Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুল্কঝড় ইতিবাচকভাবে বদলে দিতে পারে এশিয়ার বাণিজ্য

অনলাইন ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

তান ইউ কং। কাজ করেন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এক চিপ নির্মাতা কোম্পানিতে। তাঁর কোম্পানি গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে চিপ তৈরি করে। তাঁর মতে, কোম্পানিটি একটি ‘দরজি দোকানের মতো।’ তান বলেন, ‘আমরা কাপড় থেকে শুরু করে কাফলিংকসহ (বোতামও বলা যেতে পারে) সবকিছুই দেই ক্রেতাদের। আপনি কী চান, শুধু বলুন! আমরা আপনার জন্য সেটিই তৈরি করে দেব।’

তান কংয়ের কোম্পানির নাম গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ। এটি সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি কোম্পানি। বর্তমানে কোম্পানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত শুল্ক নীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কারণ, আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘তুষ্ট’ করতে না পারলে কোম্পানি ও দেশগুলোর ওপর শুল্কের খড়্গ নেমে আসবে। যদিও এটা এখনো নিশ্চিত নয় যে, ৯ তারিখ ট্রাম্প ঘোষিত শুল্কনীতির ৯০ দিনের ছাড়কৃত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর কী হবে।

ট্রাম্প গত শুক্রবার জানিয়েছেন, মার্কিন সরকার উচ্চ শুল্ক আরোপের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে বিভিন্ন দেশ ও পক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। আজ সোমবার সেই চিঠিগুলো পাঠানোর কথা। ট্রাম্প নির্দেশিত এই শুল্ক আবার আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মোট ১২টি চিঠি পাঠানো হবে। এসব চিঠিতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে বা ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে শুল্ক আরোপের কথা বলা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে কোন কোন দেশে এসব চিঠি পাঠানো হবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

যদিও এখন পর্যন্ত সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেননি ট্রাম্প, তবে তিনি এর আগে একাধিকবার বিভিন্ন সময়ে ‘লেভি’ বা মাশুল আরোপের হুমকি দিয়েছেন। আর ট্রাম্পের এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নীতি না থাকার কারণে এই শিল্পের কোম্পানিগুলোর জন্য ভবিষ্যৎ ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

অর্থনীতি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস আরও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরিকল্পনা করছে। এর অংশ হিসেবে, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে এসব চিপের রপ্তানি সীমিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চীনে যেন এসব চিপের প্রযুক্তি পাচার না হতে পারে তা রুখতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

তান কং বলেন, ‘আপনি তো প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে কোনো একটা বিষয়ে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন না। এমনটা হলে ব্যবসায়ীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে যায়।’

তানের প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। এই কোম্পানি এএমডি, ব্রডকম এবং কোয়ালকমের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য সেমিকন্ডাক্টর নকশা ও উৎপাদনে কাজ করে থাকে। এই কোম্পানিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে এই কোম্পানির কারখানা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত হার্ডওয়্যার খাতে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ বিশ্বজুড়ে নিজেদের ব্যবসা রক্ষায় ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার কৌশল নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কোম্পানিটি তাদের উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলের একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

এই চিপ নির্মাতা কোম্পানিটির মতো করে অন্যান্য চিপ নির্মাতা, টেক্সটাইল উৎপাদক এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অস্থির বাজার পরিস্থিতির মধ্যে সরবরাহ চাহিদা পূরণ, খরচ কমানো এবং নতুন ক্রেতা খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এসব কোম্পানির বেশির ভাগেরই সরবরাহ ব্যবস্থা এশিয়ার বিভিন্ন দেশজুড়ে বিস্তৃত।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের অপর্ণা ভরদ্বাজ বলেন, ‘ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এখন নতুন করে ভাবা, মজুত পণ্য এবং সরবরাহের সময়সীমা বাড়ানো। যাতে বাজারের অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এতে একদিকে যেমন নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে, অন্যদিকে কিছু দেশে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান এবং বাজার শেয়ারও কমে যেতে পারে। সহজ কথায়, নিশ্চিতভাবে কিছু বলা মুশকিল। অনিশ্চয়তাই এখন নতুন স্বাভাবিক অবস্থা।’

গত এপ্রিলে ট্রাম্প যখন শুল্কারোপের ঘোষণা দেন, তখন সবচেয়ে বেশি শুল্ক পাওয়া দেশগুলো ছিল এশিয়ারই। এই তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র জাপান (২৪ শতাংশ), দক্ষিণ কোরিয়া (২৫ শতাংশ) এবং অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার ভিয়েতনাম (৪৬ শতাংশ)। পরে অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই ট্রাম্প সেই শুল্ক স্থগিত করেন ৯০ দিনের জন্য। কিন্তু সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ বেসিক বা ভিত্তি শুল্ক থেকেই যায়। এখন বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, আগামী ৯ জুন বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের আগের আরোপিত শুল্কের চেয়েও বেশি শুল্ক নির্ধারিত হতে পারে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, এই শুল্ক তাঁর দেশের টেক্সটাইল, ফার্নিচার, রাবার ও প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থাকার পরও তাঁর দেশের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি বলেন, ‘বন্ধুর সঙ্গে এমন আচরণ কেউ করতে পারে না।’

২০২৪ সালে বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অবদান ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর তাই এই দেশগুলোর ওপর বাড়তি শুল্কের বোঝার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আছে। এই অঞ্চলের একমাত্র দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক-বাণিজ্য চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে ভিয়েতনাম। এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভিয়েতনামকে ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে বিভিন্ন পণ্যে। বিপরীতে ভিয়েতনামের বাজারে বিনা শুল্কে প্রবেশ করবে মার্কিন পণ্য।

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করার চেষ্টা করলেও এখনো সফল হয়নি। এরই মধ্যে ট্রাম্প টোকিওর ওপর ৩৫ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ৯ জুনের ডেডলাইন যত ঘনিয়ে আসছে নতুন করে বাড়তি শুল্ক আরোপের শঙ্কা আরও বাড়ছে।

ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকর হলে, জাপানের যেসব খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে শীর্ষেই থাকবে গাড়ি নির্মাণ খাত। মাজদাসহ বিভিন্ন কোম্পানি জানিয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা এবং নতুনভাবে ব্যবসায়কে সাজিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। আর তাই তারা বর্তমানে ‘সারভাইভাল মুড’ বা কোনোমতে টিকে থাকার কৌশল নিয়েছে।

ওশেনিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও নিরাপত্তা মিত্র অস্ট্রেলিয়া। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে যা রপ্তানি করে, তার চেয়ে বেশি আমদানি করে। দেশটির নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা ওয়াশিংটনকে বলেছেন, তাদের ওপর শুল্ক ‘শূন্য হওয়া উচিত।’ ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও আরও পণ্যে কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে শুল্কের হার কমানো যায়।

তবে কম্বোডিয়ার মতো গরিব দেশগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির কোনো হাতিয়ার নেই। এই দেশটির ওপর ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশটির পক্ষে কোনোভাবেই বাড়তি মার্কিন পণ্য কেনার বিলাসিতা করার সুযোগ নেই।

এই বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন—ইনসিডের অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক পুষণ দত্ত বলেন, ‘এশিয়ার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—উভয়ের ওপরই সমানভাবে নির্ভরশীল। আর বলা যায়, বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রাণকেন্দ্রে বসে আছে তারা।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন আসে, যদি বাণিজ্যের প্যাটার্নে পরিবর্তন আসে তাহলে এই দেশগুলোর জন্য বিষয়টি খুবই কঠিন হয়ে যাবে।’

পুষণ দত্ত আরও বলেন, যেসব দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেই চাহিদা বেশি—যেমন, ভারত—তারা হয়তো এই বাণিজ্য যুদ্ধের ধাক্কা থেকে কোনোভাবে বেঁচে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম এমনকি চীনের মতো রপ্তানি-নির্ভর দেশগুলোর ক্ষেত্রে এর প্রভাব হবে ভয়াবহ।

ট্রাম্প প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার সময় সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া বর্ধনশীল শিল্প যেমন—চিপ উৎপাদন ও ডেটা সেন্টারের মতো খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছিল। এই বিনিয়োগ এসেছিল চীন থেকে। বাণিজ্য জগতে এই ধরনের বিনিয়োগকে বলা হয়, ফ্রেন্ডশোরিং। অর্থাৎ, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক আছে, সেসব দেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়িয়ে সেখান থেকে পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা। এ ছাড়া, ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতির আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ শুরু করে।

অপর্ণা ভরদ্বাজ বলেন, এই কোম্পানিগুলো—বলা ভালো দেশগুলো—যুক্তরাষ্ট্রে সহজ প্রবেশাধিকার পেয়েছে এত দিন। আর তাই দেশটি অনেকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘শুল্কের ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন, এরপরও এশিয়ার অনেক দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, দেশটি একই সঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং দেশটির আছে বৈচিত্র্যময় ও শক্তিশালী ভোক্তা শ্রেণি।’

ট্রাম্পের শুল্ক কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর উৎপাদকদেরই খরচ বাড়ায়নি, পাশাপাশি এই অঞ্চলে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কাজ করে চলা মার্কিন কোম্পানিগুলোর খরচও বাড়িয়েছে। আবার যেসব কোম্পানি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে তাদের উৎপাদন হাব হিসেবে ব্যবহার করে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও ফুটওয়্যার শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নাইকির মতো অনেক কোম্পানিই ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া থেকে তাদের পণ্য তৈরি করিয়ে থাকে।

এরই মধ্যে অনেক মার্কিন কোম্পানি জানিয়েছে, শুল্কের কারণে পণ্যের মূল্য যা বাড়বে তার বোঝা শেষ পর্যন্ত ক্রেতাদেরই বহন করতে হবে। কারণ, শুল্ক বাড়লে তাদেরও বাড়তি মূল্য দিয়ে পণ্য কিনতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়ার মতো উচ্চ শুল্কের দেশগুলো থেকে বিদেশি বিনিয়োগ ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো তুলনামূলক নিম্ন শুল্কের দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হবে।

এ ছাড়া, কোম্পানিগুলো নতুন বাজার ও ক্রেতার দিকে মনোযোগ দেবে। বিশেষ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য এবং লাতিন আমেরিকা হতে পারে বিকল্প বাজার। গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজের তান কং বলেন, চিপ শিল্প এখন আর ‘বৈশ্বিকীকরণের’ দিকে যাচ্ছে না, বরং আঞ্চলিকীকরণের দিকে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, ‘একটা এমন জায়গা খুঁজে নিতে হবে যেখানে আমরা নিরাপদ বোধ করব। যেখানে সরবরাহ অব্যাহত থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে পারব। আর সবাইকে এখন এটা মেনে নিতে হবে যে, জিনিসপত্র আর আগের মতো সস্তা থাকবে না।’

এশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্কের গতিপথ যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমশ অনির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে পুষণ দত্ত বলেন, ‘এতে আসলে চীনের জন্য বিশাল একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে, বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার অভিভাবকের মতো ভূমিকা নেওয়ার।’

আগেই বলা হয়েছে, এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক-বাণিজ্যচুক্তি করেছে ভিয়েতনাম। এর বাইরে নতুন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে নিজস্ব নতুন পথ খুঁজে নিতে হতে পারে। এই বিষয়ে অপর্ণা ভরদ্বাজ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকে যখন বাণিজ্যে আরও বেশি সুরক্ষাবাদের (প্রোটেকশনিজম) পথে হাঁটছে, তখন এশিয়া ঠিক উল্টো দিকে যাচ্ছে। ব্যবসাবান্ধব সরকারগুলো বাণিজ্য উন্মুক্তকরণ আরও বাড়াচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুল্কনীতি দুটি বড় প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে—চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে বাণিজ্য কমছে, আর চীন এবং উদীয়মান এশীয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ছে।’

ট্রাম্পের নীতিগুলো এমন এক বাণিজ্যিক অস্থিরতা তৈরি করেছে, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোকেই বদলে দিতে পারে। আর এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত বিজয়ী নাও হতে পারে। বিষয়টিকে পুষণ দত্ত পুরো পরিস্থিতি পুরোনো একটি প্রবাদ দিয়ে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, ‘শাসকের সামনে মাথা নত করো, তারপর নিজ পথে চলে যাও।’

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত