অনলাইন ডেস্ক
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রীতিমতো নাজেহাল বিশ্ব। যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইউক্রেনের যেসব শহর দখল করেছে রাশিয়া সেগুলো পুনরুদ্ধারে লড়ছে ইউক্রেন। ইউক্রেন বাহিনীকে মোকাবিলায় নানা কৌশল আঁটছেন পুতিন। শীতের আগে ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে হামলা। চলমান এই পরিস্থিতির মধ্যেই আলোচনায় এসেছে ‘ডার্টি বোম্ব’।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইউক্রেন নিজ ভূখণ্ডে বিশেষ ‘ডার্টি বোম্ব’ ব্যবহার করে রাশিয়ার ওপর দায় চাপানোর পরিকল্পনা করছে। তবে এ দাবি অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘যদি রাশিয়া অভিযোগ করে—ইউক্রেন এমন বোমা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে তারাই এ ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে।’
আপাতত ‘ডার্টি বোম্ব’ নিয়ে রুশ-ইউক্রেন কথার লড়াই চললেও, যদি সত্যি সত্যি কোনো পক্ষ যুদ্ধে এ ধরনের কোনো অস্ত্র ব্যবহার করে তাহলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক দিকে মোড় নেবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ডার্টি বোম্ব’ হচ্ছে এমন এক বিস্ফোরক যাতে ইউরেনিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকে। এটি বাতাসে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। তেজস্ক্রিয় পদার্থ দিয়ে তৈরি ‘ডার্টি বোম্ব’ বিস্তৃত এলাকায় তেজস্ক্রিয় দূষণ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয়। যদি তেজস্ক্রিয় কণাগুলো খুব সূক্ষ্ম হয় এবং তা প্রবল বাতাসে ছড়িয়ে যায়, তবে তা আরও বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ ধরনের বোমা বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর।
তবে এটি পরমাণু বোমার মতো নয়। কেননা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে তেজস্ক্রিয় উপাদান যে উচ্চমাত্রায় পরিশোধন করা হয় ডার্টি বোম্বের ক্ষেত্রে তেমনটি করা হয় না। কম মাত্রায় পরিশোধিত যেমন—হাসপাতাল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা গবেষণা পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় উপাদান যে মাত্রায় পরিশোধন করা হয় ডার্টি বোমার ক্ষেত্রেও এই মাত্রা একই।
পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়ে এটি কম খরচে ও কম সময়ে তৈরি করা যায়। এটি গাড়িতে করে বহন করা যায়। এ ধরনের তেজস্ক্রিয় বোমার বিস্ফোরণের প্রভাবে ক্যানসারের মতো গুরুতর শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের তেজস্ক্রিয় বোমার বিস্ফোরণে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ ধরনের বোমা বিস্ফোরিত হলে ওই অঞ্চলের চারপাশের একটি বিস্তৃত এলাকা দূষণমুক্ত করার জন্য খালি করতে হয়। এমনকি ওই এলাকা সম্পূর্ণ পরিত্যক্তও ঘোষণা করতে হতে পারে।
বেসরকারি বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট বলছে, নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে যদি ৯ গ্রাম কোবাল্ট-৬০ এবং ৫ কেজি টিএনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে পুরো শহর কয়েক দশকের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। এ কারণেই ‘ডার্টি বোমা’ গণবিধ্বংসী হিসেবে পরিচিত।
তবে বিশ্বে এ পর্যন্ত ‘ডার্টি বোমা’ ব্যবহৃত হওয়ার কোনো নজির নেই। তবে ‘ডার্টি বোমা’ ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো সফল হয়নি। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে চেচনিয়ার বিদ্রোহীরা মস্কোর ইজমাইলোভো পার্কে ডিনামাইট এবং সিজিয়াম-১৩৭ সংবলিত বোমা স্থাপন করেছিল। তবে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা এই বোমার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে যায় এবং এটিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। ১৯৯৮ সালে চেচনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা রেললাইনের কাছে স্থাপন করা একটি ডার্টি বোমার সন্ধান পায়। পরে সেটি নিষ্ক্রিয় করা হয়।
২০০২ সালে জোস প্যাডিলা নামের এক মার্কিন নাগরিক আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁকে ‘ডার্টি বোমা’ হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হয়। পরে তিনি শিকাগো থেকে গ্রেপ্তার হন। তাঁকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনার দুই বছর পর ব্রিটিশ নাগরিক ও আল-কায়েদার সদস্য ধীরেন বারতকে লন্ডন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে পরে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে ‘ডার্টি বোমা’ হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জোস প্যাডিলা এবং ধীরেন বারত অবশ্য ‘ডার্টি বোমা’ তৈরির কাজ শুরু করার আগেই গ্রেপ্তার হন।
বিবিসি থেকে অনুবাদ: আমিনুল ইসলাম নাবিল
বিশ্ব খবর সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রীতিমতো নাজেহাল বিশ্ব। যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইউক্রেনের যেসব শহর দখল করেছে রাশিয়া সেগুলো পুনরুদ্ধারে লড়ছে ইউক্রেন। ইউক্রেন বাহিনীকে মোকাবিলায় নানা কৌশল আঁটছেন পুতিন। শীতের আগে ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে হামলা। চলমান এই পরিস্থিতির মধ্যেই আলোচনায় এসেছে ‘ডার্টি বোম্ব’।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইউক্রেন নিজ ভূখণ্ডে বিশেষ ‘ডার্টি বোম্ব’ ব্যবহার করে রাশিয়ার ওপর দায় চাপানোর পরিকল্পনা করছে। তবে এ দাবি অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘যদি রাশিয়া অভিযোগ করে—ইউক্রেন এমন বোমা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে তারাই এ ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে।’
আপাতত ‘ডার্টি বোম্ব’ নিয়ে রুশ-ইউক্রেন কথার লড়াই চললেও, যদি সত্যি সত্যি কোনো পক্ষ যুদ্ধে এ ধরনের কোনো অস্ত্র ব্যবহার করে তাহলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক দিকে মোড় নেবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ডার্টি বোম্ব’ হচ্ছে এমন এক বিস্ফোরক যাতে ইউরেনিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকে। এটি বাতাসে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। তেজস্ক্রিয় পদার্থ দিয়ে তৈরি ‘ডার্টি বোম্ব’ বিস্তৃত এলাকায় তেজস্ক্রিয় দূষণ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয়। যদি তেজস্ক্রিয় কণাগুলো খুব সূক্ষ্ম হয় এবং তা প্রবল বাতাসে ছড়িয়ে যায়, তবে তা আরও বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ ধরনের বোমা বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর।
তবে এটি পরমাণু বোমার মতো নয়। কেননা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে তেজস্ক্রিয় উপাদান যে উচ্চমাত্রায় পরিশোধন করা হয় ডার্টি বোম্বের ক্ষেত্রে তেমনটি করা হয় না। কম মাত্রায় পরিশোধিত যেমন—হাসপাতাল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা গবেষণা পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় উপাদান যে মাত্রায় পরিশোধন করা হয় ডার্টি বোমার ক্ষেত্রেও এই মাত্রা একই।
পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়ে এটি কম খরচে ও কম সময়ে তৈরি করা যায়। এটি গাড়িতে করে বহন করা যায়। এ ধরনের তেজস্ক্রিয় বোমার বিস্ফোরণের প্রভাবে ক্যানসারের মতো গুরুতর শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের তেজস্ক্রিয় বোমার বিস্ফোরণে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ ধরনের বোমা বিস্ফোরিত হলে ওই অঞ্চলের চারপাশের একটি বিস্তৃত এলাকা দূষণমুক্ত করার জন্য খালি করতে হয়। এমনকি ওই এলাকা সম্পূর্ণ পরিত্যক্তও ঘোষণা করতে হতে পারে।
বেসরকারি বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট বলছে, নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে যদি ৯ গ্রাম কোবাল্ট-৬০ এবং ৫ কেজি টিএনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে পুরো শহর কয়েক দশকের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। এ কারণেই ‘ডার্টি বোমা’ গণবিধ্বংসী হিসেবে পরিচিত।
তবে বিশ্বে এ পর্যন্ত ‘ডার্টি বোমা’ ব্যবহৃত হওয়ার কোনো নজির নেই। তবে ‘ডার্টি বোমা’ ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো সফল হয়নি। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে চেচনিয়ার বিদ্রোহীরা মস্কোর ইজমাইলোভো পার্কে ডিনামাইট এবং সিজিয়াম-১৩৭ সংবলিত বোমা স্থাপন করেছিল। তবে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা এই বোমার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে যায় এবং এটিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। ১৯৯৮ সালে চেচনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা রেললাইনের কাছে স্থাপন করা একটি ডার্টি বোমার সন্ধান পায়। পরে সেটি নিষ্ক্রিয় করা হয়।
২০০২ সালে জোস প্যাডিলা নামের এক মার্কিন নাগরিক আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁকে ‘ডার্টি বোমা’ হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হয়। পরে তিনি শিকাগো থেকে গ্রেপ্তার হন। তাঁকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনার দুই বছর পর ব্রিটিশ নাগরিক ও আল-কায়েদার সদস্য ধীরেন বারতকে লন্ডন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে পরে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে ‘ডার্টি বোমা’ হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জোস প্যাডিলা এবং ধীরেন বারত অবশ্য ‘ডার্টি বোমা’ তৈরির কাজ শুরু করার আগেই গ্রেপ্তার হন।
বিবিসি থেকে অনুবাদ: আমিনুল ইসলাম নাবিল
বিশ্ব খবর সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত বিলিয়নিয়ার জর্জ সরোসের ছেলে অ্যালেক্স সরোস ঢাকায় নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই বৈঠক এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশে সমস্ত আর্থিক সহায়তা স্থগিত করেছেন। এর ফলে বাংলাদেশেও মার্কিন সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে।
১ দিন আগেহাংঝৌভিত্তিক এই স্টার্টআপ বা উদ্যোগটি দাবি করেছে, তারা ডিপসিক আর১ মডেলটি সিলিকন ভ্যালির সাম্প্রতিকতম মডেলগুলোর তুলনায় অনেক কম খরচে তৈরি করেছে। এই ঘোষণা এআই দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য ও শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর...
৩ দিন আগে২০১১ সালে টেক্সাসের অস্টিন থেকে আসা একজন ইগল স্কাউট রস উলব্রিচট ‘সিল্ক রোড’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি অনলাইন কালোবাজার, যেখানে মাদক, অর্থ পাচার এবং সাইবার অপরাধমূলক লেনদেন পরিচালিত হতো। ২০১৩ সালে তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত সাইটটি কয়েক মিলিয়ন ডলারের রাজস্ব সংগ্রহ করেছিল।
৪ দিন আগেঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি বাংলাদেশে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এর মাধ্যমে ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে চলা শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান ঘটে।
৮ দিন আগে