Ajker Patrika

আনি এরনোর উপন্যাস ‘লজ্জা’

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২২, ২২: ০০
আনি এরনোর উপন্যাস ‘লজ্জা’

অনুবাদকের কথা: অন্য অনেকের মতোই আমিও নোবেলপ্রাপ্তির আগে আনি এরনোর নাম শুনিনি। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তিই তাঁর সম্পর্কে আগ্রহের জন্ম দিল। যেহেতু রুশ ভাষা জানি এবং রুশ দেশটি সাহিত্যকে দেয় উচ্চমূল্য, তাই তাদের সাইটগুলোয় গেলাম দেখতে, সেখানে কি আনি এরনো আছেন? সবিস্ময়ে লক্ষ করলাম, আনি এরনো শুধু আছেন বললেই হবে না, তাঁর অনেকগুলো বই বহু আগেই রুশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তারই একটি হলো ‘লজ্জা’। লজ্জা আনি এরনোর দ্বিতীয় উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসের মতোই এই উপন্যাসে তিনি এমন এক কথকের ভূমিকা নিয়েছেন, যে কথক তাঁর শৈশবের বিশ্বকে পুনরাবিষ্কার করেন। জীবনের ঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো তুলে আনেন এবং চেষ্টা করেন এই লজ্জা থেকে চিরতরে পরিত্রাণ পেতে। উপন্যাসটির আকার খুব বড় নয়। আজ উপন্যাসটির প্রথম অংশের অনুবাদ করা হলো—জাহীদ রেজা নূর

ভ. ফিলিপকে
ভাষা—মোটেই চরম সত্য নয়। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য একটা উপায়মাত্র। 
পল অস্টার (একাকিত্ব আবিষ্কার)     
 
জুনের এক রোববার, দুপুরের পরপরই আমার বাবা খুন করতে গিয়েছিল মাকে। বরাবরের মতো রোববারে আমি নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট পনেরো আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। ফেরার পথে ঢুকেছিলাম বেকারিতে, পেস্ট্রি কিনব বলে। বেকারিটা ছিল একটি বাণিজ্যিক ভবনে, যুদ্ধের পর থেকেই তা মেরামত করা হচ্ছিল, পুরো মেরামত করা এখনও হয়ে ওঠেনি। বাড়ি এসে আমি রোববারের বাইরের পোশাক ছাড়লাম, পরলাম বাড়িতে পরার জামা। দোকানের গ্রাহকরা বিদায় নিয়েছে, কাচের জানালাগুলো পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা পরিবারসুদ্ধ বসেছি টেবিল ঘিরে এবং অবধারিতভাবেই রেডিওতে বাজছে ‘বিচার’ নামে কৌতুকরসে সমৃদ্ধ একটি অনুষ্ঠান। ইয়ান দেন অভিনয় করছিলেন ইলেকট্রিশিয়ানের ভূমিকায়। তাঁর কিছু হাস্যকর কার্যকলাপের জন্য বিচারক তাঁর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে রায় দিচ্ছিলেন, সেই রায় শুনতে শুনতেও হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছিল।

মায়ের মেজাজ খারাপ ছিল। চেয়ারে বসেই বাবার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করল মা, কোনোভাবেই সে নিজেকে নিরস্ত করতে পারছিল না। টেবিল থেকে থালা-বাসন সরিয়ে, টেবিলক্লথটা পরিষ্কার করার পর অপরিসর রান্নাঘরে গিয়েও বাবাকে ঠেস দিয়ে কথা বলতে লাগল সে। এখান দিয়েই একটি সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে শোয়ার ঘরের দিকে।

প্রতিবার মা রেগে গেলে এ রকমই হতো। বাবা নীরবে বসে থাকত তার চেয়ারে, জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকত বাইরের দিকে। কিন্তু হঠাৎ করেই সেদিন বাবার নিশ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হয়ে এল। সে লাফিয়ে উঠল চেয়ার থেকে, তারপর মাকে ধরে টেনে নিয়ে গেল ক্যাফের দিকে এবং অচেনা এক ঘড়ঘড়ে কণ্ঠে মাকে অভিশাপ দিতে লাগল।

আমি দৌড়ে চলে গেলাম ওপরতলায়, শুয়ে পড়লাম বিছানায়, বালিশ দিয়ে ঢেকে রাখলাম মাথা। তখনই শুনতে পেলাম মায়ের ক্রন্দনরত কণ্ঠ, ‘মেয়ে’! ক্যাফের পাশে মাটির নিচের সেলার থেকে উঠে আসছিল মায়ের কণ্ঠ। আমি দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলাম এবং চিৎকার করতে থাকলাম, ‘বাঁচাও, বাঁচাও!’ মাটির নিচের আলো-আঁধারির মধ্যে আমি দেখলাম, বাবা এক হাতে মাকে জাপটে ধরে আছে, কিন্তু ঘাড় না গলা চেপে ধরেছে, তা বোঝা যাচ্ছিল না। অন্য হাতে গাছের ডাল কাটার বড় একটা কাঁচি। আমার শুধু মনে পড়ছে চিৎকার আর মায়ের কান্নাকাটি। এরপর আমরা তিনজন মিলে আবার রান্নাঘরে। বাবা জানালার ধারে বসে, মা চুলোর পাশে দাঁড়িয়ে, আমি সিঁড়ির একেবারে নিচের ধাপে বসে আছি।

আমি কাঁদছিলাম। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিলাম না। বাবা তখনো নিজের মধ্যে ফিরে আসেনি। তার কণ্ঠ থেকে যে স্বর বের হচ্ছে, সেটা কাঁপা কাঁপা অচেনা অন্য মানুষের কণ্ঠ।

সে শুধু বলে চলেছিল, ‘তুই কাঁদছিস কেন, আমি তো তোকে কিছুই করিনি।’ আমার মনে আছে, কী উত্তর দিয়েছিলাম বাবাকে—‘তোমার কারণেই আমি সারা জীবনের জন্য উন্মাদ হয়ে যাব।’ মা বলেছিল, ‘আর না আর না, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।’ এরপর আমরা তিনজন সাইকেলে করে শহর ঘুরতে বের হলাম। যখন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলাম, তখন প্রতি রোববারের মতোই আমার মা-বাবা তাদের ক্যাফে খুলল। আমাদের তিনজনের কেউই আর কোনো দিন এই ব্যাপারটা নিয়ে মুখ খুলিনি।

১৯৫২ সালের ১৫ জুন এই ঘটনাটি ঘটেছিল। শৈশবের এই তারিখটিকেই সর্বপ্রথম আমি মনে জায়গা দিয়েছি। এর আগে স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে কিংবা আমার খাতায় যা লিখেছি, তা কখনোই ধারাবাহিকভাবে কার পর কোনটা, তা মনে রাখিনি।

পরে, আমার কয়েকজন প্রেমিককে আমি বলেছি, ‘জানো, আমার বয়স যখন বারো, তখন আমার বাবা আমার মাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।’ কেন এই কথা তাদের বলার তৃষ্ণা জাগল আমার মনে, তার কারণ হিসেবে আমি দেখেছি যে এই পুরুষগুলোকে আমি খুব ভালো বাসতাম। কিন্তু আমার জীবনের এই গোপন কথা তাদের কাছে ফাঁস করায় আমাকে কম ভুগতে হয়নি। এ কথা শোনার পরই তারা মৌন হয়ে যেত। আমি বুঝতে পেরেছি, কথাটা বলা আমার ভুলই হয়েছে, আমার প্রেমিকদের কেউই ঘটনাটি হজম করার জন্য প্রস্তুত ছিল না।

ঘটনাটা আমি এবারই প্রথম লিখলাম। আজকের দিনের আগ পর্যন্ত আমি ভেবেছিলাম, এই ঘটনা আমি কখনোই লিখতে পারব না, এমনকি নিজের ডায়েরিতেও নয়। ভয় পেয়েছি, কোনো গোপন নিষেধাজ্ঞা তাতে ভঙ্গ হবে বলে, হয়তো তাতে চিরতরে লেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারি। এখন হালকা লাগছে। দেখছি, তেমন ভয়ংকর কিছু ঘটেনি, আগে যেভাবে লিখতাম সেভাবেই লিখতে পারছি। যখন আমি কাগজে লিখে ফেলেছি ঘটনাটা, তখন বুঝতে পারছি এটা এমন কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, একেবারেই সাধারণ পারিবারিক ঘটনা, এবং বলতে হয়, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটা গল্প করতে করতে সেটা তার ব্যতিক্রমী আমেজটা হারিয়ে সাদামাটা ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

কিন্তু দৃশ্যটি আমার মনে ভয়ংকর ও বচনহীনভাবে পোক্ত হয়ে বসায়, আমি আমার প্রেমিকদের কাছে তা বর্ণনা করেছিলাম এমন সব শব্দ নির্মাণ করে, যা আমার কাছে অদ্ভুত বলে মনে হয়। এখন থেকে দৃশ্যটি শুধুই আমার নয়।

এতদিন আমার মনে হতো, ঘটনাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমার মনে স্থায়ী আসন পেয়েছে। কিন্তু আসলে আমার স্মৃতিতে রয়েছে শুধু সেদিনের পরিবেশটার কথা আর কে কী ধরনের অঙ্গভঙ্গি করেছিল সে কথা আর সঙ্গে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন শব্দ। আমার মনে ছিল না, কী নিয়ে ঝগড়া হচ্ছিল বাবা-মায়ের মধ্যে, মায়ের শরীরে কি ক্যাফেতে কাজ করার সেই সাদা অ্যাপ্রোনটা ছিল, নাকি তিনি আগেই তা বিকেলে ঘুরতে বেরোবেন বলে খুলে রেখেছিলেন, তা আমার মনে নেই। সকালের নাশতা হিসেবে কী খেয়েছিলাম, সেটাও আমার মনে নেই।

যেকোনো রোববারের মতোই ছিল সেই রোববারটি; সেই প্রার্থনায় যাওয়া, পেস্ট্রিশপে যাওয়া—কিছুই মনে রাখার মতো নয়, কিন্তু মনে রাখা উচিত ছিল, কারণ কোনো এক দিন ঘটনাগুলো স্মরণ করতে হবে। মনে আছে শুধু, আমার পরনে ছিল সাদা ফুটকি দেওয়া নীল রঙের ফ্রক। এটা মনে আছে, কারণ পরপর দুই বছর গ্রীষ্মকালে আমি এই ফ্রক পরেছি এবং পরার সময় ভেবেছি, ‘এই তো সেই ফ্রক।' আরও মনে আছে, সে দিনটি ছিল হাওয়ার দিন, সূর্য সুযোগ পেলেই হারিয়ে যাচ্ছিল মেঘের মধ্যে।

এই রোববারের পর আমি যেন মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে বসবাস করছিলাম। আমি খেলতাম, পড়তাম, সবকিছুই করতাম; কিন্তু সাধারণত আমার চিন্তাভাবনা পড়ে থাকত অনেক অনেক দূরে। সবকিছুই আমার কাছে অবাস্তব বলে মনে হতো। আমি পড়াশোনায় অমনোযাগী হয়ে পড়লাম, যদিও গ্রীষ্মের ছুটিতে সবকিছুই ছিল আয়ত্তের মধ্যে। একজন মেধাবী কিন্তু অসতর্ক শিক্ষার্থী থেকে আমি পরিণত হয়েছিলাম এক অমনোযোগী শিক্ষার্থীতে। আমি কিছুতেই দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে পারছিলাম না। আমার বাবা, যে আমার মাকে খুন করতে চেয়েছিল, সে আমাকে খুব আদর করত, মা-ও আমাকে আদর করত। মা ছিল বাবার চেয়ে বেশি ধার্মিক, টাকা-পয়সার লেনদেন সে-ই বেশি করত, আমার শিক্ষকদের কাছে সে-ই মূলত যেত, এবং সে বাবার ওপর চিল্লাচিল্লিও করত, আমার ওপরও চিল্লাচিল্লি করত, তাতে আমার কিছু মনে হতো না। আমি এ থেকে কে ঠিক আর কে বেঠিক, সেটা ভাবতাম না। আমি শুধু মাকে খুন করার সময় বাবাকে বাধা দিয়েছি স্রেফ এ জন্য যে খুন করে যেন তাকে জেলে যেতে না হয়।

মনে আছে, এরপর মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমি এ রকম আরেকটি দৃশ্যের অবতারণার আশঙ্কা মনে নিয়ে কীভাবে সময় কাটিয়েছি। যখন আমাদের ক্যাফেতে খদ্দের থাকত, তখন আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতাম, কিন্তু যখন রাতে আমরাই শুধু থাকতাম বাড়িতে, কিংবা রোববার দুপুরের পর আতঙ্ক এসে আমার ওপর ভর করত। বাবা-মা যে কেউ একজন গলা চড়িয়ে কথা বললে আমি চকিতে বাবার দিকে তাকাতাম, তার প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে নজর রাখতাম। যদি সবকিছু শান্ত হয়ে যেত, তাহলেও কিছু একটা অকল্যাণের আশঙ্কায় আমি বিবর্ণ হয়ে পড়তাম। স্কুলে ক্লাস করার সময় আমি ভাবতাম বাড়ি ফেরার পর আমার জন্য না জানি কোন নাটক অপেক্ষা করছে!

যখন তাদের দুজনের মধ্যে ভালোবাসার পরশ দেখতে পেতাম, তখন তাদের প্রতিটি হাসি, রসিকতা আমি উপভোগ করতাম, মনে করতাম, সবকিছুই চলছে আগের মতো। আর ওই ভয়ংকর ঘটনাটা আসলে একটা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরই বুঝতে পারতাম, যে পেলবতা দেখা যাচ্ছে, তা ভবিষ্যৎকে আশঙ্কামুক্ত রাখার গ্যারান্টি দিতে পারে না।

সেই বছরগুলোয় রেডিওতে একটা অদ্ভুত গান বাজত। একটি জায়গায় শান্ত নীরবতা, এ সময় কেউ ফিসফিস করে বলছে, ‘মাছি উড়ে গেলেও তার শব্দ শোনা যাবে।’ আর তখনই সশব্দ আর্তচিৎকার আর যুক্তিহীন কথাবার্তার ভিড়। এই গানটি সব সময় আমাকে বিষাদাক্রান্ত করত। একবার গোয়েন্দা গল্পভক্ত আমার এক চাচা হঠাৎ আমাকে বলেছিল, ‘তোর কী মনে হয়? যদি তোর বাবাকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয় এবং সে যদি খুনি না হয়, তাহলে কী হবে?’ আমি বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলাম। সব সময় আমার মনে এসে ধাক্কা দিচ্ছিল সেই ঘটনা।

এই দৃশ্যের অবতারণা আর কখনো হয়নি। এর পনের বছর পর বাবা মারা গিয়েছিল। সেটাও ছিল জুনের কোনো এক রোববার।

এখন আমি ভাবি, এমন তো হতে পারে, মা-বাবা ওই রোববারের ঘটনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ করেছে। বাবার সেদিনকার আচরণ নিয়ে তারা কথা বলেছে এবং দুজনে মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভুলে যাবে ঘটনাটি। এটা ঘটতে পারে ঠিক সেই রোববার রাতেই, বিছানায় শুয়ে শুয়ে। সেখানেই সঙ্গমের সময় তারা সবকিছু মিটিয়ে ফেলেছিল। এই ভাবনা এবং এরপর অনেক ভাবনা আমার মাথায় এসেছে অনেক অনেক পরে। আজ আর তার কিছুই আমি বদলাতে পারব না এবং সেই ভয়ংকর ঘটনা ভুলতে পারব না, যে ঘটনার জন্ম দিয়েছিল সেই রোববার।

দক্ষিণ ফ্রান্সে কোনো এক জনশূন্য রাস্তার ধারে কয়েকজন ইংরেজ একটা তাঁবু খাটিয়েছিল রাতে। পরদিন সকালে দেখা গেল, তারা সবাই খুনের শিকার হয়েছে। পরিবারের মাথা, বাবা স্যার জ্যাক ড্র্যামোন্ড, তার স্ত্রী লেডি আনা এবং মেয়ে এলিজাবেথ। দোমিনিচি পদবির একটি ইতালীয় পরিবার থাকত সে রাস্তার ধারে-কাছেই। সে পরিবারের ছেলে গুস্তাভ তিনটি খুনের দায়ে জেল খেটে এসেছে। দোমিনিচি পরিবারের লোকেরা ফরাসি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারত না। এমনকি ইংরেজ ড্র্যামোন্ড পরিবারের লোকেরাও হয়তো তাদের চেয়ে ভালো ফরাসি বলতে পারত। আমি শুধু ইংরেজি আর ইতালীয় ভাষায় লেখা ‘বাইরের দিকে ঝুঁকবেন না’ বুঝতে পেরেছিলাম। লেখাগুলো ছিল বড় ট্রাকের গায়ে লেখা। সবাই খুব অবাক হয়েছিল এই ভেবে যে, এই বড়লোক ইংরেজ পরিবারটি হোটেলে রুম ভাড়া না নিয়ে কেন রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে তাঁবুতে রাত কাটানোর কথা ভেবেছিল। আর আমি কল্পনা করেছি, রাস্তার ধারে খুন হয়ে পড়ে আছি আমি আর আমার মা-বাবা।

সেই বছরের দুটি ছবি আমার সংগ্রহে আছে। তার একটি নান্দনিক সাদা-কালো ছবি। সেটা ঢোকানো আছে কাগজের ফ্রেমে। অন্য পিঠে ফটোগ্রাফারের স্বাক্ষর রয়েছে।

রুশ ভাষায় অনূদিত আনি এরনোর বই। ছবি: সংগৃহীতছবিটিতে একটি পরিষ্কার গোলমুখো বালিকা, যার উঁচু চোয়ালের হাড়, বড় বড় নাকের ফুটো। তার মুখের অর্ধেকটা জুড়েই চশমা। চোখ সরাসরি ক্যামেরার দিকে নিবদ্ধ। চোয়ালের সঙ্গে ফিতে দিয়ে বাঁধা টুপির ফাঁক দিয়ে তার ঢেউখেলানো চুলগুলো বেরিয়ে আছে, ঠোঁটের কোণে তার সহজ হাসি লুকিয়ে আছে। এই ছোট্ট বালিকাটিকে বয়সের তুলনায় একটু বেশি বয়স্ক লাগছে বড় গোল চশমাটার কারণে।

ছবিটায় তারিখ দেওয়া ছিল ৫ জুন, ১৯৫২। ছবিটি ১৯৫১ সালে তোলা হয়নি, কিন্তু সে বছর ‘ব্রত পুনর্নবীকরণে’র সময় যে পোশাক পরেছিলাম, সে পোশাকটিই পরেছিলাম ছবিটায়।

দ্বিতীয় ছবিটায় ছিলাম আমি আর বাবা, ফুলভর্তি টবের পাশে। এ ছবি তোলা হয়েছিল বিয়ারিৎসে, ১৯৫২ সালের আগস্ট মাসে, সম্ভবত সমুদ্রসৈকতে (ছবিতে সে সৈকত নেই), লুর্দে আমরা যখন ভ্রমণে গিয়েছিলাম, সম্ভবত তখনকার ছবি। আমার উচ্চতা তখন এক মিটার ষাট সেন্টিমিটারের বেশি হবে না। আমার মাথাটা বাবার ঘাড়ের কাছাকাছি হয়েছে ততদিনে, বাবার উচ্চতা ছিল এক মিটার তিয়াত্তর সেন্টিমিটার। এই তিন মাসের মধ্যেই আমার চুল অনেক বড় হয়ে উঠেছিল, এবং তা চোয়ালে ফিতে বাঁধা ঢেউখেলানো টুপির মতো দেখাত। এই ছবিটি তোলা হয়েছিল পুরোনো বক্স ক্যামেরা দিয়ে, যুদ্ধের আগেই বাবা-মা মেলায় লটারিতে জিতেছিলেন সে ক্যামেরাটা। অবয়ব আর চশমাটা খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না, শুধু দেখা যাচ্ছিল, আমি হাসছি। আমার পরনে সাদা স্কার্ট আর ব্লাউজ, স্কুলড্রেস, যেটা খ্রিষ্টান স্কুলের উৎসবের সময় পরা হয়েছিল। আমার কাঁধের ওপর একটা জ্যাকেট। এই ছবিতে আমাকে খুব শীর্ণ ও চিকন-চাকন লাগছে স্কার্টের কারণে। এই পোশাকে আমাকে ছোট্ট একজন মহিলা বলে মনে হচ্ছে। বাবার পরনে গাঢ় রঙের কোট আর গাঢ় রঙের টাই, উজ্জ্বল রঙের শার্ট আর প্যান্ট। ছবিতে বাবা অতিকষ্টে হাসছে। ছবিতে সব সময়ই বাবা খুব শক্ত হয়ে থাকে। আমার হালও ছিল তেমনই, কারণ আমরা দুজনেই জানতাম, অন্যান্য বড়লোক পর্যটকের ভিড়ে আমাদের থাকতে হচ্ছে এবং তাদের মতো ভান করতে করতে। দুটো ছবিতে  হাসলেও আমার দাঁত দেখা যাচ্ছে না, কারণ আমি জানতাম আমার দাঁতগুলো এবড়োখেবড়ো, পচা।

