Ajker Patrika

তবে কি জেলেই যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ২২: ০২
Thumbnail image

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সর্বশেষ অভিযোগটি হলো ২০২০ সালের নির্বাচনে কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনি জর্জিয়ার ফল পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন। এই মামলায় ১৪ আগস্ট ফুলটন কাউন্টির একটি গ্র্যান্ড জুরি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ আনেন। 

মামলাটির প্রধান সরকারি কৌঁসুলি জর্জিয়ার ফুলটন কাউন্টির অ্যাটর্নি জেনারেল ফ্যানি উইলিস জানিয়েছেন, ট্রাম্পসহ ১৯ আসামিকে একসঙ্গে অভিযুক্ত করা হচ্ছে এবং তাঁদের আত্মসমর্পণের জন্য ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাম্পের শিবির এক বিবৃতিতে ওই অভিযোগগুলো ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছে। শুধু তা-ই নয়, ফ্যানি উইলিস রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে ট্রাম্পকে টার্গেট করেছেন বলেও তাদের অভিযোগ। 

জর্জিয়ার মামলাটিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধ যে ১৩টি অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তাকে তাঁর শপথ লঙ্ঘনের জন্য অনুরোধ করেছিলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার ছদ্ম-পরিচয় ব্যবহারের ষড়যন্ত্র করেছিলেন, জালিয়াতির ষড়যন্ত্র করেছিলেন, মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিলেন এবং মিথ্যা দলিল তৈরি ও জমা দেওয়ারও ষড়যন্ত্র করেছিলেন। মূলত একটি ফোন কলের রেকর্ডিং ফাঁস হওয়ার পর ট্রাম্পসহ অন্যান্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রাজ্য পর্যায়ে তদন্ত শুরু হয়। ওই ফোন কলে ট্রাম্প জর্জিয়ার শীর্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তাকে ১১ হাজার ৭৮০টি ভোট খুঁজে বের করতে বলেছিলেন। 

জর্জিয়ার মামলাটি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ফৌজদারি মামলা। এর আগে গত ৮ জুন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো ফেডারেল অভিযোগ আনা হয়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বহু গোপন নথি ব্যক্তিগত জিম্মায় রাখার ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের ৩৭টি অভিযোগ আনে বিচার বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক কর্মসূচির গোপন নথি নিজের ব্যক্তিগত বাসভবনের বাথরুমে রাখা ছাড়াও অভিযোগ ওঠে—২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুই দফায় পারমাণবিক অস্ত্র-সম্পর্কিত গোপন নথি অননুমোদিত ব্যক্তিদের দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর মধ্যে প্রথম ঘটনাটি ছিল বেডমিনস্টারে ট্রাম্প ন্যাশনাল গলফ ক্লাবে। সেবার একজন লেখক, একজন প্রকাশক ও নিজের দুই কর্মীকে নিয়ে বৈঠকের সময় গোপন নথি প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। ওই ব্যক্তিদের কেউই নথিগুলো দেখার জন্য অনুমোদিত ছিলেন না। 

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আর্কাইভস অ্যান্ড রেকর্ডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্মকর্তারা ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসভবন থেকে বাক্সবন্দী অবস্থায় শতাধিক শ্রেণিবদ্ধ নথি আবিষ্কারের পর অভিযোগগুলো আনা হয়। 

তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম ফৌজদারি অভিযোগটি আনা হয়েছিল গত মার্চে নিউইয়র্কের একটি আদালতে। এ ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট আদালতে হাজিরা দেন তিনি। 

উল্লিখিত তিনটি মামলায়ই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন ট্রাম্প। অভিযোগ করেছেন ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর বিজয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এ ধরনের অভিযোগ আনা হচ্ছে। 

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় অভিযোগ যত বাড়ছে, এসব মামলায় তাঁর জেল হবে কি না তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা বাড়ছে। 

এ বিষয়ে দ্য ইনডিপেনডেন্টের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্প যদি দোষী সাব্যস্ত হন ফেডারেল ও রাজ্য বিচারকেরা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে জেলে পাঠানো হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

প্রথম ফেডারেল অভিযোগের পর বিশেষজ্ঞেরা বলেছিলেন, বিচার বিভাগ ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করলে তাঁকে কারাগারে রাখার চেষ্টা করবে। শ্রেণিবদ্ধ নথির মামলাটিতে প্রতিটি অভিযোগের জন্য ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছর সাজার বিধান রয়েছে। তাই অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে কয়েক দশকের জেল হতে পারে ট্রাম্পের। 

জাতীয় নিরাপত্তা আইনজীবী এবং জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক কেল ম্যাকক্লানহান ট্রাম্পের সম্ভাব্য কারাবাসের পক্ষেই নিজের মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প এমন একজন রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি জেনেশুনে আইন ভঙ্গ করেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করেছেন, পরমাণু অস্ত্রের নিরাপত্তা বিপন্ন করেছেন এবং অন্যান্য দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করেছেন।’ 

মামলাটির বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বেশির ভাগ আইন বিশেষজ্ঞই একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তাই মনে হচ্ছে, ট্রাম্প গুরুতর আইনি ঝুঁকিতে রয়েছেন। 

জর্জিয়ার মামলাটিতেও ষড়যন্ত্রের জন্য বাধ্যতামূলক ন্যূনতম সাজার বিধান রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে এই মামলায়ও সাবেক প্রেসিডেন্টের ৫ থেকে ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। 

এ ক্ষেত্রে নিউইয়র্ক দক্ষিণ জেলার সাবেক সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি সারাহ ক্রিসফ বলেন, ‘ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে, তাঁর সাজার বিষয়টি বিচারকের ওপর নির্ভর করবে। তবে আইলিন ক্যানন নামে ওই বিচারককে সম্ভবত ট্রাম্পই নিযুক্ত করেছিলেন।’ 

এদিকে, ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজয় না মেনে ক্যাপিটাল হিলে হাঙ্গামা সৃষ্টির অভিযোগটিরও তদন্ত চলছে। প্রমাণিত হলে এই মামলায়ও ট্রাম্পের ৫ থেকে ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত