আরিফ আবেদ আদিত্য

নটিংহ্যাম শহরে নেমেই মাথার ভেতরে ঘুরতে থাকে ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড। আগের রাতে শেফিল্ডে ছিলাম সহকর্মী মামুনের বাসায়। রাতেই দুজনে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখি নটিংহ্যামে যাওয়ার। দূরত্ব বেশি না, মাত্র এক ঘণ্টার পথ। সকাল ৯টার ট্রেন ধরব বলে আধা ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু বিধি বাম, শেফিল্ড শহরের খাঁড়া-ঢালু পথ বেয়ে রেলস্টেশনে যেতে না যেতেই মাত্র ১০ সেকেন্ডের জন্য চোখের সামনে দিয়ে ট্রেন ছেড়ে গেল। দুজনের তখন আফসোস, আরও এক ঘণ্টা পর অন্য ট্রেনের অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না।
প্রথম সেমিস্টার শেষ করে ২২ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করি। অক্টোবরে বিলাতে আসার পর পড়াশোনার চাপ ও অসহনীয় ঠান্ডায় নিজ শহর ছেড়ে বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। প্রথমে গন্তব্য ঠিক করি ম্যানচেস্টার, সেখান থেকে বিটলসের শহর লিভারপুল; তারপর শেফিল্ড ঘুরে নটিংহ্যাম—শেষে লন্ডন হয়ে নিজ শহর ক্যান্টাবরি প্রত্যাবর্তন। এই পরিকল্পনা মোতাবেক ক্যান্টাবরি ওয়েস্ট স্টেশন থেকে ম্যানচেস্টারের টিকিট কাটি। আগেই স্টুডেন্ট কার্ড দিয়ে রেল কার্ড করে রেখেছিলাম বলে রেলে ভাড়া তিন ভাগের এক ভাগ কম হয়। ইংল্যান্ডে রেলের ভাড়া আর বিমানভাড়া প্রায় কাছাকাছি। অনেক সময় বিমানভাড়া রেলের চেয়ে কম হয়। তবে এসি বাসের ভাড়া সবার নাগালে—স্বল্প খরচ। যাতায়াতে ট্রেন সবচেয়ে আরামদায়ক। যাই হোক, এবার ইংল্যান্ডের কয়েকটি শহর ভ্রমণের গল্প করা যাক।
যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, হলুদ মলাটের একটা অনুবাদ বই, বিশ টাকা দাম ছিল হয়তো, প্রায়শই নীলক্ষেতে ফুটপাতে দেখা মিলত। কেমন একটা নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ গন্ধ মিশ্রিত আবহ কাজ করত বইটাকে ঘিরে। তখন প্রথম বর্ষের দিকে বয়ঃসন্ধি পেরিয়েছি মাত্র—বইটার নাম ও প্রচ্ছদের মধ্যেই কেমন যেন একধরনের ‘নিষিদ্ধের’ প্রতি গোপন আকর্ষণ কাজ করত। আবার সামাজিক ট্যাবুও মাথার মধ্যে বিরাজ করত। ফলে নীলক্ষেতের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে বইটি হাতে নিয়ে সন্তর্পণে উলটে-পালটে দেখতাম আর মনের ভেতরে অজানা উত্তেজনা বোধ করতাম—অবচেতন মনে কাজ করত, না জানি কী আছে এর ভেতরে!
নিষিদ্ধ বই বা ম্যাগাজিনগুলো তখন ছেলেদের হলে পালাক্রমে পড়া হতো। একজনের পড়া শেষ হলে আরেকজন নিয়ে যেত। বলছি সেই বছর পনেরো-বিশ আগের কথা। তখন কিছু লেখকই ছিলেন, যাঁরা উদ্ভিন্ন যৌবন বা নিষিদ্ধ রোমাঞ্চকে উপলক্ষ করে লিখতেন। বইয়ের নামগুলোও ছিল চমকপ্রদ। যায়যায়দিনের বিশেষ সংখ্যাগুলো (যেমন শাড়ি সংখ্যা) ছিল তখন তুমুল জনপ্রিয়। নব্বইয়ের দশক এবং একুশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত সাহিত্যের একশ্রেণির পাঠক তৈরি হয়েছিল এই আপাতত গোপন রোমাঞ্চ আস্বাদন অনুরাগী।

যাই হোক, একদিন বইটা কিনে টুপ করে ব্যাগে ভরে নিই। সেই হলুদ মলাটের বইটি ছিল ডি এইচ লরেন্সের (১৮৮৫-১৯৩০) ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’। এসব বই প্রকাশ্যে বহন করাও যেন অস্বস্তিকর। কারণ, যদি কেউ দেখে ফেলে! রোমাঞ্চের জায়গা থেকে বইটি পড়েছি ঠিকই, কিন্তু তখন জানতাম না এই বইয়ের লেখক বিশ্বসাহিত্যে উপন্যাসের ধারায় আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। সাহিত্য যেহেতু মানুষের জীবনকেই অনুকরণ করে, সেহেতু মানুষের জৈবিকতা উপেক্ষা করার উপায় নেই। মানুষের জীবনে ওতপ্রোতভাবে যৌনতা জড়িত—স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক। ডি এইচ লরেন্স মানুষের অন্ধকার আদিম প্রবৃত্তিকে এই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি শ্রেণিসংগ্রামকে। আধুনিক উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো সমাজের প্রকাশ্য ও গোপন সব ক্রিয়াকলাপকে নৈর্ব্যক্তিক ও নির্মোহভাবে তুলে ধরা। তাই লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ প্রকাশের পর সাহিত্যের শ্লীলতা ও অশ্লীলতা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তবে শিল্প-সাহিত্যের চেয়ে সামাজিক শ্রেণিবিভাজন তুলে ধরে লরেন্স ব্রিটিশ সমাজকাঠামোকে ভেঙে দিয়েছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসে উঁচু শ্রেণির সঙ্গে নিচু শ্রেণির কোনো সম্পর্ক হতে পারে না—না মানসিক, না দৈহিক। ইংল্যান্ডের অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় অত্যন্ত কঠোর ও রক্ষণশীল মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। লরেন্স ব্রিটিশ রক্ষণশীল সমাজকে আঘাত করেছিলেন। ফলে দেখা যায়, ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ ইতালিতে ১৯২৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হলেও ইংল্যান্ডে অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ ছিল ৩২ বছর; পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ১৯৬০ সালে প্রথম প্রকাশেই এটি প্রায় ২ লাখ কপি বিক্রি হয়। শুধু তাই নয়, এ সময় বিশ্বব্যাপী এটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হতে থাকে—বাংলাদেশেও তখন ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ সহজলভ্য হয়। অথচ ডি এইচ লরেন্সের জীবিতকালে সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছিল এই গ্রন্থ। যদিও এই উপন্যাসের থেকেও তাঁর অন্যান্য লেখা সমসাময়িক লেখক ও সমালোচকদের কাছে অধিক সমাদৃত ছিল। যেমন : ‘সন্স অ্যান্ড লাভারস’, ‘দ্য রেইনবো’, ‘উইমেন ইন লাভ’ ইত্যাদি।

সাহিত্যে ডি এইচ লরেন্সের অতি রগরগে বয়ন বা প্রথাবিরোধী সম্পর্ককে বিষয়বস্তু করার পেছনে কারণ ছিল তাঁর স্বকাল ও স্বসমাজের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ ও শ্লাঘাস্বরূপ। অন্যদিকে, ঔপনিবেশিক শাসনে পিষ্ট পরাধীন বাংলার সমাজব্যবস্থা ব্রিটিশ আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সমান্তরাল ছিল না। ফলে ‘আধুনিক’ বাংলা সাহিত্যের পথ নির্মাণে বাংলার সমাজকাঠামো কতটা প্রস্তুত ছিল, তা প্রশ্নসাপেক্ষ বৈকি! কারণ, ইংল্যান্ডের প্রাক শিল্পবিপ্লব থেকে শিল্পবিপ্লব যুগে প্রবেশের সময় যে শ্রেণিসংগ্রাম ব্রিটিশ সমাজে দেখা গিয়েছিল, ডি এইচ লরেন্স তা-ই বিভিন্ন লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। অথচ পূর্ব বাংলায় তেমন কোনো সমাজ রূপান্তরের বিপ্লব পরিলক্ষিত হয় না। অথচ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্য ধ্যানধারণা অনুকরণ হতে দেরি করেনি। যদিও ‘আধুনিক’ প্রপঞ্চের ধারক লেখকদের অনেক সমালোচক সময়ের চেয়ে অগ্রগামী চিন্তক হিসেবে আখ্যা দিতে চান। কিন্তু সমাজ ও সাহিত্য যদি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ধরা হয়, তবে এই বক্তব্যে ফাঁক থেকে যায়।
যাই হোক, ডি এইচ লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’-এর পর এই ধারার বাংলা ভাষায় রচিত উপন্যাসগুলো পড়া শুরু করি। একে একে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চতুষ্কোণ’, বুদ্ধদেব বসুর ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’, সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’, শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘কাশবনের কন্যা’, মাহবুব-উল আলমের ‘মফিজন’, আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘সত্যের মতো বদমাশ’ ইত্যাদি নিষিদ্ধ(!) উপকরণে সন্নিবিষ্ট বই পড়া হয়ে যায়।
ডি এইচ লরেন্সের বাড়ি খোঁজার গল্পে ফিরে আসা যাক। আমরা পরের ট্রেনেই লরেন্সের জন্ম শহরে চলে আসি। এখানে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কয়েকজন সহকর্মী পিএইচডি গবেষণারত আছেন। তাঁদের অপেক্ষায় রেখে নটিংহ্যাম রেলস্টেশনে নেমেই ট্রামে টিকিট কেটে শহরের 'আপার পার্লামেন্ট স্ট্রিট' নামক স্থানে চলে আসি। এই জায়গা থেকে রেইনবো বাসে করে ৪০ মিনিটে চলে যাই ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড, যে বাড়িতে ডি এইচ লরেন্স জন্মেছিলেন।
নটিংহ্যামশায়ারের ইস্টউড ছোট্ট ছিমছাম শহর। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় কয়লাশ্রমিকদের আবাস ছিল এই এলাকা। ইংল্যান্ডের প্রাক্-শিল্পবিপ্লবের সাক্ষী হয়ে আছে এই শহর। বাস থেকে নেমে গুগল ম্যাপ ধরে কয়েক মিনিট হাঁটতেই পেয়ে যাই লরেন্সের বাড়ি। নীলক্ষেতে দেখা একটি বইয়ের লেখকের বাড়ি খুঁজে পাওয়া যে কত আনন্দের, তা বলে বোঝানো যাবে না। মূল রাস্তা থেকে নেমে অপর পাশে হাতের ডান দিকে এগোতেই কিছুটা ঢালু পথ, অনেকটা গলির মতো। এই রাস্তার মাঝামাঝি আরেকটি গলির কোনায় লাল ইটের রঙে দাঁড়িয়ে আছে সেই ৮/এ বাড়িটি। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। এখান থেকে সোজা সামনে এগিয়ে গেলে ঢালু পথ একেবারে নেমে গেছে নিচে পাহাড়ের গোড়ায়। সেখানে উপত্যকার মতো পাহাড়ি ঝিড়িপথ, জনমানুষশূন্য বনবনানী। সুদূরে তাকালেই দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের সারি আর ঘন অরণ্য। বাড়ির চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখে ভেতরের প্রবেশদ্বারের চৌকাঠে বসে বিশ্রাম নিই কিছুক্ষণ। বর্তমানে এটি লেখকের নামে স্মৃতি জাদুঘর করা হয়েছে।
ডি এইচ লরেন্স এই প্রাকৃতিক পাহাড়ঘেরা পরিবেশেই বেড়ে উঠেছিলেন। কয়লাখনি ও শ্রমিক অধ্যুষিত নটিংহ্যামশায়ারের এই জীবন ডি এইচ লরেন্সের ততটা সুখকর ছিল না। মাত্র ষোলো বছর বয়সে এই শহর ছেড়ে যাওয়ার পর বাকি জীবন কেটেছে বোহেমিয়ান। জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় যাযাবর জীবন কেটেছে তাঁর। শারীরিক অসুস্থতা ছিল নিত্যসঙ্গী। যেখানেই যান না কেন, শৈশবের শহর নটিংহ্যামশায়ারকে তিনি ভুলতে পারেননি। তাঁর সাহিত্যিক জীবনকে তুমুল প্রভাবিত করেছে এই শহর। ফলে লরেন্সের অধিকাংশ উপন্যাসে পাওয়া যায় এই শহরের উপভাষা ও প্রতিচ্ছবি। শান্ত-নিরিবিলি ছোট্ট মহল্লার সেই ঢালু পথ ধরে দূরের অরণ্যের দিকে নেমে গেলাম কিছুটা। মনে মনে ভাবছিলাম, লরেন্সও কি এই রাস্তা ধরে হাঁটত একসময়? হয়তো! হয়তো না! হয়তো!
আরও পড়ুন:

নটিংহ্যাম শহরে নেমেই মাথার ভেতরে ঘুরতে থাকে ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড। আগের রাতে শেফিল্ডে ছিলাম সহকর্মী মামুনের বাসায়। রাতেই দুজনে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখি নটিংহ্যামে যাওয়ার। দূরত্ব বেশি না, মাত্র এক ঘণ্টার পথ। সকাল ৯টার ট্রেন ধরব বলে আধা ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু বিধি বাম, শেফিল্ড শহরের খাঁড়া-ঢালু পথ বেয়ে রেলস্টেশনে যেতে না যেতেই মাত্র ১০ সেকেন্ডের জন্য চোখের সামনে দিয়ে ট্রেন ছেড়ে গেল। দুজনের তখন আফসোস, আরও এক ঘণ্টা পর অন্য ট্রেনের অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না।
প্রথম সেমিস্টার শেষ করে ২২ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করি। অক্টোবরে বিলাতে আসার পর পড়াশোনার চাপ ও অসহনীয় ঠান্ডায় নিজ শহর ছেড়ে বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। প্রথমে গন্তব্য ঠিক করি ম্যানচেস্টার, সেখান থেকে বিটলসের শহর লিভারপুল; তারপর শেফিল্ড ঘুরে নটিংহ্যাম—শেষে লন্ডন হয়ে নিজ শহর ক্যান্টাবরি প্রত্যাবর্তন। এই পরিকল্পনা মোতাবেক ক্যান্টাবরি ওয়েস্ট স্টেশন থেকে ম্যানচেস্টারের টিকিট কাটি। আগেই স্টুডেন্ট কার্ড দিয়ে রেল কার্ড করে রেখেছিলাম বলে রেলে ভাড়া তিন ভাগের এক ভাগ কম হয়। ইংল্যান্ডে রেলের ভাড়া আর বিমানভাড়া প্রায় কাছাকাছি। অনেক সময় বিমানভাড়া রেলের চেয়ে কম হয়। তবে এসি বাসের ভাড়া সবার নাগালে—স্বল্প খরচ। যাতায়াতে ট্রেন সবচেয়ে আরামদায়ক। যাই হোক, এবার ইংল্যান্ডের কয়েকটি শহর ভ্রমণের গল্প করা যাক।
যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, হলুদ মলাটের একটা অনুবাদ বই, বিশ টাকা দাম ছিল হয়তো, প্রায়শই নীলক্ষেতে ফুটপাতে দেখা মিলত। কেমন একটা নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ গন্ধ মিশ্রিত আবহ কাজ করত বইটাকে ঘিরে। তখন প্রথম বর্ষের দিকে বয়ঃসন্ধি পেরিয়েছি মাত্র—বইটার নাম ও প্রচ্ছদের মধ্যেই কেমন যেন একধরনের ‘নিষিদ্ধের’ প্রতি গোপন আকর্ষণ কাজ করত। আবার সামাজিক ট্যাবুও মাথার মধ্যে বিরাজ করত। ফলে নীলক্ষেতের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে বইটি হাতে নিয়ে সন্তর্পণে উলটে-পালটে দেখতাম আর মনের ভেতরে অজানা উত্তেজনা বোধ করতাম—অবচেতন মনে কাজ করত, না জানি কী আছে এর ভেতরে!
নিষিদ্ধ বই বা ম্যাগাজিনগুলো তখন ছেলেদের হলে পালাক্রমে পড়া হতো। একজনের পড়া শেষ হলে আরেকজন নিয়ে যেত। বলছি সেই বছর পনেরো-বিশ আগের কথা। তখন কিছু লেখকই ছিলেন, যাঁরা উদ্ভিন্ন যৌবন বা নিষিদ্ধ রোমাঞ্চকে উপলক্ষ করে লিখতেন। বইয়ের নামগুলোও ছিল চমকপ্রদ। যায়যায়দিনের বিশেষ সংখ্যাগুলো (যেমন শাড়ি সংখ্যা) ছিল তখন তুমুল জনপ্রিয়। নব্বইয়ের দশক এবং একুশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত সাহিত্যের একশ্রেণির পাঠক তৈরি হয়েছিল এই আপাতত গোপন রোমাঞ্চ আস্বাদন অনুরাগী।

যাই হোক, একদিন বইটা কিনে টুপ করে ব্যাগে ভরে নিই। সেই হলুদ মলাটের বইটি ছিল ডি এইচ লরেন্সের (১৮৮৫-১৯৩০) ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’। এসব বই প্রকাশ্যে বহন করাও যেন অস্বস্তিকর। কারণ, যদি কেউ দেখে ফেলে! রোমাঞ্চের জায়গা থেকে বইটি পড়েছি ঠিকই, কিন্তু তখন জানতাম না এই বইয়ের লেখক বিশ্বসাহিত্যে উপন্যাসের ধারায় আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। সাহিত্য যেহেতু মানুষের জীবনকেই অনুকরণ করে, সেহেতু মানুষের জৈবিকতা উপেক্ষা করার উপায় নেই। মানুষের জীবনে ওতপ্রোতভাবে যৌনতা জড়িত—স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক। ডি এইচ লরেন্স মানুষের অন্ধকার আদিম প্রবৃত্তিকে এই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি শ্রেণিসংগ্রামকে। আধুনিক উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো সমাজের প্রকাশ্য ও গোপন সব ক্রিয়াকলাপকে নৈর্ব্যক্তিক ও নির্মোহভাবে তুলে ধরা। তাই লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ প্রকাশের পর সাহিত্যের শ্লীলতা ও অশ্লীলতা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তবে শিল্প-সাহিত্যের চেয়ে সামাজিক শ্রেণিবিভাজন তুলে ধরে লরেন্স ব্রিটিশ সমাজকাঠামোকে ভেঙে দিয়েছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসে উঁচু শ্রেণির সঙ্গে নিচু শ্রেণির কোনো সম্পর্ক হতে পারে না—না মানসিক, না দৈহিক। ইংল্যান্ডের অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় অত্যন্ত কঠোর ও রক্ষণশীল মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। লরেন্স ব্রিটিশ রক্ষণশীল সমাজকে আঘাত করেছিলেন। ফলে দেখা যায়, ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ ইতালিতে ১৯২৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হলেও ইংল্যান্ডে অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ ছিল ৩২ বছর; পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ১৯৬০ সালে প্রথম প্রকাশেই এটি প্রায় ২ লাখ কপি বিক্রি হয়। শুধু তাই নয়, এ সময় বিশ্বব্যাপী এটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হতে থাকে—বাংলাদেশেও তখন ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ সহজলভ্য হয়। অথচ ডি এইচ লরেন্সের জীবিতকালে সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছিল এই গ্রন্থ। যদিও এই উপন্যাসের থেকেও তাঁর অন্যান্য লেখা সমসাময়িক লেখক ও সমালোচকদের কাছে অধিক সমাদৃত ছিল। যেমন : ‘সন্স অ্যান্ড লাভারস’, ‘দ্য রেইনবো’, ‘উইমেন ইন লাভ’ ইত্যাদি।

সাহিত্যে ডি এইচ লরেন্সের অতি রগরগে বয়ন বা প্রথাবিরোধী সম্পর্ককে বিষয়বস্তু করার পেছনে কারণ ছিল তাঁর স্বকাল ও স্বসমাজের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ ও শ্লাঘাস্বরূপ। অন্যদিকে, ঔপনিবেশিক শাসনে পিষ্ট পরাধীন বাংলার সমাজব্যবস্থা ব্রিটিশ আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সমান্তরাল ছিল না। ফলে ‘আধুনিক’ বাংলা সাহিত্যের পথ নির্মাণে বাংলার সমাজকাঠামো কতটা প্রস্তুত ছিল, তা প্রশ্নসাপেক্ষ বৈকি! কারণ, ইংল্যান্ডের প্রাক শিল্পবিপ্লব থেকে শিল্পবিপ্লব যুগে প্রবেশের সময় যে শ্রেণিসংগ্রাম ব্রিটিশ সমাজে দেখা গিয়েছিল, ডি এইচ লরেন্স তা-ই বিভিন্ন লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। অথচ পূর্ব বাংলায় তেমন কোনো সমাজ রূপান্তরের বিপ্লব পরিলক্ষিত হয় না। অথচ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্য ধ্যানধারণা অনুকরণ হতে দেরি করেনি। যদিও ‘আধুনিক’ প্রপঞ্চের ধারক লেখকদের অনেক সমালোচক সময়ের চেয়ে অগ্রগামী চিন্তক হিসেবে আখ্যা দিতে চান। কিন্তু সমাজ ও সাহিত্য যদি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ধরা হয়, তবে এই বক্তব্যে ফাঁক থেকে যায়।
যাই হোক, ডি এইচ লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’-এর পর এই ধারার বাংলা ভাষায় রচিত উপন্যাসগুলো পড়া শুরু করি। একে একে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চতুষ্কোণ’, বুদ্ধদেব বসুর ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’, সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’, শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘কাশবনের কন্যা’, মাহবুব-উল আলমের ‘মফিজন’, আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘সত্যের মতো বদমাশ’ ইত্যাদি নিষিদ্ধ(!) উপকরণে সন্নিবিষ্ট বই পড়া হয়ে যায়।
ডি এইচ লরেন্সের বাড়ি খোঁজার গল্পে ফিরে আসা যাক। আমরা পরের ট্রেনেই লরেন্সের জন্ম শহরে চলে আসি। এখানে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কয়েকজন সহকর্মী পিএইচডি গবেষণারত আছেন। তাঁদের অপেক্ষায় রেখে নটিংহ্যাম রেলস্টেশনে নেমেই ট্রামে টিকিট কেটে শহরের 'আপার পার্লামেন্ট স্ট্রিট' নামক স্থানে চলে আসি। এই জায়গা থেকে রেইনবো বাসে করে ৪০ মিনিটে চলে যাই ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড, যে বাড়িতে ডি এইচ লরেন্স জন্মেছিলেন।
নটিংহ্যামশায়ারের ইস্টউড ছোট্ট ছিমছাম শহর। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় কয়লাশ্রমিকদের আবাস ছিল এই এলাকা। ইংল্যান্ডের প্রাক্-শিল্পবিপ্লবের সাক্ষী হয়ে আছে এই শহর। বাস থেকে নেমে গুগল ম্যাপ ধরে কয়েক মিনিট হাঁটতেই পেয়ে যাই লরেন্সের বাড়ি। নীলক্ষেতে দেখা একটি বইয়ের লেখকের বাড়ি খুঁজে পাওয়া যে কত আনন্দের, তা বলে বোঝানো যাবে না। মূল রাস্তা থেকে নেমে অপর পাশে হাতের ডান দিকে এগোতেই কিছুটা ঢালু পথ, অনেকটা গলির মতো। এই রাস্তার মাঝামাঝি আরেকটি গলির কোনায় লাল ইটের রঙে দাঁড়িয়ে আছে সেই ৮/এ বাড়িটি। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। এখান থেকে সোজা সামনে এগিয়ে গেলে ঢালু পথ একেবারে নেমে গেছে নিচে পাহাড়ের গোড়ায়। সেখানে উপত্যকার মতো পাহাড়ি ঝিড়িপথ, জনমানুষশূন্য বনবনানী। সুদূরে তাকালেই দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের সারি আর ঘন অরণ্য। বাড়ির চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখে ভেতরের প্রবেশদ্বারের চৌকাঠে বসে বিশ্রাম নিই কিছুক্ষণ। বর্তমানে এটি লেখকের নামে স্মৃতি জাদুঘর করা হয়েছে।
ডি এইচ লরেন্স এই প্রাকৃতিক পাহাড়ঘেরা পরিবেশেই বেড়ে উঠেছিলেন। কয়লাখনি ও শ্রমিক অধ্যুষিত নটিংহ্যামশায়ারের এই জীবন ডি এইচ লরেন্সের ততটা সুখকর ছিল না। মাত্র ষোলো বছর বয়সে এই শহর ছেড়ে যাওয়ার পর বাকি জীবন কেটেছে বোহেমিয়ান। জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় যাযাবর জীবন কেটেছে তাঁর। শারীরিক অসুস্থতা ছিল নিত্যসঙ্গী। যেখানেই যান না কেন, শৈশবের শহর নটিংহ্যামশায়ারকে তিনি ভুলতে পারেননি। তাঁর সাহিত্যিক জীবনকে তুমুল প্রভাবিত করেছে এই শহর। ফলে লরেন্সের অধিকাংশ উপন্যাসে পাওয়া যায় এই শহরের উপভাষা ও প্রতিচ্ছবি। শান্ত-নিরিবিলি ছোট্ট মহল্লার সেই ঢালু পথ ধরে দূরের অরণ্যের দিকে নেমে গেলাম কিছুটা। মনে মনে ভাবছিলাম, লরেন্সও কি এই রাস্তা ধরে হাঁটত একসময়? হয়তো! হয়তো না! হয়তো!
আরও পড়ুন:
আরিফ আবেদ আদিত্য

নটিংহ্যাম শহরে নেমেই মাথার ভেতরে ঘুরতে থাকে ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড। আগের রাতে শেফিল্ডে ছিলাম সহকর্মী মামুনের বাসায়। রাতেই দুজনে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখি নটিংহ্যামে যাওয়ার। দূরত্ব বেশি না, মাত্র এক ঘণ্টার পথ। সকাল ৯টার ট্রেন ধরব বলে আধা ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু বিধি বাম, শেফিল্ড শহরের খাঁড়া-ঢালু পথ বেয়ে রেলস্টেশনে যেতে না যেতেই মাত্র ১০ সেকেন্ডের জন্য চোখের সামনে দিয়ে ট্রেন ছেড়ে গেল। দুজনের তখন আফসোস, আরও এক ঘণ্টা পর অন্য ট্রেনের অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না।
প্রথম সেমিস্টার শেষ করে ২২ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করি। অক্টোবরে বিলাতে আসার পর পড়াশোনার চাপ ও অসহনীয় ঠান্ডায় নিজ শহর ছেড়ে বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। প্রথমে গন্তব্য ঠিক করি ম্যানচেস্টার, সেখান থেকে বিটলসের শহর লিভারপুল; তারপর শেফিল্ড ঘুরে নটিংহ্যাম—শেষে লন্ডন হয়ে নিজ শহর ক্যান্টাবরি প্রত্যাবর্তন। এই পরিকল্পনা মোতাবেক ক্যান্টাবরি ওয়েস্ট স্টেশন থেকে ম্যানচেস্টারের টিকিট কাটি। আগেই স্টুডেন্ট কার্ড দিয়ে রেল কার্ড করে রেখেছিলাম বলে রেলে ভাড়া তিন ভাগের এক ভাগ কম হয়। ইংল্যান্ডে রেলের ভাড়া আর বিমানভাড়া প্রায় কাছাকাছি। অনেক সময় বিমানভাড়া রেলের চেয়ে কম হয়। তবে এসি বাসের ভাড়া সবার নাগালে—স্বল্প খরচ। যাতায়াতে ট্রেন সবচেয়ে আরামদায়ক। যাই হোক, এবার ইংল্যান্ডের কয়েকটি শহর ভ্রমণের গল্প করা যাক।
যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, হলুদ মলাটের একটা অনুবাদ বই, বিশ টাকা দাম ছিল হয়তো, প্রায়শই নীলক্ষেতে ফুটপাতে দেখা মিলত। কেমন একটা নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ গন্ধ মিশ্রিত আবহ কাজ করত বইটাকে ঘিরে। তখন প্রথম বর্ষের দিকে বয়ঃসন্ধি পেরিয়েছি মাত্র—বইটার নাম ও প্রচ্ছদের মধ্যেই কেমন যেন একধরনের ‘নিষিদ্ধের’ প্রতি গোপন আকর্ষণ কাজ করত। আবার সামাজিক ট্যাবুও মাথার মধ্যে বিরাজ করত। ফলে নীলক্ষেতের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে বইটি হাতে নিয়ে সন্তর্পণে উলটে-পালটে দেখতাম আর মনের ভেতরে অজানা উত্তেজনা বোধ করতাম—অবচেতন মনে কাজ করত, না জানি কী আছে এর ভেতরে!
নিষিদ্ধ বই বা ম্যাগাজিনগুলো তখন ছেলেদের হলে পালাক্রমে পড়া হতো। একজনের পড়া শেষ হলে আরেকজন নিয়ে যেত। বলছি সেই বছর পনেরো-বিশ আগের কথা। তখন কিছু লেখকই ছিলেন, যাঁরা উদ্ভিন্ন যৌবন বা নিষিদ্ধ রোমাঞ্চকে উপলক্ষ করে লিখতেন। বইয়ের নামগুলোও ছিল চমকপ্রদ। যায়যায়দিনের বিশেষ সংখ্যাগুলো (যেমন শাড়ি সংখ্যা) ছিল তখন তুমুল জনপ্রিয়। নব্বইয়ের দশক এবং একুশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত সাহিত্যের একশ্রেণির পাঠক তৈরি হয়েছিল এই আপাতত গোপন রোমাঞ্চ আস্বাদন অনুরাগী।

যাই হোক, একদিন বইটা কিনে টুপ করে ব্যাগে ভরে নিই। সেই হলুদ মলাটের বইটি ছিল ডি এইচ লরেন্সের (১৮৮৫-১৯৩০) ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’। এসব বই প্রকাশ্যে বহন করাও যেন অস্বস্তিকর। কারণ, যদি কেউ দেখে ফেলে! রোমাঞ্চের জায়গা থেকে বইটি পড়েছি ঠিকই, কিন্তু তখন জানতাম না এই বইয়ের লেখক বিশ্বসাহিত্যে উপন্যাসের ধারায় আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। সাহিত্য যেহেতু মানুষের জীবনকেই অনুকরণ করে, সেহেতু মানুষের জৈবিকতা উপেক্ষা করার উপায় নেই। মানুষের জীবনে ওতপ্রোতভাবে যৌনতা জড়িত—স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক। ডি এইচ লরেন্স মানুষের অন্ধকার আদিম প্রবৃত্তিকে এই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি শ্রেণিসংগ্রামকে। আধুনিক উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো সমাজের প্রকাশ্য ও গোপন সব ক্রিয়াকলাপকে নৈর্ব্যক্তিক ও নির্মোহভাবে তুলে ধরা। তাই লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ প্রকাশের পর সাহিত্যের শ্লীলতা ও অশ্লীলতা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তবে শিল্প-সাহিত্যের চেয়ে সামাজিক শ্রেণিবিভাজন তুলে ধরে লরেন্স ব্রিটিশ সমাজকাঠামোকে ভেঙে দিয়েছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসে উঁচু শ্রেণির সঙ্গে নিচু শ্রেণির কোনো সম্পর্ক হতে পারে না—না মানসিক, না দৈহিক। ইংল্যান্ডের অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় অত্যন্ত কঠোর ও রক্ষণশীল মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। লরেন্স ব্রিটিশ রক্ষণশীল সমাজকে আঘাত করেছিলেন। ফলে দেখা যায়, ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ ইতালিতে ১৯২৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হলেও ইংল্যান্ডে অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ ছিল ৩২ বছর; পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ১৯৬০ সালে প্রথম প্রকাশেই এটি প্রায় ২ লাখ কপি বিক্রি হয়। শুধু তাই নয়, এ সময় বিশ্বব্যাপী এটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হতে থাকে—বাংলাদেশেও তখন ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ সহজলভ্য হয়। অথচ ডি এইচ লরেন্সের জীবিতকালে সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছিল এই গ্রন্থ। যদিও এই উপন্যাসের থেকেও তাঁর অন্যান্য লেখা সমসাময়িক লেখক ও সমালোচকদের কাছে অধিক সমাদৃত ছিল। যেমন : ‘সন্স অ্যান্ড লাভারস’, ‘দ্য রেইনবো’, ‘উইমেন ইন লাভ’ ইত্যাদি।

সাহিত্যে ডি এইচ লরেন্সের অতি রগরগে বয়ন বা প্রথাবিরোধী সম্পর্ককে বিষয়বস্তু করার পেছনে কারণ ছিল তাঁর স্বকাল ও স্বসমাজের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ ও শ্লাঘাস্বরূপ। অন্যদিকে, ঔপনিবেশিক শাসনে পিষ্ট পরাধীন বাংলার সমাজব্যবস্থা ব্রিটিশ আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সমান্তরাল ছিল না। ফলে ‘আধুনিক’ বাংলা সাহিত্যের পথ নির্মাণে বাংলার সমাজকাঠামো কতটা প্রস্তুত ছিল, তা প্রশ্নসাপেক্ষ বৈকি! কারণ, ইংল্যান্ডের প্রাক শিল্পবিপ্লব থেকে শিল্পবিপ্লব যুগে প্রবেশের সময় যে শ্রেণিসংগ্রাম ব্রিটিশ সমাজে দেখা গিয়েছিল, ডি এইচ লরেন্স তা-ই বিভিন্ন লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। অথচ পূর্ব বাংলায় তেমন কোনো সমাজ রূপান্তরের বিপ্লব পরিলক্ষিত হয় না। অথচ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্য ধ্যানধারণা অনুকরণ হতে দেরি করেনি। যদিও ‘আধুনিক’ প্রপঞ্চের ধারক লেখকদের অনেক সমালোচক সময়ের চেয়ে অগ্রগামী চিন্তক হিসেবে আখ্যা দিতে চান। কিন্তু সমাজ ও সাহিত্য যদি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ধরা হয়, তবে এই বক্তব্যে ফাঁক থেকে যায়।
যাই হোক, ডি এইচ লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’-এর পর এই ধারার বাংলা ভাষায় রচিত উপন্যাসগুলো পড়া শুরু করি। একে একে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চতুষ্কোণ’, বুদ্ধদেব বসুর ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’, সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’, শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘কাশবনের কন্যা’, মাহবুব-উল আলমের ‘মফিজন’, আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘সত্যের মতো বদমাশ’ ইত্যাদি নিষিদ্ধ(!) উপকরণে সন্নিবিষ্ট বই পড়া হয়ে যায়।
ডি এইচ লরেন্সের বাড়ি খোঁজার গল্পে ফিরে আসা যাক। আমরা পরের ট্রেনেই লরেন্সের জন্ম শহরে চলে আসি। এখানে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কয়েকজন সহকর্মী পিএইচডি গবেষণারত আছেন। তাঁদের অপেক্ষায় রেখে নটিংহ্যাম রেলস্টেশনে নেমেই ট্রামে টিকিট কেটে শহরের 'আপার পার্লামেন্ট স্ট্রিট' নামক স্থানে চলে আসি। এই জায়গা থেকে রেইনবো বাসে করে ৪০ মিনিটে চলে যাই ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড, যে বাড়িতে ডি এইচ লরেন্স জন্মেছিলেন।
নটিংহ্যামশায়ারের ইস্টউড ছোট্ট ছিমছাম শহর। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় কয়লাশ্রমিকদের আবাস ছিল এই এলাকা। ইংল্যান্ডের প্রাক্-শিল্পবিপ্লবের সাক্ষী হয়ে আছে এই শহর। বাস থেকে নেমে গুগল ম্যাপ ধরে কয়েক মিনিট হাঁটতেই পেয়ে যাই লরেন্সের বাড়ি। নীলক্ষেতে দেখা একটি বইয়ের লেখকের বাড়ি খুঁজে পাওয়া যে কত আনন্দের, তা বলে বোঝানো যাবে না। মূল রাস্তা থেকে নেমে অপর পাশে হাতের ডান দিকে এগোতেই কিছুটা ঢালু পথ, অনেকটা গলির মতো। এই রাস্তার মাঝামাঝি আরেকটি গলির কোনায় লাল ইটের রঙে দাঁড়িয়ে আছে সেই ৮/এ বাড়িটি। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। এখান থেকে সোজা সামনে এগিয়ে গেলে ঢালু পথ একেবারে নেমে গেছে নিচে পাহাড়ের গোড়ায়। সেখানে উপত্যকার মতো পাহাড়ি ঝিড়িপথ, জনমানুষশূন্য বনবনানী। সুদূরে তাকালেই দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের সারি আর ঘন অরণ্য। বাড়ির চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখে ভেতরের প্রবেশদ্বারের চৌকাঠে বসে বিশ্রাম নিই কিছুক্ষণ। বর্তমানে এটি লেখকের নামে স্মৃতি জাদুঘর করা হয়েছে।
ডি এইচ লরেন্স এই প্রাকৃতিক পাহাড়ঘেরা পরিবেশেই বেড়ে উঠেছিলেন। কয়লাখনি ও শ্রমিক অধ্যুষিত নটিংহ্যামশায়ারের এই জীবন ডি এইচ লরেন্সের ততটা সুখকর ছিল না। মাত্র ষোলো বছর বয়সে এই শহর ছেড়ে যাওয়ার পর বাকি জীবন কেটেছে বোহেমিয়ান। জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় যাযাবর জীবন কেটেছে তাঁর। শারীরিক অসুস্থতা ছিল নিত্যসঙ্গী। যেখানেই যান না কেন, শৈশবের শহর নটিংহ্যামশায়ারকে তিনি ভুলতে পারেননি। তাঁর সাহিত্যিক জীবনকে তুমুল প্রভাবিত করেছে এই শহর। ফলে লরেন্সের অধিকাংশ উপন্যাসে পাওয়া যায় এই শহরের উপভাষা ও প্রতিচ্ছবি। শান্ত-নিরিবিলি ছোট্ট মহল্লার সেই ঢালু পথ ধরে দূরের অরণ্যের দিকে নেমে গেলাম কিছুটা। মনে মনে ভাবছিলাম, লরেন্সও কি এই রাস্তা ধরে হাঁটত একসময়? হয়তো! হয়তো না! হয়তো!
আরও পড়ুন:

নটিংহ্যাম শহরে নেমেই মাথার ভেতরে ঘুরতে থাকে ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড। আগের রাতে শেফিল্ডে ছিলাম সহকর্মী মামুনের বাসায়। রাতেই দুজনে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখি নটিংহ্যামে যাওয়ার। দূরত্ব বেশি না, মাত্র এক ঘণ্টার পথ। সকাল ৯টার ট্রেন ধরব বলে আধা ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু বিধি বাম, শেফিল্ড শহরের খাঁড়া-ঢালু পথ বেয়ে রেলস্টেশনে যেতে না যেতেই মাত্র ১০ সেকেন্ডের জন্য চোখের সামনে দিয়ে ট্রেন ছেড়ে গেল। দুজনের তখন আফসোস, আরও এক ঘণ্টা পর অন্য ট্রেনের অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না।
প্রথম সেমিস্টার শেষ করে ২২ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করি। অক্টোবরে বিলাতে আসার পর পড়াশোনার চাপ ও অসহনীয় ঠান্ডায় নিজ শহর ছেড়ে বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। প্রথমে গন্তব্য ঠিক করি ম্যানচেস্টার, সেখান থেকে বিটলসের শহর লিভারপুল; তারপর শেফিল্ড ঘুরে নটিংহ্যাম—শেষে লন্ডন হয়ে নিজ শহর ক্যান্টাবরি প্রত্যাবর্তন। এই পরিকল্পনা মোতাবেক ক্যান্টাবরি ওয়েস্ট স্টেশন থেকে ম্যানচেস্টারের টিকিট কাটি। আগেই স্টুডেন্ট কার্ড দিয়ে রেল কার্ড করে রেখেছিলাম বলে রেলে ভাড়া তিন ভাগের এক ভাগ কম হয়। ইংল্যান্ডে রেলের ভাড়া আর বিমানভাড়া প্রায় কাছাকাছি। অনেক সময় বিমানভাড়া রেলের চেয়ে কম হয়। তবে এসি বাসের ভাড়া সবার নাগালে—স্বল্প খরচ। যাতায়াতে ট্রেন সবচেয়ে আরামদায়ক। যাই হোক, এবার ইংল্যান্ডের কয়েকটি শহর ভ্রমণের গল্প করা যাক।
যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, হলুদ মলাটের একটা অনুবাদ বই, বিশ টাকা দাম ছিল হয়তো, প্রায়শই নীলক্ষেতে ফুটপাতে দেখা মিলত। কেমন একটা নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ গন্ধ মিশ্রিত আবহ কাজ করত বইটাকে ঘিরে। তখন প্রথম বর্ষের দিকে বয়ঃসন্ধি পেরিয়েছি মাত্র—বইটার নাম ও প্রচ্ছদের মধ্যেই কেমন যেন একধরনের ‘নিষিদ্ধের’ প্রতি গোপন আকর্ষণ কাজ করত। আবার সামাজিক ট্যাবুও মাথার মধ্যে বিরাজ করত। ফলে নীলক্ষেতের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে বইটি হাতে নিয়ে সন্তর্পণে উলটে-পালটে দেখতাম আর মনের ভেতরে অজানা উত্তেজনা বোধ করতাম—অবচেতন মনে কাজ করত, না জানি কী আছে এর ভেতরে!
নিষিদ্ধ বই বা ম্যাগাজিনগুলো তখন ছেলেদের হলে পালাক্রমে পড়া হতো। একজনের পড়া শেষ হলে আরেকজন নিয়ে যেত। বলছি সেই বছর পনেরো-বিশ আগের কথা। তখন কিছু লেখকই ছিলেন, যাঁরা উদ্ভিন্ন যৌবন বা নিষিদ্ধ রোমাঞ্চকে উপলক্ষ করে লিখতেন। বইয়ের নামগুলোও ছিল চমকপ্রদ। যায়যায়দিনের বিশেষ সংখ্যাগুলো (যেমন শাড়ি সংখ্যা) ছিল তখন তুমুল জনপ্রিয়। নব্বইয়ের দশক এবং একুশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত সাহিত্যের একশ্রেণির পাঠক তৈরি হয়েছিল এই আপাতত গোপন রোমাঞ্চ আস্বাদন অনুরাগী।

যাই হোক, একদিন বইটা কিনে টুপ করে ব্যাগে ভরে নিই। সেই হলুদ মলাটের বইটি ছিল ডি এইচ লরেন্সের (১৮৮৫-১৯৩০) ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’। এসব বই প্রকাশ্যে বহন করাও যেন অস্বস্তিকর। কারণ, যদি কেউ দেখে ফেলে! রোমাঞ্চের জায়গা থেকে বইটি পড়েছি ঠিকই, কিন্তু তখন জানতাম না এই বইয়ের লেখক বিশ্বসাহিত্যে উপন্যাসের ধারায় আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। সাহিত্য যেহেতু মানুষের জীবনকেই অনুকরণ করে, সেহেতু মানুষের জৈবিকতা উপেক্ষা করার উপায় নেই। মানুষের জীবনে ওতপ্রোতভাবে যৌনতা জড়িত—স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক। ডি এইচ লরেন্স মানুষের অন্ধকার আদিম প্রবৃত্তিকে এই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি শ্রেণিসংগ্রামকে। আধুনিক উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো সমাজের প্রকাশ্য ও গোপন সব ক্রিয়াকলাপকে নৈর্ব্যক্তিক ও নির্মোহভাবে তুলে ধরা। তাই লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ প্রকাশের পর সাহিত্যের শ্লীলতা ও অশ্লীলতা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তবে শিল্প-সাহিত্যের চেয়ে সামাজিক শ্রেণিবিভাজন তুলে ধরে লরেন্স ব্রিটিশ সমাজকাঠামোকে ভেঙে দিয়েছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসে উঁচু শ্রেণির সঙ্গে নিচু শ্রেণির কোনো সম্পর্ক হতে পারে না—না মানসিক, না দৈহিক। ইংল্যান্ডের অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় অত্যন্ত কঠোর ও রক্ষণশীল মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। লরেন্স ব্রিটিশ রক্ষণশীল সমাজকে আঘাত করেছিলেন। ফলে দেখা যায়, ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ ইতালিতে ১৯২৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হলেও ইংল্যান্ডে অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ ছিল ৩২ বছর; পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ১৯৬০ সালে প্রথম প্রকাশেই এটি প্রায় ২ লাখ কপি বিক্রি হয়। শুধু তাই নয়, এ সময় বিশ্বব্যাপী এটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হতে থাকে—বাংলাদেশেও তখন ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ সহজলভ্য হয়। অথচ ডি এইচ লরেন্সের জীবিতকালে সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছিল এই গ্রন্থ। যদিও এই উপন্যাসের থেকেও তাঁর অন্যান্য লেখা সমসাময়িক লেখক ও সমালোচকদের কাছে অধিক সমাদৃত ছিল। যেমন : ‘সন্স অ্যান্ড লাভারস’, ‘দ্য রেইনবো’, ‘উইমেন ইন লাভ’ ইত্যাদি।

সাহিত্যে ডি এইচ লরেন্সের অতি রগরগে বয়ন বা প্রথাবিরোধী সম্পর্ককে বিষয়বস্তু করার পেছনে কারণ ছিল তাঁর স্বকাল ও স্বসমাজের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ ও শ্লাঘাস্বরূপ। অন্যদিকে, ঔপনিবেশিক শাসনে পিষ্ট পরাধীন বাংলার সমাজব্যবস্থা ব্রিটিশ আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সমান্তরাল ছিল না। ফলে ‘আধুনিক’ বাংলা সাহিত্যের পথ নির্মাণে বাংলার সমাজকাঠামো কতটা প্রস্তুত ছিল, তা প্রশ্নসাপেক্ষ বৈকি! কারণ, ইংল্যান্ডের প্রাক শিল্পবিপ্লব থেকে শিল্পবিপ্লব যুগে প্রবেশের সময় যে শ্রেণিসংগ্রাম ব্রিটিশ সমাজে দেখা গিয়েছিল, ডি এইচ লরেন্স তা-ই বিভিন্ন লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। অথচ পূর্ব বাংলায় তেমন কোনো সমাজ রূপান্তরের বিপ্লব পরিলক্ষিত হয় না। অথচ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্য ধ্যানধারণা অনুকরণ হতে দেরি করেনি। যদিও ‘আধুনিক’ প্রপঞ্চের ধারক লেখকদের অনেক সমালোচক সময়ের চেয়ে অগ্রগামী চিন্তক হিসেবে আখ্যা দিতে চান। কিন্তু সমাজ ও সাহিত্য যদি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ধরা হয়, তবে এই বক্তব্যে ফাঁক থেকে যায়।
যাই হোক, ডি এইচ লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’-এর পর এই ধারার বাংলা ভাষায় রচিত উপন্যাসগুলো পড়া শুরু করি। একে একে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চতুষ্কোণ’, বুদ্ধদেব বসুর ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’, সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’, শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘কাশবনের কন্যা’, মাহবুব-উল আলমের ‘মফিজন’, আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘সত্যের মতো বদমাশ’ ইত্যাদি নিষিদ্ধ(!) উপকরণে সন্নিবিষ্ট বই পড়া হয়ে যায়।
ডি এইচ লরেন্সের বাড়ি খোঁজার গল্পে ফিরে আসা যাক। আমরা পরের ট্রেনেই লরেন্সের জন্ম শহরে চলে আসি। এখানে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কয়েকজন সহকর্মী পিএইচডি গবেষণারত আছেন। তাঁদের অপেক্ষায় রেখে নটিংহ্যাম রেলস্টেশনে নেমেই ট্রামে টিকিট কেটে শহরের 'আপার পার্লামেন্ট স্ট্রিট' নামক স্থানে চলে আসি। এই জায়গা থেকে রেইনবো বাসে করে ৪০ মিনিটে চলে যাই ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড, যে বাড়িতে ডি এইচ লরেন্স জন্মেছিলেন।
নটিংহ্যামশায়ারের ইস্টউড ছোট্ট ছিমছাম শহর। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় কয়লাশ্রমিকদের আবাস ছিল এই এলাকা। ইংল্যান্ডের প্রাক্-শিল্পবিপ্লবের সাক্ষী হয়ে আছে এই শহর। বাস থেকে নেমে গুগল ম্যাপ ধরে কয়েক মিনিট হাঁটতেই পেয়ে যাই লরেন্সের বাড়ি। নীলক্ষেতে দেখা একটি বইয়ের লেখকের বাড়ি খুঁজে পাওয়া যে কত আনন্দের, তা বলে বোঝানো যাবে না। মূল রাস্তা থেকে নেমে অপর পাশে হাতের ডান দিকে এগোতেই কিছুটা ঢালু পথ, অনেকটা গলির মতো। এই রাস্তার মাঝামাঝি আরেকটি গলির কোনায় লাল ইটের রঙে দাঁড়িয়ে আছে সেই ৮/এ বাড়িটি। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। এখান থেকে সোজা সামনে এগিয়ে গেলে ঢালু পথ একেবারে নেমে গেছে নিচে পাহাড়ের গোড়ায়। সেখানে উপত্যকার মতো পাহাড়ি ঝিড়িপথ, জনমানুষশূন্য বনবনানী। সুদূরে তাকালেই দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের সারি আর ঘন অরণ্য। বাড়ির চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখে ভেতরের প্রবেশদ্বারের চৌকাঠে বসে বিশ্রাম নিই কিছুক্ষণ। বর্তমানে এটি লেখকের নামে স্মৃতি জাদুঘর করা হয়েছে।
ডি এইচ লরেন্স এই প্রাকৃতিক পাহাড়ঘেরা পরিবেশেই বেড়ে উঠেছিলেন। কয়লাখনি ও শ্রমিক অধ্যুষিত নটিংহ্যামশায়ারের এই জীবন ডি এইচ লরেন্সের ততটা সুখকর ছিল না। মাত্র ষোলো বছর বয়সে এই শহর ছেড়ে যাওয়ার পর বাকি জীবন কেটেছে বোহেমিয়ান। জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় যাযাবর জীবন কেটেছে তাঁর। শারীরিক অসুস্থতা ছিল নিত্যসঙ্গী। যেখানেই যান না কেন, শৈশবের শহর নটিংহ্যামশায়ারকে তিনি ভুলতে পারেননি। তাঁর সাহিত্যিক জীবনকে তুমুল প্রভাবিত করেছে এই শহর। ফলে লরেন্সের অধিকাংশ উপন্যাসে পাওয়া যায় এই শহরের উপভাষা ও প্রতিচ্ছবি। শান্ত-নিরিবিলি ছোট্ট মহল্লার সেই ঢালু পথ ধরে দূরের অরণ্যের দিকে নেমে গেলাম কিছুটা। মনে মনে ভাবছিলাম, লরেন্সও কি এই রাস্তা ধরে হাঁটত একসময়? হয়তো! হয়তো না! হয়তো!
আরও পড়ুন:

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

নটিংহ্যাম শহরে নেমেই মাথার ভেতরে ঘুরতে থাকে ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড। আগের রাতে শেফিল্ডে ছিলাম সহকর্মী মামুনের বাসায়। রাতেই দুজনে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখি নটিংহ্যামে যাওয়ার। দূরত্ব বেশি না, মাত্র এক ঘণ্টার পথ। সকাল ৯টার ট্রেন ধরব বলে আধা ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু বিধি বাম, শেফিল্ড শহ
০৭ অক্টোবর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

নটিংহ্যাম শহরে নেমেই মাথার ভেতরে ঘুরতে থাকে ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড। আগের রাতে শেফিল্ডে ছিলাম সহকর্মী মামুনের বাসায়। রাতেই দুজনে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখি নটিংহ্যামে যাওয়ার। দূরত্ব বেশি না, মাত্র এক ঘণ্টার পথ। সকাল ৯টার ট্রেন ধরব বলে আধা ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু বিধি বাম, শেফিল্ড শহ
০৭ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

নটিংহ্যাম শহরে নেমেই মাথার ভেতরে ঘুরতে থাকে ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড। আগের রাতে শেফিল্ডে ছিলাম সহকর্মী মামুনের বাসায়। রাতেই দুজনে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখি নটিংহ্যামে যাওয়ার। দূরত্ব বেশি না, মাত্র এক ঘণ্টার পথ। সকাল ৯টার ট্রেন ধরব বলে আধা ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু বিধি বাম, শেফিল্ড শহ
০৭ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

নটিংহ্যাম শহরে নেমেই মাথার ভেতরে ঘুরতে থাকে ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড। আগের রাতে শেফিল্ডে ছিলাম সহকর্মী মামুনের বাসায়। রাতেই দুজনে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখি নটিংহ্যামে যাওয়ার। দূরত্ব বেশি না, মাত্র এক ঘণ্টার পথ। সকাল ৯টার ট্রেন ধরব বলে আধা ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু বিধি বাম, শেফিল্ড শহ
০৭ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৫ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে