মারুফ ইসলাম

যুদ্ধের দামামা শেষ পর্যন্ত বেজেই উঠল। পুতিনের বাহিনী সামরিক অভিযান শুরু করে দিয়েছে ইউক্রেনে। দফায় দফায় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে কিয়েভ। বিবিসির সাংবাদিক পল অ্যাডামস বলেছেন, তিনি পাঁচ-ছয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অবস্থা ওদিকে টালমাটাল। ইউরোপের বড় বড় রাষ্ট্রগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছেন তিনি। টেলিফোন করেছিলেন ‘বিশ্বমোড়ল’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। তিনি রাশিয়ার ওপর কঠোর অবরোধ আরোপের আশ্বাস দিয়েছেন বটে, কিন্তু আশ্বাসে কি আর চিড়ে ভেজে?
জেলেনস্কি টেলিফোন করেছিলেন পুতিনকেও। কিন্তু টেলিফোন তোলেননি ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও তিনি এখানে-সেখানে বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলে যাচ্ছেন, ‘আলোচনার দরজা খোলা আছে’, ‘ইউক্রেনে হামলার কোনো ইচ্ছা নেই আমাদের’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
পুতিনের এই ‘কথায় ও কাজে মিল না থাকা’ বক্তৃতা-বিবৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১৫ সালকে। তখন সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছিল। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হটানোর আন্দোলন করছিল সিরীয় বিদ্রোহীরা। অভিযোগ আছে, বিদ্রোহীদের অস্ত্রপাতি দিয়ে উসকে দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘চিরশত্রু’ রাশিয়ার কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বাশার আল আসাদের।
আসাদের আবেদনে সানন্দেই সাড়া দিয়েছিলেন পুতিন। লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করেছিলেন সিরিয়ায়।
মাস দুয়েক আগে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। পুতিনের এই সৈন্যসমাবেশ দেখে অনেকেই বলছিলেন, মস্কো কি সিরিয়া নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে ইউক্রেনে? অর্থাৎ, যে কৌশলে সিরিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন, সেই একই কৌশলে ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবেন কি না? সামরিক অভিযান অবশেষে শুরুই করে দেওয়ায় এখন সেসব প্রশ্ন আরও জোরেশোরে উঠছে।
এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ২০১৫ সালে। তখন সিরিয়ার ক্ষেত্রে কী নীতি-কৌশল অবলম্বন করেছিলেন কৌশলী পুতিন? আসুন, সেগুলো একটু মিলিয়ে দেখা যাক।
প্রথমত, এটা মনে রাখা দরকার যে স্থলবাহিনী দিয়ে সিরিয়া দখল করা উদ্দেশ্য ছিল না রাশিয়ার। পুতিনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বাশারের গদি রক্ষা করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কবজা থেকে সিরিয়াকে উদ্ধার করা। পুতিনের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আপাতত সিরিয়াকে তিনি মার্কিন কবজা থেকে বের করতে পেরেছেন এবং নিজের কবজায় নিতে পেরেছেন।
এখন যদি আমরা ইউক্রেনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, সেখানে জো বাইডেনের নিয়ন্ত্রণ আছে। পুতিনের মনে এই খায়েশ জন্মেছে, সিরিয়ার মতো ইউক্রেনকেও মার্কিনমুক্ত করে নিজের কবজায় নেওয়া। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দুটি ভূখণ্ড দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছে মস্কো। সেখানে সৈন্যও পাঠিয়ে দিয়েছে। এর একটাই অর্থ, তিনি আস্তে আস্তে কিয়েভে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপের দিকে অগ্রসর হবেন।
দ্বিতীয় লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সিরিয়ার ভূখণ্ড দখলের পরিবর্তে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও কি একই পথ অনুসরণ করবেন পুতিন? এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ সিরিয়ার ক্ষেত্রে পুতিনের পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন রাষ্ট্র ক্ষমতায়, তিনি বাশার আল আসাদ। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তো তাঁর পছন্দের ব্যক্তি নন। সে ক্ষেত্রে জেলেনস্কিকে উৎখাত করে কাকে ক্ষমতায় বসাবেন পুতিন, সেই উত্তরটা জানার জন্য সম্ভবত আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বিশ্ববাসীকে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমল থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অন্যতম শরিক দেশ সিরিয়া। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত লাটাকিয়ায় রয়েছে রাশিয়ার নৌঘাঁটি। কয়েক বছর ধরে রাশিয়া সেখানে জঙ্গি বিমান, ট্যাংকসহ সাঁজোয়া সৈন্যবাহী যান মোতায়েন করেছে। এত সব আয়োজনের কারণ হিসেবে বলা যেতেই পারে যে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়াকে প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে দেখতে চায় ক্রেমলিন।
কিন্তু ইউক্রেন দখলের মাধ্যমে কী নিয়ন্ত্রণ করতে চায় রাশিয়া? ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ভূখণ্ড দখল করার ইচ্ছা সম্ভবত পুতিনের নেই। পুতিনের বাহিনী আপাতত দূরবর্তী অবস্থানে থেকেই সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জাম, বিশেষ করে ড্রোনের মজুত ধ্বংস করছে রুশ বাহিনী। ঠিক একই কাজ সিরিয়াতেও শুরুতে করেছিল রাশিয়া।
এই হামলার ধরন সুস্পষ্ট ধারণা দিচ্ছে যে, ইউক্রেনের সামরিক শক্তি দুর্বল করাই রাশিয়ার উদ্দেশ্য। সামরিক শক্তি দুর্বল হলে জেলেনস্কি দুর্বল হবেন। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নিশ্চয় চুপচাপ বসে থাকবে না। সব ধরনের সামরিক শক্তি নিয়ে পাশে দাঁড়াবে জেলেনস্কির। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালে পুতিন কী করবেন? সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে পুতিনের পরিকল্পনা এখনো অস্পষ্ট।
তৃতীয়ত, শক্তি প্রদর্শনের ইচ্ছা। সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করার একটি বড় কারণ ছিল, রাশিয়ার সামরিক শক্তি কত বড় তা বিশ্বকে দেখানো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখানো। কাস্পিয়ান সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে রাশিয়া দেখাতে চেয়েছিল, প্রাণঘাতী হামলা চালানোর সক্ষমতায় তারাও পিছিয়ে নেই।
সেই দেখনদারির ইচ্ছা ইউক্রেন হামলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পশ্চিমারা ভেবেছিল, সিরিয়ায় সেনা পাঠানোর পর রাশিয়ার শক্তি খর্ব হয়েছে। পুতিন এই ধারণা ভেঙে দিতে চান। এবং সেই চাওয়া থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে পুতিন সৈন্য জড়ো করেছেন বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সিরিয়াকে কবজায় নেওয়ার পর রাশিয়ার সমরশক্তি আরও কত বেড়েছে, সেটা মূলত দেখাতে চান ভ্লাদিমির পুতিন।
সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এটা অন্তত বলা যায় যে, রুশ বাহিনী চেষ্টা করবে যাতে ইউক্রেনীয়রা সীমান্ত অতিক্রম না করে। অর্থাৎ সীমান্তজুড়ে বিশাল সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখতে পারে ক্রেমলিন। এরই মধ্যে চেচেন প্রেসিডেন্ট রমজান কারিদভ বলেছেন, ‘ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ধরন দেখে আমাদের মনে পড়ে যাচ্ছে সিরিয়া, লিবিয়া ও মালির কথা। সেই সব দেশের ভাগ্যেও এমন পরিণতি ঘটেছিল।’
সিরিয়া উত্তেজনায় রাশিয়া যখন নাক গলাচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর মতো ভুল করবে না রাশিয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যদ্বাণী নাকচ করে দিয়ে মস্কো ঠিকই সৈন্য পাঠিয়েছিল। ইউক্রেন ইস্যুতেও পশ্চিমারা বলছিল, ইউক্রেনে হামলা করার মতো বোকামি করবে না রাশিয়া। কিন্তু তাদের ভবিষ্যদ্বাণীও নস্যাৎ করে এরই মধ্যে হামলা করে বসেছে রাশিয়া। সুতরাং রাশিয়া হামলা চালাবে না—বিশ্ববাসীর এমন ধারণা বদলে দিতে চাইছে পুতিনের দেশ।
এদিকে রাশিয়ার চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ বলেছেন, রাশিয়া ‘চার অনুপাত এক’ নীতিতে বিশ্বাসী। এর মানে হচ্ছে, তারা যেকোনো সমস্যা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে, তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে, অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে অথবা সামরিক উপায়ে সমাধান করে থাকে। ইউক্রেনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ অস্ত্রটিই বেছে নিয়েছে রাশিয়া, কোনো আলাপ-আলোচনাতেই কর্ণপাত করেনি।
পুতিনের সিরিয়া বিজয়ের পর ইউক্রেনে আগ্রাসন দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে ২০০৬ সালের কথা। সে বছর মার্কিন-রাশিয়া সংলাপে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই ইভানভ বলেছিলেন, ইরাক ও আফগানিস্থানে মার্কিন অভিযান খুব গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছে রুশ সেনাবাহিনী। সেখান থেকে তারা শিক্ষাও নিয়েছে।
সের্গেই ইভানভের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরাক ও আফগানিস্তান দখল করেছিল, ঠিক সেভাবেই ইউক্রেন দখলে অগ্রসর হতে পারে রাশিয়া। যদিও পুতিন তাঁর আস্তিনে কী কী অস্ত্র ও কৌশল লুকিয়ে রেখেছেন, তা পূর্বানুমান করা বেশ কঠিন। যদিও অনেকেই বলছেন, ইউক্রেন হবে ‘পুতিনের সিরিয়া’। এমন কথা অবশ্য রাশিয়া যখন সিরিয়ায় সৈন্য পাঠিয়েছিল তখনো উঠেছিল। অনেক বিশ্লেষক তখন বলেছিলেন, সিরিয়া হবে ‘পুতিনের আফগানিস্তান’।
আসলেই কী হবে, তা বুঝতে সময় লাগবে আরও। তবে সিরিয়ার পর পুতিনের ঘোষণাতেই বিশ্ব যে আবার যুদ্ধের সংকটে পড়ল, সেটি অনুধাবনে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যুদ্ধ শুরু করার দায় মেটানো কিন্তু কঠিনই হবে রাশিয়ার জন্য।
তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন ও দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট

যুদ্ধের দামামা শেষ পর্যন্ত বেজেই উঠল। পুতিনের বাহিনী সামরিক অভিযান শুরু করে দিয়েছে ইউক্রেনে। দফায় দফায় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে কিয়েভ। বিবিসির সাংবাদিক পল অ্যাডামস বলেছেন, তিনি পাঁচ-ছয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অবস্থা ওদিকে টালমাটাল। ইউরোপের বড় বড় রাষ্ট্রগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছেন তিনি। টেলিফোন করেছিলেন ‘বিশ্বমোড়ল’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। তিনি রাশিয়ার ওপর কঠোর অবরোধ আরোপের আশ্বাস দিয়েছেন বটে, কিন্তু আশ্বাসে কি আর চিড়ে ভেজে?
জেলেনস্কি টেলিফোন করেছিলেন পুতিনকেও। কিন্তু টেলিফোন তোলেননি ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও তিনি এখানে-সেখানে বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলে যাচ্ছেন, ‘আলোচনার দরজা খোলা আছে’, ‘ইউক্রেনে হামলার কোনো ইচ্ছা নেই আমাদের’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
পুতিনের এই ‘কথায় ও কাজে মিল না থাকা’ বক্তৃতা-বিবৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১৫ সালকে। তখন সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছিল। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হটানোর আন্দোলন করছিল সিরীয় বিদ্রোহীরা। অভিযোগ আছে, বিদ্রোহীদের অস্ত্রপাতি দিয়ে উসকে দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘চিরশত্রু’ রাশিয়ার কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বাশার আল আসাদের।
আসাদের আবেদনে সানন্দেই সাড়া দিয়েছিলেন পুতিন। লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করেছিলেন সিরিয়ায়।
মাস দুয়েক আগে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। পুতিনের এই সৈন্যসমাবেশ দেখে অনেকেই বলছিলেন, মস্কো কি সিরিয়া নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে ইউক্রেনে? অর্থাৎ, যে কৌশলে সিরিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন, সেই একই কৌশলে ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবেন কি না? সামরিক অভিযান অবশেষে শুরুই করে দেওয়ায় এখন সেসব প্রশ্ন আরও জোরেশোরে উঠছে।
এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ২০১৫ সালে। তখন সিরিয়ার ক্ষেত্রে কী নীতি-কৌশল অবলম্বন করেছিলেন কৌশলী পুতিন? আসুন, সেগুলো একটু মিলিয়ে দেখা যাক।
প্রথমত, এটা মনে রাখা দরকার যে স্থলবাহিনী দিয়ে সিরিয়া দখল করা উদ্দেশ্য ছিল না রাশিয়ার। পুতিনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বাশারের গদি রক্ষা করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কবজা থেকে সিরিয়াকে উদ্ধার করা। পুতিনের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আপাতত সিরিয়াকে তিনি মার্কিন কবজা থেকে বের করতে পেরেছেন এবং নিজের কবজায় নিতে পেরেছেন।
এখন যদি আমরা ইউক্রেনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, সেখানে জো বাইডেনের নিয়ন্ত্রণ আছে। পুতিনের মনে এই খায়েশ জন্মেছে, সিরিয়ার মতো ইউক্রেনকেও মার্কিনমুক্ত করে নিজের কবজায় নেওয়া। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দুটি ভূখণ্ড দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছে মস্কো। সেখানে সৈন্যও পাঠিয়ে দিয়েছে। এর একটাই অর্থ, তিনি আস্তে আস্তে কিয়েভে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপের দিকে অগ্রসর হবেন।
দ্বিতীয় লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সিরিয়ার ভূখণ্ড দখলের পরিবর্তে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও কি একই পথ অনুসরণ করবেন পুতিন? এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ সিরিয়ার ক্ষেত্রে পুতিনের পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন রাষ্ট্র ক্ষমতায়, তিনি বাশার আল আসাদ। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তো তাঁর পছন্দের ব্যক্তি নন। সে ক্ষেত্রে জেলেনস্কিকে উৎখাত করে কাকে ক্ষমতায় বসাবেন পুতিন, সেই উত্তরটা জানার জন্য সম্ভবত আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বিশ্ববাসীকে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমল থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অন্যতম শরিক দেশ সিরিয়া। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত লাটাকিয়ায় রয়েছে রাশিয়ার নৌঘাঁটি। কয়েক বছর ধরে রাশিয়া সেখানে জঙ্গি বিমান, ট্যাংকসহ সাঁজোয়া সৈন্যবাহী যান মোতায়েন করেছে। এত সব আয়োজনের কারণ হিসেবে বলা যেতেই পারে যে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়াকে প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে দেখতে চায় ক্রেমলিন।
কিন্তু ইউক্রেন দখলের মাধ্যমে কী নিয়ন্ত্রণ করতে চায় রাশিয়া? ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ভূখণ্ড দখল করার ইচ্ছা সম্ভবত পুতিনের নেই। পুতিনের বাহিনী আপাতত দূরবর্তী অবস্থানে থেকেই সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জাম, বিশেষ করে ড্রোনের মজুত ধ্বংস করছে রুশ বাহিনী। ঠিক একই কাজ সিরিয়াতেও শুরুতে করেছিল রাশিয়া।
এই হামলার ধরন সুস্পষ্ট ধারণা দিচ্ছে যে, ইউক্রেনের সামরিক শক্তি দুর্বল করাই রাশিয়ার উদ্দেশ্য। সামরিক শক্তি দুর্বল হলে জেলেনস্কি দুর্বল হবেন। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নিশ্চয় চুপচাপ বসে থাকবে না। সব ধরনের সামরিক শক্তি নিয়ে পাশে দাঁড়াবে জেলেনস্কির। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালে পুতিন কী করবেন? সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে পুতিনের পরিকল্পনা এখনো অস্পষ্ট।
তৃতীয়ত, শক্তি প্রদর্শনের ইচ্ছা। সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করার একটি বড় কারণ ছিল, রাশিয়ার সামরিক শক্তি কত বড় তা বিশ্বকে দেখানো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখানো। কাস্পিয়ান সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে রাশিয়া দেখাতে চেয়েছিল, প্রাণঘাতী হামলা চালানোর সক্ষমতায় তারাও পিছিয়ে নেই।
সেই দেখনদারির ইচ্ছা ইউক্রেন হামলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পশ্চিমারা ভেবেছিল, সিরিয়ায় সেনা পাঠানোর পর রাশিয়ার শক্তি খর্ব হয়েছে। পুতিন এই ধারণা ভেঙে দিতে চান। এবং সেই চাওয়া থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে পুতিন সৈন্য জড়ো করেছেন বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সিরিয়াকে কবজায় নেওয়ার পর রাশিয়ার সমরশক্তি আরও কত বেড়েছে, সেটা মূলত দেখাতে চান ভ্লাদিমির পুতিন।
সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এটা অন্তত বলা যায় যে, রুশ বাহিনী চেষ্টা করবে যাতে ইউক্রেনীয়রা সীমান্ত অতিক্রম না করে। অর্থাৎ সীমান্তজুড়ে বিশাল সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখতে পারে ক্রেমলিন। এরই মধ্যে চেচেন প্রেসিডেন্ট রমজান কারিদভ বলেছেন, ‘ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ধরন দেখে আমাদের মনে পড়ে যাচ্ছে সিরিয়া, লিবিয়া ও মালির কথা। সেই সব দেশের ভাগ্যেও এমন পরিণতি ঘটেছিল।’
সিরিয়া উত্তেজনায় রাশিয়া যখন নাক গলাচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর মতো ভুল করবে না রাশিয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যদ্বাণী নাকচ করে দিয়ে মস্কো ঠিকই সৈন্য পাঠিয়েছিল। ইউক্রেন ইস্যুতেও পশ্চিমারা বলছিল, ইউক্রেনে হামলা করার মতো বোকামি করবে না রাশিয়া। কিন্তু তাদের ভবিষ্যদ্বাণীও নস্যাৎ করে এরই মধ্যে হামলা করে বসেছে রাশিয়া। সুতরাং রাশিয়া হামলা চালাবে না—বিশ্ববাসীর এমন ধারণা বদলে দিতে চাইছে পুতিনের দেশ।
এদিকে রাশিয়ার চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ বলেছেন, রাশিয়া ‘চার অনুপাত এক’ নীতিতে বিশ্বাসী। এর মানে হচ্ছে, তারা যেকোনো সমস্যা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে, তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে, অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে অথবা সামরিক উপায়ে সমাধান করে থাকে। ইউক্রেনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ অস্ত্রটিই বেছে নিয়েছে রাশিয়া, কোনো আলাপ-আলোচনাতেই কর্ণপাত করেনি।
পুতিনের সিরিয়া বিজয়ের পর ইউক্রেনে আগ্রাসন দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে ২০০৬ সালের কথা। সে বছর মার্কিন-রাশিয়া সংলাপে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই ইভানভ বলেছিলেন, ইরাক ও আফগানিস্থানে মার্কিন অভিযান খুব গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছে রুশ সেনাবাহিনী। সেখান থেকে তারা শিক্ষাও নিয়েছে।
সের্গেই ইভানভের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরাক ও আফগানিস্তান দখল করেছিল, ঠিক সেভাবেই ইউক্রেন দখলে অগ্রসর হতে পারে রাশিয়া। যদিও পুতিন তাঁর আস্তিনে কী কী অস্ত্র ও কৌশল লুকিয়ে রেখেছেন, তা পূর্বানুমান করা বেশ কঠিন। যদিও অনেকেই বলছেন, ইউক্রেন হবে ‘পুতিনের সিরিয়া’। এমন কথা অবশ্য রাশিয়া যখন সিরিয়ায় সৈন্য পাঠিয়েছিল তখনো উঠেছিল। অনেক বিশ্লেষক তখন বলেছিলেন, সিরিয়া হবে ‘পুতিনের আফগানিস্তান’।
আসলেই কী হবে, তা বুঝতে সময় লাগবে আরও। তবে সিরিয়ার পর পুতিনের ঘোষণাতেই বিশ্ব যে আবার যুদ্ধের সংকটে পড়ল, সেটি অনুধাবনে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যুদ্ধ শুরু করার দায় মেটানো কিন্তু কঠিনই হবে রাশিয়ার জন্য।
তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন ও দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট
মারুফ ইসলাম

যুদ্ধের দামামা শেষ পর্যন্ত বেজেই উঠল। পুতিনের বাহিনী সামরিক অভিযান শুরু করে দিয়েছে ইউক্রেনে। দফায় দফায় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে কিয়েভ। বিবিসির সাংবাদিক পল অ্যাডামস বলেছেন, তিনি পাঁচ-ছয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অবস্থা ওদিকে টালমাটাল। ইউরোপের বড় বড় রাষ্ট্রগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছেন তিনি। টেলিফোন করেছিলেন ‘বিশ্বমোড়ল’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। তিনি রাশিয়ার ওপর কঠোর অবরোধ আরোপের আশ্বাস দিয়েছেন বটে, কিন্তু আশ্বাসে কি আর চিড়ে ভেজে?
জেলেনস্কি টেলিফোন করেছিলেন পুতিনকেও। কিন্তু টেলিফোন তোলেননি ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও তিনি এখানে-সেখানে বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলে যাচ্ছেন, ‘আলোচনার দরজা খোলা আছে’, ‘ইউক্রেনে হামলার কোনো ইচ্ছা নেই আমাদের’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
পুতিনের এই ‘কথায় ও কাজে মিল না থাকা’ বক্তৃতা-বিবৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১৫ সালকে। তখন সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছিল। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হটানোর আন্দোলন করছিল সিরীয় বিদ্রোহীরা। অভিযোগ আছে, বিদ্রোহীদের অস্ত্রপাতি দিয়ে উসকে দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘চিরশত্রু’ রাশিয়ার কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বাশার আল আসাদের।
আসাদের আবেদনে সানন্দেই সাড়া দিয়েছিলেন পুতিন। লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করেছিলেন সিরিয়ায়।
মাস দুয়েক আগে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। পুতিনের এই সৈন্যসমাবেশ দেখে অনেকেই বলছিলেন, মস্কো কি সিরিয়া নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে ইউক্রেনে? অর্থাৎ, যে কৌশলে সিরিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন, সেই একই কৌশলে ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবেন কি না? সামরিক অভিযান অবশেষে শুরুই করে দেওয়ায় এখন সেসব প্রশ্ন আরও জোরেশোরে উঠছে।
এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ২০১৫ সালে। তখন সিরিয়ার ক্ষেত্রে কী নীতি-কৌশল অবলম্বন করেছিলেন কৌশলী পুতিন? আসুন, সেগুলো একটু মিলিয়ে দেখা যাক।
প্রথমত, এটা মনে রাখা দরকার যে স্থলবাহিনী দিয়ে সিরিয়া দখল করা উদ্দেশ্য ছিল না রাশিয়ার। পুতিনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বাশারের গদি রক্ষা করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কবজা থেকে সিরিয়াকে উদ্ধার করা। পুতিনের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আপাতত সিরিয়াকে তিনি মার্কিন কবজা থেকে বের করতে পেরেছেন এবং নিজের কবজায় নিতে পেরেছেন।
এখন যদি আমরা ইউক্রেনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, সেখানে জো বাইডেনের নিয়ন্ত্রণ আছে। পুতিনের মনে এই খায়েশ জন্মেছে, সিরিয়ার মতো ইউক্রেনকেও মার্কিনমুক্ত করে নিজের কবজায় নেওয়া। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দুটি ভূখণ্ড দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছে মস্কো। সেখানে সৈন্যও পাঠিয়ে দিয়েছে। এর একটাই অর্থ, তিনি আস্তে আস্তে কিয়েভে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপের দিকে অগ্রসর হবেন।
দ্বিতীয় লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সিরিয়ার ভূখণ্ড দখলের পরিবর্তে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও কি একই পথ অনুসরণ করবেন পুতিন? এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ সিরিয়ার ক্ষেত্রে পুতিনের পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন রাষ্ট্র ক্ষমতায়, তিনি বাশার আল আসাদ। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তো তাঁর পছন্দের ব্যক্তি নন। সে ক্ষেত্রে জেলেনস্কিকে উৎখাত করে কাকে ক্ষমতায় বসাবেন পুতিন, সেই উত্তরটা জানার জন্য সম্ভবত আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বিশ্ববাসীকে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমল থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অন্যতম শরিক দেশ সিরিয়া। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত লাটাকিয়ায় রয়েছে রাশিয়ার নৌঘাঁটি। কয়েক বছর ধরে রাশিয়া সেখানে জঙ্গি বিমান, ট্যাংকসহ সাঁজোয়া সৈন্যবাহী যান মোতায়েন করেছে। এত সব আয়োজনের কারণ হিসেবে বলা যেতেই পারে যে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়াকে প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে দেখতে চায় ক্রেমলিন।
কিন্তু ইউক্রেন দখলের মাধ্যমে কী নিয়ন্ত্রণ করতে চায় রাশিয়া? ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ভূখণ্ড দখল করার ইচ্ছা সম্ভবত পুতিনের নেই। পুতিনের বাহিনী আপাতত দূরবর্তী অবস্থানে থেকেই সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জাম, বিশেষ করে ড্রোনের মজুত ধ্বংস করছে রুশ বাহিনী। ঠিক একই কাজ সিরিয়াতেও শুরুতে করেছিল রাশিয়া।
এই হামলার ধরন সুস্পষ্ট ধারণা দিচ্ছে যে, ইউক্রেনের সামরিক শক্তি দুর্বল করাই রাশিয়ার উদ্দেশ্য। সামরিক শক্তি দুর্বল হলে জেলেনস্কি দুর্বল হবেন। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নিশ্চয় চুপচাপ বসে থাকবে না। সব ধরনের সামরিক শক্তি নিয়ে পাশে দাঁড়াবে জেলেনস্কির। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালে পুতিন কী করবেন? সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে পুতিনের পরিকল্পনা এখনো অস্পষ্ট।
তৃতীয়ত, শক্তি প্রদর্শনের ইচ্ছা। সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করার একটি বড় কারণ ছিল, রাশিয়ার সামরিক শক্তি কত বড় তা বিশ্বকে দেখানো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখানো। কাস্পিয়ান সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে রাশিয়া দেখাতে চেয়েছিল, প্রাণঘাতী হামলা চালানোর সক্ষমতায় তারাও পিছিয়ে নেই।
সেই দেখনদারির ইচ্ছা ইউক্রেন হামলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পশ্চিমারা ভেবেছিল, সিরিয়ায় সেনা পাঠানোর পর রাশিয়ার শক্তি খর্ব হয়েছে। পুতিন এই ধারণা ভেঙে দিতে চান। এবং সেই চাওয়া থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে পুতিন সৈন্য জড়ো করেছেন বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সিরিয়াকে কবজায় নেওয়ার পর রাশিয়ার সমরশক্তি আরও কত বেড়েছে, সেটা মূলত দেখাতে চান ভ্লাদিমির পুতিন।
সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এটা অন্তত বলা যায় যে, রুশ বাহিনী চেষ্টা করবে যাতে ইউক্রেনীয়রা সীমান্ত অতিক্রম না করে। অর্থাৎ সীমান্তজুড়ে বিশাল সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখতে পারে ক্রেমলিন। এরই মধ্যে চেচেন প্রেসিডেন্ট রমজান কারিদভ বলেছেন, ‘ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ধরন দেখে আমাদের মনে পড়ে যাচ্ছে সিরিয়া, লিবিয়া ও মালির কথা। সেই সব দেশের ভাগ্যেও এমন পরিণতি ঘটেছিল।’
সিরিয়া উত্তেজনায় রাশিয়া যখন নাক গলাচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর মতো ভুল করবে না রাশিয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যদ্বাণী নাকচ করে দিয়ে মস্কো ঠিকই সৈন্য পাঠিয়েছিল। ইউক্রেন ইস্যুতেও পশ্চিমারা বলছিল, ইউক্রেনে হামলা করার মতো বোকামি করবে না রাশিয়া। কিন্তু তাদের ভবিষ্যদ্বাণীও নস্যাৎ করে এরই মধ্যে হামলা করে বসেছে রাশিয়া। সুতরাং রাশিয়া হামলা চালাবে না—বিশ্ববাসীর এমন ধারণা বদলে দিতে চাইছে পুতিনের দেশ।
এদিকে রাশিয়ার চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ বলেছেন, রাশিয়া ‘চার অনুপাত এক’ নীতিতে বিশ্বাসী। এর মানে হচ্ছে, তারা যেকোনো সমস্যা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে, তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে, অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে অথবা সামরিক উপায়ে সমাধান করে থাকে। ইউক্রেনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ অস্ত্রটিই বেছে নিয়েছে রাশিয়া, কোনো আলাপ-আলোচনাতেই কর্ণপাত করেনি।
পুতিনের সিরিয়া বিজয়ের পর ইউক্রেনে আগ্রাসন দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে ২০০৬ সালের কথা। সে বছর মার্কিন-রাশিয়া সংলাপে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই ইভানভ বলেছিলেন, ইরাক ও আফগানিস্থানে মার্কিন অভিযান খুব গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছে রুশ সেনাবাহিনী। সেখান থেকে তারা শিক্ষাও নিয়েছে।
সের্গেই ইভানভের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরাক ও আফগানিস্তান দখল করেছিল, ঠিক সেভাবেই ইউক্রেন দখলে অগ্রসর হতে পারে রাশিয়া। যদিও পুতিন তাঁর আস্তিনে কী কী অস্ত্র ও কৌশল লুকিয়ে রেখেছেন, তা পূর্বানুমান করা বেশ কঠিন। যদিও অনেকেই বলছেন, ইউক্রেন হবে ‘পুতিনের সিরিয়া’। এমন কথা অবশ্য রাশিয়া যখন সিরিয়ায় সৈন্য পাঠিয়েছিল তখনো উঠেছিল। অনেক বিশ্লেষক তখন বলেছিলেন, সিরিয়া হবে ‘পুতিনের আফগানিস্তান’।
আসলেই কী হবে, তা বুঝতে সময় লাগবে আরও। তবে সিরিয়ার পর পুতিনের ঘোষণাতেই বিশ্ব যে আবার যুদ্ধের সংকটে পড়ল, সেটি অনুধাবনে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যুদ্ধ শুরু করার দায় মেটানো কিন্তু কঠিনই হবে রাশিয়ার জন্য।
তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন ও দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট

যুদ্ধের দামামা শেষ পর্যন্ত বেজেই উঠল। পুতিনের বাহিনী সামরিক অভিযান শুরু করে দিয়েছে ইউক্রেনে। দফায় দফায় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে কিয়েভ। বিবিসির সাংবাদিক পল অ্যাডামস বলেছেন, তিনি পাঁচ-ছয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অবস্থা ওদিকে টালমাটাল। ইউরোপের বড় বড় রাষ্ট্রগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছেন তিনি। টেলিফোন করেছিলেন ‘বিশ্বমোড়ল’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। তিনি রাশিয়ার ওপর কঠোর অবরোধ আরোপের আশ্বাস দিয়েছেন বটে, কিন্তু আশ্বাসে কি আর চিড়ে ভেজে?
জেলেনস্কি টেলিফোন করেছিলেন পুতিনকেও। কিন্তু টেলিফোন তোলেননি ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও তিনি এখানে-সেখানে বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলে যাচ্ছেন, ‘আলোচনার দরজা খোলা আছে’, ‘ইউক্রেনে হামলার কোনো ইচ্ছা নেই আমাদের’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
পুতিনের এই ‘কথায় ও কাজে মিল না থাকা’ বক্তৃতা-বিবৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১৫ সালকে। তখন সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছিল। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হটানোর আন্দোলন করছিল সিরীয় বিদ্রোহীরা। অভিযোগ আছে, বিদ্রোহীদের অস্ত্রপাতি দিয়ে উসকে দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘চিরশত্রু’ রাশিয়ার কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বাশার আল আসাদের।
আসাদের আবেদনে সানন্দেই সাড়া দিয়েছিলেন পুতিন। লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করেছিলেন সিরিয়ায়।
মাস দুয়েক আগে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। পুতিনের এই সৈন্যসমাবেশ দেখে অনেকেই বলছিলেন, মস্কো কি সিরিয়া নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে ইউক্রেনে? অর্থাৎ, যে কৌশলে সিরিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন, সেই একই কৌশলে ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবেন কি না? সামরিক অভিযান অবশেষে শুরুই করে দেওয়ায় এখন সেসব প্রশ্ন আরও জোরেশোরে উঠছে।
এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ২০১৫ সালে। তখন সিরিয়ার ক্ষেত্রে কী নীতি-কৌশল অবলম্বন করেছিলেন কৌশলী পুতিন? আসুন, সেগুলো একটু মিলিয়ে দেখা যাক।
প্রথমত, এটা মনে রাখা দরকার যে স্থলবাহিনী দিয়ে সিরিয়া দখল করা উদ্দেশ্য ছিল না রাশিয়ার। পুতিনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বাশারের গদি রক্ষা করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কবজা থেকে সিরিয়াকে উদ্ধার করা। পুতিনের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আপাতত সিরিয়াকে তিনি মার্কিন কবজা থেকে বের করতে পেরেছেন এবং নিজের কবজায় নিতে পেরেছেন।
এখন যদি আমরা ইউক্রেনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, সেখানে জো বাইডেনের নিয়ন্ত্রণ আছে। পুতিনের মনে এই খায়েশ জন্মেছে, সিরিয়ার মতো ইউক্রেনকেও মার্কিনমুক্ত করে নিজের কবজায় নেওয়া। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দুটি ভূখণ্ড দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছে মস্কো। সেখানে সৈন্যও পাঠিয়ে দিয়েছে। এর একটাই অর্থ, তিনি আস্তে আস্তে কিয়েভে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপের দিকে অগ্রসর হবেন।
দ্বিতীয় লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সিরিয়ার ভূখণ্ড দখলের পরিবর্তে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও কি একই পথ অনুসরণ করবেন পুতিন? এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ সিরিয়ার ক্ষেত্রে পুতিনের পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন রাষ্ট্র ক্ষমতায়, তিনি বাশার আল আসাদ। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তো তাঁর পছন্দের ব্যক্তি নন। সে ক্ষেত্রে জেলেনস্কিকে উৎখাত করে কাকে ক্ষমতায় বসাবেন পুতিন, সেই উত্তরটা জানার জন্য সম্ভবত আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বিশ্ববাসীকে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমল থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অন্যতম শরিক দেশ সিরিয়া। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত লাটাকিয়ায় রয়েছে রাশিয়ার নৌঘাঁটি। কয়েক বছর ধরে রাশিয়া সেখানে জঙ্গি বিমান, ট্যাংকসহ সাঁজোয়া সৈন্যবাহী যান মোতায়েন করেছে। এত সব আয়োজনের কারণ হিসেবে বলা যেতেই পারে যে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়াকে প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে দেখতে চায় ক্রেমলিন।
কিন্তু ইউক্রেন দখলের মাধ্যমে কী নিয়ন্ত্রণ করতে চায় রাশিয়া? ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ভূখণ্ড দখল করার ইচ্ছা সম্ভবত পুতিনের নেই। পুতিনের বাহিনী আপাতত দূরবর্তী অবস্থানে থেকেই সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জাম, বিশেষ করে ড্রোনের মজুত ধ্বংস করছে রুশ বাহিনী। ঠিক একই কাজ সিরিয়াতেও শুরুতে করেছিল রাশিয়া।
এই হামলার ধরন সুস্পষ্ট ধারণা দিচ্ছে যে, ইউক্রেনের সামরিক শক্তি দুর্বল করাই রাশিয়ার উদ্দেশ্য। সামরিক শক্তি দুর্বল হলে জেলেনস্কি দুর্বল হবেন। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নিশ্চয় চুপচাপ বসে থাকবে না। সব ধরনের সামরিক শক্তি নিয়ে পাশে দাঁড়াবে জেলেনস্কির। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালে পুতিন কী করবেন? সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে পুতিনের পরিকল্পনা এখনো অস্পষ্ট।
তৃতীয়ত, শক্তি প্রদর্শনের ইচ্ছা। সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করার একটি বড় কারণ ছিল, রাশিয়ার সামরিক শক্তি কত বড় তা বিশ্বকে দেখানো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখানো। কাস্পিয়ান সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে রাশিয়া দেখাতে চেয়েছিল, প্রাণঘাতী হামলা চালানোর সক্ষমতায় তারাও পিছিয়ে নেই।
সেই দেখনদারির ইচ্ছা ইউক্রেন হামলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পশ্চিমারা ভেবেছিল, সিরিয়ায় সেনা পাঠানোর পর রাশিয়ার শক্তি খর্ব হয়েছে। পুতিন এই ধারণা ভেঙে দিতে চান। এবং সেই চাওয়া থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে পুতিন সৈন্য জড়ো করেছেন বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সিরিয়াকে কবজায় নেওয়ার পর রাশিয়ার সমরশক্তি আরও কত বেড়েছে, সেটা মূলত দেখাতে চান ভ্লাদিমির পুতিন।
সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এটা অন্তত বলা যায় যে, রুশ বাহিনী চেষ্টা করবে যাতে ইউক্রেনীয়রা সীমান্ত অতিক্রম না করে। অর্থাৎ সীমান্তজুড়ে বিশাল সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখতে পারে ক্রেমলিন। এরই মধ্যে চেচেন প্রেসিডেন্ট রমজান কারিদভ বলেছেন, ‘ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ধরন দেখে আমাদের মনে পড়ে যাচ্ছে সিরিয়া, লিবিয়া ও মালির কথা। সেই সব দেশের ভাগ্যেও এমন পরিণতি ঘটেছিল।’
সিরিয়া উত্তেজনায় রাশিয়া যখন নাক গলাচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর মতো ভুল করবে না রাশিয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যদ্বাণী নাকচ করে দিয়ে মস্কো ঠিকই সৈন্য পাঠিয়েছিল। ইউক্রেন ইস্যুতেও পশ্চিমারা বলছিল, ইউক্রেনে হামলা করার মতো বোকামি করবে না রাশিয়া। কিন্তু তাদের ভবিষ্যদ্বাণীও নস্যাৎ করে এরই মধ্যে হামলা করে বসেছে রাশিয়া। সুতরাং রাশিয়া হামলা চালাবে না—বিশ্ববাসীর এমন ধারণা বদলে দিতে চাইছে পুতিনের দেশ।
এদিকে রাশিয়ার চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ বলেছেন, রাশিয়া ‘চার অনুপাত এক’ নীতিতে বিশ্বাসী। এর মানে হচ্ছে, তারা যেকোনো সমস্যা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে, তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে, অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে অথবা সামরিক উপায়ে সমাধান করে থাকে। ইউক্রেনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ অস্ত্রটিই বেছে নিয়েছে রাশিয়া, কোনো আলাপ-আলোচনাতেই কর্ণপাত করেনি।
পুতিনের সিরিয়া বিজয়ের পর ইউক্রেনে আগ্রাসন দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে ২০০৬ সালের কথা। সে বছর মার্কিন-রাশিয়া সংলাপে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই ইভানভ বলেছিলেন, ইরাক ও আফগানিস্থানে মার্কিন অভিযান খুব গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছে রুশ সেনাবাহিনী। সেখান থেকে তারা শিক্ষাও নিয়েছে।
সের্গেই ইভানভের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরাক ও আফগানিস্তান দখল করেছিল, ঠিক সেভাবেই ইউক্রেন দখলে অগ্রসর হতে পারে রাশিয়া। যদিও পুতিন তাঁর আস্তিনে কী কী অস্ত্র ও কৌশল লুকিয়ে রেখেছেন, তা পূর্বানুমান করা বেশ কঠিন। যদিও অনেকেই বলছেন, ইউক্রেন হবে ‘পুতিনের সিরিয়া’। এমন কথা অবশ্য রাশিয়া যখন সিরিয়ায় সৈন্য পাঠিয়েছিল তখনো উঠেছিল। অনেক বিশ্লেষক তখন বলেছিলেন, সিরিয়া হবে ‘পুতিনের আফগানিস্তান’।
আসলেই কী হবে, তা বুঝতে সময় লাগবে আরও। তবে সিরিয়ার পর পুতিনের ঘোষণাতেই বিশ্ব যে আবার যুদ্ধের সংকটে পড়ল, সেটি অনুধাবনে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যুদ্ধ শুরু করার দায় মেটানো কিন্তু কঠিনই হবে রাশিয়ার জন্য।
তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন ও দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট

আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
২ দিন আগে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৩ দিন আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আফ্রিকা মহাদেশে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার এবং চলমান সংঘাতকে উসকে দেওয়ার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে। সোমালিয়ার পুনটল্যান্ড রাজ্যের বোসাসো বিমানবন্দরকে একটি গোপন ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে আমিরাত সুদানের বিতর্কিত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা।
মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা, স্যাটেলাইট চিত্র, স্থানীয় সূত্র এবং মার্কিন ও আঞ্চলিক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।

ভারী কার্গো বিমানের রহস্যময় যাতায়াত
বোসাসো বিমানবন্দরে আজকাল ভারী কার্গো পরিবহনকারী আইএফ-৭৬ বিমানের ঘন ঘন অবতরণ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন নিয়মিত ঘটনা। পুনটল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্সের (পিএমপিএফ) একজন কমান্ডার (আবদুল্লাহি) মিডল ইস্ট মনিটরকে জানিয়েছেন, এই বিমানগুলো ঘন ঘন আসে এবং এগুলোর মাধ্যমে আসা সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ দ্রুত অপেক্ষমাণ অন্য বিমানে তুলে সুদানে আরএসএফ-এর জন্য পাঠানো হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিমানগুলোর উৎস হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিমানবন্দর ব্যবহারের সময়সূচি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় এবং বিমানগুলো সাধারণত বিমানবন্দরের কর্মচাঞ্চল্য কম থাকার সময় বোসাসোতে পৌঁছায়। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, এই চালানগুলোর মধ্যে চীনা-নির্মিত ড্রোনসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।
বোসাসো বন্দরের একজন সিনিয়র ম্যানেজার প্রথমবারের মতো মিডল ইস্ট আই-কে নিশ্চিত করেছেন, গত দুই বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত কন্টেইনার আমিরাত বোসাসো বন্দরের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। সাধারণ কার্গোর বিপরীতে, এই আমিরাতি চালানগুলোতে ভেতরের মালপত্র বা গন্তব্যের কোনো বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করা হয় না। বন্দরে একটি জাহাজ ভিড়লে পিএমপিএফ বাহিনীকে মোতায়েন করে এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।
কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনাদের গোপন নেটওয়ার্ক
বোসাসো বিমানবন্দরের উত্তর দিকে একটি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, এটি কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনাদের আশ্রয়স্থল। মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ব্যাকপ্যাক বহনকারী ডজন ডজন কলম্বিয়ান বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি সামরিক ক্যাম্পে যাচ্ছে। পিএমপিএফ কমান্ডার আব্দুল্লাহি নিশ্চিত করেছেন, এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনা আরএসএফ-এর পক্ষে সুদানে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করছে।
এই ভাড়াটে সেনারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে বোসাসোতে আসে এবং এরপর প্রায় প্রতিদিনই ট্রানজিট হয়ে সুদানে পাড়ি জমায়। এই ভাড়াটে সেনারা তাদের ক্যাম্পের ভেতরে একটি নতুন হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। সেখানে সুদানে আহত হওয়া আরএসএফ সৈন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহি রক্তমাখা বিমান দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, এই ক্যাম্প আহত আরএসএফ যোদ্ধাদের জন্য একটি চিকিৎসা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বোসাসো বিমানবন্দরকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানে একটি ফরাসি-নির্মিত সামরিক রাডার সিস্টেমও স্থাপন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিল, আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী মিলিশিয়ারা সুদানে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরএসএফ-কে সোমালিয়ার মাটি ব্যবহার করে সাহায্য করার বিষয়টি স্থানীয় পিএমপিএফ সৈন্যদের মধ্যে তীব্র নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। অনেক সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, দীর্ঘদিনের মিত্র সুদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনাদের সহায়তা করা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
হর্ন অব আফ্রিকার সংঘাত বিশেষজ্ঞ মার্টিন প্লট সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সুদানের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করছে এবং পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এই অপরাধে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে গৃহযুদ্ধে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে সমর্থন করার অভিযোগে সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। খার্তুম অভিযোগ করে, আরব আমিরাত পশ্চিম দারফুরে মাসালিত সম্প্রদায়ের ‘গণহত্যায় জড়িত’, তারা আরএসএফকে সামরিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে এ অপরাধ সংঘটিত করছে।
যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আরএসএফ এবং সুদানি সেনাবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মোগাদিসুর নীরবতা ও আমিরাতের কৌশলগত ঘাঁটি
সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোগাদিসুর আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করলেও, তাদের বোসাসোর বন্দর ও বিমানবন্দরের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার (প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ-এর নেতৃত্বাধীন) আমিরাতের ক্রমবর্ধমান ও প্রসারমান প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত না থাকায় সামরিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে বাধা দিতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমিরাতের এই কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুদানের স্বর্ণখনি দখল এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার। আমিরাত এই অঞ্চলে মায়ুন, আবদ আল-কুরি, সামহা, সোমালিল্যান্ডের বেরবেরা এবং ইয়েমেনের মোচা বন্দরে ঘাঁটি নির্মাণ বা সম্প্রসারণের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
প্লট আরও বলেন, পুনটল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং নজরদারির অভাব এটিকে আমিরাতের জন্য আদর্শ অপারেশনাল ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। কারণ এখানে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।
আমিরাত সরকার একাধিকবার আরএসএফকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, এ বিষয়ে মির বা পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কেউই কখনো গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

আফ্রিকা মহাদেশে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার এবং চলমান সংঘাতকে উসকে দেওয়ার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে। সোমালিয়ার পুনটল্যান্ড রাজ্যের বোসাসো বিমানবন্দরকে একটি গোপন ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে আমিরাত সুদানের বিতর্কিত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা।
মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা, স্যাটেলাইট চিত্র, স্থানীয় সূত্র এবং মার্কিন ও আঞ্চলিক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।

ভারী কার্গো বিমানের রহস্যময় যাতায়াত
বোসাসো বিমানবন্দরে আজকাল ভারী কার্গো পরিবহনকারী আইএফ-৭৬ বিমানের ঘন ঘন অবতরণ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন নিয়মিত ঘটনা। পুনটল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্সের (পিএমপিএফ) একজন কমান্ডার (আবদুল্লাহি) মিডল ইস্ট মনিটরকে জানিয়েছেন, এই বিমানগুলো ঘন ঘন আসে এবং এগুলোর মাধ্যমে আসা সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ দ্রুত অপেক্ষমাণ অন্য বিমানে তুলে সুদানে আরএসএফ-এর জন্য পাঠানো হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিমানগুলোর উৎস হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিমানবন্দর ব্যবহারের সময়সূচি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় এবং বিমানগুলো সাধারণত বিমানবন্দরের কর্মচাঞ্চল্য কম থাকার সময় বোসাসোতে পৌঁছায়। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, এই চালানগুলোর মধ্যে চীনা-নির্মিত ড্রোনসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।
বোসাসো বন্দরের একজন সিনিয়র ম্যানেজার প্রথমবারের মতো মিডল ইস্ট আই-কে নিশ্চিত করেছেন, গত দুই বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত কন্টেইনার আমিরাত বোসাসো বন্দরের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। সাধারণ কার্গোর বিপরীতে, এই আমিরাতি চালানগুলোতে ভেতরের মালপত্র বা গন্তব্যের কোনো বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করা হয় না। বন্দরে একটি জাহাজ ভিড়লে পিএমপিএফ বাহিনীকে মোতায়েন করে এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।
কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনাদের গোপন নেটওয়ার্ক
বোসাসো বিমানবন্দরের উত্তর দিকে একটি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, এটি কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনাদের আশ্রয়স্থল। মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ব্যাকপ্যাক বহনকারী ডজন ডজন কলম্বিয়ান বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি সামরিক ক্যাম্পে যাচ্ছে। পিএমপিএফ কমান্ডার আব্দুল্লাহি নিশ্চিত করেছেন, এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনা আরএসএফ-এর পক্ষে সুদানে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করছে।
এই ভাড়াটে সেনারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে বোসাসোতে আসে এবং এরপর প্রায় প্রতিদিনই ট্রানজিট হয়ে সুদানে পাড়ি জমায়। এই ভাড়াটে সেনারা তাদের ক্যাম্পের ভেতরে একটি নতুন হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। সেখানে সুদানে আহত হওয়া আরএসএফ সৈন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহি রক্তমাখা বিমান দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, এই ক্যাম্প আহত আরএসএফ যোদ্ধাদের জন্য একটি চিকিৎসা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বোসাসো বিমানবন্দরকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানে একটি ফরাসি-নির্মিত সামরিক রাডার সিস্টেমও স্থাপন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিল, আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী মিলিশিয়ারা সুদানে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরএসএফ-কে সোমালিয়ার মাটি ব্যবহার করে সাহায্য করার বিষয়টি স্থানীয় পিএমপিএফ সৈন্যদের মধ্যে তীব্র নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। অনেক সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, দীর্ঘদিনের মিত্র সুদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনাদের সহায়তা করা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
হর্ন অব আফ্রিকার সংঘাত বিশেষজ্ঞ মার্টিন প্লট সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সুদানের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করছে এবং পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এই অপরাধে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে গৃহযুদ্ধে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে সমর্থন করার অভিযোগে সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। খার্তুম অভিযোগ করে, আরব আমিরাত পশ্চিম দারফুরে মাসালিত সম্প্রদায়ের ‘গণহত্যায় জড়িত’, তারা আরএসএফকে সামরিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে এ অপরাধ সংঘটিত করছে।
যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আরএসএফ এবং সুদানি সেনাবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মোগাদিসুর নীরবতা ও আমিরাতের কৌশলগত ঘাঁটি
সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোগাদিসুর আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করলেও, তাদের বোসাসোর বন্দর ও বিমানবন্দরের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার (প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ-এর নেতৃত্বাধীন) আমিরাতের ক্রমবর্ধমান ও প্রসারমান প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত না থাকায় সামরিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে বাধা দিতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমিরাতের এই কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুদানের স্বর্ণখনি দখল এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার। আমিরাত এই অঞ্চলে মায়ুন, আবদ আল-কুরি, সামহা, সোমালিল্যান্ডের বেরবেরা এবং ইয়েমেনের মোচা বন্দরে ঘাঁটি নির্মাণ বা সম্প্রসারণের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
প্লট আরও বলেন, পুনটল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং নজরদারির অভাব এটিকে আমিরাতের জন্য আদর্শ অপারেশনাল ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। কারণ এখানে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।
আমিরাত সরকার একাধিকবার আরএসএফকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, এ বিষয়ে মির বা পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কেউই কখনো গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

মাস দুয়েক আগে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। পুতিনের এই সৈন্য সমাবেশ দেখে অনেকেই বলছিলেন, মস্কো কি সিরিয়া নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে ইউক্রেনে?
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
২ দিন আগে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৩ দিন আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৩ দিন আগেদ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে। তাঁদের মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে তিনি আবার দাবি করেছেন, অন্তত ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ভেনেজুয়েলান নাগরিক এরই মধ্যে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন।
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগে যেমন সাদ্দাম হোসেন তাঁর ফেদাইন বাহিনী গঠন করেছিলেন, তেমনই এবার মাদুরোও আগেভাগে তাঁর মিলিশিয়াদের প্রস্তুত করছেন। তবে সাদ্দামের তুলনায় মাদুরোর বাহিনীর সদস্যসংখ্যা অনেক বেশি।
তবে সিবিএস নিউজ বলছে, মাদুরোর দাবি অতিরঞ্জিত। আসলে সক্রিয় মিলিশিয়া সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজারের মতো, যা সাদ্দামের অনানুষ্ঠানিক বাহিনীর চেয়ে বেশি হলেও মাদুরোর ঘোষণার তুলনায় অনেক কম।
কারাকাস জানে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য শুধু মাদকবিরোধী অভিযান নয়, মার্কিন আক্রমণ হলে সেটি আসলে পূর্ণাঙ্গ শাসন পরিবর্তনের জন্যই হবে। এ কারণেই মাদুরো এখন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। মস্কো ভেনেজুয়েলাকে বিপুল অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে, এমনকি ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ২০০ ভাড়াটে সেনা দেশটিতে পাঠানো হয়েছে।

এখানে প্রশ্ন উঠেছে, এই বলিভারিয়ান মিলিশিয়ারা আদৌ মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি কি না। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হলে তাদের টিকতে পারা কঠিন। তবে গেরিলা ধাঁচের যুদ্ধ, জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মিলিশিয়া বাহিনী এবং ভূপ্রকৃতি মার্কিন অভিযানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনেক ভেনেজুয়েলান অবশ্য যুদ্ধের আহ্বানে সাড়া দিতে অনাগ্রহী। ফলে মাদুরোর ‘অস্ত্র ধারণের ডাক’ কতটা বাস্তবে রূপ পাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি সহজ নয়, শাসক পরিবর্তন করতে গেলে দেশ মেরামতের দায়ভারও নিতে হবে। তাই ইরাকের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ট্রাম্পের লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মনরো নীতির পুনরুত্থান চান, অর্থাৎ পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিশ্চিত করা। তাঁর মতে, চীন, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই ওয়াশিংটনের বড় মাথাব্যথা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, মাদুরো সরকারের পতনের পর ভেনেজুয়েলা যদি চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
ভেনেজুয়েলার জঙ্গলে যুদ্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে। দেশটির সেনারা মূলত মরুভূমি বা ইউরোপীয় বনাঞ্চলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বলিভিয়ার ভূপ্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অভিযান হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা দেবে, তবে তা কতটা সফল হবে, তা এখনই বলা কঠিন।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সহজে মাদুরোর বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে; কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী গেরিলা বিদ্রোহই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—ফলে পরিস্থিতি ইরাকের মতো হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, মাদুরোর ‘যুদ্ধের আহ্বান’ জনগণের মধ্যে খুব একটা সাড়া জাগায়নি।
যাহোক, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, আমেরিকার প্রভাব পুনরুদ্ধার করা। তবে পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এ পথে হেঁটে সত্যিই কি পশ্চিম গোলার্ধে স্থিতিশীলতা আসবে, নাকি আরও এক ‘লাতিন লিবিয়া’ তৈরি হবে?

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে। তাঁদের মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে তিনি আবার দাবি করেছেন, অন্তত ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ভেনেজুয়েলান নাগরিক এরই মধ্যে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন।
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগে যেমন সাদ্দাম হোসেন তাঁর ফেদাইন বাহিনী গঠন করেছিলেন, তেমনই এবার মাদুরোও আগেভাগে তাঁর মিলিশিয়াদের প্রস্তুত করছেন। তবে সাদ্দামের তুলনায় মাদুরোর বাহিনীর সদস্যসংখ্যা অনেক বেশি।
তবে সিবিএস নিউজ বলছে, মাদুরোর দাবি অতিরঞ্জিত। আসলে সক্রিয় মিলিশিয়া সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজারের মতো, যা সাদ্দামের অনানুষ্ঠানিক বাহিনীর চেয়ে বেশি হলেও মাদুরোর ঘোষণার তুলনায় অনেক কম।
কারাকাস জানে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য শুধু মাদকবিরোধী অভিযান নয়, মার্কিন আক্রমণ হলে সেটি আসলে পূর্ণাঙ্গ শাসন পরিবর্তনের জন্যই হবে। এ কারণেই মাদুরো এখন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। মস্কো ভেনেজুয়েলাকে বিপুল অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে, এমনকি ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ২০০ ভাড়াটে সেনা দেশটিতে পাঠানো হয়েছে।

এখানে প্রশ্ন উঠেছে, এই বলিভারিয়ান মিলিশিয়ারা আদৌ মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি কি না। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হলে তাদের টিকতে পারা কঠিন। তবে গেরিলা ধাঁচের যুদ্ধ, জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মিলিশিয়া বাহিনী এবং ভূপ্রকৃতি মার্কিন অভিযানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনেক ভেনেজুয়েলান অবশ্য যুদ্ধের আহ্বানে সাড়া দিতে অনাগ্রহী। ফলে মাদুরোর ‘অস্ত্র ধারণের ডাক’ কতটা বাস্তবে রূপ পাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি সহজ নয়, শাসক পরিবর্তন করতে গেলে দেশ মেরামতের দায়ভারও নিতে হবে। তাই ইরাকের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ট্রাম্পের লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মনরো নীতির পুনরুত্থান চান, অর্থাৎ পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিশ্চিত করা। তাঁর মতে, চীন, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই ওয়াশিংটনের বড় মাথাব্যথা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, মাদুরো সরকারের পতনের পর ভেনেজুয়েলা যদি চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
ভেনেজুয়েলার জঙ্গলে যুদ্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে। দেশটির সেনারা মূলত মরুভূমি বা ইউরোপীয় বনাঞ্চলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বলিভিয়ার ভূপ্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অভিযান হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা দেবে, তবে তা কতটা সফল হবে, তা এখনই বলা কঠিন।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সহজে মাদুরোর বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে; কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী গেরিলা বিদ্রোহই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—ফলে পরিস্থিতি ইরাকের মতো হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, মাদুরোর ‘যুদ্ধের আহ্বান’ জনগণের মধ্যে খুব একটা সাড়া জাগায়নি।
যাহোক, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, আমেরিকার প্রভাব পুনরুদ্ধার করা। তবে পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এ পথে হেঁটে সত্যিই কি পশ্চিম গোলার্ধে স্থিতিশীলতা আসবে, নাকি আরও এক ‘লাতিন লিবিয়া’ তৈরি হবে?

মাস দুয়েক আগে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। পুতিনের এই সৈন্য সমাবেশ দেখে অনেকেই বলছিলেন, মস্কো কি সিরিয়া নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে ইউক্রেনে?
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
১ দিন আগে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৩ দিন আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে আমাদের যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া খুব শিগগির শুরু হয়ে যাবে।’
বিশ্বে বেশ কয়েকটি দেশ আছে পারমাণবিক শক্তিধর। এই দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘নিউক্লিয়ার ক্লাবের’ সদস্য বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা স্পষ্ট নয়। এসব দেশ নিয়মিতভাবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে থাকে। তবে ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত একমাত্র উত্তর কোরিয়াই প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, সেটাও হয়েছে ২০১৭ সালে।
হোয়াইট হাউস এখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তাই এটি স্পষ্ট নয় যে, তিনি ‘পারমাণবিক পরীক্ষা’ বলতে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন, নাকি অস্ত্রগুলোরই ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন। ট্রাম্প পরে বলেছেন, পারমাণবিক পরীক্ষার স্থান পরে নির্ধারণ করা হবে।
বিবিসি এই বিষয়ে ছয়জন নীতি বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের বেশির ভাগই বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এখনকার উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে। তাদের মতে, বিশ্ব এমন এক অবস্থার দিকে এগোচ্ছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু না হলেও, আশঙ্কা প্রবল। তবে এক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্পের বক্তব্য বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছে করে প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে না।’ তবে সবাই একমত যে, বিশ্বে পারমাণবিক ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের নিউক্লিয়ার পলিসি প্রোগ্রামের ফেলো জেমি কুয়াং বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে উত্তর কোরিয়া ছাড়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো আসল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। তাই এখন কেউ যদি শুরু করে, সেটি অন্যদেরও উসকে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন হয়তো নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার দ্বারপ্রান্তে।’
লন্ডনভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো দারিয়া দলজিকোভা বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যে পরিস্থিতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন না। তবে তাঁর মতে, ‘বিশ্বজুড়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা পারমাণবিক সংঘাত ও অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের বার্তা বিশাল এক সমস্যার সমুদ্রে এক ফোঁটা মাত্র, কিন্তু সমুদ্রটা এরই মধ্যে উপচে পড়ার উপক্রম।’
বিশেষজ্ঞরা উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংঘাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। তা ছাড়া, ভারত-পাকিস্তানের এ বছরের সংঘাত, কিংবা ইসরায়েলের ইরান হামলার ঘটনা বৈশ্বিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে। যদিও ইসরায়েল কখনো প্রকাশ্যে তার পারমাণবিক অস্ত্রের কথা স্বীকার করেনি। পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে। তবে তেহরান তা বারবার অস্বীকার করেছে।
কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান শেষ পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।
ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে বলেছেন—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) হালনাগাদ তথ্য এর সঙ্গে মেলে না। সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে ৫ হাজার ৪৫৯টি। এর পরেই যুক্তরাষ্ট্র, যার ওয়ারহেড ৫ হাজার ১৭৭টি। চীন অনেক পিছিয়ে, তাদের রয়েছে ৬০০টি ওয়ারহেড। অন্য গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্যও প্রায় একই।
সম্প্রতি রাশিয়া জানিয়েছে, তারা নতুন পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ক্রেমলিন দাবি করেছে, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। এ ছাড়া, তাদের এমন এক ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা পানির নিচ দিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার এই ঘোষণাই ট্রাম্পের বক্তব্যের কারণ হতে পারে। যদিও রাশিয়া বলেছে, এসব পরীক্ষা ‘পারমাণবিক নয়।’ অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর গভীর নজর রাখছে।
তাদের আশঙ্কা, চীনও দ্রুত ‘সমমানের পারমাণবিক শক্তি’ অর্জনের পথে। এতে তৈরি হচ্ছে ‘দুই-প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক ঝুঁকি।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করে, তাহলে রাশিয়া ও চীনও একই পথে যেতে পারে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, ‘কেউ যদি পরীক্ষার নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে, রাশিয়া তার জবাব দেবে।’ চীন জানিয়েছে, তারা আশা করে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট–ব্যান ট্রিটি’র প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই চুক্তিতে সই করেছে, কিন্তু অনুমোদন দেয়নি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবলের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, তা হবে ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ইতিহাসে ভয়াবহ ভুল।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যদি নতুন চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে তিন দিক থেকে—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন—এক বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে।’
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের পারমাণবিক তথ্য প্রকল্পের পরিচালক হান্স ক্রিস্টেনসেন বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো ওয়ারহেড সংখ্যা বেড়েছে—শীতল যুদ্ধের পর এমনটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষেরও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, ” বলেন তিনি।’
যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯২ সালে, নেভাদায়। কিমবলের মতে, সেই কেন্দ্র আবার চালু করতে কমপক্ষে ৩৬ মাস লাগবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কম্পিউটার সিমুলেশন ও অন্যান্য অ-বিস্ফোরক পদ্ধতিতে অস্ত্র পরীক্ষা করে। তাই নতুন বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষার বাস্তব প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে কুয়াং বলেন, ভূগর্ভস্থ পরীক্ষাতেও ঝুঁকি থাকে—বিকিরণ যেন মাটির ওপর বা ভূগর্ভস্থ পানিতে ছড়ায় না, তা নিশ্চিত করতে হয়।
ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পেছনে রাশিয়া ও চীনকে দায়ী করে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষক রবার্ট পিটার্স বলেন, বৈজ্ঞানিক কারণ না থাকলেও, ‘রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য’ এমন পরীক্ষা দরকার হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা দেখাতে কোনো প্রেসিডেন্টের—ট্রাম্প, বা অন্য যে কেউ—পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো প্রয়োজন হতে পারে।’ তাঁর মতে, ‘এটি অযৌক্তিক অবস্থান নয়।’
তবে অনেক বিশেষজ্ঞই এতে একমত নন। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিস ক্রিলি বলেন, ‘নতুন এক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা যদি ইতিমধ্যেই শুরু না হয়ে থাকে, তবে আমরা তার একদম দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনই আমি এই আশঙ্কায় থাকি যে, যেকোনো সময় পৃথিবী আবার পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে, নিউ মেক্সিকোর আলমাগোর্ডো মরুভূমিতে। তারপর আগস্টে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যা মানব ইতিহাসে এখনো একমাত্র পারমাণবিক হামলা।
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে আমাদের যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া খুব শিগগির শুরু হয়ে যাবে।’
বিশ্বে বেশ কয়েকটি দেশ আছে পারমাণবিক শক্তিধর। এই দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘নিউক্লিয়ার ক্লাবের’ সদস্য বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা স্পষ্ট নয়। এসব দেশ নিয়মিতভাবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে থাকে। তবে ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত একমাত্র উত্তর কোরিয়াই প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, সেটাও হয়েছে ২০১৭ সালে।
হোয়াইট হাউস এখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তাই এটি স্পষ্ট নয় যে, তিনি ‘পারমাণবিক পরীক্ষা’ বলতে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন, নাকি অস্ত্রগুলোরই ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন। ট্রাম্প পরে বলেছেন, পারমাণবিক পরীক্ষার স্থান পরে নির্ধারণ করা হবে।
বিবিসি এই বিষয়ে ছয়জন নীতি বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের বেশির ভাগই বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এখনকার উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে। তাদের মতে, বিশ্ব এমন এক অবস্থার দিকে এগোচ্ছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু না হলেও, আশঙ্কা প্রবল। তবে এক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্পের বক্তব্য বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছে করে প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে না।’ তবে সবাই একমত যে, বিশ্বে পারমাণবিক ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের নিউক্লিয়ার পলিসি প্রোগ্রামের ফেলো জেমি কুয়াং বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে উত্তর কোরিয়া ছাড়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো আসল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। তাই এখন কেউ যদি শুরু করে, সেটি অন্যদেরও উসকে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন হয়তো নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার দ্বারপ্রান্তে।’
লন্ডনভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো দারিয়া দলজিকোভা বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যে পরিস্থিতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন না। তবে তাঁর মতে, ‘বিশ্বজুড়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা পারমাণবিক সংঘাত ও অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের বার্তা বিশাল এক সমস্যার সমুদ্রে এক ফোঁটা মাত্র, কিন্তু সমুদ্রটা এরই মধ্যে উপচে পড়ার উপক্রম।’
বিশেষজ্ঞরা উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংঘাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। তা ছাড়া, ভারত-পাকিস্তানের এ বছরের সংঘাত, কিংবা ইসরায়েলের ইরান হামলার ঘটনা বৈশ্বিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে। যদিও ইসরায়েল কখনো প্রকাশ্যে তার পারমাণবিক অস্ত্রের কথা স্বীকার করেনি। পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে। তবে তেহরান তা বারবার অস্বীকার করেছে।
কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান শেষ পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।
ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে বলেছেন—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) হালনাগাদ তথ্য এর সঙ্গে মেলে না। সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে ৫ হাজার ৪৫৯টি। এর পরেই যুক্তরাষ্ট্র, যার ওয়ারহেড ৫ হাজার ১৭৭টি। চীন অনেক পিছিয়ে, তাদের রয়েছে ৬০০টি ওয়ারহেড। অন্য গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্যও প্রায় একই।
সম্প্রতি রাশিয়া জানিয়েছে, তারা নতুন পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ক্রেমলিন দাবি করেছে, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। এ ছাড়া, তাদের এমন এক ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা পানির নিচ দিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার এই ঘোষণাই ট্রাম্পের বক্তব্যের কারণ হতে পারে। যদিও রাশিয়া বলেছে, এসব পরীক্ষা ‘পারমাণবিক নয়।’ অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর গভীর নজর রাখছে।
তাদের আশঙ্কা, চীনও দ্রুত ‘সমমানের পারমাণবিক শক্তি’ অর্জনের পথে। এতে তৈরি হচ্ছে ‘দুই-প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক ঝুঁকি।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করে, তাহলে রাশিয়া ও চীনও একই পথে যেতে পারে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, ‘কেউ যদি পরীক্ষার নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে, রাশিয়া তার জবাব দেবে।’ চীন জানিয়েছে, তারা আশা করে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট–ব্যান ট্রিটি’র প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই চুক্তিতে সই করেছে, কিন্তু অনুমোদন দেয়নি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবলের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, তা হবে ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ইতিহাসে ভয়াবহ ভুল।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যদি নতুন চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে তিন দিক থেকে—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন—এক বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে।’
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের পারমাণবিক তথ্য প্রকল্পের পরিচালক হান্স ক্রিস্টেনসেন বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো ওয়ারহেড সংখ্যা বেড়েছে—শীতল যুদ্ধের পর এমনটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষেরও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, ” বলেন তিনি।’
যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯২ সালে, নেভাদায়। কিমবলের মতে, সেই কেন্দ্র আবার চালু করতে কমপক্ষে ৩৬ মাস লাগবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কম্পিউটার সিমুলেশন ও অন্যান্য অ-বিস্ফোরক পদ্ধতিতে অস্ত্র পরীক্ষা করে। তাই নতুন বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষার বাস্তব প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে কুয়াং বলেন, ভূগর্ভস্থ পরীক্ষাতেও ঝুঁকি থাকে—বিকিরণ যেন মাটির ওপর বা ভূগর্ভস্থ পানিতে ছড়ায় না, তা নিশ্চিত করতে হয়।
ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পেছনে রাশিয়া ও চীনকে দায়ী করে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষক রবার্ট পিটার্স বলেন, বৈজ্ঞানিক কারণ না থাকলেও, ‘রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য’ এমন পরীক্ষা দরকার হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা দেখাতে কোনো প্রেসিডেন্টের—ট্রাম্প, বা অন্য যে কেউ—পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো প্রয়োজন হতে পারে।’ তাঁর মতে, ‘এটি অযৌক্তিক অবস্থান নয়।’
তবে অনেক বিশেষজ্ঞই এতে একমত নন। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিস ক্রিলি বলেন, ‘নতুন এক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা যদি ইতিমধ্যেই শুরু না হয়ে থাকে, তবে আমরা তার একদম দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনই আমি এই আশঙ্কায় থাকি যে, যেকোনো সময় পৃথিবী আবার পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে, নিউ মেক্সিকোর আলমাগোর্ডো মরুভূমিতে। তারপর আগস্টে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যা মানব ইতিহাসে এখনো একমাত্র পারমাণবিক হামলা।
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

মাস দুয়েক আগে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। পুতিনের এই সৈন্য সমাবেশ দেখে অনেকেই বলছিলেন, মস্কো কি সিরিয়া নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে ইউক্রেনে?
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
২ দিন আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কর্মসূচি আবারও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অন্য দেশগুলো যেহেতু পরীক্ষায় ব্যস্ত, আমরাও সমানভাবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করব।’ তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট নয়—তিনি সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পরমাণু সক্ষম অস্ত্রের মহড়ার কথা বলেছেন।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই মস্কোর এক সামরিক হাসপাতালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরেকটি ‘অজেয়’ অস্ত্র পরীক্ষার দাবি করেন। তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পোসাইডন’ নামের পরমাণু-চালিত টর্পেডো পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই টর্পেডো প্রায় ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পুতিনের ভাষায়, ‘পোসাইডন’ পৃথিবীর যে কোনো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।’
তিনি আরও জানান, বহু প্রতীক্ষিত ‘সারমাত’ বা ‘স্যাটান ২’ ক্ষেপণাস্ত্রও শিগগিরই রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হতে পারে।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর তার আগেই দুই দেশই নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সপ্তাহখানেক আগে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়া সফলভাবে ‘বুরেভেস্টনিক’ নামের পরমাণু-চালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। এই মিসাইল দীর্ঘ সময় ধরে সাবসনিক গতিতে উড়তে পারে বলে দাবি রুশ সামরিক বাহিনীর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পরমাণু-চালিত অস্ত্র প্রযুক্তিগতভাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে ব্যবহারের জন্য এখনো অপ্রস্তুত।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই ‘পারমাণবিক ঝনঝনানি’ মূলত সামরিক নয়, কূটনৈতিক চাপের কৌশল। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অবস্থানের কারণে মস্কো চায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তার দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগী হোক।
কিন্তু পুতিনের এই প্রদর্শনের জবাবে ট্রাম্পের নির্দেশ বিশ্বকে নতুন এক অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দুই শক্তিধর দেশের এই পাল্টাপাল্টি হুমকি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আবারও উসকে দেবে। এর ফলে বিশ্বে শীতল-যুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা অসতর্ক কোনো পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।

বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কর্মসূচি আবারও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অন্য দেশগুলো যেহেতু পরীক্ষায় ব্যস্ত, আমরাও সমানভাবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করব।’ তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট নয়—তিনি সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পরমাণু সক্ষম অস্ত্রের মহড়ার কথা বলেছেন।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই মস্কোর এক সামরিক হাসপাতালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরেকটি ‘অজেয়’ অস্ত্র পরীক্ষার দাবি করেন। তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পোসাইডন’ নামের পরমাণু-চালিত টর্পেডো পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই টর্পেডো প্রায় ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পুতিনের ভাষায়, ‘পোসাইডন’ পৃথিবীর যে কোনো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।’
তিনি আরও জানান, বহু প্রতীক্ষিত ‘সারমাত’ বা ‘স্যাটান ২’ ক্ষেপণাস্ত্রও শিগগিরই রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হতে পারে।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর তার আগেই দুই দেশই নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সপ্তাহখানেক আগে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়া সফলভাবে ‘বুরেভেস্টনিক’ নামের পরমাণু-চালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। এই মিসাইল দীর্ঘ সময় ধরে সাবসনিক গতিতে উড়তে পারে বলে দাবি রুশ সামরিক বাহিনীর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পরমাণু-চালিত অস্ত্র প্রযুক্তিগতভাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে ব্যবহারের জন্য এখনো অপ্রস্তুত।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই ‘পারমাণবিক ঝনঝনানি’ মূলত সামরিক নয়, কূটনৈতিক চাপের কৌশল। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অবস্থানের কারণে মস্কো চায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তার দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগী হোক।
কিন্তু পুতিনের এই প্রদর্শনের জবাবে ট্রাম্পের নির্দেশ বিশ্বকে নতুন এক অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দুই শক্তিধর দেশের এই পাল্টাপাল্টি হুমকি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আবারও উসকে দেবে। এর ফলে বিশ্বে শীতল-যুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা অসতর্ক কোনো পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।

মাস দুয়েক আগে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। পুতিনের এই সৈন্য সমাবেশ দেখে অনেকেই বলছিলেন, মস্কো কি সিরিয়া নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে ইউক্রেনে?
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
২ দিন আগে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৩ দিন আগে