Ajker Patrika

শশী থারুরের নিবন্ধ /ড্রাগনে ভয়, ইগলের ডানায় ভরসা খুঁজুক ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ০৩
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্প্রতি চীনে গিয়েছিলেন। তিয়ানজিনে তাঁর এই সফর ছিল সাত বছরের মধ্যে প্রথম চীন সফর। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন, কথা বলেন। এতে বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের এক সংহতির ছবি ফুটে ওঠে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এই বাহ্যিক দৃশ্যের আড়ালে রয়েছে অনেক জটিল এক বাস্তবতা, যা ভারতকে অত্যন্ত সতর্কতা ও সুস্পষ্ট কৌশলে সামাল দিতে হবে।

চীনে মোদির এই সফরকে অনেকে এক ধরনের ডিপ্লোম্যাটিক রিস্টার্ট বা কূটনৈতিক পুনর্যাত্রা হিসেবে দেখছেন। এক ঘণ্টার সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকে মোদি ও সি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট ফের চালুর সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে তিব্বতে অবস্থিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান কৈলাস মানস সরোবর যাত্রাও আবার উন্মুক্ত করতে তাঁরা সম্মত হন। করমর্দন হলো, ছবি তোলা হলো, আর মনে হলো—দুই এশীয় শক্তির মধ্যে এক নতুন শান্তিপূর্ণ সহযোগিতার অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।

তবে সন্দেহের যথেষ্ট জায়গা আছে। ১৯৫০-এর দশক থেকে ভারত বারবার চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই হতাশা আর বিশ্বাসঘাতকতার অভিজ্ঞতা হয়েছে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন হঠাৎ হিমালয় সীমান্তে সমন্বিত আক্রমণ চালায়। সেই যুদ্ধ দুই দেশের বন্ধুত্বের আশা ভেঙে দেয়। ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উদ্যোগে কিছুটা শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু গত এক দশকে আবারও উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ২০১৩ সালে ডেপসাং, ২০১৪ সালে চুমার, ২০১৭ সালে ডোকলাম এবং ২০২০ সালে গালওয়ানে প্রাণঘাতী সংঘাত—সব মিলিয়ে সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে।

ভারত-চীন সীমান্তের লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) নিয়ে বিরোধ মেটেনি। বরং চীন সীমান্তজুড়ে অবকাঠামো বাড়াচ্ছে। এর পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক—চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর, সামরিক সহায়তা আর কূটনৈতিক সমর্থন—ভারতের জন্য বড় কৌশলগত দুর্বলতা তৈরি করছে। তাই যতই সুন্দর ছবি বা ইতিবাচক পরিবেশ তুলে ধরা হোক, বাস্তবে এই জটিল সমস্যাগুলো সমাধান করা সহজ হবে না।

চীন-ভারত সম্পর্ক বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতেও জরাজীর্ণ। চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। এর মানে হলো—ভারত নানা চীনা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। ইলেকট্রনিকস থেকে শুরু করে ওষুধ তৈরির কাঁচামাল ও রেয়ার আর্থস বা বিরল মৃত্তিকা ধাতু—সবকিছুর বড় অংশই আসে চীন থেকে। অথচ ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ও সেবা খাত চীনের বাজারে জায়গা করে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। বিপরীতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের সরবরাহ ব্যবস্থায় শক্তভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছে। অর্থনৈতিক পাল্টা সুবিধার দাবি ভারত বারবার তুললেও তেমন ফল মেলেনি।

চীন-ভারত সম্পর্কের কাঠামোগত সমস্যাগুলো শুধু শীর্ষ বৈঠক দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে সি চিনপিং যখন ড্রাগন–হাতির একসঙ্গে পথচলার কথা বললেন, তখন নরেন্দ্র মোদি আবারও সীমান্তে শান্তি আর ন্যায্য বাণিজ্য সম্পর্কের দাবি তোলেন। তিনি আবারও জানান, চীনের বহুজাতিক বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিরোধিতা করছে ভারত। পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে যাওয়া মহাসড়ক এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় অংশ, আর সেটি ভারতের দাবি করা ভূখণ্ড। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও ভারতের আপসহীন অবস্থান তুলে ধরেন মোদি।

দ্বিপক্ষীয় মতবিরোধ ছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে চীন ও ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই ভিন্ন। চীন এক ধরনের বিকল্প বৈশ্বিক ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলছে। এসসিও সম্মেলনে সি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), অর্থনীতি ও অবকাঠামো খাতে নতুন উদ্যোগের কথা বলেন, যা পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। রাশিয়ার জন্য—যে দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় একঘরে হয়ে পড়েছে—এসব উদ্যোগ ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ভরসা। কিন্তু ভারত এসসিও–কে কেবল আঞ্চলিক সম্পৃক্ততার একটি কার্যকর মঞ্চ মনে করে। একই সঙ্গে কৌশলগত স্বাধীনতার জায়গা থেকে অবস্থান জানানোরও সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক ছেড়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা ভারতের নেই।

ভারতের নীতিনির্ধারকেরা যেভাবে অনেক সময় চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সম্ভাবনাকে অতিমাত্রায় গুরুত্ব দেন, সেভাবেই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের স্থায়িত্বকে বারবার খাটো করে দেখেন। চীনের মতো যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে রাখেনি, যুদ্ধে পাকিস্তানকে গোয়েন্দা ও সামরিক সহায়তা দেয়নি কিংবা এশিয়ার সীমান্ত নতুন করে আঁকার চেষ্টা করেনি। বরং গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ধীরে ধীরে কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে আছে প্রতিরক্ষা খাতে সমন্বয়, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা আর সমুদ্র নিরাপত্তা।

যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া আর জাপানের কোয়াড জোটের অংশ ভারত। এই অংশগ্রহণ ইঙ্গিত দেয়—চীন যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তার বিপরীতে ভারসাম্য রক্ষার ব্যাপারে দেশগুলো একমত। কোয়াডের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও—যেমন এর পরবর্তী সম্মেলন ভারতের মাটিতে হওয়ার কথা—এই বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর শিক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ করছে। ভারতীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্যও যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের বাণিজ্যে ভারতের উদ্বৃত্ত প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। তবু সম্পর্ক নিখুঁত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা সম্প্রতি ভারতকে চীন-রাশিয়ার সঙ্গে মিলিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ‘মন্দ খেলোয়াড়’ বলেছেন। আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। যদিও এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং আলোচনার মাধ্যমেই এসব বাণিজ্য বিতর্ক মেটানো সম্ভব।

মূলত যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সহযোগিতা কোনো সাময়িক দর-কষাকষির বিষয় নয়, বরং কাঠামোগত বাস্তবতা। বর্তমান টানাপোড়েন সত্ত্বেও দুই দেশ সরবরাহ ব্যবস্থার নিরাপত্তা আর চীনের কর্তৃত্ববাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঠেকাতে অভিন্ন স্বার্থে কাজ করছে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন সফর ছিল জরুরি, যাতে সম্পর্ক আরও খারাপ না হয়। কিন্তু প্রকৃত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে ভৌগোলিক বাস্তবতা, মতাদর্শ আর শক্তির অসমতা—যা শুধু কূটনীতির মাধ্যমে সহজে মেটানো সম্ভব নয়।

এখন, ভারতের নেতাদের মনে রাখতে হবে, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন মানে এক শক্তির দিক থেকে আরেক শক্তির দিকে দোদুল্যমান থাকা নয়। বরং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জায়গা তৈরি করা, যাতে অন্য কোনো শক্তির এজেন্ডায় বিলীন হতে না হয়। চীনের সঙ্গে উত্তেজনা এড়ানো মানে যেন মিথ্যা অংশীদারত্বের ভেলায় চড়া না হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষি মানে যেন দ্বন্দ্বকে এমন পর্যায়ে না নেওয়া হয়, যেখানে অভিন্ন স্বার্থে সহযোগিতা ব্যাহত হয়।

ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দিশা ঠিক হবে সম্মেলনের চাকচিক্যে নয়, বরং কৌশলগত স্বার্থের বাস্তবতায়। ড্রাগন হাত মেলালেও তার নখ দেখা যায় স্পষ্ট। ইগলের পালক এলোমেলো হলেও তার ডানা এখনো ভরসার শক্তি জোগায়। দুই দিকের সঙ্গেই চলতে হলে শুধু ভারসাম্য নয়, দূরদর্শিতারও প্রয়োজন।

প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যে ইমরান খানকে আমি চিনতাম—শশী থারুরের স্মৃতিকথায় আশঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত

জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।

ইমরান খান একসময় পাকিস্তানের সংস্কার ও জাতীয় পুনর্জাগরণের স্বপ্ন হিসেবে বিবেচিত হতেন। সেই মানুষটাই ২০২৩ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দী। ৭২ বছর বয়সী এই নেতাকে ঘিরে এখন গুজব ছড়িয়েছে—তাঁকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। তাঁর ছেলে কাসিম খান এখন বাবার জীবিত থাকার প্রমাণ ও মুক্তি দাবি করেছেন। এসব গুজব সত্য হলে এটি হবে এমন একটি জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি, যে জীবন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খ্যাতি, জাতীয় নেতৃত্ব এবং শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল।

১৯৫২ সালে লাহোরে সম্ভ্রান্ত পশতু পরিবারে জন্ম ইমরানের। লাহোরের অ্যাচিসন কলেজ, রয়্যাল গ্রামার স্কুল উর্সেস্টার ও অক্সফোর্ডের কেবল কলেজে শিক্ষাগ্রহণ। ৭০-এর দশকের শুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ এবং ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক শিরোপা জয় তাঁকে ক্রিকেট-পুরাণের অমর নায়ক বানিয়ে দেয়।

কৌশল, দূরদর্শিতা ও দলকে এক সুতায় গেঁথে রাখার ক্ষমতা তাঁকে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মধ্যেও অসামান্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

ক্রিকেট থেকে জনসেবায়

ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি গড়ে তোলেন শওকত খানম ক্যানসার হাসপাতাল। এটি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম বৃহৎ ক্যানসার হাসপাতাল। সাধারণ মানুষের দানে পরিচালিত এই হাসপাতাল তাঁর জনপ্রিয়তা ও জন-আস্থারই প্রমাণ।

কিন্তু ইমরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়টি পুরোপুরি রাজনীতিকে ঘিরে। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করলেও দলটি দীর্ঘ সময় প্রান্তিক পর্যায়ে ছিল। ২০১০ সালের পর থেকে তাঁর দুর্নীতিবিরোধী বার্তা, জাতীয় মর্যাদার প্রতিশ্রুতি এবং ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা দেশজুড়ে তরুণদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া তোলে।

২০১৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ‘নয়া পাকিস্তানের’ স্বপ্ন দেখালেও তাঁর শাসনকালজুড়ে ছিল অর্থনৈতিক অস্থিরতা, কূটনৈতিক চাপ ও সেনাবাহিনীর শক্তিশালী প্রভাব—যা শেষ পর্যন্ত তাঁর পতনের কারণ হয়।

শশী থারুর তাঁর জীবনের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ইমরান খানকে দেখেছেন।

প্রথম পরিচয়—থারুর যখন জাতিসংঘে কর্মরত, তখন নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। থারুর বলেন, ইমরানের সহজ-সরল আচরণ ও সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁকে মুগ্ধ করে।

দ্বিতীয় পর্যায়—ইমরান তখন অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে নিয়মিত ভারতে আসতেন, বিভিন্ন টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নিতেন। থারুরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হতো। থারুর বলেন, ইমরান ছিলেন স্পষ্টভাষী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহী। ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারতে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল অনেক, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে।

ইমরান খানের সঙ্গে শশী থারুরের সবচেয়ে স্মরণীয় সাক্ষাৎটি হয় ২০১৭ সালে ইসলামাবাদে এশিয়ান পার্লামেন্টারি সম্মেলনে। ইমরান তখন বিরোধী দলের নেতা। তিনি থারুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। নিরাপত্তার অজুহাতে পাকিস্তান সরকার থারুরকে হোটেলের বাইরে যেতে দেয়নি। তখন ইমরান নিজেই ছয়জন সহকর্মী নিয়ে হোটেলে যান।

থারুর বলেন, ‘আমাদের সাক্ষাৎটি রাজনৈতিক ছিল না—পুরোটা ছিল ইতিহাস নিয়ে। ইমরান আমার ‘‘An Era of Darkness’’ বই পুরোটা পড়েছেন। সেখান থেকে কিছু উদ্ধৃতি টেনে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, মতামত দেন, উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি জানান। ইমরান আমাকে পাকিস্তানে এসে ইতিহাস নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণও জানান। তবে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।’

থারুর আরও বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ক্ষমতায় এলেও ইমরান ছিলেন বৈপরীত্যের প্রতীক। ভারতের সঙ্গে শান্তি চান, কিন্তু সামরিক গোয়েন্দাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় বাধাপ্রাপ্ত হন। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিলেও নিজেই অভিযোগের মুখে পড়েন। অর্থনীতি সামাল দিতে গিয়ে চাপে পড়েন।

২০২২ সালে সেনা হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ইমরান ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সংগঠিত করে। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক মামলা, গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০২৩ সালে তিনি কারাবন্দী হন। অনেকের মতো থারুরও মনে করেন, ওই মামলার রায় ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া, জেলের পরিবেশ, দলের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন—এসব তাঁর বিচ্ছিন্নতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বোনেরা জেলের বাইরে বিক্ষোভ করলে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এখন তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। কেউ বলছে, সামরিক গোয়েন্দা মহলের ভেতরকার একটি অংশ তাঁকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে কোনো সরকারি বক্তব্য নেই। তবে এই নীরবতা রহস্য আরও গভীর করছে। যদি এটা সত্য হয়, তবে এটি পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে আরও এক অন্ধকার অধ্যায় হয়ে থাকবে।

থারুর মনে করেন, ইমরানের জীবনের পরিসমাপ্তি পাকিস্তানের আরও এক জনপ্রিয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিণতিরই প্রতিধ্বনি। তিনিও ভেবেছিলেন, সামরিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে যেতে পারবেন। কিন্তু এর জন্য তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিল।

থারুর জানান, তাঁর কাছে ইমরান থেকে যাবেন সেই মানুষ হিসেবে—যিনি ইসলামাবাদের হোটেলে এসে এক ঘণ্টা ধরে ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং রাজনীতির বাইরে একজন চিন্তাশীল, আবেগপ্রবণ ও দৃঢ় বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার উত্তেজনায় রাশিয়া ও চীন কেন নীরব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন হুমকির মুখে সম্প্রতি রাজধানী কারাকাসে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
মার্কিন হুমকির মুখে সম্প্রতি রাজধানী কারাকাসে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চাপের মুখে পড়েও ভেনেজুয়েলার প্রধান মিত্ররা কার্যকর সহযোগিতা থেকে বিরত আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিনবিরোধী তথাকথিত ওই ‘স্বৈরশাসকদের জোট’ শান্তিকালে যতটা শক্তিশালী দেখায়, সংকটের সময় ততটাই দুর্বল। ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর বড় ধরনের মোতায়েনের পরও মিত্র দেশগুলো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে বাস্তব সহায়তার বদলে শুধু রাজনৈতিক সমর্থন বা শুভেচ্ছা বার্তাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাদুরোর জন্মদিনে নিকারাগুয়ার নেতা ড্যানিয়েল অর্টেগার পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তাটিকেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দৃশ্যমান সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এদিকে গত তিন মাসে ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন বাহিনী একের পর এক নৌকাকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে। এই ধরনের হামলায় এখন পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ওয়াশিংটন দাবি করেছে—ওই নৌকাগুলো মাদক পরিবহন করছিল এবং এগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তবে সমালোচকেরা এসব হামলাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ভেনেজুয়েলার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর চুপ হয়ে থাকা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক ঠেকছে।

এ বিষয়ে রোববার (৩০ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ মিত্র কিউবা, ইরান ও নিকারাগুয়া নিজেদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে সামরিকভাবে কিছু করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে না। আর অতীতে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলাকে সামরিক যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিলেও এখন তাদেরও সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার সামরিক ও আর্থিক সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, আর চীনের দুর্বল অর্থনীতি তাকে উদার হতে দিচ্ছে না। তা ছাড়া উভয় দেশই বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সমঝোতা চায়। ফলে ভেনেজুয়েলার জন্য দেশ দুটি রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে চাইছে না।

এদিকে খবর পাওয়া গেছে, সম্প্রতি রাশিয়ার নিষিদ্ধ তেল বহনকারী দুই ট্যাংকার ভেনেজুয়েলায় হালকা ক্রুড ও ন্যাফথা সরবরাহ করেছে। এই দুটি ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো দিয়ে মাদুরোকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

একসময় মাদুরোর পূর্বসূরি ও ভেনেজুয়েলার শক্তিমান নেতা হুগো শাভেজ দেশের বিপুল তেলসম্পদকে কাজে লাগিয়ে চীন, কিউবা, ইরানসহ বহু দেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়েছিলেন। চীনের ব্যাংকগুলো ভেনেজুয়েলাকে অগণিত ঋণ দিয়েছিল, এর বিনিময়ে নিত তেল। কিউবা পাঠাত চিকিৎসক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ, আর দেশটিতে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল ইরান। কিন্তু মাদুরোর আমলে অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় এসব সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে।

চীন এখনো ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ও তেলে ক্রেতা হলেও নতুন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। মূলত চীন এখন শুধু ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল নিয়ে পুরোনো ঋণ আদায় করছে। বিশ্লেষকেরা এই বিষয়টিকে ক্রেডিটর ট্র্যাপ’ হিসেবে দেখছেন—যেখানে ঋণগ্রহীতার নয়, বরং ঋণদাতার অবস্থাই বেশি বিপদসংকুল।

ভেনেজুয়েলার বিরোধী শিবিরের ধারণা—মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হলে চীনের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হলে ভবিষ্যতে ভেনেজুয়েলার তেল সরাসরি ওয়াশিংটনের দিকেই প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমন বাস্তবতার মধ্যে চীন কত দিন চুপ থাকে সেটাই দেখার বিষয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুবাইয়ে তেজস দুর্ঘটনা: সামনে আসছে ভারতের যুদ্ধবিমান কর্মসূচির পুরোনো দুর্বলতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ০২
২০২৩ সালের নভেম্বরে বিমানবাহিনীর ইউনিফর্মে তেজস-এর সামনে পোজ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
২০২৩ সালের নভেম্বরে বিমানবাহিনীর ইউনিফর্মে তেজস-এর সামনে পোজ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (এইচএএল) নির্মিত এই যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা নিয়ে দেশীয় সরকারি নিরীক্ষা সংস্থাগুলোর তোলা প্রশ্নগুলো নতুন করে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।

দুবাইয়ে বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট উইং কমান্ডার নামাংশ শিয়াল-এর মৃত্যু হয়। দুবাই, প্যারিস এবং ফার্নবরোর পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এয়ার শোতে এই দুর্ঘটনা তেজসের সুনাম এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ তেজস কেনার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল বলে বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা নীরব হয়ে গেছে। তারা বিকল্প খুঁজছে বলেও খবর এসেছে। এমনিতেই এইচএএল রপ্তানি আকর্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছিল; তার মধ্যে এই দুর্ঘটনায় সব সম্ভাবনা ফিকে হয়ে গেল।

তেজস কর্মসূচি, ১৯৮১ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) পুরোনো সোভিয়েত যুগের মিগ-২১ বিমান প্রতিস্থাপনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছিল। তবে দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে যায়। বিমানটি তৈরি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এর ধারাবাহিক উৎপাদন ও গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ছিল পুরোনো। বিশ্লেষকদের মতে, দুর্ঘটনার পর এখন এই দীর্ঘদিনের ত্রুটিগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে।

তদন্তে সামনে এসেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো দশকের পর দশক ধরে তেজস কর্মসূচির একাধিক ত্রুটি নিয়ে যে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল, এই দুর্ঘটনা সেসব উদ্বেগকে নাটকীয়ভাবে জনসমক্ষে এনেছে। এইচএএল এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই ত্রুটিগুলোকে এত দিন অভ্যন্তরীণ, সামাল দেওয়ার মতো সমস্যা হিসেবে গণ্য করলেও এখন সেগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে। একজন সাবেক এইচএএল কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, প্রথম প্রজন্মের, যুদ্ধে পরীক্ষিত নয়—এমন একটি বিমানের এমন মারাত্মক দুর্ঘটনা, সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার দুর্বলতা সব মিলিয়ে যে ভাবমূর্তি তৈরি হলো, তা ‘গুরুতর এবং সম্ভবত পুনরুদ্ধার করা কঠিন’।

সংসদীয় প্রতিরক্ষা কমিটি, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) এবং কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মতো সংস্থাগুলো এলসিএর নকশা, উন্নয়ন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক উৎপাদন পর্যন্ত এর সমস্যাসংকুল পথ নিয়ে নিয়মিতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে।

এর মধ্যে ২০২৩ সালের সিএজি নিরীক্ষায় তেজসের ‘নকশায় গুরুতর ত্রুটি’ এবং ‘প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট (ধাক্কা) সম্পর্কে ভুল মূল্যায়ন’ তুলে ধরা হয়। ২০২১ সালের পিএসি কমিটি সামগ্রিকভাবে এলসিএ কর্মসূচির ‘ব্যাখ্যাহীন বিলম্ব’-এর জন্য তীব্র সমালোচনা করে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই প্রকল্পের তদারকি সংস্থাগুলোর ‘বিশৃঙ্খল মনোভাব’ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের সমালোচনাও করা হয়।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এইচএএল, ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থার মধ্যে একটি ডেডিকেটেড এলসিএ লিয়াজোঁ গ্রুপের অনুপস্থিতির কারণে এমকে-১-এর সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়নি। লিয়াজোঁ গ্রুপ বা পর্যবেক্ষক সংস্থা গঠনের জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।

এইচএএলের এই দুর্বলতার প্রমাণ মেলে এলসিএর অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্সেও। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিমানবাহিনীর প্রথম তেজস এমকে-১ স্কোয়াড্রন—নম্বর ৪৫ ফ্লাইং ড্যাগার্স—গঠন করা হয়েছিল পাঁচ বছর দেরিতে। এই ১৮টি বিমান ‘প্রাথমিক অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স-২’ (আইওসি-২ )সহ কমিশন করা হয়েছিল। বোঝা যায়, এই প্রকল্পের উন্নয়ন ও সার্টিফিকেশনের বেশ চাপ ছিল। স্থানীয়ভাবে এটিকে ৫৩টি সনদে ‘ওয়েভার’ বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবার ২০টি ছাড়পত্র স্থায়ী।

যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে আইওসি মানে বিমানটি উড্ডয়নের জন্য নিরাপদ হলেও তার যুদ্ধ সক্ষমতা সীমিত। অন্যদিকে ফাইনাল অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স (এফওসি) দিয়ে বোঝানো হয় বিমানটির সম্পূর্ণ মিশন প্রস্তুতি, পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র সংযোজন এবং কার্যকারিতার মান নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু দ্বিতীয় এমকে-১ স্কোয়াড্রন (নম্বর ১৮ ফ্লাইং বুলেটস) এফওসি মানসম্পন্ন বিমান পেয়েছিল।

দুবাই দুর্ঘটনার আগে ২০২৪ সালের মার্চে জয়সালমিরে যে তেজস বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘তেল ব্যবস্থার ত্রুটি, যার ফলে ইঞ্জিন বিকল’—অর্থাৎ একটি উৎপাদনজনিত ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল। এই ধরনের দুর্ঘটনা উৎপাদন মান এবং গুণমান নিয়ন্ত্রণে এইচএএলের দুর্বলতাকে বারবার সামনে এনেছে।

দীর্ঘদিন ধরে এইচএএলের উৎপাদন গতি নিয়ে বিমানবাহিনী অসন্তুষ্ট। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিং প্রকাশ্যে এইচএএলের ধীরগতির সমালোচনা করে বলেছিলেন যে তিনি এইচএএলের ওপর ‘আস্থাশীল নন’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যাটি মূলত দুটি সংস্থার ‘ভিন্ন ভাষায় কথা বলার’ মধ্যেই নিহিত: বিমানবাহিনী কাজ করে অপারেশনাল মোডে—যা মিশন প্রস্তুতি, সময়সীমা এবং ফ্লাইট নিরাপত্তার মতো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর এইচএএল চলে ‘ফাইল মোডে’, অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কাগজপত্রের টেবিল পরিবর্তনে সময়ক্ষেপণ হয়। এই সাংস্কৃতিক অমিল বারবার সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটিয়েছে এবং জরুরি অপারেশনাল উদ্বেগগুলোকে দ্রুত মোকাবিলা করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ছাড়াও এইচএএলের বৃহত্তম গ্রাহক হওয়া সত্ত্বেও তাদের বোর্ডে বিমানবাহিনীর স্থায়ী কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে সংস্থাটির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সরাসরি অপারেশনাল মতামত দেওয়ার মতো কোনো প্রতিনিধি এইচএএল পায়নি।

দুবাইয়ের দুর্ঘটনা এইচএএলের ২০০৮-০৯ সালের প্রথম রপ্তানি উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় ইকুয়েডরের বিমানবাহিনীর কাছে বিক্রি করা সাতটি ধ্রুব অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টারের মধ্যে চারটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, যার ফলে ২০১৫ সালে চুক্তি বাতিল হয়। ইকুয়েডর অভিযোগ করেছিল, বিক্রয়-পরবর্তী সহায়তার অভাব এবং খুচরা যন্ত্রাংশের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি ছিল দুর্ঘটনার কারণ। এই ঘটনা বিশ্ব সামরিক বিমান শিল্প মহলে এইচএএলের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং গ্রাহক প্রতিক্রিয়ায় ঘাটতিই তুলে ধরে।

দুবাইয়ের এই দুর্ঘটনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো এইচএএলের বৈশ্বিক বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারতের প্রথম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তেজসের বিষয়ে সম্ভাব্য ক্রেতারা এখন কেবল মুখের কথায় ভরসা রাখতে পারবে না। ভারতকে তার সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আল জাজিরার প্রতিবেদন /হাসিনার ভাগ্যে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ১৪
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে। এ নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছে ঢাকা। তবে দিল্লি এখনো কোনো পরিষ্কার অবস্থান জানায়নি।

সর্বশেষ গত বুধবার দিল্লি জানিয়েছে, তারা হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি ‘পরীক্ষা’ করছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার ‘হিস্ট্রি ইলাস্ট্রেটেড’ নামে একটি ফটো স্টোরিতে শেখ হাসিনার বিগত ১৭ বছরের শাসনামলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ সময় প্রভাব বিস্তার করা শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থা এক কথায় জটিল। একসময় তিনি ছিলেন গণতন্ত্রপন্থী নেতা, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। পরবর্তী সময় তিনি রূপ নেন একজন কর্তৃত্ববাদী নেতায়, যাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। সম্প্রতি তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য হাসিনাকে এ শাস্তি দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন, এই অপরাধে হাসিনার ফাঁসি হওয়া উচিত।

১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম শেখ হাসিনার। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম শেখ হাসিনার। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নেতৃত্ব দেন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নেতৃত্ব দেন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

১৯৯০ সালে হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিলে তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারবিরোধী’ নেতৃত্ব দেন। ওই আন্দোলনে এরশাদের পতন ঘটে। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
১৯৯০ সালে হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিলে তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারবিরোধী’ নেতৃত্ব দেন। ওই আন্দোলনে এরশাদের পতন ঘটে। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন হাসিনা। ২০০১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার কাছে পরাজিত হন। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসেন। ২০১৪ সালে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করলে তিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০১৮ সালে ভোট জালিয়াতির অভিযোগের মধ্যেও তিনি পুনরায় জয়ী হন। একই বছর দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি বেকসুর খালাস পান। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন হাসিনা। ২০০১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার কাছে পরাজিত হন। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসেন। ২০১৪ সালে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করলে তিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০১৮ সালে ভোট জালিয়াতির অভিযোগের মধ্যেও তিনি পুনরায় জয়ী হন। একই বছর দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি বেকসুর খালাস পান। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বছরে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বছরে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

তবে পুরো সময়জুড়ে তাঁর বিরুদ্ধে ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। বিরোধী নেতা-কর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের তুলে নেওয়া, নির্যাতন ও হত্যা—এসব অভিযোগে বিশেষভাবে অভিযুক্ত ছিল র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ২০২১ সালে শত শত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ সব সময়ই অস্বীকার করেছেন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
তবে পুরো সময়জুড়ে তাঁর বিরুদ্ধে ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। বিরোধী নেতা-কর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের তুলে নেওয়া, নির্যাতন ও হত্যা—এসব অভিযোগে বিশেষভাবে অভিযুক্ত ছিল র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ২০২১ সালে শত শত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ সব সময়ই অস্বীকার করেছেন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটি নিয়ে ছাত্রদের বিক্ষোভ দ্রুত ব্যাপক বিদ্রোহে রূপ নেয়। জাতিসংঘের হিসাবে, ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০-এর বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটি নিয়ে ছাত্রদের বিক্ষোভ দ্রুত ব্যাপক বিদ্রোহে রূপ নেয়। জাতিসংঘের হিসাবে, ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০-এর বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার পর ৫ আগস্ট (২০২৪) শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। চলতি মাসে হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁর বিচার হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার পর ৫ আগস্ট (২০২৪) শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। চলতি মাসে হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁর বিচার হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ২৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ গায়েব হয়ে গেছে। এদিকে আগামী ২০২৬ সালের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে তারা ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে কি না—সে প্রশ্নও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দিল্লি হাসিনাকে নিরাপদে রাখবে নাকি ঢাকার অনুরোধ মেনে তাঁকে ফেরত দেবে—সেই রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ এখনো স্পষ্ট নয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ২৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ গায়েব হয়ে গেছে। এদিকে আগামী ২০২৬ সালের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে তারা ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে কি না—সে প্রশ্নও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দিল্লি হাসিনাকে নিরাপদে রাখবে নাকি ঢাকার অনুরোধ মেনে তাঁকে ফেরত দেবে—সেই রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ এখনো স্পষ্ট নয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত