জাহীদ রেজা নূর

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ রুবল দাম। সে সময় একেকজন শিক্ষার্থী ৯০ রুবল স্টাইপেন্ড পেতেন। তার মানে এক মাসের স্টাইপেন্ডের চেয়েও বেশি দাম ক্যামেরাটার। কিন্তু কাজ করার পর যে টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে তো কেনা যাবে একটা ক্যামেরা! এ চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল। হোক না রাশিয়ান ক্যামেরা, ক্যানন বা নাইকনের মতো ক্যারিশমা নেই তার। কিন্তু তার লেন্স? তার ছবির স্পষ্টতা? যেকোনো ক্যামেরাকেই তো জেনিত হারিয়ে দেবে। আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতাম এভাবে: সোভিয়েত ইউনিয়নে তো সাদা-কালো ছবি তুলতে হবে। রঙিন ফিল্ম নেই বললেই চলে। যদিও কখনো রঙিন ফিল্ম (আগফা) কেনার সুযোগ হতো, তবুও সে ফিল্মে যে ছবি উঠত, তা ছিল ঘোলাটে। সোভিয়েত নাগরিকেরা পত্রিকা, জার্নালের পাতা ছাড়া ভালো ছবি দেখার সুযোগ পেত না। এগুলো এখন অলীক কথাবার্তা বলে মনে হতে পারে।
যাই হোক, আমাদের নির্মাণ শ্রমিক হওয়ার সুযোগ ঘটল না। সাইবেরিয়ার নির্মাণ শ্রমিক হয়ে গেলে অনেক টাকা উপার্জন করা যায় বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আমাদের নাম তালিকাভুক্ত হলো যৌথখামারের জন্য। ক্রাসনাদারের অদূরে দিনস্কি রাইয়নে যাব আমরা। যে কালখোজ বা যৌথ খামারে কাজ করব, তার নাম ‘জাভেতি লেনিনা’ (লেনিনের অঙ্গীকার)।
শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো সকালের দিকেই। বেশি সময় লাগল না। সম্ভবত এক ঘণ্টারও কম সময়ে আমরা পৌঁছেছিলাম সেই কালখোজে। ঢুকতেই একটা বড় হলঘর। সেখানেই ডাইনিং টেবিল। যারা এই শিবিরে থাকবে, তাদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন এখানেই। একটু হেঁটে ভিতরের দিকে ঢুকলে লম্বা দুই সারিতে কয়েকটি ঘর। সে ঘরগুলোতেই আমাদের ঠাঁই হলো। আমরা যে ঘরে ছিলাম, সেখানে আমি আর রিপন। বাকি আটজন ছিল ইথিওপিয়ার ছেলে। মেয়েরা ছিল বিপরীত দিকের ঘরগুলোয়।
এখানে বলে রাখা ভালো, যারাই যৌথখামারে কিংবা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যেত, তারা বিদেশে যেত না টাকা কামাতে। হয় তাদের সুযোগ ছিল না, নতুবা পার্টির নির্দেশ মেনে এই কাজ করত। প্রথম দিন আমাদের কোনো কাজ করতে হয়নি। যিনি আমাদের তত্ত্বাবধান করছিলেন, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী কী কাজ করতে হবে। প্রথম দিন আমাদের যেতে হবে আপেল বাগানে। সেখানে ঝুড়ি ভরে আপেল কুড়িয়ে গাড়িতে এনে ফেলতে হবে। যত খুশি আপেল খাওয়া যাবে। কিন্তু শিবিরে বয়ে আনা যাবে না। দ্বিতীয় দিন নিয়ে যাওয়া হবে আলুর খেতে। দুপুর পর্যন্ত আলু তুলে গাড়ি ভরতে হবে। ছোট-বড় সব আলু একসঙ্গে তুলতে হবে। আলাদা করার দরকার নেই। তৃতীয় দিন নিড়ানি। আগাছা হয়েছে খেতে, সেই খেত পরিষ্কার করতে হবে। চতুর্থ দিন থেকে কী করতে হয়েছিল, তা ধারাবাহিকভাবে মনে নেই। তবে লাই কুড়াতে হয়েছিল একদিন, সেটা মনে আছে।
প্রতিদিন বিকেলে টেবিল টেনিস খেলার সুযোগ ছিল। দুটো টেবিল ছিল। ভলিবল খেলা যেত। সন্ধ্যায় কখনো কখনো আয়োজন করা হতো দিস্কোতেকা (ডিসকোটেকা)। সেখানে নাচ হতো। সে সময় মডার্ন টকিং মাতিয়ে দিয়েছিল সোভিয়েত তরুণের মন। `ইউ আর মাই হার্ট, ইউ আর মাই সোউল’, ‘শেরি শেরি লেডি’, গান দুটোর কথাই বেশি মনে পড়ে। যেকোনো নাচের অনুষ্ঠানে এই গান দুটোর উপস্থিতি ছিল অবধারিত।
লারা নামে একটি মেয়ে ছিল মাদাগাস্কারের। ও আমাকে খুব পছন্দ করত। না, প্রেমিক হিসেবে আমাকে দেখত না ও। সহজেই মিশতে পারত। কথা বলতে ভালোবাসত। ওর মধ্যে একটা ‘মা মা’ বা ‘বড়বোন বড়বোন’ ভাব ছিল। ওর সঙ্গে কথা বললে বোঝা যেত, ওদের জীবন গড়ে উঠেছে ইউরোপ, এশিয়া, আর আফ্রিকার মিলিত সংস্কৃতিতে।
যেহেতু শ্রমিক বা কৃষক হিসেবে কাজ করছি, তাই আমাদের খাওয়াটা ছিল দেখার মতো। বাহুল্য ছিল না, কিন্তু পুষ্টির শতভাগ জোগান থাকত খাবারে। বোর্শ; অর্থাৎ, গরুর মাংস আর বাঁধা কপি দিয়ে তৈরি সুপ ছিল শুরুতে। এর পর বড় আকারের একটি বিফ স্টেক। একটু সাদা ভাত অথবা স্ম্যাশ্ড পটেটো, তাতে মাখনের প্রলেপ। প্রচুর সালাদ থাকত। স্মিতানা নামে ঘন দই থাকত। থাকত কমপোত নামে ফল জাল দিয়ে তৈরি পানীয়। আর কী কী থাকত, তা খেয়াল নেই।
গরুর মাংস আমার সব সময়ের প্রিয় খাবার। তাই খাওয়াটা ভালো লাগত। কখনো বিফ স্টেকের পরিবর্তে থাকত গুলইয়াশ। এটাও ঘন ঝোলে গরুর মাংস। ভাত বা আলুভর্তা দিয়ে তা খেতে খুব ভালো লাগত।
যে পানীয়টির কথা বলা হয়নি, সেটা হলো ক্ভাস। উচ্চারণ (kvas)। কাজ শেষে ক্যাম্প বা শিবিরে ফেরার পর বিশাল এক ড্রামে থাকত এই পানীয়। আহা! ঠান্ডা সেই পানীয় জুড়িয়ে দিত মন।
এটাই ছিল আমাদের প্রথম রুশ গ্রাম দেখা। ‘আমুদে পরিবার’ নামে একটা রুশ বই পড়েছিলাম ছেলেবেলায়। সেখানে রুশ গ্রামের বর্ণনা ছিল। এখানে এসে সেই বইটির কথা স্মরণে এল। প্রথম দিন বিকেলে আমি আর রিপন হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। থেমেছিলাম কেবল নদীর ধারে একটা সেতুর কাছে এসে। সেখানে খড়ের ওপর বসেছিলাম। রিপন বেশ ভালো গান গায়। কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছিল ও। আমি আবৃত্তি করেছিলাম কয়েকটি কবিতা। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল। তার রক্তিম আভা যখন পুরো পরিবেশকে রহস্যময় করে তুলেছিল, তখনই আমরা ফিরে এসেছিলাম আমাদের ক্যাম্পে।
গ্রামের মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে ওরা কথা বলার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকত। বোঝা যেত, স্কুলে ভূগোল পড়ানো হলেও পৃথিবীর ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে ওদের কোনো ধারণাই নেই। কেউ কেউ অবশ্য বুঝতেন, কিংবা না বুঝে মাথা নাড়তেন।
যেমন, একজন আমাদের দেখে বললেন, ‘তোমরা কি কিউবা থেকে এসেছ?’
আমরা বললাম, ‘না। আমরা এসেছি বাংলাদেশ থেকে।’
‘তার মানে আফ্রিকা?’
