ইয়াসিন আরাফাত

ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর প্রভাব ইত্যাদি পাকিস্তানের পরিচয় হয়ে আছে অনেক দিন ধরেই। ইমরান খান সরকারের সময় এ দুই পরিচয় আরও প্রকট হয়েছে। সঙ্গে মার্কিন মিত্র থেকে চীনের মিত্র হিসেবে নতুন পরিচয়ও যুক্ত হয়েছে দেশটির নামের সঙ্গে। আর ভারতের সঙ্গে সীমান্ত লড়াইয়ের বিষয়টি তো আছেই। এই সবগুলো পরিচয়ের দিকেই এখন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা কড়া নজর রাখছেন। কারণ প্রতিবেশী আফগানিস্তান এবং এর ক্ষমতায় সদ্য বসা তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ক্ষমতা কেন্দ্রের সম্পর্ক। একদিকে চীনের সঙ্গে মৈত্রী, অন্যদিকে তালেবানের উৎস ও বিস্তারভূমি হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের পরিচয়; একদিকে ধর্মীয় লেবাস, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর ছদ্ম শাসন—সব মিলিয়ে ইমরান খান সরকারের অধীনে পাকিস্তান ঠিক কোন দিকে হাঁটছে, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানে এখনো ধর্ম অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কারও শাস্তি কার্যকর না হলেও এই শাস্তি কিন্তু প্রায়ই শোনানো হয়। আশির দশকে ধর্ম অবমাননার আইন সংশোধনের পর প্রায় ২ হাজার মানুষকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। ধর্ম অবমাননার দায়ে এ পর্যন্ত ১২৮ জন গণপিটুনিতে মারা গেছেন।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরমাণু শক্তিসমৃদ্ধ পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যেখানে বিজ্ঞানচর্চা কাগজে-কলমে থাকলেও গোঁড়ামিটা ঠিকই রয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যা-ই আসুক না কেন, ধর্মের প্রসঙ্গ এলে আর কোনো কিছু টেকে না। তখন শুধু সংস্কারই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
এই পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান। দেশটির সঙ্গে ২ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত রয়েছে পাকিস্তানের। সম্প্রতি আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। সেখানে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত সরকারের পতন ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, পাকিস্তানের সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। যদিও সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, পাকিস্তানের ৫৫ শতাংশ মানুষই তালেবান ক্ষমতায় আসায় খুশি।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী চামান শহরের কোমল পানীয় বিক্রেতা জয়নুল্লাহ আচাকজাইও রয়েছেন এই দলে। দ্য ইকোনমিস্টকে তিনি বলেন, ‘এটি এক মহান অর্জন।’
আবার অনেক পাকিস্তানি কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় আসাকে অমঙ্গল হিসেবেই দেখছে। তাদের শঙ্কা, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তা সন্ত্রাসীদের উর্বর ভূমিতে পরিণত হবে। এর প্রভাব পড়বে পাকিস্তানের ওপরও। এরই মধ্যে তালেবানের পতাকা ইসলামাবাদের মসজিদে টানানো হয়েছে। এমন আরও অনেক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা এই শঙ্কাকে ক্রমশ দৃঢ় করছে।
পর্যবেক্ষক সংস্থা সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বলা হয়, পাকিস্তানে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৩২৯ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে আফগান সীমান্তে।
পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় শঙ্কা হলো, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক বন্দীকে তারা ছেড়ে দিয়েছে। এঁদের মধ্যে পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতা ফকির মোহাম্মাদও রয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। ধারণা করা হয়, টিটিপির প্রায় ৫ হাজার সদস্য আফগানিস্তানে লুকিয়ে রয়েছে। ফকির মোহাম্মদের মুক্তির মধ্য দিয়ে এই ধারা ক্রমেই শক্তিশালী হবে। আর তাদের লক্ষ্য যে পাকিস্তানকেও আফগানিস্তানের ধারায় নেওয়া, তা তো বলা অবান্তর। মুক্তি পাওয়ার পরই ফকির মোহাম্মাদ বলেছেন, তালেবানের নিয়মই পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন তিনি।
বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একসময়কার বিখ্যাত এই ক্রিকেট অলরাউন্ডারের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বিলেতে। তাঁর গায়ে প্লেবয়ের তকমাও রয়েছে। তবে এখন নৈতিকতাবাদী ধর্মীয় রক্ষণশীল, অর্থনৈতিক অবস্থানে একজন লোকরঞ্জনবাদী এবং পাকিস্তানে গুলি চালানো জেনারেলদের একজন আজ্ঞাবহ সেবক হিসেবেই পরিচিত তিনি। সম্প্রতি তাঁর সরকার একটি আইন প্রস্তাব করেছে। সেখানে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবমাননাজনক কোনো কিছু বললে দুই বছরের জেল হতে পারে।
ধর্মের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অবস্থান নিয়েছেন ইমরান। গত সপ্তাহে ইসলামিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইমরান খান বলেন, ধর্মের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো আইন তাঁর সরকার করবে না।
ইমরান খানের সঙ্গে তালেবানের সখ্য দেখে কেউ কেউ তাঁকে ‘তালেবান খান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আগেই। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তিনি এখনো পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কোনো ফোনালাপ করেননি। তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য তাঁর এই নতুন নামকে আরও শক্ত ভিত দিচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইমরান খান তাঁর দেশে আফগান পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে লিখেছেন। তাঁর মতে, পশ্চিমা বাহিনী আফগান জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। সোভিয়েত বাহিনী, যারা আফগানিস্তানে লড়াই করেছিল, তাদের সঙ্গে পশ্চিমা বাহিনীর কোনো পার্থক্য দেখেন না ইমরান খান। তিনি ওই মতামতধর্মী নিবন্ধে লিখেছেন, ৩ লাখ সুসজ্জিত আফগান সেনাবাহিনীর তালেবানের সঙ্গে না পারার কারণ অবশ্যই পাকিস্তান নয়।
তবে নিজের সেই লেখায় মুদ্রার আরেক পিঠ দেখাননি ইমরান খান। তিনি উল্লেখ করেননি যে পাকিস্তানি ইসলামপন্থী দল ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে তালেবান নেতাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। ইমরান খান বলেছেন, ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাঁর দেশে ১৬ হাজার সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আর এগুলোর জন্য ভারতকে দুষেছেন তিনি। তবে আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন ইমরান খান। এ ছাড়া ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের গুপ্তচরেরা তালেবানকে সমর্থন দিয়ে আসছে। পাকিস্তানের জাতিগত গোষ্ঠী পশতুনদের ঐক্য নিয়ে তারা কখনোই কিছু বলে না এবং পাকিস্তানের কোনো অঞ্চল তালেবান নিজেদের বলে দাবি করে না। এ ছাড়া পাকিস্তান যে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকেও আশ্রয় দিয়েছিল, সে বিষয়টিও ইমরান খানের লেখায় ঊহ্য ছিল।
২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ইমরান খান। অনেক পাকিস্তানি মনে করেন, পাকিস্তানে প্রকৃত ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে। পাকিস্তানের কথিত দুর্নীতিবাজ সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইমরান খানের নিরলস যুদ্ধের নামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে নির্বাসনে পাঠানোসহ নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইমরান খান বিরোধী দলগুলোকে দুর্বল করতে সফল হয়েছেন। তিনি জনপ্রিয়তার চেয়ে বেশি বিভাজনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের মালিকদের হুমকি দিয়ে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তান সরকার সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের আনাড়ি প্রচেষ্টা করছে। এমনকি সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে এমন চর্চা প্রতিহতের কথা বলে রাষ্ট্র-নিযুক্ত পর্যবেক্ষণ বোর্ড তৈরির একটি আইনের প্রস্তাবও করা হয়েছে।
ইমরান খান এখন তালেবানের বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার এবং পাকিস্তানের দরিদ্র ‘ভাইদের’ জন্য সাহায্য পাঠানোর জন্য বিশ্বের কাছে যুক্তি উত্থাপন করছেন। পাকিস্তানে করোনার প্রকোপ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম ছিল। ইরানে করোনায় পাকিস্তানের চেয়ে দশগুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে। গত বছর করোনা শুরুর পর ভারতের মতো পুরোপুরি লকডাউন জারি করেননি ইমরান খান। এ জন্য অবশ্য ভারতের মতো ভুগতে হয়নি পাকিস্তানকে। এ ক্ষেত্রে ইমরান খান সফলই বলা যায়। গত আগস্টে হওয়া জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইমরান খানের জনপ্রিয়তা প্রায় ৪৮ শতাংশ, যা তাঁর শাসনামলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময় পর্যন্ত ইমরান খান ক্ষমতায় থাকতে পারলে তিনি হবেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় ছিলেন। এখন পর্যন্ত তাঁর জনপ্রিয়তার গ্রাফ যা, তাতে তিনি টানা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।
ইমরানের এই জনপ্রিয়তায় পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্টই সবচেয়ে বেশি খুশি বলে মনে করেন মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের মাধিয়া আফযান। তাঁর মতে, নওয়াজ শরিফ সেনাদের আজ্ঞার বাইরে চলতেন। ফলে তারা ইমরান খানকেই সমর্থন দেয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতার অন্যতম বড় ভাগীদার; নিয়ন্ত্রক বললেও ভুল হবে না। বহুবার তারা অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করেছে। তবে ক্রমেই তারা বুঝেছে, সময় বদলেছে। সরাসরি শাসনের চেয়ে রাজনৈতিক পন্থায় শাসনই শ্রেয়। আফগানিস্তানে যে ফল এসেছে, তা নিয়েও সন্তুষ্ট তারা। কারণ, তারা এর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় গুপ্তচরদের অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছে আফগানিস্তানকে বিভিন্ন নাশকতার কাজে ব্যবহার করে। নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে পাকিস্তান আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। গত আগস্টে কাবুলের দ্রুত পতন পাকিস্তানের খাতায় বোনাস পয়েন্ট হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পাকিস্তানের জন্য আরেকটি বাড়তি সুবিধা হলো এটি চীনকে বুঝিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে টিকবে না। ফলে এই খেলায় বেইজিংয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারণে তারা চীনকেও পাশে পাচ্ছে।
তালেবানের সব পক্ষই হয়তো পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষে নয়। তবে গত সেপ্টেম্বরে তালেবান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে, সেখানে হাক্কানি নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা রয়েছেন। এটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সমর্থিত অংশ। এ ছাড়া তালেবান প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মোল্লা ওমরের ছেলে আফগানিস্তানের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুবের পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে। তালেবানের সরকার গঠনের আগমুহূর্তে কাবুলে ছুটে গিয়েছিলেন আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ। বিশ্লেষকদের ধারণা, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারে আইএসআই তথা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও ইমরান খান সরকারের প্রভাব নিশ্চিত করতেই কাবুল সফরে গিয়েছিলেন তিনি।
পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক কর্তারা যদি কাবুলের সরকার পরিবর্তন থেকে লাভবান হন, তবে অন্য সবার কী হবে? দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১১ শতাংশ। ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে রুপির দাম ডলারের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ কমেছে। দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশ আর্থিক সংকটে ভুগছে। বর্তমানে প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি আর্থিক সাহায্য দরকার দেশটির। ওই টাকা দিয়ে ২০২১ থেকে ২০২৩ আর্থিক বছরে পাকিস্তান তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
আর্থিক এই সংকটের চিত্র উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও। সেখানে বলা হয়, বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার মামলায় পাকিস্তান শীর্ষ ১০ দেশের তালিকার একটি।
কল্যাণমূলক ইসলামি রাষ্ট্র গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান খান। কিন্তু বাদ সাধে ভঙ্গুর অর্থনীতি। অর্থনীতির পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হন তিনি। সংস্থাটি ২০১৯ সালে পাকিস্তানকে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়। এই অর্থের পুরোটা এখনো ছাড় করেনি আইএমএফ। এর মধ্যেই গত জুলাইয়ে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২২ বিলিয়ন ডলার।
ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান। এর বিনিময়ে বেইজিং পাকিস্তানের সঙ্গে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে। গড়ে তোলা হয়েছে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিশেষ অর্থনৈতিক করিডর (ইপিইসি)। পাকিস্তানের ভূখণ্ডে এসব প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, ইসলামাবাদ চীনা ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে গেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইডডেটা জানিয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পাকিস্তানকে ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার শর্তযুক্ত ঋণ।
সামরিক খাতেও ইসলামাবাদের চীনা নির্ভরশীলতা আগের তুলনায় বাড়ছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চীন যে পরিমাণ অস্ত্র রপ্তানি করেছে, তার ৩৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল পাকিস্তান—এমনটা জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। তবে চীন-পাকিস্তান মৈত্রীতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাগুলো। পাকিস্তানের মাটিতে চীনা প্রকল্পগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর এসব হামলা ঠেকাতে সফল হয়নি পাকিস্তান। এ অবস্থায় চীনকে খুশি রাখতে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা সরকারের নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছে পাকিস্তান সরকার।
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টার মনে করে, পাকিস্তান নিজেদের পুনর্বাসনের জন্য আফগানিস্তানকে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। পাকিস্তান এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার একমাত্র উপায় হিসেবে তালেবান সরকারের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোকে সাহায্য করতে চায়। ইমরান খানের সামনে এখন মোটাদাগে তিনটি চ্যালেঞ্জ—পতনশীল অর্থনীতিকে দ্রুত টেনে তোলা, চীনের সঙ্গে মৈত্রী ধরে রেখে জিনজিয়াং নিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতি স্পষ্ট করা এবং আফগানিস্তানে সম্ভাব্য মানবিক সংকট কার্যকর উপায়ে সামাল দেওয়া। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁকে কৌশলী হতে হবে। একই সঙ্গে দেশে-বিদেশে তাঁর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে হবে। তাহলে সফলভাবে টিকে যাবে ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবন।

ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর প্রভাব ইত্যাদি পাকিস্তানের পরিচয় হয়ে আছে অনেক দিন ধরেই। ইমরান খান সরকারের সময় এ দুই পরিচয় আরও প্রকট হয়েছে। সঙ্গে মার্কিন মিত্র থেকে চীনের মিত্র হিসেবে নতুন পরিচয়ও যুক্ত হয়েছে দেশটির নামের সঙ্গে। আর ভারতের সঙ্গে সীমান্ত লড়াইয়ের বিষয়টি তো আছেই। এই সবগুলো পরিচয়ের দিকেই এখন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা কড়া নজর রাখছেন। কারণ প্রতিবেশী আফগানিস্তান এবং এর ক্ষমতায় সদ্য বসা তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ক্ষমতা কেন্দ্রের সম্পর্ক। একদিকে চীনের সঙ্গে মৈত্রী, অন্যদিকে তালেবানের উৎস ও বিস্তারভূমি হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের পরিচয়; একদিকে ধর্মীয় লেবাস, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর ছদ্ম শাসন—সব মিলিয়ে ইমরান খান সরকারের অধীনে পাকিস্তান ঠিক কোন দিকে হাঁটছে, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানে এখনো ধর্ম অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কারও শাস্তি কার্যকর না হলেও এই শাস্তি কিন্তু প্রায়ই শোনানো হয়। আশির দশকে ধর্ম অবমাননার আইন সংশোধনের পর প্রায় ২ হাজার মানুষকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। ধর্ম অবমাননার দায়ে এ পর্যন্ত ১২৮ জন গণপিটুনিতে মারা গেছেন।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরমাণু শক্তিসমৃদ্ধ পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যেখানে বিজ্ঞানচর্চা কাগজে-কলমে থাকলেও গোঁড়ামিটা ঠিকই রয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যা-ই আসুক না কেন, ধর্মের প্রসঙ্গ এলে আর কোনো কিছু টেকে না। তখন শুধু সংস্কারই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
এই পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান। দেশটির সঙ্গে ২ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত রয়েছে পাকিস্তানের। সম্প্রতি আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। সেখানে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত সরকারের পতন ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, পাকিস্তানের সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। যদিও সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, পাকিস্তানের ৫৫ শতাংশ মানুষই তালেবান ক্ষমতায় আসায় খুশি।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী চামান শহরের কোমল পানীয় বিক্রেতা জয়নুল্লাহ আচাকজাইও রয়েছেন এই দলে। দ্য ইকোনমিস্টকে তিনি বলেন, ‘এটি এক মহান অর্জন।’
আবার অনেক পাকিস্তানি কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় আসাকে অমঙ্গল হিসেবেই দেখছে। তাদের শঙ্কা, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তা সন্ত্রাসীদের উর্বর ভূমিতে পরিণত হবে। এর প্রভাব পড়বে পাকিস্তানের ওপরও। এরই মধ্যে তালেবানের পতাকা ইসলামাবাদের মসজিদে টানানো হয়েছে। এমন আরও অনেক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা এই শঙ্কাকে ক্রমশ দৃঢ় করছে।
পর্যবেক্ষক সংস্থা সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বলা হয়, পাকিস্তানে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৩২৯ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে আফগান সীমান্তে।
পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় শঙ্কা হলো, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক বন্দীকে তারা ছেড়ে দিয়েছে। এঁদের মধ্যে পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতা ফকির মোহাম্মাদও রয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। ধারণা করা হয়, টিটিপির প্রায় ৫ হাজার সদস্য আফগানিস্তানে লুকিয়ে রয়েছে। ফকির মোহাম্মদের মুক্তির মধ্য দিয়ে এই ধারা ক্রমেই শক্তিশালী হবে। আর তাদের লক্ষ্য যে পাকিস্তানকেও আফগানিস্তানের ধারায় নেওয়া, তা তো বলা অবান্তর। মুক্তি পাওয়ার পরই ফকির মোহাম্মাদ বলেছেন, তালেবানের নিয়মই পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন তিনি।
বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একসময়কার বিখ্যাত এই ক্রিকেট অলরাউন্ডারের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বিলেতে। তাঁর গায়ে প্লেবয়ের তকমাও রয়েছে। তবে এখন নৈতিকতাবাদী ধর্মীয় রক্ষণশীল, অর্থনৈতিক অবস্থানে একজন লোকরঞ্জনবাদী এবং পাকিস্তানে গুলি চালানো জেনারেলদের একজন আজ্ঞাবহ সেবক হিসেবেই পরিচিত তিনি। সম্প্রতি তাঁর সরকার একটি আইন প্রস্তাব করেছে। সেখানে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবমাননাজনক কোনো কিছু বললে দুই বছরের জেল হতে পারে।
ধর্মের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অবস্থান নিয়েছেন ইমরান। গত সপ্তাহে ইসলামিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইমরান খান বলেন, ধর্মের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো আইন তাঁর সরকার করবে না।
ইমরান খানের সঙ্গে তালেবানের সখ্য দেখে কেউ কেউ তাঁকে ‘তালেবান খান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আগেই। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তিনি এখনো পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কোনো ফোনালাপ করেননি। তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য তাঁর এই নতুন নামকে আরও শক্ত ভিত দিচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইমরান খান তাঁর দেশে আফগান পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে লিখেছেন। তাঁর মতে, পশ্চিমা বাহিনী আফগান জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। সোভিয়েত বাহিনী, যারা আফগানিস্তানে লড়াই করেছিল, তাদের সঙ্গে পশ্চিমা বাহিনীর কোনো পার্থক্য দেখেন না ইমরান খান। তিনি ওই মতামতধর্মী নিবন্ধে লিখেছেন, ৩ লাখ সুসজ্জিত আফগান সেনাবাহিনীর তালেবানের সঙ্গে না পারার কারণ অবশ্যই পাকিস্তান নয়।
তবে নিজের সেই লেখায় মুদ্রার আরেক পিঠ দেখাননি ইমরান খান। তিনি উল্লেখ করেননি যে পাকিস্তানি ইসলামপন্থী দল ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে তালেবান নেতাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। ইমরান খান বলেছেন, ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাঁর দেশে ১৬ হাজার সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আর এগুলোর জন্য ভারতকে দুষেছেন তিনি। তবে আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন ইমরান খান। এ ছাড়া ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের গুপ্তচরেরা তালেবানকে সমর্থন দিয়ে আসছে। পাকিস্তানের জাতিগত গোষ্ঠী পশতুনদের ঐক্য নিয়ে তারা কখনোই কিছু বলে না এবং পাকিস্তানের কোনো অঞ্চল তালেবান নিজেদের বলে দাবি করে না। এ ছাড়া পাকিস্তান যে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকেও আশ্রয় দিয়েছিল, সে বিষয়টিও ইমরান খানের লেখায় ঊহ্য ছিল।
২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ইমরান খান। অনেক পাকিস্তানি মনে করেন, পাকিস্তানে প্রকৃত ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে। পাকিস্তানের কথিত দুর্নীতিবাজ সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইমরান খানের নিরলস যুদ্ধের নামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে নির্বাসনে পাঠানোসহ নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইমরান খান বিরোধী দলগুলোকে দুর্বল করতে সফল হয়েছেন। তিনি জনপ্রিয়তার চেয়ে বেশি বিভাজনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের মালিকদের হুমকি দিয়ে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তান সরকার সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের আনাড়ি প্রচেষ্টা করছে। এমনকি সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে এমন চর্চা প্রতিহতের কথা বলে রাষ্ট্র-নিযুক্ত পর্যবেক্ষণ বোর্ড তৈরির একটি আইনের প্রস্তাবও করা হয়েছে।
ইমরান খান এখন তালেবানের বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার এবং পাকিস্তানের দরিদ্র ‘ভাইদের’ জন্য সাহায্য পাঠানোর জন্য বিশ্বের কাছে যুক্তি উত্থাপন করছেন। পাকিস্তানে করোনার প্রকোপ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম ছিল। ইরানে করোনায় পাকিস্তানের চেয়ে দশগুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে। গত বছর করোনা শুরুর পর ভারতের মতো পুরোপুরি লকডাউন জারি করেননি ইমরান খান। এ জন্য অবশ্য ভারতের মতো ভুগতে হয়নি পাকিস্তানকে। এ ক্ষেত্রে ইমরান খান সফলই বলা যায়। গত আগস্টে হওয়া জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইমরান খানের জনপ্রিয়তা প্রায় ৪৮ শতাংশ, যা তাঁর শাসনামলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময় পর্যন্ত ইমরান খান ক্ষমতায় থাকতে পারলে তিনি হবেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় ছিলেন। এখন পর্যন্ত তাঁর জনপ্রিয়তার গ্রাফ যা, তাতে তিনি টানা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।
ইমরানের এই জনপ্রিয়তায় পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্টই সবচেয়ে বেশি খুশি বলে মনে করেন মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের মাধিয়া আফযান। তাঁর মতে, নওয়াজ শরিফ সেনাদের আজ্ঞার বাইরে চলতেন। ফলে তারা ইমরান খানকেই সমর্থন দেয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতার অন্যতম বড় ভাগীদার; নিয়ন্ত্রক বললেও ভুল হবে না। বহুবার তারা অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করেছে। তবে ক্রমেই তারা বুঝেছে, সময় বদলেছে। সরাসরি শাসনের চেয়ে রাজনৈতিক পন্থায় শাসনই শ্রেয়। আফগানিস্তানে যে ফল এসেছে, তা নিয়েও সন্তুষ্ট তারা। কারণ, তারা এর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় গুপ্তচরদের অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছে আফগানিস্তানকে বিভিন্ন নাশকতার কাজে ব্যবহার করে। নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে পাকিস্তান আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। গত আগস্টে কাবুলের দ্রুত পতন পাকিস্তানের খাতায় বোনাস পয়েন্ট হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পাকিস্তানের জন্য আরেকটি বাড়তি সুবিধা হলো এটি চীনকে বুঝিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে টিকবে না। ফলে এই খেলায় বেইজিংয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারণে তারা চীনকেও পাশে পাচ্ছে।
তালেবানের সব পক্ষই হয়তো পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষে নয়। তবে গত সেপ্টেম্বরে তালেবান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে, সেখানে হাক্কানি নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা রয়েছেন। এটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সমর্থিত অংশ। এ ছাড়া তালেবান প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মোল্লা ওমরের ছেলে আফগানিস্তানের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুবের পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে। তালেবানের সরকার গঠনের আগমুহূর্তে কাবুলে ছুটে গিয়েছিলেন আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ। বিশ্লেষকদের ধারণা, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারে আইএসআই তথা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও ইমরান খান সরকারের প্রভাব নিশ্চিত করতেই কাবুল সফরে গিয়েছিলেন তিনি।
পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক কর্তারা যদি কাবুলের সরকার পরিবর্তন থেকে লাভবান হন, তবে অন্য সবার কী হবে? দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১১ শতাংশ। ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে রুপির দাম ডলারের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ কমেছে। দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশ আর্থিক সংকটে ভুগছে। বর্তমানে প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি আর্থিক সাহায্য দরকার দেশটির। ওই টাকা দিয়ে ২০২১ থেকে ২০২৩ আর্থিক বছরে পাকিস্তান তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
আর্থিক এই সংকটের চিত্র উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও। সেখানে বলা হয়, বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার মামলায় পাকিস্তান শীর্ষ ১০ দেশের তালিকার একটি।
কল্যাণমূলক ইসলামি রাষ্ট্র গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান খান। কিন্তু বাদ সাধে ভঙ্গুর অর্থনীতি। অর্থনীতির পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হন তিনি। সংস্থাটি ২০১৯ সালে পাকিস্তানকে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়। এই অর্থের পুরোটা এখনো ছাড় করেনি আইএমএফ। এর মধ্যেই গত জুলাইয়ে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২২ বিলিয়ন ডলার।
ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান। এর বিনিময়ে বেইজিং পাকিস্তানের সঙ্গে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে। গড়ে তোলা হয়েছে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিশেষ অর্থনৈতিক করিডর (ইপিইসি)। পাকিস্তানের ভূখণ্ডে এসব প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, ইসলামাবাদ চীনা ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে গেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইডডেটা জানিয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পাকিস্তানকে ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার শর্তযুক্ত ঋণ।
সামরিক খাতেও ইসলামাবাদের চীনা নির্ভরশীলতা আগের তুলনায় বাড়ছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চীন যে পরিমাণ অস্ত্র রপ্তানি করেছে, তার ৩৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল পাকিস্তান—এমনটা জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। তবে চীন-পাকিস্তান মৈত্রীতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাগুলো। পাকিস্তানের মাটিতে চীনা প্রকল্পগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর এসব হামলা ঠেকাতে সফল হয়নি পাকিস্তান। এ অবস্থায় চীনকে খুশি রাখতে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা সরকারের নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছে পাকিস্তান সরকার।
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টার মনে করে, পাকিস্তান নিজেদের পুনর্বাসনের জন্য আফগানিস্তানকে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। পাকিস্তান এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার একমাত্র উপায় হিসেবে তালেবান সরকারের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোকে সাহায্য করতে চায়। ইমরান খানের সামনে এখন মোটাদাগে তিনটি চ্যালেঞ্জ—পতনশীল অর্থনীতিকে দ্রুত টেনে তোলা, চীনের সঙ্গে মৈত্রী ধরে রেখে জিনজিয়াং নিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতি স্পষ্ট করা এবং আফগানিস্তানে সম্ভাব্য মানবিক সংকট কার্যকর উপায়ে সামাল দেওয়া। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁকে কৌশলী হতে হবে। একই সঙ্গে দেশে-বিদেশে তাঁর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে হবে। তাহলে সফলভাবে টিকে যাবে ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবন।
ইয়াসিন আরাফাত

ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর প্রভাব ইত্যাদি পাকিস্তানের পরিচয় হয়ে আছে অনেক দিন ধরেই। ইমরান খান সরকারের সময় এ দুই পরিচয় আরও প্রকট হয়েছে। সঙ্গে মার্কিন মিত্র থেকে চীনের মিত্র হিসেবে নতুন পরিচয়ও যুক্ত হয়েছে দেশটির নামের সঙ্গে। আর ভারতের সঙ্গে সীমান্ত লড়াইয়ের বিষয়টি তো আছেই। এই সবগুলো পরিচয়ের দিকেই এখন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা কড়া নজর রাখছেন। কারণ প্রতিবেশী আফগানিস্তান এবং এর ক্ষমতায় সদ্য বসা তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ক্ষমতা কেন্দ্রের সম্পর্ক। একদিকে চীনের সঙ্গে মৈত্রী, অন্যদিকে তালেবানের উৎস ও বিস্তারভূমি হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের পরিচয়; একদিকে ধর্মীয় লেবাস, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর ছদ্ম শাসন—সব মিলিয়ে ইমরান খান সরকারের অধীনে পাকিস্তান ঠিক কোন দিকে হাঁটছে, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানে এখনো ধর্ম অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কারও শাস্তি কার্যকর না হলেও এই শাস্তি কিন্তু প্রায়ই শোনানো হয়। আশির দশকে ধর্ম অবমাননার আইন সংশোধনের পর প্রায় ২ হাজার মানুষকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। ধর্ম অবমাননার দায়ে এ পর্যন্ত ১২৮ জন গণপিটুনিতে মারা গেছেন।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরমাণু শক্তিসমৃদ্ধ পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যেখানে বিজ্ঞানচর্চা কাগজে-কলমে থাকলেও গোঁড়ামিটা ঠিকই রয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যা-ই আসুক না কেন, ধর্মের প্রসঙ্গ এলে আর কোনো কিছু টেকে না। তখন শুধু সংস্কারই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
এই পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান। দেশটির সঙ্গে ২ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত রয়েছে পাকিস্তানের। সম্প্রতি আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। সেখানে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত সরকারের পতন ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, পাকিস্তানের সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। যদিও সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, পাকিস্তানের ৫৫ শতাংশ মানুষই তালেবান ক্ষমতায় আসায় খুশি।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী চামান শহরের কোমল পানীয় বিক্রেতা জয়নুল্লাহ আচাকজাইও রয়েছেন এই দলে। দ্য ইকোনমিস্টকে তিনি বলেন, ‘এটি এক মহান অর্জন।’
আবার অনেক পাকিস্তানি কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় আসাকে অমঙ্গল হিসেবেই দেখছে। তাদের শঙ্কা, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তা সন্ত্রাসীদের উর্বর ভূমিতে পরিণত হবে। এর প্রভাব পড়বে পাকিস্তানের ওপরও। এরই মধ্যে তালেবানের পতাকা ইসলামাবাদের মসজিদে টানানো হয়েছে। এমন আরও অনেক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা এই শঙ্কাকে ক্রমশ দৃঢ় করছে।
পর্যবেক্ষক সংস্থা সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বলা হয়, পাকিস্তানে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৩২৯ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে আফগান সীমান্তে।
পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় শঙ্কা হলো, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক বন্দীকে তারা ছেড়ে দিয়েছে। এঁদের মধ্যে পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতা ফকির মোহাম্মাদও রয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। ধারণা করা হয়, টিটিপির প্রায় ৫ হাজার সদস্য আফগানিস্তানে লুকিয়ে রয়েছে। ফকির মোহাম্মদের মুক্তির মধ্য দিয়ে এই ধারা ক্রমেই শক্তিশালী হবে। আর তাদের লক্ষ্য যে পাকিস্তানকেও আফগানিস্তানের ধারায় নেওয়া, তা তো বলা অবান্তর। মুক্তি পাওয়ার পরই ফকির মোহাম্মাদ বলেছেন, তালেবানের নিয়মই পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন তিনি।
বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একসময়কার বিখ্যাত এই ক্রিকেট অলরাউন্ডারের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বিলেতে। তাঁর গায়ে প্লেবয়ের তকমাও রয়েছে। তবে এখন নৈতিকতাবাদী ধর্মীয় রক্ষণশীল, অর্থনৈতিক অবস্থানে একজন লোকরঞ্জনবাদী এবং পাকিস্তানে গুলি চালানো জেনারেলদের একজন আজ্ঞাবহ সেবক হিসেবেই পরিচিত তিনি। সম্প্রতি তাঁর সরকার একটি আইন প্রস্তাব করেছে। সেখানে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবমাননাজনক কোনো কিছু বললে দুই বছরের জেল হতে পারে।
ধর্মের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অবস্থান নিয়েছেন ইমরান। গত সপ্তাহে ইসলামিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইমরান খান বলেন, ধর্মের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো আইন তাঁর সরকার করবে না।
ইমরান খানের সঙ্গে তালেবানের সখ্য দেখে কেউ কেউ তাঁকে ‘তালেবান খান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আগেই। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তিনি এখনো পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কোনো ফোনালাপ করেননি। তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য তাঁর এই নতুন নামকে আরও শক্ত ভিত দিচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইমরান খান তাঁর দেশে আফগান পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে লিখেছেন। তাঁর মতে, পশ্চিমা বাহিনী আফগান জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। সোভিয়েত বাহিনী, যারা আফগানিস্তানে লড়াই করেছিল, তাদের সঙ্গে পশ্চিমা বাহিনীর কোনো পার্থক্য দেখেন না ইমরান খান। তিনি ওই মতামতধর্মী নিবন্ধে লিখেছেন, ৩ লাখ সুসজ্জিত আফগান সেনাবাহিনীর তালেবানের সঙ্গে না পারার কারণ অবশ্যই পাকিস্তান নয়।
তবে নিজের সেই লেখায় মুদ্রার আরেক পিঠ দেখাননি ইমরান খান। তিনি উল্লেখ করেননি যে পাকিস্তানি ইসলামপন্থী দল ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে তালেবান নেতাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। ইমরান খান বলেছেন, ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাঁর দেশে ১৬ হাজার সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আর এগুলোর জন্য ভারতকে দুষেছেন তিনি। তবে আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন ইমরান খান। এ ছাড়া ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের গুপ্তচরেরা তালেবানকে সমর্থন দিয়ে আসছে। পাকিস্তানের জাতিগত গোষ্ঠী পশতুনদের ঐক্য নিয়ে তারা কখনোই কিছু বলে না এবং পাকিস্তানের কোনো অঞ্চল তালেবান নিজেদের বলে দাবি করে না। এ ছাড়া পাকিস্তান যে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকেও আশ্রয় দিয়েছিল, সে বিষয়টিও ইমরান খানের লেখায় ঊহ্য ছিল।
২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ইমরান খান। অনেক পাকিস্তানি মনে করেন, পাকিস্তানে প্রকৃত ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে। পাকিস্তানের কথিত দুর্নীতিবাজ সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইমরান খানের নিরলস যুদ্ধের নামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে নির্বাসনে পাঠানোসহ নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইমরান খান বিরোধী দলগুলোকে দুর্বল করতে সফল হয়েছেন। তিনি জনপ্রিয়তার চেয়ে বেশি বিভাজনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের মালিকদের হুমকি দিয়ে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তান সরকার সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের আনাড়ি প্রচেষ্টা করছে। এমনকি সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে এমন চর্চা প্রতিহতের কথা বলে রাষ্ট্র-নিযুক্ত পর্যবেক্ষণ বোর্ড তৈরির একটি আইনের প্রস্তাবও করা হয়েছে।
ইমরান খান এখন তালেবানের বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার এবং পাকিস্তানের দরিদ্র ‘ভাইদের’ জন্য সাহায্য পাঠানোর জন্য বিশ্বের কাছে যুক্তি উত্থাপন করছেন। পাকিস্তানে করোনার প্রকোপ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম ছিল। ইরানে করোনায় পাকিস্তানের চেয়ে দশগুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে। গত বছর করোনা শুরুর পর ভারতের মতো পুরোপুরি লকডাউন জারি করেননি ইমরান খান। এ জন্য অবশ্য ভারতের মতো ভুগতে হয়নি পাকিস্তানকে। এ ক্ষেত্রে ইমরান খান সফলই বলা যায়। গত আগস্টে হওয়া জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইমরান খানের জনপ্রিয়তা প্রায় ৪৮ শতাংশ, যা তাঁর শাসনামলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময় পর্যন্ত ইমরান খান ক্ষমতায় থাকতে পারলে তিনি হবেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় ছিলেন। এখন পর্যন্ত তাঁর জনপ্রিয়তার গ্রাফ যা, তাতে তিনি টানা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।
ইমরানের এই জনপ্রিয়তায় পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্টই সবচেয়ে বেশি খুশি বলে মনে করেন মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের মাধিয়া আফযান। তাঁর মতে, নওয়াজ শরিফ সেনাদের আজ্ঞার বাইরে চলতেন। ফলে তারা ইমরান খানকেই সমর্থন দেয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতার অন্যতম বড় ভাগীদার; নিয়ন্ত্রক বললেও ভুল হবে না। বহুবার তারা অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করেছে। তবে ক্রমেই তারা বুঝেছে, সময় বদলেছে। সরাসরি শাসনের চেয়ে রাজনৈতিক পন্থায় শাসনই শ্রেয়। আফগানিস্তানে যে ফল এসেছে, তা নিয়েও সন্তুষ্ট তারা। কারণ, তারা এর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় গুপ্তচরদের অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছে আফগানিস্তানকে বিভিন্ন নাশকতার কাজে ব্যবহার করে। নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে পাকিস্তান আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। গত আগস্টে কাবুলের দ্রুত পতন পাকিস্তানের খাতায় বোনাস পয়েন্ট হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পাকিস্তানের জন্য আরেকটি বাড়তি সুবিধা হলো এটি চীনকে বুঝিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে টিকবে না। ফলে এই খেলায় বেইজিংয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারণে তারা চীনকেও পাশে পাচ্ছে।
তালেবানের সব পক্ষই হয়তো পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষে নয়। তবে গত সেপ্টেম্বরে তালেবান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে, সেখানে হাক্কানি নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা রয়েছেন। এটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সমর্থিত অংশ। এ ছাড়া তালেবান প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মোল্লা ওমরের ছেলে আফগানিস্তানের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুবের পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে। তালেবানের সরকার গঠনের আগমুহূর্তে কাবুলে ছুটে গিয়েছিলেন আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ। বিশ্লেষকদের ধারণা, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারে আইএসআই তথা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও ইমরান খান সরকারের প্রভাব নিশ্চিত করতেই কাবুল সফরে গিয়েছিলেন তিনি।
পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক কর্তারা যদি কাবুলের সরকার পরিবর্তন থেকে লাভবান হন, তবে অন্য সবার কী হবে? দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১১ শতাংশ। ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে রুপির দাম ডলারের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ কমেছে। দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশ আর্থিক সংকটে ভুগছে। বর্তমানে প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি আর্থিক সাহায্য দরকার দেশটির। ওই টাকা দিয়ে ২০২১ থেকে ২০২৩ আর্থিক বছরে পাকিস্তান তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
আর্থিক এই সংকটের চিত্র উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও। সেখানে বলা হয়, বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার মামলায় পাকিস্তান শীর্ষ ১০ দেশের তালিকার একটি।
কল্যাণমূলক ইসলামি রাষ্ট্র গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান খান। কিন্তু বাদ সাধে ভঙ্গুর অর্থনীতি। অর্থনীতির পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হন তিনি। সংস্থাটি ২০১৯ সালে পাকিস্তানকে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়। এই অর্থের পুরোটা এখনো ছাড় করেনি আইএমএফ। এর মধ্যেই গত জুলাইয়ে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২২ বিলিয়ন ডলার।
ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান। এর বিনিময়ে বেইজিং পাকিস্তানের সঙ্গে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে। গড়ে তোলা হয়েছে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিশেষ অর্থনৈতিক করিডর (ইপিইসি)। পাকিস্তানের ভূখণ্ডে এসব প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, ইসলামাবাদ চীনা ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে গেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইডডেটা জানিয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পাকিস্তানকে ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার শর্তযুক্ত ঋণ।
সামরিক খাতেও ইসলামাবাদের চীনা নির্ভরশীলতা আগের তুলনায় বাড়ছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চীন যে পরিমাণ অস্ত্র রপ্তানি করেছে, তার ৩৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল পাকিস্তান—এমনটা জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। তবে চীন-পাকিস্তান মৈত্রীতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাগুলো। পাকিস্তানের মাটিতে চীনা প্রকল্পগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর এসব হামলা ঠেকাতে সফল হয়নি পাকিস্তান। এ অবস্থায় চীনকে খুশি রাখতে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা সরকারের নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছে পাকিস্তান সরকার।
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টার মনে করে, পাকিস্তান নিজেদের পুনর্বাসনের জন্য আফগানিস্তানকে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। পাকিস্তান এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার একমাত্র উপায় হিসেবে তালেবান সরকারের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোকে সাহায্য করতে চায়। ইমরান খানের সামনে এখন মোটাদাগে তিনটি চ্যালেঞ্জ—পতনশীল অর্থনীতিকে দ্রুত টেনে তোলা, চীনের সঙ্গে মৈত্রী ধরে রেখে জিনজিয়াং নিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতি স্পষ্ট করা এবং আফগানিস্তানে সম্ভাব্য মানবিক সংকট কার্যকর উপায়ে সামাল দেওয়া। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁকে কৌশলী হতে হবে। একই সঙ্গে দেশে-বিদেশে তাঁর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে হবে। তাহলে সফলভাবে টিকে যাবে ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবন।

ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর প্রভাব ইত্যাদি পাকিস্তানের পরিচয় হয়ে আছে অনেক দিন ধরেই। ইমরান খান সরকারের সময় এ দুই পরিচয় আরও প্রকট হয়েছে। সঙ্গে মার্কিন মিত্র থেকে চীনের মিত্র হিসেবে নতুন পরিচয়ও যুক্ত হয়েছে দেশটির নামের সঙ্গে। আর ভারতের সঙ্গে সীমান্ত লড়াইয়ের বিষয়টি তো আছেই। এই সবগুলো পরিচয়ের দিকেই এখন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা কড়া নজর রাখছেন। কারণ প্রতিবেশী আফগানিস্তান এবং এর ক্ষমতায় সদ্য বসা তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ক্ষমতা কেন্দ্রের সম্পর্ক। একদিকে চীনের সঙ্গে মৈত্রী, অন্যদিকে তালেবানের উৎস ও বিস্তারভূমি হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের পরিচয়; একদিকে ধর্মীয় লেবাস, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর ছদ্ম শাসন—সব মিলিয়ে ইমরান খান সরকারের অধীনে পাকিস্তান ঠিক কোন দিকে হাঁটছে, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানে এখনো ধর্ম অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কারও শাস্তি কার্যকর না হলেও এই শাস্তি কিন্তু প্রায়ই শোনানো হয়। আশির দশকে ধর্ম অবমাননার আইন সংশোধনের পর প্রায় ২ হাজার মানুষকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। ধর্ম অবমাননার দায়ে এ পর্যন্ত ১২৮ জন গণপিটুনিতে মারা গেছেন।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরমাণু শক্তিসমৃদ্ধ পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যেখানে বিজ্ঞানচর্চা কাগজে-কলমে থাকলেও গোঁড়ামিটা ঠিকই রয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যা-ই আসুক না কেন, ধর্মের প্রসঙ্গ এলে আর কোনো কিছু টেকে না। তখন শুধু সংস্কারই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
এই পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান। দেশটির সঙ্গে ২ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত রয়েছে পাকিস্তানের। সম্প্রতি আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। সেখানে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত সরকারের পতন ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, পাকিস্তানের সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। যদিও সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, পাকিস্তানের ৫৫ শতাংশ মানুষই তালেবান ক্ষমতায় আসায় খুশি।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী চামান শহরের কোমল পানীয় বিক্রেতা জয়নুল্লাহ আচাকজাইও রয়েছেন এই দলে। দ্য ইকোনমিস্টকে তিনি বলেন, ‘এটি এক মহান অর্জন।’
আবার অনেক পাকিস্তানি কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় আসাকে অমঙ্গল হিসেবেই দেখছে। তাদের শঙ্কা, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তা সন্ত্রাসীদের উর্বর ভূমিতে পরিণত হবে। এর প্রভাব পড়বে পাকিস্তানের ওপরও। এরই মধ্যে তালেবানের পতাকা ইসলামাবাদের মসজিদে টানানো হয়েছে। এমন আরও অনেক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা এই শঙ্কাকে ক্রমশ দৃঢ় করছে।
পর্যবেক্ষক সংস্থা সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বলা হয়, পাকিস্তানে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৩২৯ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে আফগান সীমান্তে।
পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় শঙ্কা হলো, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক বন্দীকে তারা ছেড়ে দিয়েছে। এঁদের মধ্যে পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতা ফকির মোহাম্মাদও রয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। ধারণা করা হয়, টিটিপির প্রায় ৫ হাজার সদস্য আফগানিস্তানে লুকিয়ে রয়েছে। ফকির মোহাম্মদের মুক্তির মধ্য দিয়ে এই ধারা ক্রমেই শক্তিশালী হবে। আর তাদের লক্ষ্য যে পাকিস্তানকেও আফগানিস্তানের ধারায় নেওয়া, তা তো বলা অবান্তর। মুক্তি পাওয়ার পরই ফকির মোহাম্মাদ বলেছেন, তালেবানের নিয়মই পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন তিনি।
বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একসময়কার বিখ্যাত এই ক্রিকেট অলরাউন্ডারের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বিলেতে। তাঁর গায়ে প্লেবয়ের তকমাও রয়েছে। তবে এখন নৈতিকতাবাদী ধর্মীয় রক্ষণশীল, অর্থনৈতিক অবস্থানে একজন লোকরঞ্জনবাদী এবং পাকিস্তানে গুলি চালানো জেনারেলদের একজন আজ্ঞাবহ সেবক হিসেবেই পরিচিত তিনি। সম্প্রতি তাঁর সরকার একটি আইন প্রস্তাব করেছে। সেখানে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবমাননাজনক কোনো কিছু বললে দুই বছরের জেল হতে পারে।
ধর্মের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অবস্থান নিয়েছেন ইমরান। গত সপ্তাহে ইসলামিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইমরান খান বলেন, ধর্মের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো আইন তাঁর সরকার করবে না।
ইমরান খানের সঙ্গে তালেবানের সখ্য দেখে কেউ কেউ তাঁকে ‘তালেবান খান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আগেই। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তিনি এখনো পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কোনো ফোনালাপ করেননি। তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য তাঁর এই নতুন নামকে আরও শক্ত ভিত দিচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইমরান খান তাঁর দেশে আফগান পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে লিখেছেন। তাঁর মতে, পশ্চিমা বাহিনী আফগান জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। সোভিয়েত বাহিনী, যারা আফগানিস্তানে লড়াই করেছিল, তাদের সঙ্গে পশ্চিমা বাহিনীর কোনো পার্থক্য দেখেন না ইমরান খান। তিনি ওই মতামতধর্মী নিবন্ধে লিখেছেন, ৩ লাখ সুসজ্জিত আফগান সেনাবাহিনীর তালেবানের সঙ্গে না পারার কারণ অবশ্যই পাকিস্তান নয়।
তবে নিজের সেই লেখায় মুদ্রার আরেক পিঠ দেখাননি ইমরান খান। তিনি উল্লেখ করেননি যে পাকিস্তানি ইসলামপন্থী দল ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে তালেবান নেতাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। ইমরান খান বলেছেন, ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাঁর দেশে ১৬ হাজার সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আর এগুলোর জন্য ভারতকে দুষেছেন তিনি। তবে আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন ইমরান খান। এ ছাড়া ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের গুপ্তচরেরা তালেবানকে সমর্থন দিয়ে আসছে। পাকিস্তানের জাতিগত গোষ্ঠী পশতুনদের ঐক্য নিয়ে তারা কখনোই কিছু বলে না এবং পাকিস্তানের কোনো অঞ্চল তালেবান নিজেদের বলে দাবি করে না। এ ছাড়া পাকিস্তান যে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকেও আশ্রয় দিয়েছিল, সে বিষয়টিও ইমরান খানের লেখায় ঊহ্য ছিল।
২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ইমরান খান। অনেক পাকিস্তানি মনে করেন, পাকিস্তানে প্রকৃত ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে। পাকিস্তানের কথিত দুর্নীতিবাজ সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইমরান খানের নিরলস যুদ্ধের নামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে নির্বাসনে পাঠানোসহ নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইমরান খান বিরোধী দলগুলোকে দুর্বল করতে সফল হয়েছেন। তিনি জনপ্রিয়তার চেয়ে বেশি বিভাজনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের মালিকদের হুমকি দিয়ে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তান সরকার সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের আনাড়ি প্রচেষ্টা করছে। এমনকি সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে এমন চর্চা প্রতিহতের কথা বলে রাষ্ট্র-নিযুক্ত পর্যবেক্ষণ বোর্ড তৈরির একটি আইনের প্রস্তাবও করা হয়েছে।
ইমরান খান এখন তালেবানের বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার এবং পাকিস্তানের দরিদ্র ‘ভাইদের’ জন্য সাহায্য পাঠানোর জন্য বিশ্বের কাছে যুক্তি উত্থাপন করছেন। পাকিস্তানে করোনার প্রকোপ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম ছিল। ইরানে করোনায় পাকিস্তানের চেয়ে দশগুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে। গত বছর করোনা শুরুর পর ভারতের মতো পুরোপুরি লকডাউন জারি করেননি ইমরান খান। এ জন্য অবশ্য ভারতের মতো ভুগতে হয়নি পাকিস্তানকে। এ ক্ষেত্রে ইমরান খান সফলই বলা যায়। গত আগস্টে হওয়া জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইমরান খানের জনপ্রিয়তা প্রায় ৪৮ শতাংশ, যা তাঁর শাসনামলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময় পর্যন্ত ইমরান খান ক্ষমতায় থাকতে পারলে তিনি হবেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় ছিলেন। এখন পর্যন্ত তাঁর জনপ্রিয়তার গ্রাফ যা, তাতে তিনি টানা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।
ইমরানের এই জনপ্রিয়তায় পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্টই সবচেয়ে বেশি খুশি বলে মনে করেন মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের মাধিয়া আফযান। তাঁর মতে, নওয়াজ শরিফ সেনাদের আজ্ঞার বাইরে চলতেন। ফলে তারা ইমরান খানকেই সমর্থন দেয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতার অন্যতম বড় ভাগীদার; নিয়ন্ত্রক বললেও ভুল হবে না। বহুবার তারা অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করেছে। তবে ক্রমেই তারা বুঝেছে, সময় বদলেছে। সরাসরি শাসনের চেয়ে রাজনৈতিক পন্থায় শাসনই শ্রেয়। আফগানিস্তানে যে ফল এসেছে, তা নিয়েও সন্তুষ্ট তারা। কারণ, তারা এর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় গুপ্তচরদের অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছে আফগানিস্তানকে বিভিন্ন নাশকতার কাজে ব্যবহার করে। নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে পাকিস্তান আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। গত আগস্টে কাবুলের দ্রুত পতন পাকিস্তানের খাতায় বোনাস পয়েন্ট হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পাকিস্তানের জন্য আরেকটি বাড়তি সুবিধা হলো এটি চীনকে বুঝিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে টিকবে না। ফলে এই খেলায় বেইজিংয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারণে তারা চীনকেও পাশে পাচ্ছে।
তালেবানের সব পক্ষই হয়তো পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষে নয়। তবে গত সেপ্টেম্বরে তালেবান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে, সেখানে হাক্কানি নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা রয়েছেন। এটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সমর্থিত অংশ। এ ছাড়া তালেবান প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মোল্লা ওমরের ছেলে আফগানিস্তানের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুবের পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে। তালেবানের সরকার গঠনের আগমুহূর্তে কাবুলে ছুটে গিয়েছিলেন আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ। বিশ্লেষকদের ধারণা, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারে আইএসআই তথা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও ইমরান খান সরকারের প্রভাব নিশ্চিত করতেই কাবুল সফরে গিয়েছিলেন তিনি।
পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক কর্তারা যদি কাবুলের সরকার পরিবর্তন থেকে লাভবান হন, তবে অন্য সবার কী হবে? দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১১ শতাংশ। ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে রুপির দাম ডলারের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ কমেছে। দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশ আর্থিক সংকটে ভুগছে। বর্তমানে প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি আর্থিক সাহায্য দরকার দেশটির। ওই টাকা দিয়ে ২০২১ থেকে ২০২৩ আর্থিক বছরে পাকিস্তান তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
আর্থিক এই সংকটের চিত্র উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও। সেখানে বলা হয়, বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার মামলায় পাকিস্তান শীর্ষ ১০ দেশের তালিকার একটি।
কল্যাণমূলক ইসলামি রাষ্ট্র গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান খান। কিন্তু বাদ সাধে ভঙ্গুর অর্থনীতি। অর্থনীতির পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হন তিনি। সংস্থাটি ২০১৯ সালে পাকিস্তানকে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়। এই অর্থের পুরোটা এখনো ছাড় করেনি আইএমএফ। এর মধ্যেই গত জুলাইয়ে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২২ বিলিয়ন ডলার।
ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান। এর বিনিময়ে বেইজিং পাকিস্তানের সঙ্গে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে। গড়ে তোলা হয়েছে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিশেষ অর্থনৈতিক করিডর (ইপিইসি)। পাকিস্তানের ভূখণ্ডে এসব প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, ইসলামাবাদ চীনা ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে গেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইডডেটা জানিয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পাকিস্তানকে ৩৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার শর্তযুক্ত ঋণ।
সামরিক খাতেও ইসলামাবাদের চীনা নির্ভরশীলতা আগের তুলনায় বাড়ছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চীন যে পরিমাণ অস্ত্র রপ্তানি করেছে, তার ৩৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল পাকিস্তান—এমনটা জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। তবে চীন-পাকিস্তান মৈত্রীতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাগুলো। পাকিস্তানের মাটিতে চীনা প্রকল্পগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর এসব হামলা ঠেকাতে সফল হয়নি পাকিস্তান। এ অবস্থায় চীনকে খুশি রাখতে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা সরকারের নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছে পাকিস্তান সরকার।
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টার মনে করে, পাকিস্তান নিজেদের পুনর্বাসনের জন্য আফগানিস্তানকে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। পাকিস্তান এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার একমাত্র উপায় হিসেবে তালেবান সরকারের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোকে সাহায্য করতে চায়। ইমরান খানের সামনে এখন মোটাদাগে তিনটি চ্যালেঞ্জ—পতনশীল অর্থনীতিকে দ্রুত টেনে তোলা, চীনের সঙ্গে মৈত্রী ধরে রেখে জিনজিয়াং নিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতি স্পষ্ট করা এবং আফগানিস্তানে সম্ভাব্য মানবিক সংকট কার্যকর উপায়ে সামাল দেওয়া। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁকে কৌশলী হতে হবে। একই সঙ্গে দেশে-বিদেশে তাঁর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে হবে। তাহলে সফলভাবে টিকে যাবে ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবন।

২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন।
১২ ঘণ্টা আগে
ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
১ দিন আগে
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
২ দিন আগে
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
২ দিন আগেরয়টার্সের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন। ভেনেজুয়েলায় তাঁর গোপন আস্তানা থেকে মাচাদো বৈঠকে ভিডিও কলে অল্প কিছু সময়ের জন্য যোগ দেন।
ডেভিড স্মোলানস্কি, যিনি ওয়াশিংটনে মাচাদোর অফিসটা চালান, তিনি বৈঠকে ব্যাখ্যা করলেন, কীভাবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো আসলে দেশটির সশস্ত্র সংগঠন ত্রেন দে আরাগাকে (টিডিএ) নিয়ন্ত্রণ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজনের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। সেই দুজনই জানিয়েছেন, বৈঠকে ওয়াল্টজ পুরোটা সময় নোট নিয়েছেন।
এর আগে কখনো এই বৈঠকের ভেতরের খবর সংবাদমাধ্যমে আসেনি। বৈঠকটি মাচাদোর দিক থেকে একটি ‘ঝুঁকি যেমন, তেমন লাভ’ পরিকল্পনার অংশ ছিল। কিছুদিন আগে শান্তিতে নোবেলজয়ী মাচাদোর দিক থেকে ওই বৈঠক ছিল ট্রাম্পের দলের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করার একটি মাধ্যম। ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণী দল মনে করে, অপরাধী চক্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় ঝুঁকি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে (ট্রাম্পের দলের) এমন ধারণার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।
রয়টার্স ৫০টির বেশি ‘সূত্রে’র সঙ্গে কথা বলেছে, যেগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তথ্য সরবরাহকারীসহ অনেকে আছেন। মাচাদোর দল কীভাবে ভেনেজুয়েলারই সরকারের বিরুদ্ধে বয়ান তৈরি করে ট্রাম্প প্রশাসনকে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে, সেটা ওই ‘সূত্রগুলোর’ সঙ্গে রয়টার্সের আলোচনায় উঠে এসেছে। এমনকি ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের ওপর ধাক্কা আসার শঙ্কাও পাত্তা পায়নি মাচাদোর দলের কাছে।
ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ও পরে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের নেতারা বেশ কয়েকবার ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণী দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, যাতে মাদুরোর ওপর চাপ বাড়ে। মাদুরোর বিরোধিতায় মাচাদোর সঙ্গী দলগুলোও মাচাদোর দলের পেশ করা বক্তব্য ও প্রতিবেদনের নেপথ্যের গবেষণায় হাত লাগিয়েছেন। সূত্রকে উৎস জানিয়ে রয়টার্স লিখেছে, মাদুরো এবং এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে অনেক তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোকে জানিয়েছেন মাচাদোর দলের সদস্যরা।
মাচাদো ও অন্য বিরোধী দলগুলোর সাহায্যে বানানো প্রতিবেদন দেখে বোঝা যায়, মাদুরোই ত্রেন দে আরাগাকে নিয়ন্ত্রণ করেন—এই ধারণাকে বৈধতা দিতে সাহায্য করেছে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো। ট্রাম্প প্রশাসন ও তাঁদের স্বার্থ একই জায়গায় মিলছে দেখে গোপনে এবং প্রকাশ্যে এই ধারণার প্রচারও চালিয়েছে তারা। তবে ভেনেজুয়েলা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান কৌশলের নেপথ্যে তাদের প্রচারণার সম্পর্ক কতটা, সেটা রয়টার্স পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি।
জানুয়ারিতে ওয়াল্টজের সঙ্গে মাচাদোর দলের বৈঠকের পর ওয়াশিংটন ত্রেন দে আরাগাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে ঘোষণা করে। মাদুরো এই সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে বলেও জানায় ওয়াশিংটন; পাশাপাশি মাদুরোকে গ্রেপ্তারের পুরস্কার হিসেবে ৫ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে নৌবাহিনীর দাপট বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার উপকূলে অন্তত আটটি নৌকায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। নৌকাগুলো মাদকদ্রব্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে দাবি তাদের। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, পাচার হয়ে যে পরিমাণ কোকেন যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে, তার খুবই সামান্য অংশই ভেনেজুয়েলা হয়ে আসে।
ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত ১১ জন ত্রেন দে আরাগার সদস্য, যদিও তাদের সদস্য থাকার কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি। এর আগে এই মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর গোপন কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছেন। এ-ও বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলার সীমানার ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ট্রাম্পের তেমন কৌশলেও অকুণ্ঠ সমর্থন মাচাদোর। তাঁর কথা, পরিস্থিতি তেমন হতে দিতে না চাইলে মাদুরোর পদত্যাগ করা উচিত।
রয়টার্সের এই প্রতিবেদনের জন্য মন্তব্যের আবেদনে অবশ্য ‘না’ জানিয়ে দিয়েছেন মাচাদো। আর ৬ জানুয়ারির বৈঠক নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেননি ওয়াল্টজ, যিনি এখন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মাদুরোর সম্পর্ক নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি ভেনেজুয়েলার তথ্য মন্ত্রণালয়।
হুগো শাভেজের মৃত্যুর পর মাদুরো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট বনে যান ২০১৩ সালে। এরপর থেকে তাঁর শাসনামলে ভেনেজুয়েলা অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখেছে, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগও আছে মাদুরোর বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল ৭০ শতাংশ ভোট নিয়ে জিতেছে, সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে, তবু সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা মাদুরো চেয়ার ছাড়েননি। পশ্চিমের নানা নিষেধাজ্ঞা, অনেক আলাপ-আলোচনা ও অপরাধের অভিযোগও তাঁকে টলাতে পারেনি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবিষ্কৃত তেলের মজুত ভেনেজুয়েলায়। সে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারির হস্তক্ষেপ করা উচিত কি না—এই প্রশ্নটা মাচাদোকে করা হয় ১০ অক্টোবর, তিনি শান্তিতে নোবেল জেতার পর। উত্তরে মাচাদো বলেছেন, ‘আপনি যখন একটা অপরাধী প্রশাসনের সঙ্গে লড়ছেন, তখন শক্তির প্রয়োগ ছাড়া তো স্বাধীনতা আসবে না।’ শান্তিতে নোবেল জয়ের পর সেটি ভেনেজুয়েলার জনগণের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছিলেন মাচাদো।
এর আগে সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পকে একটি চিঠি লিখেছিলেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, তাঁর সরকারের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্কের অভিযোগ ‘পুরোপুরি মিথ্যা’। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দাবিও অসত্য জানিয়ে মাদুরো বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র কার্যকর।
মূলত ভেনেজুয়েলায় জেলে থাকা কয়েকজনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী ত্রেন দে আরাগা এখন লাতিন আমেরিকায় বিভিন্ন দেশেই নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। লাতিন দেশগুলোর সরকার ত্রেন দে আরাগাকে তাদের দেশের জন্য বড় হুমকি মনে করে। তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ‘হামলা চালানো’র পরিকল্পনা করছে—এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালত। ট্রাম্প প্রশাসন পাইকারি হারে ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার কৌশল নেওয়ার পর ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)’ আপিল আদালতে অভিযোগ করে, সে মামলার শুনানিতেই কথাটা বলেছিলেন আদালত।
এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের ফাঁস হয়ে যাওয়া এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ত্রেন দে আরাগার সঙ্গে ভেনেজুয়েলার সরকারের সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলান প্রশাসনের অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা ‘অর্থের বিনিময়ে টিডিএকে সাহায্য করে থাকতে পারেন।’ তবে মাদুরো এই গ্রুপের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।
উভয়সংকট
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মাচাদোর আঁতাতকে ‘সমাধান-অসাধ্য উভয়সংকট’ জানিয়ে মাচাদোরই দলের কেউ কেউ এর বিরোধিতা করছেন। টিডিএর কারণে মাদুরোর প্রশাসনের ওপর ট্রাম্প যে চাপ তৈরি করেছেন, সেটা মাদুরোর বিরোধী পক্ষের অনেক দিনের চাওয়া। কিন্তু এর পাশাপাশি নিজের অভিবাসনবিরোধী কৌশলের অংশ হিসেবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ভেনেজুয়েলানদেরও টিডিএর সদস্য বলে বিপদের মুখে ফেলছেন।
ট্রাম্প যখন হাজারো ভেনেজুয়েলান অভিবাসীর অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, শত শত ভেনেজুয়েলান অভিবাসীকে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন, টিডিএর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে অভিযুক্তদের এল সালভাদরের জেলে পাঠিয়েছেন, মাচাদো তেমন কিছুই বলেননি। সম্প্রতি মাদক বহনের অভিযোগ তুলে ভেনেজুয়েলার উপকূলে বেশ কয়েকটি নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় অনেকে যখন মারা গেলেন, সেটা বিচারবহির্ভূত হত্যার সংজ্ঞায় পড়লেও মাচাদো এর সমর্থনে বলেছেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত।
মাচাদোর দল এটা বুঝতে পারছে যে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের আঁতাতের কৌশলে বড় ঝুঁকি আছে। ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলতে পারে—এই ঝুঁকি তো আছেই। তবে বিরোধী দলের দুটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আঁতাতই ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ফেরানোর সবচেয়ে সেরা উপায়। সম্ভাব্য ফাঁদ থাকা সত্ত্বেও মাদুরোকে সরানোই তাদের ‘বড় লক্ষ্য’ বলে জানিয়েছেন ওই দুজনের একজন।
তুলান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেনেজুয়েলা বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্মিলড রয়টার্সকে বলেছেন, যদি এতে কাজ হয়, তাহলে ‘তিনি (মাচাদো) বনে যাবেন ভেনেজুয়েলার রক্ষাকর্তা।’ কিন্তু কিছু না হলে, এত বছরে বিরোধী দলগুলোর নেতাদের মিথ্যা আশ্বাস দেখে বিরক্ত এবং পরিবর্তনের আশায় মরিয়া ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাবেন তিনি। আর যদি মাদুরোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হামলা থেকে কোনো যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়, তাহলে দেশের ভেতরে ধ্বংসযজ্ঞের দায় পড়বে তাঁর (মাচাদো) ঘাড়েই। এই পুরো কৌশলটাই ‘ঝুঁকিও বেশি, লাভও বেশি’ কৌশল।
যোগাযোগের পথটা মসৃণ
২০ জানুয়ারি ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মাচাদোর দলের প্রতিনিধিরা ফ্লোরিডার রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, যাঁদের মধ্যে সে সময়ের সিনেটর মার্কো রুবিও ছিলেন। ওয়াল্টজ পদত্যাগ করার পর থেকে রুবিওই ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক। ২০১৮ সালেই তিনি বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা হামলা করলে সেটা অন্যায্য হবে না। একসময়ে ট্রাম্পের কড়া সমালোচক থেকে এখন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বনে যাওয়া রুবিও যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিমালা; বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বৈদেশিক নীতিমালা প্রণয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একজন।
ওই বৈঠকগুলোর কারণে টিডিএর সঙ্গে মাদুরোর সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য টিডিও এবং আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী কার্তেল দে লস সোলেস কতটা হুমকির—এসব ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের নেতিবাচক ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র টমি পিগট অবশ্য রুবিওর সঙ্গে ভেনেজুয়েলার বিরোধীদের নিয়মিত যোগাযোগের ব্যাপারটি জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন। তাঁদের কারণে টিডিএর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল বদলেছে, এমন ধারণাও অস্বীকার করেছেন।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলগুলোর প্রতি রুবিওর সমর্থন অবশ্য অনেক পুরোনো এবং সেটা জনসমক্ষেও বলেছেন রুবিও। ২০১৯ সালে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টার সময় বিরোধী পক্ষের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পক্ষে কথা বলেছিলেন রুবিও।
মাচাদোকে শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনীত করে ২০২৪ সালে এক চিঠিতে রুবিও এবং ওয়াল্টজ—দুজনই সই করেছেন। গত এপ্রিলে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে’র তালিকায় মাচাদোর নাম থাকায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে রুবিও লিখেছেন, এক দশক আগে তাঁদের পরিচয় হয়েছিল।
২০২৪ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় টিডিএর ব্যাপারে ট্রাম্পের আলোচনার আগেও, মাচাদোর দলের ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরামর্শক’ ইভান সিমোনোভিস সংবাদমাধ্যমে এসে বলেছিলেন, এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে মাদুরোই পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে, যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি দেননি। পরে ট্রাম্পও টিডিএর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে অনেক ভেনেজুয়েলানকে দেশে ফেরত পাঠানোর সময় মাদুরোর সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন, যদিও তিনিও কোনো প্রমাণ দেননি। ভেনেজুয়েলান পুলিশের সাবেক প্রধান সিমোনোভিচ রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য ও যোগাযোগের সূত্র দিয়েছেন। এই তথ্যগুলো ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া বলেও জানিয়েছেন। যদিও রয়টার্সকে এমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার অনুরোধে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সিমোনোভিচ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের তৃতীয় আরেকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ২০০২৪ সালের শেষ অংশে ভেনেজুয়েলার নির্বাসিত সাবেক কর্নেল গুস্তাভো আরোচা, যিনি কিনা মাচাদোর দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, তিনি এই টিডিএর ব্যাপারে গবেষণার তথ্য মাচাদোর দলকে দিয়েছেন। সঙ্গে ডানপন্থী থিংকট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একটা গবেষণাপত্রও দিয়েছেন, যেখানে দাবি করা হয়েছে, এই টিডিএ গ্যাং আসলে মাদুরোরই একটা প্রক্সি।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে মাচাদোর দল অন্তত আটবার ওয়াল্টজ, রুবিও, সে সময়ের বিশেষ পরামর্শক মরিসিও ক্লাভের-কারোন, ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ক্রিস্টফার লানডাউয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে বৈঠকগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। ক্লাভের-কারোনও রুবিওর মতোই একজন কিউবান-আমেরিকান, যিনিও ভেনেজুয়েলার ওপর মার্কিন মিলিটারি হামলাকে সমর্থন করেন। ভেনেজুয়েলা কিউবার কমিউনিস্ট পদ্ধতিতে সহায়তা করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভেনেজুয়েলান বিরোধী দলের দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই আটটি বৈঠকের তিনটিতে তাঁরা কার্তেল দে লস সোলেসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মাদুরো কার্তেল দে লস সোলেসেরও নিয়ন্ত্রক। গত জুলাইয়ে এই সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বলেছে, এই গ্রুপ ত্রেন দে আরাগার সঙ্গে মিলে মাদকদ্রব্যকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটা অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। যদিও এরও কোনো প্রমাণ তারা হাজির করেনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকে অবশ্য মাদুরোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষে নন। এই মাসের শুরুতে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দেওয়ার আগে মার্কিন দূত রিচার্ড গ্রেনেল বলে এসেছেন, যুদ্ধের বদলে তেল নিয়ে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মার্কিন কোম্পানি শেভরনের ভেনেজুয়েলায় তেলের উৎপাদন ও বিক্রির লাইসেন্স আছে। এ চুক্তি থেকে আর্থিক লাভ হয় ভেনেজুয়েলার। চুক্তিটিতে বড় অবদান আছে গ্রেনেলের। চুক্তিটি অনুমোদন করেছেন ট্রাম্পও।
তবে কট্টরপন্থী মাচাদোর সঙ্গে ট্রাম্পের মিত্র ব্রাজিলের ডানপন্থী নেতা জইর বলসোনারো এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। মাচাদো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পকে দ্রুত বেসরকারীকরণ করবেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন।
২০২৩ সাল পর্যন্ত ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জিমি স্টোরি রয়টার্সকে বলেছেন, ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের নেতাদের হাতে মাদুরোকে সরানোর পরিকল্পনায় ট্রাম্পের সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। ‘ওরা প্রতিবাদ করেছে, এ কারণে মারাও পড়েছে। আমরা তাদের (বিরোধীদের) আলোচনায় যেতে বলেছি, তারা আলোচনার টেবিলে গেছে। নির্বাচনে যেতে বলেছি, তারা নির্বাচনে গেছে। নির্বাচনে জিতেছেও। কিন্তু এরপরও সে (মাদুরো) চেয়ার ছাড়বে না। এরপর এটা (যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল) সমর্থন করা ছাড়া আর কী করার আছে তাদের সামনে?’

২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন। ভেনেজুয়েলায় তাঁর গোপন আস্তানা থেকে মাচাদো বৈঠকে ভিডিও কলে অল্প কিছু সময়ের জন্য যোগ দেন।
ডেভিড স্মোলানস্কি, যিনি ওয়াশিংটনে মাচাদোর অফিসটা চালান, তিনি বৈঠকে ব্যাখ্যা করলেন, কীভাবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো আসলে দেশটির সশস্ত্র সংগঠন ত্রেন দে আরাগাকে (টিডিএ) নিয়ন্ত্রণ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজনের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। সেই দুজনই জানিয়েছেন, বৈঠকে ওয়াল্টজ পুরোটা সময় নোট নিয়েছেন।
এর আগে কখনো এই বৈঠকের ভেতরের খবর সংবাদমাধ্যমে আসেনি। বৈঠকটি মাচাদোর দিক থেকে একটি ‘ঝুঁকি যেমন, তেমন লাভ’ পরিকল্পনার অংশ ছিল। কিছুদিন আগে শান্তিতে নোবেলজয়ী মাচাদোর দিক থেকে ওই বৈঠক ছিল ট্রাম্পের দলের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করার একটি মাধ্যম। ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণী দল মনে করে, অপরাধী চক্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় ঝুঁকি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে (ট্রাম্পের দলের) এমন ধারণার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।
রয়টার্স ৫০টির বেশি ‘সূত্রে’র সঙ্গে কথা বলেছে, যেগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তথ্য সরবরাহকারীসহ অনেকে আছেন। মাচাদোর দল কীভাবে ভেনেজুয়েলারই সরকারের বিরুদ্ধে বয়ান তৈরি করে ট্রাম্প প্রশাসনকে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে, সেটা ওই ‘সূত্রগুলোর’ সঙ্গে রয়টার্সের আলোচনায় উঠে এসেছে। এমনকি ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের ওপর ধাক্কা আসার শঙ্কাও পাত্তা পায়নি মাচাদোর দলের কাছে।
ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ও পরে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের নেতারা বেশ কয়েকবার ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণী দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, যাতে মাদুরোর ওপর চাপ বাড়ে। মাদুরোর বিরোধিতায় মাচাদোর সঙ্গী দলগুলোও মাচাদোর দলের পেশ করা বক্তব্য ও প্রতিবেদনের নেপথ্যের গবেষণায় হাত লাগিয়েছেন। সূত্রকে উৎস জানিয়ে রয়টার্স লিখেছে, মাদুরো এবং এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে অনেক তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোকে জানিয়েছেন মাচাদোর দলের সদস্যরা।
মাচাদো ও অন্য বিরোধী দলগুলোর সাহায্যে বানানো প্রতিবেদন দেখে বোঝা যায়, মাদুরোই ত্রেন দে আরাগাকে নিয়ন্ত্রণ করেন—এই ধারণাকে বৈধতা দিতে সাহায্য করেছে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো। ট্রাম্প প্রশাসন ও তাঁদের স্বার্থ একই জায়গায় মিলছে দেখে গোপনে এবং প্রকাশ্যে এই ধারণার প্রচারও চালিয়েছে তারা। তবে ভেনেজুয়েলা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান কৌশলের নেপথ্যে তাদের প্রচারণার সম্পর্ক কতটা, সেটা রয়টার্স পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি।
জানুয়ারিতে ওয়াল্টজের সঙ্গে মাচাদোর দলের বৈঠকের পর ওয়াশিংটন ত্রেন দে আরাগাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে ঘোষণা করে। মাদুরো এই সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে বলেও জানায় ওয়াশিংটন; পাশাপাশি মাদুরোকে গ্রেপ্তারের পুরস্কার হিসেবে ৫ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে নৌবাহিনীর দাপট বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার উপকূলে অন্তত আটটি নৌকায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। নৌকাগুলো মাদকদ্রব্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে দাবি তাদের। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, পাচার হয়ে যে পরিমাণ কোকেন যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে, তার খুবই সামান্য অংশই ভেনেজুয়েলা হয়ে আসে।
ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত ১১ জন ত্রেন দে আরাগার সদস্য, যদিও তাদের সদস্য থাকার কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি। এর আগে এই মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর গোপন কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছেন। এ-ও বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলার সীমানার ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ট্রাম্পের তেমন কৌশলেও অকুণ্ঠ সমর্থন মাচাদোর। তাঁর কথা, পরিস্থিতি তেমন হতে দিতে না চাইলে মাদুরোর পদত্যাগ করা উচিত।
রয়টার্সের এই প্রতিবেদনের জন্য মন্তব্যের আবেদনে অবশ্য ‘না’ জানিয়ে দিয়েছেন মাচাদো। আর ৬ জানুয়ারির বৈঠক নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেননি ওয়াল্টজ, যিনি এখন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মাদুরোর সম্পর্ক নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি ভেনেজুয়েলার তথ্য মন্ত্রণালয়।
হুগো শাভেজের মৃত্যুর পর মাদুরো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট বনে যান ২০১৩ সালে। এরপর থেকে তাঁর শাসনামলে ভেনেজুয়েলা অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখেছে, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগও আছে মাদুরোর বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল ৭০ শতাংশ ভোট নিয়ে জিতেছে, সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে, তবু সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা মাদুরো চেয়ার ছাড়েননি। পশ্চিমের নানা নিষেধাজ্ঞা, অনেক আলাপ-আলোচনা ও অপরাধের অভিযোগও তাঁকে টলাতে পারেনি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবিষ্কৃত তেলের মজুত ভেনেজুয়েলায়। সে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারির হস্তক্ষেপ করা উচিত কি না—এই প্রশ্নটা মাচাদোকে করা হয় ১০ অক্টোবর, তিনি শান্তিতে নোবেল জেতার পর। উত্তরে মাচাদো বলেছেন, ‘আপনি যখন একটা অপরাধী প্রশাসনের সঙ্গে লড়ছেন, তখন শক্তির প্রয়োগ ছাড়া তো স্বাধীনতা আসবে না।’ শান্তিতে নোবেল জয়ের পর সেটি ভেনেজুয়েলার জনগণের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছিলেন মাচাদো।
এর আগে সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পকে একটি চিঠি লিখেছিলেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, তাঁর সরকারের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্কের অভিযোগ ‘পুরোপুরি মিথ্যা’। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দাবিও অসত্য জানিয়ে মাদুরো বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র কার্যকর।
মূলত ভেনেজুয়েলায় জেলে থাকা কয়েকজনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী ত্রেন দে আরাগা এখন লাতিন আমেরিকায় বিভিন্ন দেশেই নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। লাতিন দেশগুলোর সরকার ত্রেন দে আরাগাকে তাদের দেশের জন্য বড় হুমকি মনে করে। তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ‘হামলা চালানো’র পরিকল্পনা করছে—এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালত। ট্রাম্প প্রশাসন পাইকারি হারে ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার কৌশল নেওয়ার পর ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)’ আপিল আদালতে অভিযোগ করে, সে মামলার শুনানিতেই কথাটা বলেছিলেন আদালত।
এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের ফাঁস হয়ে যাওয়া এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ত্রেন দে আরাগার সঙ্গে ভেনেজুয়েলার সরকারের সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলান প্রশাসনের অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা ‘অর্থের বিনিময়ে টিডিএকে সাহায্য করে থাকতে পারেন।’ তবে মাদুরো এই গ্রুপের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।
উভয়সংকট
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মাচাদোর আঁতাতকে ‘সমাধান-অসাধ্য উভয়সংকট’ জানিয়ে মাচাদোরই দলের কেউ কেউ এর বিরোধিতা করছেন। টিডিএর কারণে মাদুরোর প্রশাসনের ওপর ট্রাম্প যে চাপ তৈরি করেছেন, সেটা মাদুরোর বিরোধী পক্ষের অনেক দিনের চাওয়া। কিন্তু এর পাশাপাশি নিজের অভিবাসনবিরোধী কৌশলের অংশ হিসেবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ভেনেজুয়েলানদেরও টিডিএর সদস্য বলে বিপদের মুখে ফেলছেন।
ট্রাম্প যখন হাজারো ভেনেজুয়েলান অভিবাসীর অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, শত শত ভেনেজুয়েলান অভিবাসীকে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন, টিডিএর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে অভিযুক্তদের এল সালভাদরের জেলে পাঠিয়েছেন, মাচাদো তেমন কিছুই বলেননি। সম্প্রতি মাদক বহনের অভিযোগ তুলে ভেনেজুয়েলার উপকূলে বেশ কয়েকটি নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় অনেকে যখন মারা গেলেন, সেটা বিচারবহির্ভূত হত্যার সংজ্ঞায় পড়লেও মাচাদো এর সমর্থনে বলেছেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত।
মাচাদোর দল এটা বুঝতে পারছে যে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের আঁতাতের কৌশলে বড় ঝুঁকি আছে। ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলতে পারে—এই ঝুঁকি তো আছেই। তবে বিরোধী দলের দুটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আঁতাতই ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ফেরানোর সবচেয়ে সেরা উপায়। সম্ভাব্য ফাঁদ থাকা সত্ত্বেও মাদুরোকে সরানোই তাদের ‘বড় লক্ষ্য’ বলে জানিয়েছেন ওই দুজনের একজন।
তুলান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেনেজুয়েলা বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্মিলড রয়টার্সকে বলেছেন, যদি এতে কাজ হয়, তাহলে ‘তিনি (মাচাদো) বনে যাবেন ভেনেজুয়েলার রক্ষাকর্তা।’ কিন্তু কিছু না হলে, এত বছরে বিরোধী দলগুলোর নেতাদের মিথ্যা আশ্বাস দেখে বিরক্ত এবং পরিবর্তনের আশায় মরিয়া ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাবেন তিনি। আর যদি মাদুরোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হামলা থেকে কোনো যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়, তাহলে দেশের ভেতরে ধ্বংসযজ্ঞের দায় পড়বে তাঁর (মাচাদো) ঘাড়েই। এই পুরো কৌশলটাই ‘ঝুঁকিও বেশি, লাভও বেশি’ কৌশল।
যোগাযোগের পথটা মসৃণ
২০ জানুয়ারি ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মাচাদোর দলের প্রতিনিধিরা ফ্লোরিডার রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, যাঁদের মধ্যে সে সময়ের সিনেটর মার্কো রুবিও ছিলেন। ওয়াল্টজ পদত্যাগ করার পর থেকে রুবিওই ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক। ২০১৮ সালেই তিনি বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা হামলা করলে সেটা অন্যায্য হবে না। একসময়ে ট্রাম্পের কড়া সমালোচক থেকে এখন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বনে যাওয়া রুবিও যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিমালা; বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বৈদেশিক নীতিমালা প্রণয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একজন।
ওই বৈঠকগুলোর কারণে টিডিএর সঙ্গে মাদুরোর সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য টিডিও এবং আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী কার্তেল দে লস সোলেস কতটা হুমকির—এসব ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের নেতিবাচক ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র টমি পিগট অবশ্য রুবিওর সঙ্গে ভেনেজুয়েলার বিরোধীদের নিয়মিত যোগাযোগের ব্যাপারটি জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন। তাঁদের কারণে টিডিএর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল বদলেছে, এমন ধারণাও অস্বীকার করেছেন।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলগুলোর প্রতি রুবিওর সমর্থন অবশ্য অনেক পুরোনো এবং সেটা জনসমক্ষেও বলেছেন রুবিও। ২০১৯ সালে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টার সময় বিরোধী পক্ষের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পক্ষে কথা বলেছিলেন রুবিও।
মাচাদোকে শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনীত করে ২০২৪ সালে এক চিঠিতে রুবিও এবং ওয়াল্টজ—দুজনই সই করেছেন। গত এপ্রিলে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে’র তালিকায় মাচাদোর নাম থাকায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে রুবিও লিখেছেন, এক দশক আগে তাঁদের পরিচয় হয়েছিল।
২০২৪ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় টিডিএর ব্যাপারে ট্রাম্পের আলোচনার আগেও, মাচাদোর দলের ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরামর্শক’ ইভান সিমোনোভিস সংবাদমাধ্যমে এসে বলেছিলেন, এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে মাদুরোই পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে, যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি দেননি। পরে ট্রাম্পও টিডিএর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে অনেক ভেনেজুয়েলানকে দেশে ফেরত পাঠানোর সময় মাদুরোর সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন, যদিও তিনিও কোনো প্রমাণ দেননি। ভেনেজুয়েলান পুলিশের সাবেক প্রধান সিমোনোভিচ রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য ও যোগাযোগের সূত্র দিয়েছেন। এই তথ্যগুলো ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া বলেও জানিয়েছেন। যদিও রয়টার্সকে এমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার অনুরোধে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সিমোনোভিচ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের তৃতীয় আরেকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ২০০২৪ সালের শেষ অংশে ভেনেজুয়েলার নির্বাসিত সাবেক কর্নেল গুস্তাভো আরোচা, যিনি কিনা মাচাদোর দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, তিনি এই টিডিএর ব্যাপারে গবেষণার তথ্য মাচাদোর দলকে দিয়েছেন। সঙ্গে ডানপন্থী থিংকট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একটা গবেষণাপত্রও দিয়েছেন, যেখানে দাবি করা হয়েছে, এই টিডিএ গ্যাং আসলে মাদুরোরই একটা প্রক্সি।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে মাচাদোর দল অন্তত আটবার ওয়াল্টজ, রুবিও, সে সময়ের বিশেষ পরামর্শক মরিসিও ক্লাভের-কারোন, ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ক্রিস্টফার লানডাউয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে বৈঠকগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। ক্লাভের-কারোনও রুবিওর মতোই একজন কিউবান-আমেরিকান, যিনিও ভেনেজুয়েলার ওপর মার্কিন মিলিটারি হামলাকে সমর্থন করেন। ভেনেজুয়েলা কিউবার কমিউনিস্ট পদ্ধতিতে সহায়তা করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভেনেজুয়েলান বিরোধী দলের দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই আটটি বৈঠকের তিনটিতে তাঁরা কার্তেল দে লস সোলেসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মাদুরো কার্তেল দে লস সোলেসেরও নিয়ন্ত্রক। গত জুলাইয়ে এই সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বলেছে, এই গ্রুপ ত্রেন দে আরাগার সঙ্গে মিলে মাদকদ্রব্যকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটা অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। যদিও এরও কোনো প্রমাণ তারা হাজির করেনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকে অবশ্য মাদুরোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষে নন। এই মাসের শুরুতে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দেওয়ার আগে মার্কিন দূত রিচার্ড গ্রেনেল বলে এসেছেন, যুদ্ধের বদলে তেল নিয়ে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মার্কিন কোম্পানি শেভরনের ভেনেজুয়েলায় তেলের উৎপাদন ও বিক্রির লাইসেন্স আছে। এ চুক্তি থেকে আর্থিক লাভ হয় ভেনেজুয়েলার। চুক্তিটিতে বড় অবদান আছে গ্রেনেলের। চুক্তিটি অনুমোদন করেছেন ট্রাম্পও।
তবে কট্টরপন্থী মাচাদোর সঙ্গে ট্রাম্পের মিত্র ব্রাজিলের ডানপন্থী নেতা জইর বলসোনারো এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। মাচাদো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পকে দ্রুত বেসরকারীকরণ করবেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন।
২০২৩ সাল পর্যন্ত ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জিমি স্টোরি রয়টার্সকে বলেছেন, ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের নেতাদের হাতে মাদুরোকে সরানোর পরিকল্পনায় ট্রাম্পের সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। ‘ওরা প্রতিবাদ করেছে, এ কারণে মারাও পড়েছে। আমরা তাদের (বিরোধীদের) আলোচনায় যেতে বলেছি, তারা আলোচনার টেবিলে গেছে। নির্বাচনে যেতে বলেছি, তারা নির্বাচনে গেছে। নির্বাচনে জিতেছেও। কিন্তু এরপরও সে (মাদুরো) চেয়ার ছাড়বে না। এরপর এটা (যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল) সমর্থন করা ছাড়া আর কী করার আছে তাদের সামনে?’

ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর প্রভাব ইত্যাদিই পাকিস্তানের পরিচয় হয়ে আছে অনেক দিন। ইমরান খান সরকারের সময়ে এই দুই পরিচয় আরও প্রকট হয়েছে। সঙ্গে মার্কিন মিত্র থেকে চীনের মিত্র হিসেবে নতুন পরিচয়ও যুক্ত হয়েছে দেশটির নামের সঙ্গে।
৩০ অক্টোবর ২০২১
ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
১ দিন আগে
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
২ দিন আগে
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সঙ্গে ইউরোপীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব মহাদেশটিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন ছিল তারই এক নিদর্শন। সম্মেলনে বেলজিয়াম ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও ইউরোপের সামরিক শিল্পকে শক্তিশালী করতে রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা আটকে দেয়। কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার জন্য সন্দেহের মুখে থাকা তথাকথিত রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিটের’ বিষয়টি সম্মেলনে একবারও উল্লেখ করা হয়নি।
কোস্টাল ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড ইন্টেলিজেন্সের সহকারী পরিচালক জোসেফ ফিৎসানাকিস বলেন, ‘১৯৩৯ সালে নাৎসি বাহিনী যখন ইউরোপের দোরগোড়ায় ছিল, সে সময় ইউরোপ যতটা অপ্রস্তুত ছিল, আজও রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে ইউরোপ ঠিক ততটাই প্রস্তুতিহীন।’
ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর মতো সামনের সারির রাষ্ট্রগুলো পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ভ্রমে নেই। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে। তারা অভ্যন্তরীণ বিভাজন আর রুশ ভুয়া তথ্যের অপপ্রচারে এমনভাবে বিপর্যস্ত যে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তা তারা বুঝতেই পারছে না।’
২০২২ সাল থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের উত্তর ইউরোপবিষয়ক পরিচালক আনা ভিসল্যান্ডার বলেন, ‘রাশিয়ার এই হাইব্রিড যুদ্ধের উদ্দেশ্য আমাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলা। যেন আমরা শান্তিকালেও নিরাপত্তাহীন বোধ করি এবং শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার লক্ষ্য পূরণের পথে; অর্থাৎ ইউরোপকে আবার প্রভাববলয়ে ভাগ করার দিকে আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়ি।’
গত ১০ সেপ্টেম্বর এই অভিযুক্ত রুশ তৎপরতা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সেদিন দুই ডজন রুশ গেরান-২ ড্রোন ন্যাটোর আকাশসীমায় প্রবেশ করে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের সাড়ে তিন বছরে মাত্র তিনটি ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল।
এর ৯ দিন পর এস্তোনিয়ার উপকূলবর্তী ফিনল্যান্ড উপসাগরের আকাশে তিনটি রুশ মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান ১২ মিনিট ধরে মহড়া দিয়ে যায়। তখন এস্তোনিয়ায় অবস্থানরত ইতালির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ছুটে গিয়ে সেগুলোকে প্রতিহত করে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর জার্মানি বাল্টিক সাগরের আকাশে উড্ডয়নরত এক রুশ ইলিউশিন-২০ এম নজরদারি বিমানকে বাধা দেয়। বিমানটি কোনো ফ্লাইট পরিকল্পনা বা রেডিও যোগাযোগ ছাড়াই উড়ছিল।
চার দিন পর ন্যাটো জানায়, লিথুয়ানিয়ার সিয়াউলাই ঘাঁটি থেকে হাঙ্গেরির দুটি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করে তিনটি রুশ বিমান—একটি সু-৩০, একটি সু-৩৫ এবং একটি মিগ-৩১কে ফিরিয়ে দেয়। এই যুদ্ধবিমানগুলো লাটভিয়ার আকাশসীমার কাছাকাছি উড়ছিল। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া সব সময় বিশেষ তৎপরতা শুরু করে এমন সময়, যেটিকে তারা বলে “বিশেষ সময়” বা “জরুরি সময়”। এই সময়টি আসলে যুদ্ধ শুরুর আগে উত্তেজনা চূড়ায় ওঠার মুহূর্ত।’
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। জার্মানির ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার এই মাসে দেশটির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগে বলেন, যুদ্ধ তারও আগে হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘২০২৯ সালের আগে রাশিয়া আক্রমণ করবে না—এই ভেবে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। ইউরোপ এখন এক নতুন ধরনের মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ এই অবস্থায় ইউরোপীয় সামরিক পরিকল্পনাবিদেরা যেটিকে ‘জরুরি সময়’ বলেন, সেটিকেই তারা আবার ‘ফেজ জিরো’ নামেও অভিহিত করেছে। যার অর্থ হলো প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ এবং বেসামরিক ও সামরিক কার্যক্রমের সীমারেখা মুছে ফেলা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডার ডেমেট্রিস অ্যান্ড্রু গ্রাইমস বলেন, ‘রুশ গোয়েন্দা সংস্থার মতোই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এখন ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ক্রেমলিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ইউরোপ অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত শনিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রদিওন মিরোশনিক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ‘দুঃখজনকভাবে এক যুদ্ধংদেহী অবস্থান’ নিয়েছে। তিনি ইউরোপীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ঠেকানোর চেষ্টা’ করছে তারা। অথচ এই যোগাযোগই হতে পারত সংঘাত নিরসনের পথ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া তার কথিত যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন ‘ওয়েপনাইজেশন অব এভরিথিং’ বা ‘সবকিছুকেই অস্ত্রে’ পরিণত করছে। রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়া ‘ছায়া নৌবহরের’ তেলবাহী জাহাজগুলো ন্যাটোর যোগাযোগ নজরদারির সরঞ্জাম বহন করছে ও বাল্টিক সাগরে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, এমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ফরাসি কমান্ডোরা ২ অক্টোবর বোরাকায় নামের রুশ তেলবাহী ট্যাংকার আটক করে। সেটির বিরুদ্ধে ড্রোন উড়ানোর অভিযোগ আছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কোপেনহেগেনের বিমানবন্দর যখন ড্রোনের ঝাঁকের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এটি শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। পরে ডেনমার্কের পশ্চিম উপকূলে যাত্রাকালে কয়েকটি আঞ্চলিক বিমানবন্দরেও ড্রোন হামলার রিপোর্ট পাওয়া যায়।
চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোও মস্কো-বেইজিং আঁতাতের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা। ২২ সেপ্টেম্বর ড্রোন ঝাঁকে আক্রান্ত হওয়ার দিনে নরওয়ের রাজধানী অসলো বিমানবন্দরের চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা নির্মাতা কোম্পানি ডি-জে-আই অ্যারোস্কোপ নিজেই বন্ধ করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমানবন্দর, তেল ও গ্যাস টার্মিনালসহ নানা স্থাপনা এখনো ড্রোন হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন শনাক্তের পর পোলিশ এফ-১৬, ডাচ এফ-৩৫ ও ইতালির আকাশ নজরদারি বিমান (এডব্লিউএসি) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু এসব প্রতিরোধ পুরোপুরি ব্যয়সাধ্য যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ইউক্রেন বিমান, অ্যান্টিড্রোন ড্রোন, কাঁধে বহনযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও পিকআপভিত্তিক মোবাইল ইউনিটের সমন্বয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে; এখন তারা হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ইউক্রেন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে পোল্যান্ড। আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ইউক্রেনীয় যোদ্ধা অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে ড্রোনচালক প্রশিক্ষণে এবং ঘোষণা দিয়েছে—নিজ ভূখণ্ডের আকাশে কোনো অচেনা উড়ন্ত বস্তু দেখলেই গুলি করে নামানো হবে। ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের এই দেশগুলোই রুশ হুমকি নিয়ে সবচেয়ে সরব ও সক্রিয়।
ডেনমার্ক এই মাসে জানিয়েছে, পুরোনো ট্যাংকারগুলোর পরিবেশগত ও বিমা-সংক্রান্ত মান যাচাই শুরু করবে। তবে এখনো কোনোটি জব্দ করেনি। স্টকহোমভিত্তিক বিশ্লেষক উইসলান্ডার মনে করেন, নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো ‘আরও বৃহৎ পরিসরে’ পদক্ষেপ নিতে পারে ‘ছায়া নৌবহরের বিরুদ্ধে’, যা রাশিয়ার দুর্বল জায়গায় আঘাত হনবে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘এখনো কোনো সমন্বিত নীতি তৈরি হয়নি।’
বিশেষজ্ঞ গ্রাইমস বলেন, ‘পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে বাণিজ্যিক নৌবহর পরিদর্শন বা নিষেধাজ্ঞা, বাল্টিক নজরদারি বাড়ানো, উদ্ভাবনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বিপুল অ্যান্টিড্রোন বিনিয়োগ, আর ঐক্যবদ্ধ নিষেধাজ্ঞা—সবই এখন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।’
ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট নজরদারি ও দূরপাল্লার সিগন্যাল গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে। সম্প্রতি জানা গেছে, রুশ তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের সফল হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, লক্ষ্য নির্ধারণ, সময় নির্বাচন ও রুশ প্রতিরক্ষা এড়িয়ে আক্রমণপথ ঠিক করায় মার্কিন সহায়তা ছিল।
কিন্তু এখন সেই সহযোগিতার মান ভেঙে পড়ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞ ফিৎসানাকিস। তাঁর ভাষায়, ‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একদল অকার্যকর রাজনৈতিক নেতৃত্ব পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করে ফেলছে। তারা সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, অথচ রুশ হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
ডাচ গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার কমিয়ে দিয়েছে। এমন পদক্ষেপ অন্য ইউরোপীয় সংস্থাগুলোও নিচ্ছে। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা বন্ধ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এতে তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা রাজনৈতিক। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ–সংক্রান্ত অবস্থান এতটাই দোদুল্যমান যে তাদের প্রতিটি ঘোষণা দিনের মেজাজের ওপর নির্ভর করছে—কোনো কৌশলগত অর্থই এতে নেই।’ অর্থাৎ, এখন কেউই নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কার পক্ষে।
ফিৎসানাকিসের মতে, ইউক্রেন আক্রমণ রাশিয়ার জন্য ‘১৯৪০–এর দশকের পর সবচেয়ে বিজয়মন্ডিত সময়’, কারণ ‘এই যুদ্ধে তারা ন্যাটোকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে—ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করেছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সঙ্গে ইউরোপীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব মহাদেশটিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন ছিল তারই এক নিদর্শন। সম্মেলনে বেলজিয়াম ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও ইউরোপের সামরিক শিল্পকে শক্তিশালী করতে রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা আটকে দেয়। কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার জন্য সন্দেহের মুখে থাকা তথাকথিত রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিটের’ বিষয়টি সম্মেলনে একবারও উল্লেখ করা হয়নি।
কোস্টাল ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড ইন্টেলিজেন্সের সহকারী পরিচালক জোসেফ ফিৎসানাকিস বলেন, ‘১৯৩৯ সালে নাৎসি বাহিনী যখন ইউরোপের দোরগোড়ায় ছিল, সে সময় ইউরোপ যতটা অপ্রস্তুত ছিল, আজও রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে ইউরোপ ঠিক ততটাই প্রস্তুতিহীন।’
ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর মতো সামনের সারির রাষ্ট্রগুলো পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ভ্রমে নেই। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে। তারা অভ্যন্তরীণ বিভাজন আর রুশ ভুয়া তথ্যের অপপ্রচারে এমনভাবে বিপর্যস্ত যে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তা তারা বুঝতেই পারছে না।’
২০২২ সাল থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের উত্তর ইউরোপবিষয়ক পরিচালক আনা ভিসল্যান্ডার বলেন, ‘রাশিয়ার এই হাইব্রিড যুদ্ধের উদ্দেশ্য আমাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলা। যেন আমরা শান্তিকালেও নিরাপত্তাহীন বোধ করি এবং শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার লক্ষ্য পূরণের পথে; অর্থাৎ ইউরোপকে আবার প্রভাববলয়ে ভাগ করার দিকে আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়ি।’
গত ১০ সেপ্টেম্বর এই অভিযুক্ত রুশ তৎপরতা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সেদিন দুই ডজন রুশ গেরান-২ ড্রোন ন্যাটোর আকাশসীমায় প্রবেশ করে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের সাড়ে তিন বছরে মাত্র তিনটি ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল।
এর ৯ দিন পর এস্তোনিয়ার উপকূলবর্তী ফিনল্যান্ড উপসাগরের আকাশে তিনটি রুশ মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান ১২ মিনিট ধরে মহড়া দিয়ে যায়। তখন এস্তোনিয়ায় অবস্থানরত ইতালির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ছুটে গিয়ে সেগুলোকে প্রতিহত করে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর জার্মানি বাল্টিক সাগরের আকাশে উড্ডয়নরত এক রুশ ইলিউশিন-২০ এম নজরদারি বিমানকে বাধা দেয়। বিমানটি কোনো ফ্লাইট পরিকল্পনা বা রেডিও যোগাযোগ ছাড়াই উড়ছিল।
চার দিন পর ন্যাটো জানায়, লিথুয়ানিয়ার সিয়াউলাই ঘাঁটি থেকে হাঙ্গেরির দুটি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করে তিনটি রুশ বিমান—একটি সু-৩০, একটি সু-৩৫ এবং একটি মিগ-৩১কে ফিরিয়ে দেয়। এই যুদ্ধবিমানগুলো লাটভিয়ার আকাশসীমার কাছাকাছি উড়ছিল। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া সব সময় বিশেষ তৎপরতা শুরু করে এমন সময়, যেটিকে তারা বলে “বিশেষ সময়” বা “জরুরি সময়”। এই সময়টি আসলে যুদ্ধ শুরুর আগে উত্তেজনা চূড়ায় ওঠার মুহূর্ত।’
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। জার্মানির ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার এই মাসে দেশটির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগে বলেন, যুদ্ধ তারও আগে হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘২০২৯ সালের আগে রাশিয়া আক্রমণ করবে না—এই ভেবে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। ইউরোপ এখন এক নতুন ধরনের মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ এই অবস্থায় ইউরোপীয় সামরিক পরিকল্পনাবিদেরা যেটিকে ‘জরুরি সময়’ বলেন, সেটিকেই তারা আবার ‘ফেজ জিরো’ নামেও অভিহিত করেছে। যার অর্থ হলো প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ এবং বেসামরিক ও সামরিক কার্যক্রমের সীমারেখা মুছে ফেলা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডার ডেমেট্রিস অ্যান্ড্রু গ্রাইমস বলেন, ‘রুশ গোয়েন্দা সংস্থার মতোই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এখন ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ক্রেমলিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ইউরোপ অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত শনিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রদিওন মিরোশনিক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ‘দুঃখজনকভাবে এক যুদ্ধংদেহী অবস্থান’ নিয়েছে। তিনি ইউরোপীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ঠেকানোর চেষ্টা’ করছে তারা। অথচ এই যোগাযোগই হতে পারত সংঘাত নিরসনের পথ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া তার কথিত যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন ‘ওয়েপনাইজেশন অব এভরিথিং’ বা ‘সবকিছুকেই অস্ত্রে’ পরিণত করছে। রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়া ‘ছায়া নৌবহরের’ তেলবাহী জাহাজগুলো ন্যাটোর যোগাযোগ নজরদারির সরঞ্জাম বহন করছে ও বাল্টিক সাগরে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, এমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ফরাসি কমান্ডোরা ২ অক্টোবর বোরাকায় নামের রুশ তেলবাহী ট্যাংকার আটক করে। সেটির বিরুদ্ধে ড্রোন উড়ানোর অভিযোগ আছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কোপেনহেগেনের বিমানবন্দর যখন ড্রোনের ঝাঁকের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এটি শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। পরে ডেনমার্কের পশ্চিম উপকূলে যাত্রাকালে কয়েকটি আঞ্চলিক বিমানবন্দরেও ড্রোন হামলার রিপোর্ট পাওয়া যায়।
চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোও মস্কো-বেইজিং আঁতাতের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা। ২২ সেপ্টেম্বর ড্রোন ঝাঁকে আক্রান্ত হওয়ার দিনে নরওয়ের রাজধানী অসলো বিমানবন্দরের চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা নির্মাতা কোম্পানি ডি-জে-আই অ্যারোস্কোপ নিজেই বন্ধ করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমানবন্দর, তেল ও গ্যাস টার্মিনালসহ নানা স্থাপনা এখনো ড্রোন হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন শনাক্তের পর পোলিশ এফ-১৬, ডাচ এফ-৩৫ ও ইতালির আকাশ নজরদারি বিমান (এডব্লিউএসি) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু এসব প্রতিরোধ পুরোপুরি ব্যয়সাধ্য যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ইউক্রেন বিমান, অ্যান্টিড্রোন ড্রোন, কাঁধে বহনযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও পিকআপভিত্তিক মোবাইল ইউনিটের সমন্বয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে; এখন তারা হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ইউক্রেন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে পোল্যান্ড। আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ইউক্রেনীয় যোদ্ধা অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে ড্রোনচালক প্রশিক্ষণে এবং ঘোষণা দিয়েছে—নিজ ভূখণ্ডের আকাশে কোনো অচেনা উড়ন্ত বস্তু দেখলেই গুলি করে নামানো হবে। ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের এই দেশগুলোই রুশ হুমকি নিয়ে সবচেয়ে সরব ও সক্রিয়।
ডেনমার্ক এই মাসে জানিয়েছে, পুরোনো ট্যাংকারগুলোর পরিবেশগত ও বিমা-সংক্রান্ত মান যাচাই শুরু করবে। তবে এখনো কোনোটি জব্দ করেনি। স্টকহোমভিত্তিক বিশ্লেষক উইসলান্ডার মনে করেন, নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো ‘আরও বৃহৎ পরিসরে’ পদক্ষেপ নিতে পারে ‘ছায়া নৌবহরের বিরুদ্ধে’, যা রাশিয়ার দুর্বল জায়গায় আঘাত হনবে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘এখনো কোনো সমন্বিত নীতি তৈরি হয়নি।’
বিশেষজ্ঞ গ্রাইমস বলেন, ‘পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে বাণিজ্যিক নৌবহর পরিদর্শন বা নিষেধাজ্ঞা, বাল্টিক নজরদারি বাড়ানো, উদ্ভাবনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বিপুল অ্যান্টিড্রোন বিনিয়োগ, আর ঐক্যবদ্ধ নিষেধাজ্ঞা—সবই এখন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।’
ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট নজরদারি ও দূরপাল্লার সিগন্যাল গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে। সম্প্রতি জানা গেছে, রুশ তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের সফল হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, লক্ষ্য নির্ধারণ, সময় নির্বাচন ও রুশ প্রতিরক্ষা এড়িয়ে আক্রমণপথ ঠিক করায় মার্কিন সহায়তা ছিল।
কিন্তু এখন সেই সহযোগিতার মান ভেঙে পড়ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞ ফিৎসানাকিস। তাঁর ভাষায়, ‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একদল অকার্যকর রাজনৈতিক নেতৃত্ব পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করে ফেলছে। তারা সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, অথচ রুশ হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
ডাচ গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার কমিয়ে দিয়েছে। এমন পদক্ষেপ অন্য ইউরোপীয় সংস্থাগুলোও নিচ্ছে। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা বন্ধ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এতে তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা রাজনৈতিক। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ–সংক্রান্ত অবস্থান এতটাই দোদুল্যমান যে তাদের প্রতিটি ঘোষণা দিনের মেজাজের ওপর নির্ভর করছে—কোনো কৌশলগত অর্থই এতে নেই।’ অর্থাৎ, এখন কেউই নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কার পক্ষে।
ফিৎসানাকিসের মতে, ইউক্রেন আক্রমণ রাশিয়ার জন্য ‘১৯৪০–এর দশকের পর সবচেয়ে বিজয়মন্ডিত সময়’, কারণ ‘এই যুদ্ধে তারা ন্যাটোকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে—ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করেছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর প্রভাব ইত্যাদিই পাকিস্তানের পরিচয় হয়ে আছে অনেক দিন। ইমরান খান সরকারের সময়ে এই দুই পরিচয় আরও প্রকট হয়েছে। সঙ্গে মার্কিন মিত্র থেকে চীনের মিত্র হিসেবে নতুন পরিচয়ও যুক্ত হয়েছে দেশটির নামের সঙ্গে।
৩০ অক্টোবর ২০২১
২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন।
১২ ঘণ্টা আগে
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
২ দিন আগে
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত দুই মেয়াদের সীমা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার বিষয়টি এখনো বিবেচনা করেননি তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—তিনি কি চাইলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? আইনগতভাবে ট্রাম্পের সামনে কী কী বাধা রয়েছে? যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কী বলে?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনীতে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।
১৯৫১ সালে এই সংশোধনী অনুমোদিত হয়। এর আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের জন্য দুই মেয়াদের সীমা ছিল একধরনের অলিখিত প্রথা, যা দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকে প্রচলিত ছিল।
ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সেই প্রথা ভেঙে তৃতীয়বার নির্বাচিত হন এবং চতুর্থ মেয়াদের শুরুতেই ১৯৪৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপরই দুই মেয়াদের সাংবিধানিক সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা হয়।
কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক ওয়েন আঙ্গার বলেন, সংবিধানে বিষয়টি স্পষ্ট—প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তিনি মনে করেন, ট্রাম্প আদালতে গেলেও সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাহলে ট্রাম্পপন্থীরা কি সংবিধান বদলাতে পারবেন? তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে এটি প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভাজন গভীর রয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট—দুটিতেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের সমর্থন দরকার। বিকল্পভাবে, দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্যের সম্মতিতে বিশেষ কনভেনশন ডাকতে হয়। এরপর ৫০টি রাজ্যের মধ্যে কমপক্ষে ৩৮টি রাজ্যের আইনসভাকে সংশোধনী অনুমোদন করতে হবে।
বর্তমানে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে অল্প ব্যবধানে (২১৯–২১৩) সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সিনেটে ৫৩–৪৭ আসন নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা ২৮টি রাজ্যের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাখে।
এই প্রেক্ষাপটে টেনেসির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি প্রস্তাব দেন—যাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বোচ্চ তিনটি অ-ক্রমিক (non-consecutive বা ধারাবাহিক নয়) মেয়াদে দায়িত্ব পালনের অনুমতি চাওয়া হয়।
যদি এই সংশোধনী কখনো পাস হয়, তাহলে ২০১৭ ও ২০২৫ সালের অ-ক্রমিক মেয়াদ শেষে ট্রাম্প ২০২৯ সালে তৃতীয়বার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ফেরার সুযোগ আছে কি? ট্রাম্পের বক্তব্য, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী প্রার্থী যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ থাকে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আইনগতভাবে আমি সেটা করতে পারি। তবে আমি মনে করি, মানুষ সেটা ভালোভাবে নেবে না। এটা খুবই চালাকি করা হবে।’
কিন্তু আইন অনুযায়ী, ট্রাম্প আসলে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও প্রার্থী হতে পারবেন না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে বলা আছে—যে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ারও যোগ্য নন।

সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত দুই মেয়াদের সীমা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার বিষয়টি এখনো বিবেচনা করেননি তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—তিনি কি চাইলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? আইনগতভাবে ট্রাম্পের সামনে কী কী বাধা রয়েছে? যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কী বলে?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনীতে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।
১৯৫১ সালে এই সংশোধনী অনুমোদিত হয়। এর আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের জন্য দুই মেয়াদের সীমা ছিল একধরনের অলিখিত প্রথা, যা দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকে প্রচলিত ছিল।
ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সেই প্রথা ভেঙে তৃতীয়বার নির্বাচিত হন এবং চতুর্থ মেয়াদের শুরুতেই ১৯৪৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপরই দুই মেয়াদের সাংবিধানিক সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা হয়।
কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক ওয়েন আঙ্গার বলেন, সংবিধানে বিষয়টি স্পষ্ট—প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তিনি মনে করেন, ট্রাম্প আদালতে গেলেও সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাহলে ট্রাম্পপন্থীরা কি সংবিধান বদলাতে পারবেন? তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে এটি প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভাজন গভীর রয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট—দুটিতেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের সমর্থন দরকার। বিকল্পভাবে, দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্যের সম্মতিতে বিশেষ কনভেনশন ডাকতে হয়। এরপর ৫০টি রাজ্যের মধ্যে কমপক্ষে ৩৮টি রাজ্যের আইনসভাকে সংশোধনী অনুমোদন করতে হবে।
বর্তমানে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে অল্প ব্যবধানে (২১৯–২১৩) সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সিনেটে ৫৩–৪৭ আসন নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা ২৮টি রাজ্যের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাখে।
এই প্রেক্ষাপটে টেনেসির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি প্রস্তাব দেন—যাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বোচ্চ তিনটি অ-ক্রমিক (non-consecutive বা ধারাবাহিক নয়) মেয়াদে দায়িত্ব পালনের অনুমতি চাওয়া হয়।
যদি এই সংশোধনী কখনো পাস হয়, তাহলে ২০১৭ ও ২০২৫ সালের অ-ক্রমিক মেয়াদ শেষে ট্রাম্প ২০২৯ সালে তৃতীয়বার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ফেরার সুযোগ আছে কি? ট্রাম্পের বক্তব্য, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী প্রার্থী যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ থাকে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আইনগতভাবে আমি সেটা করতে পারি। তবে আমি মনে করি, মানুষ সেটা ভালোভাবে নেবে না। এটা খুবই চালাকি করা হবে।’
কিন্তু আইন অনুযায়ী, ট্রাম্প আসলে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও প্রার্থী হতে পারবেন না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে বলা আছে—যে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ারও যোগ্য নন।

ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর প্রভাব ইত্যাদিই পাকিস্তানের পরিচয় হয়ে আছে অনেক দিন। ইমরান খান সরকারের সময়ে এই দুই পরিচয় আরও প্রকট হয়েছে। সঙ্গে মার্কিন মিত্র থেকে চীনের মিত্র হিসেবে নতুন পরিচয়ও যুক্ত হয়েছে দেশটির নামের সঙ্গে।
৩০ অক্টোবর ২০২১
২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন।
১২ ঘণ্টা আগে
ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
১ দিন আগে
আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দা
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ক্যারিবীয় সাগরে কয়েকটা স্পিডবোট ধ্বংস করার জন্য নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমানবাহী রণতরী, এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান এবং টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্রে ভরা রণতরী–যুদ্ধজাহাজের বহর দরকার পড়ে না। তারপরও ইউরোপ থেকে এগিয়ে আসছে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশাল রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। এটি এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থানরত শক্তিশালী মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে জোরালো হচ্ছে ধারণা—ড্রাগ চোরাচালান দমনের নামে ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বর্তমানে এশিয়া সফরে রয়েছেন। যেখানে তিনি এরই মধ্যে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কৃতিত্ব নিয়েছেন। চীনের সঙ্গেও তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্য দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মধ্যপ্রাচ্যের গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল হত্যাকাণ্ড বন্ধে এক অস্পষ্ট ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব তিনি নিয়েছেন।
এমনকি আজারবাইজান–আর্মেনিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈরিতার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে ‘সফল’ মধ্যস্থতার দাবি করেছেন তিনি। আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে।
নতুন শতাব্দীর ‘গানবোট কূটনীতির’ প্রথম লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। ফোর্ডের উপস্থিতি তাঁকে ইঙ্গিত দিচ্ছে, হয় তাঁকে সরে দাঁড়াতে হবে, নয় সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করুক। আবার এটাও সম্ভব, যুদ্ধজাহাজের এই উপস্থিতি চোরাচালানবিরোধী অভিযানের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং শাসক পরিবর্তনের উপায়।
মার্কিন বিরোধী দলীয় নেতা ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক কেলি এবিসি নিউজে বলেন, ‘কেউ তো আর বেহুদা কোনো যুদ্ধজাহাজের বহরকে অকারণে ওদিক থেকে টেনে ক্যারিবীয়তে নিয়ে আসে না। এর অর্থ হলো—হয় ভয় দেখাবে, নয়তো ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ শুরু করবে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ভেনেজুয়েলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিলসহ নানা মাদকের মূল পথ। যদিও বাস্তবে দেশটিতে মাদক উৎপাদন প্রায় নেই বললেই চলে, আর বড় রুটগুলো লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, মাদুরো নিজেই নাকি এসব চোরাচালান নেটওয়ার্কের প্রধান। তারা এমনকি গ্যাং সদস্যদের ‘অবৈধ যোদ্ধা’ ঘোষণা করেছে, যাতে আইনগতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার পথ খোলা যায়।
সিএনএন-কে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ও পাচার পথে হামলার পরিকল্পনা করছেন, যদিও তিনি কূটনীতির দরজাও পুরোপুরি বন্ধ করেননি। সাম্প্রতিক কিছু নৌ-অভিযানে তিনি বেশ উল্লসিতও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের মেরে ফেলব, ওরা মারা যাবে।’
এই অবস্থায় ট্রাম্প এশিয়া সফরে থাকলেও লাতিন আমেরিকার আকাশে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে তাঁর প্রশাসন ও মার্কিন সশস্ত্রবাহিনী। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সিবিএস নিউজকে বলেন, ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার সম্ভাবনাও ‘খুবই বাস্তবসম্মত।’
তিনি জানান, ট্রাম্প তাঁকে বলেছেন—‘ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের’ বিষয়ে কংগ্রেসকে ব্রিফ করা হবে। গ্রাহামের ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝে ফেলেছেন, মাদুরো একজন অভিযুক্ত মাদক চোরাচালানকারী। এখন সময় হয়েছে তাঁকে সরানোর।’
তবে ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলা আইনগত ও ভূরাজনৈতিকভাবে বড় প্রশ্ন তুলবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো সেই ১০টি ধ্বংস করার কৃতিত্ব প্রশাসন নিলেও সেগুলোতে থাকা মাদক বা অপরাধের প্রমাণ প্রকাশ করেনি। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, ট্রাম্প যদি একতরফাভাবে লাতিন আমেরিকায় যুদ্ধ শুরু করেন, তাহলে সেটি হবে নির্বাহী ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। গ্রাহাম অবশ্য মনে করেন, প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের অনুমতি দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘নারকো-কার্টেলদের ক্ষেত্রে খেলার নিয়ম বদলে গেছে। আমরা ওদের শেষ করে দেব।’
কেন্টাকির সিনেটর র্যান্ড পল এনবিসি নিউজে বলেন, ‘যখন কাউকে হত্যা করা হয়, তখন অন্তত জানা উচিত কাকে হত্যা করা হচ্ছে। কোনো ঘোষণা ছাড়া যুদ্ধ মানে আপনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না এনেই তাঁকে হত্যা করছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুমতি ছাড়া ৬০ দিন পর্যন্ত সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে প্রথম নৌ-আক্রমণ ধরা হলে সেই সময়সীমা নভেম্বরের শুরুতেই শেষ হবে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়ান গুডম্যান বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলা কেবল তখনই বৈধ হবে, যদি সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার জবাব হয়, প্রয়োজনীয় ও আনুপাতিক হয়, এবং কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। এর কোনোটিই এখনো হয়নি।’
ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিবিরকেও বিব্রত করতে পারে। কারণ তাঁরা বিদেশি সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতিতেই তাঁকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ট্রাম্প তাঁর সরকারি কার্যক্রমে দায়মুক্তি, আর রিপাবলিকান কংগ্রেস তাঁর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাকে প্রশ্ন করছে না।
ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ হয়তো মাদুরোর শাসন থেকে মুক্তি চায়, কিন্তু সামরিক অভিযান বেসামরিক প্রাণহানি ও রাজনৈতিক ঐক্যের ঝুঁকি বাড়াবে। ইতিহাস বলে—ইরাক, লিবিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকায় সিআইএ–সমর্থিত অভ্যুত্থানগুলো খুব কমই সাফল্য এনেছে। নতুন এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠানে’ হস্তক্ষেপের অভিযোগ আরও ঘনীভূত করবে। ট্রাম্প এখন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকেও চাপে রেখেছেন এবং আর্জেন্টিনার নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। ব্রাজিলের প্রতিও রয়েছে তাঁর নজর।
এমন হস্তক্ষেপ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অন্য দেশে সরকার বদল ঘটাবে—ঠিক সেই সময়, যখন চীন ও রাশিয়া নিজ নিজ প্রভাববলয় গড়ছে। এতে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সরাসরি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়—জোট, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা মুক্ত বাণিজ্যের তোয়াক্কা না করেই। মাদক প্রবাহ ঠেকানো ভালো উদ্দেশ্য বটে, কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল আসে প্রধানত মেক্সিকো ও চীন থেকে, ভেনেজুয়েলা থেকে নয়।
তবু মাদুরোকে সরাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে ভেনেজুয়েলার অভিবাসন কমতে পারে, যা ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লক্ষ্যেও সহায়ক। তাই একে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর পরিপন্থী বলা ভুল হবে—বরং এটি তারই সম্প্রসারণ। তবু ঝুঁকি কম নয়। ট্রাম্প হয়তো ইরাকের মতো দীর্ঘ যুদ্ধ এড়াতে চান, কিন্তু তাঁর এই নীতি দেখায়—তিনি ক্ষমতার সীমা মানতে আগ্রহী নন।
ট্রাম্প প্রায়ই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলির প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি শুল্কনীতি ছাড়াও স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের মাধ্যমে পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম ও ফিলিপাইন দখল করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনকে অনেকেই জেমস মনরোর সময়কার মতবাদ—‘মনরো ডকট্রিন’-এর আধুনিক সংস্করণ হিসেবে দেখছেন।
এই নতুন ‘মেগা-মনরো ডকট্রিনে’ ইউরোপের জায়গায় এসেছে চীন ও কিছুটা রাশিয়া। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মধ্য আমেরিকায় চীনের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাব রুখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বছর শুরুর দিকে পানামা সফর করে দেশটিকে সতর্ক করেছিলেন, যেন চীনকে পানামা খালে প্রভাব বিস্তার করতে না দেওয়া হয়।
কিউবান অভিবাসীর সন্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও দীর্ঘদিন ধরেই লাতিন আমেরিকার বামপন্থী শাসকদের কট্টর সমালোচক। এখন তাঁর অবস্থান মিলেছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আরেক শক্তিশালী নীতিনির্ধারক স্টিফেন মিলারের সঙ্গে। তিনিও অভিবাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সফল হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এটি কি পুরো অঞ্চলের বামপন্থী সরকারগুলোকেও টলিয়ে দেবে? অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটা ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক বৃহত্তর আদর্শিক পুনর্গঠন। তবে চীনা প্রভাব ঠেকানোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে বলেই সমালোচনা উঠছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ, দেশটি তাঁর বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার মামলা করেছে। তিনি আর্জেন্টিনাকে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে শর্ত রেখেছেন—ভোটাররা যেন তাঁর বন্ধু ও ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’—ঘনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের দলকে বেছে নেয়। রয়টার্স জানায়, নির্বাচনে মিলেইয়ের দল ব্যাপক ব্যবধানে জিতেছে।
একই সঙ্গে ট্রাম্প এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলেকে ‘নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরছেন, এমনকি অভিবাসীদের পাঠিয়েছেন তাঁর কুখ্যাত জেলে। কলম্বিয়ার লিবারেল নেতা পেত্রোর প্রতিও তাঁর বৈরিতা প্রকাশ্য। সব মিলিয়ে, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা মানে তেলসমৃদ্ধ এক দেশ আবার মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হওয়া—যা ট্রাম্পের বহু উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তা-ই ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি মাদুরোর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি। সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া এই নেত্রী স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও তাঁর মিল দেখা যায়। ফক্স নিউজে তিনি বলেন, ‘আমরাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম, মাদুরোই আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই যুদ্ধ থামাচ্ছেন।’
তবে ট্রাম্প যে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এসব করছেন, তা বলা কঠিন। কারণ, তিনিই নিজ দেশে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর লাতিন আমেরিকা নীতি এখন নতুন করে গণতন্ত্রের সীমারেখা মুছে দিচ্ছে।
সিএনএন অবলম্বনে লিখেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ক্যারিবীয় সাগরে কয়েকটা স্পিডবোট ধ্বংস করার জন্য নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমানবাহী রণতরী, এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান এবং টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্রে ভরা রণতরী–যুদ্ধজাহাজের বহর দরকার পড়ে না। তারপরও ইউরোপ থেকে এগিয়ে আসছে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশাল রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। এটি এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থানরত শক্তিশালী মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে জোরালো হচ্ছে ধারণা—ড্রাগ চোরাচালান দমনের নামে ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প বর্তমানে এশিয়া সফরে রয়েছেন। যেখানে তিনি এরই মধ্যে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কৃতিত্ব নিয়েছেন। চীনের সঙ্গেও তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্য দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মধ্যপ্রাচ্যের গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল হত্যাকাণ্ড বন্ধে এক অস্পষ্ট ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব তিনি নিয়েছেন।
এমনকি আজারবাইজান–আর্মেনিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈরিতার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে ‘সফল’ মধ্যস্থতার দাবি করেছেন তিনি। আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মাঝেও শান্তিচুক্তির ক্রেডিট তিনি নিয়েছেন। এ ছাড়া, ভারত–পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের মধ্যস্থতা করার কৃতিত্বও তিনি নিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়ানোর মিশন নিয়ে এসেছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনের জলে–স্থলে এবং অন্তরিক্ষে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে।
নতুন শতাব্দীর ‘গানবোট কূটনীতির’ প্রথম লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। ফোর্ডের উপস্থিতি তাঁকে ইঙ্গিত দিচ্ছে, হয় তাঁকে সরে দাঁড়াতে হবে, নয় সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করুক। আবার এটাও সম্ভব, যুদ্ধজাহাজের এই উপস্থিতি চোরাচালানবিরোধী অভিযানের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং শাসক পরিবর্তনের উপায়।
মার্কিন বিরোধী দলীয় নেতা ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর মার্ক কেলি এবিসি নিউজে বলেন, ‘কেউ তো আর বেহুদা কোনো যুদ্ধজাহাজের বহরকে অকারণে ওদিক থেকে টেনে ক্যারিবীয়তে নিয়ে আসে না। এর অর্থ হলো—হয় ভয় দেখাবে, নয়তো ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ শুরু করবে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ভেনেজুয়েলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিলসহ নানা মাদকের মূল পথ। যদিও বাস্তবে দেশটিতে মাদক উৎপাদন প্রায় নেই বললেই চলে, আর বড় রুটগুলো লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, মাদুরো নিজেই নাকি এসব চোরাচালান নেটওয়ার্কের প্রধান। তারা এমনকি গ্যাং সদস্যদের ‘অবৈধ যোদ্ধা’ ঘোষণা করেছে, যাতে আইনগতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার পথ খোলা যায়।
সিএনএন-কে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ও পাচার পথে হামলার পরিকল্পনা করছেন, যদিও তিনি কূটনীতির দরজাও পুরোপুরি বন্ধ করেননি। সাম্প্রতিক কিছু নৌ-অভিযানে তিনি বেশ উল্লসিতও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের মেরে ফেলব, ওরা মারা যাবে।’
এই অবস্থায় ট্রাম্প এশিয়া সফরে থাকলেও লাতিন আমেরিকার আকাশে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে তাঁর প্রশাসন ও মার্কিন সশস্ত্রবাহিনী। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সিবিএস নিউজকে বলেন, ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার সম্ভাবনাও ‘খুবই বাস্তবসম্মত।’
তিনি জানান, ট্রাম্প তাঁকে বলেছেন—‘ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের’ বিষয়ে কংগ্রেসকে ব্রিফ করা হবে। গ্রাহামের ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝে ফেলেছেন, মাদুরো একজন অভিযুক্ত মাদক চোরাচালানকারী। এখন সময় হয়েছে তাঁকে সরানোর।’
তবে ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলা আইনগত ও ভূরাজনৈতিকভাবে বড় প্রশ্ন তুলবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো সেই ১০টি ধ্বংস করার কৃতিত্ব প্রশাসন নিলেও সেগুলোতে থাকা মাদক বা অপরাধের প্রমাণ প্রকাশ করেনি। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, ট্রাম্প যদি একতরফাভাবে লাতিন আমেরিকায় যুদ্ধ শুরু করেন, তাহলে সেটি হবে নির্বাহী ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। গ্রাহাম অবশ্য মনে করেন, প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের অনুমতি দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘নারকো-কার্টেলদের ক্ষেত্রে খেলার নিয়ম বদলে গেছে। আমরা ওদের শেষ করে দেব।’
কেন্টাকির সিনেটর র্যান্ড পল এনবিসি নিউজে বলেন, ‘যখন কাউকে হত্যা করা হয়, তখন অন্তত জানা উচিত কাকে হত্যা করা হচ্ছে। কোনো ঘোষণা ছাড়া যুদ্ধ মানে আপনি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না এনেই তাঁকে হত্যা করছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুমতি ছাড়া ৬০ দিন পর্যন্ত সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে প্রথম নৌ-আক্রমণ ধরা হলে সেই সময়সীমা নভেম্বরের শুরুতেই শেষ হবে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়ান গুডম্যান বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলা কেবল তখনই বৈধ হবে, যদি সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার জবাব হয়, প্রয়োজনীয় ও আনুপাতিক হয়, এবং কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। এর কোনোটিই এখনো হয়নি।’
ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিবিরকেও বিব্রত করতে পারে। কারণ তাঁরা বিদেশি সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতিতেই তাঁকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ট্রাম্প তাঁর সরকারি কার্যক্রমে দায়মুক্তি, আর রিপাবলিকান কংগ্রেস তাঁর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাকে প্রশ্ন করছে না।
ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ হয়তো মাদুরোর শাসন থেকে মুক্তি চায়, কিন্তু সামরিক অভিযান বেসামরিক প্রাণহানি ও রাজনৈতিক ঐক্যের ঝুঁকি বাড়াবে। ইতিহাস বলে—ইরাক, লিবিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকায় সিআইএ–সমর্থিত অভ্যুত্থানগুলো খুব কমই সাফল্য এনেছে। নতুন এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠানে’ হস্তক্ষেপের অভিযোগ আরও ঘনীভূত করবে। ট্রাম্প এখন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকেও চাপে রেখেছেন এবং আর্জেন্টিনার নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। ব্রাজিলের প্রতিও রয়েছে তাঁর নজর।
এমন হস্তক্ষেপ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অন্য দেশে সরকার বদল ঘটাবে—ঠিক সেই সময়, যখন চীন ও রাশিয়া নিজ নিজ প্রভাববলয় গড়ছে। এতে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সরাসরি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়—জোট, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা মুক্ত বাণিজ্যের তোয়াক্কা না করেই। মাদক প্রবাহ ঠেকানো ভালো উদ্দেশ্য বটে, কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল আসে প্রধানত মেক্সিকো ও চীন থেকে, ভেনেজুয়েলা থেকে নয়।
তবু মাদুরোকে সরাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে ভেনেজুয়েলার অভিবাসন কমতে পারে, যা ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লক্ষ্যেও সহায়ক। তাই একে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর পরিপন্থী বলা ভুল হবে—বরং এটি তারই সম্প্রসারণ। তবু ঝুঁকি কম নয়। ট্রাম্প হয়তো ইরাকের মতো দীর্ঘ যুদ্ধ এড়াতে চান, কিন্তু তাঁর এই নীতি দেখায়—তিনি ক্ষমতার সীমা মানতে আগ্রহী নন।
ট্রাম্প প্রায়ই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলির প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি শুল্কনীতি ছাড়াও স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের মাধ্যমে পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম ও ফিলিপাইন দখল করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনকে অনেকেই জেমস মনরোর সময়কার মতবাদ—‘মনরো ডকট্রিন’-এর আধুনিক সংস্করণ হিসেবে দেখছেন।
এই নতুন ‘মেগা-মনরো ডকট্রিনে’ ইউরোপের জায়গায় এসেছে চীন ও কিছুটা রাশিয়া। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মধ্য আমেরিকায় চীনের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাব রুখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বছর শুরুর দিকে পানামা সফর করে দেশটিকে সতর্ক করেছিলেন, যেন চীনকে পানামা খালে প্রভাব বিস্তার করতে না দেওয়া হয়।
কিউবান অভিবাসীর সন্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও দীর্ঘদিন ধরেই লাতিন আমেরিকার বামপন্থী শাসকদের কট্টর সমালোচক। এখন তাঁর অবস্থান মিলেছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আরেক শক্তিশালী নীতিনির্ধারক স্টিফেন মিলারের সঙ্গে। তিনিও অভিবাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সফল হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এটি কি পুরো অঞ্চলের বামপন্থী সরকারগুলোকেও টলিয়ে দেবে? অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটা ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক বৃহত্তর আদর্শিক পুনর্গঠন। তবে চীনা প্রভাব ঠেকানোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে বলেই সমালোচনা উঠছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ব্রাজিলে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ, দেশটি তাঁর বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার মামলা করেছে। তিনি আর্জেন্টিনাকে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে শর্ত রেখেছেন—ভোটাররা যেন তাঁর বন্ধু ও ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’—ঘনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের দলকে বেছে নেয়। রয়টার্স জানায়, নির্বাচনে মিলেইয়ের দল ব্যাপক ব্যবধানে জিতেছে।
একই সঙ্গে ট্রাম্প এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলেকে ‘নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরছেন, এমনকি অভিবাসীদের পাঠিয়েছেন তাঁর কুখ্যাত জেলে। কলম্বিয়ার লিবারেল নেতা পেত্রোর প্রতিও তাঁর বৈরিতা প্রকাশ্য। সব মিলিয়ে, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা মানে তেলসমৃদ্ধ এক দেশ আবার মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হওয়া—যা ট্রাম্পের বহু উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তা-ই ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি মাদুরোর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি। সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া এই নেত্রী স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও তাঁর মিল দেখা যায়। ফক্স নিউজে তিনি বলেন, ‘আমরাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম, মাদুরোই আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই যুদ্ধ থামাচ্ছেন।’
তবে ট্রাম্প যে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এসব করছেন, তা বলা কঠিন। কারণ, তিনিই নিজ দেশে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর লাতিন আমেরিকা নীতি এখন নতুন করে গণতন্ত্রের সীমারেখা মুছে দিচ্ছে।
সিএনএন অবলম্বনে লিখেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর প্রভাব ইত্যাদিই পাকিস্তানের পরিচয় হয়ে আছে অনেক দিন। ইমরান খান সরকারের সময়ে এই দুই পরিচয় আরও প্রকট হয়েছে। সঙ্গে মার্কিন মিত্র থেকে চীনের মিত্র হিসেবে নতুন পরিচয়ও যুক্ত হয়েছে দেশটির নামের সঙ্গে।
৩০ অক্টোবর ২০২১
২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন।
১২ ঘণ্টা আগে
ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
১ দিন আগে
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
২ দিন আগে