আমিনুল ইসলাম নাবিল
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন রবার্ট ম্যাকনামারা। কেনেডি আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬তম প্রেসিডেন্ট হন লিন্ডন জনসন। জনসনেরও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন ম্যাকনামারা। এই আমেরিকান ব্যবসায়ী জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজেকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবেই বর্ণনা করেছেন। এর কয়েক বছর আগেই তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং নিজের ভূমিকার সমালোচনা করেন। অথচ তিনিই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এই যুদ্ধ লাগিয়েছিলেন।
এই রবার্ট ম্যাকনামারাই ‘বডি কাউন্ট’ নামে একটি পরিভাষার প্রচলন করেন—তিনি এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে কীভাবে মার্কিন বাহিনী ভিয়েত কং এবং উত্তর ভিয়েতনামিদের নির্মূলে কাজ করেছিল।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলেছিল, ‘ডোমিনো তত্ত্ব’–এর মতো দক্ষিণ ভিয়েতনামের পরাজয় হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একের পর এক দেশে এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। যদিও সময়ের সঙ্গে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সমাজতন্ত্রের বিস্তার ঠেকানোর লড়াইয়ে হাতিয়ার হিসেবে ভিয়েতনাম যুদ্ধে হেলিকপ্টার থেকে নাপাম বোমা ফেলা হয়। এতে নারী-শিশুসহ বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। সেই ক্ষত দেশটিকে বহুদিন বয়ে বেড়াতে হয়েছে।
ডোমিনো তত্ত্ব হলো—কোনো একটি রাষ্ট্রে যদি সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে পাশের রাষ্ট্রটিও সমাজতন্ত্রীদের দখলে চলে যাবে। পঞ্চাশের দশকে প্রথমবারের মতো এই তত্ত্বের কথা প্রচার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় রবার্ট ম্যাকনামারা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। তিনি ও তাঁর অন্য নীতিনির্ধারকেরা বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই এ যুদ্ধে জিততে পারবে না বলে মনে করেছিলেন। তাঁর ছেলে ছিলেন যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনকারী। শেষ পর্যন্ত তাঁর কার্যালয়ের বাইরে এক আন্দোলনকারীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই পরে পদত্যাগ করেন ম্যাকনামারা। পরে অবশ্য তাঁকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেন লিন্ডন জনসন। তিনি বিশ্ব ব্যাংকের বিশাল সম্পদকে গরিব দেশের মাঝে বণ্টনের কাজ করে নিজেকে তৃপ্ত করেন।
অর্থনীতিবিদ ও লেখক বারবারা ওয়ার্ড ম্যাকনামারের একান্ত সাক্ষাৎকার নেন। ভিয়েতনামে তাঁর কার্যকলাপের কথা স্বীকার করে বলেন, ভিয়েতনামের জন্য তাঁর ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
ম্যাকনামারা নিজেকে একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন—কেবল ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণে নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের বিরুদ্ধে একজন তরুণ কৌশলগত পরিকল্পনাকারী হিসেবে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্মতি উৎপাদনে সহায়তা করেছিলেন।
তখন যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অস্তিত্ব থাকত এবং যুক্তরাষ্ট্র এটির অনুমোদনকারী পক্ষ হয়ে থাকত, তাহলে ম্যাকনামারের ভাগ্যে কী ঘটত? সেটি অবশ্য কিসিঞ্জারের ঘটনাতেই পরিষ্কার হয়ে গেছে!
হেনরি কিসিঞ্জারের বিষয়টি একটু ভিন্ন। প্রথমে পিনোচেটের অধ্যায়টি উল্লেখ করা যাক। কীভাবে কিসিঞ্জার গণতান্ত্রিক চিলিতে অভ্যুত্থানে সহায়তা করেছিলেন, যা দেশটিকে ব্যাপক নিপীড়নের সুযোগ তৈরি করেছিল—সেটি স্মরণ করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের যুদ্ধের দিকে তাকাতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার সবচেয়ে বড় যুদ্ধ, যা শেষ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অসম্মানজনক পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রেরও বহু প্রাণহানি ঘটেছে।
প্রেসিডেন্ট জনসন যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং এটি উসকে দিয়ে বিপাকে পড়েন, তখন নিজে থেকেই পিছু হটেন। পরে ডানপন্থী রিচার্ড নিক্সন নির্বাচনে জয়ী হয়ে ৩৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি কিসিঞ্জারকে তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেন। নিক্সন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। ক্ষমতায় এসে তিনি এবং কিসিঞ্জার সিদ্ধান্ত নিলেন—যুদ্ধ শেষ করার একটাই উপায়—জিততে হবে। ভিয়েতনামে বিপুল বোমাবর্ষণ চলে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বোমার চেয়েও বেশি। নিক্সনের দ্বিতীয় মেয়াদ পর্যন্ত এমন চলেছিল।
অনেক স্কলার, প্রসিদ্ধ সাংবাদিক, কূটনীতিক আছেন যারা যুক্তি দেন যে ১৯৬৮ সালে নিক্সন ব্যক্তিগতভাবে আশ্বাস দিয়েছিলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হুবার্ট হামফ্রের চেয়ে ভালো সমাধান দিতে পারবেন। এ কারণে মার্কিন আইন লঙ্ঘিত হলেও দক্ষিণ ভিয়েতনামি মিত্রদের সহায়তা চালিয়ে যেতে হবে। দক্ষিণ ভিয়েতনামিদের সহায়তা করতে নিক্সনের যে সিদ্ধান্ত, সেটি শান্তি আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেকে প্রত্যাহার করার শামিল। এর মাধ্যমে নিক্সন গং হামফ্রের ‘শান্তি প্রস্তাব’-এর ধার কমিয়ে দেয়। কিসিঞ্জার নিজেই ডেমোক্র্যাটদের ভেতরের তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করেন। তখন প্রেসিডেন্ট জনসনের জন্য কাজ করলেও গোপনে নিক্সনের কাছে তথ্য পাচার করতেন।
তাহলে হেনরি কিসিঞ্জারকে কেন যুদ্ধাপরাধী বলা হবে না? চিলির সালভাদর আয়েন্দে এবং আর্জেন্টিনার হুয়ান পেরনকে উৎখাতে তাঁর ভূমিকা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সমর্থন এবং বাংলাদেশের গণহত্যা, কম্বোডিয়া ও লাওসে অবৈধ সামরিক অভিযান ও সব গোপন দলিলপত্র নষ্ট করা—এসব কিছুই হেনরি কিসিঞ্জারকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্ট। তবে একজন আমেরিকান নীতি নির্ধারক হিসেবে তিনি কার্যত দায়মুক্তি পেয়ে গেছেন। তাঁর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া একটা কলঙ্কিত প্রহসন।
পশ্চিমা যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে আরও আছেন—হিটলারের ডেপুটি হেনরিক হাইমলার। বিপুলসংখ্যক ইহুদি শিশু-নারী-পুরুষকে হত্যার মাস্টারপ্ল্যান তাঁর হাতেই।
এ ছাড়া ইসরায়েলের এরিয়েল শ্যারন, কম্বোডিয়ার পোল পট এবং খেমার রুজ—এরা সবাই যুদ্ধে ভয়ানক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত।
২০১১ সালে কুয়ালালামপুর ওয়ার ক্রাইমস কমিশন (কেএলডব্লিউসিসি) দুই বছর তদন্তের পর পাঁচজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত একটি ট্রাইব্যুনাল সর্বসম্মত রায়ে জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং টনি ব্লেয়ারকে ইরাক যুদ্ধে ভূমিকায় গণহত্যার জন্য দোষী করে।
২০০৩ সালের ১৯ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাকের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে—এই অজুহাতে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নির্বিচার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। তছনছ হয়ে গেছে ইরাকের অবকাঠামো ও অর্থনীতি। অথচ পরবর্তীতে সিআইএ এবং খোদ বুশ স্বীকার করেছেন, সাদ্দামের ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র সম্পর্কিত তথ্য ভুল ছিল! কিন্তু ততদিনে ৩ লক্ষাধিক বেসামরিক ইরাকির প্রাণহানি হয়েছে।
অথচ জর্জ বুশ আর তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার পশ্চিমের বাকি নেতাদের আপত্তি উপেক্ষা করে ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছিলেন। এমনকি কোন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য ইরাক আক্রমণে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত করতে দিতে রাজি হননি ব্লেয়ার। আফগানিস্তানের লাখ লাখ বেসামরিক হত্যার পেছনে পশ্চিম বরাবর আল কায়েদাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গেছে। অথচ সেই তালেবানের হাতেই বিনা প্রতিরোধে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে গেছে মার্কিন বাহিনী।
সূত্র: ওয়েস্টার্ন ওয়ার ক্রিমিনালস, লেখক: জনাথন পাওয়ার, আল জাজিরা, সিএনএন
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন রবার্ট ম্যাকনামারা। কেনেডি আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬তম প্রেসিডেন্ট হন লিন্ডন জনসন। জনসনেরও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন ম্যাকনামারা। এই আমেরিকান ব্যবসায়ী জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজেকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবেই বর্ণনা করেছেন। এর কয়েক বছর আগেই তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং নিজের ভূমিকার সমালোচনা করেন। অথচ তিনিই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এই যুদ্ধ লাগিয়েছিলেন।
এই রবার্ট ম্যাকনামারাই ‘বডি কাউন্ট’ নামে একটি পরিভাষার প্রচলন করেন—তিনি এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে কীভাবে মার্কিন বাহিনী ভিয়েত কং এবং উত্তর ভিয়েতনামিদের নির্মূলে কাজ করেছিল।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলেছিল, ‘ডোমিনো তত্ত্ব’–এর মতো দক্ষিণ ভিয়েতনামের পরাজয় হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একের পর এক দেশে এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। যদিও সময়ের সঙ্গে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সমাজতন্ত্রের বিস্তার ঠেকানোর লড়াইয়ে হাতিয়ার হিসেবে ভিয়েতনাম যুদ্ধে হেলিকপ্টার থেকে নাপাম বোমা ফেলা হয়। এতে নারী-শিশুসহ বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। সেই ক্ষত দেশটিকে বহুদিন বয়ে বেড়াতে হয়েছে।
ডোমিনো তত্ত্ব হলো—কোনো একটি রাষ্ট্রে যদি সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে পাশের রাষ্ট্রটিও সমাজতন্ত্রীদের দখলে চলে যাবে। পঞ্চাশের দশকে প্রথমবারের মতো এই তত্ত্বের কথা প্রচার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় রবার্ট ম্যাকনামারা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। তিনি ও তাঁর অন্য নীতিনির্ধারকেরা বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই এ যুদ্ধে জিততে পারবে না বলে মনে করেছিলেন। তাঁর ছেলে ছিলেন যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনকারী। শেষ পর্যন্ত তাঁর কার্যালয়ের বাইরে এক আন্দোলনকারীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই পরে পদত্যাগ করেন ম্যাকনামারা। পরে অবশ্য তাঁকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেন লিন্ডন জনসন। তিনি বিশ্ব ব্যাংকের বিশাল সম্পদকে গরিব দেশের মাঝে বণ্টনের কাজ করে নিজেকে তৃপ্ত করেন।
অর্থনীতিবিদ ও লেখক বারবারা ওয়ার্ড ম্যাকনামারের একান্ত সাক্ষাৎকার নেন। ভিয়েতনামে তাঁর কার্যকলাপের কথা স্বীকার করে বলেন, ভিয়েতনামের জন্য তাঁর ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
ম্যাকনামারা নিজেকে একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন—কেবল ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণে নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের বিরুদ্ধে একজন তরুণ কৌশলগত পরিকল্পনাকারী হিসেবে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্মতি উৎপাদনে সহায়তা করেছিলেন।
তখন যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অস্তিত্ব থাকত এবং যুক্তরাষ্ট্র এটির অনুমোদনকারী পক্ষ হয়ে থাকত, তাহলে ম্যাকনামারের ভাগ্যে কী ঘটত? সেটি অবশ্য কিসিঞ্জারের ঘটনাতেই পরিষ্কার হয়ে গেছে!
হেনরি কিসিঞ্জারের বিষয়টি একটু ভিন্ন। প্রথমে পিনোচেটের অধ্যায়টি উল্লেখ করা যাক। কীভাবে কিসিঞ্জার গণতান্ত্রিক চিলিতে অভ্যুত্থানে সহায়তা করেছিলেন, যা দেশটিকে ব্যাপক নিপীড়নের সুযোগ তৈরি করেছিল—সেটি স্মরণ করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের যুদ্ধের দিকে তাকাতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার সবচেয়ে বড় যুদ্ধ, যা শেষ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অসম্মানজনক পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রেরও বহু প্রাণহানি ঘটেছে।
প্রেসিডেন্ট জনসন যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং এটি উসকে দিয়ে বিপাকে পড়েন, তখন নিজে থেকেই পিছু হটেন। পরে ডানপন্থী রিচার্ড নিক্সন নির্বাচনে জয়ী হয়ে ৩৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি কিসিঞ্জারকে তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেন। নিক্সন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। ক্ষমতায় এসে তিনি এবং কিসিঞ্জার সিদ্ধান্ত নিলেন—যুদ্ধ শেষ করার একটাই উপায়—জিততে হবে। ভিয়েতনামে বিপুল বোমাবর্ষণ চলে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বোমার চেয়েও বেশি। নিক্সনের দ্বিতীয় মেয়াদ পর্যন্ত এমন চলেছিল।
অনেক স্কলার, প্রসিদ্ধ সাংবাদিক, কূটনীতিক আছেন যারা যুক্তি দেন যে ১৯৬৮ সালে নিক্সন ব্যক্তিগতভাবে আশ্বাস দিয়েছিলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হুবার্ট হামফ্রের চেয়ে ভালো সমাধান দিতে পারবেন। এ কারণে মার্কিন আইন লঙ্ঘিত হলেও দক্ষিণ ভিয়েতনামি মিত্রদের সহায়তা চালিয়ে যেতে হবে। দক্ষিণ ভিয়েতনামিদের সহায়তা করতে নিক্সনের যে সিদ্ধান্ত, সেটি শান্তি আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেকে প্রত্যাহার করার শামিল। এর মাধ্যমে নিক্সন গং হামফ্রের ‘শান্তি প্রস্তাব’-এর ধার কমিয়ে দেয়। কিসিঞ্জার নিজেই ডেমোক্র্যাটদের ভেতরের তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করেন। তখন প্রেসিডেন্ট জনসনের জন্য কাজ করলেও গোপনে নিক্সনের কাছে তথ্য পাচার করতেন।
তাহলে হেনরি কিসিঞ্জারকে কেন যুদ্ধাপরাধী বলা হবে না? চিলির সালভাদর আয়েন্দে এবং আর্জেন্টিনার হুয়ান পেরনকে উৎখাতে তাঁর ভূমিকা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সমর্থন এবং বাংলাদেশের গণহত্যা, কম্বোডিয়া ও লাওসে অবৈধ সামরিক অভিযান ও সব গোপন দলিলপত্র নষ্ট করা—এসব কিছুই হেনরি কিসিঞ্জারকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য যথেষ্ট। তবে একজন আমেরিকান নীতি নির্ধারক হিসেবে তিনি কার্যত দায়মুক্তি পেয়ে গেছেন। তাঁর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া একটা কলঙ্কিত প্রহসন।
পশ্চিমা যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে আরও আছেন—হিটলারের ডেপুটি হেনরিক হাইমলার। বিপুলসংখ্যক ইহুদি শিশু-নারী-পুরুষকে হত্যার মাস্টারপ্ল্যান তাঁর হাতেই।
এ ছাড়া ইসরায়েলের এরিয়েল শ্যারন, কম্বোডিয়ার পোল পট এবং খেমার রুজ—এরা সবাই যুদ্ধে ভয়ানক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত।
২০১১ সালে কুয়ালালামপুর ওয়ার ক্রাইমস কমিশন (কেএলডব্লিউসিসি) দুই বছর তদন্তের পর পাঁচজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত একটি ট্রাইব্যুনাল সর্বসম্মত রায়ে জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং টনি ব্লেয়ারকে ইরাক যুদ্ধে ভূমিকায় গণহত্যার জন্য দোষী করে।
২০০৩ সালের ১৯ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাকের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে—এই অজুহাতে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নির্বিচার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। তছনছ হয়ে গেছে ইরাকের অবকাঠামো ও অর্থনীতি। অথচ পরবর্তীতে সিআইএ এবং খোদ বুশ স্বীকার করেছেন, সাদ্দামের ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র সম্পর্কিত তথ্য ভুল ছিল! কিন্তু ততদিনে ৩ লক্ষাধিক বেসামরিক ইরাকির প্রাণহানি হয়েছে।
অথচ জর্জ বুশ আর তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার পশ্চিমের বাকি নেতাদের আপত্তি উপেক্ষা করে ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছিলেন। এমনকি কোন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য ইরাক আক্রমণে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত করতে দিতে রাজি হননি ব্লেয়ার। আফগানিস্তানের লাখ লাখ বেসামরিক হত্যার পেছনে পশ্চিম বরাবর আল কায়েদাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গেছে। অথচ সেই তালেবানের হাতেই বিনা প্রতিরোধে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে গেছে মার্কিন বাহিনী।
সূত্র: ওয়েস্টার্ন ওয়ার ক্রিমিনালস, লেখক: জনাথন পাওয়ার, আল জাজিরা, সিএনএন
গত এপ্রিলে ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণা দিয়ে বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এশিয়ার অর্থনীতি। দীর্ঘদিনের পুরোনো মার্কিন মিত্র জাপান থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ান জোটের দেশগুলোসহ যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর নির্ভরশ
৩ ঘণ্টা আগেগত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে। যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশিরভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প।
৭ ঘণ্টা আগেবিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে দ্রুত উত্থান, মার্কিন কৌশলগত নীতির কারণে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লির একটা আলাদা গুরুত্ব সব সময়ই ছিল। এতে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আঞ্চলিক প্রভাব অনেক বেড়েছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্ব
১ দিন আগে‘বাসুধৈব কুটুম্বকম’—বিশ্ব একটি পরিবার, এই মহৎ বার্তা দিয়েই ভারত নিজ দেশে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে বিশ্বের সামনে নিজ দেশের দর্শন তুলে ধরেছিল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। একটি জাতিকে নির্মূল করার যুদ্ধে মদদ দিয়ে, যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দমন করে, এমনকি শিশুদের ওপর বোমাবর্ষণকারী এক...
২ দিন আগে