জাহীদ রেজা নূর

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ রুবল দাম। সে সময় একেকজন শিক্ষার্থী ৯০ রুবল স্টাইপেন্ড পেতেন। তার মানে এক মাসের স্টাইপেন্ডের চেয়েও বেশি দাম ক্যামেরাটার। কিন্তু কাজ করার পর যে টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে তো কেনা যাবে একটা ক্যামেরা! এ চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল। হোক না রাশিয়ান ক্যামেরা, ক্যানন বা নাইকনের মতো ক্যারিশমা নেই তার। কিন্তু তার লেন্স? তার ছবির স্পষ্টতা? যেকোনো ক্যামেরাকেই তো জেনিত হারিয়ে দেবে। আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতাম এভাবে: সোভিয়েত ইউনিয়নে তো সাদা-কালো ছবি তুলতে হবে। রঙিন ফিল্ম নেই বললেই চলে। যদিও কখনো রঙিন ফিল্ম (আগফা) কেনার সুযোগ হতো, তবুও সে ফিল্মে যে ছবি উঠত, তা ছিল ঘোলাটে। সোভিয়েত নাগরিকেরা পত্রিকা, জার্নালের পাতা ছাড়া ভালো ছবি দেখার সুযোগ পেত না। এগুলো এখন অলীক কথাবার্তা বলে মনে হতে পারে।
যাই হোক, আমাদের নির্মাণ শ্রমিক হওয়ার সুযোগ ঘটল না। সাইবেরিয়ার নির্মাণ শ্রমিক হয়ে গেলে অনেক টাকা উপার্জন করা যায় বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আমাদের নাম তালিকাভুক্ত হলো যৌথখামারের জন্য। ক্রাসনাদারের অদূরে দিনস্কি রাইয়নে যাব আমরা। যে কালখোজ বা যৌথ খামারে কাজ করব, তার নাম ‘জাভেতি লেনিনা’ (লেনিনের অঙ্গীকার)।
শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো সকালের দিকেই। বেশি সময় লাগল না। সম্ভবত এক ঘণ্টারও কম সময়ে আমরা পৌঁছেছিলাম সেই কালখোজে। ঢুকতেই একটা বড় হলঘর। সেখানেই ডাইনিং টেবিল। যারা এই শিবিরে থাকবে, তাদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন এখানেই। একটু হেঁটে ভিতরের দিকে ঢুকলে লম্বা দুই সারিতে কয়েকটি ঘর। সে ঘরগুলোতেই আমাদের ঠাঁই হলো। আমরা যে ঘরে ছিলাম, সেখানে আমি আর রিপন। বাকি আটজন ছিল ইথিওপিয়ার ছেলে। মেয়েরা ছিল বিপরীত দিকের ঘরগুলোয়।
এখানে বলে রাখা ভালো, যারাই যৌথখামারে কিংবা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যেত, তারা বিদেশে যেত না টাকা কামাতে। হয় তাদের সুযোগ ছিল না, নতুবা পার্টির নির্দেশ মেনে এই কাজ করত। প্রথম দিন আমাদের কোনো কাজ করতে হয়নি। যিনি আমাদের তত্ত্বাবধান করছিলেন, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী কী কাজ করতে হবে। প্রথম দিন আমাদের যেতে হবে আপেল বাগানে। সেখানে ঝুড়ি ভরে আপেল কুড়িয়ে গাড়িতে এনে ফেলতে হবে। যত খুশি আপেল খাওয়া যাবে। কিন্তু শিবিরে বয়ে আনা যাবে না। দ্বিতীয় দিন নিয়ে যাওয়া হবে আলুর খেতে। দুপুর পর্যন্ত আলু তুলে গাড়ি ভরতে হবে। ছোট-বড় সব আলু একসঙ্গে তুলতে হবে। আলাদা করার দরকার নেই। তৃতীয় দিন নিড়ানি। আগাছা হয়েছে খেতে, সেই খেত পরিষ্কার করতে হবে। চতুর্থ দিন থেকে কী করতে হয়েছিল, তা ধারাবাহিকভাবে মনে নেই। তবে লাই কুড়াতে হয়েছিল একদিন, সেটা মনে আছে।
প্রতিদিন বিকেলে টেবিল টেনিস খেলার সুযোগ ছিল। দুটো টেবিল ছিল। ভলিবল খেলা যেত। সন্ধ্যায় কখনো কখনো আয়োজন করা হতো দিস্কোতেকা (ডিসকোটেকা)। সেখানে নাচ হতো। সে সময় মডার্ন টকিং মাতিয়ে দিয়েছিল সোভিয়েত তরুণের মন। `ইউ আর মাই হার্ট, ইউ আর মাই সোউল’, ‘শেরি শেরি লেডি’, গান দুটোর কথাই বেশি মনে পড়ে। যেকোনো নাচের অনুষ্ঠানে এই গান দুটোর উপস্থিতি ছিল অবধারিত।
লারা নামে একটি মেয়ে ছিল মাদাগাস্কারের। ও আমাকে খুব পছন্দ করত। না, প্রেমিক হিসেবে আমাকে দেখত না ও। সহজেই মিশতে পারত। কথা বলতে ভালোবাসত। ওর মধ্যে একটা ‘মা মা’ বা ‘বড়বোন বড়বোন’ ভাব ছিল। ওর সঙ্গে কথা বললে বোঝা যেত, ওদের জীবন গড়ে উঠেছে ইউরোপ, এশিয়া, আর আফ্রিকার মিলিত সংস্কৃতিতে।
যেহেতু শ্রমিক বা কৃষক হিসেবে কাজ করছি, তাই আমাদের খাওয়াটা ছিল দেখার মতো। বাহুল্য ছিল না, কিন্তু পুষ্টির শতভাগ জোগান থাকত খাবারে। বোর্শ; অর্থাৎ, গরুর মাংস আর বাঁধা কপি দিয়ে তৈরি সুপ ছিল শুরুতে। এর পর বড় আকারের একটি বিফ স্টেক। একটু সাদা ভাত অথবা স্ম্যাশ্ড পটেটো, তাতে মাখনের প্রলেপ। প্রচুর সালাদ থাকত। স্মিতানা নামে ঘন দই থাকত। থাকত কমপোত নামে ফল জাল দিয়ে তৈরি পানীয়। আর কী কী থাকত, তা খেয়াল নেই।
গরুর মাংস আমার সব সময়ের প্রিয় খাবার। তাই খাওয়াটা ভালো লাগত। কখনো বিফ স্টেকের পরিবর্তে থাকত গুলইয়াশ। এটাও ঘন ঝোলে গরুর মাংস। ভাত বা আলুভর্তা দিয়ে তা খেতে খুব ভালো লাগত।
যে পানীয়টির কথা বলা হয়নি, সেটা হলো ক্ভাস। উচ্চারণ (kvas)। কাজ শেষে ক্যাম্প বা শিবিরে ফেরার পর বিশাল এক ড্রামে থাকত এই পানীয়। আহা! ঠান্ডা সেই পানীয় জুড়িয়ে দিত মন।
এটাই ছিল আমাদের প্রথম রুশ গ্রাম দেখা। ‘আমুদে পরিবার’ নামে একটা রুশ বই পড়েছিলাম ছেলেবেলায়। সেখানে রুশ গ্রামের বর্ণনা ছিল। এখানে এসে সেই বইটির কথা স্মরণে এল। প্রথম দিন বিকেলে আমি আর রিপন হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। থেমেছিলাম কেবল নদীর ধারে একটা সেতুর কাছে এসে। সেখানে খড়ের ওপর বসেছিলাম। রিপন বেশ ভালো গান গায়। কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছিল ও। আমি আবৃত্তি করেছিলাম কয়েকটি কবিতা। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল। তার রক্তিম আভা যখন পুরো পরিবেশকে রহস্যময় করে তুলেছিল, তখনই আমরা ফিরে এসেছিলাম আমাদের ক্যাম্পে।
গ্রামের মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে ওরা কথা বলার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকত। বোঝা যেত, স্কুলে ভূগোল পড়ানো হলেও পৃথিবীর ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে ওদের কোনো ধারণাই নেই। কেউ কেউ অবশ্য বুঝতেন, কিংবা না বুঝে মাথা নাড়তেন।
যেমন, একজন আমাদের দেখে বললেন, ‘তোমরা কি কিউবা থেকে এসেছ?’
আমরা বললাম, ‘না। আমরা এসেছি বাংলাদেশ থেকে।’
‘তার মানে আফ্রিকা?’
‘না। এটা বাংলাদেশ। এশিয়ার দেশ। ভারতের পাশে।’
‘ও, ভারত? রাজ কাপুরের ভারত? মিৎখুনের (মিঠুন) ভারত।’
বোঝা গেল, ওদের সিনেমা হলগুলোতে রাজকাপুর, আর মিঠুন খুব জনপ্রিয়। মিঠুনের ‘ডিসকো ড্যান্সার’ ছবিটি খুব দেখত সোভিয়েত জনগণ।
সেদিন যখন আওয়াজ বাড়িয়ে সংগীতের ব্যবস্থা করা হলো, তখন লারা আমার কাছে এসে বলল, ‘রেজা, দাভাই তানসুয়েম’ (রেজা, চলো নাচি)।’
আমি বললাম, ‘ই্য়া নি উমেয়ু তানৎসিভাত। (আমি নাচতে পারি না)।’
‘ইশতো তি গাভারিশ। দাভাই তানৎসিভাত। (কী বলছিস, আয় নাচি) ’
‘ইয়া নি বুদু তানৎসিভাত। (আমি নাচব না)।’
‘নু রেজা, তিন ইশিও মালাদোই। (কিন্তু রেজা, তুমি এখনো তরুণ)।’
লারা যতই আমাকে নাচার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকুক না কেন, আমি নাচিনি। এখন ভাবি, কী হতো একটু নাচলে? কেন এতটা একরোখা ছিলাম আমি? বলা হয়ে থাকে, ফ্রান্সে গেলে ফরাসি হতে হয়। অথচ আমি যেন পণ করেছিলাম, যেখানেই যাই না কেন, বাঙালি থাকব। এখন বুঝতে পারি, আমার ভাবনা অনেক বেশি জড় ভাবনা ছিল। বাঙালি হতে গিয়ে মানুষ হওয়ার চর্চা কি একটু ধাক্কা খেয়ে যায়নি? এগুলো অবশ্য এখনকার উপলব্ধি। তখন তো নিজের অবস্থান নিয়ে সুখীই ছিলাম।

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ রুবল দাম। সে সময় একেকজন শিক্ষার্থী ৯০ রুবল স্টাইপেন্ড পেতেন। তার মানে এক মাসের স্টাইপেন্ডের চেয়েও বেশি দাম ক্যামেরাটার। কিন্তু কাজ করার পর যে টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে তো কেনা যাবে একটা ক্যামেরা! এ চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল। হোক না রাশিয়ান ক্যামেরা, ক্যানন বা নাইকনের মতো ক্যারিশমা নেই তার। কিন্তু তার লেন্স? তার ছবির স্পষ্টতা? যেকোনো ক্যামেরাকেই তো জেনিত হারিয়ে দেবে। আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতাম এভাবে: সোভিয়েত ইউনিয়নে তো সাদা-কালো ছবি তুলতে হবে। রঙিন ফিল্ম নেই বললেই চলে। যদিও কখনো রঙিন ফিল্ম (আগফা) কেনার সুযোগ হতো, তবুও সে ফিল্মে যে ছবি উঠত, তা ছিল ঘোলাটে। সোভিয়েত নাগরিকেরা পত্রিকা, জার্নালের পাতা ছাড়া ভালো ছবি দেখার সুযোগ পেত না। এগুলো এখন অলীক কথাবার্তা বলে মনে হতে পারে।
যাই হোক, আমাদের নির্মাণ শ্রমিক হওয়ার সুযোগ ঘটল না। সাইবেরিয়ার নির্মাণ শ্রমিক হয়ে গেলে অনেক টাকা উপার্জন করা যায় বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আমাদের নাম তালিকাভুক্ত হলো যৌথখামারের জন্য। ক্রাসনাদারের অদূরে দিনস্কি রাইয়নে যাব আমরা। যে কালখোজ বা যৌথ খামারে কাজ করব, তার নাম ‘জাভেতি লেনিনা’ (লেনিনের অঙ্গীকার)।
শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো সকালের দিকেই। বেশি সময় লাগল না। সম্ভবত এক ঘণ্টারও কম সময়ে আমরা পৌঁছেছিলাম সেই কালখোজে। ঢুকতেই একটা বড় হলঘর। সেখানেই ডাইনিং টেবিল। যারা এই শিবিরে থাকবে, তাদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন এখানেই। একটু হেঁটে ভিতরের দিকে ঢুকলে লম্বা দুই সারিতে কয়েকটি ঘর। সে ঘরগুলোতেই আমাদের ঠাঁই হলো। আমরা যে ঘরে ছিলাম, সেখানে আমি আর রিপন। বাকি আটজন ছিল ইথিওপিয়ার ছেলে। মেয়েরা ছিল বিপরীত দিকের ঘরগুলোয়।
এখানে বলে রাখা ভালো, যারাই যৌথখামারে কিংবা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যেত, তারা বিদেশে যেত না টাকা কামাতে। হয় তাদের সুযোগ ছিল না, নতুবা পার্টির নির্দেশ মেনে এই কাজ করত। প্রথম দিন আমাদের কোনো কাজ করতে হয়নি। যিনি আমাদের তত্ত্বাবধান করছিলেন, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী কী কাজ করতে হবে। প্রথম দিন আমাদের যেতে হবে আপেল বাগানে। সেখানে ঝুড়ি ভরে আপেল কুড়িয়ে গাড়িতে এনে ফেলতে হবে। যত খুশি আপেল খাওয়া যাবে। কিন্তু শিবিরে বয়ে আনা যাবে না। দ্বিতীয় দিন নিয়ে যাওয়া হবে আলুর খেতে। দুপুর পর্যন্ত আলু তুলে গাড়ি ভরতে হবে। ছোট-বড় সব আলু একসঙ্গে তুলতে হবে। আলাদা করার দরকার নেই। তৃতীয় দিন নিড়ানি। আগাছা হয়েছে খেতে, সেই খেত পরিষ্কার করতে হবে। চতুর্থ দিন থেকে কী করতে হয়েছিল, তা ধারাবাহিকভাবে মনে নেই। তবে লাই কুড়াতে হয়েছিল একদিন, সেটা মনে আছে।
প্রতিদিন বিকেলে টেবিল টেনিস খেলার সুযোগ ছিল। দুটো টেবিল ছিল। ভলিবল খেলা যেত। সন্ধ্যায় কখনো কখনো আয়োজন করা হতো দিস্কোতেকা (ডিসকোটেকা)। সেখানে নাচ হতো। সে সময় মডার্ন টকিং মাতিয়ে দিয়েছিল সোভিয়েত তরুণের মন। `ইউ আর মাই হার্ট, ইউ আর মাই সোউল’, ‘শেরি শেরি লেডি’, গান দুটোর কথাই বেশি মনে পড়ে। যেকোনো নাচের অনুষ্ঠানে এই গান দুটোর উপস্থিতি ছিল অবধারিত।
লারা নামে একটি মেয়ে ছিল মাদাগাস্কারের। ও আমাকে খুব পছন্দ করত। না, প্রেমিক হিসেবে আমাকে দেখত না ও। সহজেই মিশতে পারত। কথা বলতে ভালোবাসত। ওর মধ্যে একটা ‘মা মা’ বা ‘বড়বোন বড়বোন’ ভাব ছিল। ওর সঙ্গে কথা বললে বোঝা যেত, ওদের জীবন গড়ে উঠেছে ইউরোপ, এশিয়া, আর আফ্রিকার মিলিত সংস্কৃতিতে।
যেহেতু শ্রমিক বা কৃষক হিসেবে কাজ করছি, তাই আমাদের খাওয়াটা ছিল দেখার মতো। বাহুল্য ছিল না, কিন্তু পুষ্টির শতভাগ জোগান থাকত খাবারে। বোর্শ; অর্থাৎ, গরুর মাংস আর বাঁধা কপি দিয়ে তৈরি সুপ ছিল শুরুতে। এর পর বড় আকারের একটি বিফ স্টেক। একটু সাদা ভাত অথবা স্ম্যাশ্ড পটেটো, তাতে মাখনের প্রলেপ। প্রচুর সালাদ থাকত। স্মিতানা নামে ঘন দই থাকত। থাকত কমপোত নামে ফল জাল দিয়ে তৈরি পানীয়। আর কী কী থাকত, তা খেয়াল নেই।
গরুর মাংস আমার সব সময়ের প্রিয় খাবার। তাই খাওয়াটা ভালো লাগত। কখনো বিফ স্টেকের পরিবর্তে থাকত গুলইয়াশ। এটাও ঘন ঝোলে গরুর মাংস। ভাত বা আলুভর্তা দিয়ে তা খেতে খুব ভালো লাগত।
যে পানীয়টির কথা বলা হয়নি, সেটা হলো ক্ভাস। উচ্চারণ (kvas)। কাজ শেষে ক্যাম্প বা শিবিরে ফেরার পর বিশাল এক ড্রামে থাকত এই পানীয়। আহা! ঠান্ডা সেই পানীয় জুড়িয়ে দিত মন।
এটাই ছিল আমাদের প্রথম রুশ গ্রাম দেখা। ‘আমুদে পরিবার’ নামে একটা রুশ বই পড়েছিলাম ছেলেবেলায়। সেখানে রুশ গ্রামের বর্ণনা ছিল। এখানে এসে সেই বইটির কথা স্মরণে এল। প্রথম দিন বিকেলে আমি আর রিপন হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। থেমেছিলাম কেবল নদীর ধারে একটা সেতুর কাছে এসে। সেখানে খড়ের ওপর বসেছিলাম। রিপন বেশ ভালো গান গায়। কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছিল ও। আমি আবৃত্তি করেছিলাম কয়েকটি কবিতা। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল। তার রক্তিম আভা যখন পুরো পরিবেশকে রহস্যময় করে তুলেছিল, তখনই আমরা ফিরে এসেছিলাম আমাদের ক্যাম্পে।
গ্রামের মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে ওরা কথা বলার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকত। বোঝা যেত, স্কুলে ভূগোল পড়ানো হলেও পৃথিবীর ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে ওদের কোনো ধারণাই নেই। কেউ কেউ অবশ্য বুঝতেন, কিংবা না বুঝে মাথা নাড়তেন।
যেমন, একজন আমাদের দেখে বললেন, ‘তোমরা কি কিউবা থেকে এসেছ?’
আমরা বললাম, ‘না। আমরা এসেছি বাংলাদেশ থেকে।’
‘তার মানে আফ্রিকা?’
‘না। এটা বাংলাদেশ। এশিয়ার দেশ। ভারতের পাশে।’
‘ও, ভারত? রাজ কাপুরের ভারত? মিৎখুনের (মিঠুন) ভারত।’
বোঝা গেল, ওদের সিনেমা হলগুলোতে রাজকাপুর, আর মিঠুন খুব জনপ্রিয়। মিঠুনের ‘ডিসকো ড্যান্সার’ ছবিটি খুব দেখত সোভিয়েত জনগণ।
সেদিন যখন আওয়াজ বাড়িয়ে সংগীতের ব্যবস্থা করা হলো, তখন লারা আমার কাছে এসে বলল, ‘রেজা, দাভাই তানসুয়েম’ (রেজা, চলো নাচি)।’
আমি বললাম, ‘ই্য়া নি উমেয়ু তানৎসিভাত। (আমি নাচতে পারি না)।’
‘ইশতো তি গাভারিশ। দাভাই তানৎসিভাত। (কী বলছিস, আয় নাচি) ’
‘ইয়া নি বুদু তানৎসিভাত। (আমি নাচব না)।’
‘নু রেজা, তিন ইশিও মালাদোই। (কিন্তু রেজা, তুমি এখনো তরুণ)।’
লারা যতই আমাকে নাচার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকুক না কেন, আমি নাচিনি। এখন ভাবি, কী হতো একটু নাচলে? কেন এতটা একরোখা ছিলাম আমি? বলা হয়ে থাকে, ফ্রান্সে গেলে ফরাসি হতে হয়। অথচ আমি যেন পণ করেছিলাম, যেখানেই যাই না কেন, বাঙালি থাকব। এখন বুঝতে পারি, আমার ভাবনা অনেক বেশি জড় ভাবনা ছিল। বাঙালি হতে গিয়ে মানুষ হওয়ার চর্চা কি একটু ধাক্কা খেয়ে যায়নি? এগুলো অবশ্য এখনকার উপলব্ধি। তখন তো নিজের অবস্থান নিয়ে সুখীই ছিলাম।
জাহীদ রেজা নূর

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ রুবল দাম। সে সময় একেকজন শিক্ষার্থী ৯০ রুবল স্টাইপেন্ড পেতেন। তার মানে এক মাসের স্টাইপেন্ডের চেয়েও বেশি দাম ক্যামেরাটার। কিন্তু কাজ করার পর যে টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে তো কেনা যাবে একটা ক্যামেরা! এ চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল। হোক না রাশিয়ান ক্যামেরা, ক্যানন বা নাইকনের মতো ক্যারিশমা নেই তার। কিন্তু তার লেন্স? তার ছবির স্পষ্টতা? যেকোনো ক্যামেরাকেই তো জেনিত হারিয়ে দেবে। আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতাম এভাবে: সোভিয়েত ইউনিয়নে তো সাদা-কালো ছবি তুলতে হবে। রঙিন ফিল্ম নেই বললেই চলে। যদিও কখনো রঙিন ফিল্ম (আগফা) কেনার সুযোগ হতো, তবুও সে ফিল্মে যে ছবি উঠত, তা ছিল ঘোলাটে। সোভিয়েত নাগরিকেরা পত্রিকা, জার্নালের পাতা ছাড়া ভালো ছবি দেখার সুযোগ পেত না। এগুলো এখন অলীক কথাবার্তা বলে মনে হতে পারে।
যাই হোক, আমাদের নির্মাণ শ্রমিক হওয়ার সুযোগ ঘটল না। সাইবেরিয়ার নির্মাণ শ্রমিক হয়ে গেলে অনেক টাকা উপার্জন করা যায় বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আমাদের নাম তালিকাভুক্ত হলো যৌথখামারের জন্য। ক্রাসনাদারের অদূরে দিনস্কি রাইয়নে যাব আমরা। যে কালখোজ বা যৌথ খামারে কাজ করব, তার নাম ‘জাভেতি লেনিনা’ (লেনিনের অঙ্গীকার)।
শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো সকালের দিকেই। বেশি সময় লাগল না। সম্ভবত এক ঘণ্টারও কম সময়ে আমরা পৌঁছেছিলাম সেই কালখোজে। ঢুকতেই একটা বড় হলঘর। সেখানেই ডাইনিং টেবিল। যারা এই শিবিরে থাকবে, তাদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন এখানেই। একটু হেঁটে ভিতরের দিকে ঢুকলে লম্বা দুই সারিতে কয়েকটি ঘর। সে ঘরগুলোতেই আমাদের ঠাঁই হলো। আমরা যে ঘরে ছিলাম, সেখানে আমি আর রিপন। বাকি আটজন ছিল ইথিওপিয়ার ছেলে। মেয়েরা ছিল বিপরীত দিকের ঘরগুলোয়।
এখানে বলে রাখা ভালো, যারাই যৌথখামারে কিংবা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যেত, তারা বিদেশে যেত না টাকা কামাতে। হয় তাদের সুযোগ ছিল না, নতুবা পার্টির নির্দেশ মেনে এই কাজ করত। প্রথম দিন আমাদের কোনো কাজ করতে হয়নি। যিনি আমাদের তত্ত্বাবধান করছিলেন, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী কী কাজ করতে হবে। প্রথম দিন আমাদের যেতে হবে আপেল বাগানে। সেখানে ঝুড়ি ভরে আপেল কুড়িয়ে গাড়িতে এনে ফেলতে হবে। যত খুশি আপেল খাওয়া যাবে। কিন্তু শিবিরে বয়ে আনা যাবে না। দ্বিতীয় দিন নিয়ে যাওয়া হবে আলুর খেতে। দুপুর পর্যন্ত আলু তুলে গাড়ি ভরতে হবে। ছোট-বড় সব আলু একসঙ্গে তুলতে হবে। আলাদা করার দরকার নেই। তৃতীয় দিন নিড়ানি। আগাছা হয়েছে খেতে, সেই খেত পরিষ্কার করতে হবে। চতুর্থ দিন থেকে কী করতে হয়েছিল, তা ধারাবাহিকভাবে মনে নেই। তবে লাই কুড়াতে হয়েছিল একদিন, সেটা মনে আছে।
প্রতিদিন বিকেলে টেবিল টেনিস খেলার সুযোগ ছিল। দুটো টেবিল ছিল। ভলিবল খেলা যেত। সন্ধ্যায় কখনো কখনো আয়োজন করা হতো দিস্কোতেকা (ডিসকোটেকা)। সেখানে নাচ হতো। সে সময় মডার্ন টকিং মাতিয়ে দিয়েছিল সোভিয়েত তরুণের মন। `ইউ আর মাই হার্ট, ইউ আর মাই সোউল’, ‘শেরি শেরি লেডি’, গান দুটোর কথাই বেশি মনে পড়ে। যেকোনো নাচের অনুষ্ঠানে এই গান দুটোর উপস্থিতি ছিল অবধারিত।
লারা নামে একটি মেয়ে ছিল মাদাগাস্কারের। ও আমাকে খুব পছন্দ করত। না, প্রেমিক হিসেবে আমাকে দেখত না ও। সহজেই মিশতে পারত। কথা বলতে ভালোবাসত। ওর মধ্যে একটা ‘মা মা’ বা ‘বড়বোন বড়বোন’ ভাব ছিল। ওর সঙ্গে কথা বললে বোঝা যেত, ওদের জীবন গড়ে উঠেছে ইউরোপ, এশিয়া, আর আফ্রিকার মিলিত সংস্কৃতিতে।
যেহেতু শ্রমিক বা কৃষক হিসেবে কাজ করছি, তাই আমাদের খাওয়াটা ছিল দেখার মতো। বাহুল্য ছিল না, কিন্তু পুষ্টির শতভাগ জোগান থাকত খাবারে। বোর্শ; অর্থাৎ, গরুর মাংস আর বাঁধা কপি দিয়ে তৈরি সুপ ছিল শুরুতে। এর পর বড় আকারের একটি বিফ স্টেক। একটু সাদা ভাত অথবা স্ম্যাশ্ড পটেটো, তাতে মাখনের প্রলেপ। প্রচুর সালাদ থাকত। স্মিতানা নামে ঘন দই থাকত। থাকত কমপোত নামে ফল জাল দিয়ে তৈরি পানীয়। আর কী কী থাকত, তা খেয়াল নেই।
গরুর মাংস আমার সব সময়ের প্রিয় খাবার। তাই খাওয়াটা ভালো লাগত। কখনো বিফ স্টেকের পরিবর্তে থাকত গুলইয়াশ। এটাও ঘন ঝোলে গরুর মাংস। ভাত বা আলুভর্তা দিয়ে তা খেতে খুব ভালো লাগত।
যে পানীয়টির কথা বলা হয়নি, সেটা হলো ক্ভাস। উচ্চারণ (kvas)। কাজ শেষে ক্যাম্প বা শিবিরে ফেরার পর বিশাল এক ড্রামে থাকত এই পানীয়। আহা! ঠান্ডা সেই পানীয় জুড়িয়ে দিত মন।
এটাই ছিল আমাদের প্রথম রুশ গ্রাম দেখা। ‘আমুদে পরিবার’ নামে একটা রুশ বই পড়েছিলাম ছেলেবেলায়। সেখানে রুশ গ্রামের বর্ণনা ছিল। এখানে এসে সেই বইটির কথা স্মরণে এল। প্রথম দিন বিকেলে আমি আর রিপন হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। থেমেছিলাম কেবল নদীর ধারে একটা সেতুর কাছে এসে। সেখানে খড়ের ওপর বসেছিলাম। রিপন বেশ ভালো গান গায়। কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছিল ও। আমি আবৃত্তি করেছিলাম কয়েকটি কবিতা। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল। তার রক্তিম আভা যখন পুরো পরিবেশকে রহস্যময় করে তুলেছিল, তখনই আমরা ফিরে এসেছিলাম আমাদের ক্যাম্পে।
গ্রামের মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে ওরা কথা বলার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকত। বোঝা যেত, স্কুলে ভূগোল পড়ানো হলেও পৃথিবীর ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে ওদের কোনো ধারণাই নেই। কেউ কেউ অবশ্য বুঝতেন, কিংবা না বুঝে মাথা নাড়তেন।
যেমন, একজন আমাদের দেখে বললেন, ‘তোমরা কি কিউবা থেকে এসেছ?’
আমরা বললাম, ‘না। আমরা এসেছি বাংলাদেশ থেকে।’
‘তার মানে আফ্রিকা?’
‘না। এটা বাংলাদেশ। এশিয়ার দেশ। ভারতের পাশে।’
‘ও, ভারত? রাজ কাপুরের ভারত? মিৎখুনের (মিঠুন) ভারত।’
বোঝা গেল, ওদের সিনেমা হলগুলোতে রাজকাপুর, আর মিঠুন খুব জনপ্রিয়। মিঠুনের ‘ডিসকো ড্যান্সার’ ছবিটি খুব দেখত সোভিয়েত জনগণ।
সেদিন যখন আওয়াজ বাড়িয়ে সংগীতের ব্যবস্থা করা হলো, তখন লারা আমার কাছে এসে বলল, ‘রেজা, দাভাই তানসুয়েম’ (রেজা, চলো নাচি)।’
আমি বললাম, ‘ই্য়া নি উমেয়ু তানৎসিভাত। (আমি নাচতে পারি না)।’
‘ইশতো তি গাভারিশ। দাভাই তানৎসিভাত। (কী বলছিস, আয় নাচি) ’
‘ইয়া নি বুদু তানৎসিভাত। (আমি নাচব না)।’
‘নু রেজা, তিন ইশিও মালাদোই। (কিন্তু রেজা, তুমি এখনো তরুণ)।’
লারা যতই আমাকে নাচার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকুক না কেন, আমি নাচিনি। এখন ভাবি, কী হতো একটু নাচলে? কেন এতটা একরোখা ছিলাম আমি? বলা হয়ে থাকে, ফ্রান্সে গেলে ফরাসি হতে হয়। অথচ আমি যেন পণ করেছিলাম, যেখানেই যাই না কেন, বাঙালি থাকব। এখন বুঝতে পারি, আমার ভাবনা অনেক বেশি জড় ভাবনা ছিল। বাঙালি হতে গিয়ে মানুষ হওয়ার চর্চা কি একটু ধাক্কা খেয়ে যায়নি? এগুলো অবশ্য এখনকার উপলব্ধি। তখন তো নিজের অবস্থান নিয়ে সুখীই ছিলাম।

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ রুবল দাম। সে সময় একেকজন শিক্ষার্থী ৯০ রুবল স্টাইপেন্ড পেতেন। তার মানে এক মাসের স্টাইপেন্ডের চেয়েও বেশি দাম ক্যামেরাটার। কিন্তু কাজ করার পর যে টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে তো কেনা যাবে একটা ক্যামেরা! এ চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল। হোক না রাশিয়ান ক্যামেরা, ক্যানন বা নাইকনের মতো ক্যারিশমা নেই তার। কিন্তু তার লেন্স? তার ছবির স্পষ্টতা? যেকোনো ক্যামেরাকেই তো জেনিত হারিয়ে দেবে। আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতাম এভাবে: সোভিয়েত ইউনিয়নে তো সাদা-কালো ছবি তুলতে হবে। রঙিন ফিল্ম নেই বললেই চলে। যদিও কখনো রঙিন ফিল্ম (আগফা) কেনার সুযোগ হতো, তবুও সে ফিল্মে যে ছবি উঠত, তা ছিল ঘোলাটে। সোভিয়েত নাগরিকেরা পত্রিকা, জার্নালের পাতা ছাড়া ভালো ছবি দেখার সুযোগ পেত না। এগুলো এখন অলীক কথাবার্তা বলে মনে হতে পারে।
যাই হোক, আমাদের নির্মাণ শ্রমিক হওয়ার সুযোগ ঘটল না। সাইবেরিয়ার নির্মাণ শ্রমিক হয়ে গেলে অনেক টাকা উপার্জন করা যায় বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আমাদের নাম তালিকাভুক্ত হলো যৌথখামারের জন্য। ক্রাসনাদারের অদূরে দিনস্কি রাইয়নে যাব আমরা। যে কালখোজ বা যৌথ খামারে কাজ করব, তার নাম ‘জাভেতি লেনিনা’ (লেনিনের অঙ্গীকার)।
শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো সকালের দিকেই। বেশি সময় লাগল না। সম্ভবত এক ঘণ্টারও কম সময়ে আমরা পৌঁছেছিলাম সেই কালখোজে। ঢুকতেই একটা বড় হলঘর। সেখানেই ডাইনিং টেবিল। যারা এই শিবিরে থাকবে, তাদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন এখানেই। একটু হেঁটে ভিতরের দিকে ঢুকলে লম্বা দুই সারিতে কয়েকটি ঘর। সে ঘরগুলোতেই আমাদের ঠাঁই হলো। আমরা যে ঘরে ছিলাম, সেখানে আমি আর রিপন। বাকি আটজন ছিল ইথিওপিয়ার ছেলে। মেয়েরা ছিল বিপরীত দিকের ঘরগুলোয়।
এখানে বলে রাখা ভালো, যারাই যৌথখামারে কিংবা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যেত, তারা বিদেশে যেত না টাকা কামাতে। হয় তাদের সুযোগ ছিল না, নতুবা পার্টির নির্দেশ মেনে এই কাজ করত। প্রথম দিন আমাদের কোনো কাজ করতে হয়নি। যিনি আমাদের তত্ত্বাবধান করছিলেন, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী কী কাজ করতে হবে। প্রথম দিন আমাদের যেতে হবে আপেল বাগানে। সেখানে ঝুড়ি ভরে আপেল কুড়িয়ে গাড়িতে এনে ফেলতে হবে। যত খুশি আপেল খাওয়া যাবে। কিন্তু শিবিরে বয়ে আনা যাবে না। দ্বিতীয় দিন নিয়ে যাওয়া হবে আলুর খেতে। দুপুর পর্যন্ত আলু তুলে গাড়ি ভরতে হবে। ছোট-বড় সব আলু একসঙ্গে তুলতে হবে। আলাদা করার দরকার নেই। তৃতীয় দিন নিড়ানি। আগাছা হয়েছে খেতে, সেই খেত পরিষ্কার করতে হবে। চতুর্থ দিন থেকে কী করতে হয়েছিল, তা ধারাবাহিকভাবে মনে নেই। তবে লাই কুড়াতে হয়েছিল একদিন, সেটা মনে আছে।
প্রতিদিন বিকেলে টেবিল টেনিস খেলার সুযোগ ছিল। দুটো টেবিল ছিল। ভলিবল খেলা যেত। সন্ধ্যায় কখনো কখনো আয়োজন করা হতো দিস্কোতেকা (ডিসকোটেকা)। সেখানে নাচ হতো। সে সময় মডার্ন টকিং মাতিয়ে দিয়েছিল সোভিয়েত তরুণের মন। `ইউ আর মাই হার্ট, ইউ আর মাই সোউল’, ‘শেরি শেরি লেডি’, গান দুটোর কথাই বেশি মনে পড়ে। যেকোনো নাচের অনুষ্ঠানে এই গান দুটোর উপস্থিতি ছিল অবধারিত।
লারা নামে একটি মেয়ে ছিল মাদাগাস্কারের। ও আমাকে খুব পছন্দ করত। না, প্রেমিক হিসেবে আমাকে দেখত না ও। সহজেই মিশতে পারত। কথা বলতে ভালোবাসত। ওর মধ্যে একটা ‘মা মা’ বা ‘বড়বোন বড়বোন’ ভাব ছিল। ওর সঙ্গে কথা বললে বোঝা যেত, ওদের জীবন গড়ে উঠেছে ইউরোপ, এশিয়া, আর আফ্রিকার মিলিত সংস্কৃতিতে।
যেহেতু শ্রমিক বা কৃষক হিসেবে কাজ করছি, তাই আমাদের খাওয়াটা ছিল দেখার মতো। বাহুল্য ছিল না, কিন্তু পুষ্টির শতভাগ জোগান থাকত খাবারে। বোর্শ; অর্থাৎ, গরুর মাংস আর বাঁধা কপি দিয়ে তৈরি সুপ ছিল শুরুতে। এর পর বড় আকারের একটি বিফ স্টেক। একটু সাদা ভাত অথবা স্ম্যাশ্ড পটেটো, তাতে মাখনের প্রলেপ। প্রচুর সালাদ থাকত। স্মিতানা নামে ঘন দই থাকত। থাকত কমপোত নামে ফল জাল দিয়ে তৈরি পানীয়। আর কী কী থাকত, তা খেয়াল নেই।
গরুর মাংস আমার সব সময়ের প্রিয় খাবার। তাই খাওয়াটা ভালো লাগত। কখনো বিফ স্টেকের পরিবর্তে থাকত গুলইয়াশ। এটাও ঘন ঝোলে গরুর মাংস। ভাত বা আলুভর্তা দিয়ে তা খেতে খুব ভালো লাগত।
যে পানীয়টির কথা বলা হয়নি, সেটা হলো ক্ভাস। উচ্চারণ (kvas)। কাজ শেষে ক্যাম্প বা শিবিরে ফেরার পর বিশাল এক ড্রামে থাকত এই পানীয়। আহা! ঠান্ডা সেই পানীয় জুড়িয়ে দিত মন।
এটাই ছিল আমাদের প্রথম রুশ গ্রাম দেখা। ‘আমুদে পরিবার’ নামে একটা রুশ বই পড়েছিলাম ছেলেবেলায়। সেখানে রুশ গ্রামের বর্ণনা ছিল। এখানে এসে সেই বইটির কথা স্মরণে এল। প্রথম দিন বিকেলে আমি আর রিপন হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। থেমেছিলাম কেবল নদীর ধারে একটা সেতুর কাছে এসে। সেখানে খড়ের ওপর বসেছিলাম। রিপন বেশ ভালো গান গায়। কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছিল ও। আমি আবৃত্তি করেছিলাম কয়েকটি কবিতা। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল। তার রক্তিম আভা যখন পুরো পরিবেশকে রহস্যময় করে তুলেছিল, তখনই আমরা ফিরে এসেছিলাম আমাদের ক্যাম্পে।
গ্রামের মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে ওরা কথা বলার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকত। বোঝা যেত, স্কুলে ভূগোল পড়ানো হলেও পৃথিবীর ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে ওদের কোনো ধারণাই নেই। কেউ কেউ অবশ্য বুঝতেন, কিংবা না বুঝে মাথা নাড়তেন।
যেমন, একজন আমাদের দেখে বললেন, ‘তোমরা কি কিউবা থেকে এসেছ?’
আমরা বললাম, ‘না। আমরা এসেছি বাংলাদেশ থেকে।’
‘তার মানে আফ্রিকা?’
‘না। এটা বাংলাদেশ। এশিয়ার দেশ। ভারতের পাশে।’
‘ও, ভারত? রাজ কাপুরের ভারত? মিৎখুনের (মিঠুন) ভারত।’
বোঝা গেল, ওদের সিনেমা হলগুলোতে রাজকাপুর, আর মিঠুন খুব জনপ্রিয়। মিঠুনের ‘ডিসকো ড্যান্সার’ ছবিটি খুব দেখত সোভিয়েত জনগণ।
সেদিন যখন আওয়াজ বাড়িয়ে সংগীতের ব্যবস্থা করা হলো, তখন লারা আমার কাছে এসে বলল, ‘রেজা, দাভাই তানসুয়েম’ (রেজা, চলো নাচি)।’
আমি বললাম, ‘ই্য়া নি উমেয়ু তানৎসিভাত। (আমি নাচতে পারি না)।’
‘ইশতো তি গাভারিশ। দাভাই তানৎসিভাত। (কী বলছিস, আয় নাচি) ’
‘ইয়া নি বুদু তানৎসিভাত। (আমি নাচব না)।’
‘নু রেজা, তিন ইশিও মালাদোই। (কিন্তু রেজা, তুমি এখনো তরুণ)।’
লারা যতই আমাকে নাচার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকুক না কেন, আমি নাচিনি। এখন ভাবি, কী হতো একটু নাচলে? কেন এতটা একরোখা ছিলাম আমি? বলা হয়ে থাকে, ফ্রান্সে গেলে ফরাসি হতে হয়। অথচ আমি যেন পণ করেছিলাম, যেখানেই যাই না কেন, বাঙালি থাকব। এখন বুঝতে পারি, আমার ভাবনা অনেক বেশি জড় ভাবনা ছিল। বাঙালি হতে গিয়ে মানুষ হওয়ার চর্চা কি একটু ধাক্কা খেয়ে যায়নি? এগুলো অবশ্য এখনকার উপলব্ধি। তখন তো নিজের অবস্থান নিয়ে সুখীই ছিলাম।

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ র
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ র
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ র
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৩ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ র
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
১ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
১ দিন আগে