Ajker Patrika

হারুকি মুরাকামির প্রিয় ৫ বই

মারুফ ইসলাম
Thumbnail image

বিশ্বের লাখো মানুষের প্রিয় বইয়ের তালিকায় রয়েছে হারুকি মুরাকামির বই। কিন্তু মুরাকামির প্রিয় বই কোনগুলো, তা কি আমরা জানি? বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই জাপানি লেখক একবার বলেছিলেন, ‘অন্য সবাই যে বইগুলো পড়ছে, আপনিও যদি সেই বইগুলোই পড়েন, তবে অন্যরা যা ভাবছে, আপনিও তা-ই ভাববেন।’ সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, অন্য সবাই যা পড়ে, মুরাকামি তা পড়েন না। কী পড়েন তিনি তবে, তা জানার আগ্রহ আছে বিশ্বের লাখো কৌতূহলী পাঠকের। সেই কৌতূহল মেটাতেই সম্প্রতি মুরাকামির প্রিয় পাঁচটি বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন সাহিত্য সাময়িকী লিটারেচার হাব। 

দ্য গ্রেট গ্যাটসবি
মুরাকামির অসম্ভব প্রিয় একটি বইয়ের নাম ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’। মার্কিন লেখক এফ স্কট ফিটজেরাল্ডের লেখা এই উপন্যাস প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৫ সালে। প্রায় শতবর্ষ আগের এই বই শুধু মুরাকামির প্রিয়ই নয়, ববং তাঁর লেখক হয়ে ওঠার  পেছনে এ উপন্যাসের অন্যরকম ভূমিকা আছে বলেও মনে করেন তিনি। বইটির ব্যাপারে মুরাকামির অকপট স্বীকারোক্তি—‘আমাকে যদি একটি বই বেছে নিতে বাধ্য করা হয়, আমি নির্দ্বিধায় গ্যাটসবিকে বেছে নেব। ফিটজেরাল্ডের উপন্যাস না হলে আজকে আমি যে ধরনের সাহিত্য করছি, তা লিখতে পারতাম না।’ 

 দ্য লং গুডবাই
মুরাকামিকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার একাধিকবার পড়া বই কোনটি? জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘দ্য লং গুডবাই’। মার্কিন-ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক রেমন্ড চ্যান্ডলারের এই উপন্যাসটি ১৯৫৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। উপন্যাসটি সম্পর্কে মুরাকামি বলেছেন, ‘আমি যা পড়তে পছন্দ করি তা অনুবাদ করি। রেমন্ড চ্যান্ডলারের সব উপন্যাস আমি অনুবাদ করেছি। আমি তাঁর স্টাইল পছন্দ করি। দ্য লং গুডবাই আমি পাঁচ থেকে ছয়বার পড়েছি।’

 দ্য ক্যাসল
মুরাকামির আরও একটি পছন্দের বইয়ের নাম ‘দ্য ক্যাসল’। জার্মান ভাষার বিশ্বখ্যাত লেখক ফ্রাঞ্জ কাফকার উপন্যাস এটি। প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৬ সালে। মুরাকামি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পনেরো বছর বয়সে কাফকার সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয়। সেটি দ্য ক্যাসলের মাধ্যমে। ওই কিশোর বয়সে কাফকার লেখার ধরন তাঁকে এক বিস্ময়কর ঘোরের মধ্যে নিয়ে গিয়েছিল। পরিণত বয়সেও সেই ঘোর থেকে বের হতে পারেননি তিনি।

মুরাকামি বলেছেন, ‘এ এক অবিশ্বাস্য উপন্যাস। আমাকে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিয়েছিল। এই উপন্যাসে কাফকা যে জগৎ বর্ণনা করেছেন, তা একই সঙ্গে এতটাই বাস্তব এবং এতটাই অবাস্তব মনে হচ্ছিল, আমার হৃদয় এবং আত্মা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।’

 দ্য ব্রাদার্স কারামাজোভ
সর্বকালের সেরা একটি বই ‘দ্য ব্রাদার্স কারামাজোভ’। এই বই যদি হারুকি মুরাকামির প্রিয় বইয়ের তালিকায় থাকে, তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বখ্যাত রুশ লেখক ফিওদর দস্তয়ভস্কি উপন্যাসটি লিখেছিলেন ১৮৭৯ সালে। উপন্যাসটি ১৪৩ বছরের পুরোনো হলেও, এর আবেদন পুরোনো হয়নি এখনো। তাই তো একবিংশ শতাব্দীর লেখক মুরাকামিকেও মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে এ উপন্যাস।

মুরাকামি বলেছেন, বয়স হলে বেশির ভাগ লেখক দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়েন। কিন্তু দস্তয়েভস্কির ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তিনি আরও বড় এবং মহান হয়ে উঠেছিলেন। তিনি পঞ্চাশের কোঠার শেষের দিকে দ্য ব্রাদার্স কারামাজোভ লিখেছিলেন। এটি অসাধারণ একটি উপন্যাস।’

 দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই
হারুকি মুরাকামির পছন্দের আরেকটি বইয়ের নাম ‘দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই’। লিখেছেন মার্কিন লেখক জে ডি স্যালিঞ্জার। ১৯৫১ সালে প্রথমবার প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটি। মুরাকামি এই উপন্যাসও পড়েছিলেন কিশোর বয়সে এবং এক ঘোর লাগা ভালোলাগায় বিভোর হয়েছিলেন। উপন্যাসটির বর্ণনা, উপস্থাপন কৌশল ও বিষয়বস্তু ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছিল মুরকামিকে।

জাপানি লেখক মুরাকামি লিটহাবকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি যখন “দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই” পড়ি, তখন আমার বয়স ছিল মাত্র সতেরো। উপন্যাসটি পড়ে আমি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে পরবর্তীকালে এটি জাপানি ভাষায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত নিই।’

হারুকি মুরাকামির পছন্দের পাঁচটি উপন্যাসই বেশ পুরোনো। সমসাময়িক উপন্যাস নেই বললেই চলে। ফলে তাঁর গল্পের বিষয়বস্তুগুলো বরাবরই ভিন্ন হয়ে থাকে। তিনি সময়ের চেয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করেন। কখনো তাঁর উপন্যাসের চরিত্র কুয়োর মধ্যে বসে থাকে, কখনো হারানো জিনিস খোঁজে। চরিত্রগুলো যেন পৃথিবীর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না, এমন। চরিত্রগুলো যেন ভীষণ অসুখী। মুরাকামি বলেছেন, ‘প্রটাগনিস্ট যদি সুখে থাকে, তাহলে জেনে রাখবেন, সেখানে কোনো গল্প নেই। আমার কোনো উপন্যাস বের হওয়ার পরে বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করে, এর পরে কী হলো? আমি বলি, কিছুই হলো না। এখানেই শেষ।’

সন্দেহ নেই, মুরাকামির এ রকম ভিন্নভাবে চিন্তা করার এবং ভিন্নভাবে লেখার পেছনে রয়েছে তাঁর ভিন্নধর্মী পছন্দের বইগুলোর অবদান। লিটহাব ও দ্য নিউইয়র্কার অবলম্বনে জানা যায়, লেখক হওয়ার পেছনে বইগুলো মুরাকামিকে অনুপ্রাণিত করেছে, পাশাপাশি তাঁর জীবনদর্শন, সাহিত্যবোধ তৈরিতে ভূমিকা পালন করেছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

‘মধ্যমপন্থী’ দল গড়ছেন অভ্যুত্থানের নেতারা, আলোচনায় ইলিশ প্রতীক

রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় লিফলেট বিতরণ করল আ.লীগ

লিবিয়ার সৈকতে ২০ জনের গলিত লাশ, সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, বিচার চাইল বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত