রিক্তা রিচি, ঢাকা

কার্তিকের সকালে বেশ শীত শীত ভাব। ঘড়ির কাটা টিক টিক করে জানিয়ে দেয় সাড়ে সাতটা বাজে। উফফ অফিসে যেতে হবে। আর যেতে হবে মানেই দীর্ঘ জ্যাম পাড়ি দিতে হবে! অফিসটা বাসা থেকে বেশ দূরে হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী—পথটা কম দূরত্বের নয়। কী আর করা। জার্নিটা মাঝেমধ্যে বেশ মজা লাগে আমার। মনে হয় পৃথিবীর পথে পথে আমি একা হেঁটে বেড়াচ্ছি, দৌড়ে বেড়াচ্ছি। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আমার স্বাধীনভাবে পাখা মেলবার সুযোগ আছে। যা খুশি, তা করার সুযোগ আছে। হৃদয়কে সাদা শিউলির মতো ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে।
ফোনের অ্যালার্মটা বাজছে। আটটা বাজতে চলল। শরীর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে নিলাম। ব্রাশ করে, রেডি হয়ে, হালকা কিছু খেয়ে তড়িঘড়ি করে বের হলাম। বাসা থেকে তিন রাস্তার মোড় খুব দূরে নয়। ৭-১০ মিনিটের হাঁটা-পথ। এইটুকু পথ রিকশায় যাই। আজকাল হাঁটতে ইচ্ছে করে না। আর এ সময় হেঁটে গেলে অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে। তড়িঘড়ি করে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালেও লাভ হয়নি। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ লাইন করে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। লাইনের পেছনের দিকে দাঁড়ালাম। ঝকঝকে রোদ নিমেষেই কেমন যেন মিলিয়ে গেল। এখন আকাশটা ধূসর। কালো কালো ভাব। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে খুব বিরক্ত লাগে। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে যায়। আজও একই অবস্থা। এমন সময় পেছন থেকে একটি লোক এল; সাদা পাঞ্জাবি পরা। মুখে সাদা মাস্ক। চুলগুলো ছোট করে কাটা। জ্ঞানী জ্ঞানী দৃষ্টি। মোচ আছে কি নেই, তা বোঝা যাচ্ছে না। লাইনের পেছন থেকে লোকটি আওড়াতে থাকে কয়েকটি লাইন। বলছেন—
‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই—প্রীতি নেই—করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।’
তাঁর উচ্চারণ ও শব্দগুলো আমার কানে এসে লাগল। অফিসের যাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ কবিতা আওড়াতে পারে! ব্যাপারটা আনন্দের নাকি বিরক্তির, ঠিক বুঝলাম না। অবশ্য আমি তো অফিসে বসে বসে সহকর্মীদের কবিতা শোনাতে শোনাতে পাগল করে দিই। ওরাও আমাকে ভালোবেসে সব জ্বালাতন মেনে নেয়। আদরখেকো বিড়ালের মতো নারী সহকর্মীদের আদর চাই আমি। তারাও মমতাভরা কাঁধ বিছিয়ে দেয়। ভালোবেসে বুকে টেনে নেয়। আমি জানি, এ পাগলামি। এই পাগলামিতে রয়েছে নিখাদ ভালোবাসার পূর্ণ জ্যোতি। এটি আসলে পাগলামি নয়। সব ঠিক আছে। পেছনের ওই পাঞ্জাবি পরা লোকটা একের পর এক কবিতার লাইন বলে যাচ্ছে। আর আমি ও অন্যরা সহ্য করে যাচ্ছি।
বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি! লোকটা আমার বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল দেখছে। খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম। অপরিচিত এক লোক আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সে আবারও বিড় বিড় করে কবিতা পড়ছে—
‘আমি যদি হতাম বনহংস,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;’
কবিতা ভালোবাসি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জীবন বাবুকে ভালোবাসি, তাতেও সন্দেহ নেই। তাই বলে অপরিচিত এক লোক একের পর এক কবিতা শুনিয়ে যাবে, ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে, তা মানা যায় না। আমি চোখ-মুখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমাকে চেনেন আপনি?’