এ ছবিগুলো দেখার সময় আমার মাথা কাজ করে না, যেন মনে হয়, আমি সেই বালিকা যে বিয়ারিৎসে দাঁড়িয়ে আছে বাবার পাশে। কিন্তু যদি আমি এই ছবি জীবনে প্রথমবারের মতো দেখতাম, তাহলে নিজেকে একেবারেই চিনতে পারতাম না। (আমি নিশ্চিত ‘এই আমি’কে কখনোই নিজেকে চিনতে পারতাম না, বলতাম ‘না, এটা আমি নই’)।

ছবি দুটোর মধ্যে ব্যবধান মাত্র তিন মাসের। প্রথমটিতে তারিখ দেওয়া আছে জুনের শুরুর দিকের, দ্বিতীয়টায় আগস্টের শেষের দিকের। ছবি দুটো মানে ও গুণে একেবারেই আলাদা বলে ছবির সূত্র ধরে আমার চেহারা ও শরীরের পরিবর্তনগুলো চোখে পড়বে না। কিন্তু এই দুটো ছবি আমার চোখে দুই যুগের ব্যবধানে তোলা। প্রথম ছবিটি শুভ্র পোশাকে, যেন এটা শৈশব থেকে বিদায়ের ছবি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে সেই সময়ের ছবি, যখন থেকে আমি বেঁচে থাকছি লজ্জাকে সঙ্গী করে। হতে পারে, সেই গ্রীষ্মের মাসগুলোকে আমি ইতিহাসবিদের মতো কোনো নির্দিষ্ট সময় হিসেবে দেখতে চাইছি। (‘সেই গ্রীষ্মে বলে কিংবা ‘ঘটনাটি ঘটেছিল সেই গ্রীষ্মে, যখন আমার বয়স বারো বছর পূর্ণ হলো, আমি সময়টিকে রূপকথার রোমান্টিকতার মধ্যে নিয়ে যেতে চাই, কিন্তু আসলে সেই গ্রীষ্ম ১৯৯৫ সালের গ্রীষ্মের চেয়ে মোটেই বেশি রোমান্টিক ছিল না।)

[চলবে]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপির জেলা ও নগর আহ্বায়ক দুই মেরুতে

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

স্বপ্নের দেশে যাত্রা: এক মাস ধরে যোগাযোগ বন্ধ, অবশেষে বাড়িতে এল নৌকাডুবির খবর

এ বছর জীবনযাত্রার মানে সেরা ১০ দেশের নাম জেনে নিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপির জেলা ও নগর আহ্বায়ক দুই মেরুতে

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

স্বপ্নের দেশে যাত্রা: এক মাস ধরে যোগাযোগ বন্ধ, অবশেষে বাড়িতে এল নৌকাডুবির খবর

এ বছর জীবনযাত্রার মানে সেরা ১০ দেশের নাম জেনে নিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপির জেলা ও নগর আহ্বায়ক দুই মেরুতে

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

স্বপ্নের দেশে যাত্রা: এক মাস ধরে যোগাযোগ বন্ধ, অবশেষে বাড়িতে এল নৌকাডুবির খবর

এ বছর জীবনযাত্রার মানে সেরা ১০ দেশের নাম জেনে নিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপির জেলা ও নগর আহ্বায়ক দুই মেরুতে

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

স্বপ্নের দেশে যাত্রা: এক মাস ধরে যোগাযোগ বন্ধ, অবশেষে বাড়িতে এল নৌকাডুবির খবর

এ বছর জীবনযাত্রার মানে সেরা ১০ দেশের নাম জেনে নিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপির জেলা ও নগর আহ্বায়ক দুই মেরুতে

আজকের রাশিফল: ভার্চুয়াল হাতাহাতি থেকে দূরে থাকুন, সিদ্ধান্ত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

স্বপ্নের দেশে যাত্রা: এক মাস ধরে যোগাযোগ বন্ধ, অবশেষে বাড়িতে এল নৌকাডুবির খবর

এ বছর জীবনযাত্রার মানে সেরা ১০ দেশের নাম জেনে নিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত