Ajker Patrika

শাসক পরিবর্তনের পরিকল্পনা কি ইরানিরা সমর্থন করছেন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ১২: ৫১
ইসরায়েলের আকাশে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ঝাঁক। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের আকাশে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ঝাঁক। ছবি: এএফপি

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করার ঘোষণা দিয়ে গত শুক্রবার ভোর থেকে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তবে অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ইরানের খামেনিদের শাসনের অবসান ঘটানো। একই কথা বলেছেন, ইরানে পতিত পাহলভি রাজবংশের সর্বশেষ শাসক রেজা শাহ পাহলভির ছেলে রেজা পাহলভি। ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের সময় ক্ষমতাচ্যুত হয় পাহলভি পরিবার। রেজা পাহলভি দাবি করেছেন, ইরানের বর্তমান সরকার খুবই দুর্বল। এখনই আঘাত হানার উপযুক্ত সময়।

অবশ্য গতকাল মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’আর বলেছেন, ইরানের শাসক পরিবর্তনের কোনো উদ্দেশ্য ইসরায়েলের নেই। এটি ইরানের জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। আমরা, ইসরায়েল, ইরানের জনগণকে আমাদের শত্রু মনে করি না।

এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানি জনগণকে খামেনির শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার প্রস্তাব দিয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।

কিন্তু এই অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে ইরানের জনগণ কী ভাবছে?

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর ইরানি জনগণের মধ্যে শাসক পরিবর্তনের জন্য ‘ইসরায়েলের পরিকল্পনা’ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের সভাপতি জামাল আবদি আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ইসরায়েলের এই আক্রমণ ইরানের শাসক পরিবর্তনে সহানুভূতিশীল ইরানিদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

জামাল আবদি ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা নেতানিয়াহুর একটি বড় ভুল হিসাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বৈধতা সত্যিই সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ২০২২ সালের “নারী, জীবন, স্বাধীনতা” প্রতিবাদ ছিল এই শাসন থেকে মুক্তির জন্য ইরানিদের আহ্বানের এক বিশাল বিস্ফোরণ।’

জামাল আবদির মতে, দশকের পর দশক ধরে নেতানিয়াহু একটি লক্ষ্যের ওপরই জোর দিয়েছেন যে, ইরানের শাসক পরিবর্তনের প্রচেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত। ইসরায়েলিরাও এতদিন এক মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালিয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল ইরানিদের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করা এবং সবকিছুর জন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে দোষারোপ করা।

আবদি জানান, দীর্ঘ সময় ধরে ইরানি প্রবাসীদের মধ্যে কিছু লোক ইসরায়েলের ইরানের ওপর হামলার সমর্থন করতেন। তাঁরা মনে করতেন, ইসরায়েল শুধু ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্রের লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা করবে, সাধারণ ইরানিদের ওপর নয়।

তবে আবদি জোর দিয়ে বলেছেন, সেই ধারণা এখন বদলে গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘নেতানিয়াহু এখন ইরানকে বৈরুতে (লেবানন) পরিণত করার কথা বলছেন। বৈরুত কৌশল। তেহরান জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। মনে হচ্ছে, তারা এখন ইরানের শাসন ব্যবস্থা অস্থিতিশীল করার অভিযানে চলে যাচ্ছে।’

আবদির মতে, এই পরিবর্তনের ফলে অনেক মানুষ, বিশেষ করে যারা ইসরায়েলিদের বন্ধু ভাবত, তারা এখন বুঝতে পারছে যে, গাজায় যা এতদিন দেখা গেছে, লেবাননে যা দেখা গেছে, এবং এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে যা দেখা গেছে, তা এখন ইরানিদের দিকে ধেয়ে আসছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘এটা মুক্তি নয়, এটা মৃত্যু।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত