আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর আর্থিক শক্তি অনেকটাই তাদের তেলের ওপর নির্ভরশীল। আর রাশিয়ার এই তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। বর্তমানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে। ওয়াশিংটনের যুক্তি, রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ হলে মস্কোর আর্থিক সামর্থ্য কমবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, এবার তিনি চীনকেও একই পথে আনতে চান।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। আজ বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল বুধবার দুই নেতার মধ্যে কোনো টেলিফোন আলাপ হয়নি। ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এর আগে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, খুব শিগগির ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে।
প্রসঙ্গত, ভারত ও চীন—এই দুই দেশ রাশিয়ার সমুদ্রপথে তেল রপ্তানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
ভারতের ওপর বাণিজ্য চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্প চলমান যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য আলোচনাকে ব্যবহার করছেন রাশিয়ার তেল ইস্যুতে দিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য। গত আগস্টে তিনি ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানিকে অজুহাত দেখিয়ে দিল্লির ওপর অতিরিক্ত বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেন। তবে মোদি সরকার এখনো তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি।
ভারত বরাবরই বলে এসেছে, রাশিয়ার তেল কেনা ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক। তাই তেল আমদানি বন্ধ করা ভারতের অর্থনীতি ও জনগণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
যদি ভারত সত্যিই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে, তবে এটি মস্কোর জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। কারণ, রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনায় তেল রপ্তানি অন্যতম প্রধান অর্থের উৎস।
তেল ইস্যুতেই কেন দ্বন্দ্ব?
ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চাপ। আগস্টে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসান, যা মোট শুল্কহারকে ৫০ শতাংশে পৌঁছে দেয়। তবে একইভাবে চীনের ওপর তিনি কোনো এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি—যদিও চীন এখন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা।
চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটি গত বছর রাশিয়া থেকে রেকর্ড ১০৯ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা তাদের মোট জ্বালানি আমদানির প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত আমদানি করেছে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন টন।
এ কারণে নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছে, ওয়াশিংটন একপাক্ষিকভাবে ভারতকে নিশানা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই অবস্থান আংশিকভাবে এসেছে ভারতের বাণিজ্য আলোচনায় ‘অবাধ্যতা’ থেকে।
হংকংভিত্তিক গবেষক ও অর্থনীতিবিদ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া হেরেরো আল-জাজিরাকে বলেন, ভারতের কৃষিপণ্যে উচ্চ শুল্ক ও ওষুধে ভর্তুকি দেওয়ার মতো সুরক্ষামূলক নীতিই যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য সম্পর্কের মূল বাধা। যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত এসব খাতে বিনিয়োগ ও ভর্তুকি কমিয়ে অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করুক।
চীনের প্রতি ভিন্ন মনোভাবের কারণ
চীনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প তুলনামূলক নরম অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, তিনি চীনের সঙ্গে বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির প্রত্যাশায় আপাতত অপেক্ষা করছেন। সেই চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ‘রেয়ার আর্থ মেটাল’ বা দুর্লভ খনিজ পদার্থের বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে চায়।
এই দুর্লভ খনিজগুলো গাড়ির যন্ত্রাংশ, সামরিক প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিকস উৎপাদনে অপরিহার্য। বর্তমানে চীন ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশ্বে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে এবং এর মধ্যে ১২টি রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
চীনের নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কিছু নির্দিষ্ট খনিজ কেনার আগে বেইজিংয়ের অনুমতি নিতে হচ্ছে। ট্রাম্প এর প্রতিক্রিয়ায় ১ নভেম্বর থেকে চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, চলতি মাসের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে।
রাশিয়ান তেলের ওপর ভারতের নির্ভরতা
রাশিয়া বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী দেশ। শিপিং বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের (Kpler) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত প্রতিদিন গড়ে ৪৫ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যার মধ্যে ১৬ লাখ ব্যারেল বা ৩৪ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে।
২০২২ সালের জানুয়ারির তুলনায় এটি ২ হাজার ২৫০ শতাংশ বেশি। তখন প্রতিদিন ভারত রাশিয়া থেকে মাত্র ৬৮ হাজার ব্যারেল তেল কিনত।
গবেষণা সংস্থা সিআরইএর তথ্য অনুযায়ী, চীন রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ৪৭ শতাংশ কিনেছে আর ভারত ৩৮ শতাংশ।
ভারত কেন এত রাশিয়ান তেল কিনছে
২০২২ সালের ডিসেম্বরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর ৬০ ডলারের মূল্যসীমা নির্ধারণ করে। এর ফলে রাশিয়া বাধ্য হয় প্রতিযোগিতামূলক দামে তেল বিক্রি করতে, যা ভারতের জন্য সুবিধাজনক হয়।
সস্তায় তেল কেনার কারণে ভারতের চলতি হিসাবের ঘাটতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় ৬৫ শতাংশ কমে যায়। এর ফলে দেশটির বৃহৎ তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (আরআইএল) সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়।
২০২১ সালে রিলায়েন্সের জামনগর রিফাইনারিতে আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের মধ্যে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ৩ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে বেড়ে প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।
সিআরইএর হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত জামনগর রিফাইনারি থেকে বিশ্বব্যাপী ৮৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেলজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে—এর মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ বা ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য গেছে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশগুলোতে।
ট্রাম্পের দাবিতে ভারতের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবির বিষয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ বলেন, ভারতের জ্বালানি নীতি সর্বদা স্থিতিশীল দাম ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর নির্ভর করে।
আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছি। আবারও স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গতকাল এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কোনো ফোনালাপ হয়নি।’ ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
জয়সওয়াল আরও বলেন, ‘আমাদের নীতির দুটি মূল লক্ষ্য হলো—স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্য বজায় রাখা ও নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ জন্য আমরা জ্বালানির উৎস বৈচিত্র্যপূর্ণ করার নীতিতে অটল।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের জ্বালানি সহযোগিতা সম্প্রসারণে আলোচনা চলছে।
অর্থনীতিবিদ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া হেরেরোর মতে, আগামী তিন থেকে ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক ‘উত্তেজনাপূর্ণ কিন্তু বাস্তবসম্মত সমঝোতায়’ পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি কিছুটা কমায়, তবে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক কিছুটা শিথিল করতে পারে এবং ২০২৬ সালের শুরুর দিকে একটি ক্ষুদ্র বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে।
কিন্তু ভারত কি আসলেই রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমাবে বা বন্ধ করবে? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত কখনোই এমন সিদ্দান্ত নেবে না। কারণ, কৌশলগতভাবে রাশিয়া ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। আর সবচেয়ে বড় কথা, যেখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় কম দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে কি ভারত এ বাণিজ্য বন্ধ করবে? এমনটা ভাবা অমূলক।
তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কীভাবে ভারতকে ঠেকাবেন? তিনি কি ভারতকে রাশিয়ার তেল না কিনতে বাধ্য করতে পারবেন? ট্রাম্প এমনটা করতেই পারেন। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়, ভারত ট্রাম্পের বাধ্যবাধকতা কেন মানবে? বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার তেল কেনার অপরাধে ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ (৫০ শতাংশ) শুল্ক আরোপ করেছেন। তেল কেনা বন্ধ না করলে হয়তো আরও শুল্ক আরোপ করবেন। এভাবেই তিনি ভারতকে বাধ্য করতে চাইবেন।
ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর আর্থিক শক্তি অনেকটাই তাদের তেলের ওপর নির্ভরশীল। আর রাশিয়ার এই তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। বর্তমানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে। ওয়াশিংটনের যুক্তি, রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ হলে মস্কোর আর্থিক সামর্থ্য কমবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, এবার তিনি চীনকেও একই পথে আনতে চান।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। আজ বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল বুধবার দুই নেতার মধ্যে কোনো টেলিফোন আলাপ হয়নি। ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এর আগে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, খুব শিগগির ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে।
প্রসঙ্গত, ভারত ও চীন—এই দুই দেশ রাশিয়ার সমুদ্রপথে তেল রপ্তানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
ভারতের ওপর বাণিজ্য চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্প চলমান যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য আলোচনাকে ব্যবহার করছেন রাশিয়ার তেল ইস্যুতে দিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য। গত আগস্টে তিনি ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানিকে অজুহাত দেখিয়ে দিল্লির ওপর অতিরিক্ত বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেন। তবে মোদি সরকার এখনো তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি।
ভারত বরাবরই বলে এসেছে, রাশিয়ার তেল কেনা ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক। তাই তেল আমদানি বন্ধ করা ভারতের অর্থনীতি ও জনগণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
যদি ভারত সত্যিই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে, তবে এটি মস্কোর জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। কারণ, রাশিয়ার যুদ্ধ পরিচালনায় তেল রপ্তানি অন্যতম প্রধান অর্থের উৎস।
তেল ইস্যুতেই কেন দ্বন্দ্ব?
ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চাপ। আগস্টে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসান, যা মোট শুল্কহারকে ৫০ শতাংশে পৌঁছে দেয়। তবে একইভাবে চীনের ওপর তিনি কোনো এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি—যদিও চীন এখন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা।
চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটি গত বছর রাশিয়া থেকে রেকর্ড ১০৯ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা তাদের মোট জ্বালানি আমদানির প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত আমদানি করেছে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন টন।
এ কারণে নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছে, ওয়াশিংটন একপাক্ষিকভাবে ভারতকে নিশানা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই অবস্থান আংশিকভাবে এসেছে ভারতের বাণিজ্য আলোচনায় ‘অবাধ্যতা’ থেকে।
হংকংভিত্তিক গবেষক ও অর্থনীতিবিদ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া হেরেরো আল-জাজিরাকে বলেন, ভারতের কৃষিপণ্যে উচ্চ শুল্ক ও ওষুধে ভর্তুকি দেওয়ার মতো সুরক্ষামূলক নীতিই যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য সম্পর্কের মূল বাধা। যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত এসব খাতে বিনিয়োগ ও ভর্তুকি কমিয়ে অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করুক।
চীনের প্রতি ভিন্ন মনোভাবের কারণ
চীনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প তুলনামূলক নরম অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, তিনি চীনের সঙ্গে বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির প্রত্যাশায় আপাতত অপেক্ষা করছেন। সেই চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ‘রেয়ার আর্থ মেটাল’ বা দুর্লভ খনিজ পদার্থের বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে চায়।
এই দুর্লভ খনিজগুলো গাড়ির যন্ত্রাংশ, সামরিক প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিকস উৎপাদনে অপরিহার্য। বর্তমানে চীন ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশ্বে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে এবং এর মধ্যে ১২টি রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
চীনের নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কিছু নির্দিষ্ট খনিজ কেনার আগে বেইজিংয়ের অনুমতি নিতে হচ্ছে। ট্রাম্প এর প্রতিক্রিয়ায় ১ নভেম্বর থেকে চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, চলতি মাসের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে।
রাশিয়ান তেলের ওপর ভারতের নির্ভরতা
রাশিয়া বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী দেশ। শিপিং বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের (Kpler) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত প্রতিদিন গড়ে ৪৫ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যার মধ্যে ১৬ লাখ ব্যারেল বা ৩৪ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে।
২০২২ সালের জানুয়ারির তুলনায় এটি ২ হাজার ২৫০ শতাংশ বেশি। তখন প্রতিদিন ভারত রাশিয়া থেকে মাত্র ৬৮ হাজার ব্যারেল তেল কিনত।
গবেষণা সংস্থা সিআরইএর তথ্য অনুযায়ী, চীন রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ৪৭ শতাংশ কিনেছে আর ভারত ৩৮ শতাংশ।
ভারত কেন এত রাশিয়ান তেল কিনছে
২০২২ সালের ডিসেম্বরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর ৬০ ডলারের মূল্যসীমা নির্ধারণ করে। এর ফলে রাশিয়া বাধ্য হয় প্রতিযোগিতামূলক দামে তেল বিক্রি করতে, যা ভারতের জন্য সুবিধাজনক হয়।
সস্তায় তেল কেনার কারণে ভারতের চলতি হিসাবের ঘাটতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় ৬৫ শতাংশ কমে যায়। এর ফলে দেশটির বৃহৎ তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (আরআইএল) সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়।
২০২১ সালে রিলায়েন্সের জামনগর রিফাইনারিতে আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের মধ্যে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ৩ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে বেড়ে প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।
সিআরইএর হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত জামনগর রিফাইনারি থেকে বিশ্বব্যাপী ৮৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেলজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে—এর মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ বা ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য গেছে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশগুলোতে।
ট্রাম্পের দাবিতে ভারতের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবির বিষয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ বলেন, ভারতের জ্বালানি নীতি সর্বদা স্থিতিশীল দাম ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর নির্ভর করে।
আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছি। আবারও স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গতকাল এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কোনো ফোনালাপ হয়নি।’ ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
জয়সওয়াল আরও বলেন, ‘আমাদের নীতির দুটি মূল লক্ষ্য হলো—স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্য বজায় রাখা ও নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ জন্য আমরা জ্বালানির উৎস বৈচিত্র্যপূর্ণ করার নীতিতে অটল।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের জ্বালানি সহযোগিতা সম্প্রসারণে আলোচনা চলছে।
অর্থনীতিবিদ অ্যালিসিয়া গার্সিয়া হেরেরোর মতে, আগামী তিন থেকে ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক ‘উত্তেজনাপূর্ণ কিন্তু বাস্তবসম্মত সমঝোতায়’ পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি কিছুটা কমায়, তবে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক কিছুটা শিথিল করতে পারে এবং ২০২৬ সালের শুরুর দিকে একটি ক্ষুদ্র বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে।
কিন্তু ভারত কি আসলেই রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমাবে বা বন্ধ করবে? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত কখনোই এমন সিদ্দান্ত নেবে না। কারণ, কৌশলগতভাবে রাশিয়া ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। আর সবচেয়ে বড় কথা, যেখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় কম দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে কি ভারত এ বাণিজ্য বন্ধ করবে? এমনটা ভাবা অমূলক।
তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কীভাবে ভারতকে ঠেকাবেন? তিনি কি ভারতকে রাশিয়ার তেল না কিনতে বাধ্য করতে পারবেন? ট্রাম্প এমনটা করতেই পারেন। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়, ভারত ট্রাম্পের বাধ্যবাধকতা কেন মানবে? বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার তেল কেনার অপরাধে ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ (৫০ শতাংশ) শুল্ক আরোপ করেছেন। তেল কেনা বন্ধ না করলে হয়তো আরও শুল্ক আরোপ করবেন। এভাবেই তিনি ভারতকে বাধ্য করতে চাইবেন।
কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে হামলা চালিয়েছে। দুই পক্ষের পারস্পরিক প্রত্যাশার অমিল এবং একে অপরের সামর্থ্যের প্রতি অসম্মান—এই দুই কারণে আগের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
১২ ঘণ্টা আগেগাজায় হত্যাযজ্ঞ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী ব্যক্তিদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাও এখন কিছুটা সহজে পৌঁছাতে পারছে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে। এর জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ হতেই পারি। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প...
১৫ ঘণ্টা আগেএবার ট্রাম্প প্রশাসন শুধু পূর্বের রিপাবলিকান ধারা অব্যাহতই রাখেনি, বরং নারীর অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় নীতিকাঠামোই ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ছয় দশকেরও বেশি সময়ের নীতিনির্দেশনা উল্টে গেছে।
২ দিন আগেবিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, এই সাফল্য টেকসই শান্তির পথে কত দূর এগোবে, তা নির্ভর করবে ট্রাম্প কতটা চাপ বজায় রাখতে পারেন তার ওপর। বিশেষ করে সেই নেতার ওপর, যাঁর সমর্থন তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দরকার হবে। তিনি আর কেউ নন—ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
২ দিন আগে