মনে হলো কিছুই শুনল না। আবারও জিজ্ঞেস করলাম। সে নিরুদ্দেশ এক দৃষ্টি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার গলার আওয়াজ তার কানে পৌঁছাল না। বুঝতে পারলাম সে বৃষ্টি দেখছে। আমাকে নয়। একজন মানুষের তো অবশ্যই বৃষ্টি দেখার অধিকার আছে। আমি তাতে বাধা দিতে পারি না।
এবার সে পকেট থেকে মোবাইল বের করল। মনে হলো ফেসবুক স্ক্রল করছে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পড়ছে—
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।’
আমি আর বিরক্ত হচ্ছি না। কেন জানি লোকটাকে পাগল মনে হলো। সে আপনমনে কবিতা পড়ে যাচ্ছে। তবে বাসের এত মানুষ, গাড়ির হর্নের শব্দ, লোকেদের কথাবার্তা কিছুই কি সে শুনতে পাচ্ছে না? আর তার কবিতা কি কেবল আমিই শুনছি? আর কেউ শুনছে না? যা হোক এত সন্দেহ বুকে পুষে না রেখে আপন মনে চলছি। বাস চলছে তার গতিতে। ঠেলাগাড়ির মতন। বাসের হেলপারকে ভাড়া দিলাম। পাশে বসা লোকটির কাছে ভাড়া চাইল না হেলপার। যা হোক, কেন চায়নি তা জেনে আমার কি লাভ।
খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটরের জ্যাম পেরিয়ে গাড়ি এখন মগবাজারের পথে। এদিকটায় তেমন জ্যাম হয় না। দ্রুত চলে। প্রথম দিকের বেশ কয়েকটা সিট খালি হলো। আমি উঠে সামনের দিকে যেতে লাগলাম। তখন নির্বিকারভাবে অদ্ভুত ওই লোকটা বলতে লাগল—
‘সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা এই যুবকের সাথে কথা;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা।’
এইবার আমি রেগে আগুন। মনে হচ্ছে লোকটা ইভটিজার। সে দিন-দুপুরে আমাকে উদ্দেশ্য করে এমন করছে। ছোকরা হলেও বুঝতাম। ছোকরা মানে আমার সমবয়সী হলেও বুঝতাম। আমাকে নিয়ে তার মনে লাড্ডু ফুটছে। কিন্তু এ কী! লোকটার বয়স কম বলে মনে হচ্ছে না। হবে হয়তো ৪০-এর কাছাকাছি।
বাস এইবার মৌচাকে। লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে আপনি?’
সে যথারীতি অবাক হয়ে বলল, ‘মানুষ’
আরে সে তো শুনতে পায়। আগেরবার তাহলে ইচ্ছে করে উত্তর দেয়নি। আমি আরেকটু কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মানুষ তো ঠিক আছে। কিন্তু পরিচয় কী?’
-মানুষই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়
-জীবনানন্দকে ভালোবাসেন?
-জীবনানন্দ! কে সে!
-আপনি যার কবিতা পড়ছিলেন তিনিই জীবনানন্দ।
-তাই নাকি! আমি কবিতা পড়ছিলাম!
আমি হকচকিয়ে উঠলাম। মাঝবয়সী এই লোকটা ভীষণ বদলোক। নাহ, এই ধরনের লোকের সঙ্গে কথা বাড়ানো ঠিক হবে না।
বাস এবার মালিবাগ রেলগেটের কাছে পৌঁছাল। এক্ষুনি ট্রেন আসবে। তাই দুদিকের সব রিকশা, সিএনজি ও বাস থেমে আছে। এবার সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকটা নামার জন্য তৈরি হচ্ছে। তার গন্তব্য সম্ভবত এসে পড়েছে। মনে মনে স্বস্তি পাচ্ছি আমি। এবার সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে, চোখ ফেরাতে ফেরাতে বলতে লাগলো—
আমি কবি–সেই কবি,–
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি!
আন্মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে!
মৌন নীলের ইশারায় কোন্ কামনা জাগিছে প্রাণে!
বুকের বাদল উথলি উঠিছে কোন্ কাজরীর গানে!
দাদুরী-কাঁদানো শাঙন-দরিয়া হৃদয়ে উঠিছে দ্রবি!
কবিতা আবৃত্তি করতে করতে সে বাস থেকে নেমে গেল। বিকট শব্দ করে ট্রেন চলে গেছে। তিনি মাস্ক খুলে ধীর পায়ে হেঁটে চলছে পশ্চিমের দিকে। বাস ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছি। আর ডাকছি—‘কবি...কবি...কবি...আমার অনেক কথা ছিল! অনেক কথা...’

কার্তিকের সকালে বেশ শীত শীত ভাব। ঘড়ির কাটা টিক টিক করে জানিয়ে দেয় সাড়ে সাতটা বাজে। উফফ অফিসে যেতে হবে। আর যেতে হবে মানেই দীর্ঘ জ্যাম পাড়ি দিতে হবে! অফিসটা বাসা থেকে বেশ দূরে হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী—পথটা কম দূরত্বের নয়। কী আর করা। জার্নিটা মাঝেমধ্যে বেশ মজা লাগে আমার। মনে হয় পৃথিবীর পথে পথে আমি একা হেঁটে বেড়াচ্ছি, দৌড়ে বেড়াচ্ছি। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আমার স্বাধীনভাবে পাখা মেলবার সুযোগ আছে। যা খুশি, তা করার সুযোগ আছে। হৃদয়কে সাদা শিউলির মতো ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে।
ফোনের অ্যালার্মটা বাজছে। আটটা বাজতে চলল। শরীর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে নিলাম। ব্রাশ করে, রেডি হয়ে, হালকা কিছু খেয়ে তড়িঘড়ি করে বের হলাম। বাসা থেকে তিন রাস্তার মোড় খুব দূরে নয়। ৭-১০ মিনিটের হাঁটা-পথ। এইটুকু পথ রিকশায় যাই। আজকাল হাঁটতে ইচ্ছে করে না। আর এ সময় হেঁটে গেলে অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে। তড়িঘড়ি করে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালেও লাভ হয়নি। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ লাইন করে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। লাইনের পেছনের দিকে দাঁড়ালাম। ঝকঝকে রোদ নিমেষেই কেমন যেন মিলিয়ে গেল। এখন আকাশটা ধূসর। কালো কালো ভাব। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে খুব বিরক্ত লাগে। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে যায়। আজও একই অবস্থা। এমন সময় পেছন থেকে একটি লোক এল; সাদা পাঞ্জাবি পরা। মুখে সাদা মাস্ক। চুলগুলো ছোট করে কাটা। জ্ঞানী জ্ঞানী দৃষ্টি। মোচ আছে কি নেই, তা বোঝা যাচ্ছে না। লাইনের পেছন থেকে লোকটি আওড়াতে থাকে কয়েকটি লাইন। বলছেন—
‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই—প্রীতি নেই—করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।’
তাঁর উচ্চারণ ও শব্দগুলো আমার কানে এসে লাগল। অফিসের যাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ কবিতা আওড়াতে পারে! ব্যাপারটা আনন্দের নাকি বিরক্তির, ঠিক বুঝলাম না। অবশ্য আমি তো অফিসে বসে বসে সহকর্মীদের কবিতা শোনাতে শোনাতে পাগল করে দিই। ওরাও আমাকে ভালোবেসে সব জ্বালাতন মেনে নেয়। আদরখেকো বিড়ালের মতো নারী সহকর্মীদের আদর চাই আমি। তারাও মমতাভরা কাঁধ বিছিয়ে দেয়। ভালোবেসে বুকে টেনে নেয়। আমি জানি, এ পাগলামি। এই পাগলামিতে রয়েছে নিখাদ ভালোবাসার পূর্ণ জ্যোতি। এটি আসলে পাগলামি নয়। সব ঠিক আছে। পেছনের ওই পাঞ্জাবি পরা লোকটা একের পর এক কবিতার লাইন বলে যাচ্ছে। আর আমি ও অন্যরা সহ্য করে যাচ্ছি।
বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি! লোকটা আমার বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল দেখছে। খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম। অপরিচিত এক লোক আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সে আবারও বিড় বিড় করে কবিতা পড়ছে—
‘আমি যদি হতাম বনহংস,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;’
কবিতা ভালোবাসি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জীবন বাবুকে ভালোবাসি, তাতেও সন্দেহ নেই। তাই বলে অপরিচিত এক লোক একের পর এক কবিতা শুনিয়ে যাবে, ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে, তা মানা যায় না। আমি চোখ-মুখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমাকে চেনেন আপনি?’
মনে হলো কিছুই শুনল না। আবারও জিজ্ঞেস করলাম। সে নিরুদ্দেশ এক দৃষ্টি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার গলার আওয়াজ তার কানে পৌঁছাল না। বুঝতে পারলাম সে বৃষ্টি দেখছে। আমাকে নয়। একজন মানুষের তো অবশ্যই বৃষ্টি দেখার অধিকার আছে। আমি তাতে বাধা দিতে পারি না।
এবার সে পকেট থেকে মোবাইল বের করল। মনে হলো ফেসবুক স্ক্রল করছে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পড়ছে—
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।’
আমি আর বিরক্ত হচ্ছি না। কেন জানি লোকটাকে পাগল মনে হলো। সে আপনমনে কবিতা পড়ে যাচ্ছে। তবে বাসের এত মানুষ, গাড়ির হর্নের শব্দ, লোকেদের কথাবার্তা কিছুই কি সে শুনতে পাচ্ছে না? আর তার কবিতা কি কেবল আমিই শুনছি? আর কেউ শুনছে না? যা হোক এত সন্দেহ বুকে পুষে না রেখে আপন মনে চলছি। বাস চলছে তার গতিতে। ঠেলাগাড়ির মতন। বাসের হেলপারকে ভাড়া দিলাম। পাশে বসা লোকটির কাছে ভাড়া চাইল না হেলপার। যা হোক, কেন চায়নি তা জেনে আমার কি লাভ।
খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটরের জ্যাম পেরিয়ে গাড়ি এখন মগবাজারের পথে। এদিকটায় তেমন জ্যাম হয় না। দ্রুত চলে। প্রথম দিকের বেশ কয়েকটা সিট খালি হলো। আমি উঠে সামনের দিকে যেতে লাগলাম। তখন নির্বিকারভাবে অদ্ভুত ওই লোকটা বলতে লাগল—
‘সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা এই যুবকের সাথে কথা;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা।’
এইবার আমি রেগে আগুন। মনে হচ্ছে লোকটা ইভটিজার। সে দিন-দুপুরে আমাকে উদ্দেশ্য করে এমন করছে। ছোকরা হলেও বুঝতাম। ছোকরা মানে আমার সমবয়সী হলেও বুঝতাম। আমাকে নিয়ে তার মনে লাড্ডু ফুটছে। কিন্তু এ কী! লোকটার বয়স কম বলে মনে হচ্ছে না। হবে হয়তো ৪০-এর কাছাকাছি।
বাস এইবার মৌচাকে। লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে আপনি?’
সে যথারীতি অবাক হয়ে বলল, ‘মানুষ’
আরে সে তো শুনতে পায়। আগেরবার তাহলে ইচ্ছে করে উত্তর দেয়নি। আমি আরেকটু কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মানুষ তো ঠিক আছে। কিন্তু পরিচয় কী?’
-মানুষই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়
-জীবনানন্দকে ভালোবাসেন?
-জীবনানন্দ! কে সে!
-আপনি যার কবিতা পড়ছিলেন তিনিই জীবনানন্দ।
-তাই নাকি! আমি কবিতা পড়ছিলাম!
আমি হকচকিয়ে উঠলাম। মাঝবয়সী এই লোকটা ভীষণ বদলোক। নাহ, এই ধরনের লোকের সঙ্গে কথা বাড়ানো ঠিক হবে না।
বাস এবার মালিবাগ রেলগেটের কাছে পৌঁছাল। এক্ষুনি ট্রেন আসবে। তাই দুদিকের সব রিকশা, সিএনজি ও বাস থেমে আছে। এবার সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকটা নামার জন্য তৈরি হচ্ছে। তার গন্তব্য সম্ভবত এসে পড়েছে। মনে মনে স্বস্তি পাচ্ছি আমি। এবার সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে, চোখ ফেরাতে ফেরাতে বলতে লাগলো—
আমি কবি–সেই কবি,–
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি!
আন্মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে!
মৌন নীলের ইশারায় কোন্ কামনা জাগিছে প্রাণে!
বুকের বাদল উথলি উঠিছে কোন্ কাজরীর গানে!
দাদুরী-কাঁদানো শাঙন-দরিয়া হৃদয়ে উঠিছে দ্রবি!
কবিতা আবৃত্তি করতে করতে সে বাস থেকে নেমে গেল। বিকট শব্দ করে ট্রেন চলে গেছে। তিনি মাস্ক খুলে ধীর পায়ে হেঁটে চলছে পশ্চিমের দিকে। বাস ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছি। আর ডাকছি—‘কবি...কবি...কবি...আমার অনেক কথা ছিল! অনেক কথা...’
রিক্তা রিচি, ঢাকা

কার্তিকের সকালে বেশ শীত শীত ভাব। ঘড়ির কাটা টিক টিক করে জানিয়ে দেয় সাড়ে সাতটা বাজে। উফফ অফিসে যেতে হবে। আর যেতে হবে মানেই দীর্ঘ জ্যাম পাড়ি দিতে হবে! অফিসটা বাসা থেকে বেশ দূরে হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী—পথটা কম দূরত্বের নয়। কী আর করা। জার্নিটা মাঝেমধ্যে বেশ মজা লাগে আমার। মনে হয় পৃথিবীর পথে পথে আমি একা হেঁটে বেড়াচ্ছি, দৌড়ে বেড়াচ্ছি। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আমার স্বাধীনভাবে পাখা মেলবার সুযোগ আছে। যা খুশি, তা করার সুযোগ আছে। হৃদয়কে সাদা শিউলির মতো ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে।
ফোনের অ্যালার্মটা বাজছে। আটটা বাজতে চলল। শরীর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে নিলাম। ব্রাশ করে, রেডি হয়ে, হালকা কিছু খেয়ে তড়িঘড়ি করে বের হলাম। বাসা থেকে তিন রাস্তার মোড় খুব দূরে নয়। ৭-১০ মিনিটের হাঁটা-পথ। এইটুকু পথ রিকশায় যাই। আজকাল হাঁটতে ইচ্ছে করে না। আর এ সময় হেঁটে গেলে অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে। তড়িঘড়ি করে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালেও লাভ হয়নি। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ লাইন করে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। লাইনের পেছনের দিকে দাঁড়ালাম। ঝকঝকে রোদ নিমেষেই কেমন যেন মিলিয়ে গেল। এখন আকাশটা ধূসর। কালো কালো ভাব। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে খুব বিরক্ত লাগে। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে যায়। আজও একই অবস্থা। এমন সময় পেছন থেকে একটি লোক এল; সাদা পাঞ্জাবি পরা। মুখে সাদা মাস্ক। চুলগুলো ছোট করে কাটা। জ্ঞানী জ্ঞানী দৃষ্টি। মোচ আছে কি নেই, তা বোঝা যাচ্ছে না। লাইনের পেছন থেকে লোকটি আওড়াতে থাকে কয়েকটি লাইন। বলছেন—
‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই—প্রীতি নেই—করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।’
তাঁর উচ্চারণ ও শব্দগুলো আমার কানে এসে লাগল। অফিসের যাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ কবিতা আওড়াতে পারে! ব্যাপারটা আনন্দের নাকি বিরক্তির, ঠিক বুঝলাম না। অবশ্য আমি তো অফিসে বসে বসে সহকর্মীদের কবিতা শোনাতে শোনাতে পাগল করে দিই। ওরাও আমাকে ভালোবেসে সব জ্বালাতন মেনে নেয়। আদরখেকো বিড়ালের মতো নারী সহকর্মীদের আদর চাই আমি। তারাও মমতাভরা কাঁধ বিছিয়ে দেয়। ভালোবেসে বুকে টেনে নেয়। আমি জানি, এ পাগলামি। এই পাগলামিতে রয়েছে নিখাদ ভালোবাসার পূর্ণ জ্যোতি। এটি আসলে পাগলামি নয়। সব ঠিক আছে। পেছনের ওই পাঞ্জাবি পরা লোকটা একের পর এক কবিতার লাইন বলে যাচ্ছে। আর আমি ও অন্যরা সহ্য করে যাচ্ছি।
বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি! লোকটা আমার বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল দেখছে। খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম। অপরিচিত এক লোক আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সে আবারও বিড় বিড় করে কবিতা পড়ছে—
‘আমি যদি হতাম বনহংস,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;’
কবিতা ভালোবাসি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জীবন বাবুকে ভালোবাসি, তাতেও সন্দেহ নেই। তাই বলে অপরিচিত এক লোক একের পর এক কবিতা শুনিয়ে যাবে, ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে, তা মানা যায় না। আমি চোখ-মুখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমাকে চেনেন আপনি?’
মনে হলো কিছুই শুনল না। আবারও জিজ্ঞেস করলাম। সে নিরুদ্দেশ এক দৃষ্টি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার গলার আওয়াজ তার কানে পৌঁছাল না। বুঝতে পারলাম সে বৃষ্টি দেখছে। আমাকে নয়। একজন মানুষের তো অবশ্যই বৃষ্টি দেখার অধিকার আছে। আমি তাতে বাধা দিতে পারি না।
এবার সে পকেট থেকে মোবাইল বের করল। মনে হলো ফেসবুক স্ক্রল করছে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পড়ছে—
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।’
আমি আর বিরক্ত হচ্ছি না। কেন জানি লোকটাকে পাগল মনে হলো। সে আপনমনে কবিতা পড়ে যাচ্ছে। তবে বাসের এত মানুষ, গাড়ির হর্নের শব্দ, লোকেদের কথাবার্তা কিছুই কি সে শুনতে পাচ্ছে না? আর তার কবিতা কি কেবল আমিই শুনছি? আর কেউ শুনছে না? যা হোক এত সন্দেহ বুকে পুষে না রেখে আপন মনে চলছি। বাস চলছে তার গতিতে। ঠেলাগাড়ির মতন। বাসের হেলপারকে ভাড়া দিলাম। পাশে বসা লোকটির কাছে ভাড়া চাইল না হেলপার। যা হোক, কেন চায়নি তা জেনে আমার কি লাভ।
খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটরের জ্যাম পেরিয়ে গাড়ি এখন মগবাজারের পথে। এদিকটায় তেমন জ্যাম হয় না। দ্রুত চলে। প্রথম দিকের বেশ কয়েকটা সিট খালি হলো। আমি উঠে সামনের দিকে যেতে লাগলাম। তখন নির্বিকারভাবে অদ্ভুত ওই লোকটা বলতে লাগল—
‘সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা এই যুবকের সাথে কথা;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা।’
এইবার আমি রেগে আগুন। মনে হচ্ছে লোকটা ইভটিজার। সে দিন-দুপুরে আমাকে উদ্দেশ্য করে এমন করছে। ছোকরা হলেও বুঝতাম। ছোকরা মানে আমার সমবয়সী হলেও বুঝতাম। আমাকে নিয়ে তার মনে লাড্ডু ফুটছে। কিন্তু এ কী! লোকটার বয়স কম বলে মনে হচ্ছে না। হবে হয়তো ৪০-এর কাছাকাছি।
বাস এইবার মৌচাকে। লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে আপনি?’
সে যথারীতি অবাক হয়ে বলল, ‘মানুষ’
আরে সে তো শুনতে পায়। আগেরবার তাহলে ইচ্ছে করে উত্তর দেয়নি। আমি আরেকটু কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মানুষ তো ঠিক আছে। কিন্তু পরিচয় কী?’
-মানুষই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়
-জীবনানন্দকে ভালোবাসেন?
-জীবনানন্দ! কে সে!
-আপনি যার কবিতা পড়ছিলেন তিনিই জীবনানন্দ।
-তাই নাকি! আমি কবিতা পড়ছিলাম!
আমি হকচকিয়ে উঠলাম। মাঝবয়সী এই লোকটা ভীষণ বদলোক। নাহ, এই ধরনের লোকের সঙ্গে কথা বাড়ানো ঠিক হবে না।
বাস এবার মালিবাগ রেলগেটের কাছে পৌঁছাল। এক্ষুনি ট্রেন আসবে। তাই দুদিকের সব রিকশা, সিএনজি ও বাস থেমে আছে। এবার সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকটা নামার জন্য তৈরি হচ্ছে। তার গন্তব্য সম্ভবত এসে পড়েছে। মনে মনে স্বস্তি পাচ্ছি আমি। এবার সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে, চোখ ফেরাতে ফেরাতে বলতে লাগলো—
আমি কবি–সেই কবি,–
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি!
আন্মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে!
মৌন নীলের ইশারায় কোন্ কামনা জাগিছে প্রাণে!
বুকের বাদল উথলি উঠিছে কোন্ কাজরীর গানে!
দাদুরী-কাঁদানো শাঙন-দরিয়া হৃদয়ে উঠিছে দ্রবি!
কবিতা আবৃত্তি করতে করতে সে বাস থেকে নেমে গেল। বিকট শব্দ করে ট্রেন চলে গেছে। তিনি মাস্ক খুলে ধীর পায়ে হেঁটে চলছে পশ্চিমের দিকে। বাস ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছি। আর ডাকছি—‘কবি...কবি...কবি...আমার অনেক কথা ছিল! অনেক কথা...’

কার্তিকের সকালে বেশ শীত শীত ভাব। ঘড়ির কাটা টিক টিক করে জানিয়ে দেয় সাড়ে সাতটা বাজে। উফফ অফিসে যেতে হবে। আর যেতে হবে মানেই দীর্ঘ জ্যাম পাড়ি দিতে হবে! অফিসটা বাসা থেকে বেশ দূরে হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী—পথটা কম দূরত্বের নয়। কী আর করা। জার্নিটা মাঝেমধ্যে বেশ মজা লাগে আমার। মনে হয় পৃথিবীর পথে পথে আমি একা হেঁটে বেড়াচ্ছি, দৌড়ে বেড়াচ্ছি। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আমার স্বাধীনভাবে পাখা মেলবার সুযোগ আছে। যা খুশি, তা করার সুযোগ আছে। হৃদয়কে সাদা শিউলির মতো ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে।
ফোনের অ্যালার্মটা বাজছে। আটটা বাজতে চলল। শরীর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে নিলাম। ব্রাশ করে, রেডি হয়ে, হালকা কিছু খেয়ে তড়িঘড়ি করে বের হলাম। বাসা থেকে তিন রাস্তার মোড় খুব দূরে নয়। ৭-১০ মিনিটের হাঁটা-পথ। এইটুকু পথ রিকশায় যাই। আজকাল হাঁটতে ইচ্ছে করে না। আর এ সময় হেঁটে গেলে অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে। তড়িঘড়ি করে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালেও লাভ হয়নি। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ লাইন করে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। লাইনের পেছনের দিকে দাঁড়ালাম। ঝকঝকে রোদ নিমেষেই কেমন যেন মিলিয়ে গেল। এখন আকাশটা ধূসর। কালো কালো ভাব। বাসের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে খুব বিরক্ত লাগে। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে যায়। আজও একই অবস্থা। এমন সময় পেছন থেকে একটি লোক এল; সাদা পাঞ্জাবি পরা। মুখে সাদা মাস্ক। চুলগুলো ছোট করে কাটা। জ্ঞানী জ্ঞানী দৃষ্টি। মোচ আছে কি নেই, তা বোঝা যাচ্ছে না। লাইনের পেছন থেকে লোকটি আওড়াতে থাকে কয়েকটি লাইন। বলছেন—
‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই—প্রীতি নেই—করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব’লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।’
তাঁর উচ্চারণ ও শব্দগুলো আমার কানে এসে লাগল। অফিসের যাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ কবিতা আওড়াতে পারে! ব্যাপারটা আনন্দের নাকি বিরক্তির, ঠিক বুঝলাম না। অবশ্য আমি তো অফিসে বসে বসে সহকর্মীদের কবিতা শোনাতে শোনাতে পাগল করে দিই। ওরাও আমাকে ভালোবেসে সব জ্বালাতন মেনে নেয়। আদরখেকো বিড়ালের মতো নারী সহকর্মীদের আদর চাই আমি। তারাও মমতাভরা কাঁধ বিছিয়ে দেয়। ভালোবেসে বুকে টেনে নেয়। আমি জানি, এ পাগলামি। এই পাগলামিতে রয়েছে নিখাদ ভালোবাসার পূর্ণ জ্যোতি। এটি আসলে পাগলামি নয়। সব ঠিক আছে। পেছনের ওই পাঞ্জাবি পরা লোকটা একের পর এক কবিতার লাইন বলে যাচ্ছে। আর আমি ও অন্যরা সহ্য করে যাচ্ছি।
বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি! লোকটা আমার বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল দেখছে। খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম। অপরিচিত এক লোক আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সে আবারও বিড় বিড় করে কবিতা পড়ছে—
‘আমি যদি হতাম বনহংস,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;’
কবিতা ভালোবাসি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জীবন বাবুকে ভালোবাসি, তাতেও সন্দেহ নেই। তাই বলে অপরিচিত এক লোক একের পর এক কবিতা শুনিয়ে যাবে, ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে, তা মানা যায় না। আমি চোখ-মুখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমাকে চেনেন আপনি?’
মনে হলো কিছুই শুনল না। আবারও জিজ্ঞেস করলাম। সে নিরুদ্দেশ এক দৃষ্টি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার গলার আওয়াজ তার কানে পৌঁছাল না। বুঝতে পারলাম সে বৃষ্টি দেখছে। আমাকে নয়। একজন মানুষের তো অবশ্যই বৃষ্টি দেখার অধিকার আছে। আমি তাতে বাধা দিতে পারি না।
এবার সে পকেট থেকে মোবাইল বের করল। মনে হলো ফেসবুক স্ক্রল করছে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পড়ছে—
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।’
আমি আর বিরক্ত হচ্ছি না। কেন জানি লোকটাকে পাগল মনে হলো। সে আপনমনে কবিতা পড়ে যাচ্ছে। তবে বাসের এত মানুষ, গাড়ির হর্নের শব্দ, লোকেদের কথাবার্তা কিছুই কি সে শুনতে পাচ্ছে না? আর তার কবিতা কি কেবল আমিই শুনছি? আর কেউ শুনছে না? যা হোক এত সন্দেহ বুকে পুষে না রেখে আপন মনে চলছি। বাস চলছে তার গতিতে। ঠেলাগাড়ির মতন। বাসের হেলপারকে ভাড়া দিলাম। পাশে বসা লোকটির কাছে ভাড়া চাইল না হেলপার। যা হোক, কেন চায়নি তা জেনে আমার কি লাভ।
খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটরের জ্যাম পেরিয়ে গাড়ি এখন মগবাজারের পথে। এদিকটায় তেমন জ্যাম হয় না। দ্রুত চলে। প্রথম দিকের বেশ কয়েকটা সিট খালি হলো। আমি উঠে সামনের দিকে যেতে লাগলাম। তখন নির্বিকারভাবে অদ্ভুত ওই লোকটা বলতে লাগল—
‘সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা এই যুবকের সাথে কথা;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা।’
এইবার আমি রেগে আগুন। মনে হচ্ছে লোকটা ইভটিজার। সে দিন-দুপুরে আমাকে উদ্দেশ্য করে এমন করছে। ছোকরা হলেও বুঝতাম। ছোকরা মানে আমার সমবয়সী হলেও বুঝতাম। আমাকে নিয়ে তার মনে লাড্ডু ফুটছে। কিন্তু এ কী! লোকটার বয়স কম বলে মনে হচ্ছে না। হবে হয়তো ৪০-এর কাছাকাছি।
বাস এইবার মৌচাকে। লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে আপনি?’
সে যথারীতি অবাক হয়ে বলল, ‘মানুষ’
আরে সে তো শুনতে পায়। আগেরবার তাহলে ইচ্ছে করে উত্তর দেয়নি। আমি আরেকটু কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মানুষ তো ঠিক আছে। কিন্তু পরিচয় কী?’
-মানুষই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়
-জীবনানন্দকে ভালোবাসেন?
-জীবনানন্দ! কে সে!
-আপনি যার কবিতা পড়ছিলেন তিনিই জীবনানন্দ।
-তাই নাকি! আমি কবিতা পড়ছিলাম!
আমি হকচকিয়ে উঠলাম। মাঝবয়সী এই লোকটা ভীষণ বদলোক। নাহ, এই ধরনের লোকের সঙ্গে কথা বাড়ানো ঠিক হবে না।
বাস এবার মালিবাগ রেলগেটের কাছে পৌঁছাল। এক্ষুনি ট্রেন আসবে। তাই দুদিকের সব রিকশা, সিএনজি ও বাস থেমে আছে। এবার সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকটা নামার জন্য তৈরি হচ্ছে। তার গন্তব্য সম্ভবত এসে পড়েছে। মনে মনে স্বস্তি পাচ্ছি আমি। এবার সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে, চোখ ফেরাতে ফেরাতে বলতে লাগলো—
আমি কবি–সেই কবি,–
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি!
আন্মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে!
মৌন নীলের ইশারায় কোন্ কামনা জাগিছে প্রাণে!
বুকের বাদল উথলি উঠিছে কোন্ কাজরীর গানে!
দাদুরী-কাঁদানো শাঙন-দরিয়া হৃদয়ে উঠিছে দ্রবি!
কবিতা আবৃত্তি করতে করতে সে বাস থেকে নেমে গেল। বিকট শব্দ করে ট্রেন চলে গেছে। তিনি মাস্ক খুলে ধীর পায়ে হেঁটে চলছে পশ্চিমের দিকে। বাস ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছি। আর ডাকছি—‘কবি...কবি...কবি...আমার অনেক কথা ছিল! অনেক কথা...’

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৪ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৫ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি!
২২ অক্টোবর ২০২১
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৫ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি!
২২ অক্টোবর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৫ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি!
২২ অক্টোবর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৪ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৪ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

বাস এসেছে। লাইন ঠিক রেখেই উঠছে মানুষ। আমি উঠে গিয়ে মাঝামাঝি একটি সিটে বসলাম। কী অদ্ভুত, লোকটা আমার পাশে এসে বসল। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমি জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছি। জানলার গ্লাস খানিকটা খোলা রেখেছি। কার্তিকের সকালে এমন হুটহাট বৃষ্টি!
২২ অক্টোবর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৪ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৫ দিন আগে