁধার আগে একটি সাবধানবাণী। খুনোখুনি লেগেই থাকে তাঁর বইয়ে। তাই উত্তেজনার মাত্রাটাও বেশি, কখনো একটু বড়দের উপযোগী ঘটনা কিংবা রগরগে বর্ণনাও থাকে, কিছু বই আবার একেবারেই কিশোর উপযোগী। মোটের ওপর ছেলে-বুড়ো সবার জন্যই ‘কর্নেল’ লেখা হয়েছে। আমার মতো রহস্য ও প্রকৃতিপ্রেমিকের জন্য এর চেয়ে সরস কাহিনি পাওয়া মুশকিল। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন, কেবল পাঁড় গোয়েন্দাকাহিনির ভক্তরা নন, অ্যাডভেঞ্চার কিংবা বন-জঙ্গল ও বন্যপ্রাণীপ্রেমী পাঠকদের জন্যও অসাধারণ এক চয়েজ হতে পারে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘কর্নেল’। পড়তে পড়তে এতটাই বুঁদ হয়ে যাবেন, মনে হবে আপনিও কাহিনিটির একটি চরিত্র। দেজ পাবলিশার্স থেকে কর্নেলর ১৭টি সমগ্র বের হয়েছে। আর কিশোরসমগ্র বের হয়েছে চারটি।
হাথিয়াগড় জঙ্গল। সেখানে বিশাল এক পাহাড়, নাম কোদণ্ড। ওই পাহাড়-জঙ্গলেই ভয়ানক এক মানুষখেকো বাঘের উৎপাতের খবর পেলেন কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। কিন্তু কী আশ্চর্য! বাঘটি শুধু মানুষ মারার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু সেই মানুষগুলোর মৃতদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিকে মানুষখেকোর এলাকায় ছোট্ট এক নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কারা? শিবচরণ পাণ্ডে নামে পুরোনো এক বন্ধুর চিঠি পেয়ে রহস্যের গন্ধ পেলেন কর্নেল। হাজির হলেন পাহাড়ি এলাকাটিতে। কিন্তু তিনি সেখানে যেতে না যেতেই পাণ্ডের রক্তাক্ত দেহ খুঁজে পেলেন কর্নেল ও জয়ন্ত। বলা চলে, তাঁদের চোখের সামনেই মারা গেলেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল বাঘের আক্রমণেই মারা গেছেন তিনি। কিন্তু কর্নেলকে কি এত সহজে বোকা বানানো যায়? কী পাঠক, আর দেরি কেন, কর্নেলের একটি বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করুন, আর প্রবেশ করুন কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের রহস্যভুবনে। ও একটা কথা, শেষ যে কাহিনিটি বললাম, সেটার নাম ‘কোদণ্ড পাহাড়ের বা-রহস্য’।
ভারতের বর্ধমানের খনি এলাকা ভৈরবগড়ে কয়েক দিনের মধ্যে ঘটে তিনটি হত্যাকাণ্ড। খুন হওয়া ব্যক্তিদের দুজন ব্যবসায়ী, একজন অবসরপ্রাপ্ত খনি প্রকৌশলী। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, মৃত্যুর আগের দিন তিনজনের কাছেই এসেছিলেন এক তান্ত্রিক সাধু বাবা। প্রতিটি লাশ পাওয়া গিয়েছে ভৈরব মন্দিরের চত্বরে, সবার হার্টের পেছনে পিঠের দিকে ছিল তিনটি গভীর ক্ষতচিহ্ন। হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে আরও একটি যোগসূত্র আছে। প্রতিবারই খুনের পর ভৈরব মন্দিরের চূড়ায় আটকানো ত্রিশূলে মিলেছে টাটকা রক্ত। বিংশ শতকেও নরবলি! নাকি আরও জটিল কোনো রহস্য! ব্যাস, খনি এলাকা ভৈরব গড়ে গন্ধ শুঁকে শুঁকে হাজির টাক মাথার এক বৃদ্ধ।
কিংবা ধরমপুর রিজার্ভ ফরেস্টের রোমাঞ্চকর সেই কাহিনির কথাও বলতে পারি। ভয়ানক চেহারার একটি আফগান হাউন্ডকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছিল সেখানে। তার পরই রাকেশ শর্মা নামের এক ব্যক্তিকে মাছ ধরার সময় কুকুরটা গলা কামড়ে নিয়ে যাওয়ার খবর মিলল। আপাতদৃষ্টিতে একেবারে সোজা-সাপটা কেস। কিন্তু কী ভাগ্য! তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই বৃদ্ধ। আর তদন্তেই বেরিয়ে এল থলের ভেতরের বিড়াল। গল্পটার আরও খানিকটা বলা যেত। কিন্তু তাহলে হয়তো না পড়া থাকলে আগ্রহটা কমে যাবে আপনার!