‘না। এটা বাংলাদেশ। এশিয়ার দেশ। ভারতের পাশে।’
‘ও, ভারত? রাজ কাপুরের ভারত? মিৎখুনের (মিঠুন) ভারত।’
বোঝা গেল, ওদের সিনেমা হলগুলোতে রাজকাপুর, আর মিঠুন খুব জনপ্রিয়। মিঠুনের ‘ডিসকো ড্যান্সার’ ছবিটি খুব দেখত সোভিয়েত জনগণ।
সেদিন যখন আওয়াজ বাড়িয়ে সংগীতের ব্যবস্থা করা হলো, তখন লারা আমার কাছে এসে বলল, ‘রেজা, দাভাই তানসুয়েম’ (রেজা, চলো নাচি)।’
আমি বললাম, ‘ই্য়া নি উমেয়ু তানৎসিভাত। (আমি নাচতে পারি না)।’
‘ইশতো তি গাভারিশ। দাভাই তানৎসিভাত। (কী বলছিস, আয় নাচি) ’
‘ইয়া নি বুদু তানৎসিভাত। (আমি নাচব না)।’
‘নু রেজা, তিন ইশিও মালাদোই। (কিন্তু রেজা, তুমি এখনো তরুণ)।’
লারা যতই আমাকে নাচার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকুক না কেন, আমি নাচিনি। এখন ভাবি, কী হতো একটু নাচলে? কেন এতটা একরোখা ছিলাম আমি? বলা হয়ে থাকে, ফ্রান্সে গেলে ফরাসি হতে হয়। অথচ আমি যেন পণ করেছিলাম, যেখানেই যাই না কেন, বাঙালি থাকব। এখন বুঝতে পারি, আমার ভাবনা অনেক বেশি জড় ভাবনা ছিল। বাঙালি হতে গিয়ে মানুষ হওয়ার চর্চা কি একটু ধাক্কা খেয়ে যায়নি? এগুলো অবশ্য এখনকার উপলব্ধি। তখন তো নিজের অবস্থান নিয়ে সুখীই ছিলাম।

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ রুবল দাম। সে সময় একেকজন শিক্ষার্থী ৯০ রুবল স্টাইপেন্ড পেতেন। তার মানে এক মাসের স্টাইপেন্ডের চেয়েও বেশি দাম ক্যামেরাটার। কিন্তু কাজ করার পর যে টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে তো কেনা যাবে একটা ক্যামেরা! এ চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল। হোক না রাশিয়ান ক্যামেরা, ক্যানন বা নাইকনের মতো ক্যারিশমা নেই তার। কিন্তু তার লেন্স? তার ছবির স্পষ্টতা? যেকোনো ক্যামেরাকেই তো জেনিত হারিয়ে দেবে। আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতাম এভাবে: সোভিয়েত ইউনিয়নে তো সাদা-কালো ছবি তুলতে হবে। রঙিন ফিল্ম নেই বললেই চলে। যদিও কখনো রঙিন ফিল্ম (আগফা) কেনার সুযোগ হতো, তবুও সে ফিল্মে যে ছবি উঠত, তা ছিল ঘোলাটে। সোভিয়েত নাগরিকেরা পত্রিকা, জার্নালের পাতা ছাড়া ভালো ছবি দেখার সুযোগ পেত না। এগুলো এখন অলীক কথাবার্তা বলে মনে হতে পারে।
যাই হোক, আমাদের নির্মাণ শ্রমিক হওয়ার সুযোগ ঘটল না। সাইবেরিয়ার নির্মাণ শ্রমিক হয়ে গেলে অনেক টাকা উপার্জন করা যায় বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আমাদের নাম তালিকাভুক্ত হলো যৌথখামারের জন্য। ক্রাসনাদারের অদূরে দিনস্কি রাইয়নে যাব আমরা। যে কালখোজ বা যৌথ খামারে কাজ করব, তার নাম ‘জাভেতি লেনিনা’ (লেনিনের অঙ্গীকার)।
শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো সকালের দিকেই। বেশি সময় লাগল না। সম্ভবত এক ঘণ্টারও কম সময়ে আমরা পৌঁছেছিলাম সেই কালখোজে। ঢুকতেই একটা বড় হলঘর। সেখানেই ডাইনিং টেবিল। যারা এই শিবিরে থাকবে, তাদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন এখানেই। একটু হেঁটে ভিতরের দিকে ঢুকলে লম্বা দুই সারিতে কয়েকটি ঘর। সে ঘরগুলোতেই আমাদের ঠাঁই হলো। আমরা যে ঘরে ছিলাম, সেখানে আমি আর রিপন। বাকি আটজন ছিল ইথিওপিয়ার ছেলে। মেয়েরা ছিল বিপরীত দিকের ঘরগুলোয়।
এখানে বলে রাখা ভালো, যারাই যৌথখামারে কিংবা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যেত, তারা বিদেশে যেত না টাকা কামাতে। হয় তাদের সুযোগ ছিল না, নতুবা পার্টির নির্দেশ মেনে এই কাজ করত। প্রথম দিন আমাদের কোনো কাজ করতে হয়নি। যিনি আমাদের তত্ত্বাবধান করছিলেন, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী কী কাজ করতে হবে। প্রথম দিন আমাদের যেতে হবে আপেল বাগানে। সেখানে ঝুড়ি ভরে আপেল কুড়িয়ে গাড়িতে এনে ফেলতে হবে। যত খুশি আপেল খাওয়া যাবে। কিন্তু শিবিরে বয়ে আনা যাবে না। দ্বিতীয় দিন নিয়ে যাওয়া হবে আলুর খেতে। দুপুর পর্যন্ত আলু তুলে গাড়ি ভরতে হবে। ছোট-বড় সব আলু একসঙ্গে তুলতে হবে। আলাদা করার দরকার নেই। তৃতীয় দিন নিড়ানি। আগাছা হয়েছে খেতে, সেই খেত পরিষ্কার করতে হবে। চতুর্থ দিন থেকে কী করতে হয়েছিল, তা ধারাবাহিকভাবে মনে নেই। তবে লাই কুড়াতে হয়েছিল একদিন, সেটা মনে আছে।
প্রতিদিন বিকেলে টেবিল টেনিস খেলার সুযোগ ছিল। দুটো টেবিল ছিল। ভলিবল খেলা যেত। সন্ধ্যায় কখনো কখনো আয়োজন করা হতো দিস্কোতেকা (ডিসকোটেকা)। সেখানে নাচ হতো। সে সময় মডার্ন টকিং মাতিয়ে দিয়েছিল সোভিয়েত তরুণের মন। `ইউ আর মাই হার্ট, ইউ আর মাই সোউল’, ‘শেরি শেরি লেডি’, গান দুটোর কথাই বেশি মনে পড়ে। যেকোনো নাচের অনুষ্ঠানে এই গান দুটোর উপস্থিতি ছিল অবধারিত।
লারা নামে একটি মেয়ে ছিল মাদাগাস্কারের। ও আমাকে খুব পছন্দ করত। না, প্রেমিক হিসেবে আমাকে দেখত না ও। সহজেই মিশতে পারত। কথা বলতে ভালোবাসত। ওর মধ্যে একটা ‘মা মা’ বা ‘বড়বোন বড়বোন’ ভাব ছিল। ওর সঙ্গে কথা বললে বোঝা যেত, ওদের জীবন গড়ে উঠেছে ইউরোপ, এশিয়া, আর আফ্রিকার মিলিত সংস্কৃতিতে।
যেহেতু শ্রমিক বা কৃষক হিসেবে কাজ করছি, তাই আমাদের খাওয়াটা ছিল দেখার মতো। বাহুল্য ছিল না, কিন্তু পুষ্টির শতভাগ জোগান থাকত খাবারে। বোর্শ; অর্থাৎ, গরুর মাংস আর বাঁধা কপি দিয়ে তৈরি সুপ ছিল শুরুতে। এর পর বড় আকারের একটি বিফ স্টেক। একটু সাদা ভাত অথবা স্ম্যাশ্ড পটেটো, তাতে মাখনের প্রলেপ। প্রচুর সালাদ থাকত। স্মিতানা নামে ঘন দই থাকত। থাকত কমপোত নামে ফল জাল দিয়ে তৈরি পানীয়। আর কী কী থাকত, তা খেয়াল নেই।
গরুর মাংস আমার সব সময়ের প্রিয় খাবার। তাই খাওয়াটা ভালো লাগত। কখনো বিফ স্টেকের পরিবর্তে থাকত গুলইয়াশ। এটাও ঘন ঝোলে গরুর মাংস। ভাত বা আলুভর্তা দিয়ে তা খেতে খুব ভালো লাগত।
যে পানীয়টির কথা বলা হয়নি, সেটা হলো ক্ভাস। উচ্চারণ (kvas)। কাজ শেষে ক্যাম্প বা শিবিরে ফেরার পর বিশাল এক ড্রামে থাকত এই পানীয়। আহা! ঠান্ডা সেই পানীয় জুড়িয়ে দিত মন।
এটাই ছিল আমাদের প্রথম রুশ গ্রাম দেখা। ‘আমুদে পরিবার’ নামে একটা রুশ বই পড়েছিলাম ছেলেবেলায়। সেখানে রুশ গ্রামের বর্ণনা ছিল। এখানে এসে সেই বইটির কথা স্মরণে এল। প্রথম দিন বিকেলে আমি আর রিপন হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। থেমেছিলাম কেবল নদীর ধারে একটা সেতুর কাছে এসে। সেখানে খড়ের ওপর বসেছিলাম। রিপন বেশ ভালো গান গায়। কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছিল ও। আমি আবৃত্তি করেছিলাম কয়েকটি কবিতা। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল। তার রক্তিম আভা যখন পুরো পরিবেশকে রহস্যময় করে তুলেছিল, তখনই আমরা ফিরে এসেছিলাম আমাদের ক্যাম্পে।
গ্রামের মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে ওরা কথা বলার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকত। বোঝা যেত, স্কুলে ভূগোল পড়ানো হলেও পৃথিবীর ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে ওদের কোনো ধারণাই নেই। কেউ কেউ অবশ্য বুঝতেন, কিংবা না বুঝে মাথা নাড়তেন।
যেমন, একজন আমাদের দেখে বললেন, ‘তোমরা কি কিউবা থেকে এসেছ?’
আমরা বললাম, ‘না। আমরা এসেছি বাংলাদেশ থেকে।’
‘তার মানে আফ্রিকা?’
‘না। এটা বাংলাদেশ। এশিয়ার দেশ। ভারতের পাশে।’
‘ও, ভারত? রাজ কাপুরের ভারত? মিৎখুনের (মিঠুন) ভারত।’
বোঝা গেল, ওদের সিনেমা হলগুলোতে রাজকাপুর, আর মিঠুন খুব জনপ্রিয়। মিঠুনের ‘ডিসকো ড্যান্সার’ ছবিটি খুব দেখত সোভিয়েত জনগণ।
সেদিন যখন আওয়াজ বাড়িয়ে সংগীতের ব্যবস্থা করা হলো, তখন লারা আমার কাছে এসে বলল, ‘রেজা, দাভাই তানসুয়েম’ (রেজা, চলো নাচি)।’
আমি বললাম, ‘ই্য়া নি উমেয়ু তানৎসিভাত। (আমি নাচতে পারি না)।’
‘ইশতো তি গাভারিশ। দাভাই তানৎসিভাত। (কী বলছিস, আয় নাচি) ’
‘ইয়া নি বুদু তানৎসিভাত। (আমি নাচব না)।’
‘নু রেজা, তিন ইশিও মালাদোই। (কিন্তু রেজা, তুমি এখনো তরুণ)।’
লারা যতই আমাকে নাচার জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকুক না কেন, আমি নাচিনি। এখন ভাবি, কী হতো একটু নাচলে? কেন এতটা একরোখা ছিলাম আমি? বলা হয়ে থাকে, ফ্রান্সে গেলে ফরাসি হতে হয়। অথচ আমি যেন পণ করেছিলাম, যেখানেই যাই না কেন, বাঙালি থাকব। এখন বুঝতে পারি, আমার ভাবনা অনেক বেশি জড় ভাবনা ছিল। বাঙালি হতে গিয়ে মানুষ হওয়ার চর্চা কি একটু ধাক্কা খেয়ে যায়নি? এগুলো অবশ্য এখনকার উপলব্ধি। তখন তো নিজের অবস্থান নিয়ে সুখীই ছিলাম।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
১ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৭ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ র
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
১ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৭ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ র
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ ঘণ্টা আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৭ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ র
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
১ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

প্রিপারেটরির পড়াশোনা শেষ করার পর দু মাস থাকে ছুটি। এ সময় কী করা যায়? বড় ভাইয়েরা পরামর্শ দিলেন—যৌথখামারে কাজ করতে, অথবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে। অর্থাৎ, কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার এটাই সময়। এক মাস কাজ করলে কিছু টাকা-পয়সার সংস্থান হতে পারে। তখন রাশিয়ায় জেনিত নামে একটি অসাধারণ ভালো ক্যামেরা কেনা যেত। ১২০ র
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৪ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
১ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৭ দিন আগে