মনিজা রহমান

শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়।
রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ।
সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী চাও?’
‘আমি কী চাই তাতে তোমার কী! তুমি তো অপয়া!’—মেজাজ খারাপ করে কথাটা বলি আমি।
দাঁড়কাক আমাকে দেখে ভেংচি কাটে—‘আমি মরা ডালে বসে সারা দিন তোমাকে দেখি, আর তুমি আমাকে এত পর ভাব!’
‘ভাববই তো! তুমি আমাকে নিয়ে সব সময় রং-তামাশা করো!’
প্রতিদিন আসা-যাওয়ার পথে দাঁড়কাক আমাকে বিভ্রান্ত করে। দাঁড় করিয়ে দেয় এক বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে!
জীবনের কাছে আমি কী চাই আসলে! গল্পের কোনো প্লট খুঁজে ফিরি ইতিউতি। সেই রাতে দাঁড়কাক নিজেই যেন নেমে এল গল্প হয়ে! নয়তো পথেঘাটে এত মানুষ থাকতে গল্প এসে আমার ঘাড়ে পড়বে কেন!
উবার ইটস-এর হয়ে ফুড ডেলিভারি করা ছেলেটার কাজ। ভেসপার মতো একটা বাহনে বসে থাকতে দেখলাম ওকে। একদম সেই মরা গাছটার নিচে। আমাকে নিত্য ভেংচি দেয়া দাঁড়কাকটি নেই কোথাও। যে কারণে আমার মনে হতে লাগল, এই দাঁড়কাকটি আসলে ওই তরুণ নয়তো!
ছেলেটার বয়স হবে পঁচিশ থেকে আটাশের মধ্যে। কালো মুখে কালো চাপদাড়ি। প্রথমে ভেবেছিলাম ভারতের দক্ষিণ দিকের কোনো প্রদেশের মানুষ হবে। সে আমার সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলছিল, তবু সেই বাংলা এত দুর্বোধ্য যে তেলেগু কিংবা তামিলের মতো মনে হচ্ছিল।
ছেলেটা একটা ঠিকানা খুঁজছিল ফুড ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। যে কোম্পানির অধীনে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট, তার বিল্ডিংগুলো সব একই রকম দেখতে। মনে হবে অনেকগুলো যমজ ভাইবোন চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
রাত তখন এগারোটা পার হয়ে গেছে। আমাদের এই নিরিবিলি ঝিঁঝিডাকা জায়গাটির জন্য মধ্যরাত বলা যায়। জ্যাকসন হাইটস থেকে একটা প্রোগাম শেষে রীতিমতো ঝলমলে সাজে ঘরে ফিরছি আমি তখন।
হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ছেলেটা ভেসপা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাইহিল জুতা পরা আমার সামনে ছেলেটাকে বেশ বেঁটে মনে হয়। ও যেন আমার মনের কথা ধরতে পারে।
‘দেখেন আপনার সামনে আমি কত বেঁটে। ওই মহিলা আপনার চেয়েও লম্বা, মোটা আর চওড়া। ওনার সঙ্গে কি আমাকে মানায়!’
আমি যেন সপ্ত আসমান থেকে পড়ি। ছেলেটার কথার আগামাথা কিছুই বুঝি না।
‘কার কথা বলছেন?’ 
 ‘ওই মহিলা হলো কাগজপত্রে আমার স্ত্রী। আমার নাম রাজন মিয়া। বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে বাড়ি। মামায় মিলাইয়া দিছে মহিলার সঙ্গে। মহিলা বলছে, আমাকে হাজব্যান্ড বানায়া নিব।’ 
‘তারপর কি নেয়নি?’
‘তেতাল্লিশ হাজার ডলার দেবার পরে সে আমারে বিয়ে করছে। এখানে আসার পরে পহেলা সে ব্যবহার ভালো করছে। কোনো খারাপ করছে না। কিন্তু এখন তার ছাতালি খাইতে খাইতে আমার জীবন শেষ।’
‘ছাতালি কী জিনিস?’
‘ছাতালি মানে সে আমারে হার্ড টাইম দিছে। আমি যা ইনকাম করি সব সে নিয়া যায়। মহিলা ভালা না। ওর জামাই বাংলাদেশে চইল্যা গেছে। ও সিস্টেম কইরা পাঠাইয়া দিছে। জামাইয়ের বাড়ি-গাড়ি সব নিয়া নিছে। নিজে গাড়ি চালায়ে এদিক-ওদিক আয় যায়। তবে কোনো জব করে না। বাড়িতে সব সময় ড্রিংক করে। আমাকে ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠায় বোতল কিনে আনার জন্য।
তারপর যদি একজনের লগে থাকত তাও কথা ছিল! মহিলা ভালা না।’
‘চুক্তি অনুযায়ী তো মহিলার এখন আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা!’
‘সেইটাই তো দ্যায় না। কী যে একখান বিপদে আছি!’
হালকা-পাতলা গড়নের ছেলেটির কালো চাপদাড়ির কালো চেহারা বেদনায় আরও বিবর্ণ হয়। আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব বুঝি না—‘আপনার যে মামা, বিয়ের ঘটকালি করছিল, ওনাকে কিছু বলেন নাই?’
‘মামা বলছে, ও তোমার কাগজপত্র আটকে দেবে। চুপচাপ ওর কথামতো কাজ চালিয়ে যাও না মাতি। আবার কোন ফান্দে ফালায়া দিবে।’
বুঝতে পারি কঠিন পরিস্থিতি। সারা দিন তাপমাত্রা ওপরের দিকে থাকলেও এখন আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। চমৎকার হাওয়া বইছে চারদিকে। বাসায় এতক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করি না। গল্পটা শেষ পর্যন্ত শোনার আগ্রহবোধ করি।
রাজন মিয়া তার ফুড ডেলিভারি শেষে ফিরে আসে। আমি ভেসপার কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখি।
‘এখন কি বাসায় যাবেন স্ত্রীর কাছে?’
‘বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না। এ জন্য রাইতকালে কাজ করি। অনেক লোক ওর কাছে আসে। সবাই এক সাথি বসি ড্রিংক করে। আমার ভালা লাগে না।’
‘আপনাদের কত দিন হলো বিয়ে হয়েছে?’
‘তিন বছর ধরে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরে দুই বছর মেয়াদের গ্রিন কার্ড পেয়েছি। দশ বছরের মেয়াদের পেলে বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে যাব। আমার তো বয়স চলে যাচ্ছে। বিয়ে করা দরকার।’
‘দশ বছরের গ্রিন কার্ড পেলে ভদ্রমহিলা আপনার কিছু করতে পারবে না?’
‘মামায় বলছে, দশ বছরের গ্রিন কার্ড নিয়ে অন্য সিটিতে চলে যেতে। তখন আমি বললাম, ওর সঙ্গে আমার যায় না। আমি ডিভোর্সের আবেদন করব।’
‘চুক্তি অনুযায়ী কি প্রথম গ্রিন কার্ডের পরে আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ছিল?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু সেটা মহিলা দেয় নাই। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার সঙ্গে সে এনজয় করতে চায়। কিছু বললে বড় বড় চোখ করি মাতে। নিজেরে কী বুঝাইতে চায় নিজেই জানে না।’
‘এনজয়’ শব্দটা শোনার পরে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করি। কিন্তু রাজন মিয়া আমার অস্বস্তি ধরতে পারে না। তাকে কথা বলার নেশায় পেয়েছে।
‘মহিলা আমাকে দিয়া পা মালিশ করায়। তেল রেখে দেয়। আমাকে ওইটা লাগাইতে বলে। পায়ে আবার নূপুর পরে।’
‘আপনাদের কি ধর্মীয়ভাবে বিয়ে হয়েছিল?’
‘আমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। লোকজন এসে খাওয়াদাওয়া করছে। তার ভিডিও করেছি। বিয়েটা যে আসল সেটা বোঝানোর জন্য এটা করেছি। কিন্তু আমি কবুল বলিনি।’
‘তাহলে তো ধর্মীয়ভাবে আপনারা স্বামী-স্ত্রী নন!’
‘মহিলা এসব কেয়ার করে না। ওর কাছে ইয়াং ছেলেপিলেও আসে। আমরা সিলোটি। বড় মনের মানুষ। কেউ হেল্প চাইলে আমরা আউগাইয়া যাই। কিন্তু আমার হেল্পে কেউ আসে নাই। এই দেশের আইনেও পুরুষদের কোনো সুবিধা নাই।’
আমি বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়াই। আমেরিকান আইন নারীকে অধিকার দিয়েছে বেশি। কেউ কেউ কি এই অধিকারের সুবিধা নেয় না! রাজন মিয়া অসহায় চেহারা নিয়ে ভেসপায় গিয়ে বসে। ওর কাজ শেষ হবে ভোরে।
‘আপনাকে ভালা মানুষ মনে করিয়া কথাগুলি বললাম। ওর স্বভাব যদি ভালো হইতো, সুন্দর কইরা কথা বলতো, তাহলে হয়তো ও যা বলছে মানতাম। কিন্তু সে তো তা করে না। সে আমাকে টাকার বিনিময়ে আনছে। এখন আর কী চায় সে! তার প্রাণের শখ মিটাইবে আমাকে দিয়া। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার একটা মন আছে না! তারে যদি এক শ জনে এসে হাতায় আমি কেন তার সঙ্গে রোমান্স করব? আমি ইতা লাইক করি না।’
রাজন মিয়ার কথায় নারী-পুরুষের চিরন্তন জৈবিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সুর। কথাবার্তা চালিয়ে নিতে অস্বস্তি হয়। অনেকটা জোর করে বিদায় নিয়ে চলে আসি। চাবি দিয়ে বাসার গেট খোলার আগে পেছনে ফিরে তাকাই। কর্পূরের মতো উবে গেছে রাজন মিয়া। আমি দ্রুত হেঁটে আবার রাস্তার পাশে চলে আসি। ‘না, কোথাও রাজন মিয়ার ছায়া নেই!’ এতটুকু সময়ের মধ্যে এভাবে কেউ অদৃশ্য হতে পারে দেখে বিস্মিত হই।
মড়া গাছটার দিকে তাকাতে চমকে গিয়ে দেখি ওই দাঁড়কাকটা বসে আছে। আমাকে দেখামাত্র ভেংচি কাটে। তারপর সেই পুরোনো গৎবাঁধা, কিন্তু চিরন্তন প্রশ্নটা করে।
‘জীবনের কাছে কী চাও তুমি?’

শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়।
রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ।
সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী চাও?’
‘আমি কী চাই তাতে তোমার কী! তুমি তো অপয়া!’—মেজাজ খারাপ করে কথাটা বলি আমি।
দাঁড়কাক আমাকে দেখে ভেংচি কাটে—‘আমি মরা ডালে বসে সারা দিন তোমাকে দেখি, আর তুমি আমাকে এত পর ভাব!’
‘ভাববই তো! তুমি আমাকে নিয়ে সব সময় রং-তামাশা করো!’
প্রতিদিন আসা-যাওয়ার পথে দাঁড়কাক আমাকে বিভ্রান্ত করে। দাঁড় করিয়ে দেয় এক বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে!
জীবনের কাছে আমি কী চাই আসলে! গল্পের কোনো প্লট খুঁজে ফিরি ইতিউতি। সেই রাতে দাঁড়কাক নিজেই যেন নেমে এল গল্প হয়ে! নয়তো পথেঘাটে এত মানুষ থাকতে গল্প এসে আমার ঘাড়ে পড়বে কেন!
উবার ইটস-এর হয়ে ফুড ডেলিভারি করা ছেলেটার কাজ। ভেসপার মতো একটা বাহনে বসে থাকতে দেখলাম ওকে। একদম সেই মরা গাছটার নিচে। আমাকে নিত্য ভেংচি দেয়া দাঁড়কাকটি নেই কোথাও। যে কারণে আমার মনে হতে লাগল, এই দাঁড়কাকটি আসলে ওই তরুণ নয়তো!
ছেলেটার বয়স হবে পঁচিশ থেকে আটাশের মধ্যে। কালো মুখে কালো চাপদাড়ি। প্রথমে ভেবেছিলাম ভারতের দক্ষিণ দিকের কোনো প্রদেশের মানুষ হবে। সে আমার সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলছিল, তবু সেই বাংলা এত দুর্বোধ্য যে তেলেগু কিংবা তামিলের মতো মনে হচ্ছিল।
ছেলেটা একটা ঠিকানা খুঁজছিল ফুড ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। যে কোম্পানির অধীনে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট, তার বিল্ডিংগুলো সব একই রকম দেখতে। মনে হবে অনেকগুলো যমজ ভাইবোন চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
রাত তখন এগারোটা পার হয়ে গেছে। আমাদের এই নিরিবিলি ঝিঁঝিডাকা জায়গাটির জন্য মধ্যরাত বলা যায়। জ্যাকসন হাইটস থেকে একটা প্রোগাম শেষে রীতিমতো ঝলমলে সাজে ঘরে ফিরছি আমি তখন।
হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ছেলেটা ভেসপা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাইহিল জুতা পরা আমার সামনে ছেলেটাকে বেশ বেঁটে মনে হয়। ও যেন আমার মনের কথা ধরতে পারে।
‘দেখেন আপনার সামনে আমি কত বেঁটে। ওই মহিলা আপনার চেয়েও লম্বা, মোটা আর চওড়া। ওনার সঙ্গে কি আমাকে মানায়!’
আমি যেন সপ্ত আসমান থেকে পড়ি। ছেলেটার কথার আগামাথা কিছুই বুঝি না।
‘কার কথা বলছেন?’ 
 ‘ওই মহিলা হলো কাগজপত্রে আমার স্ত্রী। আমার নাম রাজন মিয়া। বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে বাড়ি। মামায় মিলাইয়া দিছে মহিলার সঙ্গে। মহিলা বলছে, আমাকে হাজব্যান্ড বানায়া নিব।’ 
‘তারপর কি নেয়নি?’
‘তেতাল্লিশ হাজার ডলার দেবার পরে সে আমারে বিয়ে করছে। এখানে আসার পরে পহেলা সে ব্যবহার ভালো করছে। কোনো খারাপ করছে না। কিন্তু এখন তার ছাতালি খাইতে খাইতে আমার জীবন শেষ।’
‘ছাতালি কী জিনিস?’
‘ছাতালি মানে সে আমারে হার্ড টাইম দিছে। আমি যা ইনকাম করি সব সে নিয়া যায়। মহিলা ভালা না। ওর জামাই বাংলাদেশে চইল্যা গেছে। ও সিস্টেম কইরা পাঠাইয়া দিছে। জামাইয়ের বাড়ি-গাড়ি সব নিয়া নিছে। নিজে গাড়ি চালায়ে এদিক-ওদিক আয় যায়। তবে কোনো জব করে না। বাড়িতে সব সময় ড্রিংক করে। আমাকে ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠায় বোতল কিনে আনার জন্য।
তারপর যদি একজনের লগে থাকত তাও কথা ছিল! মহিলা ভালা না।’
‘চুক্তি অনুযায়ী তো মহিলার এখন আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা!’
‘সেইটাই তো দ্যায় না। কী যে একখান বিপদে আছি!’
হালকা-পাতলা গড়নের ছেলেটির কালো চাপদাড়ির কালো চেহারা বেদনায় আরও বিবর্ণ হয়। আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব বুঝি না—‘আপনার যে মামা, বিয়ের ঘটকালি করছিল, ওনাকে কিছু বলেন নাই?’
‘মামা বলছে, ও তোমার কাগজপত্র আটকে দেবে। চুপচাপ ওর কথামতো কাজ চালিয়ে যাও না মাতি। আবার কোন ফান্দে ফালায়া দিবে।’
বুঝতে পারি কঠিন পরিস্থিতি। সারা দিন তাপমাত্রা ওপরের দিকে থাকলেও এখন আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। চমৎকার হাওয়া বইছে চারদিকে। বাসায় এতক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করি না। গল্পটা শেষ পর্যন্ত শোনার আগ্রহবোধ করি।
রাজন মিয়া তার ফুড ডেলিভারি শেষে ফিরে আসে। আমি ভেসপার কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখি।
‘এখন কি বাসায় যাবেন স্ত্রীর কাছে?’
‘বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না। এ জন্য রাইতকালে কাজ করি। অনেক লোক ওর কাছে আসে। সবাই এক সাথি বসি ড্রিংক করে। আমার ভালা লাগে না।’
‘আপনাদের কত দিন হলো বিয়ে হয়েছে?’
‘তিন বছর ধরে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরে দুই বছর মেয়াদের গ্রিন কার্ড পেয়েছি। দশ বছরের মেয়াদের পেলে বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে যাব। আমার তো বয়স চলে যাচ্ছে। বিয়ে করা দরকার।’
‘দশ বছরের গ্রিন কার্ড পেলে ভদ্রমহিলা আপনার কিছু করতে পারবে না?’
‘মামায় বলছে, দশ বছরের গ্রিন কার্ড নিয়ে অন্য সিটিতে চলে যেতে। তখন আমি বললাম, ওর সঙ্গে আমার যায় না। আমি ডিভোর্সের আবেদন করব।’
‘চুক্তি অনুযায়ী কি প্রথম গ্রিন কার্ডের পরে আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ছিল?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু সেটা মহিলা দেয় নাই। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার সঙ্গে সে এনজয় করতে চায়। কিছু বললে বড় বড় চোখ করি মাতে। নিজেরে কী বুঝাইতে চায় নিজেই জানে না।’
‘এনজয়’ শব্দটা শোনার পরে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করি। কিন্তু রাজন মিয়া আমার অস্বস্তি ধরতে পারে না। তাকে কথা বলার নেশায় পেয়েছে।
‘মহিলা আমাকে দিয়া পা মালিশ করায়। তেল রেখে দেয়। আমাকে ওইটা লাগাইতে বলে। পায়ে আবার নূপুর পরে।’
‘আপনাদের কি ধর্মীয়ভাবে বিয়ে হয়েছিল?’
‘আমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। লোকজন এসে খাওয়াদাওয়া করছে। তার ভিডিও করেছি। বিয়েটা যে আসল সেটা বোঝানোর জন্য এটা করেছি। কিন্তু আমি কবুল বলিনি।’
‘তাহলে তো ধর্মীয়ভাবে আপনারা স্বামী-স্ত্রী নন!’
‘মহিলা এসব কেয়ার করে না। ওর কাছে ইয়াং ছেলেপিলেও আসে। আমরা সিলোটি। বড় মনের মানুষ। কেউ হেল্প চাইলে আমরা আউগাইয়া যাই। কিন্তু আমার হেল্পে কেউ আসে নাই। এই দেশের আইনেও পুরুষদের কোনো সুবিধা নাই।’
আমি বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়াই। আমেরিকান আইন নারীকে অধিকার দিয়েছে বেশি। কেউ কেউ কি এই অধিকারের সুবিধা নেয় না! রাজন মিয়া অসহায় চেহারা নিয়ে ভেসপায় গিয়ে বসে। ওর কাজ শেষ হবে ভোরে।
‘আপনাকে ভালা মানুষ মনে করিয়া কথাগুলি বললাম। ওর স্বভাব যদি ভালো হইতো, সুন্দর কইরা কথা বলতো, তাহলে হয়তো ও যা বলছে মানতাম। কিন্তু সে তো তা করে না। সে আমাকে টাকার বিনিময়ে আনছে। এখন আর কী চায় সে! তার প্রাণের শখ মিটাইবে আমাকে দিয়া। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার একটা মন আছে না! তারে যদি এক শ জনে এসে হাতায় আমি কেন তার সঙ্গে রোমান্স করব? আমি ইতা লাইক করি না।’
রাজন মিয়ার কথায় নারী-পুরুষের চিরন্তন জৈবিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সুর। কথাবার্তা চালিয়ে নিতে অস্বস্তি হয়। অনেকটা জোর করে বিদায় নিয়ে চলে আসি। চাবি দিয়ে বাসার গেট খোলার আগে পেছনে ফিরে তাকাই। কর্পূরের মতো উবে গেছে রাজন মিয়া। আমি দ্রুত হেঁটে আবার রাস্তার পাশে চলে আসি। ‘না, কোথাও রাজন মিয়ার ছায়া নেই!’ এতটুকু সময়ের মধ্যে এভাবে কেউ অদৃশ্য হতে পারে দেখে বিস্মিত হই।
মড়া গাছটার দিকে তাকাতে চমকে গিয়ে দেখি ওই দাঁড়কাকটা বসে আছে। আমাকে দেখামাত্র ভেংচি কাটে। তারপর সেই পুরোনো গৎবাঁধা, কিন্তু চিরন্তন প্রশ্নটা করে।
‘জীবনের কাছে কী চাও তুমি?’

মনিজা রহমান

শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়।
রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ।
সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী চাও?’
‘আমি কী চাই তাতে তোমার কী! তুমি তো অপয়া!’—মেজাজ খারাপ করে কথাটা বলি আমি।
দাঁড়কাক আমাকে দেখে ভেংচি কাটে—‘আমি মরা ডালে বসে সারা দিন তোমাকে দেখি, আর তুমি আমাকে এত পর ভাব!’
‘ভাববই তো! তুমি আমাকে নিয়ে সব সময় রং-তামাশা করো!’
প্রতিদিন আসা-যাওয়ার পথে দাঁড়কাক আমাকে বিভ্রান্ত করে। দাঁড় করিয়ে দেয় এক বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে!
জীবনের কাছে আমি কী চাই আসলে! গল্পের কোনো প্লট খুঁজে ফিরি ইতিউতি। সেই রাতে দাঁড়কাক নিজেই যেন নেমে এল গল্প হয়ে! নয়তো পথেঘাটে এত মানুষ থাকতে গল্প এসে আমার ঘাড়ে পড়বে কেন!
উবার ইটস-এর হয়ে ফুড ডেলিভারি করা ছেলেটার কাজ। ভেসপার মতো একটা বাহনে বসে থাকতে দেখলাম ওকে। একদম সেই মরা গাছটার নিচে। আমাকে নিত্য ভেংচি দেয়া দাঁড়কাকটি নেই কোথাও। যে কারণে আমার মনে হতে লাগল, এই দাঁড়কাকটি আসলে ওই তরুণ নয়তো!
ছেলেটার বয়স হবে পঁচিশ থেকে আটাশের মধ্যে। কালো মুখে কালো চাপদাড়ি। প্রথমে ভেবেছিলাম ভারতের দক্ষিণ দিকের কোনো প্রদেশের মানুষ হবে। সে আমার সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলছিল, তবু সেই বাংলা এত দুর্বোধ্য যে তেলেগু কিংবা তামিলের মতো মনে হচ্ছিল।
ছেলেটা একটা ঠিকানা খুঁজছিল ফুড ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। যে কোম্পানির অধীনে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট, তার বিল্ডিংগুলো সব একই রকম দেখতে। মনে হবে অনেকগুলো যমজ ভাইবোন চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
রাত তখন এগারোটা পার হয়ে গেছে। আমাদের এই নিরিবিলি ঝিঁঝিডাকা জায়গাটির জন্য মধ্যরাত বলা যায়। জ্যাকসন হাইটস থেকে একটা প্রোগাম শেষে রীতিমতো ঝলমলে সাজে ঘরে ফিরছি আমি তখন।
হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ছেলেটা ভেসপা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাইহিল জুতা পরা আমার সামনে ছেলেটাকে বেশ বেঁটে মনে হয়। ও যেন আমার মনের কথা ধরতে পারে।
‘দেখেন আপনার সামনে আমি কত বেঁটে। ওই মহিলা আপনার চেয়েও লম্বা, মোটা আর চওড়া। ওনার সঙ্গে কি আমাকে মানায়!’
আমি যেন সপ্ত আসমান থেকে পড়ি। ছেলেটার কথার আগামাথা কিছুই বুঝি না।
‘কার কথা বলছেন?’ 
 ‘ওই মহিলা হলো কাগজপত্রে আমার স্ত্রী। আমার নাম রাজন মিয়া। বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে বাড়ি। মামায় মিলাইয়া দিছে মহিলার সঙ্গে। মহিলা বলছে, আমাকে হাজব্যান্ড বানায়া নিব।’ 
‘তারপর কি নেয়নি?’
‘তেতাল্লিশ হাজার ডলার দেবার পরে সে আমারে বিয়ে করছে। এখানে আসার পরে পহেলা সে ব্যবহার ভালো করছে। কোনো খারাপ করছে না। কিন্তু এখন তার ছাতালি খাইতে খাইতে আমার জীবন শেষ।’
‘ছাতালি কী জিনিস?’
‘ছাতালি মানে সে আমারে হার্ড টাইম দিছে। আমি যা ইনকাম করি সব সে নিয়া যায়। মহিলা ভালা না। ওর জামাই বাংলাদেশে চইল্যা গেছে। ও সিস্টেম কইরা পাঠাইয়া দিছে। জামাইয়ের বাড়ি-গাড়ি সব নিয়া নিছে। নিজে গাড়ি চালায়ে এদিক-ওদিক আয় যায়। তবে কোনো জব করে না। বাড়িতে সব সময় ড্রিংক করে। আমাকে ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠায় বোতল কিনে আনার জন্য।
তারপর যদি একজনের লগে থাকত তাও কথা ছিল! মহিলা ভালা না।’
‘চুক্তি অনুযায়ী তো মহিলার এখন আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা!’
‘সেইটাই তো দ্যায় না। কী যে একখান বিপদে আছি!’
হালকা-পাতলা গড়নের ছেলেটির কালো চাপদাড়ির কালো চেহারা বেদনায় আরও বিবর্ণ হয়। আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব বুঝি না—‘আপনার যে মামা, বিয়ের ঘটকালি করছিল, ওনাকে কিছু বলেন নাই?’
‘মামা বলছে, ও তোমার কাগজপত্র আটকে দেবে। চুপচাপ ওর কথামতো কাজ চালিয়ে যাও না মাতি। আবার কোন ফান্দে ফালায়া দিবে।’
বুঝতে পারি কঠিন পরিস্থিতি। সারা দিন তাপমাত্রা ওপরের দিকে থাকলেও এখন আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। চমৎকার হাওয়া বইছে চারদিকে। বাসায় এতক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করি না। গল্পটা শেষ পর্যন্ত শোনার আগ্রহবোধ করি।
রাজন মিয়া তার ফুড ডেলিভারি শেষে ফিরে আসে। আমি ভেসপার কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখি।
‘এখন কি বাসায় যাবেন স্ত্রীর কাছে?’
‘বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না। এ জন্য রাইতকালে কাজ করি। অনেক লোক ওর কাছে আসে। সবাই এক সাথি বসি ড্রিংক করে। আমার ভালা লাগে না।’
‘আপনাদের কত দিন হলো বিয়ে হয়েছে?’
‘তিন বছর ধরে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরে দুই বছর মেয়াদের গ্রিন কার্ড পেয়েছি। দশ বছরের মেয়াদের পেলে বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে যাব। আমার তো বয়স চলে যাচ্ছে। বিয়ে করা দরকার।’
‘দশ বছরের গ্রিন কার্ড পেলে ভদ্রমহিলা আপনার কিছু করতে পারবে না?’
‘মামায় বলছে, দশ বছরের গ্রিন কার্ড নিয়ে অন্য সিটিতে চলে যেতে। তখন আমি বললাম, ওর সঙ্গে আমার যায় না। আমি ডিভোর্সের আবেদন করব।’
‘চুক্তি অনুযায়ী কি প্রথম গ্রিন কার্ডের পরে আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ছিল?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু সেটা মহিলা দেয় নাই। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার সঙ্গে সে এনজয় করতে চায়। কিছু বললে বড় বড় চোখ করি মাতে। নিজেরে কী বুঝাইতে চায় নিজেই জানে না।’
‘এনজয়’ শব্দটা শোনার পরে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করি। কিন্তু রাজন মিয়া আমার অস্বস্তি ধরতে পারে না। তাকে কথা বলার নেশায় পেয়েছে।
‘মহিলা আমাকে দিয়া পা মালিশ করায়। তেল রেখে দেয়। আমাকে ওইটা লাগাইতে বলে। পায়ে আবার নূপুর পরে।’
‘আপনাদের কি ধর্মীয়ভাবে বিয়ে হয়েছিল?’
‘আমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। লোকজন এসে খাওয়াদাওয়া করছে। তার ভিডিও করেছি। বিয়েটা যে আসল সেটা বোঝানোর জন্য এটা করেছি। কিন্তু আমি কবুল বলিনি।’
‘তাহলে তো ধর্মীয়ভাবে আপনারা স্বামী-স্ত্রী নন!’
‘মহিলা এসব কেয়ার করে না। ওর কাছে ইয়াং ছেলেপিলেও আসে। আমরা সিলোটি। বড় মনের মানুষ। কেউ হেল্প চাইলে আমরা আউগাইয়া যাই। কিন্তু আমার হেল্পে কেউ আসে নাই। এই দেশের আইনেও পুরুষদের কোনো সুবিধা নাই।’
আমি বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়াই। আমেরিকান আইন নারীকে অধিকার দিয়েছে বেশি। কেউ কেউ কি এই অধিকারের সুবিধা নেয় না! রাজন মিয়া অসহায় চেহারা নিয়ে ভেসপায় গিয়ে বসে। ওর কাজ শেষ হবে ভোরে।
‘আপনাকে ভালা মানুষ মনে করিয়া কথাগুলি বললাম। ওর স্বভাব যদি ভালো হইতো, সুন্দর কইরা কথা বলতো, তাহলে হয়তো ও যা বলছে মানতাম। কিন্তু সে তো তা করে না। সে আমাকে টাকার বিনিময়ে আনছে। এখন আর কী চায় সে! তার প্রাণের শখ মিটাইবে আমাকে দিয়া। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার একটা মন আছে না! তারে যদি এক শ জনে এসে হাতায় আমি কেন তার সঙ্গে রোমান্স করব? আমি ইতা লাইক করি না।’
রাজন মিয়ার কথায় নারী-পুরুষের চিরন্তন জৈবিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সুর। কথাবার্তা চালিয়ে নিতে অস্বস্তি হয়। অনেকটা জোর করে বিদায় নিয়ে চলে আসি। চাবি দিয়ে বাসার গেট খোলার আগে পেছনে ফিরে তাকাই। কর্পূরের মতো উবে গেছে রাজন মিয়া। আমি দ্রুত হেঁটে আবার রাস্তার পাশে চলে আসি। ‘না, কোথাও রাজন মিয়ার ছায়া নেই!’ এতটুকু সময়ের মধ্যে এভাবে কেউ অদৃশ্য হতে পারে দেখে বিস্মিত হই।
মড়া গাছটার দিকে তাকাতে চমকে গিয়ে দেখি ওই দাঁড়কাকটা বসে আছে। আমাকে দেখামাত্র ভেংচি কাটে। তারপর সেই পুরোনো গৎবাঁধা, কিন্তু চিরন্তন প্রশ্নটা করে।
‘জীবনের কাছে কী চাও তুমি?’

শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়।
রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ।
সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী চাও?’
‘আমি কী চাই তাতে তোমার কী! তুমি তো অপয়া!’—মেজাজ খারাপ করে কথাটা বলি আমি।
দাঁড়কাক আমাকে দেখে ভেংচি কাটে—‘আমি মরা ডালে বসে সারা দিন তোমাকে দেখি, আর তুমি আমাকে এত পর ভাব!’
‘ভাববই তো! তুমি আমাকে নিয়ে সব সময় রং-তামাশা করো!’
প্রতিদিন আসা-যাওয়ার পথে দাঁড়কাক আমাকে বিভ্রান্ত করে। দাঁড় করিয়ে দেয় এক বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে!
জীবনের কাছে আমি কী চাই আসলে! গল্পের কোনো প্লট খুঁজে ফিরি ইতিউতি। সেই রাতে দাঁড়কাক নিজেই যেন নেমে এল গল্প হয়ে! নয়তো পথেঘাটে এত মানুষ থাকতে গল্প এসে আমার ঘাড়ে পড়বে কেন!
উবার ইটস-এর হয়ে ফুড ডেলিভারি করা ছেলেটার কাজ। ভেসপার মতো একটা বাহনে বসে থাকতে দেখলাম ওকে। একদম সেই মরা গাছটার নিচে। আমাকে নিত্য ভেংচি দেয়া দাঁড়কাকটি নেই কোথাও। যে কারণে আমার মনে হতে লাগল, এই দাঁড়কাকটি আসলে ওই তরুণ নয়তো!
ছেলেটার বয়স হবে পঁচিশ থেকে আটাশের মধ্যে। কালো মুখে কালো চাপদাড়ি। প্রথমে ভেবেছিলাম ভারতের দক্ষিণ দিকের কোনো প্রদেশের মানুষ হবে। সে আমার সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলছিল, তবু সেই বাংলা এত দুর্বোধ্য যে তেলেগু কিংবা তামিলের মতো মনে হচ্ছিল।
ছেলেটা একটা ঠিকানা খুঁজছিল ফুড ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। যে কোম্পানির অধীনে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট, তার বিল্ডিংগুলো সব একই রকম দেখতে। মনে হবে অনেকগুলো যমজ ভাইবোন চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
রাত তখন এগারোটা পার হয়ে গেছে। আমাদের এই নিরিবিলি ঝিঁঝিডাকা জায়গাটির জন্য মধ্যরাত বলা যায়। জ্যাকসন হাইটস থেকে একটা প্রোগাম শেষে রীতিমতো ঝলমলে সাজে ঘরে ফিরছি আমি তখন।
হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ছেলেটা ভেসপা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাইহিল জুতা পরা আমার সামনে ছেলেটাকে বেশ বেঁটে মনে হয়। ও যেন আমার মনের কথা ধরতে পারে।
‘দেখেন আপনার সামনে আমি কত বেঁটে। ওই মহিলা আপনার চেয়েও লম্বা, মোটা আর চওড়া। ওনার সঙ্গে কি আমাকে মানায়!’
আমি যেন সপ্ত আসমান থেকে পড়ি। ছেলেটার কথার আগামাথা কিছুই বুঝি না।
‘কার কথা বলছেন?’ 
 ‘ওই মহিলা হলো কাগজপত্রে আমার স্ত্রী। আমার নাম রাজন মিয়া। বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে বাড়ি। মামায় মিলাইয়া দিছে মহিলার সঙ্গে। মহিলা বলছে, আমাকে হাজব্যান্ড বানায়া নিব।’ 
‘তারপর কি নেয়নি?’
‘তেতাল্লিশ হাজার ডলার দেবার পরে সে আমারে বিয়ে করছে। এখানে আসার পরে পহেলা সে ব্যবহার ভালো করছে। কোনো খারাপ করছে না। কিন্তু এখন তার ছাতালি খাইতে খাইতে আমার জীবন শেষ।’
‘ছাতালি কী জিনিস?’
‘ছাতালি মানে সে আমারে হার্ড টাইম দিছে। আমি যা ইনকাম করি সব সে নিয়া যায়। মহিলা ভালা না। ওর জামাই বাংলাদেশে চইল্যা গেছে। ও সিস্টেম কইরা পাঠাইয়া দিছে। জামাইয়ের বাড়ি-গাড়ি সব নিয়া নিছে। নিজে গাড়ি চালায়ে এদিক-ওদিক আয় যায়। তবে কোনো জব করে না। বাড়িতে সব সময় ড্রিংক করে। আমাকে ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠায় বোতল কিনে আনার জন্য।
তারপর যদি একজনের লগে থাকত তাও কথা ছিল! মহিলা ভালা না।’
‘চুক্তি অনুযায়ী তো মহিলার এখন আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা!’
‘সেইটাই তো দ্যায় না। কী যে একখান বিপদে আছি!’
হালকা-পাতলা গড়নের ছেলেটির কালো চাপদাড়ির কালো চেহারা বেদনায় আরও বিবর্ণ হয়। আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব বুঝি না—‘আপনার যে মামা, বিয়ের ঘটকালি করছিল, ওনাকে কিছু বলেন নাই?’
‘মামা বলছে, ও তোমার কাগজপত্র আটকে দেবে। চুপচাপ ওর কথামতো কাজ চালিয়ে যাও না মাতি। আবার কোন ফান্দে ফালায়া দিবে।’
বুঝতে পারি কঠিন পরিস্থিতি। সারা দিন তাপমাত্রা ওপরের দিকে থাকলেও এখন আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। চমৎকার হাওয়া বইছে চারদিকে। বাসায় এতক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ঘরে ফেরার তাড়া অনুভব করি না। গল্পটা শেষ পর্যন্ত শোনার আগ্রহবোধ করি।
রাজন মিয়া তার ফুড ডেলিভারি শেষে ফিরে আসে। আমি ভেসপার কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখি।
‘এখন কি বাসায় যাবেন স্ত্রীর কাছে?’
‘বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না। এ জন্য রাইতকালে কাজ করি। অনেক লোক ওর কাছে আসে। সবাই এক সাথি বসি ড্রিংক করে। আমার ভালা লাগে না।’
‘আপনাদের কত দিন হলো বিয়ে হয়েছে?’
‘তিন বছর ধরে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরে দুই বছর মেয়াদের গ্রিন কার্ড পেয়েছি। দশ বছরের মেয়াদের পেলে বাংলাদেশে বিয়ানিবাজারে যাব। আমার তো বয়স চলে যাচ্ছে। বিয়ে করা দরকার।’
‘দশ বছরের গ্রিন কার্ড পেলে ভদ্রমহিলা আপনার কিছু করতে পারবে না?’
‘মামায় বলছে, দশ বছরের গ্রিন কার্ড নিয়ে অন্য সিটিতে চলে যেতে। তখন আমি বললাম, ওর সঙ্গে আমার যায় না। আমি ডিভোর্সের আবেদন করব।’
‘চুক্তি অনুযায়ী কি প্রথম গ্রিন কার্ডের পরে আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ছিল?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু সেটা মহিলা দেয় নাই। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার সঙ্গে সে এনজয় করতে চায়। কিছু বললে বড় বড় চোখ করি মাতে। নিজেরে কী বুঝাইতে চায় নিজেই জানে না।’
‘এনজয়’ শব্দটা শোনার পরে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করি। কিন্তু রাজন মিয়া আমার অস্বস্তি ধরতে পারে না। তাকে কথা বলার নেশায় পেয়েছে।
‘মহিলা আমাকে দিয়া পা মালিশ করায়। তেল রেখে দেয়। আমাকে ওইটা লাগাইতে বলে। পায়ে আবার নূপুর পরে।’
‘আপনাদের কি ধর্মীয়ভাবে বিয়ে হয়েছিল?’
‘আমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। লোকজন এসে খাওয়াদাওয়া করছে। তার ভিডিও করেছি। বিয়েটা যে আসল সেটা বোঝানোর জন্য এটা করেছি। কিন্তু আমি কবুল বলিনি।’
‘তাহলে তো ধর্মীয়ভাবে আপনারা স্বামী-স্ত্রী নন!’
‘মহিলা এসব কেয়ার করে না। ওর কাছে ইয়াং ছেলেপিলেও আসে। আমরা সিলোটি। বড় মনের মানুষ। কেউ হেল্প চাইলে আমরা আউগাইয়া যাই। কিন্তু আমার হেল্পে কেউ আসে নাই। এই দেশের আইনেও পুরুষদের কোনো সুবিধা নাই।’
আমি বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়াই। আমেরিকান আইন নারীকে অধিকার দিয়েছে বেশি। কেউ কেউ কি এই অধিকারের সুবিধা নেয় না! রাজন মিয়া অসহায় চেহারা নিয়ে ভেসপায় গিয়ে বসে। ওর কাজ শেষ হবে ভোরে।
‘আপনাকে ভালা মানুষ মনে করিয়া কথাগুলি বললাম। ওর স্বভাব যদি ভালো হইতো, সুন্দর কইরা কথা বলতো, তাহলে হয়তো ও যা বলছে মানতাম। কিন্তু সে তো তা করে না। সে আমাকে টাকার বিনিময়ে আনছে। এখন আর কী চায় সে! তার প্রাণের শখ মিটাইবে আমাকে দিয়া। আমি একটা ইয়াং ছেলে। আমার একটা মন আছে না! তারে যদি এক শ জনে এসে হাতায় আমি কেন তার সঙ্গে রোমান্স করব? আমি ইতা লাইক করি না।’
রাজন মিয়ার কথায় নারী-পুরুষের চিরন্তন জৈবিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সুর। কথাবার্তা চালিয়ে নিতে অস্বস্তি হয়। অনেকটা জোর করে বিদায় নিয়ে চলে আসি। চাবি দিয়ে বাসার গেট খোলার আগে পেছনে ফিরে তাকাই। কর্পূরের মতো উবে গেছে রাজন মিয়া। আমি দ্রুত হেঁটে আবার রাস্তার পাশে চলে আসি। ‘না, কোথাও রাজন মিয়ার ছায়া নেই!’ এতটুকু সময়ের মধ্যে এভাবে কেউ অদৃশ্য হতে পারে দেখে বিস্মিত হই।
মড়া গাছটার দিকে তাকাতে চমকে গিয়ে দেখি ওই দাঁড়কাকটা বসে আছে। আমাকে দেখামাত্র ভেংচি কাটে। তারপর সেই পুরোনো গৎবাঁধা, কিন্তু চিরন্তন প্রশ্নটা করে।
‘জীবনের কাছে কী চাও তুমি?’


জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।


শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়। রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ। সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী
১৯ নভেম্বর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।


শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়। রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ। সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী
১৯ নভেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।


শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়। রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ। সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী
১৯ নভেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।


শুরুতে বলে রাখি আমেরিকানরা ফ্ল্যাটকে বলে অ্যাপার্টমেন্ট। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ঘাসের লন পার হলে রাস্তা! মানে আমাদের বিল্ডিংটা একদম রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া নয়। রাস্তার ধারে নানাবিধ গাছের মধ্যে আছে একটা মরা গাছ। সেই গাছে সারা দিন বসে থাকা এক দাঁড়কাক আমাকে দেখতে পেলেই জানতে চায়, ‘জীবনের কাছে কী
১৯ নভেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে