অনলাইন ডেস্ক
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসে উচ্চপদস্থ নেতাদের বহিষ্কারের পর আবার ফিরিয়ে নেওয়ার বহু উদাহরণ আছে। দেং জিয়াওপিংকে তিনবার বহিষ্কার করা হয়। এরপর তাঁর হাত ধরেই ১৯৭০—এর দশকের শেষ দিকে চীন মাওবাদ থেকে বের আসে। এমনকি, কিছু কর্মকর্তাকে মৃত্যুর বহু বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
চীনা টেক জায়ান্ট আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা ২০২০ সালে এসে ঠিক একই ধরনের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের শিকার হন। তাঁর ফিন-টেক কোম্পানি অ্যান্ট গ্রুপের প্রাথমিক শেয়ার ইস্যু (আইপিও) বাতিল করা হয়। এরপরই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় এবং নজিরবিহীন জরিমানা করা হয়। এই ঘটনার পর জ্যাক মা একপ্রকার লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান।
তবে সেই দিনের অবসান হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তাঁকে আবারও স্বাগত জানানো হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জ্যাক মা-সহ বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা বেইজিংয়ে এক সিম্পোজিয়ামে চীনের সর্বোচ্চ নেতা সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অনেকেই এটিকে জ্যাক মার নির্বাসন থেকে ফিরে আসার সংকেত হিসেবে দেখছেন। তাঁরা এটাও মনে করছেন যে, দীর্ঘদিনের দমন-পীড়নের পর বেসরকারি প্রযুক্তি খাত চীনের ক্ষমতাসীন মহলের সুনজরে ফিরেছে।
জ্যাক মার এই প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে আলিবাবা তো বটেই চীনের ইতিহাসের সবচেয়ে লাভজনক প্রত্যাবর্তনে রূপ নিতে পারে। কারণ, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আলিবাবার শেয়ারমূল্য এক সম্মেলন সংক্রান্ত গুজবের কারণে এক লাফে ৬ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যায়। এর ফলে কোম্পানিটির বাজারমূল্য প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার বেড়ে যায়। টেনজ্যান্ট ও শাওমির মতো অন্যান্য চীনা টেক জায়ান্টগুলোর শেয়ারমূল্যও ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যদিও এর আগের কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। হংকংয়ের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত শীর্ষ ৩০টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সূচক হ্যাং সেং টেক—এর শেয়ারমূল্য গত এক মাসে ২৩ শতাংশ বেড়েছে। আর আলিবাবার শেয়ারমূল্য বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। তাহলে কি অবশেষে চীনে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার হতে চলেছে?
এই উত্থানের পেছনে মূলত চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এই) প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই কোম্পানিটি যথেষ্ট মার্কিন চিপের সরবরাহ না থাকলেও নিজস্ব কায়দায় মার্কিন টেক হাব সিলিকন ভ্যালির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। ব্যাংক অব আমেরিকার বিশ্লেষকদের মতে, এটি অনেকটা ২০১৪ সালে নিউইয়র্কে আলিবাবার আইপিও—এর মতো। কারণ, সে সময় আলিবাবার আবির্ভাব ইন্টারনেটভিত্তিক ভোক্তা সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উদ্ভাবনের জোয়ার সৃষ্টি করেছিল। তাদের ধারণা, ডিপসিকও একই ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
অনেক চীনা প্রতিষ্ঠানই এরই মধ্যে ডিপসিকের মডেল গ্রহণ করছে। ইন্টারনেট সেবাদাতা ও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেনজ্যান্ট তাদের মেসেজিং, পেমেন্ট, শপিং এবং বিনোদনের সেবা প্রদান অ্যাপ ওয়েইসিনে এই মডেলটি পরীক্ষা করছে। তারা একটি এআই ‘সুপার অ্যাপ’ তৈরির আশা করছে। এর বাইরে, যারা এআই—এর জন্য ক্লাউড সেবা প্রদান করে থাকে তাদের চাহিদাও বাড়াতে পারে। যেমন আলিবাবা, হুয়াওয়ে এবং টেনজ্যান্ট। এসব কোম্পানিকে অবশ্যই সার্ভার ফার্ম নির্মাণে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। যার ফলে এআই ডেটা সেন্টার উপাদানের সরবরাহকারীরা উপকৃত হবে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের সঙ্গে কাজ করছে আলিবাবা। যাতে চীনে বিক্রি হওয়া আইফোনগুলোতে এআই সক্ষমতা যুক্ত করা যায়।
তবে এত কিছুর পরও সামগ্রিক মনোভাব এখনো দুর্বল। চীনের বিভিন্ন করপোরেশনের ৩ শতাধিক শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যে পরিচালিত বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স নামক জরিপ থেকে দেখা গেছে, এই খাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা জানুয়ারি মাসে সামান্যই বেড়েছে। সূচকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—যেমন করপোরেট অর্থায়ন এবং মজুত এখনো কমছে। উপরন্তু, সেই একই মাসে বেইজিংয়ের চেং কং গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেসের সূচক প্রস্তুতকারীরা জানান ‘কিছুটা উল্লেখযোগ্য মাত্রার অস্থিরতা চীনের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রকে অব্যাহতভাবে বাধা দিচ্ছে।’
সি চিন পিং কেন এই সিম্পোজিয়াম আয়োজন করেছিলেন, তা ব্যাখ্যা করতে উল্লিখিত বিষয়টিকে আমলে নেওয়া যেতে পারে। বৈঠকের প্রতিবেদনে বলা হয়, সি চীনের অর্থনীতির জন্য বেসরকারি খাতের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এবং এর কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। সির শাসনামলে কীভাবে টেক উদ্যোক্তাদের পরিচালনা করা যায়, সেই সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায় এবং সমাজে তাদের প্রভাব সীমিত রাখা যায়—সেই বিষয়টি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তারা কখনই এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে, বৃহত্তম কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাধান্য লাভ করেছিল। এ সময়টাকে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে টেক উদ্যোক্তারাই চালকের আসনে ছিলেন, আর কর্মকর্তারা ছিলেন যাত্রীর আসনে।
কিন্তু ২০২০ সালে চীনা কর্তৃপক্ষ দেশটির টেক দুনিয়ায় যে দমনপীড়ন চালায়, তা পরিস্থিতি দ্রুতই পাল্টে দেয়। এর ফলে চীনের শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ২ লাখ কোটি ডলার নাই হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি টেক উদ্যোক্তাদের কিছু নির্দেশনা দিতে চেয়েছে, তবে তাদের উদ্ভাবন সক্ষমতা যাতে বিনষ্ট না হয় সেটাও নজরে রেখেছে। কিন্তু এর ফলে বেসরকারি এবং সরকারি উদ্যোগের মধ্যকার সীমানা অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ে, চিপ নকশাকারী প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিকন, এআই কোম্পানি আইফ্লাইটেকের মতো অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। তবে এর ফলে প্রায়ই একটি অস্বচ্ছ হাইব্রিড ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গবেষকেরা এই ব্যবস্থাকে ‘দলীয়-রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ’ নামে অভিহিত করেছেন।
প্রাথমিকভাবে চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টেক উদ্যোক্তাদের এই প্রেমময় সম্পর্ক চীনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থা পুনরুদ্ধারে কিছুটা সাহায্য করতে পারে। কিন্তু দেশটির বেসরকারি খাতের এলিটদের চাওয়া আরও বেশি কিছু। কারণ, তাদের কোম্পানিগুলি বড় সমস্যায় পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হংকংভিত্তিক এক ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের চাওয়া, নিয়ন্ত্রকেরা কবে তাদের আইপিওগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করবেন?
চীনা কোনো কোম্পানি যদি বিদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায়, তবে তার জন্য রাষ্ট্রীয় অনুমোদন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। ফাস্ট ফ্যাশন কোম্পানি শেইন ‘জাতীয় নিরাপত্তার কারণে’ চীনা নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিক অনুমোদন নিতে বাধ্য হয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থা কিছু কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিষয়টি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।
এসবের বাইরেও চীনা টেক দুনিয়ায় অন্যান্য যে সমস্যা আছে তা কমারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনেক প্রযুক্তি কোম্পানির মতো, আর্থিক ব্যবস্থা এখন একটি পাবলিক-প্রাইভেট হাইব্রিড ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। চীনের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং প্রাইভেট ইকুইটি শিল্প রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রভাবিত হয়েছে। অনেক স্টার্টআপের জন্য রাষ্ট্রীয় পুঁজিই প্রধান অর্থায়নের উৎস। অথচ, এগুলো বেসরকারি অর্থায়নে গড়ে ওঠার কথা। ব্যবসায়ীরা একসময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিউনিস্ট পার্টির শাখাগুলোর প্রভাবকে উপহাস করতেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এই শাখাগুলো অনেক বেশি ক্ষমতা অর্জন করেছে। এই প্রবণতা পরিবর্তনেরও কোনো লক্ষণ নেই।
কিছু ক্ষেত্রে, জ্যাক মা’র প্রত্যাবর্তনকে বেসরকারি খাতের জন্য একটি বড় জয় বা এমনকি এর প্রতি একটি ছাড় হিসেবে চিত্রিত করা যেতে পারে। তবে এই বিষয়টিকে সি’র জন্য এক বিজয় হিসেবে দেখা যেতে পারে। গত পাঁচ বছরে চীনের উদ্যোক্তারা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি অনেক বেশি অনুগত হয়ে উঠেছেন। তাদের সি’র নিয়মই মেনে চলতে হবে, নইলে চরম পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। এই সিম্পোজিয়াম মূলত এটিই নিশ্চিত করে যে, চীনের একসময়কার শক্তিশালী উদ্যোক্তারা এখন সি’র নিয়ম অনুযায়ী চলতে বাধ্য।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসে উচ্চপদস্থ নেতাদের বহিষ্কারের পর আবার ফিরিয়ে নেওয়ার বহু উদাহরণ আছে। দেং জিয়াওপিংকে তিনবার বহিষ্কার করা হয়। এরপর তাঁর হাত ধরেই ১৯৭০—এর দশকের শেষ দিকে চীন মাওবাদ থেকে বের আসে। এমনকি, কিছু কর্মকর্তাকে মৃত্যুর বহু বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
চীনা টেক জায়ান্ট আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা ২০২০ সালে এসে ঠিক একই ধরনের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের শিকার হন। তাঁর ফিন-টেক কোম্পানি অ্যান্ট গ্রুপের প্রাথমিক শেয়ার ইস্যু (আইপিও) বাতিল করা হয়। এরপরই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় এবং নজিরবিহীন জরিমানা করা হয়। এই ঘটনার পর জ্যাক মা একপ্রকার লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান।
তবে সেই দিনের অবসান হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তাঁকে আবারও স্বাগত জানানো হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জ্যাক মা-সহ বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা বেইজিংয়ে এক সিম্পোজিয়ামে চীনের সর্বোচ্চ নেতা সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অনেকেই এটিকে জ্যাক মার নির্বাসন থেকে ফিরে আসার সংকেত হিসেবে দেখছেন। তাঁরা এটাও মনে করছেন যে, দীর্ঘদিনের দমন-পীড়নের পর বেসরকারি প্রযুক্তি খাত চীনের ক্ষমতাসীন মহলের সুনজরে ফিরেছে।
জ্যাক মার এই প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে আলিবাবা তো বটেই চীনের ইতিহাসের সবচেয়ে লাভজনক প্রত্যাবর্তনে রূপ নিতে পারে। কারণ, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আলিবাবার শেয়ারমূল্য এক সম্মেলন সংক্রান্ত গুজবের কারণে এক লাফে ৬ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যায়। এর ফলে কোম্পানিটির বাজারমূল্য প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার বেড়ে যায়। টেনজ্যান্ট ও শাওমির মতো অন্যান্য চীনা টেক জায়ান্টগুলোর শেয়ারমূল্যও ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যদিও এর আগের কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। হংকংয়ের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত শীর্ষ ৩০টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সূচক হ্যাং সেং টেক—এর শেয়ারমূল্য গত এক মাসে ২৩ শতাংশ বেড়েছে। আর আলিবাবার শেয়ারমূল্য বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। তাহলে কি অবশেষে চীনে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার হতে চলেছে?
এই উত্থানের পেছনে মূলত চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এই) প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই কোম্পানিটি যথেষ্ট মার্কিন চিপের সরবরাহ না থাকলেও নিজস্ব কায়দায় মার্কিন টেক হাব সিলিকন ভ্যালির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। ব্যাংক অব আমেরিকার বিশ্লেষকদের মতে, এটি অনেকটা ২০১৪ সালে নিউইয়র্কে আলিবাবার আইপিও—এর মতো। কারণ, সে সময় আলিবাবার আবির্ভাব ইন্টারনেটভিত্তিক ভোক্তা সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উদ্ভাবনের জোয়ার সৃষ্টি করেছিল। তাদের ধারণা, ডিপসিকও একই ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
অনেক চীনা প্রতিষ্ঠানই এরই মধ্যে ডিপসিকের মডেল গ্রহণ করছে। ইন্টারনেট সেবাদাতা ও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেনজ্যান্ট তাদের মেসেজিং, পেমেন্ট, শপিং এবং বিনোদনের সেবা প্রদান অ্যাপ ওয়েইসিনে এই মডেলটি পরীক্ষা করছে। তারা একটি এআই ‘সুপার অ্যাপ’ তৈরির আশা করছে। এর বাইরে, যারা এআই—এর জন্য ক্লাউড সেবা প্রদান করে থাকে তাদের চাহিদাও বাড়াতে পারে। যেমন আলিবাবা, হুয়াওয়ে এবং টেনজ্যান্ট। এসব কোম্পানিকে অবশ্যই সার্ভার ফার্ম নির্মাণে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। যার ফলে এআই ডেটা সেন্টার উপাদানের সরবরাহকারীরা উপকৃত হবে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের সঙ্গে কাজ করছে আলিবাবা। যাতে চীনে বিক্রি হওয়া আইফোনগুলোতে এআই সক্ষমতা যুক্ত করা যায়।
তবে এত কিছুর পরও সামগ্রিক মনোভাব এখনো দুর্বল। চীনের বিভিন্ন করপোরেশনের ৩ শতাধিক শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যে পরিচালিত বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স নামক জরিপ থেকে দেখা গেছে, এই খাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা জানুয়ারি মাসে সামান্যই বেড়েছে। সূচকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—যেমন করপোরেট অর্থায়ন এবং মজুত এখনো কমছে। উপরন্তু, সেই একই মাসে বেইজিংয়ের চেং কং গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেসের সূচক প্রস্তুতকারীরা জানান ‘কিছুটা উল্লেখযোগ্য মাত্রার অস্থিরতা চীনের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রকে অব্যাহতভাবে বাধা দিচ্ছে।’
সি চিন পিং কেন এই সিম্পোজিয়াম আয়োজন করেছিলেন, তা ব্যাখ্যা করতে উল্লিখিত বিষয়টিকে আমলে নেওয়া যেতে পারে। বৈঠকের প্রতিবেদনে বলা হয়, সি চীনের অর্থনীতির জন্য বেসরকারি খাতের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এবং এর কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। সির শাসনামলে কীভাবে টেক উদ্যোক্তাদের পরিচালনা করা যায়, সেই সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায় এবং সমাজে তাদের প্রভাব সীমিত রাখা যায়—সেই বিষয়টি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তারা কখনই এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে, বৃহত্তম কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাধান্য লাভ করেছিল। এ সময়টাকে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে টেক উদ্যোক্তারাই চালকের আসনে ছিলেন, আর কর্মকর্তারা ছিলেন যাত্রীর আসনে।
কিন্তু ২০২০ সালে চীনা কর্তৃপক্ষ দেশটির টেক দুনিয়ায় যে দমনপীড়ন চালায়, তা পরিস্থিতি দ্রুতই পাল্টে দেয়। এর ফলে চীনের শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ২ লাখ কোটি ডলার নাই হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি টেক উদ্যোক্তাদের কিছু নির্দেশনা দিতে চেয়েছে, তবে তাদের উদ্ভাবন সক্ষমতা যাতে বিনষ্ট না হয় সেটাও নজরে রেখেছে। কিন্তু এর ফলে বেসরকারি এবং সরকারি উদ্যোগের মধ্যকার সীমানা অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ে, চিপ নকশাকারী প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিকন, এআই কোম্পানি আইফ্লাইটেকের মতো অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। তবে এর ফলে প্রায়ই একটি অস্বচ্ছ হাইব্রিড ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গবেষকেরা এই ব্যবস্থাকে ‘দলীয়-রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ’ নামে অভিহিত করেছেন।
প্রাথমিকভাবে চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টেক উদ্যোক্তাদের এই প্রেমময় সম্পর্ক চীনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থা পুনরুদ্ধারে কিছুটা সাহায্য করতে পারে। কিন্তু দেশটির বেসরকারি খাতের এলিটদের চাওয়া আরও বেশি কিছু। কারণ, তাদের কোম্পানিগুলি বড় সমস্যায় পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হংকংভিত্তিক এক ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের চাওয়া, নিয়ন্ত্রকেরা কবে তাদের আইপিওগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করবেন?
চীনা কোনো কোম্পানি যদি বিদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায়, তবে তার জন্য রাষ্ট্রীয় অনুমোদন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। ফাস্ট ফ্যাশন কোম্পানি শেইন ‘জাতীয় নিরাপত্তার কারণে’ চীনা নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিক অনুমোদন নিতে বাধ্য হয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থা কিছু কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিষয়টি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।
এসবের বাইরেও চীনা টেক দুনিয়ায় অন্যান্য যে সমস্যা আছে তা কমারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনেক প্রযুক্তি কোম্পানির মতো, আর্থিক ব্যবস্থা এখন একটি পাবলিক-প্রাইভেট হাইব্রিড ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। চীনের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং প্রাইভেট ইকুইটি শিল্প রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রভাবিত হয়েছে। অনেক স্টার্টআপের জন্য রাষ্ট্রীয় পুঁজিই প্রধান অর্থায়নের উৎস। অথচ, এগুলো বেসরকারি অর্থায়নে গড়ে ওঠার কথা। ব্যবসায়ীরা একসময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিউনিস্ট পার্টির শাখাগুলোর প্রভাবকে উপহাস করতেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এই শাখাগুলো অনেক বেশি ক্ষমতা অর্জন করেছে। এই প্রবণতা পরিবর্তনেরও কোনো লক্ষণ নেই।
কিছু ক্ষেত্রে, জ্যাক মা’র প্রত্যাবর্তনকে বেসরকারি খাতের জন্য একটি বড় জয় বা এমনকি এর প্রতি একটি ছাড় হিসেবে চিত্রিত করা যেতে পারে। তবে এই বিষয়টিকে সি’র জন্য এক বিজয় হিসেবে দেখা যেতে পারে। গত পাঁচ বছরে চীনের উদ্যোক্তারা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি অনেক বেশি অনুগত হয়ে উঠেছেন। তাদের সি’র নিয়মই মেনে চলতে হবে, নইলে চরম পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। এই সিম্পোজিয়াম মূলত এটিই নিশ্চিত করে যে, চীনের একসময়কার শক্তিশালী উদ্যোক্তারা এখন সি’র নিয়ম অনুযায়ী চলতে বাধ্য।
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ভারতের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির পরিকল্পনায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন টেক মোগল ইলন মাস্ক। রাজধানী নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ে শোরুম স্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণ করেছে টেসলা। পাশাপাশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াও জোরদার করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মাস্কের
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি এবং উচ্চ বৈদেশিক ঋণের চাপে রয়েছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি এসব দেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার সক্ষমতাকে সীমিত করছে।
৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি বেইজিং সফর শুরু করেছেন। এই দলে রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজের সদস্য, শিক্ষাবিদ এবং সাংবাদিকেরা রয়েছেন। এই দলটি গতকাল সোমবার ১০ দিনের সফরে চীন গেছে। প্রতিনিধি দলের এক নেতা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, তাঁরা চীন সরকার ও ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদ
৩ দিন আগেবিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি নতুন প্রশাসন ওয়াশিংটনে ক্ষমতায় বসেছে। এই প্রশাসন সরকারি আমলাতন্ত্রকে আরও কার্যকর করতে কর্পোরেট দক্ষতা ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তারা লাখ লাখ সরকারি কর্মচারীকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে এবং বাজেটে ভারসাম্য
৪ দিন আগে