ফারজানা সিদ্দিকা

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
কবি তাঁর অফিসের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখতেন প্রেমিকাদের ছবি। লোকজন না থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেন! প্রেমিকাদের দীর্ঘ চিঠি লিখতেন তিনি। প্রেমিকারাও লিখতেন তাঁকে। চিঠিরই তো যুগ ছিল তখন। আর ছিল অ্যানালগ টেলিফোন। সম্ভাব্য সুযোগ পেলে টেলিফোনে কথা বলতেন। কিন্তু কবি পছন্দ করতেন চিঠি লিখতে এবং চিঠি পেতে।
কোথায় হারালো সেসব চিঠি? ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিক’-এর শামসুর রাহমান সংখ্যায় কোনো পারিবারিক পত্র প্রকাশিত হয়নি। সেগুলো মূলত শামসুর রাহমানকে লেখা বিশিষ্ট লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের চিঠি। অর্থাৎ এসব পত্র শামসুর রাহমান নিজেই যত্নসহকারে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁর লেখা পত্র? ২০০৭-এ সময় প্রকাশন থেকে বদরুল আলম আমিনের সম্পাদনায় ‘শামসুর রাহমানের পত্র ও প্রেমপত্র’ গ্রন্থে মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিকের শামসুর রাহমান সংখ্যায় প্রকাশিত পত্রগুলোর সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক পত্র এবং নয়খানা প্রেমপত্র যুক্ত হয়েছে। সেখানে মাত্র নয়খানা প্রেমপত্র আছে, নাম-পরিচয়হীন! অর্থাৎ কোনো এক প্রেমিকাকে লেখা কবির নয়খানা পত্র, তাতে প্রেমিকার নাম নেই, ছদ্মনামে বা বিভিন্ন উপমা দিয়ে প্রেমিকাকে সম্বোধন করেছেন তিনি। সেসব চিঠি কাকে লিখেছিলেন কবি? উৎসুক পাঠক হিসেবে তার খোঁজে গিয়েছিলাম কবি তুষার করের বাড়িতে। শামসুর রাহমানের অনুরাগী পাঠক তিনি। বছরের পর বছর তিনি কবির সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হওয়া কবির লেখা সযত্নে রেখেছেন। এমনও হয়েছে, প্রকাশ হওয়া কোনো লেখার কপি কবির কাছে নেই, কিন্তু কবি জানেন, তুষার করের কাছে নিশ্চিত পাওয়া যাবে! বহু পুরোনো লেখা একসঙ্গে জড়ো করে কবির জন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ঢাকার বাইরে কত অনুষ্ঠানে গেছেন কবির সঙ্গে। কবির বাড়িতে থেকেছেন দিনের পর দিন! এসব গল্প করবার সময় তুষার করের মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়! শিশুর সারল্য মাখা কণ্ঠে একদিন বললেন, ‘জানেন, কত রাত কবির সঙ্গে ঘুমিয়েছি আমি! মাঝরাতে জেগে উঠে আমি কবির ঘুমন্ত মুখ দেখতাম!’ বইয়ে প্রকাশিত নয়খানা চিঠির প্রাপকের খোঁজ তুষার কর জানবেনই এমন বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে তাঁর বাড়িতে যাওয়া বিফল হয়নি। সেই নয়টি চিঠির প্রাপকের পরিচয় জানেন তুষার কর। কবি ও চিঠির প্রাপকের গল্প করতে করতে ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে এলেন আরও কিছু কাগজপত্র। বারবার বাসা বদলাতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেক সংগ্রহ হারিয়ে গেছে তাঁর। সেসব নিয়ে আফসোস করতে করতে পুরোনো কাগজপত্রের ভেতর থেকে বের হলো একটা রঙিন ভাঁজপত্র! তারপর আরও কয়েকটা চিঠি!
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে নিতে চাই এ জন্য যে, কবির ‘প্রেমিক সত্তা’ কেমন হয় তা যেন পাঠক উপলব্ধি করে নিতে পারেন।
১৯৯১-এ হুমায়ুন আজাদের মুখোমুখি হন শামসুর রাহমান। কবিতা নিয়ে বিস্তর কথার ভিড়ে আসে কবিতায় প্রেমের প্রসঙ্গ। সেই সাক্ষাৎকার থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো :
হুমায়ুন আজাদ: আপনার প্রেমের কবিতা কি শুধুই কল্পনার সৃষ্টি? না ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?
শামসুর রাহমান : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধই অধিকাংশ কবিতা।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার এ প্রেমের কবিতাগুলোর মধ্যে কজন প্রেমিকাকে খুঁজে বের করা যাবে?
শামসুর রাহমান : বেশ কয়েকজনকে।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার প্রেমের কবিতায় আপনি কোন ধরনের আবেগ প্রকাশ করেন? অর্থাৎ হৃদয়ের আবেগের ওপর আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, না শারীরিক আবেগের ওপর?
শামসুর রাহমান : দুটোতেই।
হুমায়ুন আজাদ : আশাকরি আপনার অনেক প্রেমিকা ছিল। এঁদের মধ্যে কে সবচে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছে আপনাকে? অন্তত আপনি নামটা উল্লেখ করতে পারেন।
প্রথমটি না দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়টি...।
শামসুর রাহমান : এটা বলা মুশকিল। আমার মনে হয়, আমি সবার কাছেই ঋণী।
শেষের প্রশ্নটিতে মনে হচ্ছে হুমায়ুন আজাদ কবির কথায় প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন, একাধিক প্রেমিকা এসেছিল তাঁর জীবনে। কোনো একজন প্রেমিকার নাম জানতে চাইছেন।
কিন্তু ‘এটা বলা মুশকিল’ বলে এড়িয়ে গেলেন কবি। এই ‘মুশকিল’ ব্যাপারটিই হলো আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংকট। এ সংকটের ফলেই কবিকে সতর্কে লুকোতে হয় প্রেমিকার নাম। আর প্রেমিকারা লুকিয়ে রাখেন প্রেমিক কবির প্রেমপত্র! কিংবা একজন মাত্র প্রেমিকা প্রেমিক কবির মৃত্যুর পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি পত্র ছাপতে দেন। অথচ সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনো প্রেমিকার নাম প্রকাশ না করলেও কী অনায়াসে ‘ঋণী’ হয়ে থাকেন তিনি!
১৯৯৪ সালে তরুণী প্রেমিকার উদ্দেশে লেখা আটটি কবিতা নিয়ে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হবে ‘গোধূলিতে হৃদয়ের ধ্বনি’ নামে একটি ভাঁজপত্রের কাব্যগ্রন্থ—সেই কাব্যগ্রন্থের খোঁজ জানবেন না কবির রচনাবলির সম্পাদকেরাও! তুষার কর সেই ভাঁজপত্রটিই মেলে ধরেছিলেন!
রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের এক আয়োজনে শিলাইদহে দেখা হয়েছিল তাঁদের। সেই তরুণী গান জানেন, আবৃত্তি করেন, অভিনয় জানেন। সেই প্রথম দেখা ও আলাপ।
তারপর ফিরে গেছেন যে যাঁর গন্তব্যে। একজন ঢাকায়, অন্যজন রাজশাহী। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত পত্র বিনিময়ে খুব একটা সময় লাগেনি। মাঝে মাঝে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। এমনকি, একা একা কোনো একটা বাহানা করে বিমানে উঠে কবি চলে গেছেন রাজশাহী! লিখে ফেলেছেন রাজশাহীর বিমানবন্দর নিয়ে কবিতা! ভাঁজপত্রের একটি কবিতার নাম ‘বিমান বন্দর’। ‘বিমান বন্দরটার নেই কোনো বাহারি আদল,/ নেহাতই শাদামাটা; অনুজ্জ্বল/ দরজার কাছে জলকণাময়, [...] সেই বিমান বন্দর বন্দনীয়/ এবং চিরপ্রিয়/ হয়ে ওঠে আমার শুধু তুমি ছিলে ব’লে,/ আমাকে স্পর্শ করেছিলে ব’লে কথাচ্ছলে।’ ভাঁজপত্রের আরেকটি কবিতায় আছে রাজশাহীর ভূ-প্রকৃতির চিহ্ন। ‘বড় রুখা সুখা সেই শহর, অথচ সেখানে যাওয়ার সাধ আমার চূড়াস্পর্শী। কবিতার নাম ‘আলোকলতার মূল’। কবির সঙ্গেও ঢাকায় দেখা করতে এসেছিলেন প্রেমিকা। চারদিকে সতর্ক নজর!
ততদিনে কবি জাতীয় ব্যক্তিত্ব। পথেঘাটে দেখা করা মুশকিল। এমনকি নিজের বাড়িতে লেখার ঘরেও। বাড়ির লোকেরাও পাহারা দেয় তাঁকে! আরও বহু কবিতা অনুরাগীর বেশ ধরে প্রেমিকা আসেন কবির বাড়িতে, সামান্য সময়ের জন্য দেখা দিতে পারেন। সেটুকু সময়ের রেশ রয়ে যায় ভাঁজপত্রের কবিতায়, ‘যাচ্ছো, যাও।/ পথ রোধ করে দাঁড়াবার/ নেই অধিকার আমার।/ তোমার চ’লে-যাওয়া/ জানে দূর মফস্বলগামী বাস,/ প্রত্যুষের হাওয়া,/ লেজঝোলা পাখি,/ সবচেয়ে বেশি জানে/ এ কবির বিদীর্ণ হৃদয়।’ কবিতার নাম ‘যাচ্ছো, যাও’। এমনই সেই নজরদারি যে বাড়িতে বসে প্রেমিকার চিঠির উত্তর দিতে পারেন না কবি! কবির চিঠি বা খোঁজ না পেলে তুষার করকেই চিঠি লিখেন কবির প্রেমিকা। ২৯.০৩.১৯৯৪ তারিখযুক্ত জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের রাইটিং প্যাডে কবির ওপর সেই নজরদারির কথা প্রেমিকা লিখছেন, ‘ [...] অথচ কী আশ্চর্য জানেন?
কবি, আমার কবি, এখন এই ৬৬/বয়সে এসে কড়া শাসনের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন, দগ্ধ। বিখ্যাত এই কবির; একজন লেখকের লেখার স্বাধীনতা থাকবে না? ভাবতে পারেন?
লিখতে বসলে পাহারা দেওয়া হয়, কাকে লিখছেন [,] কারণ কি শুনবেন? শুনতে কারো মন্দ লাগবে না! আপনারও না। কারণ? ‘ভালোবাসা’ সমাজে হাতে গোনা ক’জন এর বেশি যেন কাউকে ভালো না বাসেন। তবে হ্যাঁ, পুরুষ হলে আলাদা কথা [,] কোনো মেয়েদের নয়। মেয়েদের ভালোবাসলে মহা অন্যায় হয়। পাপ হয়। মেয়েরা কি ভালোবাসার কোনো বস্তু হ’ল? তুষার’কে ভালোবাসতে দোষ নেই মানা নেই, তমা’কে বাসলেই যত বিপত্তি। [...]’ ২২.৮.৯৬ এ তুষার করকে শেষ চিঠি লেখেন কবির প্রেমিকা। তত দিনে তাঁর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে! বাবর আকস্মিক মৃত্যু, প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়া, পুত্রসন্তান নিয়ে চাকরির সন্ধান, এমনকি ঢাকায় বিজ্ঞাপনের কাজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সব শেষে দ্বিতীয় বিয়ের খবর। এই চিঠিতে কবি সম্পর্কে একটি বাক্যও নেই!
১৯৯৪-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী এ প্রেম ঘিরে কেবল এই ভাঁজপত্রের আটটি কবিতাই নয়, কবির এই পর্বের প্রেমে আরও অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। পদ্মাপাড়ের এই প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা কবির শেষ কবিতা কোনটি? ‘উত্তর’? ‘তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো, এই আকাশ আমার।’ প্রেমিকাকে ‘তমা’ নামেই সম্বোধন করতেন কবি। ‘উত্তর’ কবিতাটি ১৯৯৫-এ প্রকাশিত ‘এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে। কিন্তু তত দিনে কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁর নতুন প্রেমিকাকে!

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
কবি তাঁর অফিসের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখতেন প্রেমিকাদের ছবি। লোকজন না থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেন! প্রেমিকাদের দীর্ঘ চিঠি লিখতেন তিনি। প্রেমিকারাও লিখতেন তাঁকে। চিঠিরই তো যুগ ছিল তখন। আর ছিল অ্যানালগ টেলিফোন। সম্ভাব্য সুযোগ পেলে টেলিফোনে কথা বলতেন। কিন্তু কবি পছন্দ করতেন চিঠি লিখতে এবং চিঠি পেতে।
কোথায় হারালো সেসব চিঠি? ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিক’-এর শামসুর রাহমান সংখ্যায় কোনো পারিবারিক পত্র প্রকাশিত হয়নি। সেগুলো মূলত শামসুর রাহমানকে লেখা বিশিষ্ট লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের চিঠি। অর্থাৎ এসব পত্র শামসুর রাহমান নিজেই যত্নসহকারে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁর লেখা পত্র? ২০০৭-এ সময় প্রকাশন থেকে বদরুল আলম আমিনের সম্পাদনায় ‘শামসুর রাহমানের পত্র ও প্রেমপত্র’ গ্রন্থে মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিকের শামসুর রাহমান সংখ্যায় প্রকাশিত পত্রগুলোর সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক পত্র এবং নয়খানা প্রেমপত্র যুক্ত হয়েছে। সেখানে মাত্র নয়খানা প্রেমপত্র আছে, নাম-পরিচয়হীন! অর্থাৎ কোনো এক প্রেমিকাকে লেখা কবির নয়খানা পত্র, তাতে প্রেমিকার নাম নেই, ছদ্মনামে বা বিভিন্ন উপমা দিয়ে প্রেমিকাকে সম্বোধন করেছেন তিনি। সেসব চিঠি কাকে লিখেছিলেন কবি? উৎসুক পাঠক হিসেবে তার খোঁজে গিয়েছিলাম কবি তুষার করের বাড়িতে। শামসুর রাহমানের অনুরাগী পাঠক তিনি। বছরের পর বছর তিনি কবির সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হওয়া কবির লেখা সযত্নে রেখেছেন। এমনও হয়েছে, প্রকাশ হওয়া কোনো লেখার কপি কবির কাছে নেই, কিন্তু কবি জানেন, তুষার করের কাছে নিশ্চিত পাওয়া যাবে! বহু পুরোনো লেখা একসঙ্গে জড়ো করে কবির জন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ঢাকার বাইরে কত অনুষ্ঠানে গেছেন কবির সঙ্গে। কবির বাড়িতে থেকেছেন দিনের পর দিন! এসব গল্প করবার সময় তুষার করের মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়! শিশুর সারল্য মাখা কণ্ঠে একদিন বললেন, ‘জানেন, কত রাত কবির সঙ্গে ঘুমিয়েছি আমি! মাঝরাতে জেগে উঠে আমি কবির ঘুমন্ত মুখ দেখতাম!’ বইয়ে প্রকাশিত নয়খানা চিঠির প্রাপকের খোঁজ তুষার কর জানবেনই এমন বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে তাঁর বাড়িতে যাওয়া বিফল হয়নি। সেই নয়টি চিঠির প্রাপকের পরিচয় জানেন তুষার কর। কবি ও চিঠির প্রাপকের গল্প করতে করতে ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে এলেন আরও কিছু কাগজপত্র। বারবার বাসা বদলাতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেক সংগ্রহ হারিয়ে গেছে তাঁর। সেসব নিয়ে আফসোস করতে করতে পুরোনো কাগজপত্রের ভেতর থেকে বের হলো একটা রঙিন ভাঁজপত্র! তারপর আরও কয়েকটা চিঠি!
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে নিতে চাই এ জন্য যে, কবির ‘প্রেমিক সত্তা’ কেমন হয় তা যেন পাঠক উপলব্ধি করে নিতে পারেন।
১৯৯১-এ হুমায়ুন আজাদের মুখোমুখি হন শামসুর রাহমান। কবিতা নিয়ে বিস্তর কথার ভিড়ে আসে কবিতায় প্রেমের প্রসঙ্গ। সেই সাক্ষাৎকার থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো :
হুমায়ুন আজাদ: আপনার প্রেমের কবিতা কি শুধুই কল্পনার সৃষ্টি? না ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?
শামসুর রাহমান : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধই অধিকাংশ কবিতা।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার এ প্রেমের কবিতাগুলোর মধ্যে কজন প্রেমিকাকে খুঁজে বের করা যাবে?
শামসুর রাহমান : বেশ কয়েকজনকে।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার প্রেমের কবিতায় আপনি কোন ধরনের আবেগ প্রকাশ করেন? অর্থাৎ হৃদয়ের আবেগের ওপর আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, না শারীরিক আবেগের ওপর?
শামসুর রাহমান : দুটোতেই।
হুমায়ুন আজাদ : আশাকরি আপনার অনেক প্রেমিকা ছিল। এঁদের মধ্যে কে সবচে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছে আপনাকে? অন্তত আপনি নামটা উল্লেখ করতে পারেন।
প্রথমটি না দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়টি...।
শামসুর রাহমান : এটা বলা মুশকিল। আমার মনে হয়, আমি সবার কাছেই ঋণী।
শেষের প্রশ্নটিতে মনে হচ্ছে হুমায়ুন আজাদ কবির কথায় প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন, একাধিক প্রেমিকা এসেছিল তাঁর জীবনে। কোনো একজন প্রেমিকার নাম জানতে চাইছেন।
কিন্তু ‘এটা বলা মুশকিল’ বলে এড়িয়ে গেলেন কবি। এই ‘মুশকিল’ ব্যাপারটিই হলো আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংকট। এ সংকটের ফলেই কবিকে সতর্কে লুকোতে হয় প্রেমিকার নাম। আর প্রেমিকারা লুকিয়ে রাখেন প্রেমিক কবির প্রেমপত্র! কিংবা একজন মাত্র প্রেমিকা প্রেমিক কবির মৃত্যুর পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি পত্র ছাপতে দেন। অথচ সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনো প্রেমিকার নাম প্রকাশ না করলেও কী অনায়াসে ‘ঋণী’ হয়ে থাকেন তিনি!
১৯৯৪ সালে তরুণী প্রেমিকার উদ্দেশে লেখা আটটি কবিতা নিয়ে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হবে ‘গোধূলিতে হৃদয়ের ধ্বনি’ নামে একটি ভাঁজপত্রের কাব্যগ্রন্থ—সেই কাব্যগ্রন্থের খোঁজ জানবেন না কবির রচনাবলির সম্পাদকেরাও! তুষার কর সেই ভাঁজপত্রটিই মেলে ধরেছিলেন!
রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের এক আয়োজনে শিলাইদহে দেখা হয়েছিল তাঁদের। সেই তরুণী গান জানেন, আবৃত্তি করেন, অভিনয় জানেন। সেই প্রথম দেখা ও আলাপ।
তারপর ফিরে গেছেন যে যাঁর গন্তব্যে। একজন ঢাকায়, অন্যজন রাজশাহী। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত পত্র বিনিময়ে খুব একটা সময় লাগেনি। মাঝে মাঝে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। এমনকি, একা একা কোনো একটা বাহানা করে বিমানে উঠে কবি চলে গেছেন রাজশাহী! লিখে ফেলেছেন রাজশাহীর বিমানবন্দর নিয়ে কবিতা! ভাঁজপত্রের একটি কবিতার নাম ‘বিমান বন্দর’। ‘বিমান বন্দরটার নেই কোনো বাহারি আদল,/ নেহাতই শাদামাটা; অনুজ্জ্বল/ দরজার কাছে জলকণাময়, [...] সেই বিমান বন্দর বন্দনীয়/ এবং চিরপ্রিয়/ হয়ে ওঠে আমার শুধু তুমি ছিলে ব’লে,/ আমাকে স্পর্শ করেছিলে ব’লে কথাচ্ছলে।’ ভাঁজপত্রের আরেকটি কবিতায় আছে রাজশাহীর ভূ-প্রকৃতির চিহ্ন। ‘বড় রুখা সুখা সেই শহর, অথচ সেখানে যাওয়ার সাধ আমার চূড়াস্পর্শী। কবিতার নাম ‘আলোকলতার মূল’। কবির সঙ্গেও ঢাকায় দেখা করতে এসেছিলেন প্রেমিকা। চারদিকে সতর্ক নজর!
ততদিনে কবি জাতীয় ব্যক্তিত্ব। পথেঘাটে দেখা করা মুশকিল। এমনকি নিজের বাড়িতে লেখার ঘরেও। বাড়ির লোকেরাও পাহারা দেয় তাঁকে! আরও বহু কবিতা অনুরাগীর বেশ ধরে প্রেমিকা আসেন কবির বাড়িতে, সামান্য সময়ের জন্য দেখা দিতে পারেন। সেটুকু সময়ের রেশ রয়ে যায় ভাঁজপত্রের কবিতায়, ‘যাচ্ছো, যাও।/ পথ রোধ করে দাঁড়াবার/ নেই অধিকার আমার।/ তোমার চ’লে-যাওয়া/ জানে দূর মফস্বলগামী বাস,/ প্রত্যুষের হাওয়া,/ লেজঝোলা পাখি,/ সবচেয়ে বেশি জানে/ এ কবির বিদীর্ণ হৃদয়।’ কবিতার নাম ‘যাচ্ছো, যাও’। এমনই সেই নজরদারি যে বাড়িতে বসে প্রেমিকার চিঠির উত্তর দিতে পারেন না কবি! কবির চিঠি বা খোঁজ না পেলে তুষার করকেই চিঠি লিখেন কবির প্রেমিকা। ২৯.০৩.১৯৯৪ তারিখযুক্ত জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের রাইটিং প্যাডে কবির ওপর সেই নজরদারির কথা প্রেমিকা লিখছেন, ‘ [...] অথচ কী আশ্চর্য জানেন?
কবি, আমার কবি, এখন এই ৬৬/বয়সে এসে কড়া শাসনের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন, দগ্ধ। বিখ্যাত এই কবির; একজন লেখকের লেখার স্বাধীনতা থাকবে না? ভাবতে পারেন?
লিখতে বসলে পাহারা দেওয়া হয়, কাকে লিখছেন [,] কারণ কি শুনবেন? শুনতে কারো মন্দ লাগবে না! আপনারও না। কারণ? ‘ভালোবাসা’ সমাজে হাতে গোনা ক’জন এর বেশি যেন কাউকে ভালো না বাসেন। তবে হ্যাঁ, পুরুষ হলে আলাদা কথা [,] কোনো মেয়েদের নয়। মেয়েদের ভালোবাসলে মহা অন্যায় হয়। পাপ হয়। মেয়েরা কি ভালোবাসার কোনো বস্তু হ’ল? তুষার’কে ভালোবাসতে দোষ নেই মানা নেই, তমা’কে বাসলেই যত বিপত্তি। [...]’ ২২.৮.৯৬ এ তুষার করকে শেষ চিঠি লেখেন কবির প্রেমিকা। তত দিনে তাঁর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে! বাবর আকস্মিক মৃত্যু, প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়া, পুত্রসন্তান নিয়ে চাকরির সন্ধান, এমনকি ঢাকায় বিজ্ঞাপনের কাজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সব শেষে দ্বিতীয় বিয়ের খবর। এই চিঠিতে কবি সম্পর্কে একটি বাক্যও নেই!
১৯৯৪-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী এ প্রেম ঘিরে কেবল এই ভাঁজপত্রের আটটি কবিতাই নয়, কবির এই পর্বের প্রেমে আরও অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। পদ্মাপাড়ের এই প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা কবির শেষ কবিতা কোনটি? ‘উত্তর’? ‘তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো, এই আকাশ আমার।’ প্রেমিকাকে ‘তমা’ নামেই সম্বোধন করতেন কবি। ‘উত্তর’ কবিতাটি ১৯৯৫-এ প্রকাশিত ‘এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে। কিন্তু তত দিনে কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁর নতুন প্রেমিকাকে!
ফারজানা সিদ্দিকা

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
কবি তাঁর অফিসের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখতেন প্রেমিকাদের ছবি। লোকজন না থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেন! প্রেমিকাদের দীর্ঘ চিঠি লিখতেন তিনি। প্রেমিকারাও লিখতেন তাঁকে। চিঠিরই তো যুগ ছিল তখন। আর ছিল অ্যানালগ টেলিফোন। সম্ভাব্য সুযোগ পেলে টেলিফোনে কথা বলতেন। কিন্তু কবি পছন্দ করতেন চিঠি লিখতে এবং চিঠি পেতে।
কোথায় হারালো সেসব চিঠি? ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিক’-এর শামসুর রাহমান সংখ্যায় কোনো পারিবারিক পত্র প্রকাশিত হয়নি। সেগুলো মূলত শামসুর রাহমানকে লেখা বিশিষ্ট লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের চিঠি। অর্থাৎ এসব পত্র শামসুর রাহমান নিজেই যত্নসহকারে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁর লেখা পত্র? ২০০৭-এ সময় প্রকাশন থেকে বদরুল আলম আমিনের সম্পাদনায় ‘শামসুর রাহমানের পত্র ও প্রেমপত্র’ গ্রন্থে মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিকের শামসুর রাহমান সংখ্যায় প্রকাশিত পত্রগুলোর সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক পত্র এবং নয়খানা প্রেমপত্র যুক্ত হয়েছে। সেখানে মাত্র নয়খানা প্রেমপত্র আছে, নাম-পরিচয়হীন! অর্থাৎ কোনো এক প্রেমিকাকে লেখা কবির নয়খানা পত্র, তাতে প্রেমিকার নাম নেই, ছদ্মনামে বা বিভিন্ন উপমা দিয়ে প্রেমিকাকে সম্বোধন করেছেন তিনি। সেসব চিঠি কাকে লিখেছিলেন কবি? উৎসুক পাঠক হিসেবে তার খোঁজে গিয়েছিলাম কবি তুষার করের বাড়িতে। শামসুর রাহমানের অনুরাগী পাঠক তিনি। বছরের পর বছর তিনি কবির সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হওয়া কবির লেখা সযত্নে রেখেছেন। এমনও হয়েছে, প্রকাশ হওয়া কোনো লেখার কপি কবির কাছে নেই, কিন্তু কবি জানেন, তুষার করের কাছে নিশ্চিত পাওয়া যাবে! বহু পুরোনো লেখা একসঙ্গে জড়ো করে কবির জন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ঢাকার বাইরে কত অনুষ্ঠানে গেছেন কবির সঙ্গে। কবির বাড়িতে থেকেছেন দিনের পর দিন! এসব গল্প করবার সময় তুষার করের মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়! শিশুর সারল্য মাখা কণ্ঠে একদিন বললেন, ‘জানেন, কত রাত কবির সঙ্গে ঘুমিয়েছি আমি! মাঝরাতে জেগে উঠে আমি কবির ঘুমন্ত মুখ দেখতাম!’ বইয়ে প্রকাশিত নয়খানা চিঠির প্রাপকের খোঁজ তুষার কর জানবেনই এমন বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে তাঁর বাড়িতে যাওয়া বিফল হয়নি। সেই নয়টি চিঠির প্রাপকের পরিচয় জানেন তুষার কর। কবি ও চিঠির প্রাপকের গল্প করতে করতে ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে এলেন আরও কিছু কাগজপত্র। বারবার বাসা বদলাতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেক সংগ্রহ হারিয়ে গেছে তাঁর। সেসব নিয়ে আফসোস করতে করতে পুরোনো কাগজপত্রের ভেতর থেকে বের হলো একটা রঙিন ভাঁজপত্র! তারপর আরও কয়েকটা চিঠি!
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে নিতে চাই এ জন্য যে, কবির ‘প্রেমিক সত্তা’ কেমন হয় তা যেন পাঠক উপলব্ধি করে নিতে পারেন।
১৯৯১-এ হুমায়ুন আজাদের মুখোমুখি হন শামসুর রাহমান। কবিতা নিয়ে বিস্তর কথার ভিড়ে আসে কবিতায় প্রেমের প্রসঙ্গ। সেই সাক্ষাৎকার থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো :
হুমায়ুন আজাদ: আপনার প্রেমের কবিতা কি শুধুই কল্পনার সৃষ্টি? না ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?
শামসুর রাহমান : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধই অধিকাংশ কবিতা।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার এ প্রেমের কবিতাগুলোর মধ্যে কজন প্রেমিকাকে খুঁজে বের করা যাবে?
শামসুর রাহমান : বেশ কয়েকজনকে।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার প্রেমের কবিতায় আপনি কোন ধরনের আবেগ প্রকাশ করেন? অর্থাৎ হৃদয়ের আবেগের ওপর আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, না শারীরিক আবেগের ওপর?
শামসুর রাহমান : দুটোতেই।
হুমায়ুন আজাদ : আশাকরি আপনার অনেক প্রেমিকা ছিল। এঁদের মধ্যে কে সবচে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছে আপনাকে? অন্তত আপনি নামটা উল্লেখ করতে পারেন।
প্রথমটি না দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়টি...।
শামসুর রাহমান : এটা বলা মুশকিল। আমার মনে হয়, আমি সবার কাছেই ঋণী।
শেষের প্রশ্নটিতে মনে হচ্ছে হুমায়ুন আজাদ কবির কথায় প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন, একাধিক প্রেমিকা এসেছিল তাঁর জীবনে। কোনো একজন প্রেমিকার নাম জানতে চাইছেন।
কিন্তু ‘এটা বলা মুশকিল’ বলে এড়িয়ে গেলেন কবি। এই ‘মুশকিল’ ব্যাপারটিই হলো আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংকট। এ সংকটের ফলেই কবিকে সতর্কে লুকোতে হয় প্রেমিকার নাম। আর প্রেমিকারা লুকিয়ে রাখেন প্রেমিক কবির প্রেমপত্র! কিংবা একজন মাত্র প্রেমিকা প্রেমিক কবির মৃত্যুর পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি পত্র ছাপতে দেন। অথচ সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনো প্রেমিকার নাম প্রকাশ না করলেও কী অনায়াসে ‘ঋণী’ হয়ে থাকেন তিনি!
১৯৯৪ সালে তরুণী প্রেমিকার উদ্দেশে লেখা আটটি কবিতা নিয়ে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হবে ‘গোধূলিতে হৃদয়ের ধ্বনি’ নামে একটি ভাঁজপত্রের কাব্যগ্রন্থ—সেই কাব্যগ্রন্থের খোঁজ জানবেন না কবির রচনাবলির সম্পাদকেরাও! তুষার কর সেই ভাঁজপত্রটিই মেলে ধরেছিলেন!
রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের এক আয়োজনে শিলাইদহে দেখা হয়েছিল তাঁদের। সেই তরুণী গান জানেন, আবৃত্তি করেন, অভিনয় জানেন। সেই প্রথম দেখা ও আলাপ।
তারপর ফিরে গেছেন যে যাঁর গন্তব্যে। একজন ঢাকায়, অন্যজন রাজশাহী। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত পত্র বিনিময়ে খুব একটা সময় লাগেনি। মাঝে মাঝে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। এমনকি, একা একা কোনো একটা বাহানা করে বিমানে উঠে কবি চলে গেছেন রাজশাহী! লিখে ফেলেছেন রাজশাহীর বিমানবন্দর নিয়ে কবিতা! ভাঁজপত্রের একটি কবিতার নাম ‘বিমান বন্দর’। ‘বিমান বন্দরটার নেই কোনো বাহারি আদল,/ নেহাতই শাদামাটা; অনুজ্জ্বল/ দরজার কাছে জলকণাময়, [...] সেই বিমান বন্দর বন্দনীয়/ এবং চিরপ্রিয়/ হয়ে ওঠে আমার শুধু তুমি ছিলে ব’লে,/ আমাকে স্পর্শ করেছিলে ব’লে কথাচ্ছলে।’ ভাঁজপত্রের আরেকটি কবিতায় আছে রাজশাহীর ভূ-প্রকৃতির চিহ্ন। ‘বড় রুখা সুখা সেই শহর, অথচ সেখানে যাওয়ার সাধ আমার চূড়াস্পর্শী। কবিতার নাম ‘আলোকলতার মূল’। কবির সঙ্গেও ঢাকায় দেখা করতে এসেছিলেন প্রেমিকা। চারদিকে সতর্ক নজর!
ততদিনে কবি জাতীয় ব্যক্তিত্ব। পথেঘাটে দেখা করা মুশকিল। এমনকি নিজের বাড়িতে লেখার ঘরেও। বাড়ির লোকেরাও পাহারা দেয় তাঁকে! আরও বহু কবিতা অনুরাগীর বেশ ধরে প্রেমিকা আসেন কবির বাড়িতে, সামান্য সময়ের জন্য দেখা দিতে পারেন। সেটুকু সময়ের রেশ রয়ে যায় ভাঁজপত্রের কবিতায়, ‘যাচ্ছো, যাও।/ পথ রোধ করে দাঁড়াবার/ নেই অধিকার আমার।/ তোমার চ’লে-যাওয়া/ জানে দূর মফস্বলগামী বাস,/ প্রত্যুষের হাওয়া,/ লেজঝোলা পাখি,/ সবচেয়ে বেশি জানে/ এ কবির বিদীর্ণ হৃদয়।’ কবিতার নাম ‘যাচ্ছো, যাও’। এমনই সেই নজরদারি যে বাড়িতে বসে প্রেমিকার চিঠির উত্তর দিতে পারেন না কবি! কবির চিঠি বা খোঁজ না পেলে তুষার করকেই চিঠি লিখেন কবির প্রেমিকা। ২৯.০৩.১৯৯৪ তারিখযুক্ত জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের রাইটিং প্যাডে কবির ওপর সেই নজরদারির কথা প্রেমিকা লিখছেন, ‘ [...] অথচ কী আশ্চর্য জানেন?
কবি, আমার কবি, এখন এই ৬৬/বয়সে এসে কড়া শাসনের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন, দগ্ধ। বিখ্যাত এই কবির; একজন লেখকের লেখার স্বাধীনতা থাকবে না? ভাবতে পারেন?
লিখতে বসলে পাহারা দেওয়া হয়, কাকে লিখছেন [,] কারণ কি শুনবেন? শুনতে কারো মন্দ লাগবে না! আপনারও না। কারণ? ‘ভালোবাসা’ সমাজে হাতে গোনা ক’জন এর বেশি যেন কাউকে ভালো না বাসেন। তবে হ্যাঁ, পুরুষ হলে আলাদা কথা [,] কোনো মেয়েদের নয়। মেয়েদের ভালোবাসলে মহা অন্যায় হয়। পাপ হয়। মেয়েরা কি ভালোবাসার কোনো বস্তু হ’ল? তুষার’কে ভালোবাসতে দোষ নেই মানা নেই, তমা’কে বাসলেই যত বিপত্তি। [...]’ ২২.৮.৯৬ এ তুষার করকে শেষ চিঠি লেখেন কবির প্রেমিকা। তত দিনে তাঁর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে! বাবর আকস্মিক মৃত্যু, প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়া, পুত্রসন্তান নিয়ে চাকরির সন্ধান, এমনকি ঢাকায় বিজ্ঞাপনের কাজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সব শেষে দ্বিতীয় বিয়ের খবর। এই চিঠিতে কবি সম্পর্কে একটি বাক্যও নেই!
১৯৯৪-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী এ প্রেম ঘিরে কেবল এই ভাঁজপত্রের আটটি কবিতাই নয়, কবির এই পর্বের প্রেমে আরও অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। পদ্মাপাড়ের এই প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা কবির শেষ কবিতা কোনটি? ‘উত্তর’? ‘তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো, এই আকাশ আমার।’ প্রেমিকাকে ‘তমা’ নামেই সম্বোধন করতেন কবি। ‘উত্তর’ কবিতাটি ১৯৯৫-এ প্রকাশিত ‘এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে। কিন্তু তত দিনে কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁর নতুন প্রেমিকাকে!

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
কবি তাঁর অফিসের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখতেন প্রেমিকাদের ছবি। লোকজন না থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেন! প্রেমিকাদের দীর্ঘ চিঠি লিখতেন তিনি। প্রেমিকারাও লিখতেন তাঁকে। চিঠিরই তো যুগ ছিল তখন। আর ছিল অ্যানালগ টেলিফোন। সম্ভাব্য সুযোগ পেলে টেলিফোনে কথা বলতেন। কিন্তু কবি পছন্দ করতেন চিঠি লিখতে এবং চিঠি পেতে।
কোথায় হারালো সেসব চিঠি? ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিক’-এর শামসুর রাহমান সংখ্যায় কোনো পারিবারিক পত্র প্রকাশিত হয়নি। সেগুলো মূলত শামসুর রাহমানকে লেখা বিশিষ্ট লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের চিঠি। অর্থাৎ এসব পত্র শামসুর রাহমান নিজেই যত্নসহকারে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁর লেখা পত্র? ২০০৭-এ সময় প্রকাশন থেকে বদরুল আলম আমিনের সম্পাদনায় ‘শামসুর রাহমানের পত্র ও প্রেমপত্র’ গ্রন্থে মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিকের শামসুর রাহমান সংখ্যায় প্রকাশিত পত্রগুলোর সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক পত্র এবং নয়খানা প্রেমপত্র যুক্ত হয়েছে। সেখানে মাত্র নয়খানা প্রেমপত্র আছে, নাম-পরিচয়হীন! অর্থাৎ কোনো এক প্রেমিকাকে লেখা কবির নয়খানা পত্র, তাতে প্রেমিকার নাম নেই, ছদ্মনামে বা বিভিন্ন উপমা দিয়ে প্রেমিকাকে সম্বোধন করেছেন তিনি। সেসব চিঠি কাকে লিখেছিলেন কবি? উৎসুক পাঠক হিসেবে তার খোঁজে গিয়েছিলাম কবি তুষার করের বাড়িতে। শামসুর রাহমানের অনুরাগী পাঠক তিনি। বছরের পর বছর তিনি কবির সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হওয়া কবির লেখা সযত্নে রেখেছেন। এমনও হয়েছে, প্রকাশ হওয়া কোনো লেখার কপি কবির কাছে নেই, কিন্তু কবি জানেন, তুষার করের কাছে নিশ্চিত পাওয়া যাবে! বহু পুরোনো লেখা একসঙ্গে জড়ো করে কবির জন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ঢাকার বাইরে কত অনুষ্ঠানে গেছেন কবির সঙ্গে। কবির বাড়িতে থেকেছেন দিনের পর দিন! এসব গল্প করবার সময় তুষার করের মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়! শিশুর সারল্য মাখা কণ্ঠে একদিন বললেন, ‘জানেন, কত রাত কবির সঙ্গে ঘুমিয়েছি আমি! মাঝরাতে জেগে উঠে আমি কবির ঘুমন্ত মুখ দেখতাম!’ বইয়ে প্রকাশিত নয়খানা চিঠির প্রাপকের খোঁজ তুষার কর জানবেনই এমন বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে তাঁর বাড়িতে যাওয়া বিফল হয়নি। সেই নয়টি চিঠির প্রাপকের পরিচয় জানেন তুষার কর। কবি ও চিঠির প্রাপকের গল্প করতে করতে ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে এলেন আরও কিছু কাগজপত্র। বারবার বাসা বদলাতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেক সংগ্রহ হারিয়ে গেছে তাঁর। সেসব নিয়ে আফসোস করতে করতে পুরোনো কাগজপত্রের ভেতর থেকে বের হলো একটা রঙিন ভাঁজপত্র! তারপর আরও কয়েকটা চিঠি!
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে নিতে চাই এ জন্য যে, কবির ‘প্রেমিক সত্তা’ কেমন হয় তা যেন পাঠক উপলব্ধি করে নিতে পারেন।
১৯৯১-এ হুমায়ুন আজাদের মুখোমুখি হন শামসুর রাহমান। কবিতা নিয়ে বিস্তর কথার ভিড়ে আসে কবিতায় প্রেমের প্রসঙ্গ। সেই সাক্ষাৎকার থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো :
হুমায়ুন আজাদ: আপনার প্রেমের কবিতা কি শুধুই কল্পনার সৃষ্টি? না ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?
শামসুর রাহমান : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধই অধিকাংশ কবিতা।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার এ প্রেমের কবিতাগুলোর মধ্যে কজন প্রেমিকাকে খুঁজে বের করা যাবে?
শামসুর রাহমান : বেশ কয়েকজনকে।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার প্রেমের কবিতায় আপনি কোন ধরনের আবেগ প্রকাশ করেন? অর্থাৎ হৃদয়ের আবেগের ওপর আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, না শারীরিক আবেগের ওপর?
শামসুর রাহমান : দুটোতেই।
হুমায়ুন আজাদ : আশাকরি আপনার অনেক প্রেমিকা ছিল। এঁদের মধ্যে কে সবচে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছে আপনাকে? অন্তত আপনি নামটা উল্লেখ করতে পারেন।
প্রথমটি না দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়টি...।
শামসুর রাহমান : এটা বলা মুশকিল। আমার মনে হয়, আমি সবার কাছেই ঋণী।
শেষের প্রশ্নটিতে মনে হচ্ছে হুমায়ুন আজাদ কবির কথায় প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন, একাধিক প্রেমিকা এসেছিল তাঁর জীবনে। কোনো একজন প্রেমিকার নাম জানতে চাইছেন।
কিন্তু ‘এটা বলা মুশকিল’ বলে এড়িয়ে গেলেন কবি। এই ‘মুশকিল’ ব্যাপারটিই হলো আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংকট। এ সংকটের ফলেই কবিকে সতর্কে লুকোতে হয় প্রেমিকার নাম। আর প্রেমিকারা লুকিয়ে রাখেন প্রেমিক কবির প্রেমপত্র! কিংবা একজন মাত্র প্রেমিকা প্রেমিক কবির মৃত্যুর পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি পত্র ছাপতে দেন। অথচ সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনো প্রেমিকার নাম প্রকাশ না করলেও কী অনায়াসে ‘ঋণী’ হয়ে থাকেন তিনি!
১৯৯৪ সালে তরুণী প্রেমিকার উদ্দেশে লেখা আটটি কবিতা নিয়ে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হবে ‘গোধূলিতে হৃদয়ের ধ্বনি’ নামে একটি ভাঁজপত্রের কাব্যগ্রন্থ—সেই কাব্যগ্রন্থের খোঁজ জানবেন না কবির রচনাবলির সম্পাদকেরাও! তুষার কর সেই ভাঁজপত্রটিই মেলে ধরেছিলেন!
রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের এক আয়োজনে শিলাইদহে দেখা হয়েছিল তাঁদের। সেই তরুণী গান জানেন, আবৃত্তি করেন, অভিনয় জানেন। সেই প্রথম দেখা ও আলাপ।
তারপর ফিরে গেছেন যে যাঁর গন্তব্যে। একজন ঢাকায়, অন্যজন রাজশাহী। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত পত্র বিনিময়ে খুব একটা সময় লাগেনি। মাঝে মাঝে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। এমনকি, একা একা কোনো একটা বাহানা করে বিমানে উঠে কবি চলে গেছেন রাজশাহী! লিখে ফেলেছেন রাজশাহীর বিমানবন্দর নিয়ে কবিতা! ভাঁজপত্রের একটি কবিতার নাম ‘বিমান বন্দর’। ‘বিমান বন্দরটার নেই কোনো বাহারি আদল,/ নেহাতই শাদামাটা; অনুজ্জ্বল/ দরজার কাছে জলকণাময়, [...] সেই বিমান বন্দর বন্দনীয়/ এবং চিরপ্রিয়/ হয়ে ওঠে আমার শুধু তুমি ছিলে ব’লে,/ আমাকে স্পর্শ করেছিলে ব’লে কথাচ্ছলে।’ ভাঁজপত্রের আরেকটি কবিতায় আছে রাজশাহীর ভূ-প্রকৃতির চিহ্ন। ‘বড় রুখা সুখা সেই শহর, অথচ সেখানে যাওয়ার সাধ আমার চূড়াস্পর্শী। কবিতার নাম ‘আলোকলতার মূল’। কবির সঙ্গেও ঢাকায় দেখা করতে এসেছিলেন প্রেমিকা। চারদিকে সতর্ক নজর!
ততদিনে কবি জাতীয় ব্যক্তিত্ব। পথেঘাটে দেখা করা মুশকিল। এমনকি নিজের বাড়িতে লেখার ঘরেও। বাড়ির লোকেরাও পাহারা দেয় তাঁকে! আরও বহু কবিতা অনুরাগীর বেশ ধরে প্রেমিকা আসেন কবির বাড়িতে, সামান্য সময়ের জন্য দেখা দিতে পারেন। সেটুকু সময়ের রেশ রয়ে যায় ভাঁজপত্রের কবিতায়, ‘যাচ্ছো, যাও।/ পথ রোধ করে দাঁড়াবার/ নেই অধিকার আমার।/ তোমার চ’লে-যাওয়া/ জানে দূর মফস্বলগামী বাস,/ প্রত্যুষের হাওয়া,/ লেজঝোলা পাখি,/ সবচেয়ে বেশি জানে/ এ কবির বিদীর্ণ হৃদয়।’ কবিতার নাম ‘যাচ্ছো, যাও’। এমনই সেই নজরদারি যে বাড়িতে বসে প্রেমিকার চিঠির উত্তর দিতে পারেন না কবি! কবির চিঠি বা খোঁজ না পেলে তুষার করকেই চিঠি লিখেন কবির প্রেমিকা। ২৯.০৩.১৯৯৪ তারিখযুক্ত জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের রাইটিং প্যাডে কবির ওপর সেই নজরদারির কথা প্রেমিকা লিখছেন, ‘ [...] অথচ কী আশ্চর্য জানেন?
কবি, আমার কবি, এখন এই ৬৬/বয়সে এসে কড়া শাসনের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন, দগ্ধ। বিখ্যাত এই কবির; একজন লেখকের লেখার স্বাধীনতা থাকবে না? ভাবতে পারেন?
লিখতে বসলে পাহারা দেওয়া হয়, কাকে লিখছেন [,] কারণ কি শুনবেন? শুনতে কারো মন্দ লাগবে না! আপনারও না। কারণ? ‘ভালোবাসা’ সমাজে হাতে গোনা ক’জন এর বেশি যেন কাউকে ভালো না বাসেন। তবে হ্যাঁ, পুরুষ হলে আলাদা কথা [,] কোনো মেয়েদের নয়। মেয়েদের ভালোবাসলে মহা অন্যায় হয়। পাপ হয়। মেয়েরা কি ভালোবাসার কোনো বস্তু হ’ল? তুষার’কে ভালোবাসতে দোষ নেই মানা নেই, তমা’কে বাসলেই যত বিপত্তি। [...]’ ২২.৮.৯৬ এ তুষার করকে শেষ চিঠি লেখেন কবির প্রেমিকা। তত দিনে তাঁর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে! বাবর আকস্মিক মৃত্যু, প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়া, পুত্রসন্তান নিয়ে চাকরির সন্ধান, এমনকি ঢাকায় বিজ্ঞাপনের কাজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সব শেষে দ্বিতীয় বিয়ের খবর। এই চিঠিতে কবি সম্পর্কে একটি বাক্যও নেই!
১৯৯৪-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী এ প্রেম ঘিরে কেবল এই ভাঁজপত্রের আটটি কবিতাই নয়, কবির এই পর্বের প্রেমে আরও অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। পদ্মাপাড়ের এই প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা কবির শেষ কবিতা কোনটি? ‘উত্তর’? ‘তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো, এই আকাশ আমার।’ প্রেমিকাকে ‘তমা’ নামেই সম্বোধন করতেন কবি। ‘উত্তর’ কবিতাটি ১৯৯৫-এ প্রকাশিত ‘এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে। কিন্তু তত দিনে কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁর নতুন প্রেমিকাকে!

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
২৯ অক্টোবর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
২৯ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
২৯ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
২৯ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে