Ajker Patrika

মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে বিশ্বব্যাপী কেন এত বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ২১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক বিচার ব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ড বা প্রাণদণ্ড সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত একটি বিষয়। এই শাস্তি কেবল দেশ বা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি করেনি, বরং বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের মনেও গুরুতর নৈতিক ও আইনি প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছে। যদিও অনেকে মনে করেন মৃত্যুদণ্ড অপরাধের প্রতিশোধ এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অপরিহার্য, তবে মানবাধিকার কর্মী ও এই বাধান বিলোপের পক্ষে থাকা অধিকারকর্মীরা বিরুদ্ধে পাঁচটি মূল কারণ তুলে ধরেছেন।

তাঁদের বিরোধিতার মূল কারণগুলো মূলত পাঁচটি আন্তঃসম্পর্কিত যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত:

১. নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড: ভুল সংশোধনের সুযোগ না থাকা

বিলোপবাদীদের মতে, এটিই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি। পৃথিবীর কোনো বিচার ব্যবস্থাই শতভাগ নির্ভুল নয়। মানুষের তৈরি এই সিস্টেমে ভুল হতেই পারে, কিন্তু মৃত্যুদণ্ড সেই ভুলকে চিরস্থায়ী করে দেয়।

ভুলের দৃষ্টান্ত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণায় দেখা গেছে, আধুনিক যুগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে অন্তত ৪ শতাংশ নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০-এরও বেশি ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর নির্দোষ হিসেবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই দৃষ্টান্ত বিচার ব্যবস্থার ত্রুটির হারকে প্রকটভাবে তুলে ধরে।

এই শাস্তির ফলাফল: ভুল করে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি মুক্তি পেলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ পায়, কিন্তু একবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে সেই ভুল শুধরে নেওয়ার কোনো উপায় থাকে না। জীবনের বিনিময়ে এমন ঝুঁকি নেওয়া কোনো সভ্য সমাজের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।

২. মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন

বহু মানুষের কাছে, মৃত্যুদণ্ড হলো জীবনের মৌলিক অধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা মৃত্যুদণ্ডকে চরম নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক শাস্তি হিসেবে দেখে। বছরের পর বছর ধরে ‘মৃত্যু-মিছিলের’ অপেক্ষায় থাকা আসামির মানসিক যন্ত্রণা এক ধরনের নির্যাতন হিসেবেও বিবেচিত।

এ ছাড়া সমালোচকেরা যুক্তি দেন, যে সহিংসতা বা হত্যাকাণ্ডকে রাষ্ট্র নিন্দা জানায়, সেই একই সহিংসতা যখন রাষ্ট্র নিজে অনুমোদন করে, তখন বিচার ব্যবস্থার নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

৩. পদ্ধতিগত পক্ষপাত এবং বৈষম্যমূলক প্রয়োগ

দেখা গেছে, মৃত্যুদণ্ড প্রায়শই সমাজের দুর্বল এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। বহু দেশে আসামির আর্থসামাজিক অবস্থা বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির বর্ণের ওপর ভিত্তি করে মৃত্যুদণ্ড বেশি কার্যকর হতে দেখা যায়। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা বা অভিজ্ঞ আইনি সহায়তা নিতে অক্ষম ব্যক্তিরা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়। এ ছাড়া বুদ্ধিবৃত্তিক বা মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ন্যায্য বিচার পাওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা রায়কে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রতীয়মান করে।

৪. অপরাধ দমনে প্রতিরোধক প্রভাব কম

মৃত্যুদণ্ডের প্রবক্তারা প্রায়শই অপরাধ প্রতিরোধের যুক্তি তুলে ধরেন। অর্থাৎ, তাঁরা মনে করেন মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করলে মানুষ আর সেই অপরাধ করার সাহস পাবে না। এতে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। কিন্তু আধুনিক অপরাধবিজ্ঞান গবেষণা এই দাবিকে সমর্থন করে না।

দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের চেয়ে মৃত্যুদণ্ড অপরাধ দমনে বেশি কার্যকর—এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি কিছু বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যে দেশগুলোতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে, সেখানে হত্যার হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

এ ছাড়া বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধ হয় আবেগের বশে, মানসিক চাপের মধ্যে, অথবা নেশার প্রভাবে সংঘটিত হয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে অপরাধী শাস্তির কথা যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করে না।

৫. সহিংসতা ও ট্রমার চক্র

অনেকে মনে করেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা কেবল প্রতিশোধের ধারণাকেই প্রাধান্য দেয়, যা নতুন করে ট্রমা এবং সহিংসতার চক্র তৈরি করে। এটি কেবল অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবারেই নয়, বিচারক, জুরি এবং জল্লাদদের মতো বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীদের ওপরও নৈতিক ও মানসিক চাপ ফেলে।

প্রতিশোধ বনাম ন্যায়বিচার: মৃত্যুদণ্ডের বিধানের বিরোধীরা মনে করেন, মৃত্যুদণ্ড ন্যায়বিচারের আধুনিক লক্ষ্য—যা জবাবদিহি এবং ভবিষ্যৎ অপরাধ প্রতিরোধের ওপর জোর দেয়—তার বদলে ‘চোখের বদলে চোখ’-এর মতো প্রাচীন প্রতিশোধের ধারণাকেই অগ্রাধিকার দেয়।

মানবাধিকারের মান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ আইনত বা কার্যত মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুদণ্ড বিতর্ক এখন কেবল আইনি তত্ত্বে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি সক্রিয় জননীতি আলোচনায় পরিণত হয়েছে, যার মূল প্রশ্ন হলো: একটি আধুনিক সমাজ কি এমন একটি শাস্তির নৈতিক ও আর্থিক মূল্য বহন করতে পারে যা অপরিবর্তনীয়, বৈষম্যমূলক এবং অপরাধ দমনে অকার্যকর?

দীর্ঘদিন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তির নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার ঘটনাগুলো ক্রমাগত বিচার ব্যবস্থার ত্রুটি স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলে এসব দৃষ্টান্ত সেই অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে যে, যেখানে মানুষের জীবনের প্রশ্ন, সেখানে ভুলের ঝুঁকি নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল করেছে যেসব দেশ:

১৯৭৬ সাল থেকে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা দেশগুলোর তালিকা বাতিলের বছর এবং ধরন অনুযায়ী নিচে দেওয়া হলো:

১৯৭৬: পর্তুগাল (সমস্ত অপরাধ)

১৯৭৮: ডেনমার্ক (সমস্ত অপরাধ)

১৯৭৯: লুক্সেমবার্গ, নিকারাগুয়া, নরওয়ে (সমস্ত অপরাধ); ব্রাজিল, ফিজি, পেরু (সাধারণ অপরাধ)

১৯৮১: ফ্রান্স, কেপ ভার্দে (সমস্ত অপরাধ)

১৯৮২: নেদারল্যান্ডস (সমস্ত অপরাধ)

১৯৮৩: সাইপ্রাস, এল সালভাদর (সাধারণ অপরাধ)

১৯৮৪: আর্জেন্টিনা (সাধারণ অপরাধ)

১৯৮৫: অস্ট্রেলিয়া (সমস্ত অপরাধ)

১৯৮৭: হাইতি, লিকটেনস্টেইন, জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (সমস্ত অপরাধ)

১৯৮৯: কম্বোডিয়া, নিউজিল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া (সমস্ত অপরাধ)

১৯৯০: অ্যান্ডোরা, ক্রোয়েশিয়া, চেক অ্যান্ড স্লোভাক ফেডারেল রিপাবলিক, হাঙ্গেরি, আয়ারল্যান্ড, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, সাও টোমে ও প্রিন্সিপে (সমস্ত অপরাধ)

১৯৯২: অ্যাঙ্গোলা, প্যারাগুয়ে, সুইজারল্যান্ড (সমস্ত অপরাধ)

১৯৯৩: গিনি-বিসাউ, হংকং, সেশেলস (সমস্ত অপরাধ); গ্রিস (সাধারণ অপরাধ)

১৯৯৪: ইতালি (সমস্ত অপরাধ)

১৯৯৫: জিবুতি, মরিশাস, মলডোভা, স্পেন (সমস্ত অপরাধ)

১৯৯৬: বেলজিয়াম (সমস্ত অপরাধ)

১৯৯৭: জর্জিয়া, নেপাল, পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা (সমস্ত অপরাধ); বলিভিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা (সাধারণ অপরাধ)

১৯৯৮: আজারবাইজান, বুলগেরিয়া, কানাডা, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া, যুক্তরাজ্য (সমস্ত অপরাধ)

১৯৯৯: ইস্ট তিমুর, তুর্কমেনিস্তান, ইউক্রেন (সমস্ত অপরাধ); লাটভিয়া (সাধারণ অপরাধ)

২০০০: কোট ডি’আইভরি, মাল্টা (সমস্ত অপরাধ); আলবেনিয়া (সাধারণ অপরাধ)

২০০১: বসনিয়া-হার্জেগোভিনা (সমস্ত অপরাধ); চিলি (সাধারণ অপরাধ)

২০০২: ফেডারেল রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়া (বর্তমানে সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রো), সাইপ্রাস (সমস্ত অপরাধ); তুরস্ক (সাধারণ অপরাধ)

২০০৩: আর্মেনিয়া (সাধারণ অপরাধ)

২০০৪: ভুটান, সামোয়া, সেনেগাল, তুরস্ক (সমস্ত অপরাধ)

২০০৫: লাইবেরিয়া, মেক্সিকো (সমস্ত অপরাধ)

২০০৬: ফিলিপাইন (সমস্ত অপরাধ)

২০০৭: আলবেনিয়া, রুয়ান্ডা (সমস্ত অপরাধ); কিরগিজস্তান (সাধারণ অপরাধ)

২০০৮: উজবেকিস্তান, চিলি, আর্জেন্টিনা (সমস্ত অপরাধ)

২০০৯: বুরুন্ডি, টোগো (সমস্ত অপরাধ)

২০১০: গ্যাবন (আইন থেকে মৃত্যুদণ্ড অপসারণ)

২০১২: লাটভিয়া (সমস্ত অপরাধ)

২০১৩: বলিভিয়া (সমস্ত অপরাধ)

২০১৫: কঙ্গো (প্রজাতন্ত্র), ফিজি, মাদাগাস্কার, সুরিনাম (সমস্ত অপরাধ)

২০১৬: বেনিন, নাউরু (সমস্ত অপরাধ); গিনি (সাধারণ অপরাধ)

২০১৭: গিনি (সমস্ত অপরাধ)

২০১৮: বুর্কিনা ফাসো (সমস্ত অপরাধ)

২০২০: চাদ (সমস্ত অপরাধ)

২০২১: কাজাখস্তান, সিয়েরা লিওন (সমস্ত অপরাধ)

২০২২: পাপুয়া নিউ গিনি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, নিরক্ষীয় গিনি, জাম্বিয়া (সমস্ত অপরাধ)

২০২৪: জিম্বাবুয়ে (সাধারণ অপরাধ)

তথ্যসূত্র: ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যে ইমরান খানকে আমি চিনতাম—শশী থারুরের স্মৃতিকথায় আশঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত

জেলবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাঁর পরিবার এখন ‘প্রুফ অব লাইফ’ দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের সেই যাত্রা ও ব্যক্তিগত স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা, কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুর।

ইমরান খান একসময় পাকিস্তানের সংস্কার ও জাতীয় পুনর্জাগরণের স্বপ্ন হিসেবে বিবেচিত হতেন। সেই মানুষটাই ২০২৩ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দী। ৭২ বছর বয়সী এই নেতাকে ঘিরে এখন গুজব ছড়িয়েছে—তাঁকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। তাঁর ছেলে কাসিম খান এখন বাবার জীবিত থাকার প্রমাণ ও মুক্তি দাবি করেছেন। এসব গুজব সত্য হলে এটি হবে এমন একটি জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি, যে জীবন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খ্যাতি, জাতীয় নেতৃত্ব এবং শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল।

১৯৫২ সালে লাহোরে সম্ভ্রান্ত পশতু পরিবারে জন্ম ইমরানের। লাহোরের অ্যাচিসন কলেজ, রয়্যাল গ্রামার স্কুল উর্সেস্টার ও অক্সফোর্ডের কেবল কলেজে শিক্ষাগ্রহণ। ৭০-এর দশকের শুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ এবং ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক শিরোপা জয় তাঁকে ক্রিকেট-পুরাণের অমর নায়ক বানিয়ে দেয়।

কৌশল, দূরদর্শিতা ও দলকে এক সুতায় গেঁথে রাখার ক্ষমতা তাঁকে দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মধ্যেও অসামান্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

ক্রিকেট থেকে জনসেবায়

ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি গড়ে তোলেন শওকত খানম ক্যানসার হাসপাতাল। এটি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম বৃহৎ ক্যানসার হাসপাতাল। সাধারণ মানুষের দানে পরিচালিত এই হাসপাতাল তাঁর জনপ্রিয়তা ও জন-আস্থারই প্রমাণ।

কিন্তু ইমরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়টি পুরোপুরি রাজনীতিকে ঘিরে। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করলেও দলটি দীর্ঘ সময় প্রান্তিক পর্যায়ে ছিল। ২০১০ সালের পর থেকে তাঁর দুর্নীতিবিরোধী বার্তা, জাতীয় মর্যাদার প্রতিশ্রুতি এবং ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা দেশজুড়ে তরুণদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া তোলে।

২০১৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ‘নয়া পাকিস্তানের’ স্বপ্ন দেখালেও তাঁর শাসনকালজুড়ে ছিল অর্থনৈতিক অস্থিরতা, কূটনৈতিক চাপ ও সেনাবাহিনীর শক্তিশালী প্রভাব—যা শেষ পর্যন্ত তাঁর পতনের কারণ হয়।

শশী থারুর তাঁর জীবনের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ইমরান খানকে দেখেছেন।

প্রথম পরিচয়—থারুর যখন জাতিসংঘে কর্মরত, তখন নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে ইমরান খানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। থারুর বলেন, ইমরানের সহজ-সরল আচরণ ও সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁকে মুগ্ধ করে।

দ্বিতীয় পর্যায়—ইমরান তখন অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে নিয়মিত ভারতে আসতেন, বিভিন্ন টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নিতেন। থারুরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হতো। থারুর বলেন, ইমরান ছিলেন স্পষ্টভাষী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহী। ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারতে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল অনেক, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে।

ইমরান খানের সঙ্গে শশী থারুরের সবচেয়ে স্মরণীয় সাক্ষাৎটি হয় ২০১৭ সালে ইসলামাবাদে এশিয়ান পার্লামেন্টারি সম্মেলনে। ইমরান তখন বিরোধী দলের নেতা। তিনি থারুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। নিরাপত্তার অজুহাতে পাকিস্তান সরকার থারুরকে হোটেলের বাইরে যেতে দেয়নি। তখন ইমরান নিজেই ছয়জন সহকর্মী নিয়ে হোটেলে যান।

থারুর বলেন, ‘আমাদের সাক্ষাৎটি রাজনৈতিক ছিল না—পুরোটা ছিল ইতিহাস নিয়ে। ইমরান আমার ‘‘An Era of Darkness’’ বই পুরোটা পড়েছেন। সেখান থেকে কিছু উদ্ধৃতি টেনে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, মতামত দেন, উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি জানান। ইমরান আমাকে পাকিস্তানে এসে ইতিহাস নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণও জানান। তবে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।’

থারুর আরও বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ক্ষমতায় এলেও ইমরান ছিলেন বৈপরীত্যের প্রতীক। ভারতের সঙ্গে শান্তি চান, কিন্তু সামরিক গোয়েন্দাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় বাধাপ্রাপ্ত হন। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিলেও নিজেই অভিযোগের মুখে পড়েন। অর্থনীতি সামাল দিতে গিয়ে চাপে পড়েন।

২০২২ সালে সেনা হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ইমরান ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সংগঠিত করে। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক মামলা, গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০২৩ সালে তিনি কারাবন্দী হন। অনেকের মতো থারুরও মনে করেন, ওই মামলার রায় ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া, জেলের পরিবেশ, দলের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন—এসব তাঁর বিচ্ছিন্নতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বোনেরা জেলের বাইরে বিক্ষোভ করলে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এখন তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। কেউ বলছে, সামরিক গোয়েন্দা মহলের ভেতরকার একটি অংশ তাঁকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে কোনো সরকারি বক্তব্য নেই। তবে এই নীরবতা রহস্য আরও গভীর করছে। যদি এটা সত্য হয়, তবে এটি পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে আরও এক অন্ধকার অধ্যায় হয়ে থাকবে।

থারুর মনে করেন, ইমরানের জীবনের পরিসমাপ্তি পাকিস্তানের আরও এক জনপ্রিয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিণতিরই প্রতিধ্বনি। তিনিও ভেবেছিলেন, সামরিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে যেতে পারবেন। কিন্তু এর জন্য তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিল।

থারুর জানান, তাঁর কাছে ইমরান থেকে যাবেন সেই মানুষ হিসেবে—যিনি ইসলামাবাদের হোটেলে এসে এক ঘণ্টা ধরে ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং রাজনীতির বাইরে একজন চিন্তাশীল, আবেগপ্রবণ ও দৃঢ় বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার উত্তেজনায় রাশিয়া ও চীন কেন নীরব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন হুমকির মুখে সম্প্রতি রাজধানী কারাকাসে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
মার্কিন হুমকির মুখে সম্প্রতি রাজধানী কারাকাসে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

গত দুই দশক ধরে রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠতে চেয়েছিল ভেনেজুয়েলা। উদ্দেশ্য ছিল এমন এক নতুন আন্তর্জাতিক জোট গড়া, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চাপের মুখে পড়েও ভেনেজুয়েলার প্রধান মিত্ররা কার্যকর সহযোগিতা থেকে বিরত আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিনবিরোধী তথাকথিত ওই ‘স্বৈরশাসকদের জোট’ শান্তিকালে যতটা শক্তিশালী দেখায়, সংকটের সময় ততটাই দুর্বল। ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর বড় ধরনের মোতায়েনের পরও মিত্র দেশগুলো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে বাস্তব সহায়তার বদলে শুধু রাজনৈতিক সমর্থন বা শুভেচ্ছা বার্তাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাদুরোর জন্মদিনে নিকারাগুয়ার নেতা ড্যানিয়েল অর্টেগার পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তাটিকেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দৃশ্যমান সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এদিকে গত তিন মাসে ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন বাহিনী একের পর এক নৌকাকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে। এই ধরনের হামলায় এখন পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ওয়াশিংটন দাবি করেছে—ওই নৌকাগুলো মাদক পরিবহন করছিল এবং এগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। তবে সমালোচকেরা এসব হামলাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ভেনেজুয়েলার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর চুপ হয়ে থাকা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক ঠেকছে।

এ বিষয়ে রোববার (৩০ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ মিত্র কিউবা, ইরান ও নিকারাগুয়া নিজেদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে সামরিকভাবে কিছু করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে না। আর অতীতে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলাকে সামরিক যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিলেও এখন তাদেরও সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার সামরিক ও আর্থিক সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, আর চীনের দুর্বল অর্থনীতি তাকে উদার হতে দিচ্ছে না। তা ছাড়া উভয় দেশই বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সমঝোতা চায়। ফলে ভেনেজুয়েলার জন্য দেশ দুটি রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে চাইছে না।

এদিকে খবর পাওয়া গেছে, সম্প্রতি রাশিয়ার নিষিদ্ধ তেল বহনকারী দুই ট্যাংকার ভেনেজুয়েলায় হালকা ক্রুড ও ন্যাফথা সরবরাহ করেছে। এই দুটি ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো দিয়ে মাদুরোকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

একসময় মাদুরোর পূর্বসূরি ও ভেনেজুয়েলার শক্তিমান নেতা হুগো শাভেজ দেশের বিপুল তেলসম্পদকে কাজে লাগিয়ে চীন, কিউবা, ইরানসহ বহু দেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়েছিলেন। চীনের ব্যাংকগুলো ভেনেজুয়েলাকে অগণিত ঋণ দিয়েছিল, এর বিনিময়ে নিত তেল। কিউবা পাঠাত চিকিৎসক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ, আর দেশটিতে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল ইরান। কিন্তু মাদুরোর আমলে অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় এসব সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে।

চীন এখনো ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ও তেলে ক্রেতা হলেও নতুন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। মূলত চীন এখন শুধু ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল নিয়ে পুরোনো ঋণ আদায় করছে। বিশ্লেষকেরা এই বিষয়টিকে ক্রেডিটর ট্র্যাপ’ হিসেবে দেখছেন—যেখানে ঋণগ্রহীতার নয়, বরং ঋণদাতার অবস্থাই বেশি বিপদসংকুল।

ভেনেজুয়েলার বিরোধী শিবিরের ধারণা—মাদুরো ক্ষমতাচ্যুত হলে চীনের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হলে ভবিষ্যতে ভেনেজুয়েলার তেল সরাসরি ওয়াশিংটনের দিকেই প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমন বাস্তবতার মধ্যে চীন কত দিন চুপ থাকে সেটাই দেখার বিষয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুবাইয়ে তেজস দুর্ঘটনা: সামনে আসছে ভারতের যুদ্ধবিমান কর্মসূচির পুরোনো দুর্বলতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ০২
২০২৩ সালের নভেম্বরে বিমানবাহিনীর ইউনিফর্মে তেজস-এর সামনে পোজ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
২০২৩ সালের নভেম্বরে বিমানবাহিনীর ইউনিফর্মে তেজস-এর সামনে পোজ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

২১ নভেম্বর দুবাই এয়ার শোতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান (এলসিএ) তেজস এমকে-১-এর দুর্ঘটনার পর থেকেই এই প্রকল্পের দীর্ঘদিনের দুর্বলতাগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (এইচএএল) নির্মিত এই যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা নিয়ে দেশীয় সরকারি নিরীক্ষা সংস্থাগুলোর তোলা প্রশ্নগুলো নতুন করে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।

দুবাইয়ে বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট উইং কমান্ডার নামাংশ শিয়াল-এর মৃত্যু হয়। দুবাই, প্যারিস এবং ফার্নবরোর পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এয়ার শোতে এই দুর্ঘটনা তেজসের সুনাম এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ তেজস কেনার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল বলে বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা নীরব হয়ে গেছে। তারা বিকল্প খুঁজছে বলেও খবর এসেছে। এমনিতেই এইচএএল রপ্তানি আকর্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছিল; তার মধ্যে এই দুর্ঘটনায় সব সম্ভাবনা ফিকে হয়ে গেল।

তেজস কর্মসূচি, ১৯৮১ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) পুরোনো সোভিয়েত যুগের মিগ-২১ বিমান প্রতিস্থাপনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছিল। তবে দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে যায়। বিমানটি তৈরি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এর ধারাবাহিক উৎপাদন ও গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ছিল পুরোনো। বিশ্লেষকদের মতে, দুর্ঘটনার পর এখন এই দীর্ঘদিনের ত্রুটিগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে।

তদন্তে সামনে এসেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো দশকের পর দশক ধরে তেজস কর্মসূচির একাধিক ত্রুটি নিয়ে যে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল, এই দুর্ঘটনা সেসব উদ্বেগকে নাটকীয়ভাবে জনসমক্ষে এনেছে। এইচএএল এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই ত্রুটিগুলোকে এত দিন অভ্যন্তরীণ, সামাল দেওয়ার মতো সমস্যা হিসেবে গণ্য করলেও এখন সেগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে। একজন সাবেক এইচএএল কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, প্রথম প্রজন্মের, যুদ্ধে পরীক্ষিত নয়—এমন একটি বিমানের এমন মারাত্মক দুর্ঘটনা, সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার দুর্বলতা সব মিলিয়ে যে ভাবমূর্তি তৈরি হলো, তা ‘গুরুতর এবং সম্ভবত পুনরুদ্ধার করা কঠিন’।

সংসদীয় প্রতিরক্ষা কমিটি, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) এবং কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মতো সংস্থাগুলো এলসিএর নকশা, উন্নয়ন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক উৎপাদন পর্যন্ত এর সমস্যাসংকুল পথ নিয়ে নিয়মিতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে।

এর মধ্যে ২০২৩ সালের সিএজি নিরীক্ষায় তেজসের ‘নকশায় গুরুতর ত্রুটি’ এবং ‘প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট (ধাক্কা) সম্পর্কে ভুল মূল্যায়ন’ তুলে ধরা হয়। ২০২১ সালের পিএসি কমিটি সামগ্রিকভাবে এলসিএ কর্মসূচির ‘ব্যাখ্যাহীন বিলম্ব’-এর জন্য তীব্র সমালোচনা করে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই প্রকল্পের তদারকি সংস্থাগুলোর ‘বিশৃঙ্খল মনোভাব’ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের সমালোচনাও করা হয়।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এইচএএল, ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থার মধ্যে একটি ডেডিকেটেড এলসিএ লিয়াজোঁ গ্রুপের অনুপস্থিতির কারণে এমকে-১-এর সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়নি। লিয়াজোঁ গ্রুপ বা পর্যবেক্ষক সংস্থা গঠনের জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।

এইচএএলের এই দুর্বলতার প্রমাণ মেলে এলসিএর অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্সেও। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিমানবাহিনীর প্রথম তেজস এমকে-১ স্কোয়াড্রন—নম্বর ৪৫ ফ্লাইং ড্যাগার্স—গঠন করা হয়েছিল পাঁচ বছর দেরিতে। এই ১৮টি বিমান ‘প্রাথমিক অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স-২’ (আইওসি-২ )সহ কমিশন করা হয়েছিল। বোঝা যায়, এই প্রকল্পের উন্নয়ন ও সার্টিফিকেশনের বেশ চাপ ছিল। স্থানীয়ভাবে এটিকে ৫৩টি সনদে ‘ওয়েভার’ বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবার ২০টি ছাড়পত্র স্থায়ী।

যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে আইওসি মানে বিমানটি উড্ডয়নের জন্য নিরাপদ হলেও তার যুদ্ধ সক্ষমতা সীমিত। অন্যদিকে ফাইনাল অপারেশনাল ক্লিয়ারেন্স (এফওসি) দিয়ে বোঝানো হয় বিমানটির সম্পূর্ণ মিশন প্রস্তুতি, পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র সংযোজন এবং কার্যকারিতার মান নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু দ্বিতীয় এমকে-১ স্কোয়াড্রন (নম্বর ১৮ ফ্লাইং বুলেটস) এফওসি মানসম্পন্ন বিমান পেয়েছিল।

দুবাই দুর্ঘটনার আগে ২০২৪ সালের মার্চে জয়সালমিরে যে তেজস বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘তেল ব্যবস্থার ত্রুটি, যার ফলে ইঞ্জিন বিকল’—অর্থাৎ একটি উৎপাদনজনিত ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল। এই ধরনের দুর্ঘটনা উৎপাদন মান এবং গুণমান নিয়ন্ত্রণে এইচএএলের দুর্বলতাকে বারবার সামনে এনেছে।

দীর্ঘদিন ধরে এইচএএলের উৎপাদন গতি নিয়ে বিমানবাহিনী অসন্তুষ্ট। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিং প্রকাশ্যে এইচএএলের ধীরগতির সমালোচনা করে বলেছিলেন যে তিনি এইচএএলের ওপর ‘আস্থাশীল নন’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যাটি মূলত দুটি সংস্থার ‘ভিন্ন ভাষায় কথা বলার’ মধ্যেই নিহিত: বিমানবাহিনী কাজ করে অপারেশনাল মোডে—যা মিশন প্রস্তুতি, সময়সীমা এবং ফ্লাইট নিরাপত্তার মতো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর এইচএএল চলে ‘ফাইল মোডে’, অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কাগজপত্রের টেবিল পরিবর্তনে সময়ক্ষেপণ হয়। এই সাংস্কৃতিক অমিল বারবার সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটিয়েছে এবং জরুরি অপারেশনাল উদ্বেগগুলোকে দ্রুত মোকাবিলা করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ছাড়াও এইচএএলের বৃহত্তম গ্রাহক হওয়া সত্ত্বেও তাদের বোর্ডে বিমানবাহিনীর স্থায়ী কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে সংস্থাটির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সরাসরি অপারেশনাল মতামত দেওয়ার মতো কোনো প্রতিনিধি এইচএএল পায়নি।

দুবাইয়ের দুর্ঘটনা এইচএএলের ২০০৮-০৯ সালের প্রথম রপ্তানি উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় ইকুয়েডরের বিমানবাহিনীর কাছে বিক্রি করা সাতটি ধ্রুব অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টারের মধ্যে চারটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, যার ফলে ২০১৫ সালে চুক্তি বাতিল হয়। ইকুয়েডর অভিযোগ করেছিল, বিক্রয়-পরবর্তী সহায়তার অভাব এবং খুচরা যন্ত্রাংশের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি ছিল দুর্ঘটনার কারণ। এই ঘটনা বিশ্ব সামরিক বিমান শিল্প মহলে এইচএএলের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং গ্রাহক প্রতিক্রিয়ায় ঘাটতিই তুলে ধরে।

দুবাইয়ের এই দুর্ঘটনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো এইচএএলের বৈশ্বিক বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারতের প্রথম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তেজসের বিষয়ে সম্ভাব্য ক্রেতারা এখন কেবল মুখের কথায় ভরসা রাখতে পারবে না। ভারতকে তার সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আল জাজিরার প্রতিবেদন /হাসিনার ভাগ্যে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ১৪
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর ভারত থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা তৃতীয়বারের মতো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে। এ নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছে ঢাকা। তবে দিল্লি এখনো কোনো পরিষ্কার অবস্থান জানায়নি।

সর্বশেষ গত বুধবার দিল্লি জানিয়েছে, তারা হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি ‘পরীক্ষা’ করছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার ‘হিস্ট্রি ইলাস্ট্রেটেড’ নামে একটি ফটো স্টোরিতে শেখ হাসিনার বিগত ১৭ বছরের শাসনামলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ সময় প্রভাব বিস্তার করা শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থা এক কথায় জটিল। একসময় তিনি ছিলেন গণতন্ত্রপন্থী নেতা, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। পরবর্তী সময় তিনি রূপ নেন একজন কর্তৃত্ববাদী নেতায়, যাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। সম্প্রতি তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য হাসিনাকে এ শাস্তি দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন, এই অপরাধে হাসিনার ফাঁসি হওয়া উচিত।

১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম শেখ হাসিনার। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম শেখ হাসিনার। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নেতৃত্ব দেন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নেতৃত্ব দেন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

১৯৯০ সালে হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিলে তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারবিরোধী’ নেতৃত্ব দেন। ওই আন্দোলনে এরশাদের পতন ঘটে। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
১৯৯০ সালে হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিলে তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারবিরোধী’ নেতৃত্ব দেন। ওই আন্দোলনে এরশাদের পতন ঘটে। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন হাসিনা। ২০০১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার কাছে পরাজিত হন। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসেন। ২০১৪ সালে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করলে তিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০১৮ সালে ভোট জালিয়াতির অভিযোগের মধ্যেও তিনি পুনরায় জয়ী হন। একই বছর দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি বেকসুর খালাস পান। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন হাসিনা। ২০০১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার কাছে পরাজিত হন। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসেন। ২০১৪ সালে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করলে তিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০১৮ সালে ভোট জালিয়াতির অভিযোগের মধ্যেও তিনি পুনরায় জয়ী হন। একই বছর দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি বেকসুর খালাস পান। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বছরে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বছরে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

তবে পুরো সময়জুড়ে তাঁর বিরুদ্ধে ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। বিরোধী নেতা-কর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের তুলে নেওয়া, নির্যাতন ও হত্যা—এসব অভিযোগে বিশেষভাবে অভিযুক্ত ছিল র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ২০২১ সালে শত শত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ সব সময়ই অস্বীকার করেছেন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
তবে পুরো সময়জুড়ে তাঁর বিরুদ্ধে ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। বিরোধী নেতা-কর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের তুলে নেওয়া, নির্যাতন ও হত্যা—এসব অভিযোগে বিশেষভাবে অভিযুক্ত ছিল র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ২০২১ সালে শত শত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ সব সময়ই অস্বীকার করেছেন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটি নিয়ে ছাত্রদের বিক্ষোভ দ্রুত ব্যাপক বিদ্রোহে রূপ নেয়। জাতিসংঘের হিসাবে, ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০-এর বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটি নিয়ে ছাত্রদের বিক্ষোভ দ্রুত ব্যাপক বিদ্রোহে রূপ নেয়। জাতিসংঘের হিসাবে, ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০-এর বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হন। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার পর ৫ আগস্ট (২০২৪) শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। চলতি মাসে হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁর বিচার হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার পর ৫ আগস্ট (২০২৪) শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। চলতি মাসে হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁর বিচার হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ২৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ গায়েব হয়ে গেছে। এদিকে আগামী ২০২৬ সালের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে তারা ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে কি না—সে প্রশ্নও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দিল্লি হাসিনাকে নিরাপদে রাখবে নাকি ঢাকার অনুরোধ মেনে তাঁকে ফেরত দেবে—সেই রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ এখনো স্পষ্ট নয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ২৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ গায়েব হয়ে গেছে। এদিকে আগামী ২০২৬ সালের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে তারা ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে কি না—সে প্রশ্নও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দিল্লি হাসিনাকে নিরাপদে রাখবে নাকি ঢাকার অনুরোধ মেনে তাঁকে ফেরত দেবে—সেই রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ এখনো স্পষ্ট নয়। ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত