Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে হিজবুল্লাহ কেন নীরব

অনলাইন ডেস্ক
তেহরানের বিপ্লব স্কয়ারে ইরান ও হিজবুল্লাহর পতাকা হাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে করছে সাধারণ মানুষ। ছবি: এএফপি
তেহরানের বিপ্লব স্কয়ারে ইরান ও হিজবুল্লাহর পতাকা হাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে করছে সাধারণ মানুষ। ছবি: এএফপি

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত গড়াল ৬ষ্ঠ দিনে। পাল্টাপাল্টি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুপক্ষের বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এরই মধ্যে, ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরাও। তবে, এখনো চুপ ইরানের প্রতিরক্ষা বলয়ের অন্যতম শক্তি হিজবুল্লাহ। গত শুক্রবার ইরান ইসরায়েলের পাল্টা হামলা চালানোর পরপরই এক বিবৃতিতে লেবানন ভিত্তিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, আপাতত তারা এই যুদ্ধে জড়াবে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ‘কেন?’

যদিও ইসরায়েল এখনো লেবাননের বিভিন্ন এলাকা—বিশেষ করে দক্ষিণে এবং মাঝে মাঝে বৈরুত উপকণ্ঠেও—হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরও হামলা থেকে বিরত রয়েছে হিজবুল্লাহ। চলমান উত্তেজনার মধ্যে হিজবুল্লাহর এমন নীরব ভূমিকায় তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে কি দুর্বল হয়ে পড়েছে গোষ্ঠীটি?—উঠছে এমন প্রশ্নও।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সত্যিকার অর্থেই অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে ইরান সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাঁদের মতে, হিজবুল্লাহর অস্ত্র সক্ষমতা কমে গেছে বলেই তারা এখনো পাল্টা হামলা চালাচ্ছে না। কারণ হিজবুল্লাহ যদি নতুন করে কোনো সামরিক তৎপরতা শুরু করে, তবে সেটি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আরও তীব্র পাল্টা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে যা দেশ পুনর্গঠনের প্রচেষ্টাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে। তবে, হিজবুল্লাহর অস্ত্রভান্ডার একেবারে শূন্য হয়ে গেছে, ব্যাপারটা এমনও নয় বলে মনে করেন অনেকে।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর সামরিক ভান্ডারের বড় একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেলেও এখনো তাদের কাছে বিধ্বংসী বেশ কিছু অস্ত্র আছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধনের মতো বেশ কিছু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এখনো অবশিষ্ট রয়েছে হিজবুল্লাহর ভান্ডারে। তবে এরপর ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণ সামাল দিতে যে পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র প্রয়োজন, তা আপাতত তাদের কাছে নেই বলেই মত অনেকের।

বিশ্লেষক করিম সাফিয়েদ্দিনের ভাষ্য—হিজবুল্লাহর যে সামরিক সক্ষমতার অভাব রয়েছে তারই প্রমাণ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে তাদের এই নির্লিপ্ততা। তাঁর মতে, বর্তমানে হিজবুল্লাহর সক্রিয় সামরিক হস্তক্ষেপের সক্ষমতা নেই।

ইসরায়েলি অভিযানে হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক নেতৃত্বও চরমভাবে বিপর্যস্ত। সংগঠনটির বহু উচ্চপদস্থ সামরিক নেতা, এমনকি দীর্ঘদিনের প্রধান হাসান নাসরাল্লাও নিহত হয়েছেন। এই ধাক্কার পর হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের তৎপরতায় লেবানন সরকার হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ এবং বলপ্রয়োগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে ফিরিয়ে নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে বেশ চাপে পড়তে হয়েছে গোষ্ঠীটিকে।

বর্তমানে ইরান ও হিজবুল্লাহর মধ্যে একটি পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে গোষ্ঠীটি সংঘাতে অংশ নিচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো নিকোলাস ব্ল্যানফোর্ড আল-জাজিরাকে বলেন, ‘দেশীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে হিজবুল্লাহর জন্য ইরানের প্রতিশোধ অভিযানে অংশ নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। আর ইরানিরাও বুঝতে পারছে, তারা এখন হিজবুল্লাহর ওপর নির্ভর করতে পারবে না।’

তবে, হিজবুল্লাহ যে একেবারে নিশ্চুপই থাকবে তা মনে করেন না অনেকেই। লেবাননের হিজবুল্লাহপন্থী রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাসেম কাসির বলেন, ‘বর্তমানে হিজবুল্লাহর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই, কারণ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রই ইসরায়েলি দখলদারির মোকাবিলায় যথেষ্ট। তবে পরিস্থিতি যদি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নেয়, তখন চিত্র বদলাতেও পারে।’

১৯৮২ সালে লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় ইরানের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এটি মূলত দেশটির শিয়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর সমর্থনভিত্তিক একটি গোষ্ঠী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর একদিন পর উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে গোষ্ঠীটি। ৮ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে রকেট ছুড়তে শুরু করে গোষ্ঠীটি। পরে, পূর্ণমাত্রার সংঘাতে জড়ায় ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে প্রায় ৪ হাজার বেসামরিক লেবানিজ এবং হিজবুল্লাহ সদস্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত