আজকের পত্রিকা ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন, ধ্বংস এবং মুছে ফেলা।’ জবাবে ইরানও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
গত দেড় বছর ধরে ইরান-ইসরায়েলের পরোক্ষ সংঘাতে আরব দেশগুলো উদ্বিগ্ন ছিল যে, যুদ্ধ তাদের ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু লড়াই এখন যেভাবে ছড়াচ্ছে, আর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেভাবে পুরো উপসাগরীয় অঞ্চল পাড়ি দিচ্ছে, তাতে আশপাশের দেশগুলো এখন ভাবছে—সংঘাত ‘কবে’ তাদের ওপর ‘কবে’ নেমে আসবে।
এখনো সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর সামান্য সুযোগ রয়ে গেছে। কিন্তু ওয়াশিংটন যখন কূটনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তখন এই দায়িত্ব এসে পড়ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর। কারণ, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক—দুই পক্ষই ইসরায়েল, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক রাখে। এখন এদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ গড়ে তুলতে এবং মধ্যস্থতা করতে এদের নেতৃত্বেই একটি আঞ্চলিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ওয়াশিংটনকে কিছুটা অন্তর্ভুক্ত করলেও, পুরোপুরি তার ওপর নির্ভর করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এই যুদ্ধ গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। ইরানের পক্ষ থেকে এসব দেশের অবকাঠামোতে হামলা হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা।
বছরের পর বছর ধরে আরব সরকারগুলো ইরান ও ইসরায়েল—দুই দেশকেই ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখে এসেছে। ইরানের মতাদর্শিক সম্প্রসারণবাদ, পারমাণবিক কার্যক্রম এবং ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের শাসনকে সমর্থন—এসব কিছুই প্রতিবেশীদের জন্য ইরানকে এক ‘স্থায়ী’ হুমকিতে পরিণত করেছে।
২০১৯ সালে, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের তদন্ত অনুসারে, ইরান সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। ইরান সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রকাশ্যে হামলার প্রশংসাও করে। ২০২২ সালে ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীদের দূরপাল্লার হামলায় আবুধাবির একটি নির্মাণ ও তেল স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, আরব বিশ্ব আবার আতঙ্কিত হয়। হুতিরা স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হলেও তেহরানের সহায়তায় তারা আঞ্চলিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
গত কয়েক বছরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু গাজায় দীর্ঘমেয়াদি ও নির্মম যুদ্ধ, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি দমননীতি, বসতি সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি বা নিরাপত্তা আলোচনা থেকে ইসরায়েলের অনীহা—এসব বিষয় আরব দুনিয়ায় ইসরায়েলকেও অস্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
ইসরায়েল যেভাবে হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ও অবকাঠামো দুর্বল করেছে, সিরিয়ায় ইরানি উপস্থিতিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং ইরানের অভ্যন্তরেও হামলা চালিয়েছে, তা উপসাগরীয় নিরাপত্তা মহলে ‘নিঃশব্দে প্রশংসিত’ হয়েছে। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযান আরব জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করেছে। আবার, যুদ্ধপীড়িত সিরিয়াকে ঘিরে ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা আরব বিশ্বের স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো—ইসরায়েল-ইরানের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া। আরব দেশগুলো এই আশঙ্কাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলছেন না যে, তারা সংঘাত আরও বিস্তৃত করতে চান, কিন্তু তেহরানের শাহর রে রিফাইনারি ও পারস্য উপসাগরে অবস্থিত সাউথ পার্স রিফাইনারির ওপর ইসরায়েলের হামলা দেখে মনে হচ্ছে, তারা ইরানকে উসকানি দিচ্ছে—যাতে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায় কিংবা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়। ইরান যদি এমন কিছু করে, তাহলে আরব দেশগুলো বাধ্য হবে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষ নিতে—এটাই ইসরায়েলের চাওয়া।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও খুব শিগগিরই ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনটা হলে ইরানের পক্ষে আরব দেশগুলোর ওপর হামলার প্রলোভন আরও বেড়ে যাবে, কারণ এসব দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হবে, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে, উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোয় কিংবা হরমুজ প্রণালির জাহাজে হামলা চালায়। এতে শুধু তেল রপ্তানিই বিপন্ন হবে না, বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ধ্বংস হবে। কার্বননির্ভর অর্থনীতি এবং সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০—এর মতো অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। এ ছাড়া ইয়েমেনে সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে, যেখানে হুতি বিদ্রোহীরা আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করতে পারে। এমনকি সরাসরি উপসাগরীয় দেশগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। সাধারণ আরব জনগণ খাদ্য সরবরাহ বিঘ্ন, পানির উৎস বিষাক্ত হওয়া কিংবা সাইবার হামলার মতো দুর্যোগের শিকার হবে। এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে খুব ভালোভাবে সচেতন বলেই এই দেশগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে, যুদ্ধ যেন আর না ছড়ায়।
নিজেদের নিরাপদ রাখতে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্টভাবে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রকাশ্য নিন্দা করেছে। জর্ডান শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ওমান ও কাতার ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে জোরালো ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা শঙ্কিত যে—ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পরমাণু চুক্তির প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দিতে চাইছে। তুরস্কও কঠোর সমালোচনা করেছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, সংঘাত যেন আর বাড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তাঁর দেশ ‘যা কিছু দরকার’ তা করতে প্রস্তুত।
এরদোয়ান আসলে কী করতে চাইছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে আঞ্চলিক দেশগুলো এখন এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে তারা ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র—এই তিন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোর তেহরান ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ আছে। তারা মার্কিন ঘাঁটির স্বাগতিক দেশ, গোপন বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী এবং উভয় পক্ষের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। পাশাপাশি, এখন তারা ইসরায়েলের সঙ্গেও প্রকাশ্যে বা গোপনে কথা বলার পথ তৈরি করে ফেলেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে তাদের এই সব কূটনৈতিক সম্পদ কাজে লাগাতে হবে—শুধু ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে নয় বরং যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করতে এবং পরমাণু ও বৃহত্তর আঞ্চলিক আলোচনার ধারায় ফেরার জন্য।
এর জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোকে একটি কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে, যা হতে পারে আরব লিগের নেতৃত্বে কিংবা একটি ছোট আকারের, উপসাগরীয় জোটের নেতৃত্বে। এই উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে ইসরায়েল ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ সংলাপের পরিবেশ গড়ে তোলা যেতে পারে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা একটি ‘কুলিং-অফ’ সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে, যার মধ্যে দুই দেশ একে অপরের ওপর বিশেষ করে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা বন্ধ রাখবে।
একই সঙ্গে, আরব দেশগুলো এবং তুরস্কের উচিত একটি আলাদা কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা, যার লক্ষ্য হবে জ্বালানি ও সামুদ্রিক অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে যে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় ঘটতে পারে তা ঠেকানো। এমন কোনো উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বুঝতে পারবেন যে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আলোচনাই হলো সবচেয়ে ভালো পথ এবং সেটাই মধ্যপ্রাচ্য চায়। এভাবে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হতে পারে।
প্রথমে এটি ভাবা কঠিন মনে হতে পারে যে, ট্রাম্প কোনো বিদেশি সরকারের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে রাজি হবেন কি না। কিন্তু আরব উপসাগরীয় দেশগুলোই ছিল হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফরের গন্তব্য। এই সফরের মাধ্যমে উপসাগরীয় নেতারা আবারও নিশ্চিত হন যে, ওয়াশিংটন কেবল তাদের কথা শুনছে না বরং তাদের প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগের দিকেও সক্রিয়ভাবে সাড়া দিচ্ছে।
ট্রাম্প অতীতের মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ এবং গণতন্ত্র প্রচারের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘শান্তি ও অংশীদারত্বের’ এক নতুন যুগের ডাক দেন। তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর ব্যবসা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের প্রশংসা করে বলেন, তারা বিনিয়োগ করছে ‘বিশৃঙ্খলায় নয়, বাণিজ্যে; সন্ত্রাসে নয়, প্রযুক্তিতে।’ ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর দাবিকে সমর্থন জানান এবং দেশটির নতুন সরকারকে সহযোগিতা দেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, গোপন বৈঠকে ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোর অগ্রাধিকারগুলোকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তাঁর সফর দেখায় যে, তিনি কেবল তাদের কথা শুনতেই নয়, বরং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুত।
ইসরায়েল হয়তো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় হওয়া কোনো শান্তিচুক্তি গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি অনিচ্ছুক। তবে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়িয়ে চললেই সে পথ আরও সহজ হবে। নেতানিয়াহু হয়তো সংঘাত বাড়াতে চাইবেন, কিন্তু ইসরায়েলের অন্য নেতারা বোঝেন, যুদ্ধ বিস্তৃত হলে তা বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে—যার পরিণতি ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপরই পড়বে।
অন্যদিকে, ইরানের জন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতায় আসা এখন অত্যন্ত লাভজনক। ইসরায়েলের টানা ও নিরলস বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত তেহরানের শাসকগোষ্ঠী এখন মুখরক্ষা করে সরে আসার পথ খুঁজছে। দেশটির কর্মকর্তারা এতটাই চিন্তিত যে, তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে—যদি যুদ্ধবিরতির সুযোগ থাকে, তবে তারা আবার আলোচনায় বসবে। আরব দেশগুলো ইরানের সঙ্গে কঠিন আলোচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ২০১৯ সালে উপসাগরে ইরানের হামলা এবং ২০২২ সালে হুতিদের আক্রমণ অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়ালেও শেষপর্যন্ত তা উত্তেজনা প্রশমনের পথ খুলে দেয়। ওই প্রেক্ষাপটে আমিরাত ২০২২ সালে আবার ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করে, সৌদি আরবও ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় একই পথে হাঁটে।
২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়, তখন আরব রাষ্ট্র ও তুরস্ক তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করেছিল। তারা সতর্ক করেছিল, এই আগ্রাসন অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং চরমপন্থীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। আজ আবারও তারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে একসুরে কথা বলছে। কারণ তারা জানে, আরেকটি অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ এই অঞ্চলে আরও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
তাদের জন্য ঝুঁকিটা অনেক বড়। যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে তারা জানে—এই অস্থিরতা থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা তাদের নেই। সময় খুব কম, ঝুঁকি বাড়ছে। তাই এই মুহূর্তে সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি—একটি বড় যুদ্ধ থামাতে।
আশা করা যায়, এই দেশগুলো ইরান ও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এতে না জড়াতে রাজি করাতে পারবে। তারা ইসরায়েলকে বলতে পারে, তার বর্তমান কার্যকলাপ সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথকে একঘরে হওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে, আর স্থিতিশীলতা নয়, বরং স্থায়ী সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা ইরানকে বোঝাতে পারে, পরমাণু কর্মসূচি, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও প্রক্সি কার্যক্রম আর সহ্য করা হবে না—এবং অঞ্চলভুক্তি চাইলে, তাদের আচরণ পরিবর্তন করতেই হবে।
একটি শান্তিচুক্তি অর্জন অত্যন্ত কঠিন কাজ। ইরান ও ইসরায়েল তাদের অবস্থানে দৃঢ়ভাবে অনড়। এই সংঘাত প্রশমনের বদলে আরও জোরালো রূপ নিচ্ছে। তবুও বিশ্ব এক জরুরি ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই উদ্যোগে ইরান ও ইসরায়েলের অংশগ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও প্রয়োজন। তবে এই নেতৃত্ব, বা অন্তত সূচনা, আসতে হবে—এই অঞ্চল থেকেই।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন, ধ্বংস এবং মুছে ফেলা।’ জবাবে ইরানও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
গত দেড় বছর ধরে ইরান-ইসরায়েলের পরোক্ষ সংঘাতে আরব দেশগুলো উদ্বিগ্ন ছিল যে, যুদ্ধ তাদের ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু লড়াই এখন যেভাবে ছড়াচ্ছে, আর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেভাবে পুরো উপসাগরীয় অঞ্চল পাড়ি দিচ্ছে, তাতে আশপাশের দেশগুলো এখন ভাবছে—সংঘাত ‘কবে’ তাদের ওপর ‘কবে’ নেমে আসবে।
এখনো সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর সামান্য সুযোগ রয়ে গেছে। কিন্তু ওয়াশিংটন যখন কূটনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তখন এই দায়িত্ব এসে পড়ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর। কারণ, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক—দুই পক্ষই ইসরায়েল, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক রাখে। এখন এদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ গড়ে তুলতে এবং মধ্যস্থতা করতে এদের নেতৃত্বেই একটি আঞ্চলিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ওয়াশিংটনকে কিছুটা অন্তর্ভুক্ত করলেও, পুরোপুরি তার ওপর নির্ভর করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এই যুদ্ধ গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। ইরানের পক্ষ থেকে এসব দেশের অবকাঠামোতে হামলা হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা।
বছরের পর বছর ধরে আরব সরকারগুলো ইরান ও ইসরায়েল—দুই দেশকেই ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখে এসেছে। ইরানের মতাদর্শিক সম্প্রসারণবাদ, পারমাণবিক কার্যক্রম এবং ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের শাসনকে সমর্থন—এসব কিছুই প্রতিবেশীদের জন্য ইরানকে এক ‘স্থায়ী’ হুমকিতে পরিণত করেছে।
২০১৯ সালে, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের তদন্ত অনুসারে, ইরান সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। ইরান সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রকাশ্যে হামলার প্রশংসাও করে। ২০২২ সালে ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীদের দূরপাল্লার হামলায় আবুধাবির একটি নির্মাণ ও তেল স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, আরব বিশ্ব আবার আতঙ্কিত হয়। হুতিরা স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হলেও তেহরানের সহায়তায় তারা আঞ্চলিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
গত কয়েক বছরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু গাজায় দীর্ঘমেয়াদি ও নির্মম যুদ্ধ, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি দমননীতি, বসতি সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি বা নিরাপত্তা আলোচনা থেকে ইসরায়েলের অনীহা—এসব বিষয় আরব দুনিয়ায় ইসরায়েলকেও অস্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
ইসরায়েল যেভাবে হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ও অবকাঠামো দুর্বল করেছে, সিরিয়ায় ইরানি উপস্থিতিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং ইরানের অভ্যন্তরেও হামলা চালিয়েছে, তা উপসাগরীয় নিরাপত্তা মহলে ‘নিঃশব্দে প্রশংসিত’ হয়েছে। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযান আরব জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করেছে। আবার, যুদ্ধপীড়িত সিরিয়াকে ঘিরে ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা আরব বিশ্বের স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো—ইসরায়েল-ইরানের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া। আরব দেশগুলো এই আশঙ্কাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলছেন না যে, তারা সংঘাত আরও বিস্তৃত করতে চান, কিন্তু তেহরানের শাহর রে রিফাইনারি ও পারস্য উপসাগরে অবস্থিত সাউথ পার্স রিফাইনারির ওপর ইসরায়েলের হামলা দেখে মনে হচ্ছে, তারা ইরানকে উসকানি দিচ্ছে—যাতে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায় কিংবা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়। ইরান যদি এমন কিছু করে, তাহলে আরব দেশগুলো বাধ্য হবে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষ নিতে—এটাই ইসরায়েলের চাওয়া।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও খুব শিগগিরই ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনটা হলে ইরানের পক্ষে আরব দেশগুলোর ওপর হামলার প্রলোভন আরও বেড়ে যাবে, কারণ এসব দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হবে, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে, উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোয় কিংবা হরমুজ প্রণালির জাহাজে হামলা চালায়। এতে শুধু তেল রপ্তানিই বিপন্ন হবে না, বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ধ্বংস হবে। কার্বননির্ভর অর্থনীতি এবং সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০—এর মতো অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। এ ছাড়া ইয়েমেনে সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে, যেখানে হুতি বিদ্রোহীরা আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করতে পারে। এমনকি সরাসরি উপসাগরীয় দেশগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। সাধারণ আরব জনগণ খাদ্য সরবরাহ বিঘ্ন, পানির উৎস বিষাক্ত হওয়া কিংবা সাইবার হামলার মতো দুর্যোগের শিকার হবে। এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে খুব ভালোভাবে সচেতন বলেই এই দেশগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে, যুদ্ধ যেন আর না ছড়ায়।
নিজেদের নিরাপদ রাখতে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্টভাবে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রকাশ্য নিন্দা করেছে। জর্ডান শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ওমান ও কাতার ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে জোরালো ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা শঙ্কিত যে—ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পরমাণু চুক্তির প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দিতে চাইছে। তুরস্কও কঠোর সমালোচনা করেছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, সংঘাত যেন আর বাড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তাঁর দেশ ‘যা কিছু দরকার’ তা করতে প্রস্তুত।
এরদোয়ান আসলে কী করতে চাইছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে আঞ্চলিক দেশগুলো এখন এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে তারা ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র—এই তিন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোর তেহরান ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ আছে। তারা মার্কিন ঘাঁটির স্বাগতিক দেশ, গোপন বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী এবং উভয় পক্ষের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। পাশাপাশি, এখন তারা ইসরায়েলের সঙ্গেও প্রকাশ্যে বা গোপনে কথা বলার পথ তৈরি করে ফেলেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে তাদের এই সব কূটনৈতিক সম্পদ কাজে লাগাতে হবে—শুধু ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে নয় বরং যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করতে এবং পরমাণু ও বৃহত্তর আঞ্চলিক আলোচনার ধারায় ফেরার জন্য।
এর জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোকে একটি কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে, যা হতে পারে আরব লিগের নেতৃত্বে কিংবা একটি ছোট আকারের, উপসাগরীয় জোটের নেতৃত্বে। এই উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে ইসরায়েল ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ সংলাপের পরিবেশ গড়ে তোলা যেতে পারে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা একটি ‘কুলিং-অফ’ সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে, যার মধ্যে দুই দেশ একে অপরের ওপর বিশেষ করে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা বন্ধ রাখবে।
একই সঙ্গে, আরব দেশগুলো এবং তুরস্কের উচিত একটি আলাদা কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা, যার লক্ষ্য হবে জ্বালানি ও সামুদ্রিক অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে যে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় ঘটতে পারে তা ঠেকানো। এমন কোনো উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বুঝতে পারবেন যে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আলোচনাই হলো সবচেয়ে ভালো পথ এবং সেটাই মধ্যপ্রাচ্য চায়। এভাবে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হতে পারে।
প্রথমে এটি ভাবা কঠিন মনে হতে পারে যে, ট্রাম্প কোনো বিদেশি সরকারের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে রাজি হবেন কি না। কিন্তু আরব উপসাগরীয় দেশগুলোই ছিল হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফরের গন্তব্য। এই সফরের মাধ্যমে উপসাগরীয় নেতারা আবারও নিশ্চিত হন যে, ওয়াশিংটন কেবল তাদের কথা শুনছে না বরং তাদের প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগের দিকেও সক্রিয়ভাবে সাড়া দিচ্ছে।
ট্রাম্প অতীতের মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ এবং গণতন্ত্র প্রচারের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘শান্তি ও অংশীদারত্বের’ এক নতুন যুগের ডাক দেন। তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর ব্যবসা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের প্রশংসা করে বলেন, তারা বিনিয়োগ করছে ‘বিশৃঙ্খলায় নয়, বাণিজ্যে; সন্ত্রাসে নয়, প্রযুক্তিতে।’ ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর দাবিকে সমর্থন জানান এবং দেশটির নতুন সরকারকে সহযোগিতা দেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, গোপন বৈঠকে ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোর অগ্রাধিকারগুলোকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তাঁর সফর দেখায় যে, তিনি কেবল তাদের কথা শুনতেই নয়, বরং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুত।
ইসরায়েল হয়তো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় হওয়া কোনো শান্তিচুক্তি গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি অনিচ্ছুক। তবে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়িয়ে চললেই সে পথ আরও সহজ হবে। নেতানিয়াহু হয়তো সংঘাত বাড়াতে চাইবেন, কিন্তু ইসরায়েলের অন্য নেতারা বোঝেন, যুদ্ধ বিস্তৃত হলে তা বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে—যার পরিণতি ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপরই পড়বে।
অন্যদিকে, ইরানের জন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতায় আসা এখন অত্যন্ত লাভজনক। ইসরায়েলের টানা ও নিরলস বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত তেহরানের শাসকগোষ্ঠী এখন মুখরক্ষা করে সরে আসার পথ খুঁজছে। দেশটির কর্মকর্তারা এতটাই চিন্তিত যে, তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে—যদি যুদ্ধবিরতির সুযোগ থাকে, তবে তারা আবার আলোচনায় বসবে। আরব দেশগুলো ইরানের সঙ্গে কঠিন আলোচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ২০১৯ সালে উপসাগরে ইরানের হামলা এবং ২০২২ সালে হুতিদের আক্রমণ অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়ালেও শেষপর্যন্ত তা উত্তেজনা প্রশমনের পথ খুলে দেয়। ওই প্রেক্ষাপটে আমিরাত ২০২২ সালে আবার ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করে, সৌদি আরবও ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় একই পথে হাঁটে।
২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়, তখন আরব রাষ্ট্র ও তুরস্ক তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করেছিল। তারা সতর্ক করেছিল, এই আগ্রাসন অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং চরমপন্থীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। আজ আবারও তারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে একসুরে কথা বলছে। কারণ তারা জানে, আরেকটি অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ এই অঞ্চলে আরও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
তাদের জন্য ঝুঁকিটা অনেক বড়। যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে তারা জানে—এই অস্থিরতা থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা তাদের নেই। সময় খুব কম, ঝুঁকি বাড়ছে। তাই এই মুহূর্তে সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি—একটি বড় যুদ্ধ থামাতে।
আশা করা যায়, এই দেশগুলো ইরান ও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এতে না জড়াতে রাজি করাতে পারবে। তারা ইসরায়েলকে বলতে পারে, তার বর্তমান কার্যকলাপ সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথকে একঘরে হওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে, আর স্থিতিশীলতা নয়, বরং স্থায়ী সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা ইরানকে বোঝাতে পারে, পরমাণু কর্মসূচি, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও প্রক্সি কার্যক্রম আর সহ্য করা হবে না—এবং অঞ্চলভুক্তি চাইলে, তাদের আচরণ পরিবর্তন করতেই হবে।
একটি শান্তিচুক্তি অর্জন অত্যন্ত কঠিন কাজ। ইরান ও ইসরায়েল তাদের অবস্থানে দৃঢ়ভাবে অনড়। এই সংঘাত প্রশমনের বদলে আরও জোরালো রূপ নিচ্ছে। তবুও বিশ্ব এক জরুরি ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই উদ্যোগে ইরান ও ইসরায়েলের অংশগ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও প্রয়োজন। তবে এই নেতৃত্ব, বা অন্তত সূচনা, আসতে হবে—এই অঞ্চল থেকেই।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন, ধ্বংস এবং মুছে ফেলা।’ জবাবে ইরানও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
গত দেড় বছর ধরে ইরান-ইসরায়েলের পরোক্ষ সংঘাতে আরব দেশগুলো উদ্বিগ্ন ছিল যে, যুদ্ধ তাদের ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু লড়াই এখন যেভাবে ছড়াচ্ছে, আর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেভাবে পুরো উপসাগরীয় অঞ্চল পাড়ি দিচ্ছে, তাতে আশপাশের দেশগুলো এখন ভাবছে—সংঘাত ‘কবে’ তাদের ওপর ‘কবে’ নেমে আসবে।
এখনো সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর সামান্য সুযোগ রয়ে গেছে। কিন্তু ওয়াশিংটন যখন কূটনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তখন এই দায়িত্ব এসে পড়ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর। কারণ, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক—দুই পক্ষই ইসরায়েল, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক রাখে। এখন এদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ গড়ে তুলতে এবং মধ্যস্থতা করতে এদের নেতৃত্বেই একটি আঞ্চলিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ওয়াশিংটনকে কিছুটা অন্তর্ভুক্ত করলেও, পুরোপুরি তার ওপর নির্ভর করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এই যুদ্ধ গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। ইরানের পক্ষ থেকে এসব দেশের অবকাঠামোতে হামলা হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা।
বছরের পর বছর ধরে আরব সরকারগুলো ইরান ও ইসরায়েল—দুই দেশকেই ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখে এসেছে। ইরানের মতাদর্শিক সম্প্রসারণবাদ, পারমাণবিক কার্যক্রম এবং ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের শাসনকে সমর্থন—এসব কিছুই প্রতিবেশীদের জন্য ইরানকে এক ‘স্থায়ী’ হুমকিতে পরিণত করেছে।
২০১৯ সালে, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের তদন্ত অনুসারে, ইরান সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। ইরান সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রকাশ্যে হামলার প্রশংসাও করে। ২০২২ সালে ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীদের দূরপাল্লার হামলায় আবুধাবির একটি নির্মাণ ও তেল স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, আরব বিশ্ব আবার আতঙ্কিত হয়। হুতিরা স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হলেও তেহরানের সহায়তায় তারা আঞ্চলিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
গত কয়েক বছরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু গাজায় দীর্ঘমেয়াদি ও নির্মম যুদ্ধ, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি দমননীতি, বসতি সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি বা নিরাপত্তা আলোচনা থেকে ইসরায়েলের অনীহা—এসব বিষয় আরব দুনিয়ায় ইসরায়েলকেও অস্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
ইসরায়েল যেভাবে হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ও অবকাঠামো দুর্বল করেছে, সিরিয়ায় ইরানি উপস্থিতিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং ইরানের অভ্যন্তরেও হামলা চালিয়েছে, তা উপসাগরীয় নিরাপত্তা মহলে ‘নিঃশব্দে প্রশংসিত’ হয়েছে। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযান আরব জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করেছে। আবার, যুদ্ধপীড়িত সিরিয়াকে ঘিরে ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা আরব বিশ্বের স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো—ইসরায়েল-ইরানের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া। আরব দেশগুলো এই আশঙ্কাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলছেন না যে, তারা সংঘাত আরও বিস্তৃত করতে চান, কিন্তু তেহরানের শাহর রে রিফাইনারি ও পারস্য উপসাগরে অবস্থিত সাউথ পার্স রিফাইনারির ওপর ইসরায়েলের হামলা দেখে মনে হচ্ছে, তারা ইরানকে উসকানি দিচ্ছে—যাতে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায় কিংবা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়। ইরান যদি এমন কিছু করে, তাহলে আরব দেশগুলো বাধ্য হবে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষ নিতে—এটাই ইসরায়েলের চাওয়া।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও খুব শিগগিরই ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনটা হলে ইরানের পক্ষে আরব দেশগুলোর ওপর হামলার প্রলোভন আরও বেড়ে যাবে, কারণ এসব দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হবে, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে, উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোয় কিংবা হরমুজ প্রণালির জাহাজে হামলা চালায়। এতে শুধু তেল রপ্তানিই বিপন্ন হবে না, বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ধ্বংস হবে। কার্বননির্ভর অর্থনীতি এবং সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০—এর মতো অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। এ ছাড়া ইয়েমেনে সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে, যেখানে হুতি বিদ্রোহীরা আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করতে পারে। এমনকি সরাসরি উপসাগরীয় দেশগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। সাধারণ আরব জনগণ খাদ্য সরবরাহ বিঘ্ন, পানির উৎস বিষাক্ত হওয়া কিংবা সাইবার হামলার মতো দুর্যোগের শিকার হবে। এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে খুব ভালোভাবে সচেতন বলেই এই দেশগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে, যুদ্ধ যেন আর না ছড়ায়।
নিজেদের নিরাপদ রাখতে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্টভাবে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রকাশ্য নিন্দা করেছে। জর্ডান শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ওমান ও কাতার ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে জোরালো ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা শঙ্কিত যে—ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পরমাণু চুক্তির প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দিতে চাইছে। তুরস্কও কঠোর সমালোচনা করেছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, সংঘাত যেন আর বাড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তাঁর দেশ ‘যা কিছু দরকার’ তা করতে প্রস্তুত।
এরদোয়ান আসলে কী করতে চাইছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে আঞ্চলিক দেশগুলো এখন এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে তারা ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র—এই তিন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোর তেহরান ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ আছে। তারা মার্কিন ঘাঁটির স্বাগতিক দেশ, গোপন বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী এবং উভয় পক্ষের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। পাশাপাশি, এখন তারা ইসরায়েলের সঙ্গেও প্রকাশ্যে বা গোপনে কথা বলার পথ তৈরি করে ফেলেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে তাদের এই সব কূটনৈতিক সম্পদ কাজে লাগাতে হবে—শুধু ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে নয় বরং যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করতে এবং পরমাণু ও বৃহত্তর আঞ্চলিক আলোচনার ধারায় ফেরার জন্য।
এর জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোকে একটি কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে, যা হতে পারে আরব লিগের নেতৃত্বে কিংবা একটি ছোট আকারের, উপসাগরীয় জোটের নেতৃত্বে। এই উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে ইসরায়েল ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ সংলাপের পরিবেশ গড়ে তোলা যেতে পারে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা একটি ‘কুলিং-অফ’ সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে, যার মধ্যে দুই দেশ একে অপরের ওপর বিশেষ করে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা বন্ধ রাখবে।
একই সঙ্গে, আরব দেশগুলো এবং তুরস্কের উচিত একটি আলাদা কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা, যার লক্ষ্য হবে জ্বালানি ও সামুদ্রিক অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে যে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় ঘটতে পারে তা ঠেকানো। এমন কোনো উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বুঝতে পারবেন যে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আলোচনাই হলো সবচেয়ে ভালো পথ এবং সেটাই মধ্যপ্রাচ্য চায়। এভাবে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হতে পারে।
প্রথমে এটি ভাবা কঠিন মনে হতে পারে যে, ট্রাম্প কোনো বিদেশি সরকারের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে রাজি হবেন কি না। কিন্তু আরব উপসাগরীয় দেশগুলোই ছিল হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফরের গন্তব্য। এই সফরের মাধ্যমে উপসাগরীয় নেতারা আবারও নিশ্চিত হন যে, ওয়াশিংটন কেবল তাদের কথা শুনছে না বরং তাদের প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগের দিকেও সক্রিয়ভাবে সাড়া দিচ্ছে।
ট্রাম্প অতীতের মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ এবং গণতন্ত্র প্রচারের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘শান্তি ও অংশীদারত্বের’ এক নতুন যুগের ডাক দেন। তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর ব্যবসা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের প্রশংসা করে বলেন, তারা বিনিয়োগ করছে ‘বিশৃঙ্খলায় নয়, বাণিজ্যে; সন্ত্রাসে নয়, প্রযুক্তিতে।’ ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর দাবিকে সমর্থন জানান এবং দেশটির নতুন সরকারকে সহযোগিতা দেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, গোপন বৈঠকে ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোর অগ্রাধিকারগুলোকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তাঁর সফর দেখায় যে, তিনি কেবল তাদের কথা শুনতেই নয়, বরং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুত।
ইসরায়েল হয়তো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় হওয়া কোনো শান্তিচুক্তি গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি অনিচ্ছুক। তবে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়িয়ে চললেই সে পথ আরও সহজ হবে। নেতানিয়াহু হয়তো সংঘাত বাড়াতে চাইবেন, কিন্তু ইসরায়েলের অন্য নেতারা বোঝেন, যুদ্ধ বিস্তৃত হলে তা বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে—যার পরিণতি ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপরই পড়বে।
অন্যদিকে, ইরানের জন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতায় আসা এখন অত্যন্ত লাভজনক। ইসরায়েলের টানা ও নিরলস বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত তেহরানের শাসকগোষ্ঠী এখন মুখরক্ষা করে সরে আসার পথ খুঁজছে। দেশটির কর্মকর্তারা এতটাই চিন্তিত যে, তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে—যদি যুদ্ধবিরতির সুযোগ থাকে, তবে তারা আবার আলোচনায় বসবে। আরব দেশগুলো ইরানের সঙ্গে কঠিন আলোচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ২০১৯ সালে উপসাগরে ইরানের হামলা এবং ২০২২ সালে হুতিদের আক্রমণ অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়ালেও শেষপর্যন্ত তা উত্তেজনা প্রশমনের পথ খুলে দেয়। ওই প্রেক্ষাপটে আমিরাত ২০২২ সালে আবার ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করে, সৌদি আরবও ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় একই পথে হাঁটে।
২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়, তখন আরব রাষ্ট্র ও তুরস্ক তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করেছিল। তারা সতর্ক করেছিল, এই আগ্রাসন অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং চরমপন্থীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। আজ আবারও তারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে একসুরে কথা বলছে। কারণ তারা জানে, আরেকটি অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ এই অঞ্চলে আরও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
তাদের জন্য ঝুঁকিটা অনেক বড়। যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে তারা জানে—এই অস্থিরতা থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা তাদের নেই। সময় খুব কম, ঝুঁকি বাড়ছে। তাই এই মুহূর্তে সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি—একটি বড় যুদ্ধ থামাতে।
আশা করা যায়, এই দেশগুলো ইরান ও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এতে না জড়াতে রাজি করাতে পারবে। তারা ইসরায়েলকে বলতে পারে, তার বর্তমান কার্যকলাপ সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথকে একঘরে হওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে, আর স্থিতিশীলতা নয়, বরং স্থায়ী সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা ইরানকে বোঝাতে পারে, পরমাণু কর্মসূচি, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও প্রক্সি কার্যক্রম আর সহ্য করা হবে না—এবং অঞ্চলভুক্তি চাইলে, তাদের আচরণ পরিবর্তন করতেই হবে।
একটি শান্তিচুক্তি অর্জন অত্যন্ত কঠিন কাজ। ইরান ও ইসরায়েল তাদের অবস্থানে দৃঢ়ভাবে অনড়। এই সংঘাত প্রশমনের বদলে আরও জোরালো রূপ নিচ্ছে। তবুও বিশ্ব এক জরুরি ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই উদ্যোগে ইরান ও ইসরায়েলের অংশগ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও প্রয়োজন। তবে এই নেতৃত্ব, বা অন্তত সূচনা, আসতে হবে—এই অঞ্চল থেকেই।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন, ধ্বংস এবং মুছে ফেলা।’ জবাবে ইরানও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
গত দেড় বছর ধরে ইরান-ইসরায়েলের পরোক্ষ সংঘাতে আরব দেশগুলো উদ্বিগ্ন ছিল যে, যুদ্ধ তাদের ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু লড়াই এখন যেভাবে ছড়াচ্ছে, আর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেভাবে পুরো উপসাগরীয় অঞ্চল পাড়ি দিচ্ছে, তাতে আশপাশের দেশগুলো এখন ভাবছে—সংঘাত ‘কবে’ তাদের ওপর ‘কবে’ নেমে আসবে।
এখনো সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর সামান্য সুযোগ রয়ে গেছে। কিন্তু ওয়াশিংটন যখন কূটনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তখন এই দায়িত্ব এসে পড়ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর। কারণ, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক—দুই পক্ষই ইসরায়েল, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক রাখে। এখন এদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ গড়ে তুলতে এবং মধ্যস্থতা করতে এদের নেতৃত্বেই একটি আঞ্চলিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ওয়াশিংটনকে কিছুটা অন্তর্ভুক্ত করলেও, পুরোপুরি তার ওপর নির্ভর করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এই যুদ্ধ গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। ইরানের পক্ষ থেকে এসব দেশের অবকাঠামোতে হামলা হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা।
বছরের পর বছর ধরে আরব সরকারগুলো ইরান ও ইসরায়েল—দুই দেশকেই ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখে এসেছে। ইরানের মতাদর্শিক সম্প্রসারণবাদ, পারমাণবিক কার্যক্রম এবং ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের শাসনকে সমর্থন—এসব কিছুই প্রতিবেশীদের জন্য ইরানকে এক ‘স্থায়ী’ হুমকিতে পরিণত করেছে।
২০১৯ সালে, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের তদন্ত অনুসারে, ইরান সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। ইরান সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রকাশ্যে হামলার প্রশংসাও করে। ২০২২ সালে ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীদের দূরপাল্লার হামলায় আবুধাবির একটি নির্মাণ ও তেল স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, আরব বিশ্ব আবার আতঙ্কিত হয়। হুতিরা স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হলেও তেহরানের সহায়তায় তারা আঞ্চলিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
গত কয়েক বছরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু গাজায় দীর্ঘমেয়াদি ও নির্মম যুদ্ধ, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি দমননীতি, বসতি সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি বা নিরাপত্তা আলোচনা থেকে ইসরায়েলের অনীহা—এসব বিষয় আরব দুনিয়ায় ইসরায়েলকেও অস্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
ইসরায়েল যেভাবে হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ও অবকাঠামো দুর্বল করেছে, সিরিয়ায় ইরানি উপস্থিতিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং ইরানের অভ্যন্তরেও হামলা চালিয়েছে, তা উপসাগরীয় নিরাপত্তা মহলে ‘নিঃশব্দে প্রশংসিত’ হয়েছে। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযান আরব জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করেছে। আবার, যুদ্ধপীড়িত সিরিয়াকে ঘিরে ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা আরব বিশ্বের স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো—ইসরায়েল-ইরানের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া। আরব দেশগুলো এই আশঙ্কাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলছেন না যে, তারা সংঘাত আরও বিস্তৃত করতে চান, কিন্তু তেহরানের শাহর রে রিফাইনারি ও পারস্য উপসাগরে অবস্থিত সাউথ পার্স রিফাইনারির ওপর ইসরায়েলের হামলা দেখে মনে হচ্ছে, তারা ইরানকে উসকানি দিচ্ছে—যাতে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায় কিংবা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়। ইরান যদি এমন কিছু করে, তাহলে আরব দেশগুলো বাধ্য হবে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষ নিতে—এটাই ইসরায়েলের চাওয়া।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও খুব শিগগিরই ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনটা হলে ইরানের পক্ষে আরব দেশগুলোর ওপর হামলার প্রলোভন আরও বেড়ে যাবে, কারণ এসব দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হবে, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে, উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোয় কিংবা হরমুজ প্রণালির জাহাজে হামলা চালায়। এতে শুধু তেল রপ্তানিই বিপন্ন হবে না, বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ধ্বংস হবে। কার্বননির্ভর অর্থনীতি এবং সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০—এর মতো অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। এ ছাড়া ইয়েমেনে সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে, যেখানে হুতি বিদ্রোহীরা আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করতে পারে। এমনকি সরাসরি উপসাগরীয় দেশগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। সাধারণ আরব জনগণ খাদ্য সরবরাহ বিঘ্ন, পানির উৎস বিষাক্ত হওয়া কিংবা সাইবার হামলার মতো দুর্যোগের শিকার হবে। এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে খুব ভালোভাবে সচেতন বলেই এই দেশগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে, যুদ্ধ যেন আর না ছড়ায়।
নিজেদের নিরাপদ রাখতে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্টভাবে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রকাশ্য নিন্দা করেছে। জর্ডান শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ওমান ও কাতার ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে জোরালো ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা শঙ্কিত যে—ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পরমাণু চুক্তির প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দিতে চাইছে। তুরস্কও কঠোর সমালোচনা করেছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, সংঘাত যেন আর বাড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তাঁর দেশ ‘যা কিছু দরকার’ তা করতে প্রস্তুত।
এরদোয়ান আসলে কী করতে চাইছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে আঞ্চলিক দেশগুলো এখন এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে তারা ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র—এই তিন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোর তেহরান ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ আছে। তারা মার্কিন ঘাঁটির স্বাগতিক দেশ, গোপন বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী এবং উভয় পক্ষের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। পাশাপাশি, এখন তারা ইসরায়েলের সঙ্গেও প্রকাশ্যে বা গোপনে কথা বলার পথ তৈরি করে ফেলেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে তাদের এই সব কূটনৈতিক সম্পদ কাজে লাগাতে হবে—শুধু ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে নয় বরং যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করতে এবং পরমাণু ও বৃহত্তর আঞ্চলিক আলোচনার ধারায় ফেরার জন্য।
এর জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোকে একটি কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে, যা হতে পারে আরব লিগের নেতৃত্বে কিংবা একটি ছোট আকারের, উপসাগরীয় জোটের নেতৃত্বে। এই উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে ইসরায়েল ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ সংলাপের পরিবেশ গড়ে তোলা যেতে পারে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা একটি ‘কুলিং-অফ’ সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে, যার মধ্যে দুই দেশ একে অপরের ওপর বিশেষ করে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা বন্ধ রাখবে।
একই সঙ্গে, আরব দেশগুলো এবং তুরস্কের উচিত একটি আলাদা কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা, যার লক্ষ্য হবে জ্বালানি ও সামুদ্রিক অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে যে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় ঘটতে পারে তা ঠেকানো। এমন কোনো উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বুঝতে পারবেন যে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আলোচনাই হলো সবচেয়ে ভালো পথ এবং সেটাই মধ্যপ্রাচ্য চায়। এভাবে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হতে পারে।
প্রথমে এটি ভাবা কঠিন মনে হতে পারে যে, ট্রাম্প কোনো বিদেশি সরকারের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে রাজি হবেন কি না। কিন্তু আরব উপসাগরীয় দেশগুলোই ছিল হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফরের গন্তব্য। এই সফরের মাধ্যমে উপসাগরীয় নেতারা আবারও নিশ্চিত হন যে, ওয়াশিংটন কেবল তাদের কথা শুনছে না বরং তাদের প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগের দিকেও সক্রিয়ভাবে সাড়া দিচ্ছে।
ট্রাম্প অতীতের মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ এবং গণতন্ত্র প্রচারের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘শান্তি ও অংশীদারত্বের’ এক নতুন যুগের ডাক দেন। তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর ব্যবসা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের প্রশংসা করে বলেন, তারা বিনিয়োগ করছে ‘বিশৃঙ্খলায় নয়, বাণিজ্যে; সন্ত্রাসে নয়, প্রযুক্তিতে।’ ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর দাবিকে সমর্থন জানান এবং দেশটির নতুন সরকারকে সহযোগিতা দেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, গোপন বৈঠকে ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোর অগ্রাধিকারগুলোকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তাঁর সফর দেখায় যে, তিনি কেবল তাদের কথা শুনতেই নয়, বরং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুত।
ইসরায়েল হয়তো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় হওয়া কোনো শান্তিচুক্তি গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি অনিচ্ছুক। তবে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়িয়ে চললেই সে পথ আরও সহজ হবে। নেতানিয়াহু হয়তো সংঘাত বাড়াতে চাইবেন, কিন্তু ইসরায়েলের অন্য নেতারা বোঝেন, যুদ্ধ বিস্তৃত হলে তা বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে—যার পরিণতি ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপরই পড়বে।
অন্যদিকে, ইরানের জন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতায় আসা এখন অত্যন্ত লাভজনক। ইসরায়েলের টানা ও নিরলস বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত তেহরানের শাসকগোষ্ঠী এখন মুখরক্ষা করে সরে আসার পথ খুঁজছে। দেশটির কর্মকর্তারা এতটাই চিন্তিত যে, তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে—যদি যুদ্ধবিরতির সুযোগ থাকে, তবে তারা আবার আলোচনায় বসবে। আরব দেশগুলো ইরানের সঙ্গে কঠিন আলোচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ২০১৯ সালে উপসাগরে ইরানের হামলা এবং ২০২২ সালে হুতিদের আক্রমণ অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়ালেও শেষপর্যন্ত তা উত্তেজনা প্রশমনের পথ খুলে দেয়। ওই প্রেক্ষাপটে আমিরাত ২০২২ সালে আবার ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করে, সৌদি আরবও ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় একই পথে হাঁটে।
২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়, তখন আরব রাষ্ট্র ও তুরস্ক তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করেছিল। তারা সতর্ক করেছিল, এই আগ্রাসন অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং চরমপন্থীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। আজ আবারও তারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে একসুরে কথা বলছে। কারণ তারা জানে, আরেকটি অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ এই অঞ্চলে আরও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
তাদের জন্য ঝুঁকিটা অনেক বড়। যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে তারা জানে—এই অস্থিরতা থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা তাদের নেই। সময় খুব কম, ঝুঁকি বাড়ছে। তাই এই মুহূর্তে সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি—একটি বড় যুদ্ধ থামাতে।
আশা করা যায়, এই দেশগুলো ইরান ও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এতে না জড়াতে রাজি করাতে পারবে। তারা ইসরায়েলকে বলতে পারে, তার বর্তমান কার্যকলাপ সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথকে একঘরে হওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে, আর স্থিতিশীলতা নয়, বরং স্থায়ী সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা ইরানকে বোঝাতে পারে, পরমাণু কর্মসূচি, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও প্রক্সি কার্যক্রম আর সহ্য করা হবে না—এবং অঞ্চলভুক্তি চাইলে, তাদের আচরণ পরিবর্তন করতেই হবে।
একটি শান্তিচুক্তি অর্জন অত্যন্ত কঠিন কাজ। ইরান ও ইসরায়েল তাদের অবস্থানে দৃঢ়ভাবে অনড়। এই সংঘাত প্রশমনের বদলে আরও জোরালো রূপ নিচ্ছে। তবুও বিশ্ব এক জরুরি ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই উদ্যোগে ইরান ও ইসরায়েলের অংশগ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও প্রয়োজন। তবে এই নেতৃত্ব, বা অন্তত সূচনা, আসতে হবে—এই অঞ্চল থেকেই।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
৬ ঘণ্টা আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
১ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
১ দিন আগে
জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত...
২ দিন আগেআবদুল বাছেদ, ঢাকা
তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ। এই অবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নৌবহর ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজ প্রায় প্রতিদিন মুখোমুখি অবস্থায় থাকে। গত মাসে একবার দুটি চীনা যুদ্ধজাহাজ মাত্র ১৫০ মিটারের দূরত্বে চলে এসেছিল।
গত ২ আগস্ট তাইওয়ানে ‘জিরো ডে অ্যাটাক’ নামে একটি ডিস্টোপিয়ান টেভি সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন শুরু করতে পারে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ষড়যন্ত্র, গণমাধ্যমে অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রভাব খাটানো—সবকিছুই এতে বিশ্লেষণধর্মীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একটি কল্পকাহিনি হলেও সাম্প্রতিক বাস্তব ঘটনাগুলোর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
১০ সিজনের বহুল প্রচারিত ও প্রশংসিত এই সিরিজের নির্মাতা চেং হসিন-মেই। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন টাইমকে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় গেলে আপনি সত্যিই সেই উত্তেজনা টের পাবেন। চীন কোনো না কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েলিংটন কু মনে করছেন, চীনা সেনাবাহিনী (পিএলএ) যেকোনো সামরিক মহড়াকে সত্যিকারের আগ্রাসনে পরিণত করতে পারে। এমন সম্ভাবনা এখন উড়িয়ে দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই হুমকি আর চ্যালেঞ্জই এখন তাইওয়ানের সামনে।
চীন বলছে, এটি চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময়, আর তাইওয়ান সরকারের ভাষায়, আসন্ন আগ্রাসনের সংকেত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই চীন তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বৈদেশিক মনোযোগের বিভ্রান্তি দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হয়তো তার আগেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। তাইওয়ান ইস্যুতে ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে আমেরিকা তাইওয়ানকে একা ছাড়বে না।
এখন ভাবুন, চীন তাইওয়ানে আক্রমণ চালিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপ দেশটির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পেন্টাগনের প্রচলিত যুদ্ধনীতি মেনে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী হাজার হাজার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে চীনের জাহাজ, কমান্ড সেন্টার ও লজিস্টিক ঘাঁটির দিকে। প্রথম দফার হামলাতেই ৩৩ হাজারেরও বেশি নিখুঁত লক্ষ্যভেদী অস্ত্র সাড়ে ৮ হাজারের বেশি টার্গেটে আঘাত হেনেছে। সাইবার হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চীনের সামরিক নেটওয়ার্ক, ভেঙে পড়ছে নেতৃত্ব। ফলে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে বেইজিং হয় পিছু হটবে, নয়তো নিরুপায় পরাজয় মেনে নেবে।
কিন্তু যদি মনে করেন, এমনটি হবেই হবে, তাহলে ভুল করছেন। কারণ চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংসের পর যখন একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়বে বেইজিং, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ। তখন দেশটি ভিন্নপথে হাঁটতে পারে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভার্টিক্যাল এস্কেলেশন বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের। চীন হয়তো মার্কিন সমুদ্রসীমায় একটি পারমাণবিক পরীক্ষামূলক হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিতে যে এখানেই থেমে যাও। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াশিংটন কি এমন পদক্ষেপকে পারমাণবিক হামলার পূর্বঘোষণা বলে ধরে নেবে না?
এই বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে শুধু চীনের পারমাণবিক নীতির কারণে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব যুদ্ধধারণার ফলেও। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার চীনের নেই। তাই বেইজিং হয়তো এখনো মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র আগে পারমাণবিক হামলা চালালে তারা পাল্টা আঘাত করার মতো সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সক্রিয় পারমাণবিক বোমা ছিল, চীনের সেখানে ছিল মাত্র ৬০০। এই পশ্চাৎপদতার কারণে চীনা নেতারা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বড় পরাজয় ঠেকাতে।
আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, চীনের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দ্বৈত-ক্ষমতাসম্পন্ন; অর্থাৎ একই লঞ্চার থেকে কখনো প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র, আবার কখনো পারমাণবিক ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব লঞ্চারে হামলা চালায়, বেইজিং সেটাকে তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তির ওপর আঘাত হিসেবে দেখতে পারে। এটি পাল্টা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে।
বিশেষ করে ডিএফ-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো এই জটিলতা বাড়ায়। একই ঘাঁটিতে প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড থাকে এবং প্রশিক্ষণে সৈন্যরা প্রথমে প্রচলিত হামলার মহড়া দেয়, পরে সেটি পারমাণবিক ওয়ারহেডে পরিবর্তন করে। যুক্তরাষ্ট্র এসব ঘাঁটিতে আঘাত হানলে চীন সেটিকে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে পারে। একেই বলে এনট্যাঙ্গলমেন্ট প্রবলেম বা এক হামলার দ্বৈত ব্যাখ্যা, যা পারমাণবিক সংঘাত ডেকে আনতে পারে।
এখানে মার্কিন সামরিক পরিকল্পকেরা পড়ে যান এক দোটানায়। তাঁরা যত দ্রুত ও নিশ্চিত বিজয়ের চিন্তায় যুদ্ধের কৌশল সাজাবেন, তত বেশি পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকিতে পড়ে যান। অথচ বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালানোর মতো সরঞ্জাম মজুত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনায় যে ধরনের যুদ্ধনীতি প্রাধান্য পায়, সেখানে চীনের কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন, কম্পিউটার, ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেইলেন্স ও রিকনাইসেন্স (সি৪ আইএসআর) ব্যবস্থা লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার আক্রমণ চালানোর কথা বলা হয়। বাস্তবে তা হয়তো যুদ্ধকে সংক্ষিপ্ত করার বদলে আরও দীর্ঘ ও ধ্বংসাত্মক করে তুলতে পারে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সামরিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী উপগ্রহ এবং সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী কমান্ড সদর দপ্তর পর্যন্ত সবকিছু।
যদি কমান্ডাররা নিহত হন এবং কমান্ড ব্যবস্থা ধ্বংসও হয়ে যায়, তবুও যুদ্ধ পরিকল্পনাবিদদের মনে করা উচিত নয় যে এতে দ্রুত বিজয় আসবে। ইতিহাস দেখিয়েছে, কোনো বাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই বিপুলসংখ্যক রুশ জেনারেল নিহত হন, তবুও তাদের বাহিনী আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসলামিক স্টেটের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, নেতৃত্ব ধ্বংস করলেও তাঁরা কার্যকর সামরিক শক্তি হিসেবে টিকে থেকেছে, যতক্ষণ না তাদের বাহিনীকে ধীরে ধীরে, দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর সামরিক অভিযানে পুরোপুরি দমন করা হয়েছে।
মার্কিন যুদ্ধনীতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক আঘাত হানার ক্ষেপণাস্ত্র তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, আর ভূমি থেকে দূরপাল্লার হামলার অস্ত্র মজুত ফুরোবে ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। এমনকি যদি তাইওয়ান, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে চীনকে ঠেকাতেও পারে, তবু মূল্যটা ভয়াবহ হবে। ডজন-ডজন জাহাজ ডুবে যাবে, শত শত বিমান ধ্বংস হবে, আর হাজার হাজার সেনা নিহত হবে।
পেন্টাগন সম্প্রতি দ্রুতগতিতে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের দূরপাল্লার অস্ত্রের উৎপাদন দ্বিগুণ বা এমনকি চারগুণ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার জাহাজবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু এতে সমস্যা আরও বাড়ছে, কারণ এই ‘দূরপাল্লার আক্রমণনির্ভর’ যুদ্ধের ধারণাই আসলে পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে, কমাচ্ছে না।
এ বিপদের ব্যাপ্তি শুধু প্রশান্ত মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ নয়। ন্যাটোর অনেক পরিকল্পনাও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত। ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তারাও বুঝতে পারছেন না যে এসব ‘অপারেশনাল কনসেপ্ট’-এর মধ্যে কতটা বিপজ্জনক উত্তেজনা লুকিয়ে আছে।
কিছু কৌশলবিদ বলেন, পারমাণবিক উত্তেজনার ভয় পেলে যুদ্ধই করা যাবে না; এমন মনোভাবই এখনকার বাস্তবতা। কিন্তু যদি সত্যিই যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানতে হবে, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, কতটা ঝুঁকি নেওয়া যাবে, আর সেই ঝুঁকি কমানোর উপায় কী।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাইবার শক্তি ও ভবিষ্যৎ সংঘাতবিষয়ক সহযোগী ফেলো ফ্রান্জ-স্টেফান গ্যাডি প্রস্তাব করেন, ‘স্মার্ট অ্যাট্রিশনাল অ্যাপ্রোচ’ একটি বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষয়যুদ্ধনীতি। এতে চীনের কমান্ড সেন্টার বা পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা না করে তাদের প্রচলিত বাহিনীকে রুখে দেওয়া হবে। এর মানে হলো, যুদ্ধ হবে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর, কিন্তু পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি কমবে।
এই কৌশলে জোর দেওয়া হবে স্বল্পপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে। বেশি টর্পেডো, ড্রোন এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায়। প্রযুক্তিনির্ভর দ্রুত বিজয়ের মোহ ত্যাগ করে, বাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
কিন্তু সমস্যাটা রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্মতির অভাব। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কি সত্যিই হাজারো সেনার প্রাণ এবং অর্ধেক নৌবাহিনী হারানোর বিনিময়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষা করতে রাজি?
অবশেষে প্রশ্ন একটাই, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি ত্যাগ করতে প্রস্তুত? সামরিক ইতিহাসবিদ মাইকেল হাওয়ার্ড যেমন বলেছিলেন, পশ্চিম এখনো শান্তির কুয়াশার ভেতর দিয়ে নৌযাত্রা করছে। শেষ মহাযুদ্ধ থেকে সময় যতই দূরে সরে যাচ্ছে, ভয়াবহ ভুলের সম্ভাবনাও ততই বাড়ছে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। শিল্পক্ষমতা বাড়াতে হবে, পারমাণবিক ঝুঁকি কমানোর কৌশল নিতে হবে এবং জনগণকে জানাতে হবে, এই যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য কী হবে। প্রযুক্তি দিয়ে দ্রুত জয়ের ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভেসে চললে, আগামীতে ‘বৃহৎ দুই শক্তির যুদ্ধ’ হবে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ শিক্ষা। যেমনটি বলেছিলেন এথেন্সের কৌশলবিদ থুসিডিডিস, পরবর্তী মহাশক্তির যুদ্ধ হবে এক কঠোর শিক্ষক।
তথ্যসূত্র: টাইম ও ফরেন পলিসি

তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ। এই অবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নৌবহর ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজ প্রায় প্রতিদিন মুখোমুখি অবস্থায় থাকে। গত মাসে একবার দুটি চীনা যুদ্ধজাহাজ মাত্র ১৫০ মিটারের দূরত্বে চলে এসেছিল।
গত ২ আগস্ট তাইওয়ানে ‘জিরো ডে অ্যাটাক’ নামে একটি ডিস্টোপিয়ান টেভি সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে চীন তাইওয়ানে আগ্রাসন শুরু করতে পারে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ষড়যন্ত্র, গণমাধ্যমে অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রভাব খাটানো—সবকিছুই এতে বিশ্লেষণধর্মীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একটি কল্পকাহিনি হলেও সাম্প্রতিক বাস্তব ঘটনাগুলোর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
১০ সিজনের বহুল প্রচারিত ও প্রশংসিত এই সিরিজের নির্মাতা চেং হসিন-মেই। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন টাইমকে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় গেলে আপনি সত্যিই সেই উত্তেজনা টের পাবেন। চীন কোনো না কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েলিংটন কু মনে করছেন, চীনা সেনাবাহিনী (পিএলএ) যেকোনো সামরিক মহড়াকে সত্যিকারের আগ্রাসনে পরিণত করতে পারে। এমন সম্ভাবনা এখন উড়িয়ে দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই হুমকি আর চ্যালেঞ্জই এখন তাইওয়ানের সামনে।
চীন বলছে, এটি চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময়, আর তাইওয়ান সরকারের ভাষায়, আসন্ন আগ্রাসনের সংকেত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই চীন তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বৈদেশিক মনোযোগের বিভ্রান্তি দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হয়তো তার আগেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। তাইওয়ান ইস্যুতে ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে আমেরিকা তাইওয়ানকে একা ছাড়বে না।
এখন ভাবুন, চীন তাইওয়ানে আক্রমণ চালিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপ দেশটির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পেন্টাগনের প্রচলিত যুদ্ধনীতি মেনে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী হাজার হাজার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে চীনের জাহাজ, কমান্ড সেন্টার ও লজিস্টিক ঘাঁটির দিকে। প্রথম দফার হামলাতেই ৩৩ হাজারেরও বেশি নিখুঁত লক্ষ্যভেদী অস্ত্র সাড়ে ৮ হাজারের বেশি টার্গেটে আঘাত হেনেছে। সাইবার হামলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চীনের সামরিক নেটওয়ার্ক, ভেঙে পড়ছে নেতৃত্ব। ফলে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে বেইজিং হয় পিছু হটবে, নয়তো নিরুপায় পরাজয় মেনে নেবে।
কিন্তু যদি মনে করেন, এমনটি হবেই হবে, তাহলে ভুল করছেন। কারণ চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংসের পর যখন একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়বে বেইজিং, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ। তখন দেশটি ভিন্নপথে হাঁটতে পারে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভার্টিক্যাল এস্কেলেশন বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের। চীন হয়তো মার্কিন সমুদ্রসীমায় একটি পারমাণবিক পরীক্ষামূলক হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিতে যে এখানেই থেমে যাও। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াশিংটন কি এমন পদক্ষেপকে পারমাণবিক হামলার পূর্বঘোষণা বলে ধরে নেবে না?
এই বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে শুধু চীনের পারমাণবিক নীতির কারণে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব যুদ্ধধারণার ফলেও। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার চীনের নেই। তাই বেইজিং হয়তো এখনো মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র আগে পারমাণবিক হামলা চালালে তারা পাল্টা আঘাত করার মতো সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ সক্রিয় পারমাণবিক বোমা ছিল, চীনের সেখানে ছিল মাত্র ৬০০। এই পশ্চাৎপদতার কারণে চীনা নেতারা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বড় পরাজয় ঠেকাতে।
আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, চীনের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দ্বৈত-ক্ষমতাসম্পন্ন; অর্থাৎ একই লঞ্চার থেকে কখনো প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র, আবার কখনো পারমাণবিক ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব লঞ্চারে হামলা চালায়, বেইজিং সেটাকে তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তির ওপর আঘাত হিসেবে দেখতে পারে। এটি পাল্টা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে।
বিশেষ করে ডিএফ-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো এই জটিলতা বাড়ায়। একই ঘাঁটিতে প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড থাকে এবং প্রশিক্ষণে সৈন্যরা প্রথমে প্রচলিত হামলার মহড়া দেয়, পরে সেটি পারমাণবিক ওয়ারহেডে পরিবর্তন করে। যুক্তরাষ্ট্র এসব ঘাঁটিতে আঘাত হানলে চীন সেটিকে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে পারে। একেই বলে এনট্যাঙ্গলমেন্ট প্রবলেম বা এক হামলার দ্বৈত ব্যাখ্যা, যা পারমাণবিক সংঘাত ডেকে আনতে পারে।
এখানে মার্কিন সামরিক পরিকল্পকেরা পড়ে যান এক দোটানায়। তাঁরা যত দ্রুত ও নিশ্চিত বিজয়ের চিন্তায় যুদ্ধের কৌশল সাজাবেন, তত বেশি পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকিতে পড়ে যান। অথচ বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালানোর মতো সরঞ্জাম মজুত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনায় যে ধরনের যুদ্ধনীতি প্রাধান্য পায়, সেখানে চীনের কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন, কম্পিউটার, ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেইলেন্স ও রিকনাইসেন্স (সি৪ আইএসআর) ব্যবস্থা লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার আক্রমণ চালানোর কথা বলা হয়। বাস্তবে তা হয়তো যুদ্ধকে সংক্ষিপ্ত করার বদলে আরও দীর্ঘ ও ধ্বংসাত্মক করে তুলতে পারে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সামরিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী উপগ্রহ এবং সামরিক অভিযান পরিচালনাকারী কমান্ড সদর দপ্তর পর্যন্ত সবকিছু।
যদি কমান্ডাররা নিহত হন এবং কমান্ড ব্যবস্থা ধ্বংসও হয়ে যায়, তবুও যুদ্ধ পরিকল্পনাবিদদের মনে করা উচিত নয় যে এতে দ্রুত বিজয় আসবে। ইতিহাস দেখিয়েছে, কোনো বাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই বিপুলসংখ্যক রুশ জেনারেল নিহত হন, তবুও তাদের বাহিনী আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইসলামিক স্টেটের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, নেতৃত্ব ধ্বংস করলেও তাঁরা কার্যকর সামরিক শক্তি হিসেবে টিকে থেকেছে, যতক্ষণ না তাদের বাহিনীকে ধীরে ধীরে, দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর সামরিক অভিযানে পুরোপুরি দমন করা হয়েছে।
মার্কিন যুদ্ধনীতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক আঘাত হানার ক্ষেপণাস্ত্র তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, আর ভূমি থেকে দূরপাল্লার হামলার অস্ত্র মজুত ফুরোবে ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। এমনকি যদি তাইওয়ান, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে চীনকে ঠেকাতেও পারে, তবু মূল্যটা ভয়াবহ হবে। ডজন-ডজন জাহাজ ডুবে যাবে, শত শত বিমান ধ্বংস হবে, আর হাজার হাজার সেনা নিহত হবে।
পেন্টাগন সম্প্রতি দ্রুতগতিতে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের দূরপাল্লার অস্ত্রের উৎপাদন দ্বিগুণ বা এমনকি চারগুণ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার জাহাজবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু এতে সমস্যা আরও বাড়ছে, কারণ এই ‘দূরপাল্লার আক্রমণনির্ভর’ যুদ্ধের ধারণাই আসলে পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে, কমাচ্ছে না।
এ বিপদের ব্যাপ্তি শুধু প্রশান্ত মহাসাগরেই সীমাবদ্ধ নয়। ন্যাটোর অনেক পরিকল্পনাও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত। ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তারাও বুঝতে পারছেন না যে এসব ‘অপারেশনাল কনসেপ্ট’-এর মধ্যে কতটা বিপজ্জনক উত্তেজনা লুকিয়ে আছে।
কিছু কৌশলবিদ বলেন, পারমাণবিক উত্তেজনার ভয় পেলে যুদ্ধই করা যাবে না; এমন মনোভাবই এখনকার বাস্তবতা। কিন্তু যদি সত্যিই যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানতে হবে, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, কতটা ঝুঁকি নেওয়া যাবে, আর সেই ঝুঁকি কমানোর উপায় কী।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাইবার শক্তি ও ভবিষ্যৎ সংঘাতবিষয়ক সহযোগী ফেলো ফ্রান্জ-স্টেফান গ্যাডি প্রস্তাব করেন, ‘স্মার্ট অ্যাট্রিশনাল অ্যাপ্রোচ’ একটি বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষয়যুদ্ধনীতি। এতে চীনের কমান্ড সেন্টার বা পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা না করে তাদের প্রচলিত বাহিনীকে রুখে দেওয়া হবে। এর মানে হলো, যুদ্ধ হবে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর, কিন্তু পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি কমবে।
এই কৌশলে জোর দেওয়া হবে স্বল্পপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে। বেশি টর্পেডো, ড্রোন এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায়। প্রযুক্তিনির্ভর দ্রুত বিজয়ের মোহ ত্যাগ করে, বাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।
কিন্তু সমস্যাটা রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্মতির অভাব। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কি সত্যিই হাজারো সেনার প্রাণ এবং অর্ধেক নৌবাহিনী হারানোর বিনিময়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষা করতে রাজি?
অবশেষে প্রশ্ন একটাই, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি ত্যাগ করতে প্রস্তুত? সামরিক ইতিহাসবিদ মাইকেল হাওয়ার্ড যেমন বলেছিলেন, পশ্চিম এখনো শান্তির কুয়াশার ভেতর দিয়ে নৌযাত্রা করছে। শেষ মহাযুদ্ধ থেকে সময় যতই দূরে সরে যাচ্ছে, ভয়াবহ ভুলের সম্ভাবনাও ততই বাড়ছে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। শিল্পক্ষমতা বাড়াতে হবে, পারমাণবিক ঝুঁকি কমানোর কৌশল নিতে হবে এবং জনগণকে জানাতে হবে, এই যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য কী হবে। প্রযুক্তি দিয়ে দ্রুত জয়ের ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভেসে চললে, আগামীতে ‘বৃহৎ দুই শক্তির যুদ্ধ’ হবে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ শিক্ষা। যেমনটি বলেছিলেন এথেন্সের কৌশলবিদ থুসিডিডিস, পরবর্তী মহাশক্তির যুদ্ধ হবে এক কঠোর শিক্ষক।
তথ্যসূত্র: টাইম ও ফরেন পলিসি

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন...
২০ জুন ২০২৫
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
১ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
১ দিন আগে
জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য বহুপক্ষীয় কূটনীতির সূক্ষ্ম শিল্প নয়, বরং আরেকটি ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বলে জানিয়েছে পলিটিকো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে ‘কুয়ালালামপুর চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, সেটিই সম্ভবত ট্রাম্পের আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার একমাত্র কারণ।
ট্রাম্প এরই মধ্যে তাঁর ‘বিশ্বজুড়ে বন্ধ করা’ যুদ্ধের তালিকায় যুক্ত করেছেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতও, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জুলাই মাসে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে সহায়তা করেছিল। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস, ইসরায়েল-ইরান, পাকিস্তান-ভারত, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান এবং প্রথম মেয়াদে মিসর-ইথিওপিয়া ও সার্বিয়া-কসোভোর সংঘাতও মিটমাট করেছেন।
তবে এসবের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তি হলেও অনেক ক্ষেত্রে সংঘাত এখনো চলমান বা পুনরায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার পরিস্থিতিও রয়েছে। তবু ট্রাম্প এই ঘটনাগুলোর সাফল্য ও অতিরঞ্জিত দাবি মিলিয়ে নিজেকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য জোর প্রচারও চালান, যদিও চলতি মাসের শুরুতে সেই পুরস্কার ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো পেয়েছেন।
তবু এখনই নিরাশ হচ্ছেন না ট্রাম্প ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কম্বোডিয়াসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা এরই মধ্যে আগামী বছরের পুরস্কারের জন্য আবার ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এসব ‘চাটুকার কূটনীতির’ নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত।
তবে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি প্রকৃতপক্ষে অর্জিত হবে, নাকি ট্রাম্পের কথিত সাফল্য হয়ে থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল প্রশ্ন হলো, ফটোসেশনের পর ট্রাম্প কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন।
জাপানের ওসাকার কানসাই গাইদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এস. কোগান টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘এটিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কি এই ইস্যু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে? ট্রাম্প চুক্তি সম্পাদনের পর কি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখবে, নাকি অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে?’
মার্ক এস. কোগান আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই অমীমাংসিত তুলনামূলক ছোট সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই কতটা মাথা ঘামায়? এটা কি অন্য বড় সংঘাতগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ? না, অবশ্যই না। তবে কি এটা গভীর ও উত্তপ্ত? হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এর প্রকৃত প্রভাব কতটা? খুবই সামান্য।’
কোগানের মতে, ‘চুক্তির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে ‘তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ’-এর ওপর। উভয় দেশ চুক্তির শর্ত মানলেই এটি সফল হতে পারে। তবে দুই পক্ষই পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাত্ত্বিকভাবে এই পর্যবেক্ষণ কার্যকরভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রাখে, তবে অনেকে এ বিষয়ে সংশয়ী।’
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক ও থাই গবেষক পাভিন চাচাভালপংপুন টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘ট্রাম্পের এই অঞ্চলে শান্তি উদ্যোগের অংশগ্রহণটা পুরোপুরি লেনদেননির্ভর মনে হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষ হলে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাহ্যিক চাপ সম্ভবত মিলিয়ে যাবে।’
আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বৃহস্পতিবার বলেন, চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলো এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কম্বোডিয়া প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে ‘একটি বিজয় উপহার’ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ১৫ অক্টোবর শাসক দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা যেকোনো সময় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।’
গবেষক পাভিন আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের নতুন সরকার সম্প্রতি সংঘাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে আগের প্রশাসনকে অপসারণ করেছে। দেশটি এই প্রক্রিয়ায় সাবধানী ভূমিকা নিচ্ছে, স্থিতিশীলতাকে স্বাগত জানাচ্ছে, তবে আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প কম্বোডিয়ার পক্ষে ঝুঁকতে পারেন।’
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল গত রোববার বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা অন্য কোনো জাতির দ্বারা শোষিত হতে দেব না। আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
পাভিনের মতে, ট্রাম্প এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা করতে পারেন। তবে তাঁর বিশ্বাস, এই চুক্তি ‘স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা’ আনতে পারে, কিন্তু ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে ভঙ্গুর’ হিসেবেই রয়ে যাবে।
কম্বোডিয়া চুক্তিতে আগ্রহী হলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা কত দূর যেতে রাজি। ১৯ অক্টোবর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন মানেত লিখেছেন, চুক্তিটি মূলত সংঘাতের অবসান এবং দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির শর্ত ও আচরণবিধি নির্ধারণের মাধ্যম হবে।
তবে তিনি একই সঙ্গে পরিষ্কার করে বলেন, ‘না জুলাই মাসের যুদ্ধবিরতি, না আসন্ন চুক্তি—কোনোটিই কোনো পক্ষের সার্বভৌম ভূখণ্ডের ওপর আইনি অধিকার ত্যাগের প্রতিশ্রুতি নয়।’
থাই গবেষক পাভিনের মতে, এই চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়; কারণ, এটি মূল ভূখণ্ড এবং ঐতিহাসিক মানচিত্রসংক্রান্ত সীমান্তবিরোধের সমাধান করছে না, বরং সেই সংঘাতকে সাময়িকভাবে স্থগিত করছে মাত্র।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য বহুপক্ষীয় কূটনীতির সূক্ষ্ম শিল্প নয়, বরং আরেকটি ‘শান্তিচুক্তির’ কৃতিত্ব বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বলে জানিয়েছে পলিটিকো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে ‘কুয়ালালামপুর চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, সেটিই সম্ভবত ট্রাম্পের আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার একমাত্র কারণ।
ট্রাম্প এরই মধ্যে তাঁর ‘বিশ্বজুড়ে বন্ধ করা’ যুদ্ধের তালিকায় যুক্ত করেছেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতও, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র জুলাই মাসে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে সহায়তা করেছিল। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস, ইসরায়েল-ইরান, পাকিস্তান-ভারত, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান এবং প্রথম মেয়াদে মিসর-ইথিওপিয়া ও সার্বিয়া-কসোভোর সংঘাতও মিটমাট করেছেন।
তবে এসবের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তি হলেও অনেক ক্ষেত্রে সংঘাত এখনো চলমান বা পুনরায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার পরিস্থিতিও রয়েছে। তবু ট্রাম্প এই ঘটনাগুলোর সাফল্য ও অতিরঞ্জিত দাবি মিলিয়ে নিজেকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য জোর প্রচারও চালান, যদিও চলতি মাসের শুরুতে সেই পুরস্কার ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো পেয়েছেন।
তবু এখনই নিরাশ হচ্ছেন না ট্রাম্প ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কম্বোডিয়াসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা এরই মধ্যে আগামী বছরের পুরস্কারের জন্য আবার ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এসব ‘চাটুকার কূটনীতির’ নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত।
তবে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি প্রকৃতপক্ষে অর্জিত হবে, নাকি ট্রাম্পের কথিত সাফল্য হয়ে থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল প্রশ্ন হলো, ফটোসেশনের পর ট্রাম্প কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন।
জাপানের ওসাকার কানসাই গাইদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক এস. কোগান টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘এটিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কি এই ইস্যু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে? ট্রাম্প চুক্তি সম্পাদনের পর কি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখবে, নাকি অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে?’
মার্ক এস. কোগান আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই অমীমাংসিত তুলনামূলক ছোট সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই কতটা মাথা ঘামায়? এটা কি অন্য বড় সংঘাতগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ? না, অবশ্যই না। তবে কি এটা গভীর ও উত্তপ্ত? হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এর প্রকৃত প্রভাব কতটা? খুবই সামান্য।’
কোগানের মতে, ‘চুক্তির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে ‘তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ’-এর ওপর। উভয় দেশ চুক্তির শর্ত মানলেই এটি সফল হতে পারে। তবে দুই পক্ষই পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র তাত্ত্বিকভাবে এই পর্যবেক্ষণ কার্যকরভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রাখে, তবে অনেকে এ বিষয়ে সংশয়ী।’
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক ও থাই গবেষক পাভিন চাচাভালপংপুন টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘ট্রাম্পের এই অঞ্চলে শান্তি উদ্যোগের অংশগ্রহণটা পুরোপুরি লেনদেননির্ভর মনে হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান শেষ হলে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাহ্যিক চাপ সম্ভবত মিলিয়ে যাবে।’
আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বৃহস্পতিবার বলেন, চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলো এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কম্বোডিয়া প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে ‘একটি বিজয় উপহার’ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। ১৫ অক্টোবর শাসক দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা যেকোনো সময় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।’
গবেষক পাভিন আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের নতুন সরকার সম্প্রতি সংঘাতের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে আগের প্রশাসনকে অপসারণ করেছে। দেশটি এই প্রক্রিয়ায় সাবধানী ভূমিকা নিচ্ছে, স্থিতিশীলতাকে স্বাগত জানাচ্ছে, তবে আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প কম্বোডিয়ার পক্ষে ঝুঁকতে পারেন।’
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল গত রোববার বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা অন্য কোনো জাতির দ্বারা শোষিত হতে দেব না। আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
পাভিনের মতে, ট্রাম্প এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা করতে পারেন। তবে তাঁর বিশ্বাস, এই চুক্তি ‘স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা’ আনতে পারে, কিন্তু ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে ভঙ্গুর’ হিসেবেই রয়ে যাবে।
কম্বোডিয়া চুক্তিতে আগ্রহী হলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা কত দূর যেতে রাজি। ১৯ অক্টোবর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন মানেত লিখেছেন, চুক্তিটি মূলত সংঘাতের অবসান এবং দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির শর্ত ও আচরণবিধি নির্ধারণের মাধ্যম হবে।
তবে তিনি একই সঙ্গে পরিষ্কার করে বলেন, ‘না জুলাই মাসের যুদ্ধবিরতি, না আসন্ন চুক্তি—কোনোটিই কোনো পক্ষের সার্বভৌম ভূখণ্ডের ওপর আইনি অধিকার ত্যাগের প্রতিশ্রুতি নয়।’
থাই গবেষক পাভিনের মতে, এই চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়; কারণ, এটি মূল ভূখণ্ড এবং ঐতিহাসিক মানচিত্রসংক্রান্ত সীমান্তবিরোধের সমাধান করছে না, বরং সেই সংঘাতকে সাময়িকভাবে স্থগিত করছে মাত্র।

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন...
২০ জুন ২০২৫তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
৬ ঘণ্টা আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
১ দিন আগে
জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, যুদ্ধ এখন যে অবস্থায় রয়েছে, সেখান থেকেই ভবিষ্যতের আলোচনা শুরু করা উচিত। অর্থাৎ ‘বর্তমান সীমান্তরেখায়’ তিনি দুই দেশকে নতুন করে শুরুর কথা বলছেন। তবে এই প্রস্তাবে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা সমর্থন জানালেও রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে।
মজার বিষয়, এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে ট্রাম্পের কি কোনো ফায়দা আছে।
গত রোববার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই থামানো উচিত। বাকিটা পরে আলোচনা করা যেতে পারে।
এ সময় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন যে অবস্থা, এটা সেভাবেই রেখে দেওয়া হোক। তুমি এটা নাও, আমরা এটা নিই—এভাবে বললে হবে না। রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় ৭৮ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। এই অবস্থায় যুদ্ধ থামানোই সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে।’
যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়—তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পুরো দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দিতে বলছেন কি না, ট্রাম্প জবাব দেন, ‘না। শুধু এখন যেভাবে ভাগ হয়ে আছে, সেভাবেই থাকুক।’
এখন যুদ্ধরেখা কোথায় আছে? প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইতিমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া খারকিভ প্রদেশের একটি অংশও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক মিলে যে অঞ্চলটি ‘দনবাস’ নামে পরিচিত, সেখানেই সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে।
রাশিয়া বর্তমানে লুহানস্কের সম্পূর্ণ অংশ ও দোনেৎস্কের বেশির ভাগ অঞ্চল, বিশেষত স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোর্স্কের আশপাশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া খেরসনের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং জাপোরিঝিয়ার বৃহৎ অংশও রুশ সেনাদের দখলে।
জাপোরিঝিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, যেখানে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও বিমান তৈরির কারখানা রয়েছে। এখানেই ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবস্থিত।
তবে অবাক করার বিষয়, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় নেতারা ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পের প্রস্তাবকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছি। বর্তমান যুদ্ধরেখাই ভবিষ্যৎ আলোচনার সূচনাবিন্দু হতে পারে।’
এর আগে ইউক্রেন বারবার বলেছে, তারা সব দখল করা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে চায়। কিন্তু ট্রাম্প কখনো ইউক্রেনকে জমি ছেড়ে দিতে বলেছেন, আবার কখনো বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ জিততে পারে—তাঁর এই অবস্থান বারবার বদলেছে।
গত আগস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, এই যুদ্ধে উভয় পক্ষকেই কিছুটা জমি ছাড় দিতে হবে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তিনি উল্টো মন্তব্য করেন—ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হতে পারে এবং এমনকি ২০১৪ সালে হারানো ক্রিমিয়াসহ পুরো দেশ পুনর্দখল করতে সক্ষম।
অন্যদিকে রাশিয়া ট্রাম্পের এই প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কোনো ফল দেবে না।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রাশিয়ার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মস্কো তার দাবিতে অনড়—যুদ্ধ শেষ করতে হলে, দখল করা সমস্ত ভূমি তাদের দিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের বলে দাবি করা পূর্বাঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছে, যেখানে শুধু দখল করা অংশ নয়, রাশিয়া পুরো দনবাসের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে।
এদিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প এ বৈঠক বাতিল করেছেন। এরপর গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনে হলো এই বৈঠক এখন ফলপ্রসূ হবে না, তাই বাতিল করেছি। তবে ভবিষ্যতে আবার বসা হবে।’
এখন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে দেখা যায়, যুদ্ধ বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে রাশিয়া। প্রশ্ন হতে পারে, নিজেদের ক্ষতি জেনেও কেন ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে ইউরোপ-ইউক্রেন। কারণ, এ মুহূর্তে তাদের কাছে রাশিয়াকে মোকাবিলা করার মতো কোনো অস্ত্র নেই। সর্বশেষ, হোয়াইট হাউসের বৈঠক থেকে আশা করা হয়েছিল, এবার জেলেনস্কি হয়তো টমাহক নিয়ে ফিরবেন। কিন্তু তিনি ফিরেছেন খালি হাতে। এদিকে ইউরোপে আটকে থাকা রুশ অর্থ থেকে ইউক্রেনকে লোন দেওয়ার যে প্রস্তাব উঠেছে, তাতে সবাই একমত হতে পারেনি। ফলে সেটাও আটকে আছে। অর্থাৎ যুদ্ধ চালানোর অর্থ ও রসদ, দুটোরই সংকট আছে ইউক্রেনের। তাই এ মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ করাই তাদের কাছে সবচেয়ে ভালো সমাধান।
সবশেষে আসে ট্রাম্পের কথা। এই যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প বলতে পারবেন, ‘আমি আরও একটি যুদ্ধ থামিয়েছি। এবার আমাকে নোবেল না দিয়ে যাবে কোথায়!’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইউরোপের দূরত্ব ঘুচতে পারে।
এদিকে এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কেমন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে ওয়াশিংটনের এমন ঘোষণায় চির ধরেছে ট্রাম্প-পুতিনের বন্ধুত্বে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে টিকে যাবে তাঁদের বন্ধুত্ব।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা

ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, যুদ্ধ এখন যে অবস্থায় রয়েছে, সেখান থেকেই ভবিষ্যতের আলোচনা শুরু করা উচিত। অর্থাৎ ‘বর্তমান সীমান্তরেখায়’ তিনি দুই দেশকে নতুন করে শুরুর কথা বলছেন। তবে এই প্রস্তাবে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা সমর্থন জানালেও রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে।
মজার বিষয়, এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে ট্রাম্পের কি কোনো ফায়দা আছে।
গত রোববার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই থামানো উচিত। বাকিটা পরে আলোচনা করা যেতে পারে।
এ সময় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন যে অবস্থা, এটা সেভাবেই রেখে দেওয়া হোক। তুমি এটা নাও, আমরা এটা নিই—এভাবে বললে হবে না। রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় ৭৮ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। এই অবস্থায় যুদ্ধ থামানোই সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে।’
যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়—তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পুরো দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দিতে বলছেন কি না, ট্রাম্প জবাব দেন, ‘না। শুধু এখন যেভাবে ভাগ হয়ে আছে, সেভাবেই থাকুক।’
এখন যুদ্ধরেখা কোথায় আছে? প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইতিমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া খারকিভ প্রদেশের একটি অংশও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক মিলে যে অঞ্চলটি ‘দনবাস’ নামে পরিচিত, সেখানেই সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে।
রাশিয়া বর্তমানে লুহানস্কের সম্পূর্ণ অংশ ও দোনেৎস্কের বেশির ভাগ অঞ্চল, বিশেষত স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোর্স্কের আশপাশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া খেরসনের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং জাপোরিঝিয়ার বৃহৎ অংশও রুশ সেনাদের দখলে।
জাপোরিঝিয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, যেখানে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও বিমান তৈরির কারখানা রয়েছে। এখানেই ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবস্থিত।
তবে অবাক করার বিষয়, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় নেতারা ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পের প্রস্তাবকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছি। বর্তমান যুদ্ধরেখাই ভবিষ্যৎ আলোচনার সূচনাবিন্দু হতে পারে।’
এর আগে ইউক্রেন বারবার বলেছে, তারা সব দখল করা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে চায়। কিন্তু ট্রাম্প কখনো ইউক্রেনকে জমি ছেড়ে দিতে বলেছেন, আবার কখনো বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ জিততে পারে—তাঁর এই অবস্থান বারবার বদলেছে।
গত আগস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, এই যুদ্ধে উভয় পক্ষকেই কিছুটা জমি ছাড় দিতে হবে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তিনি উল্টো মন্তব্য করেন—ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হতে পারে এবং এমনকি ২০১৪ সালে হারানো ক্রিমিয়াসহ পুরো দেশ পুনর্দখল করতে সক্ষম।
অন্যদিকে রাশিয়া ট্রাম্পের এই প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কোনো ফল দেবে না।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রাশিয়ার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মস্কো তার দাবিতে অনড়—যুদ্ধ শেষ করতে হলে, দখল করা সমস্ত ভূমি তাদের দিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের বলে দাবি করা পূর্বাঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছে, যেখানে শুধু দখল করা অংশ নয়, রাশিয়া পুরো দনবাসের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে।
এদিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প এ বৈঠক বাতিল করেছেন। এরপর গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনে হলো এই বৈঠক এখন ফলপ্রসূ হবে না, তাই বাতিল করেছি। তবে ভবিষ্যতে আবার বসা হবে।’
এখন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে দেখা যায়, যুদ্ধ বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে রাশিয়া। প্রশ্ন হতে পারে, নিজেদের ক্ষতি জেনেও কেন ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে ইউরোপ-ইউক্রেন। কারণ, এ মুহূর্তে তাদের কাছে রাশিয়াকে মোকাবিলা করার মতো কোনো অস্ত্র নেই। সর্বশেষ, হোয়াইট হাউসের বৈঠক থেকে আশা করা হয়েছিল, এবার জেলেনস্কি হয়তো টমাহক নিয়ে ফিরবেন। কিন্তু তিনি ফিরেছেন খালি হাতে। এদিকে ইউরোপে আটকে থাকা রুশ অর্থ থেকে ইউক্রেনকে লোন দেওয়ার যে প্রস্তাব উঠেছে, তাতে সবাই একমত হতে পারেনি। ফলে সেটাও আটকে আছে। অর্থাৎ যুদ্ধ চালানোর অর্থ ও রসদ, দুটোরই সংকট আছে ইউক্রেনের। তাই এ মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ করাই তাদের কাছে সবচেয়ে ভালো সমাধান।
সবশেষে আসে ট্রাম্পের কথা। এই যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প বলতে পারবেন, ‘আমি আরও একটি যুদ্ধ থামিয়েছি। এবার আমাকে নোবেল না দিয়ে যাবে কোথায়!’ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইউরোপের দূরত্ব ঘুচতে পারে।
এদিকে এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কেমন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে ওয়াশিংটনের এমন ঘোষণায় চির ধরেছে ট্রাম্প-পুতিনের বন্ধুত্বে। তাই এ যুদ্ধ বন্ধ হলে টিকে যাবে তাঁদের বন্ধুত্ব।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন...
২০ জুন ২০২৫তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
৬ ঘণ্টা আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
১ দিন আগে
জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত...
২ দিন আগেশশী থারুরের নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত সভ্যতার প্রতিধ্বনি। কূটনীতির জয়গাথা হিসেবে জন্ম নেওয়া এই প্রতিষ্ঠান আজ অস্তিত্বসংকটে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, আর ঠিক তখনই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেই পিছিয়ে আসতে চাইছে।
লক্ষণগুলো স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও ইউনেসকোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সরে এসেছে। জাতিসংঘের অনেক সংস্থায় অর্থায়নও বন্ধ বা ব্যাপকভাবে কমিয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের অনুদান কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।
যুক্তরাষ্ট্র গাজা প্রসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ভিসা বাতিল করেছে। অধিবেশনের প্রথম দিনেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নজিরবিহীন বক্তব্যে মাল্টিল্যাটারালিজম বা বহুপাক্ষিকতার মৌলিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিনিধি সুসান রাইস সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমরা এখন আর সেই জায়গাগুলোতে খেলছি না, যেখানে একসময় বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছি।’
বহুপাক্ষিকতার এই ক্ষয় এমন একসময়ে ঘটছে, যখন পৃথিবীর আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দরকার সম্মিলিত পদক্ষেপের। ইউক্রেন, সুদানসহ নানা সংঘাতের আগুন জ্বলছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। শান্তির কোনো ইঙ্গিত নেই। ট্রাম্প প্রশাসন গাজা শান্তিচুক্তির আয়োজন করেছে, কিন্তু তা জাতিসংঘের কাঠামোর বাইরে।
জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের গতি শাসনব্যবস্থার সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই পরিস্থিতিকে বলেছেন, ‘বৈশ্বিক সংকট।’ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ভূরাজনৈতিক বিভাজন আমাদের সেই ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে, যা দিয়ে আমরা কার্যকরভাবে এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে পারি।’
তাহলে কি বহুপাক্ষিকতা ভাঙনের পথে? জাতিসংঘ কি টিকে থাকতে পারবে ক্রমবর্ধমান এই ‘অপ্রাসঙ্গিকতার’ অভিযোগের ভেতর? এর উত্তর খুঁজতে হলে আগে বুঝতে হবে, বহুপাক্ষিকতা আসলে কী ছিল—আর এখন তা কী হয়ে উঠেছে। মূলত বহুপাক্ষিকতা মানে, এমন বিশ্বাস যে বৈশ্বিক সমস্যা (যা জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান একসময় বলেছিলেন—সীমানাহীন সমস্যা) সমাধানও হতে হবে বৈশ্বিক পরিসরে, এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেখানে ছোট-বড় সব রাষ্ট্রেরই সমান কণ্ঠস্বর থাকবে। এটি সার্বভৌম সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আইনের শাসনের ওপর দাঁড়ানো এক ব্যবস্থা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, যেখানে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রত্যেকেরই এক ভোট, এখনো সেই আদর্শের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রতীক।
কিন্তু বাস্তবতা সব সময়ই আদর্শকে ছায়ায় ফেলে রেখেছে। জাতিসংঘের কাঠামো, বিশেষ করে—নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা, বৈষম্যকে স্থায়ী করে রেখেছে। জাতিসংঘের অনেক প্রস্তাব বাধ্যতামূলক নয়, বাস্তবায়নের ব্যবস্থাও দুর্বল। সাধারণ পরিষদ অনেক সময়ই পরিণত হয় বাস্তব সমাধানের বদলে রাজনৈতিক বক্তব্যের মঞ্চে। আর নিরাপত্তা পরিষদ নিজেও এখনো ১৯৪৫ সালের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতাকে বহন করছে, যখন আমরা দাঁড়িয়ে ২০২৫-এর শেষ অংশে।
তবু জাতিসংঘ অনেক কিছু অর্জন করেছে। মানবাধিকার-সংক্রান্ত সর্বজনীন ঘোষণা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), প্যারিস জলবায়ু চুক্তি—সবই এসেছে বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা সমন্বয় করেছে, সফল শান্তিরক্ষা মিশন চালিয়েছে, অসংখ্য আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনে ভূমিকা রেখেছে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া গড়ে তুলেছে। এটি ছোট দেশগুলোর জন্য দিয়েছে বলার জায়গা, আর বড় দেশগুলোর জন্য শোনার বাধ্যবাধকতা। যদিও অনেক সময় তা কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
কিন্তু আজ সেই ব্যবস্থাও ভাঙনের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দুর্বল হয়েছে, আঞ্চলিক জোটগুলোর উত্থান ঘটেছে, কূটনৈতিক নীতিমালার ঐক্য ভেঙে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গোটা ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘ কালো ছায়া ফেলেছে। উভয় পক্ষই এখন নিজেদের মতো করে সীমিত গোষ্ঠীগত বা দ্বিপক্ষীয় সমঝোতায় ঝুঁকছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং গাজায় ইসরায়েলের অটল অবস্থান আন্তর্জাতিক নিয়মের প্রতি আস্থা আরও দুর্বল করেছে। এমনকি যে ইউরোপে একসময় বহুপাক্ষিকতার প্রতি গভীর অঙ্গীকার ছিল, সেখানে এখন জাতীয়তাবাদের ঢেউ সেই ঐকমত্যকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপট মহৎ উদ্দেশ্যে, কিন্তু সীমিত প্রভাবের প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ এখন ঝুঁকির মুখে। তবে পতন অনিবার্য নয়। বহুপাক্ষিকতা হয়তো আঘাতপ্রাপ্ত, কিন্তু এখনো মারা যায়নি। বিশ্বনেতারা এখনো নিউইয়র্কে একত্র হন, কথা বলেন, আলোচনা করেন, তর্ক করেন—এই ঘটনাই প্রমাণ করে, বৈশ্বিক সংলাপের প্রয়োজন এখনো গভীরভাবে বিদ্যমান।
চলতি বছর শুরু হওয়া ‘ইউএন-৮০’ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো জাতিসংঘের দায়িত্বের ভার কমানো, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং জন-আস্থা পুনরুদ্ধার। প্রতিষ্ঠান সংস্কার এখন বিলাসিতা নয়—অস্তিত্বের শর্ত। তবে বহুপাক্ষিকতার সংকট কেবল প্রাতিষ্ঠানিক নয়, তা দার্শনিকও বটে। এই সংকট এক গভীর টানাপোড়েন উন্মোচন করেছে। আর সেটি হলো—বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক নির্ভরতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের আওতায় থাকা ‘যেকোনো জায়গার মানুষ’ আর ‘কোনো এক বিশেষ জায়গার মানুষ’-এর আত্মপরিচয়ের মধ্যে।
ডেভিড গুডহার্টের বিশ্লেষণ এখানে প্রাসঙ্গিক। ‘কোনো এক বিশেষ জায়গার মানুষেরা’ ধর্ম, সংস্কৃতি ও স্থানীয় পরিচয়ে প্রোথিত, তারা বৈশ্বিক অভিজাত শ্রেণি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্রমশ সন্দিহান। তাদের রাজনৈতিক উত্থান—ব্রেক্সিট থেকে ট্রাম্পবাদ পর্যন্ত—বদলে দিয়েছে সেই প্রেক্ষাপট। আর এ কারণেই বহুপাক্ষিকতা টিকে থাকার লড়াই করছে।
অতএব, বহুপাক্ষিকতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শুধু প্রতিষ্ঠান সংস্কারের ওপর নয়, বৈধতা পুনর্গঠনের ওপরও। এই সংস্কারে কেবল কূটনীতিকদের নয়, সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগের প্রতিফলনও ঘটাতে হবে। প্রমাণ করতে হবে, বৈশ্বিক সহযোগিতা বাস্তব সুফল দিতে পারে—চাকরি, নিরাপত্তা, মর্যাদা সবকিছুর। এগুলো শুধু নীতিগত উচ্চারণ নয়। বহুপাক্ষিকতাকে হতে হবে কম প্রযুক্তিনির্ভর, বেশি মানবিক।
আশ্চর্যের বিষয়, যে দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসন ও বৈশ্বিক সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করেছে—যেমন জাপান ও হাঙ্গেরি তারা হয়তো এই প্রতিক্রিয়ার ঝড় থেকে তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত। জাপানের সতর্ক কূটনীতি ও সাংস্কৃতিক সমরূপতা দেশটিকে পশ্চিমা গণতন্ত্রগুলোর মতো জনতুষ্টির চাপে পড়তে দেয়নি। অন্যদিকে ভিক্টর অরবানের নেতৃত্বে হাঙ্গেরি গ্রহণ করেছে এক উগ্র জাতীয়তাবাদী অবস্থান, যা বহুপক্ষীয় নিয়ন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করে।
এগুলো স্বল্প মেয়াদে স্থিতিশীলতা দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি বহন করে। চ্যালেঞ্জ তাই এক মধ্যপথ খুঁজে পাওয়া। একটি বহুপাক্ষিকতা, যা নীতিনিষ্ঠ কিন্তু বাস্তববাদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক কিন্তু কার্যকর। এর জন্য কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের নেতৃত্ব নয়, প্রয়োজন উদীয়মান শক্তিগুলোর, আঞ্চলিক জোটগুলোর, এমনকি নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকারও। উদাহরণস্বরূপ, ভারত একটি ন্যায়সংগত বৈশ্বিক শৃঙ্খলার পক্ষে নেতৃত্ব দিতে পারে—যেখানে সার্বভৌমত্ব, সংহতি ও টেকসই উন্নয়ন হবে মূল মূল্যবোধ।
জাতিসংঘের ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন যত সামনে বাড়ছে, তত স্পষ্ট হচ্ছে ঝুঁকি। বর্তমান পৃথিবী সংকটহীন নয়, সহযোগিতাহীন। জাতিসংঘ নিখুঁত নয়। তবুও দাগ হ্যামারশোল্ড যেমন বলেছিলেন, জাতিসংঘ ‘মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছাতে নয়, নরক থেকে রক্ষা করতে’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—সেটাকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
এ উদ্দেশ্য পূরণে জাতিসংঘ হয়তো কখনো কখনো ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু এখনো এটাই একমাত্র মঞ্চ, যেখানে সব দেশ একত্র হয়ে বিশ্বের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে পারে। এটিকে ত্যাগ করা মানে আমাদের সাধারণ মানবতার ধারণাকেই ত্যাগ করা।
বহুপাক্ষিকতা হয়তো ছিন্নভিন্ন, কিন্তু একই সঙ্গে নবজন্মের পথেও আছে। এর টিকে থাকা নির্ভর করছে স্মৃতিচারণা নয়, পুনর্জাগরণের ওপর। আর সেই পুনর্জাগরণ শুরু হয় এই উপলব্ধি থেকে যে এই বিশ্বে যতক্ষণ না সব দেশ স্বাধীন, ততক্ষণ কোনো দেশই প্রকৃত সার্বভৌম নয়।

জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ, ২৪ অক্টোবর। কিন্তু নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরিবেশ মোটেও উৎসবমুখর নয়, বরং সেখানে ভর করেছে একধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। যে হলঘর একসময় ভরে উঠত যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, উপনিবেশমুক্তি আর শান্তির আশায়, সেখানে এখন বাজছে এক ক্লান্ত সভ্যতার প্রতিধ্বনি। কূটনীতির জয়গাথা হিসেবে জন্ম নেওয়া এই প্রতিষ্ঠান আজ অস্তিত্বসংকটে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, আর ঠিক তখনই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেই পিছিয়ে আসতে চাইছে।
লক্ষণগুলো স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও ইউনেসকোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সরে এসেছে। জাতিসংঘের অনেক সংস্থায় অর্থায়নও বন্ধ বা ব্যাপকভাবে কমিয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের অনুদান কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।
যুক্তরাষ্ট্র গাজা প্রসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ভিসা বাতিল করেছে। অধিবেশনের প্রথম দিনেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নজিরবিহীন বক্তব্যে মাল্টিল্যাটারালিজম বা বহুপাক্ষিকতার মৌলিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিনিধি সুসান রাইস সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমরা এখন আর সেই জায়গাগুলোতে খেলছি না, যেখানে একসময় বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছি।’
বহুপাক্ষিকতার এই ক্ষয় এমন একসময়ে ঘটছে, যখন পৃথিবীর আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দরকার সম্মিলিত পদক্ষেপের। ইউক্রেন, সুদানসহ নানা সংঘাতের আগুন জ্বলছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। শান্তির কোনো ইঙ্গিত নেই। ট্রাম্প প্রশাসন গাজা শান্তিচুক্তির আয়োজন করেছে, কিন্তু তা জাতিসংঘের কাঠামোর বাইরে।
জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের গতি শাসনব্যবস্থার সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই পরিস্থিতিকে বলেছেন, ‘বৈশ্বিক সংকট।’ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ভূরাজনৈতিক বিভাজন আমাদের সেই ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে, যা দিয়ে আমরা কার্যকরভাবে এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে পারি।’
তাহলে কি বহুপাক্ষিকতা ভাঙনের পথে? জাতিসংঘ কি টিকে থাকতে পারবে ক্রমবর্ধমান এই ‘অপ্রাসঙ্গিকতার’ অভিযোগের ভেতর? এর উত্তর খুঁজতে হলে আগে বুঝতে হবে, বহুপাক্ষিকতা আসলে কী ছিল—আর এখন তা কী হয়ে উঠেছে। মূলত বহুপাক্ষিকতা মানে, এমন বিশ্বাস যে বৈশ্বিক সমস্যা (যা জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান একসময় বলেছিলেন—সীমানাহীন সমস্যা) সমাধানও হতে হবে বৈশ্বিক পরিসরে, এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেখানে ছোট-বড় সব রাষ্ট্রেরই সমান কণ্ঠস্বর থাকবে। এটি সার্বভৌম সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আইনের শাসনের ওপর দাঁড়ানো এক ব্যবস্থা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, যেখানে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রত্যেকেরই এক ভোট, এখনো সেই আদর্শের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রতীক।
কিন্তু বাস্তবতা সব সময়ই আদর্শকে ছায়ায় ফেলে রেখেছে। জাতিসংঘের কাঠামো, বিশেষ করে—নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা, বৈষম্যকে স্থায়ী করে রেখেছে। জাতিসংঘের অনেক প্রস্তাব বাধ্যতামূলক নয়, বাস্তবায়নের ব্যবস্থাও দুর্বল। সাধারণ পরিষদ অনেক সময়ই পরিণত হয় বাস্তব সমাধানের বদলে রাজনৈতিক বক্তব্যের মঞ্চে। আর নিরাপত্তা পরিষদ নিজেও এখনো ১৯৪৫ সালের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতাকে বহন করছে, যখন আমরা দাঁড়িয়ে ২০২৫-এর শেষ অংশে।
তবু জাতিসংঘ অনেক কিছু অর্জন করেছে। মানবাধিকার-সংক্রান্ত সর্বজনীন ঘোষণা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), প্যারিস জলবায়ু চুক্তি—সবই এসেছে বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা সমন্বয় করেছে, সফল শান্তিরক্ষা মিশন চালিয়েছে, অসংখ্য আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনে ভূমিকা রেখেছে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া গড়ে তুলেছে। এটি ছোট দেশগুলোর জন্য দিয়েছে বলার জায়গা, আর বড় দেশগুলোর জন্য শোনার বাধ্যবাধকতা। যদিও অনেক সময় তা কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
কিন্তু আজ সেই ব্যবস্থাও ভাঙনের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দুর্বল হয়েছে, আঞ্চলিক জোটগুলোর উত্থান ঘটেছে, কূটনৈতিক নীতিমালার ঐক্য ভেঙে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গোটা ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘ কালো ছায়া ফেলেছে। উভয় পক্ষই এখন নিজেদের মতো করে সীমিত গোষ্ঠীগত বা দ্বিপক্ষীয় সমঝোতায় ঝুঁকছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং গাজায় ইসরায়েলের অটল অবস্থান আন্তর্জাতিক নিয়মের প্রতি আস্থা আরও দুর্বল করেছে। এমনকি যে ইউরোপে একসময় বহুপাক্ষিকতার প্রতি গভীর অঙ্গীকার ছিল, সেখানে এখন জাতীয়তাবাদের ঢেউ সেই ঐকমত্যকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপট মহৎ উদ্দেশ্যে, কিন্তু সীমিত প্রভাবের প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ এখন ঝুঁকির মুখে। তবে পতন অনিবার্য নয়। বহুপাক্ষিকতা হয়তো আঘাতপ্রাপ্ত, কিন্তু এখনো মারা যায়নি। বিশ্বনেতারা এখনো নিউইয়র্কে একত্র হন, কথা বলেন, আলোচনা করেন, তর্ক করেন—এই ঘটনাই প্রমাণ করে, বৈশ্বিক সংলাপের প্রয়োজন এখনো গভীরভাবে বিদ্যমান।
চলতি বছর শুরু হওয়া ‘ইউএন-৮০’ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো জাতিসংঘের দায়িত্বের ভার কমানো, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং জন-আস্থা পুনরুদ্ধার। প্রতিষ্ঠান সংস্কার এখন বিলাসিতা নয়—অস্তিত্বের শর্ত। তবে বহুপাক্ষিকতার সংকট কেবল প্রাতিষ্ঠানিক নয়, তা দার্শনিকও বটে। এই সংকট এক গভীর টানাপোড়েন উন্মোচন করেছে। আর সেটি হলো—বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক নির্ভরতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের আওতায় থাকা ‘যেকোনো জায়গার মানুষ’ আর ‘কোনো এক বিশেষ জায়গার মানুষ’-এর আত্মপরিচয়ের মধ্যে।
ডেভিড গুডহার্টের বিশ্লেষণ এখানে প্রাসঙ্গিক। ‘কোনো এক বিশেষ জায়গার মানুষেরা’ ধর্ম, সংস্কৃতি ও স্থানীয় পরিচয়ে প্রোথিত, তারা বৈশ্বিক অভিজাত শ্রেণি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্রমশ সন্দিহান। তাদের রাজনৈতিক উত্থান—ব্রেক্সিট থেকে ট্রাম্পবাদ পর্যন্ত—বদলে দিয়েছে সেই প্রেক্ষাপট। আর এ কারণেই বহুপাক্ষিকতা টিকে থাকার লড়াই করছে।
অতএব, বহুপাক্ষিকতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শুধু প্রতিষ্ঠান সংস্কারের ওপর নয়, বৈধতা পুনর্গঠনের ওপরও। এই সংস্কারে কেবল কূটনীতিকদের নয়, সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগের প্রতিফলনও ঘটাতে হবে। প্রমাণ করতে হবে, বৈশ্বিক সহযোগিতা বাস্তব সুফল দিতে পারে—চাকরি, নিরাপত্তা, মর্যাদা সবকিছুর। এগুলো শুধু নীতিগত উচ্চারণ নয়। বহুপাক্ষিকতাকে হতে হবে কম প্রযুক্তিনির্ভর, বেশি মানবিক।
আশ্চর্যের বিষয়, যে দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসন ও বৈশ্বিক সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করেছে—যেমন জাপান ও হাঙ্গেরি তারা হয়তো এই প্রতিক্রিয়ার ঝড় থেকে তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত। জাপানের সতর্ক কূটনীতি ও সাংস্কৃতিক সমরূপতা দেশটিকে পশ্চিমা গণতন্ত্রগুলোর মতো জনতুষ্টির চাপে পড়তে দেয়নি। অন্যদিকে ভিক্টর অরবানের নেতৃত্বে হাঙ্গেরি গ্রহণ করেছে এক উগ্র জাতীয়তাবাদী অবস্থান, যা বহুপক্ষীয় নিয়ন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করে।
এগুলো স্বল্প মেয়াদে স্থিতিশীলতা দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি বহন করে। চ্যালেঞ্জ তাই এক মধ্যপথ খুঁজে পাওয়া। একটি বহুপাক্ষিকতা, যা নীতিনিষ্ঠ কিন্তু বাস্তববাদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক কিন্তু কার্যকর। এর জন্য কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের নেতৃত্ব নয়, প্রয়োজন উদীয়মান শক্তিগুলোর, আঞ্চলিক জোটগুলোর, এমনকি নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকারও। উদাহরণস্বরূপ, ভারত একটি ন্যায়সংগত বৈশ্বিক শৃঙ্খলার পক্ষে নেতৃত্ব দিতে পারে—যেখানে সার্বভৌমত্ব, সংহতি ও টেকসই উন্নয়ন হবে মূল মূল্যবোধ।
জাতিসংঘের ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন যত সামনে বাড়ছে, তত স্পষ্ট হচ্ছে ঝুঁকি। বর্তমান পৃথিবী সংকটহীন নয়, সহযোগিতাহীন। জাতিসংঘ নিখুঁত নয়। তবুও দাগ হ্যামারশোল্ড যেমন বলেছিলেন, জাতিসংঘ ‘মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছাতে নয়, নরক থেকে রক্ষা করতে’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—সেটাকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
এ উদ্দেশ্য পূরণে জাতিসংঘ হয়তো কখনো কখনো ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু এখনো এটাই একমাত্র মঞ্চ, যেখানে সব দেশ একত্র হয়ে বিশ্বের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে পারে। এটিকে ত্যাগ করা মানে আমাদের সাধারণ মানবতার ধারণাকেই ত্যাগ করা।
বহুপাক্ষিকতা হয়তো ছিন্নভিন্ন, কিন্তু একই সঙ্গে নবজন্মের পথেও আছে। এর টিকে থাকা নির্ভর করছে স্মৃতিচারণা নয়, পুনর্জাগরণের ওপর। আর সেই পুনর্জাগরণ শুরু হয় এই উপলব্ধি থেকে যে এই বিশ্বে যতক্ষণ না সব দেশ স্বাধীন, ততক্ষণ কোনো দেশই প্রকৃত সার্বভৌম নয়।

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন...
২০ জুন ২০২৫তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে দুই পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগ ক্রমেই শীতল হচ্ছে। চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান আমাদের অংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা আমাদের কৌশলগত স্বার্থের অঙ্গ।
৬ ঘণ্টা আগে
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তবে এবার তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছেন। ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নিজেও এবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পন
১ দিন আগে
এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বেশ দম্ভ করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করবেন। অথচ সেই ট্রাম্প এখন বলছেন, যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেখানেই এটিকে ‘কাট অ্যান্ড স্টপ’ করা উচিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এখন এই মুহূর্তে যুদ্ধ বন্ধ হলে রাশিয়া-ইউক্রেনের কে কী পাবে বা এখানে...
১ দিন আগে