অনলাইন ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একসময় অনেকগুলো দেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করতে চেয়েছিলেন। তবে এই যুদ্ধে এখন যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রতিপক্ষ বলা যায় চীনকেই। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। গতকাল বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশের পণ্যের ওপর তিনি আগামী তিন মাস শুল্ক বসাবেন না। এতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রর মধ্যকার অর্থনৈতিক লড়াই আরও বেড়ে গেল। এর ঠিক পরেই চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক বসায়।
ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে চলেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ৫৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে। এর আগেও কিছু শুল্ক ছিল। প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সব জিনিসের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশে নিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের ফলে দুই দেশের অর্থনীতি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের অর্থনীতিবিদ নিক মারো বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে, দুটি দেশ যেন একে অপরের থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যেতে চাইছে।’ তিনি মনে করেন, এর খারাপ প্রভাব শুধু চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই পড়বে না, সারা বিশ্বের বাণিজ্যের ওপরও পড়বে। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার ফলে চীনের অর্থনীতি এবং সারা বিশ্বের বাণিজ্যব্যবস্থায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে।’
ট্রাম্প বলেছেন, চীন খুব তাড়াতাড়ি তাদের পণ্যের ওপর শুল্কারোপের জবাব দিয়েছে। তাই তিনি চীনকে ছাড় দেননি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীন হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়, কিন্তু তারা ঠিক জানে না কীভাবে তা করতে হয়। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের কাছে বিষয়টি অন্য রকম মনে হচ্ছে।’
সি চিন পিং চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা। তিনি এই বাণিজ্যযুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে একতরফা চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। চীন এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা দেশের মানুষকে বুঝিয়ে তাদের সরকারের পদক্ষেপের পক্ষে সমর্থন তৈরি করছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীন অনেক বছর ধরেই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
বার্লিনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মেরিকসের অর্থনীতি বিশ্লেষক জ্যাকব গুন্টার বলেন, ‘সি চিন পিং অনেক আগে থেকেই জানতেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর দীর্ঘদিনের লড়াই হতে পারে। তাই চীন সেই মতো প্রস্তুতি নিয়েছে।’ তিনি মনে করেন, সি চিন পিং এই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।
কানাডার মতো দেশও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের ছাড় দিয়েছে, চীনকে দেয়নি। এতে প্রশ্ন উঠেছে, চীন যদি এত তাড়াতাড়ি জবাব না দিত, তাহলে কি তাদেরও ছাড় দেওয়া হতো? যাই হোক, ট্রাম্প ও সি চিন পিং এখন এক কঠিন অর্থনৈতিক লড়াইয়ে নেমেছেন। এর ফলে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বহু বছর ধরে চীন বিশ্বের প্রধান উৎপাদন হাব হিসেবে কাজ করেছে। সেখানে ইলেকট্রনিকস, সৌর প্যানেল এবং নির্মাণসামগ্রী তৈরি হয়। এই জিনিসগুলো কম দামে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হতো। কিন্তু এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ট্রাম্প এই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সমর্থন পেয়েছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্কের কারণে আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের জিনিসপত্র বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমে যেতে পারে। এই জিনিসগুলোর সহজ বিকল্প পাওয়া যাবে না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষকে অনেক বছর ধরে বেশি দামে জিনিস কিনতে হতে পারে। বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগানের ধারণা, অন্য কোনো উপায় না পাওয়া গেলে মার্কিনদের অতিরিক্ত ৮৬০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হতে পারে।
চীনের অবস্থাও খারাপ। অনেক ছোটখাটো কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে অনেক কারখানা বিদেশে চলে যেতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভিক্টর শি সতর্ক করে বলেছেন, এর ফলে ‘লাখ লাখ’ লোক বেকার হতে পারে এবং সারা দেশে ‘অনেক কারখানা দেউলিয়া’ হয়ে যেতে পারে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে জিনিস রপ্তানি ‘প্রায় বন্ধ’ হয়ে যেতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
তবে ভিক্টর শি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের চেয়ে চীন এই পরিস্থিতি অনেক বেশি সহ্য করতে পারবে।’ তিনি চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার কথা বলেন, যেখানে কমিউনিস্ট পার্টিকে সাধারণ মানুষের ভোটের জন্য চিন্তা করতে হয় না। তিনি আরও বলেন, ‘কোভিডের সময় তারা পুরো অর্থনীতি বন্ধ করে দিয়েছিল, বহু মানুষ কাজ হারিয়েছিল, অনেক কষ্ট পেয়েছিল—কিন্তু তাতে কিছু হয়নি।’
চীনকে দেখে মনে হচ্ছে তারা এই পরিস্থিতিতে দৃঢ়ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র পিপলস ডেইলির প্রথম পাতায় লেখা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রর শুল্কের জবাবে আমরা তৈরি এবং আমাদের পরিকল্পনা আছে। আমরা আট বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ করেছি এবং আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।’ পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, ‘দেশের ভেতরে জিনিসের চাহিদা বাড়ানোর এবং অর্থনীতিকে সাহায্য করার জন্য তাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। আমাদের সব পরিকল্পনা ভালোভাবে তৈরি করা আছে।’
চীনের এখন একটাই লক্ষ্য, এই অর্থনৈতিক যুদ্ধে যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি দিন ধরে লড়তে পারে। রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ কাই টংজুয়ান বলেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত কে এই বাণিজ্যযুদ্ধে বেশি দিন টিকবে, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’ তিনি মনে করেন, ‘এ ক্ষেত্রে চীনের সুবিধাই বেশি।’
একই সময়ে চীন ইউরোপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। কারণ অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রর বাণিজ্যনীতির ওপর খুশি নয়। এই পদক্ষেপগুলো অনেক দিন ধরেই নেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের প্রথম আমলের বাণিজ্যযুদ্ধের সময় এবং চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরেই চীন বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের অর্থনীতির কিছু দুর্বল দিক আছে।
ভিক্টর শি বলেছেন, ‘চীনা সরকার ছয় বছর ধরে এই দিনের জন্য অপেক্ষা করছিল—তারা জানত এমন কিছু হতে পারে।’ তাঁর মতে, তারা তাদের জিনিসপত্র তৈরির পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে, বিদেশি কারখানাগুলোকে বেশি সাহায্য করছে এবং দেশের অর্থনীতির দুর্বল দিকগুলো যেমন মানুষের চাহিদা ও সরকারের ঋণ কমানোর চেষ্টা করছে।
আজকের চীন ২০১৮ সালের চেয়ে অনেক আলাদা। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আগের মতো নির্ভরশীল নয়। তাদের মোট ব্যবসার ২০ শতাংশের কম এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হয়, আগে যা ২০ শতাংশের বেশি ছিল। তারা ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো দেশেও কারখানা তৈরি করেছে। চীন তাদের প্রয়োজনীয় কিছু বিশেষ খনিজ পদার্থের সরবরাহ বাড়িয়েছে, কারখানায় রোবট ব্যবহার করছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নতি করছে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের স্কট কেনেডি বলেছেন, ‘ (চীনের) কিছু দুর্বলতা আছে, তবে এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে সেগুলো সামলানো সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র একা চীনের অর্থনীতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওয়াশিংটন এটা মানতে না চাইলেও, চীন যখন বলে যে তাদের অর্থনীতিকে আটকানো যাবে না, তখন তাদের কথায় যুক্তি আছে।’
সিএনএন থেকে সংক্ষেপে অনূদিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একসময় অনেকগুলো দেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করতে চেয়েছিলেন। তবে এই যুদ্ধে এখন যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রতিপক্ষ বলা যায় চীনকেই। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। গতকাল বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশের পণ্যের ওপর তিনি আগামী তিন মাস শুল্ক বসাবেন না। এতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রর মধ্যকার অর্থনৈতিক লড়াই আরও বেড়ে গেল। এর ঠিক পরেই চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক বসায়।
ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে চলেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ৫৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে। এর আগেও কিছু শুল্ক ছিল। প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সব জিনিসের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশে নিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের ফলে দুই দেশের অর্থনীতি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের অর্থনীতিবিদ নিক মারো বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে, দুটি দেশ যেন একে অপরের থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যেতে চাইছে।’ তিনি মনে করেন, এর খারাপ প্রভাব শুধু চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই পড়বে না, সারা বিশ্বের বাণিজ্যের ওপরও পড়বে। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার ফলে চীনের অর্থনীতি এবং সারা বিশ্বের বাণিজ্যব্যবস্থায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে।’
ট্রাম্প বলেছেন, চীন খুব তাড়াতাড়ি তাদের পণ্যের ওপর শুল্কারোপের জবাব দিয়েছে। তাই তিনি চীনকে ছাড় দেননি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীন হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়, কিন্তু তারা ঠিক জানে না কীভাবে তা করতে হয়। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের কাছে বিষয়টি অন্য রকম মনে হচ্ছে।’
সি চিন পিং চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা। তিনি এই বাণিজ্যযুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে একতরফা চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। চীন এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা দেশের মানুষকে বুঝিয়ে তাদের সরকারের পদক্ষেপের পক্ষে সমর্থন তৈরি করছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীন অনেক বছর ধরেই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
বার্লিনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মেরিকসের অর্থনীতি বিশ্লেষক জ্যাকব গুন্টার বলেন, ‘সি চিন পিং অনেক আগে থেকেই জানতেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর দীর্ঘদিনের লড়াই হতে পারে। তাই চীন সেই মতো প্রস্তুতি নিয়েছে।’ তিনি মনে করেন, সি চিন পিং এই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।
কানাডার মতো দেশও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের ছাড় দিয়েছে, চীনকে দেয়নি। এতে প্রশ্ন উঠেছে, চীন যদি এত তাড়াতাড়ি জবাব না দিত, তাহলে কি তাদেরও ছাড় দেওয়া হতো? যাই হোক, ট্রাম্প ও সি চিন পিং এখন এক কঠিন অর্থনৈতিক লড়াইয়ে নেমেছেন। এর ফলে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বহু বছর ধরে চীন বিশ্বের প্রধান উৎপাদন হাব হিসেবে কাজ করেছে। সেখানে ইলেকট্রনিকস, সৌর প্যানেল এবং নির্মাণসামগ্রী তৈরি হয়। এই জিনিসগুলো কম দামে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হতো। কিন্তু এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ট্রাম্প এই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সমর্থন পেয়েছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্কের কারণে আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের জিনিসপত্র বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমে যেতে পারে। এই জিনিসগুলোর সহজ বিকল্প পাওয়া যাবে না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষকে অনেক বছর ধরে বেশি দামে জিনিস কিনতে হতে পারে। বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগানের ধারণা, অন্য কোনো উপায় না পাওয়া গেলে মার্কিনদের অতিরিক্ত ৮৬০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হতে পারে।
চীনের অবস্থাও খারাপ। অনেক ছোটখাটো কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে অনেক কারখানা বিদেশে চলে যেতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভিক্টর শি সতর্ক করে বলেছেন, এর ফলে ‘লাখ লাখ’ লোক বেকার হতে পারে এবং সারা দেশে ‘অনেক কারখানা দেউলিয়া’ হয়ে যেতে পারে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে জিনিস রপ্তানি ‘প্রায় বন্ধ’ হয়ে যেতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
তবে ভিক্টর শি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের চেয়ে চীন এই পরিস্থিতি অনেক বেশি সহ্য করতে পারবে।’ তিনি চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার কথা বলেন, যেখানে কমিউনিস্ট পার্টিকে সাধারণ মানুষের ভোটের জন্য চিন্তা করতে হয় না। তিনি আরও বলেন, ‘কোভিডের সময় তারা পুরো অর্থনীতি বন্ধ করে দিয়েছিল, বহু মানুষ কাজ হারিয়েছিল, অনেক কষ্ট পেয়েছিল—কিন্তু তাতে কিছু হয়নি।’
চীনকে দেখে মনে হচ্ছে তারা এই পরিস্থিতিতে দৃঢ়ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র পিপলস ডেইলির প্রথম পাতায় লেখা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রর শুল্কের জবাবে আমরা তৈরি এবং আমাদের পরিকল্পনা আছে। আমরা আট বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ করেছি এবং আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।’ পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, ‘দেশের ভেতরে জিনিসের চাহিদা বাড়ানোর এবং অর্থনীতিকে সাহায্য করার জন্য তাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। আমাদের সব পরিকল্পনা ভালোভাবে তৈরি করা আছে।’
চীনের এখন একটাই লক্ষ্য, এই অর্থনৈতিক যুদ্ধে যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি দিন ধরে লড়তে পারে। রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ কাই টংজুয়ান বলেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত কে এই বাণিজ্যযুদ্ধে বেশি দিন টিকবে, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’ তিনি মনে করেন, ‘এ ক্ষেত্রে চীনের সুবিধাই বেশি।’
একই সময়ে চীন ইউরোপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। কারণ অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রর বাণিজ্যনীতির ওপর খুশি নয়। এই পদক্ষেপগুলো অনেক দিন ধরেই নেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের প্রথম আমলের বাণিজ্যযুদ্ধের সময় এবং চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরেই চীন বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের অর্থনীতির কিছু দুর্বল দিক আছে।
ভিক্টর শি বলেছেন, ‘চীনা সরকার ছয় বছর ধরে এই দিনের জন্য অপেক্ষা করছিল—তারা জানত এমন কিছু হতে পারে।’ তাঁর মতে, তারা তাদের জিনিসপত্র তৈরির পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে, বিদেশি কারখানাগুলোকে বেশি সাহায্য করছে এবং দেশের অর্থনীতির দুর্বল দিকগুলো যেমন মানুষের চাহিদা ও সরকারের ঋণ কমানোর চেষ্টা করছে।
আজকের চীন ২০১৮ সালের চেয়ে অনেক আলাদা। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আগের মতো নির্ভরশীল নয়। তাদের মোট ব্যবসার ২০ শতাংশের কম এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হয়, আগে যা ২০ শতাংশের বেশি ছিল। তারা ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো দেশেও কারখানা তৈরি করেছে। চীন তাদের প্রয়োজনীয় কিছু বিশেষ খনিজ পদার্থের সরবরাহ বাড়িয়েছে, কারখানায় রোবট ব্যবহার করছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নতি করছে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের স্কট কেনেডি বলেছেন, ‘ (চীনের) কিছু দুর্বলতা আছে, তবে এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে সেগুলো সামলানো সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র একা চীনের অর্থনীতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওয়াশিংটন এটা মানতে না চাইলেও, চীন যখন বলে যে তাদের অর্থনীতিকে আটকানো যাবে না, তখন তাদের কথায় যুক্তি আছে।’
সিএনএন থেকে সংক্ষেপে অনূদিত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ ক্যাম্পেইন এগিয়ে নিতে বিশ্বের দেশগুলোর ওপর বিশাল শুল্ক আরোপ করেছিলেন। যদিও পরে সেই শুল্ক তিনি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। কিন্তু চীনের ওপর তিনি শুল্ক বাড়িয়েই চলেছেন। জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় কাছাকাছি পরিমাণে
১ দিন আগেশুল্কযুদ্ধের হুংকার দিয়ে শুরু করলেও মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় ট্রাম্পকে পিছু হটতে হলো। শেয়ার ও বন্ডবাজারের অস্থিরতা, ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষতি ও বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে ধস তাঁকে নীতিগত ইউ-টার্ন নিতে বাধ্য করেছে। তবে এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি বিশ্ববাজারে স্বস্তি আনলেও চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতই
৪ দিন আগেগোপন চুক্তির আওতায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যান্য মিত্রশক্তি—যেমন ইতালি ও রাশিয়াও তুরস্কের কিছু অংশের ওপর নিজেদের দাবি জানিয়েছিল। রুশদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল ইস্তাম্বুল শাসন করা এবং একসময়ের বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের মহান রাজধানীতে অর্থোডক্স চার্চের প্রাধান্য পুনরুদ্ধার করা।
৪ দিন আগেবাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো ছোট দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সমন্বয়ে জোর দিতে দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সমন্বয় বলতে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতিতে পরিবর্তন বা সমন্বয় আনার চেষ্টাকে বোঝানো হচ্ছে।
৬ দিন আগে