মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গাজায় ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছেন। সেই বৈঠকের সময়েও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তীব্র মাত্রায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতাল-অ্যাম্বুলেন্সও। এতে লাখো বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গাজায় হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’ যথেষ্ট নয়, যেখানে জাতিসংঘ সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ (ডন)-এর ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের ডিরেক্টর অব অ্যাডভোকেসি অ্যাডাম শাপিরো বলেছেন, ‘এটি (ক্ষণিকের জন্য মানবিক যুদ্ধবিরতি) স্পষ্টতই অপর্যাপ্ত এবং সময়ের সঙ্গে চলনসই নয়। এটা একটা অযৌক্তিক পন্থা। আমি জানি না, কে মার্কিন প্রশাসনকে আইনগত পরামর্শ দিচ্ছে, তাঁরা যদি মনে করেন, এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ক্ষতিপূরণের একটি উপায়, তবে তাঁরা খুবই খারাপভাবে ভুল করছেন। এটা কোনোভাবেই বৈধ নয়।’
সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহ্বান ইসরায়েলের জবাবদিহি বা রাজনৈতিক মূল্য ছাড়াই একটি ‘উন্মুক্ত’ সংঘাতের পথ প্রশস্ত করে বলেও জানিয়েছেন শাপিরো।
গতকাল শুক্রবার ইসরায়েল সফরকালে ব্লিঙ্কেন বলেন, সাময়িক যুদ্ধবিরতি গাজায় আরও সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেবে, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেবে এবং হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্ত করতে কূটনৈতিক আলাপ চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
ব্লিঙ্কেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি প্রচেষ্টা মানবিক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে অর্জন সম্ভব হবে। বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি সহজতর হবে।
হোয়াইট হাউস আগে বলেছিল, যেকোনো যুদ্ধবিরতি ‘স্থানীয়করণ’ করা হবে, এটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতির চেয়ে ছোট লক্ষ্য। তবে মার্কিনদের এই অবস্থানে একটি পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। দুই সপ্তাহ আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে ওয়াশিংটন।
পর্যাপ্ত নয়
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অ্যাডলাহ জাস্টিস প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক সান্দ্রা তামারি বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এতে মার্কিন জনগোষ্ঠীর চাপ পড়ছে বাইডেন প্রশাসনের ওপর। এর ফলেই মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
তামারি আল জাজিরাকে বলেন, ‘গাজায় গণহত্যা এবং হত্যাকাণ্ডে আমেরিকান জনসাধারণের ক্ষোভের মুখে পড়েছে বাইডেন প্রশাসন। তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে নৈতিক ভিত্তি বা ন্যায্যতা খুঁজে পাচ্ছে না।’
গাজা সংঘাতে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ব্লিঙ্কেন আবার ইসরায়েল সফর করলেন। এই সপ্তাহের শুরুর দিকে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আরব-আমেরিকানদের মধ্যে ১৭ শতাংশ মানুষ বাইডেনকে সমর্থন করে, যা কিছুদিন আগের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম।
খোদ মার্কিন প্রশাসনের মধ্যেই ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা জোশ পল বলেছেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইসরায়েলকে ক্রমাগত প্রাণঘাতী সহায়তার’ জন্য পদত্যাগ করেছেন।
মানবিক যুদ্ধবিরতি ফিলিস্তিনের জন্য কাজ করা মানবাধিকারকর্মীদের সন্তুষ্ট করবে না জানিয়ে তামারি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা খাবারের বিনিময়ে বোমাবর্ষণের বিরতি চায় না, যেখানে খাবার দেওয়ার পর আবার বোমা হামলা করা হয়। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
কিন্তু সেই মানবতার খাতিরে ব্লিঙ্কেনের বিনয়ী সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহ্বানও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি যে আমরা পূর্ণ শক্তিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। জিম্মিদের মুক্তি ছাড়া ইসরায়েল কোনো অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাবে না।’
শাপিরো বলেছেন, এই প্রত্যাখ্যান বা তিরস্কার সত্যিকারের নয়। এটা ইসরায়েল ও মার্কিনরা ভালোভাবেই জানে। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে এমনটি চলে আসছে। তেল আবিব জানে, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ইসরায়েলকে বাস্তব বা সত্যিকারের চাপে ফেলবে না। উদাহরণস্বরূপ, অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনের কথাই ধরুন। মার্কিনদের ‘বিরোধিতা’ সত্ত্বেও সেখানে ইসরায়েল বিনা বাধায় অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করেছে।
ইসরায়েলিরা এখন আমেরিকানদের মুখের ওপরেই বলছে, ‘আপনার কথা আমরা শুনছি না; কারণ, বিপদে পড়লে আপনি আমাকে দেখেন না।’
যদিও ইসরায়েল বার্ষিক ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার মার্কিন সামরিক সহায়তা পায়। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর বাইডেন ইসরায়েলের জন্য অতিরিক্ত ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিলের জন্য অনুরোধ করেছে। এরই মধ্যে সেই প্রস্তাব পাসও হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, পেন্টাগন এই সপ্তাহের শুরুতে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ইসরায়েল কীভাবে ব্যবহার, সেসবেরও কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। একইভাবে হোয়াইট হাউস বলেছে, তারা ইসরায়েলের জন্য কোনো ‘লাল রেখা আঁকছে না’।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ শুক্রবার জানিয়েছে, জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য মার্কিন নজরদারি ড্রোনগুলো ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর সঙ্গে গাজার ওপর দিয়ে উড়ছে, যা ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে গোষ্ঠীটি ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে জিম্মি করে রেখেছে। এরপর ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটিকে নির্মূল করার নামে নির্বিচারে গাজায় বোমাবর্ষণ করেছে।
হাতে তোমার রক্ত
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী ও প্রবক্তারা বলছেন, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় বাইডেন প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের ওপর তাঁদের আস্থা নেই।
গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েলের বোমা হামলায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কারণ, মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে ‘যুদ্ধের নিয়ম’ মেনে চলতে কথিত ‘আহ্বান’ বাড়িয়েছে।
শুক্রবার ব্লিঙ্কেন বলেছেন, গাজায় নিহত ও আহত ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবিতে ‘নিজের সন্তানদের’ মুখচ্ছবি দেখতে পান। একই সময় তিনি ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের কথা জোর দিয়ে বলেন।
কিন্তু আদালাহ জাস্টিস প্রজেক্টের তামারি বলেছেন, ফিলিস্তিনি এবং ফিলিস্তিনি আমেরিকানরা ‘এই মিষ্টি কথায়’ গলবে না। সমস্ত ফিলিস্তিনি ব্লিঙ্কেনের দিকে তাকিয়ে আছেন, বাইডেনের দিকে তাকিয়ে আছেন, এই পুরো প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছেন এবং বলছেন, ‘তোমার হাতে আমাদের রক্ত লেগে আছে।’
ফিলিস্তিনি থিংকট্যাংক আল-শাবাকার মার্কিন পলিসি ফেলো তারিক কেনি-শাওয়াও বাইডেন প্রশাসনের নরম স্বর প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং মানবিক বিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
কেনি-শাওয়া বলেন, ‘যে পক্ষ ইসরায়েলকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন করে এবং গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যেতে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে, সেই পক্ষ (যুক্তরাষ্ট্র) ইসরায়েলের এই গণহত্যার সক্রিয় সহযোগী। বাইডেন প্রশাসনের মুখে মানবতার কথা হাস্যকর। ওয়াশিংটন ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে চাইলে সহজেই আর্থিক ও সামরিক সহায়তার পরিমাণ কমাতে পারত।’
কেনি-শাওয়া ইমেইলে আল জাজিরাকে বলেন, ‘আপাতত, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দাবি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। এরপরও ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের আরও যন্ত্রণা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, তারা এই সুযোগে যতটা সম্ভব ফিলিস্তিনিকে হত্যা করার চেষ্টা করছে, যেখানে তারা আত্মবিশ্বাসী যে তারা যা-ই করুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পক্ষেই থাকবে। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলের ওপর যে কথিত চাপ দিচ্ছে, তা প্রমাণ করেছে যে চিরদিন শর্তহীন সমর্থন চলতে পারে না।’
আল জাজিরা অবলম্বনে আবদুল বাছেদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গাজায় ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছেন। সেই বৈঠকের সময়েও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তীব্র মাত্রায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতাল-অ্যাম্বুলেন্সও। এতে লাখো বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গাজায় হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’ যথেষ্ট নয়, যেখানে জাতিসংঘ সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ (ডন)-এর ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের ডিরেক্টর অব অ্যাডভোকেসি অ্যাডাম শাপিরো বলেছেন, ‘এটি (ক্ষণিকের জন্য মানবিক যুদ্ধবিরতি) স্পষ্টতই অপর্যাপ্ত এবং সময়ের সঙ্গে চলনসই নয়। এটা একটা অযৌক্তিক পন্থা। আমি জানি না, কে মার্কিন প্রশাসনকে আইনগত পরামর্শ দিচ্ছে, তাঁরা যদি মনে করেন, এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ক্ষতিপূরণের একটি উপায়, তবে তাঁরা খুবই খারাপভাবে ভুল করছেন। এটা কোনোভাবেই বৈধ নয়।’
সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহ্বান ইসরায়েলের জবাবদিহি বা রাজনৈতিক মূল্য ছাড়াই একটি ‘উন্মুক্ত’ সংঘাতের পথ প্রশস্ত করে বলেও জানিয়েছেন শাপিরো।
গতকাল শুক্রবার ইসরায়েল সফরকালে ব্লিঙ্কেন বলেন, সাময়িক যুদ্ধবিরতি গাজায় আরও সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেবে, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেবে এবং হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্ত করতে কূটনৈতিক আলাপ চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
ব্লিঙ্কেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি প্রচেষ্টা মানবিক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে অর্জন সম্ভব হবে। বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি সহজতর হবে।
হোয়াইট হাউস আগে বলেছিল, যেকোনো যুদ্ধবিরতি ‘স্থানীয়করণ’ করা হবে, এটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতির চেয়ে ছোট লক্ষ্য। তবে মার্কিনদের এই অবস্থানে একটি পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। দুই সপ্তাহ আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে ওয়াশিংটন।
পর্যাপ্ত নয়
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অ্যাডলাহ জাস্টিস প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক সান্দ্রা তামারি বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এতে মার্কিন জনগোষ্ঠীর চাপ পড়ছে বাইডেন প্রশাসনের ওপর। এর ফলেই মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
তামারি আল জাজিরাকে বলেন, ‘গাজায় গণহত্যা এবং হত্যাকাণ্ডে আমেরিকান জনসাধারণের ক্ষোভের মুখে পড়েছে বাইডেন প্রশাসন। তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে নৈতিক ভিত্তি বা ন্যায্যতা খুঁজে পাচ্ছে না।’
গাজা সংঘাতে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ব্লিঙ্কেন আবার ইসরায়েল সফর করলেন। এই সপ্তাহের শুরুর দিকে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আরব-আমেরিকানদের মধ্যে ১৭ শতাংশ মানুষ বাইডেনকে সমর্থন করে, যা কিছুদিন আগের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম।
খোদ মার্কিন প্রশাসনের মধ্যেই ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা জোশ পল বলেছেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইসরায়েলকে ক্রমাগত প্রাণঘাতী সহায়তার’ জন্য পদত্যাগ করেছেন।
মানবিক যুদ্ধবিরতি ফিলিস্তিনের জন্য কাজ করা মানবাধিকারকর্মীদের সন্তুষ্ট করবে না জানিয়ে তামারি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা খাবারের বিনিময়ে বোমাবর্ষণের বিরতি চায় না, যেখানে খাবার দেওয়ার পর আবার বোমা হামলা করা হয়। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
কিন্তু সেই মানবতার খাতিরে ব্লিঙ্কেনের বিনয়ী সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহ্বানও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি যে আমরা পূর্ণ শক্তিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। জিম্মিদের মুক্তি ছাড়া ইসরায়েল কোনো অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাবে না।’
শাপিরো বলেছেন, এই প্রত্যাখ্যান বা তিরস্কার সত্যিকারের নয়। এটা ইসরায়েল ও মার্কিনরা ভালোভাবেই জানে। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে এমনটি চলে আসছে। তেল আবিব জানে, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ইসরায়েলকে বাস্তব বা সত্যিকারের চাপে ফেলবে না। উদাহরণস্বরূপ, অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনের কথাই ধরুন। মার্কিনদের ‘বিরোধিতা’ সত্ত্বেও সেখানে ইসরায়েল বিনা বাধায় অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করেছে।
ইসরায়েলিরা এখন আমেরিকানদের মুখের ওপরেই বলছে, ‘আপনার কথা আমরা শুনছি না; কারণ, বিপদে পড়লে আপনি আমাকে দেখেন না।’
যদিও ইসরায়েল বার্ষিক ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার মার্কিন সামরিক সহায়তা পায়। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর বাইডেন ইসরায়েলের জন্য অতিরিক্ত ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিলের জন্য অনুরোধ করেছে। এরই মধ্যে সেই প্রস্তাব পাসও হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, পেন্টাগন এই সপ্তাহের শুরুতে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ইসরায়েল কীভাবে ব্যবহার, সেসবেরও কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। একইভাবে হোয়াইট হাউস বলেছে, তারা ইসরায়েলের জন্য কোনো ‘লাল রেখা আঁকছে না’।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ শুক্রবার জানিয়েছে, জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য মার্কিন নজরদারি ড্রোনগুলো ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর সঙ্গে গাজার ওপর দিয়ে উড়ছে, যা ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে গোষ্ঠীটি ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে জিম্মি করে রেখেছে। এরপর ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটিকে নির্মূল করার নামে নির্বিচারে গাজায় বোমাবর্ষণ করেছে।
হাতে তোমার রক্ত
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী ও প্রবক্তারা বলছেন, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় বাইডেন প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের ওপর তাঁদের আস্থা নেই।
গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েলের বোমা হামলায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কারণ, মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে ‘যুদ্ধের নিয়ম’ মেনে চলতে কথিত ‘আহ্বান’ বাড়িয়েছে।
শুক্রবার ব্লিঙ্কেন বলেছেন, গাজায় নিহত ও আহত ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবিতে ‘নিজের সন্তানদের’ মুখচ্ছবি দেখতে পান। একই সময় তিনি ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের কথা জোর দিয়ে বলেন।
কিন্তু আদালাহ জাস্টিস প্রজেক্টের তামারি বলেছেন, ফিলিস্তিনি এবং ফিলিস্তিনি আমেরিকানরা ‘এই মিষ্টি কথায়’ গলবে না। সমস্ত ফিলিস্তিনি ব্লিঙ্কেনের দিকে তাকিয়ে আছেন, বাইডেনের দিকে তাকিয়ে আছেন, এই পুরো প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছেন এবং বলছেন, ‘তোমার হাতে আমাদের রক্ত লেগে আছে।’
ফিলিস্তিনি থিংকট্যাংক আল-শাবাকার মার্কিন পলিসি ফেলো তারিক কেনি-শাওয়াও বাইডেন প্রশাসনের নরম স্বর প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং মানবিক বিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
কেনি-শাওয়া বলেন, ‘যে পক্ষ ইসরায়েলকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন করে এবং গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যেতে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে, সেই পক্ষ (যুক্তরাষ্ট্র) ইসরায়েলের এই গণহত্যার সক্রিয় সহযোগী। বাইডেন প্রশাসনের মুখে মানবতার কথা হাস্যকর। ওয়াশিংটন ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে চাইলে সহজেই আর্থিক ও সামরিক সহায়তার পরিমাণ কমাতে পারত।’
কেনি-শাওয়া ইমেইলে আল জাজিরাকে বলেন, ‘আপাতত, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দাবি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। এরপরও ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের আরও যন্ত্রণা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, তারা এই সুযোগে যতটা সম্ভব ফিলিস্তিনিকে হত্যা করার চেষ্টা করছে, যেখানে তারা আত্মবিশ্বাসী যে তারা যা-ই করুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পক্ষেই থাকবে। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলের ওপর যে কথিত চাপ দিচ্ছে, তা প্রমাণ করেছে যে চিরদিন শর্তহীন সমর্থন চলতে পারে না।’
আল জাজিরা অবলম্বনে আবদুল বাছেদ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন, সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ‘পেনাল্টি’ আরোপ করেছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই শুল্কের খামখেয়ালিপনার মুখে ভারত ভয় পাবে না, তবে কৌশল বদলাতে পারে—বলে মনে করেন শশী থারুর। কংগ্রেসের এই এমপি...
২ দিন আগেরাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্কের টানাপোড়েন সরাসরি আগের স্নায়ুযুদ্ধের মতো নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আদর্শিক দ্বন্দ্ব ছিল—একদিকে মার্কিন পুঁজিবাদ, অন্যদিকে সোভিয়েত সমাজতন্ত্র। কিন্তু বর্তমান দ্বন্দ্বের পেছনে মূলত কৌশলগত আধিপত্য, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা কাজ করছে।
২ দিন আগেভারতের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘ সময় আলোচনার পর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কম। কারণ, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দুই দেশের মোট রপ্তানির ২ দশমিক ৫ শতাংশের কম। তা সত্ত্বেও দুই সরকার একে ‘ঐতিহাসিক’ বলে প্রচার করছ
২ দিন আগেচলতি বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি কিছুটা কমে এলেও তা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু গত শুক্রবার প্রকাশিত জুলাই মাসের পরিসংখ্যানে চাকরির হার ব্যাপক কম দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ট্রাম্প। ওই পরিসংখ্যানকে ‘জাল’ দাবি করে এর জন্য দায়িত্বশীল সরকারি সংস্থার প্রধানকে
২ দিন আগে