আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতে কয়েক দশকের ‘জঙ্গল বিদ্রোহ’ কি অবশেষে সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে? গত সপ্তাহে দেশটির সবচেয়ে বেশি দিন ধরে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা মাওবাদী নেতা নাম্বালা কেশবরাও ছত্রিশগড় রাজ্যে এক অভিযানে ২৬ জনসহ নিহত হয়েছেন। তিনি বাসবরাজু নামেও পরিচিত। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানকে তিন দশকের মধ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘সবচেয়ে কঠোর নিষ্পত্তিমূলক আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। এই অভিযানে এক পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারিয়েছেন।
বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের বিদ্রোহ শুরু হয়। এ কারণে পরে তারা ‘নকশাল’ নামে পরিচিত হয়। কয়েক দশক ধরে পুনর্গঠিত হয়ে মধ্য ও পূর্ব ভারতজুড়ে এক ‘রেড করিডর’ তৈরি করে এই সশস্ত্র দল। এই করিডর পূর্বে ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জেলাজুড়ে এর অবস্থান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই বিদ্রোহকে ভারতের ‘সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, কমিউনিস্ট শাসনের দাবিতে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র সংগ্রাম ২০০০ সাল থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিদ্রোহীরা বলে, তারা আদিবাসী, উপজাতি এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে এই জনগোষ্ঠীগুলোকে অবহেলা করেছে এবং ভূমি দখল করে নিয়েছে।
মাওবাদী আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে বাম-উগ্রবাদ বলে বিবেচিত। ২০০৪ সালে প্রধান মার্কসবাদী-লেনিনবাদী গোষ্ঠীগুলো সিপিআই (মাওবাদী)-এর সঙ্গে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। এই দলটির আদর্শিক শিকড় ১৯৪৬ সালের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কৃষক বিদ্রোহে। এই সময়ে এসে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদ নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা রণক্লান্ত বিদ্রোহ কি সত্যিই শেষ—নাকি এর দীর্ঘ, রক্তাক্ত পরিসরে কেবলই আরেকটি বিরতি?
সাংবাদিক, সমাজবিজ্ঞানী ও মাওবাদী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক এন ভেনুগোপাল বলেন, ‘এটি সাময়িক বিরতি। তবে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আন্দোলনগুলো এখন এমন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে, যা তারা মোকাবিলা করেছিল ৭০-এর দশকে নকশালদের শীর্ষ নেতৃত্ব নিহত হওয়ার সময়।’

তবে মাওবাদী বিরোধী অভিযান তদারক করা ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা এমএ গণপতি ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘মূলত, মাওবাদী আন্দোলন ছিল একটি আদর্শিক সংগ্রাম, কিন্তু সেই আদর্শ আকর্ষণ হারিয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। শিক্ষিত যুবকেরা আর আগ্রহী নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাসবরাজু নিহত হওয়ায়, তাদের মনোবল কমে গেছে। তারা তাদের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাওবাদী সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনা ২০১৩ সালের ১ হাজার ১৩৬টি থেকে ২০২৩ সালে ৫৯৪ টিতে নেমে এসেছে, অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে এসব ঘটনা সম্পর্কিত প্রাণহানি ৩৯৭ থেকে কমে ১৩৮ জন হয়েছে বা ৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে, ২০২৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হতাহতের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান তীব্র হওয়াকেই উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ছত্তিশগড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য ছিল। মাওবাদী সংশ্লিষ্ট ঘটনার মোট ৬৩ শতাংশ এবং মোট প্রাণহানির ৬৬ শতাংশ ঘটেছে এই রাজ্যে। এ ছাড়া, মোট সহিংসতার ২৭ শতাংশ হয়েছে ঝাড়খণ্ডে এবং প্রাণহানির ২৩ শতাংশ হয়েছে এই রাজ্যে। বাকি ঘটনাগুলো মহারাষ্ট্র, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে ঘটেছে।
এই পরিসংখ্যানের দিকে ইঙ্গিত করে এমএ গণপতি বলেন, ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের পতন এই আন্দোলনের ব্যাপকভাবে হীনবল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এক দশক আগে রাজ্যের পুলিশকে দুর্বল মনে করা হতো। কিন্তু এখন সেটা আর প্রতীয়মান হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘আজ কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সাহায্যে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। আধা-সামরিক বাহিনী যেখানে অবস্থান ধরে রেখেছে, সেখানে রাজ্যের বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালিয়েছে।’
গণপতি আরও বলেন, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাস্তা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। এর ফলে তারা সশস্ত্র গোপন আন্দোলনকে সমর্থন করতে কম আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছে, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষ বাইরের বিশ্বের সংস্পর্শে আসছে। মাওবাদীরাও নতুন সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে আর কত দিন দুর্গম জঙ্গলে লুকিয়ে থাকবে! জনসমর্থন ছাড়া কোনো বিদ্রোহ টিকতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক মাওবাদী নেতা আন্দোলনের পতনের পেছনে গভীর এক ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো—রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা। তিনি বলেন, ‘তারা সত্যিকারের পরিবর্তন এনেছিল তেলেঙ্গানায়। সেখানে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার, ছত্তিশগড়ে উপজাতিদের একত্র করার মতো কাজ তারা করেছিল। কিন্তু এটিকে সুসংহত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারেনি।’
এই ব্যর্থতার মূলে এক পুরোনো বিপ্লবী ধারণা—রাষ্ট্রের নাগালের বাইরে বিচ্ছিন্ন ‘মুক্তাঞ্চল’ তৈরি করা এবং ‘দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে আঘাত করার তত্ত্ব’। ওই সাবেক মাওবাদী বলেন, ‘এই পকেটগুলো ততক্ষণ কাজ করে, যতক্ষণ না রাষ্ট্র পাল্টা আঘাত করে। এরপর অঞ্চলগুলো ভেঙে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। প্রশ্ন করার সময় এসেছে যে, আজকের ভারতে কি সত্যিই বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চল থেকে একটি বিপ্লব পরিচালনা করা সম্ভব?’
ওই নেতা আরও বলেন, সিপিআই-এর (মাওবাদী) ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দলিলে মাও-যুগের কৌশল আঁকড়ে ধরা হয়েছে। তাদের নীতি হলো, ‘একটি মুক্তাঞ্চল তৈরি করা এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শহর ঘেরাও করা।’ কিন্তু এটা আর কাজ করে না এখন। দলটি এখনো কিছু বিচ্ছিন্ন পকেটে জনসমর্থন ধরে রেখেছে। মূলত পূর্ব মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ছত্তিশগড় এবং ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডের কিছু উপজাতীয় অঞ্চলে তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে তাদের কোনো শক্তিশালী সামরিক ভিত্তি নেই।
সরকারি বাহিনীর ব্যাপক অভিযান দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের ঘাঁটিগুলোতে মাওবাদীদের সামরিক অবকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে। তাদের ক্যাডার ও নেতাদের এখন নিয়মিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এটি বিদ্রোহীদের নিজেদের রক্ষা করার ক্রমবর্ধমান অক্ষমতাকেই প্রতিফলিত করে। এমএ গণপতি বিশ্বাস করেন, ভারত সরকার এই ‘কৌশলটি পুরোপুরি পরিত্যাগ না করে, পুনর্বিবেচনা করতে পারে’ এবং এটাই ‘দরকার’। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে আন্ডারগ্রাউন্ড সংগ্রামের একটি জায়গা আছে। তবে ‘আসল চ্যালেঞ্জ হলো এটিকে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে মেশানো।’
ভেনুগোপালও অদূর ভবিষ্যতে মাওবাদীদের ‘অর্থপূর্ণ পাল্টা লড়াই’ করার সম্ভাবনা কম দেখেন। তিনি যুক্তি দেন, এখন ভিন্ন একটি পদ্ধতির সময় এসেছে, সেটি হলো আলোচনা। তিনি বলেন, ‘তাদের এখন আলোচনায় বসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, হয়তো শর্তহীনভাবে বা শর্তগুলো জানিয়ে সরকারকে সেগুলো বিবেচনা করতে বলা উচিত। অকারণে নিজেদের ক্যাডারদের উদ্দেশ্যহীনভাবে বলি না দিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার এটাই সময়।’
তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পায় মাওবাদীরা। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করেছে। ১০টি ছোট বামপন্থী দলও একই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি মাওবাদী নেতা ও ক্যাডারদের রক্ষা করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে অতীতের সংগ্রামের কারণে মাওবাদী আন্দোলন এখনো এই রাজ্যগুলোর কিছু অংশে সামাজিক বৈধতার দাবি রাখে। নাগরিক সমাজের কর্মীরাও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। কলকাতার অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটসে সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর বলেন, ‘আমরা অন্যান্য নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীর সঙ্গে দুই ধাপের প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছি—প্রথমে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং এরপর শান্তি আলোচনা।’
মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ কারণেই এগুলো সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু। ভেনুগোপাল মনে করেন, এটি সিপিআই (মাওবাদী)-এর টিকে থাকার মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ছত্তিশগড় ভারতের একমাত্র টিন ও বালির উৎপাদক। রাজ্যটি কয়লা, ডোলোমাইট, বক্সাইট ও উচ্চমানের লোহা আকরিকেরও প্রধান উৎস। খনিজ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে দেশের ৩৬ শতাংশ টিন, ২০ শতাংশ লোহার আকরিক, ১৮ শতাংশ কয়লা, ১১ শতাংশ ডোলোমাইট ও ৪ শতাংশ হিরা ও মার্বেল মজুত আছে। কিন্তু সংঘাতের কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি খনি কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পদগুলো আহরণে সমস্যায় পড়েছে।
ভেনুগোপাল বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ “পানি, জঙ্গল, জমি” স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মাওবাদী আন্দোলন দাবি করে যে, বনভূমি আদিবাসীদের, করপোরেশনের নয়। কিন্তু মাওবাদীরা এখন দুর্বল হওয়ায় ছত্তিশগড়ের অন্তত চারটি খনি ‘পছন্দের দরদাতাদের’ হাতে যাবে বলে সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ভেনুগোপাল মনে করেন, মাওবাদী নেতাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরোধ শেষ হবে না। নেতারা হয়তো মারা যাবেন, কিন্তু ক্ষোভ থাকবেই। যেখানেই অবিচার থাকবে, সেখানেই আন্দোলন হবে। আমরা হয়তো সেগুলোকে আর মাওবাদ বলব না। তবে সেগুলো থাকবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারতে কয়েক দশকের ‘জঙ্গল বিদ্রোহ’ কি অবশেষে সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে? গত সপ্তাহে দেশটির সবচেয়ে বেশি দিন ধরে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা মাওবাদী নেতা নাম্বালা কেশবরাও ছত্রিশগড় রাজ্যে এক অভিযানে ২৬ জনসহ নিহত হয়েছেন। তিনি বাসবরাজু নামেও পরিচিত। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানকে তিন দশকের মধ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘সবচেয়ে কঠোর নিষ্পত্তিমূলক আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। এই অভিযানে এক পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারিয়েছেন।
বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের বিদ্রোহ শুরু হয়। এ কারণে পরে তারা ‘নকশাল’ নামে পরিচিত হয়। কয়েক দশক ধরে পুনর্গঠিত হয়ে মধ্য ও পূর্ব ভারতজুড়ে এক ‘রেড করিডর’ তৈরি করে এই সশস্ত্র দল। এই করিডর পূর্বে ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জেলাজুড়ে এর অবস্থান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই বিদ্রোহকে ভারতের ‘সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, কমিউনিস্ট শাসনের দাবিতে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র সংগ্রাম ২০০০ সাল থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিদ্রোহীরা বলে, তারা আদিবাসী, উপজাতি এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে এই জনগোষ্ঠীগুলোকে অবহেলা করেছে এবং ভূমি দখল করে নিয়েছে।
মাওবাদী আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে বাম-উগ্রবাদ বলে বিবেচিত। ২০০৪ সালে প্রধান মার্কসবাদী-লেনিনবাদী গোষ্ঠীগুলো সিপিআই (মাওবাদী)-এর সঙ্গে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। এই দলটির আদর্শিক শিকড় ১৯৪৬ সালের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কৃষক বিদ্রোহে। এই সময়ে এসে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদ নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা রণক্লান্ত বিদ্রোহ কি সত্যিই শেষ—নাকি এর দীর্ঘ, রক্তাক্ত পরিসরে কেবলই আরেকটি বিরতি?
সাংবাদিক, সমাজবিজ্ঞানী ও মাওবাদী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক এন ভেনুগোপাল বলেন, ‘এটি সাময়িক বিরতি। তবে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আন্দোলনগুলো এখন এমন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে, যা তারা মোকাবিলা করেছিল ৭০-এর দশকে নকশালদের শীর্ষ নেতৃত্ব নিহত হওয়ার সময়।’

তবে মাওবাদী বিরোধী অভিযান তদারক করা ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা এমএ গণপতি ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘মূলত, মাওবাদী আন্দোলন ছিল একটি আদর্শিক সংগ্রাম, কিন্তু সেই আদর্শ আকর্ষণ হারিয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। শিক্ষিত যুবকেরা আর আগ্রহী নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাসবরাজু নিহত হওয়ায়, তাদের মনোবল কমে গেছে। তারা তাদের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাওবাদী সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনা ২০১৩ সালের ১ হাজার ১৩৬টি থেকে ২০২৩ সালে ৫৯৪ টিতে নেমে এসেছে, অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে এসব ঘটনা সম্পর্কিত প্রাণহানি ৩৯৭ থেকে কমে ১৩৮ জন হয়েছে বা ৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে, ২০২৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হতাহতের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান তীব্র হওয়াকেই উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ছত্তিশগড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য ছিল। মাওবাদী সংশ্লিষ্ট ঘটনার মোট ৬৩ শতাংশ এবং মোট প্রাণহানির ৬৬ শতাংশ ঘটেছে এই রাজ্যে। এ ছাড়া, মোট সহিংসতার ২৭ শতাংশ হয়েছে ঝাড়খণ্ডে এবং প্রাণহানির ২৩ শতাংশ হয়েছে এই রাজ্যে। বাকি ঘটনাগুলো মহারাষ্ট্র, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে ঘটেছে।
এই পরিসংখ্যানের দিকে ইঙ্গিত করে এমএ গণপতি বলেন, ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের পতন এই আন্দোলনের ব্যাপকভাবে হীনবল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এক দশক আগে রাজ্যের পুলিশকে দুর্বল মনে করা হতো। কিন্তু এখন সেটা আর প্রতীয়মান হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘আজ কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সাহায্যে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। আধা-সামরিক বাহিনী যেখানে অবস্থান ধরে রেখেছে, সেখানে রাজ্যের বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালিয়েছে।’
গণপতি আরও বলেন, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাস্তা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। এর ফলে তারা সশস্ত্র গোপন আন্দোলনকে সমর্থন করতে কম আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছে, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষ বাইরের বিশ্বের সংস্পর্শে আসছে। মাওবাদীরাও নতুন সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে আর কত দিন দুর্গম জঙ্গলে লুকিয়ে থাকবে! জনসমর্থন ছাড়া কোনো বিদ্রোহ টিকতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক মাওবাদী নেতা আন্দোলনের পতনের পেছনে গভীর এক ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো—রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা। তিনি বলেন, ‘তারা সত্যিকারের পরিবর্তন এনেছিল তেলেঙ্গানায়। সেখানে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার, ছত্তিশগড়ে উপজাতিদের একত্র করার মতো কাজ তারা করেছিল। কিন্তু এটিকে সুসংহত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারেনি।’
এই ব্যর্থতার মূলে এক পুরোনো বিপ্লবী ধারণা—রাষ্ট্রের নাগালের বাইরে বিচ্ছিন্ন ‘মুক্তাঞ্চল’ তৈরি করা এবং ‘দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে আঘাত করার তত্ত্ব’। ওই সাবেক মাওবাদী বলেন, ‘এই পকেটগুলো ততক্ষণ কাজ করে, যতক্ষণ না রাষ্ট্র পাল্টা আঘাত করে। এরপর অঞ্চলগুলো ভেঙে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। প্রশ্ন করার সময় এসেছে যে, আজকের ভারতে কি সত্যিই বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চল থেকে একটি বিপ্লব পরিচালনা করা সম্ভব?’
ওই নেতা আরও বলেন, সিপিআই-এর (মাওবাদী) ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দলিলে মাও-যুগের কৌশল আঁকড়ে ধরা হয়েছে। তাদের নীতি হলো, ‘একটি মুক্তাঞ্চল তৈরি করা এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শহর ঘেরাও করা।’ কিন্তু এটা আর কাজ করে না এখন। দলটি এখনো কিছু বিচ্ছিন্ন পকেটে জনসমর্থন ধরে রেখেছে। মূলত পূর্ব মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ছত্তিশগড় এবং ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডের কিছু উপজাতীয় অঞ্চলে তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে তাদের কোনো শক্তিশালী সামরিক ভিত্তি নেই।
সরকারি বাহিনীর ব্যাপক অভিযান দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের ঘাঁটিগুলোতে মাওবাদীদের সামরিক অবকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে। তাদের ক্যাডার ও নেতাদের এখন নিয়মিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এটি বিদ্রোহীদের নিজেদের রক্ষা করার ক্রমবর্ধমান অক্ষমতাকেই প্রতিফলিত করে। এমএ গণপতি বিশ্বাস করেন, ভারত সরকার এই ‘কৌশলটি পুরোপুরি পরিত্যাগ না করে, পুনর্বিবেচনা করতে পারে’ এবং এটাই ‘দরকার’। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে আন্ডারগ্রাউন্ড সংগ্রামের একটি জায়গা আছে। তবে ‘আসল চ্যালেঞ্জ হলো এটিকে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে মেশানো।’
ভেনুগোপালও অদূর ভবিষ্যতে মাওবাদীদের ‘অর্থপূর্ণ পাল্টা লড়াই’ করার সম্ভাবনা কম দেখেন। তিনি যুক্তি দেন, এখন ভিন্ন একটি পদ্ধতির সময় এসেছে, সেটি হলো আলোচনা। তিনি বলেন, ‘তাদের এখন আলোচনায় বসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, হয়তো শর্তহীনভাবে বা শর্তগুলো জানিয়ে সরকারকে সেগুলো বিবেচনা করতে বলা উচিত। অকারণে নিজেদের ক্যাডারদের উদ্দেশ্যহীনভাবে বলি না দিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার এটাই সময়।’
তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পায় মাওবাদীরা। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করেছে। ১০টি ছোট বামপন্থী দলও একই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি মাওবাদী নেতা ও ক্যাডারদের রক্ষা করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে অতীতের সংগ্রামের কারণে মাওবাদী আন্দোলন এখনো এই রাজ্যগুলোর কিছু অংশে সামাজিক বৈধতার দাবি রাখে। নাগরিক সমাজের কর্মীরাও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। কলকাতার অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটসে সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর বলেন, ‘আমরা অন্যান্য নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীর সঙ্গে দুই ধাপের প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছি—প্রথমে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং এরপর শান্তি আলোচনা।’
মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ কারণেই এগুলো সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু। ভেনুগোপাল মনে করেন, এটি সিপিআই (মাওবাদী)-এর টিকে থাকার মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ছত্তিশগড় ভারতের একমাত্র টিন ও বালির উৎপাদক। রাজ্যটি কয়লা, ডোলোমাইট, বক্সাইট ও উচ্চমানের লোহা আকরিকেরও প্রধান উৎস। খনিজ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে দেশের ৩৬ শতাংশ টিন, ২০ শতাংশ লোহার আকরিক, ১৮ শতাংশ কয়লা, ১১ শতাংশ ডোলোমাইট ও ৪ শতাংশ হিরা ও মার্বেল মজুত আছে। কিন্তু সংঘাতের কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি খনি কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পদগুলো আহরণে সমস্যায় পড়েছে।
ভেনুগোপাল বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ “পানি, জঙ্গল, জমি” স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মাওবাদী আন্দোলন দাবি করে যে, বনভূমি আদিবাসীদের, করপোরেশনের নয়। কিন্তু মাওবাদীরা এখন দুর্বল হওয়ায় ছত্তিশগড়ের অন্তত চারটি খনি ‘পছন্দের দরদাতাদের’ হাতে যাবে বলে সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ভেনুগোপাল মনে করেন, মাওবাদী নেতাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরোধ শেষ হবে না। নেতারা হয়তো মারা যাবেন, কিন্তু ক্ষোভ থাকবেই। যেখানেই অবিচার থাকবে, সেখানেই আন্দোলন হবে। আমরা হয়তো সেগুলোকে আর মাওবাদ বলব না। তবে সেগুলো থাকবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতে কয়েক দশকের ‘জঙ্গল বিদ্রোহ’ কি অবশেষে সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে? গত সপ্তাহে দেশটির সবচেয়ে বেশি দিন ধরে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা মাওবাদী নেতা নাম্বালা কেশবরাও ছত্রিশগড় রাজ্যে এক অভিযানে ২৬ জনসহ নিহত হয়েছেন। তিনি বাসবরাজু নামেও পরিচিত। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানকে তিন দশকের মধ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘সবচেয়ে কঠোর নিষ্পত্তিমূলক আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। এই অভিযানে এক পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারিয়েছেন।
বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের বিদ্রোহ শুরু হয়। এ কারণে পরে তারা ‘নকশাল’ নামে পরিচিত হয়। কয়েক দশক ধরে পুনর্গঠিত হয়ে মধ্য ও পূর্ব ভারতজুড়ে এক ‘রেড করিডর’ তৈরি করে এই সশস্ত্র দল। এই করিডর পূর্বে ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জেলাজুড়ে এর অবস্থান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই বিদ্রোহকে ভারতের ‘সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, কমিউনিস্ট শাসনের দাবিতে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র সংগ্রাম ২০০০ সাল থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিদ্রোহীরা বলে, তারা আদিবাসী, উপজাতি এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে এই জনগোষ্ঠীগুলোকে অবহেলা করেছে এবং ভূমি দখল করে নিয়েছে।
মাওবাদী আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে বাম-উগ্রবাদ বলে বিবেচিত। ২০০৪ সালে প্রধান মার্কসবাদী-লেনিনবাদী গোষ্ঠীগুলো সিপিআই (মাওবাদী)-এর সঙ্গে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। এই দলটির আদর্শিক শিকড় ১৯৪৬ সালের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কৃষক বিদ্রোহে। এই সময়ে এসে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদ নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা রণক্লান্ত বিদ্রোহ কি সত্যিই শেষ—নাকি এর দীর্ঘ, রক্তাক্ত পরিসরে কেবলই আরেকটি বিরতি?
সাংবাদিক, সমাজবিজ্ঞানী ও মাওবাদী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক এন ভেনুগোপাল বলেন, ‘এটি সাময়িক বিরতি। তবে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আন্দোলনগুলো এখন এমন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে, যা তারা মোকাবিলা করেছিল ৭০-এর দশকে নকশালদের শীর্ষ নেতৃত্ব নিহত হওয়ার সময়।’

তবে মাওবাদী বিরোধী অভিযান তদারক করা ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা এমএ গণপতি ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘মূলত, মাওবাদী আন্দোলন ছিল একটি আদর্শিক সংগ্রাম, কিন্তু সেই আদর্শ আকর্ষণ হারিয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। শিক্ষিত যুবকেরা আর আগ্রহী নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাসবরাজু নিহত হওয়ায়, তাদের মনোবল কমে গেছে। তারা তাদের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাওবাদী সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনা ২০১৩ সালের ১ হাজার ১৩৬টি থেকে ২০২৩ সালে ৫৯৪ টিতে নেমে এসেছে, অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে এসব ঘটনা সম্পর্কিত প্রাণহানি ৩৯৭ থেকে কমে ১৩৮ জন হয়েছে বা ৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে, ২০২৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হতাহতের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান তীব্র হওয়াকেই উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ছত্তিশগড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য ছিল। মাওবাদী সংশ্লিষ্ট ঘটনার মোট ৬৩ শতাংশ এবং মোট প্রাণহানির ৬৬ শতাংশ ঘটেছে এই রাজ্যে। এ ছাড়া, মোট সহিংসতার ২৭ শতাংশ হয়েছে ঝাড়খণ্ডে এবং প্রাণহানির ২৩ শতাংশ হয়েছে এই রাজ্যে। বাকি ঘটনাগুলো মহারাষ্ট্র, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে ঘটেছে।
এই পরিসংখ্যানের দিকে ইঙ্গিত করে এমএ গণপতি বলেন, ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের পতন এই আন্দোলনের ব্যাপকভাবে হীনবল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এক দশক আগে রাজ্যের পুলিশকে দুর্বল মনে করা হতো। কিন্তু এখন সেটা আর প্রতীয়মান হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘আজ কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সাহায্যে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। আধা-সামরিক বাহিনী যেখানে অবস্থান ধরে রেখেছে, সেখানে রাজ্যের বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালিয়েছে।’
গণপতি আরও বলেন, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাস্তা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। এর ফলে তারা সশস্ত্র গোপন আন্দোলনকে সমর্থন করতে কম আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছে, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষ বাইরের বিশ্বের সংস্পর্শে আসছে। মাওবাদীরাও নতুন সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে আর কত দিন দুর্গম জঙ্গলে লুকিয়ে থাকবে! জনসমর্থন ছাড়া কোনো বিদ্রোহ টিকতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক মাওবাদী নেতা আন্দোলনের পতনের পেছনে গভীর এক ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো—রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা। তিনি বলেন, ‘তারা সত্যিকারের পরিবর্তন এনেছিল তেলেঙ্গানায়। সেখানে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার, ছত্তিশগড়ে উপজাতিদের একত্র করার মতো কাজ তারা করেছিল। কিন্তু এটিকে সুসংহত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারেনি।’
এই ব্যর্থতার মূলে এক পুরোনো বিপ্লবী ধারণা—রাষ্ট্রের নাগালের বাইরে বিচ্ছিন্ন ‘মুক্তাঞ্চল’ তৈরি করা এবং ‘দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে আঘাত করার তত্ত্ব’। ওই সাবেক মাওবাদী বলেন, ‘এই পকেটগুলো ততক্ষণ কাজ করে, যতক্ষণ না রাষ্ট্র পাল্টা আঘাত করে। এরপর অঞ্চলগুলো ভেঙে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। প্রশ্ন করার সময় এসেছে যে, আজকের ভারতে কি সত্যিই বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চল থেকে একটি বিপ্লব পরিচালনা করা সম্ভব?’
ওই নেতা আরও বলেন, সিপিআই-এর (মাওবাদী) ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দলিলে মাও-যুগের কৌশল আঁকড়ে ধরা হয়েছে। তাদের নীতি হলো, ‘একটি মুক্তাঞ্চল তৈরি করা এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শহর ঘেরাও করা।’ কিন্তু এটা আর কাজ করে না এখন। দলটি এখনো কিছু বিচ্ছিন্ন পকেটে জনসমর্থন ধরে রেখেছে। মূলত পূর্ব মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ছত্তিশগড় এবং ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডের কিছু উপজাতীয় অঞ্চলে তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে তাদের কোনো শক্তিশালী সামরিক ভিত্তি নেই।
সরকারি বাহিনীর ব্যাপক অভিযান দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের ঘাঁটিগুলোতে মাওবাদীদের সামরিক অবকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে। তাদের ক্যাডার ও নেতাদের এখন নিয়মিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এটি বিদ্রোহীদের নিজেদের রক্ষা করার ক্রমবর্ধমান অক্ষমতাকেই প্রতিফলিত করে। এমএ গণপতি বিশ্বাস করেন, ভারত সরকার এই ‘কৌশলটি পুরোপুরি পরিত্যাগ না করে, পুনর্বিবেচনা করতে পারে’ এবং এটাই ‘দরকার’। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে আন্ডারগ্রাউন্ড সংগ্রামের একটি জায়গা আছে। তবে ‘আসল চ্যালেঞ্জ হলো এটিকে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে মেশানো।’
ভেনুগোপালও অদূর ভবিষ্যতে মাওবাদীদের ‘অর্থপূর্ণ পাল্টা লড়াই’ করার সম্ভাবনা কম দেখেন। তিনি যুক্তি দেন, এখন ভিন্ন একটি পদ্ধতির সময় এসেছে, সেটি হলো আলোচনা। তিনি বলেন, ‘তাদের এখন আলোচনায় বসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, হয়তো শর্তহীনভাবে বা শর্তগুলো জানিয়ে সরকারকে সেগুলো বিবেচনা করতে বলা উচিত। অকারণে নিজেদের ক্যাডারদের উদ্দেশ্যহীনভাবে বলি না দিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার এটাই সময়।’
তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পায় মাওবাদীরা। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করেছে। ১০টি ছোট বামপন্থী দলও একই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি মাওবাদী নেতা ও ক্যাডারদের রক্ষা করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে অতীতের সংগ্রামের কারণে মাওবাদী আন্দোলন এখনো এই রাজ্যগুলোর কিছু অংশে সামাজিক বৈধতার দাবি রাখে। নাগরিক সমাজের কর্মীরাও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। কলকাতার অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটসে সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর বলেন, ‘আমরা অন্যান্য নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীর সঙ্গে দুই ধাপের প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছি—প্রথমে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং এরপর শান্তি আলোচনা।’
মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ কারণেই এগুলো সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু। ভেনুগোপাল মনে করেন, এটি সিপিআই (মাওবাদী)-এর টিকে থাকার মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ছত্তিশগড় ভারতের একমাত্র টিন ও বালির উৎপাদক। রাজ্যটি কয়লা, ডোলোমাইট, বক্সাইট ও উচ্চমানের লোহা আকরিকেরও প্রধান উৎস। খনিজ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে দেশের ৩৬ শতাংশ টিন, ২০ শতাংশ লোহার আকরিক, ১৮ শতাংশ কয়লা, ১১ শতাংশ ডোলোমাইট ও ৪ শতাংশ হিরা ও মার্বেল মজুত আছে। কিন্তু সংঘাতের কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি খনি কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পদগুলো আহরণে সমস্যায় পড়েছে।
ভেনুগোপাল বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ “পানি, জঙ্গল, জমি” স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মাওবাদী আন্দোলন দাবি করে যে, বনভূমি আদিবাসীদের, করপোরেশনের নয়। কিন্তু মাওবাদীরা এখন দুর্বল হওয়ায় ছত্তিশগড়ের অন্তত চারটি খনি ‘পছন্দের দরদাতাদের’ হাতে যাবে বলে সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ভেনুগোপাল মনে করেন, মাওবাদী নেতাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরোধ শেষ হবে না। নেতারা হয়তো মারা যাবেন, কিন্তু ক্ষোভ থাকবেই। যেখানেই অবিচার থাকবে, সেখানেই আন্দোলন হবে। আমরা হয়তো সেগুলোকে আর মাওবাদ বলব না। তবে সেগুলো থাকবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারতে কয়েক দশকের ‘জঙ্গল বিদ্রোহ’ কি অবশেষে সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে? গত সপ্তাহে দেশটির সবচেয়ে বেশি দিন ধরে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা মাওবাদী নেতা নাম্বালা কেশবরাও ছত্রিশগড় রাজ্যে এক অভিযানে ২৬ জনসহ নিহত হয়েছেন। তিনি বাসবরাজু নামেও পরিচিত। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানকে তিন দশকের মধ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘সবচেয়ে কঠোর নিষ্পত্তিমূলক আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। এই অভিযানে এক পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারিয়েছেন।
বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে মাওবাদীদের বিদ্রোহ শুরু হয়। এ কারণে পরে তারা ‘নকশাল’ নামে পরিচিত হয়। কয়েক দশক ধরে পুনর্গঠিত হয়ে মধ্য ও পূর্ব ভারতজুড়ে এক ‘রেড করিডর’ তৈরি করে এই সশস্ত্র দল। এই করিডর পূর্বে ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিমে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জেলাজুড়ে এর অবস্থান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই বিদ্রোহকে ভারতের ‘সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, কমিউনিস্ট শাসনের দাবিতে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র সংগ্রাম ২০০০ সাল থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিদ্রোহীরা বলে, তারা আদিবাসী, উপজাতি এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের অধিকারের জন্য লড়ছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে এই জনগোষ্ঠীগুলোকে অবহেলা করেছে এবং ভূমি দখল করে নিয়েছে।
মাওবাদী আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে বাম-উগ্রবাদ বলে বিবেচিত। ২০০৪ সালে প্রধান মার্কসবাদী-লেনিনবাদী গোষ্ঠীগুলো সিপিআই (মাওবাদী)-এর সঙ্গে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। এই দলটির আদর্শিক শিকড় ১৯৪৬ সালের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কৃষক বিদ্রোহে। এই সময়ে এসে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদ নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা রণক্লান্ত বিদ্রোহ কি সত্যিই শেষ—নাকি এর দীর্ঘ, রক্তাক্ত পরিসরে কেবলই আরেকটি বিরতি?
সাংবাদিক, সমাজবিজ্ঞানী ও মাওবাদী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষক এন ভেনুগোপাল বলেন, ‘এটি সাময়িক বিরতি। তবে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আন্দোলনগুলো এখন এমন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে, যা তারা মোকাবিলা করেছিল ৭০-এর দশকে নকশালদের শীর্ষ নেতৃত্ব নিহত হওয়ার সময়।’

তবে মাওবাদী বিরোধী অভিযান তদারক করা ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা এমএ গণপতি ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘মূলত, মাওবাদী আন্দোলন ছিল একটি আদর্শিক সংগ্রাম, কিন্তু সেই আদর্শ আকর্ষণ হারিয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। শিক্ষিত যুবকেরা আর আগ্রহী নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাসবরাজু নিহত হওয়ায়, তাদের মনোবল কমে গেছে। তারা তাদের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাওবাদী সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনা ২০১৩ সালের ১ হাজার ১৩৬টি থেকে ২০২৩ সালে ৫৯৪ টিতে নেমে এসেছে, অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে এসব ঘটনা সম্পর্কিত প্রাণহানি ৩৯৭ থেকে কমে ১৩৮ জন হয়েছে বা ৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে, ২০২৩ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হতাহতের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান তীব্র হওয়াকেই উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ছত্তিশগড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য ছিল। মাওবাদী সংশ্লিষ্ট ঘটনার মোট ৬৩ শতাংশ এবং মোট প্রাণহানির ৬৬ শতাংশ ঘটেছে এই রাজ্যে। এ ছাড়া, মোট সহিংসতার ২৭ শতাংশ হয়েছে ঝাড়খণ্ডে এবং প্রাণহানির ২৩ শতাংশ হয়েছে এই রাজ্যে। বাকি ঘটনাগুলো মহারাষ্ট্র, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে ঘটেছে।
এই পরিসংখ্যানের দিকে ইঙ্গিত করে এমএ গণপতি বলেন, ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের পতন এই আন্দোলনের ব্যাপকভাবে হীনবল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এক দশক আগে রাজ্যের পুলিশকে দুর্বল মনে করা হতো। কিন্তু এখন সেটা আর প্রতীয়মান হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘আজ কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সাহায্যে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। আধা-সামরিক বাহিনী যেখানে অবস্থান ধরে রেখেছে, সেখানে রাজ্যের বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালিয়েছে।’
গণপতি আরও বলেন, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাস্তা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। এর ফলে তারা সশস্ত্র গোপন আন্দোলনকে সমর্থন করতে কম আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছে, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষ বাইরের বিশ্বের সংস্পর্শে আসছে। মাওবাদীরাও নতুন সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে আর কত দিন দুর্গম জঙ্গলে লুকিয়ে থাকবে! জনসমর্থন ছাড়া কোনো বিদ্রোহ টিকতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক মাওবাদী নেতা আন্দোলনের পতনের পেছনে গভীর এক ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো—রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা। তিনি বলেন, ‘তারা সত্যিকারের পরিবর্তন এনেছিল তেলেঙ্গানায়। সেখানে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার, ছত্তিশগড়ে উপজাতিদের একত্র করার মতো কাজ তারা করেছিল। কিন্তু এটিকে সুসংহত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারেনি।’
এই ব্যর্থতার মূলে এক পুরোনো বিপ্লবী ধারণা—রাষ্ট্রের নাগালের বাইরে বিচ্ছিন্ন ‘মুক্তাঞ্চল’ তৈরি করা এবং ‘দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে আঘাত করার তত্ত্ব’। ওই সাবেক মাওবাদী বলেন, ‘এই পকেটগুলো ততক্ষণ কাজ করে, যতক্ষণ না রাষ্ট্র পাল্টা আঘাত করে। এরপর অঞ্চলগুলো ভেঙে পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। প্রশ্ন করার সময় এসেছে যে, আজকের ভারতে কি সত্যিই বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চল থেকে একটি বিপ্লব পরিচালনা করা সম্ভব?’
ওই নেতা আরও বলেন, সিপিআই-এর (মাওবাদী) ২০০৭ সালের রাজনৈতিক দলিলে মাও-যুগের কৌশল আঁকড়ে ধরা হয়েছে। তাদের নীতি হলো, ‘একটি মুক্তাঞ্চল তৈরি করা এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শহর ঘেরাও করা।’ কিন্তু এটা আর কাজ করে না এখন। দলটি এখনো কিছু বিচ্ছিন্ন পকেটে জনসমর্থন ধরে রেখেছে। মূলত পূর্ব মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ছত্তিশগড় এবং ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডের কিছু উপজাতীয় অঞ্চলে তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে তাদের কোনো শক্তিশালী সামরিক ভিত্তি নেই।
সরকারি বাহিনীর ব্যাপক অভিযান দক্ষিণ ছত্তিশগড়ের ঘাঁটিগুলোতে মাওবাদীদের সামরিক অবকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করেছে। তাদের ক্যাডার ও নেতাদের এখন নিয়মিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এটি বিদ্রোহীদের নিজেদের রক্ষা করার ক্রমবর্ধমান অক্ষমতাকেই প্রতিফলিত করে। এমএ গণপতি বিশ্বাস করেন, ভারত সরকার এই ‘কৌশলটি পুরোপুরি পরিত্যাগ না করে, পুনর্বিবেচনা করতে পারে’ এবং এটাই ‘দরকার’। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে আন্ডারগ্রাউন্ড সংগ্রামের একটি জায়গা আছে। তবে ‘আসল চ্যালেঞ্জ হলো এটিকে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে মেশানো।’
ভেনুগোপালও অদূর ভবিষ্যতে মাওবাদীদের ‘অর্থপূর্ণ পাল্টা লড়াই’ করার সম্ভাবনা কম দেখেন। তিনি যুক্তি দেন, এখন ভিন্ন একটি পদ্ধতির সময় এসেছে, সেটি হলো আলোচনা। তিনি বলেন, ‘তাদের এখন আলোচনায় বসা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, হয়তো শর্তহীনভাবে বা শর্তগুলো জানিয়ে সরকারকে সেগুলো বিবেচনা করতে বলা উচিত। অকারণে নিজেদের ক্যাডারদের উদ্দেশ্যহীনভাবে বলি না দিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার এটাই সময়।’
তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পায় মাওবাদীরা। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করেছে। ১০টি ছোট বামপন্থী দলও একই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি মাওবাদী নেতা ও ক্যাডারদের রক্ষা করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে অতীতের সংগ্রামের কারণে মাওবাদী আন্দোলন এখনো এই রাজ্যগুলোর কিছু অংশে সামাজিক বৈধতার দাবি রাখে। নাগরিক সমাজের কর্মীরাও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। কলকাতার অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটসে সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর বলেন, ‘আমরা অন্যান্য নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীর সঙ্গে দুই ধাপের প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছি—প্রথমে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং এরপর শান্তি আলোচনা।’
মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ কারণেই এগুলো সম্পত্তি নিয়ে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু। ভেনুগোপাল মনে করেন, এটি সিপিআই (মাওবাদী)-এর টিকে থাকার মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ছত্তিশগড় ভারতের একমাত্র টিন ও বালির উৎপাদক। রাজ্যটি কয়লা, ডোলোমাইট, বক্সাইট ও উচ্চমানের লোহা আকরিকেরও প্রধান উৎস। খনিজ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে দেশের ৩৬ শতাংশ টিন, ২০ শতাংশ লোহার আকরিক, ১৮ শতাংশ কয়লা, ১১ শতাংশ ডোলোমাইট ও ৪ শতাংশ হিরা ও মার্বেল মজুত আছে। কিন্তু সংঘাতের কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দেশি-বিদেশি খনি কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পদগুলো আহরণে সমস্যায় পড়েছে।
ভেনুগোপাল বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ “পানি, জঙ্গল, জমি” স্লোগানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মাওবাদী আন্দোলন দাবি করে যে, বনভূমি আদিবাসীদের, করপোরেশনের নয়। কিন্তু মাওবাদীরা এখন দুর্বল হওয়ায় ছত্তিশগড়ের অন্তত চারটি খনি ‘পছন্দের দরদাতাদের’ হাতে যাবে বলে সরকারি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ভেনুগোপাল মনে করেন, মাওবাদী নেতাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরোধ শেষ হবে না। নেতারা হয়তো মারা যাবেন, কিন্তু ক্ষোভ থাকবেই। যেখানেই অবিচার থাকবে, সেখানেই আন্দোলন হবে। আমরা হয়তো সেগুলোকে আর মাওবাদ বলব না। তবে সেগুলো থাকবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
৭ ঘণ্টা আগেতাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ক্যারিবীয় সাগরে কয়েকটা স্পিডবোট ধ্বংস করার জন্য নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমানবাহী রণতরী, এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান এবং টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্রে ভরা রণতরী–যুদ্ধজাহাজের বহর দরকার পড়ে না। তারপরও ইউরোপ থেকে এগিয়ে আসছে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশাল রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। এটি এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থানরত শক্তিশালী মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে জোরালো হচ্ছে ধারণা—ড্রাগ চোরাচালান দমনের নামে ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বর্তমানে এশিয়া সফরে রয়েছেন। যেখানে তিনি এরই মধ্যে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কৃতিত্ব নিয়েছেন। চীনের সঙ্গেও তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্য দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মধ্যপ্রাচ্যের গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল হত্যাকাণ্ড বন্ধে এক অস্পষ্ট ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব তিনি নিয়েছেন।
এমনকি আজারবাইজান–আর্মেনিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈরিতার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে ‘সফল’ মধ্যস্থতার দাবি করেছেন তিনি। আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে।
নতুন শতাব্দীর ‘গানবোট কূটনীতির’ প্রথম লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। ফোর্ডের উপস্থিতি তাঁকে ইঙ্গিত দিচ্ছে, হয় তাঁকে সরে দাঁড়াতে হবে, নয় সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করুক। আবার এটাও সম্ভব, যুদ্ধজাহাজের এই উপস্থিতি চোরাচালানবিরোধী অভিযানের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং শাসক পরিবর্তনের উপায়।
মার্কিন বিরোধী দলীয় নেতা ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক কেলি এবিসি নিউজে বলেন, ‘কেউ তো আর বেহুদা কোনো যুদ্ধজাহাজের বহরকে অকারণে ওদিক থেকে টেনে ক্যারিবীয়তে নিয়ে আসে না। এর অর্থ হলো—হয় ভয় দেখাবে, নয়তো ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ শুরু করবে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ভেনেজুয়েলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিলসহ নানা মাদকের মূল পথ। যদিও বাস্তবে দেশটিতে মাদক উৎপাদন প্রায় নেই বললেই চলে, আর বড় রুটগুলো লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, মাদুরো নিজেই নাকি এসব চোরাচালান নেটওয়ার্কের প্রধান। তারা এমনকি গ্যাং সদস্যদের ‘অবৈধ যোদ্ধা’ ঘোষণা করেছে, যাতে আইনগতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার পথ খোলা যায়।
সিএনএন-কে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ও পাচার পথে হামলার পরিকল্পনা করছেন, যদিও তিনি কূটনীতির দরজাও পুরোপুরি বন্ধ করেননি। সাম্প্রতিক কিছু নৌ-অভিযানে তিনি বেশ উল্লসিতও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের মেরে ফেলব, ওরা মারা যাবে।’
এই অবস্থায় ট্রাম্প এশিয়া সফরে থাকলেও লাতিন আমেরিকার আকাশে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে তাঁর প্রশাসন ও মার্কিন সশস্ত্রবাহিনী। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সিবিএস নিউজকে বলেন, ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার সম্ভাবনাও ‘খুবই বাস্তবসম্মত।’
তিনি জানান, ট্রাম্প তাঁকে বলেছেন—‘ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের’ বিষয়ে কংগ্রেসকে ব্রিফ করা হবে। গ্রাহামের ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝে ফেলেছেন, মাদুরো একজন অভিযুক্ত মাদক চোরাচালানকারী। এখন সময় হয়েছে তাঁকে সরানোর।’
তবে ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলা আইনগত ও ভূরাজনৈতিকভাবে বড় প্রশ্ন তুলবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো সেই ১০টি ধ্বংস করার কৃতিত্ব প্রশাসন নিলেও সেগুলোতে থাকা মাদক বা অপরাধের প্রমাণ প্রকাশ করেনি। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, ট্রাম্প যদি একতরফাভাবে লাতিন আমেরিকায় যুদ্ধ শুরু করেন, তাহলে সেটি হবে নির্বাহী ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। গ্রাহাম অবশ্য মনে করেন, প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের অনুমতি দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘নারকো-কার্টেলদের ক্ষেত্রে খেলার নিয়ম বদলে গেছে। আমরা ওদের শেষ করে দেব।’
কেন্টাকির সিনেটর র্যান্ড পল এনবিসি নিউজে বলেন, ‘যখন কাউকে হত্যা করা হয়, তখন অন্তত জানা উচিত কাকে হত্যা করা হচ্ছে। কোনো ঘোষণা ছাড়া যুদ্ধ মানে আপনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না এনেই তাঁকে হত্যা করছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুমতি ছাড়া ৬০ দিন পর্যন্ত সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে প্রথম নৌ-আক্রমণ ধরা হলে সেই সময়সীমা নভেম্বরের শুরুতেই শেষ হবে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়ান গুডম্যান বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলা কেবল তখনই বৈধ হবে, যদি সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার জবাব হয়, প্রয়োজনীয় ও আনুপাতিক হয়, এবং কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। এর কোনোটিই এখনো হয়নি।’
ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিবিরকেও বিব্রত করতে পারে। কারণ তাঁরা বিদেশি সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতিতেই তাঁকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ট্রাম্প তাঁর সরকারি কার্যক্রমে দায়মুক্তি, আর রিপাবলিকান কংগ্রেস তাঁর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাকে প্রশ্ন করছে না।
ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ হয়তো মাদুরোর শাসন থেকে মুক্তি চায়, কিন্তু সামরিক অভিযান বেসামরিক প্রাণহানি ও রাজনৈতিক ঐক্যের ঝুঁকি বাড়াবে। ইতিহাস বলে—ইরাক, লিবিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকায় সিআইএ–সমর্থিত অভ্যুত্থানগুলো খুব কমই সাফল্য এনেছে। নতুন এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠানে’ হস্তক্ষেপের অভিযোগ আরও ঘনীভূত করবে। ট্রাম্প এখন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকেও চাপে রেখেছেন এবং আর্জেন্টিনার নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। ব্রাজিলের প্রতিও রয়েছে তাঁর নজর।
এমন হস্তক্ষেপ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অন্য দেশে সরকার বদল ঘটাবে—ঠিক সেই সময়, যখন চীন ও রাশিয়া নিজ নিজ প্রভাববলয় গড়ছে। এতে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সরাসরি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়—জোট, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা মুক্ত বাণিজ্যের তোয়াক্কা না করেই। মাদক প্রবাহ ঠেকানো ভালো উদ্দেশ্য বটে, কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল আসে প্রধানত মেক্সিকো ও চীন থেকে, ভেনেজুয়েলা থেকে নয়।
তবু মাদুরোকে সরাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে ভেনেজুয়েলার অভিবাসন কমতে পারে, যা ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লক্ষ্যেও সহায়ক। তাই একে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর পরিপন্থী বলা ভুল হবে—বরং এটি তারই সম্প্রসারণ। তবু ঝুঁকি কম নয়। ট্রাম্প হয়তো ইরাকের মতো দীর্ঘ যুদ্ধ এড়াতে চান, কিন্তু তাঁর এই নীতি দেখায়—তিনি ক্ষমতার সীমা মানতে আগ্রহী নন।
ট্রাম্প প্রায়ই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলির প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি শুল্কনীতি ছাড়াও স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের মাধ্যমে পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম ও ফিলিপাইন দখল করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনকে অনেকেই জেমস মনরোর সময়কার মতবাদ—‘মনরো ডকট্রিন’-এর আধুনিক সংস্করণ হিসেবে দেখছেন।
এই নতুন ‘মেগা-মনরো ডকট্রিনে’ ইউরোপের জায়গায় এসেছে চীন ও কিছুটা রাশিয়া। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মধ্য আমেরিকায় চীনের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাব রুখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বছর শুরুর দিকে পানামা সফর করে দেশটিকে সতর্ক করেছিলেন, যেন চীনকে পানামা খালে প্রভাব বিস্তার করতে না দেওয়া হয়।
কিউবান অভিবাসীর সন্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও দীর্ঘদিন ধরেই লাতিন আমেরিকার বামপন্থী শাসকদের কট্টর সমালোচক। এখন তাঁর অবস্থান মিলেছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আরেক শক্তিশালী নীতিনির্ধারক স্টিফেন মিলারের সঙ্গে। তিনিও অভিবাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সফল হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এটি কি পুরো অঞ্চলের বামপন্থী সরকারগুলোকেও টলিয়ে দেবে? অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটা ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক বৃহত্তর আদর্শিক পুনর্গঠন। তবে চীনা প্রভাব ঠেকানোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে বলেই সমালোচনা উঠছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ, দেশটি তাঁর বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার মামলা করেছে। তিনি আর্জেন্টিনাকে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে শর্ত রেখেছেন—ভোটাররা যেন তাঁর বন্ধু ও ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’—ঘনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের দলকে বেছে নেয়। রয়টার্স জানায়, নির্বাচনে মিলেইয়ের দল ব্যাপক ব্যবধানে জিতেছে।
একই সঙ্গে ট্রাম্প এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলেকে ‘নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরছেন, এমনকি অভিবাসীদের পাঠিয়েছেন তাঁর কুখ্যাত জেলে। কলম্বিয়ার লিবারেল নেতা পেত্রোর প্রতিও তাঁর বৈরিতা প্রকাশ্য। সব মিলিয়ে, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা মানে তেলসমৃদ্ধ এক দেশ আবার মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হওয়া—যা ট্রাম্পের বহু উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তা-ই ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি মাদুরোর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি। সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া এই নেত্রী স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও তাঁর মিল দেখা যায়। ফক্স নিউজে তিনি বলেন, ‘আমরাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম, মাদুরোই আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই যুদ্ধ থামাচ্ছেন।’
তবে ট্রাম্প যে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এসব করছেন, তা বলা কঠিন। কারণ, তিনিই নিজ দেশে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর লাতিন আমেরিকা নীতি এখন নতুন করে গণতন্ত্রের সীমারেখা মুছে দিচ্ছে।
সিএনএন অবলম্বনে লিখেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ক্যারিবীয় সাগরে কয়েকটা স্পিডবোট ধ্বংস করার জন্য নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমানবাহী রণতরী, এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান এবং টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্রে ভরা রণতরী–যুদ্ধজাহাজের বহর দরকার পড়ে না। তারপরও ইউরোপ থেকে এগিয়ে আসছে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশাল রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। এটি এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থানরত শক্তিশালী মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে জোরালো হচ্ছে ধারণা—ড্রাগ চোরাচালান দমনের নামে ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বর্তমানে এশিয়া সফরে রয়েছেন। যেখানে তিনি এরই মধ্যে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কৃতিত্ব নিয়েছেন। চীনের সঙ্গেও তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্য দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মধ্যপ্রাচ্যের গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল হত্যাকাণ্ড বন্ধে এক অস্পষ্ট ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব তিনি নিয়েছেন।
এমনকি আজারবাইজান–আর্মেনিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈরিতার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে ‘সফল’ মধ্যস্থতার দাবি করেছেন তিনি। আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে।
নতুন শতাব্দীর ‘গানবোট কূটনীতির’ প্রথম লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। ফোর্ডের উপস্থিতি তাঁকে ইঙ্গিত দিচ্ছে, হয় তাঁকে সরে দাঁড়াতে হবে, নয় সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করুক। আবার এটাও সম্ভব, যুদ্ধজাহাজের এই উপস্থিতি চোরাচালানবিরোধী অভিযানের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং শাসক পরিবর্তনের উপায়।
মার্কিন বিরোধী দলীয় নেতা ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক কেলি এবিসি নিউজে বলেন, ‘কেউ তো আর বেহুদা কোনো যুদ্ধজাহাজের বহরকে অকারণে ওদিক থেকে টেনে ক্যারিবীয়তে নিয়ে আসে না। এর অর্থ হলো—হয় ভয় দেখাবে, নয়তো ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ শুরু করবে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ভেনেজুয়েলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিলসহ নানা মাদকের মূল পথ। যদিও বাস্তবে দেশটিতে মাদক উৎপাদন প্রায় নেই বললেই চলে, আর বড় রুটগুলো লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, মাদুরো নিজেই নাকি এসব চোরাচালান নেটওয়ার্কের প্রধান। তারা এমনকি গ্যাং সদস্যদের ‘অবৈধ যোদ্ধা’ ঘোষণা করেছে, যাতে আইনগতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার পথ খোলা যায়।
সিএনএন-কে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ও পাচার পথে হামলার পরিকল্পনা করছেন, যদিও তিনি কূটনীতির দরজাও পুরোপুরি বন্ধ করেননি। সাম্প্রতিক কিছু নৌ-অভিযানে তিনি বেশ উল্লসিতও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের মেরে ফেলব, ওরা মারা যাবে।’
এই অবস্থায় ট্রাম্প এশিয়া সফরে থাকলেও লাতিন আমেরিকার আকাশে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে তাঁর প্রশাসন ও মার্কিন সশস্ত্রবাহিনী। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সিবিএস নিউজকে বলেন, ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার সম্ভাবনাও ‘খুবই বাস্তবসম্মত।’
তিনি জানান, ট্রাম্প তাঁকে বলেছেন—‘ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের’ বিষয়ে কংগ্রেসকে ব্রিফ করা হবে। গ্রাহামের ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝে ফেলেছেন, মাদুরো একজন অভিযুক্ত মাদক চোরাচালানকারী। এখন সময় হয়েছে তাঁকে সরানোর।’
তবে ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলা আইনগত ও ভূরাজনৈতিকভাবে বড় প্রশ্ন তুলবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো সেই ১০টি ধ্বংস করার কৃতিত্ব প্রশাসন নিলেও সেগুলোতে থাকা মাদক বা অপরাধের প্রমাণ প্রকাশ করেনি। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, ট্রাম্প যদি একতরফাভাবে লাতিন আমেরিকায় যুদ্ধ শুরু করেন, তাহলে সেটি হবে নির্বাহী ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। গ্রাহাম অবশ্য মনে করেন, প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের অনুমতি দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘নারকো-কার্টেলদের ক্ষেত্রে খেলার নিয়ম বদলে গেছে। আমরা ওদের শেষ করে দেব।’
কেন্টাকির সিনেটর র্যান্ড পল এনবিসি নিউজে বলেন, ‘যখন কাউকে হত্যা করা হয়, তখন অন্তত জানা উচিত কাকে হত্যা করা হচ্ছে। কোনো ঘোষণা ছাড়া যুদ্ধ মানে আপনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না এনেই তাঁকে হত্যা করছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুমতি ছাড়া ৬০ দিন পর্যন্ত সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে প্রথম নৌ-আক্রমণ ধরা হলে সেই সময়সীমা নভেম্বরের শুরুতেই শেষ হবে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়ান গুডম্যান বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলা কেবল তখনই বৈধ হবে, যদি সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার জবাব হয়, প্রয়োজনীয় ও আনুপাতিক হয়, এবং কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। এর কোনোটিই এখনো হয়নি।’
ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিবিরকেও বিব্রত করতে পারে। কারণ তাঁরা বিদেশি সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতিতেই তাঁকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ট্রাম্প তাঁর সরকারি কার্যক্রমে দায়মুক্তি, আর রিপাবলিকান কংগ্রেস তাঁর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাকে প্রশ্ন করছে না।
ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ হয়তো মাদুরোর শাসন থেকে মুক্তি চায়, কিন্তু সামরিক অভিযান বেসামরিক প্রাণহানি ও রাজনৈতিক ঐক্যের ঝুঁকি বাড়াবে। ইতিহাস বলে—ইরাক, লিবিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকায় সিআইএ–সমর্থিত অভ্যুত্থানগুলো খুব কমই সাফল্য এনেছে। নতুন এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠানে’ হস্তক্ষেপের অভিযোগ আরও ঘনীভূত করবে। ট্রাম্প এখন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকেও চাপে রেখেছেন এবং আর্জেন্টিনার নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। ব্রাজিলের প্রতিও রয়েছে তাঁর নজর।
এমন হস্তক্ষেপ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অন্য দেশে সরকার বদল ঘটাবে—ঠিক সেই সময়, যখন চীন ও রাশিয়া নিজ নিজ প্রভাববলয় গড়ছে। এতে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সরাসরি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়—জোট, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা মুক্ত বাণিজ্যের তোয়াক্কা না করেই। মাদক প্রবাহ ঠেকানো ভালো উদ্দেশ্য বটে, কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল আসে প্রধানত মেক্সিকো ও চীন থেকে, ভেনেজুয়েলা থেকে নয়।
তবু মাদুরোকে সরাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে ভেনেজুয়েলার অভিবাসন কমতে পারে, যা ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লক্ষ্যেও সহায়ক। তাই একে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর পরিপন্থী বলা ভুল হবে—বরং এটি তারই সম্প্রসারণ। তবু ঝুঁকি কম নয়। ট্রাম্প হয়তো ইরাকের মতো দীর্ঘ যুদ্ধ এড়াতে চান, কিন্তু তাঁর এই নীতি দেখায়—তিনি ক্ষমতার সীমা মানতে আগ্রহী নন।
ট্রাম্প প্রায়ই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলির প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি শুল্কনীতি ছাড়াও স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের মাধ্যমে পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম ও ফিলিপাইন দখল করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনকে অনেকেই জেমস মনরোর সময়কার মতবাদ—‘মনরো ডকট্রিন’-এর আধুনিক সংস্করণ হিসেবে দেখছেন।
এই নতুন ‘মেগা-মনরো ডকট্রিনে’ ইউরোপের জায়গায় এসেছে চীন ও কিছুটা রাশিয়া। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মধ্য আমেরিকায় চীনের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাব রুখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বছর শুরুর দিকে পানামা সফর করে দেশটিকে সতর্ক করেছিলেন, যেন চীনকে পানামা খালে প্রভাব বিস্তার করতে না দেওয়া হয়।
কিউবান অভিবাসীর সন্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও দীর্ঘদিন ধরেই লাতিন আমেরিকার বামপন্থী শাসকদের কট্টর সমালোচক। এখন তাঁর অবস্থান মিলেছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আরেক শক্তিশালী নীতিনির্ধারক স্টিফেন মিলারের সঙ্গে। তিনিও অভিবাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সফল হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এটি কি পুরো অঞ্চলের বামপন্থী সরকারগুলোকেও টলিয়ে দেবে? অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটা ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক বৃহত্তর আদর্শিক পুনর্গঠন। তবে চীনা প্রভাব ঠেকানোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে বলেই সমালোচনা উঠছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ, দেশটি তাঁর বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার মামলা করেছে। তিনি আর্জেন্টিনাকে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে শর্ত রেখেছেন—ভোটাররা যেন তাঁর বন্ধু ও ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’—ঘনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের দলকে বেছে নেয়। রয়টার্স জানায়, নির্বাচনে মিলেইয়ের দল ব্যাপক ব্যবধানে জিতেছে।
একই সঙ্গে ট্রাম্প এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলেকে ‘নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরছেন, এমনকি অভিবাসীদের পাঠিয়েছেন তাঁর কুখ্যাত জেলে। কলম্বিয়ার লিবারেল নেতা পেত্রোর প্রতিও তাঁর বৈরিতা প্রকাশ্য। সব মিলিয়ে, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা মানে তেলসমৃদ্ধ এক দেশ আবার মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হওয়া—যা ট্রাম্পের বহু উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তা-ই ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি মাদুরোর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি। সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া এই নেত্রী স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও তাঁর মিল দেখা যায়। ফক্স নিউজে তিনি বলেন, ‘আমরাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম, মাদুরোই আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই যুদ্ধ থামাচ্ছেন।’
তবে ট্রাম্প যে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এসব করছেন, তা বলা কঠিন। কারণ, তিনিই নিজ দেশে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর লাতিন আমেরিকা নীতি এখন নতুন করে গণতন্ত্রের সীমারেখা মুছে দিচ্ছে।
সিএনএন অবলম্বনে লিখেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
২৮ মে ২০২৫তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
৩ দিন আগেআবদুল বাছেদ, ঢাকা
তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ। এই অবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নৌবহর ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজ প্রায় প্রতিদিন মুখোমুখি অবস্থায় থাকে। গত মাসে একবার দুটি চীনা যুদ্ধজাহাজ মাত্র ১৫০ মিটারের দূরত্বে চলে এসেছিল।
গত ২ আগস্ট তাইওয়ানে ‘জিরো ডে অ্যাটাক’ নামে একটি ডিস্টোপিয়ান টেভি সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন শুরু করতে পারে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ষড়যন্ত্র, গণমাধ্যমে অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রভাব খাটানো—সবকিছুই এতে বিশ্লেষণধর্মীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একটি কল্পকাহিনি হলেও সাম্প্রতিক বাস্তব ঘটনাগুলোর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
১০ সিজনের বহুল প্রচারিত ও প্রশংসিত এই সিরিজের নির্মাতা চেং হসিন-মেই। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন টাইমকে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় গেলে আপনি সত্যিই সেই উত্তেজনা টের পাবেন। চীন কোনো না কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েলিংটন কু মনে করছেন, চীনা সেনাবাহিনী (পিএলএ) যেকোনো সামরিক মহড়াকে সত্যিকারের আগ্রাসনে পরিণত করতে পারে। এমন সম্ভাবনা এখন উড়িয়ে দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই হুমকি আর চ্যালেঞ্জই এখন তাইওয়ানের সামনে।
চীন বলছে, এটি চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময়, আর তাইওয়ান সরকারের ভাষায়, আসন্ন আগ্রাসনের সংকেত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই চীন তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বৈদেশিক মনোযোগের বিভ্রান্তি দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হয়তো তার আগেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। তাইওয়ান ইস্যুতে ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে আমেরিকা তাইওয়ানকে একা ছাড়বে না।
এখন ভাবুন, চীন তাইওয়ানে আক্রমণ চালিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপ দেশটির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পেন্টাগনের প্রচলিত যুদ্ধনীতি মেনে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী হাজার হাজার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে চীনের জাহাজ, কমান্ড সেন্টার ও লজিস্টিক ঘাঁটির দিকে। প্রথম দফার হামলাতেই ৩৩ হাজারেরও বেশি নিখুঁত লক্ষ্যভেদী অস্ত্র সাড়ে ৮ হাজারের বেশি টার্গেটে আঘাত হেনেছে। সাইবার হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চীনের সামরিক নেটওয়ার্ক, ভেঙে পড়ছে নেতৃত্ব। ফলে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে বেইজিং হয় পিছু হটবে, নয়তো নিরুপায় পরাজয় মেনে নেবে।
কিন্তু যদি মনে করেন, এমনটি হবেই হবে, তাহলে ভুল করছেন। কারণ চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংসের পর যখন একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়বে বেইজিং, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ। তখন দেশটি ভিন্নপথে হাঁটতে পারে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভার্টিক্যাল এস্কেলেশন বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের। চীন হয়তো মার্কিন সমুদ্রসীমায় একটি পারমাণবিক পরীক্ষামূলক হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিতে যে এখানেই থেমে যাও। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াশিংটন কি এমন পদক্ষেপকে পারমাণবিক হামলার পূর্বঘোষণা বলে ধরে নেবে না?
এই বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে শুধু চীনের পারমাণবিক নীতির কারণে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব যুদ্ধধারণার ফলেও। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার চীনের নেই। তাই বেইজিং হয়তো এখনো মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র আগে পারমাণবিক হামলা চালালে তারা পাল্টা আঘাত করার মতো সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সক্রিয় পারমাণবিক বোমা ছিল, চীনের সেখানে ছিল মাত্র ৬০০। এই পশ্চাৎপদতার কারণে চীনা নেতারা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বড় পরাজয় ঠেকাতে।
আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, চীনের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দ্বৈত-ক্ষমতাসম্পন্ন; অর্থাৎ একই লঞ্চার থেকে কখনো প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র, আবার কখনো পারমাণবিক ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব লঞ্চারে হামলা চালায়, বেইজিং সেটাকে তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তির ওপর আঘাত হিসেবে দেখতে পারে। এটি পাল্টা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে।
বিশেষ করে ডিএফ-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো এই জটিলতা বাড়ায়। একই ঘাঁটিতে প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড থাকে এবং প্রশিক্ষণে সৈন্যরা প্রথমে প্রচলিত হামলার মহড়া দেয়, পরে সেটি পারমাণবিক ওয়ারহেডে পরিবর্তন করে। যুক্তরাষ্ট্র এসব ঘাঁটিতে আঘাত হানলে চীন সেটিকে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে পারে। একেই বলে এনট্যাঙ্গলমেন্ট প্রবলেম বা এক হামলার দ্বৈত ব্যাখ্যা, যা পারমাণবিক সংঘাত ডেকে আনতে পারে।
এখানে মার্কিন সামরিক পরিকল্পকেরা পড়ে যান এক দোটানায়। তাঁরা যত দ্রুত ও নিশ্চিত বিজয়ের চিন্তায় যুদ্ধের কৌশল সাজাবেন, তত বেশি পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকিতে পড়ে যান। অথচ বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালানোর মতো সরঞ্জাম মজুত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনায় যে ধরনের যুদ্ধনীতি প্রাধান্য পায়, সেখানে চীনের কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন, কম্পিউটার, ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেইলেন্স ও রিকনাইসেন্স (সি৪ আইএসআর) ব্যবস্থা লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার আক্রমণ চালানোর কথা বলা হয়। বাস্তবে তা হয়তো যুদ্ধকে সংক্ষিপ্ত করার বদলে আরও দীর্ঘ ও ধ্বংসাত্মক করে তুলতে পারে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সামরিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী উপগ্রহ এবং সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী কমান্ড সদর দপ্তর পর্যন্ত সবকিছু।
যদি কমান্ডাররা নিহত হন এবং কমান্ড ব্যবস্থা ধ্বংসও হয়ে যায়, তবুও যুদ্ধ পরিকল্পনাবিদদের মনে করা উচিত নয় যে এতে দ্রুত বিজয় আসবে। ইতিহাস দেখিয়েছে, কোনো বাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই বিপুলসংখ্যক রুশ জেনারেল নিহত হন, তবুও তাদের বাহিনী আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসলামিক স্টেটের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, নেতৃত্ব ধ্বংস করলেও তাঁরা কার্যকর সামরিক শক্তি হিসেবে টিকে থেকেছে, যতক্ষণ না তাদের বাহিনীকে ধীরে ধীরে, দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর সামরিক অভিযানে পুরোপুরি দমন করা হয়েছে।
মার্কিন যুদ্ধনীতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক আঘাত হানার ক্ষেপণাস্ত্র তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, আর ভূমি থেকে দূরপাল্লার হামলার অস্ত্র মজুত ফুরোবে ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। এমনকি যদি তাইওয়ান, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে চীনকে ঠেকাতেও পারে, তবু মূল্যটা ভয়াবহ হবে। ডজন-ডজন জাহাজ ডুবে যাবে, শত শত বিমান ধ্বংস হবে, আর হাজার হাজার সেনা নিহত হবে।
পেন্টাগন সম্প্রতি দ্রুতগতিতে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের দূরপাল্লার অস্ত্রের উৎপাদন দ্বিগুণ বা এমনকি চারগুণ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার জাহাজবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু এতে সমস্যা আরও বাড়ছে, কারণ এই ‘দূরপাল্লার আক্রমণনির্ভর’ যুদ্ধের ধারণাই আসলে পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে, কমাচ্ছে না।
এ বিপদের ব্যাপ্তি শুধু প্রশান্ত মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ নয়। ন্যাটোর অনেক পরিকল্পনাও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত। ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তারাও বুঝতে পারছেন না যে এসব ‘অপারেশনাল কনসেপ্ট’-এর মধ্যে কতটা বিপজ্জনক উত্তেজনা লুকিয়ে আছে।
কিছু কৌশলবিদ বলেন, পারমাণবিক উত্তেজনার ভয় পেলে যুদ্ধই করা যাবে না; এমন মনোভাবই এখনকার বাস্তবতা। কিন্তু যদি সত্যিই যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানতে হবে, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, কতটা ঝুঁকি নেওয়া যাবে, আর সেই ঝুঁকি কমানোর উপায় কী।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাইবার শক্তি ও ভবিষ্যৎ সংঘাতবিষয়ক সহযোগী ফেলো ফ্রান্জ-স্টেফান গ্যাডি প্রস্তাব করেন, ‘স্মার্ট অ্যাট্রিশনাল অ্যাপ্রোচ’ একটি বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষয়যুদ্ধনীতি। এতে চীনের কমান্ড সেন্টার বা পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা না করে তাদের প্রচলিত বাহিনীকে রুখে দেওয়া হবে। এর মানে হলো, যুদ্ধ হবে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর, কিন্তু পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি কমবে।
এই কৌশলে জোর দেওয়া হবে স্বল্পপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে। বেশি টর্পেডো, ড্রোন এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায়। প্রযুক্তিনির্ভর দ্রুত বিজয়ের মোহ ত্যাগ করে, বাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
কিন্তু সমস্যাটা রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্মতির অভাব। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কি সত্যিই হাজারো সেনার প্রাণ এবং অর্ধেক নৌবাহিনী হারানোর বিনিময়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষা করতে রাজি?
অবশেষে প্রশ্ন একটাই, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি ত্যাগ করতে প্রস্তুত? সামরিক ইতিহাসবিদ মাইকেল হাওয়ার্ড যেমন বলেছিলেন, পশ্চিম এখনো শান্তির কুয়াশার ভেতর দিয়ে নৌযাত্রা করছে। শেষ মহাযুদ্ধ থেকে সময় যতই দূরে সরে যাচ্ছে, ভয়াবহ ভুলের সম্ভাবনাও ততই বাড়ছে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। শিল্পক্ষমতা বাড়াতে হবে, পারমাণবিক ঝুঁকি কমানোর কৌশল নিতে হবে এবং জনগণকে জানাতে হবে, এই যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য কী হবে। প্রযুক্তি দিয়ে দ্রুত জয়ের ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভেসে চললে, আগামীতে ‘বৃহৎ দুই শক্তির যুদ্ধ’ হবে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ শিক্ষা। যেমনটি বলেছিলেন এথেন্সের কৌশলবিদ থুসিডিডিস, পরবর্তী মহাশক্তির যুদ্ধ হবে এক কঠোর শিক্ষক।
তথ্যসূত্র: টাইম ও ফরেন পলিসি

তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ। এই অবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নৌবহর ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজ প্রায় প্রতিদিন মুখোমুখি অবস্থায় থাকে। গত মাসে একবার দুটি চীনা যুদ্ধজাহাজ মাত্র ১৫০ মিটারের দূরত্বে চলে এসেছিল।
গত ২ আগস্ট তাইওয়ানে ‘জিরো ডে অ্যাটাক’ নামে একটি ডিস্টোপিয়ান টেভি সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন শুরু করতে পারে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ষড়যন্ত্র, গণমাধ্যমে অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রভাব খাটানো—সবকিছুই এতে বিশ্লেষণধর্মীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একটি কল্পকাহিনি হলেও সাম্প্রতিক বাস্তব ঘটনাগুলোর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
১০ সিজনের বহুল প্রচারিত ও প্রশংসিত এই সিরিজের নির্মাতা চেং হসিন-মেই। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন টাইমকে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় গেলে আপনি সত্যিই সেই উত্তেজনা টের পাবেন। চীন কোনো না কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েলিংটন কু মনে করছেন, চীনা সেনাবাহিনী (পিএলএ) যেকোনো সামরিক মহড়াকে সত্যিকারের আগ্রাসনে পরিণত করতে পারে। এমন সম্ভাবনা এখন উড়িয়ে দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই হুমকি আর চ্যালেঞ্জই এখন তাইওয়ানের সামনে।
চীন বলছে, এটি চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময়, আর তাইওয়ান সরকারের ভাষায়, আসন্ন আগ্রাসনের সংকেত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই চীন তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বৈদেশিক মনোযোগের বিভ্রান্তি দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হয়তো তার আগেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। তাইওয়ান ইস্যুতে ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে আমেরিকা তাইওয়ানকে একা ছাড়বে না।
এখন ভাবুন, চীন তাইওয়ানে আক্রমণ চালিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপ দেশটির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পেন্টাগনের প্রচলিত যুদ্ধনীতি মেনে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী হাজার হাজার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে চীনের জাহাজ, কমান্ড সেন্টার ও লজিস্টিক ঘাঁটির দিকে। প্রথম দফার হামলাতেই ৩৩ হাজারেরও বেশি নিখুঁত লক্ষ্যভেদী অস্ত্র সাড়ে ৮ হাজারের বেশি টার্গেটে আঘাত হেনেছে। সাইবার হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চীনের সামরিক নেটওয়ার্ক, ভেঙে পড়ছে নেতৃত্ব। ফলে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে বেইজিং হয় পিছু হটবে, নয়তো নিরুপায় পরাজয় মেনে নেবে।
কিন্তু যদি মনে করেন, এমনটি হবেই হবে, তাহলে ভুল করছেন। কারণ চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংসের পর যখন একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়বে বেইজিং, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ। তখন দেশটি ভিন্নপথে হাঁটতে পারে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভার্টিক্যাল এস্কেলেশন বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের। চীন হয়তো মার্কিন সমুদ্রসীমায় একটি পারমাণবিক পরীক্ষামূলক হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিতে যে এখানেই থেমে যাও। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াশিংটন কি এমন পদক্ষেপকে পারমাণবিক হামলার পূর্বঘোষণা বলে ধরে নেবে না?
এই বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে শুধু চীনের পারমাণবিক নীতির কারণে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব যুদ্ধধারণার ফলেও। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার চীনের নেই। তাই বেইজিং হয়তো এখনো মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র আগে পারমাণবিক হামলা চালালে তারা পাল্টা আঘাত করার মতো সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সক্রিয় পারমাণবিক বোমা ছিল, চীনের সেখানে ছিল মাত্র ৬০০। এই পশ্চাৎপদতার কারণে চীনা নেতারা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বড় পরাজয় ঠেকাতে।
আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, চীনের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দ্বৈত-ক্ষমতাসম্পন্ন; অর্থাৎ একই লঞ্চার থেকে কখনো প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র, আবার কখনো পারমাণবিক ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব লঞ্চারে হামলা চালায়, বেইজিং সেটাকে তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তির ওপর আঘাত হিসেবে দেখতে পারে। এটি পাল্টা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে।
বিশেষ করে ডিএফ-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো এই জটিলতা বাড়ায়। একই ঘাঁটিতে প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড থাকে এবং প্রশিক্ষণে সৈন্যরা প্রথমে প্রচলিত হামলার মহড়া দেয়, পরে সেটি পারমাণবিক ওয়ারহেডে পরিবর্তন করে। যুক্তরাষ্ট্র এসব ঘাঁটিতে আঘাত হানলে চীন সেটিকে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে পারে। একেই বলে এনট্যাঙ্গলমেন্ট প্রবলেম বা এক হামলার দ্বৈত ব্যাখ্যা, যা পারমাণবিক সংঘাত ডেকে আনতে পারে।
এখানে মার্কিন সামরিক পরিকল্পকেরা পড়ে যান এক দোটানায়। তাঁরা যত দ্রুত ও নিশ্চিত বিজয়ের চিন্তায় যুদ্ধের কৌশল সাজাবেন, তত বেশি পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকিতে পড়ে যান। অথচ বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালানোর মতো সরঞ্জাম মজুত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনায় যে ধরনের যুদ্ধনীতি প্রাধান্য পায়, সেখানে চীনের কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন, কম্পিউটার, ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেইলেন্স ও রিকনাইসেন্স (সি৪ আইএসআর) ব্যবস্থা লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার আক্রমণ চালানোর কথা বলা হয়। বাস্তবে তা হয়তো যুদ্ধকে সংক্ষিপ্ত করার বদলে আরও দীর্ঘ ও ধ্বংসাত্মক করে তুলতে পারে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সামরিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী উপগ্রহ এবং সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী কমান্ড সদর দপ্তর পর্যন্ত সবকিছু।
যদি কমান্ডাররা নিহত হন এবং কমান্ড ব্যবস্থা ধ্বংসও হয়ে যায়, তবুও যুদ্ধ পরিকল্পনাবিদদের মনে করা উচিত নয় যে এতে দ্রুত বিজয় আসবে। ইতিহাস দেখিয়েছে, কোনো বাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই বিপুলসংখ্যক রুশ জেনারেল নিহত হন, তবুও তাদের বাহিনী আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসলামিক স্টেটের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, নেতৃত্ব ধ্বংস করলেও তাঁরা কার্যকর সামরিক শক্তি হিসেবে টিকে থেকেছে, যতক্ষণ না তাদের বাহিনীকে ধীরে ধীরে, দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর সামরিক অভিযানে পুরোপুরি দমন করা হয়েছে।
মার্কিন যুদ্ধনীতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক আঘাত হানার ক্ষেপণাস্ত্র তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, আর ভূমি থেকে দূরপাল্লার হামলার অস্ত্র মজুত ফুরোবে ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। এমনকি যদি তাইওয়ান, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে চীনকে ঠেকাতেও পারে, তবু মূল্যটা ভয়াবহ হবে। ডজন-ডজন জাহাজ ডুবে যাবে, শত শত বিমান ধ্বংস হবে, আর হাজার হাজার সেনা নিহত হবে।
পেন্টাগন সম্প্রতি দ্রুতগতিতে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের দূরপাল্লার অস্ত্রের উৎপাদন দ্বিগুণ বা এমনকি চারগুণ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার জাহাজবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু এতে সমস্যা আরও বাড়ছে, কারণ এই ‘দূরপাল্লার আক্রমণনির্ভর’ যুদ্ধের ধারণাই আসলে পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে, কমাচ্ছে না।
এ বিপদের ব্যাপ্তি শুধু প্রশান্ত মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ নয়। ন্যাটোর অনেক পরিকল্পনাও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত। ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তারাও বুঝতে পারছেন না যে এসব ‘অপারেশনাল কনসেপ্ট’-এর মধ্যে কতটা বিপজ্জনক উত্তেজনা লুকিয়ে আছে।
কিছু কৌশলবিদ বলেন, পারমাণবিক উত্তেজনার ভয় পেলে যুদ্ধই করা যাবে না; এমন মনোভাবই এখনকার বাস্তবতা। কিন্তু যদি সত্যিই যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানতে হবে, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, কতটা ঝুঁকি নেওয়া যাবে, আর সেই ঝুঁকি কমানোর উপায় কী।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাইবার শক্তি ও ভবিষ্যৎ সংঘাতবিষয়ক সহযোগী ফেলো ফ্রান্জ-স্টেফান গ্যাডি প্রস্তাব করেন, ‘স্মার্ট অ্যাট্রিশনাল অ্যাপ্রোচ’ একটি বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষয়যুদ্ধনীতি। এতে চীনের কমান্ড সেন্টার বা পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা না করে তাদের প্রচলিত বাহিনীকে রুখে দেওয়া হবে। এর মানে হলো, যুদ্ধ হবে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর, কিন্তু পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি কমবে।
এই কৌশলে জোর দেওয়া হবে স্বল্পপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে। বেশি টর্পেডো, ড্রোন এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায়। প্রযুক্তিনির্ভর দ্রুত বিজয়ের মোহ ত্যাগ করে, বাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
কিন্তু সমস্যাটা রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্মতির অভাব। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কি সত্যিই হাজারো সেনার প্রাণ এবং অর্ধেক নৌবাহিনী হারানোর বিনিময়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষা করতে রাজি?
অবশেষে প্রশ্ন একটাই, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি ত্যাগ করতে প্রস্তুত? সামরিক ইতিহাসবিদ মাইকেল হাওয়ার্ড যেমন বলেছিলেন, পশ্চিম এখনো শান্তির কুয়াশার ভেতর দিয়ে নৌযাত্রা করছে। শেষ মহাযুদ্ধ থেকে সময় যতই দূরে সরে যাচ্ছে, ভয়াবহ ভুলের সম্ভাবনাও ততই বাড়ছে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। শিল্পক্ষমতা বাড়াতে হবে, পারমাণবিক ঝুঁকি কমানোর কৌশল নিতে হবে এবং জনগণকে জানাতে হবে, এই যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য কী হবে। প্রযুক্তি দিয়ে দ্রুত জয়ের ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভেসে চললে, আগামীতে ‘বৃহৎ দুই শক্তির যুদ্ধ’ হবে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ শিক্ষা। যেমনটি বলেছিলেন এথেন্সের কৌশলবিদ থুসিডিডিস, পরবর্তী মহাশক্তির যুদ্ধ হবে এক কঠোর শিক্ষক।
তথ্যসূত্র: টাইম ও ফরেন পলিসি

বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
২৮ মে ২০২৫
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
৭ ঘণ্টা আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য বহুপক্ষীয় কূটনীতির সূক্ষ্ম শিল্প নয়, বরং আরেকটি ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বলে জানিয়েছে পলিটিকো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে ‘কুয়ালালামপুর চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, সেটিই সম্ভবত ট্রাম্পের আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার একমাত্র কারণ।
ট্রাম্প এরই মধ্যে তাঁর ‘বিশ্বজুড়ে বন্ধ করা’ যুদ্ধের তালিকায় যুক্ত করেছেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতও, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জুলাই মাসে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে সহায়তা করেছিল। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস, ইসরায়েল-ইরান, পাকিস্তান-ভারত, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান এবং প্রথম মেয়াদে মিসর-ইথিওপিয়া ও সার্বিয়া-কসোভোর সংঘাতও মিটমাট করেছেন।
তবে এসবের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তি হলেও অনেক ক্ষেত্রে সংঘাত এখনো চলমান বা পুনরায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার পরিস্থিতিও রয়েছে। তবু ট্রাম্প এই ঘটনাগুলোর সাফল্য ও অতিরঞ্জিত দাবি মিলিয়ে নিজেকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য জোর প্রচারও চালান, যদিও চলতি মাসের শুরুতে সেই পুরস্কার ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো পেয়েছেন।
তবু এখনই নিরাশ হচ্ছেন না ট্রাম্প ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কম্বোডিয়াসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা এরই মধ্যে আগামী বছরের পুরস্কারের জন্য আবার ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এসব ‘চাটুকার কূটনীতির’ নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত।
তবে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি প্রকৃতপক্ষে অর্জিত হবে, নাকি ট্রাম্পের কথিত সাফল্য হয়ে থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল প্রশ্ন হলো, ফটোসেশনের পর ট্রাম্প কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন।
জাপানের ওসাকার কানসাই গাইদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এস. কোগান টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘এটিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কি এই ইস্যু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে? ট্রাম্প চুক্তি সম্পাদনের পর কি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখবে, নাকি অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে?’
মার্ক এস. কোগান আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই অমীমাংসিত তুলনামূলক ছোট সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই কতটা মাথা ঘামায়? এটা কি অন্য বড় সংঘাতগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ? না, অবশ্যই না। তবে কি এটা গভীর ও উত্তপ্ত? হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এর প্রকৃত প্রভাব কতটা? খুবই সামান্য।’
কোগানের মতে, ‘চুক্তির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে ‘তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ’-এর ওপর। উভয় দেশ চুক্তির শর্ত মানলেই এটি সফল হতে পারে। তবে দুই পক্ষই পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাত্ত্বিকভাবে এই পর্যবেক্ষণ কার্যকরভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রাখে, তবে অনেকে এ বিষয়ে সংশয়ী।’
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক ও থাই গবেষক পাভিন চাচাভালপংপুন টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘ট্রাম্পের এই অঞ্চলে শান্তি উদ্যোগের অংশগ্রহণটা পুরোপুরি লেনদেননির্ভর মনে হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষ হলে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাহ্যিক চাপ সম্ভবত মিলিয়ে যাবে।’
আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বৃহস্পতিবার বলেন, চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলো এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কম্বোডিয়া প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে ‘একটি বিজয় উপহার’ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ১৫ অক্টোবর শাসক দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা যেকোনো সময় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।’
গবেষক পাভিন আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের নতুন সরকার সম্প্রতি সংঘাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে আগের প্রশাসনকে অপসারণ করেছে। দেশটি এই প্রক্রিয়ায় সাবধানী ভূমিকা নিচ্ছে, স্থিতিশীলতাকে স্বাগত জানাচ্ছে, তবে আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প কম্বোডিয়ার পক্ষে ঝুঁকতে পারেন।’
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল গত রোববার বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা অন্য কোনো জাতির দ্বারা শোষিত হতে দেব না। আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
পাভিনের মতে, ট্রাম্প এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা করতে পারেন। তবে তাঁর বিশ্বাস, এই চুক্তি ‘স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা’ আনতে পারে, কিন্তু ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে ভঙ্গুর’ হিসেবেই রয়ে যাবে।
কম্বোডিয়া চুক্তিতে আগ্রহী হলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা কত দূর যেতে রাজি। ১৯ অক্টোবর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন মানেত লিখেছেন, চুক্তিটি মূলত সংঘাতের অবসান এবং দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির শর্ত ও আচরণবিধি নির্ধারণের মাধ্যম হবে।
তবে তিনি একই সঙ্গে পরিষ্কার করে বলেন, ‘না জুলাই মাসের যুদ্ধবিরতি, না আসন্ন চুক্তি—কোনোটিই কোনো পক্ষের সার্বভৌম ভূখণ্ডের ওপর আইনি অধিকার ত্যাগের প্রতিশ্রুতি নয়।’
থাই গবেষক পাভিনের মতে, এই চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়; কারণ, এটি মূল ভূখণ্ড এবং ঐতিহাসিক মানচিত্রসংক্রান্ত সীমান্তবিরোধের সমাধান করছে না, বরং সেই সংঘাতকে সাময়িকভাবে স্থগিত করছে মাত্র।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য বহুপক্ষীয় কূটনীতির সূক্ষ্ম শিল্প নয়, বরং আরেকটি ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বলে জানিয়েছে পলিটিকো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে ‘কুয়ালালামপুর চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, সেটিই সম্ভবত ট্রাম্পের আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার একমাত্র কারণ।
ট্রাম্প এরই মধ্যে তাঁর ‘বিশ্বজুড়ে বন্ধ করা’ যুদ্ধের তালিকায় যুক্ত করেছেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতও, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জুলাই মাসে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে সহায়তা করেছিল। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস, ইসরায়েল-ইরান, পাকিস্তান-ভারত, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান এবং প্রথম মেয়াদে মিসর-ইথিওপিয়া ও সার্বিয়া-কসোভোর সংঘাতও মিটমাট করেছেন।
তবে এসবের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তি হলেও অনেক ক্ষেত্রে সংঘাত এখনো চলমান বা পুনরায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার পরিস্থিতিও রয়েছে। তবু ট্রাম্প এই ঘটনাগুলোর সাফল্য ও অতিরঞ্জিত দাবি মিলিয়ে নিজেকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য জোর প্রচারও চালান, যদিও চলতি মাসের শুরুতে সেই পুরস্কার ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো পেয়েছেন।
তবু এখনই নিরাশ হচ্ছেন না ট্রাম্প ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কম্বোডিয়াসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা এরই মধ্যে আগামী বছরের পুরস্কারের জন্য আবার ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এসব ‘চাটুকার কূটনীতির’ নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত।
তবে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি প্রকৃতপক্ষে অর্জিত হবে, নাকি ট্রাম্পের কথিত সাফল্য হয়ে থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল প্রশ্ন হলো, ফটোসেশনের পর ট্রাম্প কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন।
জাপানের ওসাকার কানসাই গাইদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এস. কোগান টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘এটিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কি এই ইস্যু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে? ট্রাম্প চুক্তি সম্পাদনের পর কি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখবে, নাকি অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে?’
মার্ক এস. কোগান আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই অমীমাংসিত তুলনামূলক ছোট সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই কতটা মাথা ঘামায়? এটা কি অন্য বড় সংঘাতগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ? না, অবশ্যই না। তবে কি এটা গভীর ও উত্তপ্ত? হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এর প্রকৃত প্রভাব কতটা? খুবই সামান্য।’
কোগানের মতে, ‘চুক্তির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে ‘তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ’-এর ওপর। উভয় দেশ চুক্তির শর্ত মানলেই এটি সফল হতে পারে। তবে দুই পক্ষই পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাত্ত্বিকভাবে এই পর্যবেক্ষণ কার্যকরভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রাখে, তবে অনেকে এ বিষয়ে সংশয়ী।’
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক ও থাই গবেষক পাভিন চাচাভালপংপুন টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘ট্রাম্পের এই অঞ্চলে শান্তি উদ্যোগের অংশগ্রহণটা পুরোপুরি লেনদেননির্ভর মনে হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষ হলে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাহ্যিক চাপ সম্ভবত মিলিয়ে যাবে।’
আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বৃহস্পতিবার বলেন, চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলো এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কম্বোডিয়া প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে ‘একটি বিজয় উপহার’ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ১৫ অক্টোবর শাসক দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা যেকোনো সময় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।’
গবেষক পাভিন আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের নতুন সরকার সম্প্রতি সংঘাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে আগের প্রশাসনকে অপসারণ করেছে। দেশটি এই প্রক্রিয়ায় সাবধানী ভূমিকা নিচ্ছে, স্থিতিশীলতাকে স্বাগত জানাচ্ছে, তবে আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প কম্বোডিয়ার পক্ষে ঝুঁকতে পারেন।’
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল গত রোববার বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা অন্য কোনো জাতির দ্বারা শোষিত হতে দেব না। আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
পাভিনের মতে, ট্রাম্প এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা করতে পারেন। তবে তাঁর বিশ্বাস, এই চুক্তি ‘স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা’ আনতে পারে, কিন্তু ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে ভঙ্গুর’ হিসেবেই রয়ে যাবে।
কম্বোডিয়া চুক্তিতে আগ্রহী হলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা কত দূর যেতে রাজি। ১৯ অক্টোবর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন মানেত লিখেছেন, চুক্তিটি মূলত সংঘাতের অবসান এবং দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির শর্ত ও আচরণবিধি নির্ধারণের মাধ্যম হবে।
তবে তিনি একই সঙ্গে পরিষ্কার করে বলেন, ‘না জুলাই মাসের যুদ্ধবিরতি, না আসন্ন চুক্তি—কোনোটিই কোনো পক্ষের সার্বভৌম ভূখণ্ডের ওপর আইনি অধিকার ত্যাগের প্রতিশ্রুতি নয়।’
থাই গবেষক পাভিনের মতে, এই চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়; কারণ, এটি মূল ভূখণ্ড এবং ঐতিহাসিক মানচিত্রসংক্রান্ত সীমান্তবিরোধের সমাধান করছে না, বরং সেই সংঘাতকে সাময়িকভাবে স্থগিত করছে মাত্র।

বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
২৮ মে ২০২৫
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
৭ ঘণ্টা আগেতাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, যুদ্ধ এখন যে অবস্থায় রয়েছে, সেখান থেকেই ভবিষ্যতের আলোচনা শুরু করা উচিত। অর্থাৎ ‘বর্তমান সীমান্তরেখায়’ তিনি দুই দেশকে নতুন করে শুরুর কথা বলছেন। তবে এই প্রস্তাবে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা সমর্থন জানালেও রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে।
মজার বিষয়, এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে ট্রাম্পের কি কোনো ফায়দা আছে।
গত রোববার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই থামানো উচিত। বাকিটা পরে আলোচনা করা যেতে পারে।
এ সময় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন যে অবস্থা, এটা সেভাবেই রেখে দেওয়া হোক। তুমি এটা নাও, আমরা এটা নিই—এভাবে বললে হবে না। রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় ৭৮ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। এই অবস্থায় যুদ্ধ থামানোই সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে।’
যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়—তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পুরো দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দিতে বলছেন কি না, ট্রাম্প জবাব দেন, ‘না। শুধু এখন যেভাবে ভাগ হয়ে আছে, সেভাবেই থাকুক।’
এখন যুদ্ধরেখা কোথায় আছে? প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইতিমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া খারকিভ প্রদেশের একটি অংশও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক মিলে যে অঞ্চলটি ‘দনবাস’ নামে পরিচিত, সেখানেই সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে।
রাশিয়া বর্তমানে লুহানস্কের সম্পূর্ণ অংশ ও দোনেৎস্কের বেশির ভাগ অঞ্চল, বিশেষত স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোর্স্কের আশপাশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া খেরসনের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং জাপোরিঝিয়ার বৃহৎ অংশও রুশ সেনাদের দখলে।
জাপোরিঝিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, যেখানে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও বিমান তৈরির কারখানা রয়েছে। এখানেই ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবস্থিত।
তবে অবাক করার বিষয়, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় নেতারা ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পের প্রস্তাবকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছি। বর্তমান যুদ্ধরেখাই ভবিষ্যৎ আলোচনার সূচনাবিন্দু হতে পারে।’
এর আগে ইউক্রেন বারবার বলেছে, তারা সব দখল করা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে চায়। কিন্তু ট্রাম্প কখনো ইউক্রেনকে জমি ছেড়ে দিতে বলেছেন, আবার কখনো বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ জিততে পারে—তাঁর এই অবস্থান বারবার বদলেছে।
গত আগস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, এই যুদ্ধে উভয় পক্ষকেই কিছুটা জমি ছাড় দিতে হবে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তিনি উল্টো মন্তব্য করেন—ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হতে পারে এবং এমনকি ২০১৪ সালে হারানো ক্রিমিয়াসহ পুরো দেশ পুনর্দখল করতে সক্ষম।
অন্যদিকে রাশিয়া ট্রাম্পের এই প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কোনো ফল দেবে না।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রাশিয়ার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মস্কো তার দাবিতে অনড়—যুদ্ধ শেষ করতে হলে, দখল করা সমস্ত ভূমি তাদের দিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের বলে দাবি করা পূর্বাঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছে, যেখানে শুধু দখল করা অংশ নয়, রাশিয়া পুরো দনবাসের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে।
এদিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প এ বৈঠক বাতিল করেছেন। এরপর গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনে হলো এই বৈঠক এখন ফলপ্রসূ হবে না, তাই বাতিল করেছি। তবে ভবিষ্যতে আবার বসা হবে।’
এখন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে দেখা যায়, যুদ্ধ বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে রাশিয়া। প্রশ্ন হতে পারে, নিজেদের ক্ষতি জেনেও কেন ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে ইউরোপ-ইউক্রেন। কারণ, এ মুহূর্তে তাদের কাছে রাশিয়াকে মোকাবিলা করার মতো কোনো অস্ত্র নেই। সর্বশেষ, হোয়াইট হাউসের বৈঠক থেকে আশা করা হয়েছিল, এবার জেলেনস্কি হয়তো টমাহক নিয়ে ফিরবেন। কিন্তু তিনি ফিরেছেন খালি হাতে। এদিকে ইউরোপে আটকে থাকা রুশ অর্থ থেকে ইউক্রেনকে লোন দেওয়ার যে প্রস্তাব উঠেছে, তাতে সবাই একমত হতে পারেনি। ফলে সেটাও আটকে আছে। অর্থাৎ যুদ্ধ চালানোর অর্থ ও রসদ, দুটোরই সংকট আছে ইউক্রেনের। তাই এ মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ করাই তাদের কাছে সবচেয়ে ভালো সমাধান।
সবশেষে আসে ট্রাম্পের কথা। এই যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প বলতে পারবেন, ‘আমি আরও একটি যুদ্ধ থামিয়েছি। এবার আমাকে নোবেল না দিয়ে যাবে কোথায়!’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইউরোপের দূরত্ব ঘুচতে পারে।
এদিকে এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কেমন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে ওয়াশিংটনের এমন ঘোষণায় চির ধরেছে ট্রাম্প-পুতিনের বন্ধুত্বে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে টিকে যাবে তাঁদের বন্ধুত্ব।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা

ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, যুদ্ধ এখন যে অবস্থায় রয়েছে, সেখান থেকেই ভবিষ্যতের আলোচনা শুরু করা উচিত। অর্থাৎ ‘বর্তমান সীমান্তরেখায়’ তিনি দুই দেশকে নতুন করে শুরুর কথা বলছেন। তবে এই প্রস্তাবে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা সমর্থন জানালেও রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে।
মজার বিষয়, এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে ট্রাম্পের কি কোনো ফায়দা আছে।
গত রোববার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই থামানো উচিত। বাকিটা পরে আলোচনা করা যেতে পারে।
এ সময় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন যে অবস্থা, এটা সেভাবেই রেখে দেওয়া হোক। তুমি এটা নাও, আমরা এটা নিই—এভাবে বললে হবে না। রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় ৭৮ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। এই অবস্থায় যুদ্ধ থামানোই সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে।’
যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়—তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পুরো দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দিতে বলছেন কি না, ট্রাম্প জবাব দেন, ‘না। শুধু এখন যেভাবে ভাগ হয়ে আছে, সেভাবেই থাকুক।’
এখন যুদ্ধরেখা কোথায় আছে? প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইতিমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া খারকিভ প্রদেশের একটি অংশও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক মিলে যে অঞ্চলটি ‘দনবাস’ নামে পরিচিত, সেখানেই সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে।
রাশিয়া বর্তমানে লুহানস্কের সম্পূর্ণ অংশ ও দোনেৎস্কের বেশির ভাগ অঞ্চল, বিশেষত স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোর্স্কের আশপাশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া খেরসনের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং জাপোরিঝিয়ার বৃহৎ অংশও রুশ সেনাদের দখলে।
জাপোরিঝিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, যেখানে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও বিমান তৈরির কারখানা রয়েছে। এখানেই ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবস্থিত।
তবে অবাক করার বিষয়, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় নেতারা ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পের প্রস্তাবকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছি। বর্তমান যুদ্ধরেখাই ভবিষ্যৎ আলোচনার সূচনাবিন্দু হতে পারে।’
এর আগে ইউক্রেন বারবার বলেছে, তারা সব দখল করা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে চায়। কিন্তু ট্রাম্প কখনো ইউক্রেনকে জমি ছেড়ে দিতে বলেছেন, আবার কখনো বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ জিততে পারে—তাঁর এই অবস্থান বারবার বদলেছে।
গত আগস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, এই যুদ্ধে উভয় পক্ষকেই কিছুটা জমি ছাড় দিতে হবে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তিনি উল্টো মন্তব্য করেন—ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হতে পারে এবং এমনকি ২০১৪ সালে হারানো ক্রিমিয়াসহ পুরো দেশ পুনর্দখল করতে সক্ষম।
অন্যদিকে রাশিয়া ট্রাম্পের এই প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কোনো ফল দেবে না।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রাশিয়ার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মস্কো তার দাবিতে অনড়—যুদ্ধ শেষ করতে হলে, দখল করা সমস্ত ভূমি তাদের দিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের বলে দাবি করা পূর্বাঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছে, যেখানে শুধু দখল করা অংশ নয়, রাশিয়া পুরো দনবাসের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে।
এদিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প এ বৈঠক বাতিল করেছেন। এরপর গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনে হলো এই বৈঠক এখন ফলপ্রসূ হবে না, তাই বাতিল করেছি। তবে ভবিষ্যতে আবার বসা হবে।’
এখন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে দেখা যায়, যুদ্ধ বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে রাশিয়া। প্রশ্ন হতে পারে, নিজেদের ক্ষতি জেনেও কেন ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে ইউরোপ-ইউক্রেন। কারণ, এ মুহূর্তে তাদের কাছে রাশিয়াকে মোকাবিলা করার মতো কোনো অস্ত্র নেই। সর্বশেষ, হোয়াইট হাউসের বৈঠক থেকে আশা করা হয়েছিল, এবার জেলেনস্কি হয়তো টমাহক নিয়ে ফিরবেন। কিন্তু তিনি ফিরেছেন খালি হাতে। এদিকে ইউরোপে আটকে থাকা রুশ অর্থ থেকে ইউক্রেনকে লোন দেওয়ার যে প্রস্তাব উঠেছে, তাতে সবাই একমত হতে পারেনি। ফলে সেটাও আটকে আছে। অর্থাৎ যুদ্ধ চালানোর অর্থ ও রসদ, দুটোরই সংকট আছে ইউক্রেনের। তাই এ মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ করাই তাদের কাছে সবচেয়ে ভালো সমাধান।
সবশেষে আসে ট্রাম্পের কথা। এই যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প বলতে পারবেন, ‘আমি আরও একটি যুদ্ধ থামিয়েছি। এবার আমাকে নোবেল না দিয়ে যাবে কোথায়!’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইউরোপের দূরত্ব ঘুচতে পারে।
এদিকে এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কেমন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে ওয়াশিংটনের এমন ঘোষণায় চির ধরেছে ট্রাম্প-পুতিনের বন্ধুত্বে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে টিকে যাবে তাঁদের বন্ধুত্ব।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা

বাসবরাজুর মৃত্যু কেবল ভারত সরকারের কৌশলগত বিজয়ই নয়, মাওবাদীদের বস্তারে অবস্থিত শেষ প্রতিরক্ষা রেখাতেও ভাঙনের নির্দেশ করে। এই এলাকায় দলটি ১৯৮০-এর দশক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ তৈরি করেছিল।
২৮ মে ২০২৫
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
৭ ঘণ্টা আগেতাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
২ দিন আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
৩ দিন আগে