এই বুড়োর পরিচয় যাঁরা এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি, তাঁদের বলছি, ইনি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অনবদ্য সৃষ্টি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। বাংলা-ইংরেজি রহস্যসাহিত্য মিলিয়ে হিসাব করলে আমার সবচেয়ে পছন্দের দুই-তিনটি চরিত্রের একটি এই নীলাদ্রি সরকার। মন খারাপ করা ব্যাপার হলো, রহস্যপ্রিয় পাঠকেরা ফেলুদা, শার্লক হোমস, মিস মার্পলের মতো চরিত্রগুলোকে যতটা চেনেন, ততটা চেনেন না নীলাদ্রি সরকারকে। অথচ স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ও নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটির ভক্ত ছিলেন। এমনকি মুস্তাফা সিরাজকে সন্দেশ পত্রিকায় কর্নেলকে নিয়ে লেখার জন্য অনুরোধ করে চিঠিও লিখেছিলেন।
বলতে পারেন, নীলাদ্রি সরকার আর দশটা গোয়েন্দা চরিত্রের থেকে একেবারেই আলাদা। গোয়েন্দা বলে পরিচয়ও দেন না নিজের। তবে কথা হলো, রহস্যই সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তার ধ্যান-জ্ঞান। মাথার টাকটা বেশির ভাগ সময় ঢাকা পড়ে থাকে টুপিতে, মুখভর্তি লম্বা সাদা দাড়ি-গোঁফ। বয়সে বৃদ্ধ হলে কী হবে, গায়ে প্রচণ্ড শক্তি। অনায়াসে পাহাড় বাইতে পারেন, হাঁটতে পারেন অনেকটা পথ, পিঠের কিটব্যাগ থেকে উঁকি দেয় প্রজাপতি ধরার জাল, গলায় ঝোলে বাইনোকুলার আর ক্যামেরা। প্রথম দেখায় মনে হবে বিদেশি ট্যুরিস্ট, আসলে বাঙালি।
এই চরিত্র সৃষ্টির গল্পটাও ভারি মজার। ১৯৫৬ সালের এক শীতকাল। মুর্শিদাবাদের লালবাগের ঐতিহ্যবাহী হাজার দুয়ারি প্রাসাদে গিয়েছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। হঠাৎ চোখ আটকে গেল সান্তার মতো পাকা গোঁফ-দাড়ির এক বৃদ্ধে। টকটকে ফরসা রং। প্যান্ট-শার্ট পরনে। পিঠে কিটব্যাগ। বাইনোকুলার দিয়ে দূরের কোনো কিছুতে ছিল নজর। মুখ তুলতেই টুপি খসে বেরিয়ে পড়ল টাক, রোদ পড়ে ঝলমল করছিল। হামাগুঁড়ি দিয়ে রহস্যজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন একটা ঝোপের দিকে। আশপাশে ওত পেতে থাকা গাইডদের একজন সামনে উদয় হয়ে বিদেশি ভেবে তাঁকে একটা ধ্বংসস্তূপের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ভুলভাল ইংরেজিতে। তখনই বুড়ো উঠে দাঁড়িয়ে বাংলায় বলে উঠলেন, এই প্রজাপতিগুলো বড্ড সেয়ানা। গাইডের তো রীতিমতো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়, এমনকি চোখ কপালে মুস্তাফা সিরাজেরও। তিনিও যে এই বৃদ্ধকে বিদেশিই ভেবে বসেছিলেন!
এর বহু বছর পর এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকের তাড়ায় ধারাবাহিক উপন্যাস লিখতে গিয়ে লেখকের মাথায় চলে এল ওই বুড়োর কথা। ব্যাস, তার আদলে বানিয়ে ফেললেন কর্নেল নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটি। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ওই রহস্যোপন্যাসের নাম ‘ছায়া পড়ে’।
কর্নেলকে নিয়ে আরও কিছু লেখার আগে আজ কেন চরিত্রটিকে আপনাদের সামনে হাজির করছি তা বলছি। ২০১২ সালের আজকের দিনে মানে ৪ সেপ্টেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেন কর্নেল চরিত্রের স্রষ্টা ও বইয়ের লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। অর্থাৎ আজ তাঁর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আবার কর্নেল নীলাদ্রি সরকারে ফিরে আসা যাক। ভারতের কোথাও কোথাও দুর্লভ প্রজাপতি, পাখি, অর্কিড, ক্যাকটাসের খবর পেলেই হলো, হাজির হয়ে যান। তা সেটা যতই দুর্গম পাহাড় কিংবা অরণ্যই হোক না কেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় খেয়াল রহস্যের পিছু নেওয়া। লালবাজারের (কলকাতা পুলিশের প্রধান কার্যালয়) দুঁদে গোয়েন্দারা যেখানে ব্যর্থ, সেখানেই শুরু নীলাদ্রি সরকারের। কখনো তাঁর সাহায্য চাইতে হাজির হয়ে যান গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি ডিবি অরিজিৎ লাহিড়ী, কিংবা অন্য কোনো গোয়েন্দা। কর্নেল হয়তো তখন তাঁর ইলিয়ট রোডের তিনতলা দালানটার প্রিয় ছাদবাগানে শত মাইল দূরের কোনো পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে আনা গাছের যত্ন নিচ্ছেন। অতিথিকে অভ্যর্থনা জানায় কর্নেলের একান্ত বিশ্বস্ত ভৃত্য ও গাছ পরিচর্যার সঙ্গী ষষ্ঠীচরণ।
মোটামুটি বেশির ভাগ অভিযানে কর্নেলের সঙ্গে থাকে দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার জয়ন্ত চৌধুরী। দুর্ধর্ষ অ্যাডভেঞ্চারগুলো জয়ন্তর মাধ্যমেই জানতে পারেন পত্রিকার পাঠকেরা। তবে সাংবাদিক হিসেবে তুখোড় হলেও জয়ন্তর রহস্যভেদী বুদ্ধি মোটেই আহামরি কিছু নয়। অবশ্য বেশির ভাগ বিখ্যাত গোয়েন্দাকাহিনির পার্শ্ব চরিত্ররাই গল্পের প্রয়োজনে খুরদার বুদ্ধির হন না। কর্নেলের বইগুলোর আরেক অসাধারণ সংযোজন অবসরপ্রাপ্ত দারোগা এবং পরবর্তী সময়ে প্রাইভেট ডিটেকটিভ কৃতান্ত কুমার হালদার। অনেক সময়ই দেখা যায় নিজের কোনো কেসে কিংবা কর্নেলকে সাহায্য করতে গিয়ে নানান অদ্ভুত কাণ্ডকীর্তি ঘটাচ্ছেন হালদার মশাই। পাঠকেরা এসব ঘটনার বর্ণনা পড়ে কখন হাসতে শুরু করেছেন নিজেরাই টের পান না। বলা চলে এই চরিত্রের উপস্থিতি কাহিনিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ করে। মুস্তাফা সিরাজ নিজেই হালদার মশাইকে উল্লেখ করেছেন তাঁর রিলিফ হিসাবে। কে কে হালদারের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার স্টাইলটাও কিন্তু দারুণ।
কর্নেলের বইগুলো পড়তে গিয়ে তার সঙ্গে অসাধারণ সব জায়গায় ভ্রমণও হয়ে যাবে আপনার। আমার যেমনটা হয়। কখনো নেপাল সীমান্তের ডমরু পাহাড়ে, কখনো পার্বত্য শিল্প এলাকা রানীডিহি বা বিহার সীমান্তের খনি এলাকা বারাহিয়া কিংবা ওডিশার সাগর তীরবর্তী গোপালপুর অন সি, চন্দনপুর অন সি, নতুবা ধরমপুরের ধরিয়া ফলসে পৌঁছে যাই। বুড়োর সঙ্গে সারস পাখির খোঁজ করতে গিয়েও রহস্যের পাকে আটকা পড়ি। এসব দুর্গম জায়গায় গিয়ে অসাধারণ সুন্দর কোনো সেচ বাংলো কিংবা সরকারি অন্য কোনো বাংলোয় থাকার সুযোগ হয়ে যায় কর্নেল আর জয়ন্ত চৌধুরীর বদন্যতায়।
তবে কর্নেলের সঙ্গে জোট বাঁধার আগে একটি সাবধানবাণী। খুনোখুনি লেগেই থাকে তাঁর বইয়ে। তাই উত্তেজনার মাত্রাটাও বেশি, কখনো একটু বড়দের উপযোগী ঘটনা কিংবা রগরগে বর্ণনাও থাকে, কিছু বই আবার একেবারেই কিশোর উপযোগী। মোটের ওপর ছেলে-বুড়ো সবার জন্যই ‘কর্নেল’ লেখা হয়েছে। আমার মতো রহস্য ও প্রকৃতিপ্রেমিকের জন্য এর চেয়ে সরস কাহিনি পাওয়া মুশকিল। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন, কেবল পাঁড় গোয়েন্দাকাহিনির ভক্তরা নন, অ্যাডভেঞ্চার কিংবা বন-জঙ্গল ও বন্যপ্রাণীপ্রেমী পাঠকদের জন্যও অসাধারণ এক চয়েজ হতে পারে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘কর্নেল’। পড়তে পড়তে এতটাই বুঁদ হয়ে যাবেন, মনে হবে আপনিও কাহিনিটির একটি চরিত্র। দেজ পাবলিশার্স থেকে কর্নেলর ১৭টি সমগ্র বের হয়েছে। আর কিশোরসমগ্র বের হয়েছে চারটি।
হাথিয়াগড় জঙ্গল। সেখানে বিশাল এক পাহাড়, নাম কোদণ্ড। ওই পাহাড়-জঙ্গলেই ভয়ানক এক মানুষখেকো বাঘের উৎপাতের খবর পেলেন কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। কিন্তু কী আশ্চর্য! বাঘটি শুধু মানুষ মারার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু সেই মানুষগুলোর মৃতদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিকে মানুষখেকোর এলাকায় ছোট্ট এক নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কারা? শিবচরণ পাণ্ডে নামে পুরোনো এক বন্ধুর চিঠি পেয়ে রহস্যের গন্ধ পেলেন কর্নেল। হাজির হলেন পাহাড়ি এলাকাটিতে। কিন্তু তিনি সেখানে যেতে না যেতেই পাণ্ডের রক্তাক্ত দেহ খুঁজে পেলেন কর্নেল ও জয়ন্ত। বলা চলে, তাঁদের চোখের সামনেই মারা গেলেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল বাঘের আক্রমণেই মারা গেছেন তিনি। কিন্তু কর্নেলকে কি এত সহজে বোকা বানানো যায়? কী পাঠক, আর দেরি কেন, কর্নেলের একটি বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করুন, আর প্রবেশ করুন কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের রহস্যভুবনে। ও একটা কথা, শেষ যে কাহিনিটি বললাম, সেটার নাম ‘কোদণ্ড পাহাড়ের বা-রহস্য’।
ইশতিয়াক হাসান
ভারতের বর্ধমানের খনি এলাকা ভৈরবগড়ে কয়েক দিনের মধ্যে ঘটে তিনটি হত্যাকাণ্ড। খুন হওয়া ব্যক্তিদের দুজন ব্যবসায়ী, একজন অবসরপ্রাপ্ত খনি প্রকৌশলী। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, মৃত্যুর আগের দিন তিনজনের কাছেই এসেছিলেন এক তান্ত্রিক সাধু বাবা। প্রতিটি লাশ পাওয়া গিয়েছে ভৈরব মন্দিরের চত্বরে, সবার হার্টের পেছনে পিঠের দিকে ছিল তিনটি গভীর ক্ষতচিহ্ন। হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে আরও একটি যোগসূত্র আছে। প্রতিবারই খুনের পর ভৈরব মন্দিরের চূড়ায় আটকানো ত্রিশূলে মিলেছে টাটকা রক্ত। বিংশ শতকেও নরবলি! নাকি আরও জটিল কোনো রহস্য! ব্যাস, খনি এলাকা ভৈরব গড়ে গন্ধ শুঁকে শুঁকে হাজির টাক মাথার এক বৃদ্ধ।
কিংবা ধরমপুর রিজার্ভ ফরেস্টের রোমাঞ্চকর সেই কাহিনির কথাও বলতে পারি। ভয়ানক চেহারার একটি আফগান হাউন্ডকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছিল সেখানে। তার পরই রাকেশ শর্মা নামের এক ব্যক্তিকে মাছ ধরার সময় কুকুরটা গলা কামড়ে নিয়ে যাওয়ার খবর মিলল। আপাতদৃষ্টিতে একেবারে সোজা-সাপটা কেস। কিন্তু কী ভাগ্য! তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই বৃদ্ধ। আর তদন্তেই বেরিয়ে এল থলের ভেতরের বিড়াল। গল্পটার আরও খানিকটা বলা যেত। কিন্তু তাহলে হয়তো না পড়া থাকলে আগ্রহটা কমে যাবে আপনার!
এই বুড়োর পরিচয় যাঁরা এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি, তাঁদের বলছি, ইনি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অনবদ্য সৃষ্টি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। বাংলা-ইংরেজি রহস্যসাহিত্য মিলিয়ে হিসাব করলে আমার সবচেয়ে পছন্দের দুই-তিনটি চরিত্রের একটি এই নীলাদ্রি সরকার। মন খারাপ করা ব্যাপার হলো, রহস্যপ্রিয় পাঠকেরা ফেলুদা, শার্লক হোমস, মিস মার্পলের মতো চরিত্রগুলোকে যতটা চেনেন, ততটা চেনেন না নীলাদ্রি সরকারকে। অথচ স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ও নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটির ভক্ত ছিলেন। এমনকি মুস্তাফা সিরাজকে সন্দেশ পত্রিকায় কর্নেলকে নিয়ে লেখার জন্য অনুরোধ করে চিঠিও লিখেছিলেন।
বলতে পারেন, নীলাদ্রি সরকার আর দশটা গোয়েন্দা চরিত্রের থেকে একেবারেই আলাদা। গোয়েন্দা বলে পরিচয়ও দেন না নিজের। তবে কথা হলো, রহস্যই সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তার ধ্যান-জ্ঞান। মাথার টাকটা বেশির ভাগ সময় ঢাকা পড়ে থাকে টুপিতে, মুখভর্তি লম্বা সাদা দাড়ি-গোঁফ। বয়সে বৃদ্ধ হলে কী হবে, গায়ে প্রচণ্ড শক্তি। অনায়াসে পাহাড় বাইতে পারেন, হাঁটতে পারেন অনেকটা পথ, পিঠের কিটব্যাগ থেকে উঁকি দেয় প্রজাপতি ধরার জাল, গলায় ঝোলে বাইনোকুলার আর ক্যামেরা। প্রথম দেখায় মনে হবে বিদেশি ট্যুরিস্ট, আসলে বাঙালি।
এই চরিত্র সৃষ্টির গল্পটাও ভারি মজার। ১৯৫৬ সালের এক শীতকাল। মুর্শিদাবাদের লালবাগের ঐতিহ্যবাহী হাজার দুয়ারি প্রাসাদে গিয়েছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। হঠাৎ চোখ আটকে গেল সান্তার মতো পাকা গোঁফ-দাড়ির এক বৃদ্ধে। টকটকে ফরসা রং। প্যান্ট-শার্ট পরনে। পিঠে কিটব্যাগ। বাইনোকুলার দিয়ে দূরের কোনো কিছুতে ছিল নজর। মুখ তুলতেই টুপি খসে বেরিয়ে পড়ল টাক, রোদ পড়ে ঝলমল করছিল। হামাগুঁড়ি দিয়ে রহস্যজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন একটা ঝোপের দিকে। আশপাশে ওত পেতে থাকা গাইডদের একজন সামনে উদয় হয়ে বিদেশি ভেবে তাঁকে একটা ধ্বংসস্তূপের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ভুলভাল ইংরেজিতে। তখনই বুড়ো উঠে দাঁড়িয়ে বাংলায় বলে উঠলেন, এই প্রজাপতিগুলো বড্ড সেয়ানা। গাইডের তো রীতিমতো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়, এমনকি চোখ কপালে মুস্তাফা সিরাজেরও। তিনিও যে এই বৃদ্ধকে বিদেশিই ভেবে বসেছিলেন!
এর বহু বছর পর এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকের তাড়ায় ধারাবাহিক উপন্যাস লিখতে গিয়ে লেখকের মাথায় চলে এল ওই বুড়োর কথা। ব্যাস, তার আদলে বানিয়ে ফেললেন কর্নেল নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটি। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ওই রহস্যোপন্যাসের নাম ‘ছায়া পড়ে’।
কর্নেলকে নিয়ে আরও কিছু লেখার আগে আজ কেন চরিত্রটিকে আপনাদের সামনে হাজির করছি তা বলছি। ২০১২ সালের আজকের দিনে মানে ৪ সেপ্টেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেন কর্নেল চরিত্রের স্রষ্টা ও বইয়ের লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। অর্থাৎ আজ তাঁর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আবার কর্নেল নীলাদ্রি সরকারে ফিরে আসা যাক। ভারতের কোথাও কোথাও দুর্লভ প্রজাপতি, পাখি, অর্কিড, ক্যাকটাসের খবর পেলেই হলো, হাজির হয়ে যান। তা সেটা যতই দুর্গম পাহাড় কিংবা অরণ্যই হোক না কেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় খেয়াল রহস্যের পিছু নেওয়া। লালবাজারের (কলকাতা পুলিশের প্রধান কার্যালয়) দুঁদে গোয়েন্দারা যেখানে ব্যর্থ, সেখানেই শুরু নীলাদ্রি সরকারের। কখনো তাঁর সাহায্য চাইতে হাজির হয়ে যান গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি ডিবি অরিজিৎ লাহিড়ী, কিংবা অন্য কোনো গোয়েন্দা। কর্নেল হয়তো তখন তাঁর ইলিয়ট রোডের তিনতলা দালানটার প্রিয় ছাদবাগানে শত মাইল দূরের কোনো পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে আনা গাছের যত্ন নিচ্ছেন। অতিথিকে অভ্যর্থনা জানায় কর্নেলের একান্ত বিশ্বস্ত ভৃত্য ও গাছ পরিচর্যার সঙ্গী ষষ্ঠীচরণ।
মোটামুটি বেশির ভাগ অভিযানে কর্নেলের সঙ্গে থাকে দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার জয়ন্ত চৌধুরী। দুর্ধর্ষ অ্যাডভেঞ্চারগুলো জয়ন্তর মাধ্যমেই জানতে পারেন পত্রিকার পাঠকেরা। তবে সাংবাদিক হিসেবে তুখোড় হলেও জয়ন্তর রহস্যভেদী বুদ্ধি মোটেই আহামরি কিছু নয়। অবশ্য বেশির ভাগ বিখ্যাত গোয়েন্দাকাহিনির পার্শ্ব চরিত্ররাই গল্পের প্রয়োজনে খুরদার বুদ্ধির হন না। কর্নেলের বইগুলোর আরেক অসাধারণ সংযোজন অবসরপ্রাপ্ত দারোগা এবং পরবর্তী সময়ে প্রাইভেট ডিটেকটিভ কৃতান্ত কুমার হালদার। অনেক সময়ই দেখা যায় নিজের কোনো কেসে কিংবা কর্নেলকে সাহায্য করতে গিয়ে নানান অদ্ভুত কাণ্ডকীর্তি ঘটাচ্ছেন হালদার মশাই। পাঠকেরা এসব ঘটনার বর্ণনা পড়ে কখন হাসতে শুরু করেছেন নিজেরাই টের পান না। বলা চলে এই চরিত্রের উপস্থিতি কাহিনিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ করে। মুস্তাফা সিরাজ নিজেই হালদার মশাইকে উল্লেখ করেছেন তাঁর রিলিফ হিসাবে। কে কে হালদারের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার স্টাইলটাও কিন্তু দারুণ।
কর্নেলের বইগুলো পড়তে গিয়ে তার সঙ্গে অসাধারণ সব জায়গায় ভ্রমণও হয়ে যাবে আপনার। আমার যেমনটা হয়। কখনো নেপাল সীমান্তের ডমরু পাহাড়ে, কখনো পার্বত্য শিল্প এলাকা রানীডিহি বা বিহার সীমান্তের খনি এলাকা বারাহিয়া কিংবা ওডিশার সাগর তীরবর্তী গোপালপুর অন সি, চন্দনপুর অন সি, নতুবা ধরমপুরের ধরিয়া ফলসে পৌঁছে যাই। বুড়োর সঙ্গে সারস পাখির খোঁজ করতে গিয়েও রহস্যের পাকে আটকা পড়ি। এসব দুর্গম জায়গায় গিয়ে অসাধারণ সুন্দর কোনো সেচ বাংলো কিংবা সরকারি অন্য কোনো বাংলোয় থাকার সুযোগ হয়ে যায় কর্নেল আর জয়ন্ত চৌধুরীর বদন্যতায়।
তবে কর্নেলের সঙ্গে জোট বাঁধার আগে একটি সাবধানবাণী। খুনোখুনি লেগেই থাকে তাঁর বইয়ে। তাই উত্তেজনার মাত্রাটাও বেশি, কখনো একটু বড়দের উপযোগী ঘটনা কিংবা রগরগে বর্ণনাও থাকে, কিছু বই আবার একেবারেই কিশোর উপযোগী। মোটের ওপর ছেলে-বুড়ো সবার জন্যই ‘কর্নেল’ লেখা হয়েছে। আমার মতো রহস্য ও প্রকৃতিপ্রেমিকের জন্য এর চেয়ে সরস কাহিনি পাওয়া মুশকিল। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন, কেবল পাঁড় গোয়েন্দাকাহিনির ভক্তরা নন, অ্যাডভেঞ্চার কিংবা বন-জঙ্গল ও বন্যপ্রাণীপ্রেমী পাঠকদের জন্যও অসাধারণ এক চয়েজ হতে পারে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘কর্নেল’। পড়তে পড়তে এতটাই বুঁদ হয়ে যাবেন, মনে হবে আপনিও কাহিনিটির একটি চরিত্র। দেজ পাবলিশার্স থেকে কর্নেলর ১৭টি সমগ্র বের হয়েছে। আর কিশোরসমগ্র বের হয়েছে চারটি।
হাথিয়াগড় জঙ্গল। সেখানে বিশাল এক পাহাড়, নাম কোদণ্ড। ওই পাহাড়-জঙ্গলেই ভয়ানক এক মানুষখেকো বাঘের উৎপাতের খবর পেলেন কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। কিন্তু কী আশ্চর্য! বাঘটি শুধু মানুষ মারার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু সেই মানুষগুলোর মৃতদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিকে মানুষখেকোর এলাকায় ছোট্ট এক নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কারা? শিবচরণ পাণ্ডে নামে পুরোনো এক বন্ধুর চিঠি পেয়ে রহস্যের গন্ধ পেলেন কর্নেল। হাজির হলেন পাহাড়ি এলাকাটিতে। কিন্তু তিনি সেখানে যেতে না যেতেই পাণ্ডের রক্তাক্ত দেহ খুঁজে পেলেন কর্নেল ও জয়ন্ত। বলা চলে, তাঁদের চোখের সামনেই মারা গেলেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল বাঘের আক্রমণেই মারা গেছেন তিনি। কিন্তু কর্নেলকে কি এত সহজে বোকা বানানো যায়? কী পাঠক, আর দেরি কেন, কর্নেলের একটি বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করুন, আর প্রবেশ করুন কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের রহস্যভুবনে। ও একটা কথা, শেষ যে কাহিনিটি বললাম, সেটার নাম ‘কোদণ্ড পাহাড়ের বা-রহস্য’।
ভারতের বর্ধমানের খনি এলাকা ভৈরবগড়ে কয়েক দিনের মধ্যে ঘটে তিনটি হত্যাকাণ্ড। খুন হওয়া ব্যক্তিদের দুজন ব্যবসায়ী, একজন অবসরপ্রাপ্ত খনি প্রকৌশলী। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, মৃত্যুর আগের দিন তিনজনের কাছেই এসেছিলেন এক তান্ত্রিক সাধু বাবা। প্রতিটি লাশ পাওয়া গিয়েছে ভৈরব মন্দিরের চত্বরে, সবার হার্টের পেছনে পিঠের দিকে ছিল তিনটি গভীর ক্ষতচিহ্ন। হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে আরও একটি যোগসূত্র আছে। প্রতিবারই খুনের পর ভৈরব মন্দিরের চূড়ায় আটকানো ত্রিশূলে মিলেছে টাটকা রক্ত। বিংশ শতকেও নরবলি! নাকি আরও জটিল কোনো রহস্য! ব্যাস, খনি এলাকা ভৈরব গড়ে গন্ধ শুঁকে শুঁকে হাজির টাক মাথার এক বৃদ্ধ।
কিংবা ধরমপুর রিজার্ভ ফরেস্টের রোমাঞ্চকর সেই কাহিনির কথাও বলতে পারি। ভয়ানক চেহারার একটি আফগান হাউন্ডকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছিল সেখানে। তার পরই রাকেশ শর্মা নামের এক ব্যক্তিকে মাছ ধরার সময় কুকুরটা গলা কামড়ে নিয়ে যাওয়ার খবর মিলল। আপাতদৃষ্টিতে একেবারে সোজা-সাপটা কেস। কিন্তু কী ভাগ্য! তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই বৃদ্ধ। আর তদন্তেই বেরিয়ে এল থলের ভেতরের বিড়াল। গল্পটার আরও খানিকটা বলা যেত। কিন্তু তাহলে হয়তো না পড়া থাকলে আগ্রহটা কমে যাবে আপনার!
এই বুড়োর পরিচয় যাঁরা এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি, তাঁদের বলছি, ইনি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অনবদ্য সৃষ্টি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। বাংলা-ইংরেজি রহস্যসাহিত্য মিলিয়ে হিসাব করলে আমার সবচেয়ে পছন্দের দুই-তিনটি চরিত্রের একটি এই নীলাদ্রি সরকার। মন খারাপ করা ব্যাপার হলো, রহস্যপ্রিয় পাঠকেরা ফেলুদা, শার্লক হোমস, মিস মার্পলের মতো চরিত্রগুলোকে যতটা চেনেন, ততটা চেনেন না নীলাদ্রি সরকারকে। অথচ স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ও নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটির ভক্ত ছিলেন। এমনকি মুস্তাফা সিরাজকে সন্দেশ পত্রিকায় কর্নেলকে নিয়ে লেখার জন্য অনুরোধ করে চিঠিও লিখেছিলেন।
বলতে পারেন, নীলাদ্রি সরকার আর দশটা গোয়েন্দা চরিত্রের থেকে একেবারেই আলাদা। গোয়েন্দা বলে পরিচয়ও দেন না নিজের। তবে কথা হলো, রহস্যই সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তার ধ্যান-জ্ঞান। মাথার টাকটা বেশির ভাগ সময় ঢাকা পড়ে থাকে টুপিতে, মুখভর্তি লম্বা সাদা দাড়ি-গোঁফ। বয়সে বৃদ্ধ হলে কী হবে, গায়ে প্রচণ্ড শক্তি। অনায়াসে পাহাড় বাইতে পারেন, হাঁটতে পারেন অনেকটা পথ, পিঠের কিটব্যাগ থেকে উঁকি দেয় প্রজাপতি ধরার জাল, গলায় ঝোলে বাইনোকুলার আর ক্যামেরা। প্রথম দেখায় মনে হবে বিদেশি ট্যুরিস্ট, আসলে বাঙালি।
এই চরিত্র সৃষ্টির গল্পটাও ভারি মজার। ১৯৫৬ সালের এক শীতকাল। মুর্শিদাবাদের লালবাগের ঐতিহ্যবাহী হাজার দুয়ারি প্রাসাদে গিয়েছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। হঠাৎ চোখ আটকে গেল সান্তার মতো পাকা গোঁফ-দাড়ির এক বৃদ্ধে। টকটকে ফরসা রং। প্যান্ট-শার্ট পরনে। পিঠে কিটব্যাগ। বাইনোকুলার দিয়ে দূরের কোনো কিছুতে ছিল নজর। মুখ তুলতেই টুপি খসে বেরিয়ে পড়ল টাক, রোদ পড়ে ঝলমল করছিল। হামাগুঁড়ি দিয়ে রহস্যজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন একটা ঝোপের দিকে। আশপাশে ওত পেতে থাকা গাইডদের একজন সামনে উদয় হয়ে বিদেশি ভেবে তাঁকে একটা ধ্বংসস্তূপের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ভুলভাল ইংরেজিতে। তখনই বুড়ো উঠে দাঁড়িয়ে বাংলায় বলে উঠলেন, এই প্রজাপতিগুলো বড্ড সেয়ানা। গাইডের তো রীতিমতো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়, এমনকি চোখ কপালে মুস্তাফা সিরাজেরও। তিনিও যে এই বৃদ্ধকে বিদেশিই ভেবে বসেছিলেন!
এর বহু বছর পর এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকের তাড়ায় ধারাবাহিক উপন্যাস লিখতে গিয়ে লেখকের মাথায় চলে এল ওই বুড়োর কথা। ব্যাস, তার আদলে বানিয়ে ফেললেন কর্নেল নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটি। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ওই রহস্যোপন্যাসের নাম ‘ছায়া পড়ে’।
কর্নেলকে নিয়ে আরও কিছু লেখার আগে আজ কেন চরিত্রটিকে আপনাদের সামনে হাজির করছি তা বলছি। ২০১২ সালের আজকের দিনে মানে ৪ সেপ্টেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেন কর্নেল চরিত্রের স্রষ্টা ও বইয়ের লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। অর্থাৎ আজ তাঁর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আবার কর্নেল নীলাদ্রি সরকারে ফিরে আসা যাক। ভারতের কোথাও কোথাও দুর্লভ প্রজাপতি, পাখি, অর্কিড, ক্যাকটাসের খবর পেলেই হলো, হাজির হয়ে যান। তা সেটা যতই দুর্গম পাহাড় কিংবা অরণ্যই হোক না কেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় খেয়াল রহস্যের পিছু নেওয়া। লালবাজারের (কলকাতা পুলিশের প্রধান কার্যালয়) দুঁদে গোয়েন্দারা যেখানে ব্যর্থ, সেখানেই শুরু নীলাদ্রি সরকারের। কখনো তাঁর সাহায্য চাইতে হাজির হয়ে যান গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি ডিবি অরিজিৎ লাহিড়ী, কিংবা অন্য কোনো গোয়েন্দা। কর্নেল হয়তো তখন তাঁর ইলিয়ট রোডের তিনতলা দালানটার প্রিয় ছাদবাগানে শত মাইল দূরের কোনো পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে আনা গাছের যত্ন নিচ্ছেন। অতিথিকে অভ্যর্থনা জানায় কর্নেলের একান্ত বিশ্বস্ত ভৃত্য ও গাছ পরিচর্যার সঙ্গী ষষ্ঠীচরণ।
মোটামুটি বেশির ভাগ অভিযানে কর্নেলের সঙ্গে থাকে দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার জয়ন্ত চৌধুরী। দুর্ধর্ষ অ্যাডভেঞ্চারগুলো জয়ন্তর মাধ্যমেই জানতে পারেন পত্রিকার পাঠকেরা। তবে সাংবাদিক হিসেবে তুখোড় হলেও জয়ন্তর রহস্যভেদী বুদ্ধি মোটেই আহামরি কিছু নয়। অবশ্য বেশির ভাগ বিখ্যাত গোয়েন্দাকাহিনির পার্শ্ব চরিত্ররাই গল্পের প্রয়োজনে খুরদার বুদ্ধির হন না। কর্নেলের বইগুলোর আরেক অসাধারণ সংযোজন অবসরপ্রাপ্ত দারোগা এবং পরবর্তী সময়ে প্রাইভেট ডিটেকটিভ কৃতান্ত কুমার হালদার। অনেক সময়ই দেখা যায় নিজের কোনো কেসে কিংবা কর্নেলকে সাহায্য করতে গিয়ে নানান অদ্ভুত কাণ্ডকীর্তি ঘটাচ্ছেন হালদার মশাই। পাঠকেরা এসব ঘটনার বর্ণনা পড়ে কখন হাসতে শুরু করেছেন নিজেরাই টের পান না। বলা চলে এই চরিত্রের উপস্থিতি কাহিনিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ করে। মুস্তাফা সিরাজ নিজেই হালদার মশাইকে উল্লেখ করেছেন তাঁর রিলিফ হিসাবে। কে কে হালদারের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার স্টাইলটাও কিন্তু দারুণ।
কর্নেলের বইগুলো পড়তে গিয়ে তার সঙ্গে অসাধারণ সব জায়গায় ভ্রমণও হয়ে যাবে আপনার। আমার যেমনটা হয়। কখনো নেপাল সীমান্তের ডমরু পাহাড়ে, কখনো পার্বত্য শিল্প এলাকা রানীডিহি বা বিহার সীমান্তের খনি এলাকা বারাহিয়া কিংবা ওডিশার সাগর তীরবর্তী গোপালপুর অন সি, চন্দনপুর অন সি, নতুবা ধরমপুরের ধরিয়া ফলসে পৌঁছে যাই। বুড়োর সঙ্গে সারস পাখির খোঁজ করতে গিয়েও রহস্যের পাকে আটকা পড়ি। এসব দুর্গম জায়গায় গিয়ে অসাধারণ সুন্দর কোনো সেচ বাংলো কিংবা সরকারি অন্য কোনো বাংলোয় থাকার সুযোগ হয়ে যায় কর্নেল আর জয়ন্ত চৌধুরীর বদন্যতায়।
তবে কর্নেলের সঙ্গে জোট বাঁধার আগে একটি সাবধানবাণী। খুনোখুনি লেগেই থাকে তাঁর বইয়ে। তাই উত্তেজনার মাত্রাটাও বেশি, কখনো একটু বড়দের উপযোগী ঘটনা কিংবা রগরগে বর্ণনাও থাকে, কিছু বই আবার একেবারেই কিশোর উপযোগী। মোটের ওপর ছেলে-বুড়ো সবার জন্যই ‘কর্নেল’ লেখা হয়েছে। আমার মতো রহস্য ও প্রকৃতিপ্রেমিকের জন্য এর চেয়ে সরস কাহিনি পাওয়া মুশকিল। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন, কেবল পাঁড় গোয়েন্দাকাহিনির ভক্তরা নন, অ্যাডভেঞ্চার কিংবা বন-জঙ্গল ও বন্যপ্রাণীপ্রেমী পাঠকদের জন্যও অসাধারণ এক চয়েজ হতে পারে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘কর্নেল’। পড়তে পড়তে এতটাই বুঁদ হয়ে যাবেন, মনে হবে আপনিও কাহিনিটির একটি চরিত্র। দেজ পাবলিশার্স থেকে কর্নেলর ১৭টি সমগ্র বের হয়েছে। আর কিশোরসমগ্র বের হয়েছে চারটি।
হাথিয়াগড় জঙ্গল। সেখানে বিশাল এক পাহাড়, নাম কোদণ্ড। ওই পাহাড়-জঙ্গলেই ভয়ানক এক মানুষখেকো বাঘের উৎপাতের খবর পেলেন কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। কিন্তু কী আশ্চর্য! বাঘটি শুধু মানুষ মারার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু সেই মানুষগুলোর মৃতদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিকে মানুষখেকোর এলাকায় ছোট্ট এক নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কারা? শিবচরণ পাণ্ডে নামে পুরোনো এক বন্ধুর চিঠি পেয়ে রহস্যের গন্ধ পেলেন কর্নেল। হাজির হলেন পাহাড়ি এলাকাটিতে। কিন্তু তিনি সেখানে যেতে না যেতেই পাণ্ডের রক্তাক্ত দেহ খুঁজে পেলেন কর্নেল ও জয়ন্ত। বলা চলে, তাঁদের চোখের সামনেই মারা গেলেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল বাঘের আক্রমণেই মারা গেছেন তিনি। কিন্তু কর্নেলকে কি এত সহজে বোকা বানানো যায়? কী পাঠক, আর দেরি কেন, কর্নেলের একটি বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করুন, আর প্রবেশ করুন কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের রহস্যভুবনে। ও একটা কথা, শেষ যে কাহিনিটি বললাম, সেটার নাম ‘কোদণ্ড পাহাড়ের বা-রহস্য’।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২ দিন আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৭ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৩ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’
এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’
এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অনবদ্য সৃষ্টি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটি। কোথাও দুর্লভ প্রজাপতি, পাখি, অর্কিড, ক্যাকটাসের খবর পেলেই হলো, হাজির হয়ে যান সেখানে। তা সেটা যতই দুর্গম পাহাড় কিংবা অরণ্য হোক না কেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় খেয়াল রহস্যের পিছু নেওয়া।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৭ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৩ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অনবদ্য সৃষ্টি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটি। কোথাও দুর্লভ প্রজাপতি, পাখি, অর্কিড, ক্যাকটাসের খবর পেলেই হলো, হাজির হয়ে যান সেখানে। তা সেটা যতই দুর্গম পাহাড় কিংবা অরণ্য হোক না কেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় খেয়াল রহস্যের পিছু নেওয়া।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৩ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অনবদ্য সৃষ্টি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটি। কোথাও দুর্লভ প্রজাপতি, পাখি, অর্কিড, ক্যাকটাসের খবর পেলেই হলো, হাজির হয়ে যান সেখানে। তা সেটা যতই দুর্গম পাহাড় কিংবা অরণ্য হোক না কেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় খেয়াল রহস্যের পিছু নেওয়া।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২ দিন আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৭ দিন আগেহাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অনবদ্য সৃষ্টি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার চরিত্রটি। কোথাও দুর্লভ প্রজাপতি, পাখি, অর্কিড, ক্যাকটাসের খবর পেলেই হলো, হাজির হয়ে যান সেখানে। তা সেটা যতই দুর্গম পাহাড় কিংবা অরণ্য হোক না কেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় খেয়াল রহস্যের পিছু নেওয়া।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২ দিন আগেজনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
৭ দিন আগেহাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৩ দিন আগে