জাহীদ রেজা নূর

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি। তাই, অফিসের কাজ সেরে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফোন করলাম তাঁকে। প্রথমে সাড়া নেই। ফোন বেজেই চলল। ধরলেন না। কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করলাম। এবার সফল হলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আমি জাহীদ বলছিলাম।’
‘কোন জাহীদ?’
তাঁর এই প্রশ্নটিই বলে দেয়, তিনি অভিমান করেছেন। আমার কণ্ঠ কিংবা আমার নাম তাঁর কাছে অপরিচিত থাকার কথা নয়।
‘আমি প্রথম আলোর জাহীদ।’ ইচ্ছে করেই বুঝতে দিই না, তাঁর অভিমানটা আমি ধরতে পেরেছি।
‘ও আপনি! আপনাকে মনে হয় দুদিন ধরে অনবরত ফোন করেছিলাম। আপনি ধরেননি।’
‘আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে ফোন তো সাইলেন্ট করা থাকে, তাই কখন ফোন করেছিলেন বুঝতে পারিনি। তারপরও ক্ষমা চাইছি।’
এবার অবশ্য ‘তুমি’তে নামলেন। ‘তোমাকে একটা খবর দিতে চাইছি, অথচ তুমি ফোন ধরছ না। তুমি নিজেকে কী মনে করো?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই চুপ করে থাকি।
একটু বুঝি শান্ত হন। বলেন, ‘বলো তো কেন তোমাকে খুঁজছি?’
‘সে তো বলতে পারব না। নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে। আপনি বললে এখনই চলে আসতে পারি।’
‘শোনো, আমি আর একটু পর ঘুমাতে যাব। আজ আমার এখানে আসার দরকার নেই। কাল সময় করে এসো।’
‘নিশ্চয়ই আসব।’ বলে ফোন রাখলাম।
এরপর কী হয়েছিল, সে কথা বলব শেষে। এখানে শুধু বলে রাখি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েই প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসা। সে সময় প্রথম আলোতে কাজ করি। ২০০৬ সালের দিকে সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিলেন পত্রিকার প্রথম পাতায় টানা ২১ দিন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য। আমি বইপত্র খুলে বসলাম। যতদিকে যত তথ্য-উপাত্তের উৎস আছে, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঠিক আগের বছর সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় মহাফেজখানা ঘেটে চারটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম সম্পাদকীয় পাতায়। তারই জের হিসেবে আমার এই দায়িত্ব প্রাপ্তি। বার্তা বিভাগের সেলিম খানের ওপর দায়িত্ব ছিল লেখাগুলো ঠিকভাবে পাতায় তোলার। তিনি প্রতিটি লেখার আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হচ্ছে, তখন একদিন একটি ফোন পেলাম। ফোনটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ওপারে ছিলেন আহমদ রফিক। তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনি কি জাহীদ?’
‘জ্বি।’
‘আপনাদের সম্পাদকের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বরটা নিলাম। আমার নাম আহমদ রফিক।’
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। আহমদ রফিক ফোন করেছেন, তার মানে নিশ্চয়ই প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া আমার লেখাগুলো নিয়ে কিছু বলবেন।
কথা শুরু হওয়ার পরই আমার মন প্রশান্ত হয়ে উঠল। তিনি যা বললেন, তার নির্যাস হলো, সব পত্রিকাতেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি করে প্রতিবেদন যায়। তাতে অনেক ভুল থাকে। কিন্তু আমি যে কাজটি করছি, তা তিনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন এবং তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল নেই। আমাকে উৎসাহিত করে তিনি ফোন রাখলেন।
এই কথোপকথনটি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। এ সময় বেঁচে থাকা ভাষা সংগ্রামীদের ব্যাপারে আমার মনে আগ্রহ জন্ম নেয়। যতদূর মনে পড়ে এ সময় কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, সাঈদ হায়দার, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আবদুল মতিন, মুর্তজা বশীর প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এরপর থেকে প্রতি বছর একুশের কাছাকাছি হলেই আহমদ রফিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কখনো ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গেছি শহীদ মিনারে, সেখানে শুনেছি তাদের স্মৃতিচারণ। কখনো কিশোর বয়সীদের নিয়ে গেছি তাঁর বাড়িতে, তিনি শুনিয়েছেন একুশের গল্প। কখনও চলে গেছি একা তাঁর কাছে। নিয়েছি সাক্ষাৎকার। আর এই চলাচলের কারণেই আমাকে তিনি বেঁধেছিলেন স্নেহের বন্ধনে। আমার ওপর তাঁর একটা অধিকার বোধও জন্মেছিল।
মনে আছে, প্রথম আলো ছেড়ে আসার কিছুকাল আগে হঠাৎ মনে হলো, বায়ান্নর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, তার ছবি তুলে ঘটনার বর্ণনা করা হলে নতুনভাবে একুশকে দেখা যাবে। কোথায় বরকত, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কোথায় গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার, কোথায় বসেছিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের বৈঠক—এই সব ছবি তোলা হচ্ছিল। ছবি তুলছিলেন স্বনামধন্য ফটোশিল্পী লতিফ ভাই। জগন্নাথ হলের যে জায়গাটায় প্রাদেশিক পরিষদের বৈঠক বসত, সেটি এখন আর নেই। আছে শুধু কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সেখানেই একটি ফলকে লেখা আছে ইতিহাস।
সব তো হলো, এখন সবচেয়ে জরুরি যে জায়গাটা, অর্থাৎ যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল মিছিল, সে জায়গাটা চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুশকিল আসানের জন্য ফোন করলাম আহমদ রফিককে। পরিকল্পনা যখন করেছিলাম, তখনই তাঁকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেননি। এখনও মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ফোন করে বার বার এ জায়গা থেকে ও জায়গা করতে করতে সভাটি কোথায় বসেছিল, সে জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। এখনও মনে আছে ২২ মিনিট ধরে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন, ‘এখানে নয়, আরেকটু এগিয়ে যাও। এবার বাঁয়ে তাকিয়ে দেখ। কী দেখছ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা।’
২২ মিনিট কথা হয়েছিল, সেটা মনে আছে, কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারির বিষয়ে ২২ মিনিট কথা বলেছি, এ রকমভাবে সময়টা মনে রেখেছিলাম।
বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সহযোগী আছেন। ছবি তোলার কাজ শেষ হলে প্রথম আলোর গ্রাফিকস বিভাগের মুনির ভাই সুন্দর একটি ডামি তৈরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় চলে গিয়েছিলাম আহমদ রফিকের বাড়িতে। একটা হাল্কা চাদর গায়ে বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য। বায়ান্নর ছবির সঙ্গে এখনকার ছবিগুলো মিলিয়ে দেওয়ার সময় আপ্লুত হয়েছিলেন। সেদিন তাঁর বাড়িতে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এরপর সম্ভবত আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। টেলিফোনে কুশল সংবাদ নিয়েছি বটে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি সঙ্গপ্রিয় মানুষ। এখন তিনি অসুস্থ, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে নিয়ে খানিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কষ্টও হচ্ছে। তাঁর গুরুগম্ভীর মুখে শিশুর মতো হাসির কথা স্মরণে আনছি।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করি।
তিনি আমাকে যেতে বলেছেন তাঁর বাড়িতে। নিউ ইস্কাটনের সেই চেনা বাড়ির ড্রইংরুমে গিয়ে বসে আছি। বেশ অনকক্ষণ বসে থাকার পর তিনি এলেন সেই ঘরে। কুশল বিনিময়ের পর বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বাড়িয়ে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বইটি হাতে নিলাম। ভাবলাম, নতুন বই বেরিয়েছে, তার একটি কপি আমাকে উপহার দিতে চাইছেন, কিন্তু আমি ফোন ধরিনি। তাই অভিমান করেছেন।
আমার হাতে বইটি দিয়ে আহমদ রফিক মিটিমিটি হাসছেন। ‘বইটি হাতে নিয়ে বসে আছ কেন? একটু উল্টে-পাল্টে দেখ!’
বইটির নাম সংঘাতময় বিশ্বরাজনীতি’। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন নিয়েই বইটি।
একটু পর প্লেটে করে চমচম এলো। ‘খাও।’ বললেন তিনি। চোখে মুখে তখনও কৌতুক।
চমচম আর চা খেয়ে ‘আবার দেখা হবে’ বলে ফিরে আসার চেষ্টা করতেই আহমদ রফিকের মুখ আলোয় উদ্ভাসিত হলো। বললেন, ‘সূচিপত্র দেখলে, উল্টে-পাল্টে দু’একটা প্রবন্ধের দিকেও চোখ রাখলে, কিন্তু উৎসর্গপত্রটার দিকে চোখ গেল না তোমার?’
হ্যাঁ, এবার দুরুদুরু বুকে উৎসর্গপত্রটি দেখলাম।
‘প্রগতিবাদী বিশ্বের আগ্রহী পদাতিক,
জাহীদ রেজা নূর,
প্রীতিভাজনেষু।’
আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর মানুষকে বইটি উৎসর্গ করেছেন তিনি! স্নেহ যে নিম্নগামী, সে কথা কে না জানে। কিন্তু কখনো কখনো স্নেহের ভার যে গুরুভার হয়ে দাঁড়ায়, তা আমি আজও টের পাই।

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি। তাই, অফিসের কাজ সেরে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফোন করলাম তাঁকে। প্রথমে সাড়া নেই। ফোন বেজেই চলল। ধরলেন না। কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করলাম। এবার সফল হলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আমি জাহীদ বলছিলাম।’
‘কোন জাহীদ?’
তাঁর এই প্রশ্নটিই বলে দেয়, তিনি অভিমান করেছেন। আমার কণ্ঠ কিংবা আমার নাম তাঁর কাছে অপরিচিত থাকার কথা নয়।
‘আমি প্রথম আলোর জাহীদ।’ ইচ্ছে করেই বুঝতে দিই না, তাঁর অভিমানটা আমি ধরতে পেরেছি।
‘ও আপনি! আপনাকে মনে হয় দুদিন ধরে অনবরত ফোন করেছিলাম। আপনি ধরেননি।’
‘আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে ফোন তো সাইলেন্ট করা থাকে, তাই কখন ফোন করেছিলেন বুঝতে পারিনি। তারপরও ক্ষমা চাইছি।’
এবার অবশ্য ‘তুমি’তে নামলেন। ‘তোমাকে একটা খবর দিতে চাইছি, অথচ তুমি ফোন ধরছ না। তুমি নিজেকে কী মনে করো?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই চুপ করে থাকি।
একটু বুঝি শান্ত হন। বলেন, ‘বলো তো কেন তোমাকে খুঁজছি?’
‘সে তো বলতে পারব না। নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে। আপনি বললে এখনই চলে আসতে পারি।’
‘শোনো, আমি আর একটু পর ঘুমাতে যাব। আজ আমার এখানে আসার দরকার নেই। কাল সময় করে এসো।’
‘নিশ্চয়ই আসব।’ বলে ফোন রাখলাম।
এরপর কী হয়েছিল, সে কথা বলব শেষে। এখানে শুধু বলে রাখি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েই প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসা। সে সময় প্রথম আলোতে কাজ করি। ২০০৬ সালের দিকে সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিলেন পত্রিকার প্রথম পাতায় টানা ২১ দিন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য। আমি বইপত্র খুলে বসলাম। যতদিকে যত তথ্য-উপাত্তের উৎস আছে, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঠিক আগের বছর সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় মহাফেজখানা ঘেটে চারটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম সম্পাদকীয় পাতায়। তারই জের হিসেবে আমার এই দায়িত্ব প্রাপ্তি। বার্তা বিভাগের সেলিম খানের ওপর দায়িত্ব ছিল লেখাগুলো ঠিকভাবে পাতায় তোলার। তিনি প্রতিটি লেখার আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হচ্ছে, তখন একদিন একটি ফোন পেলাম। ফোনটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ওপারে ছিলেন আহমদ রফিক। তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনি কি জাহীদ?’
‘জ্বি।’
‘আপনাদের সম্পাদকের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বরটা নিলাম। আমার নাম আহমদ রফিক।’
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। আহমদ রফিক ফোন করেছেন, তার মানে নিশ্চয়ই প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া আমার লেখাগুলো নিয়ে কিছু বলবেন।
কথা শুরু হওয়ার পরই আমার মন প্রশান্ত হয়ে উঠল। তিনি যা বললেন, তার নির্যাস হলো, সব পত্রিকাতেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি করে প্রতিবেদন যায়। তাতে অনেক ভুল থাকে। কিন্তু আমি যে কাজটি করছি, তা তিনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন এবং তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল নেই। আমাকে উৎসাহিত করে তিনি ফোন রাখলেন।
এই কথোপকথনটি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। এ সময় বেঁচে থাকা ভাষা সংগ্রামীদের ব্যাপারে আমার মনে আগ্রহ জন্ম নেয়। যতদূর মনে পড়ে এ সময় কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, সাঈদ হায়দার, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আবদুল মতিন, মুর্তজা বশীর প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এরপর থেকে প্রতি বছর একুশের কাছাকাছি হলেই আহমদ রফিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কখনো ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গেছি শহীদ মিনারে, সেখানে শুনেছি তাদের স্মৃতিচারণ। কখনো কিশোর বয়সীদের নিয়ে গেছি তাঁর বাড়িতে, তিনি শুনিয়েছেন একুশের গল্প। কখনও চলে গেছি একা তাঁর কাছে। নিয়েছি সাক্ষাৎকার। আর এই চলাচলের কারণেই আমাকে তিনি বেঁধেছিলেন স্নেহের বন্ধনে। আমার ওপর তাঁর একটা অধিকার বোধও জন্মেছিল।
মনে আছে, প্রথম আলো ছেড়ে আসার কিছুকাল আগে হঠাৎ মনে হলো, বায়ান্নর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, তার ছবি তুলে ঘটনার বর্ণনা করা হলে নতুনভাবে একুশকে দেখা যাবে। কোথায় বরকত, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কোথায় গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার, কোথায় বসেছিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের বৈঠক—এই সব ছবি তোলা হচ্ছিল। ছবি তুলছিলেন স্বনামধন্য ফটোশিল্পী লতিফ ভাই। জগন্নাথ হলের যে জায়গাটায় প্রাদেশিক পরিষদের বৈঠক বসত, সেটি এখন আর নেই। আছে শুধু কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সেখানেই একটি ফলকে লেখা আছে ইতিহাস।
সব তো হলো, এখন সবচেয়ে জরুরি যে জায়গাটা, অর্থাৎ যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল মিছিল, সে জায়গাটা চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুশকিল আসানের জন্য ফোন করলাম আহমদ রফিককে। পরিকল্পনা যখন করেছিলাম, তখনই তাঁকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেননি। এখনও মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ফোন করে বার বার এ জায়গা থেকে ও জায়গা করতে করতে সভাটি কোথায় বসেছিল, সে জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। এখনও মনে আছে ২২ মিনিট ধরে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন, ‘এখানে নয়, আরেকটু এগিয়ে যাও। এবার বাঁয়ে তাকিয়ে দেখ। কী দেখছ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা।’
২২ মিনিট কথা হয়েছিল, সেটা মনে আছে, কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারির বিষয়ে ২২ মিনিট কথা বলেছি, এ রকমভাবে সময়টা মনে রেখেছিলাম।
বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সহযোগী আছেন। ছবি তোলার কাজ শেষ হলে প্রথম আলোর গ্রাফিকস বিভাগের মুনির ভাই সুন্দর একটি ডামি তৈরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় চলে গিয়েছিলাম আহমদ রফিকের বাড়িতে। একটা হাল্কা চাদর গায়ে বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য। বায়ান্নর ছবির সঙ্গে এখনকার ছবিগুলো মিলিয়ে দেওয়ার সময় আপ্লুত হয়েছিলেন। সেদিন তাঁর বাড়িতে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এরপর সম্ভবত আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। টেলিফোনে কুশল সংবাদ নিয়েছি বটে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি সঙ্গপ্রিয় মানুষ। এখন তিনি অসুস্থ, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে নিয়ে খানিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কষ্টও হচ্ছে। তাঁর গুরুগম্ভীর মুখে শিশুর মতো হাসির কথা স্মরণে আনছি।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করি।
তিনি আমাকে যেতে বলেছেন তাঁর বাড়িতে। নিউ ইস্কাটনের সেই চেনা বাড়ির ড্রইংরুমে গিয়ে বসে আছি। বেশ অনকক্ষণ বসে থাকার পর তিনি এলেন সেই ঘরে। কুশল বিনিময়ের পর বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বাড়িয়ে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বইটি হাতে নিলাম। ভাবলাম, নতুন বই বেরিয়েছে, তার একটি কপি আমাকে উপহার দিতে চাইছেন, কিন্তু আমি ফোন ধরিনি। তাই অভিমান করেছেন।
আমার হাতে বইটি দিয়ে আহমদ রফিক মিটিমিটি হাসছেন। ‘বইটি হাতে নিয়ে বসে আছ কেন? একটু উল্টে-পাল্টে দেখ!’
বইটির নাম সংঘাতময় বিশ্বরাজনীতি’। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন নিয়েই বইটি।
একটু পর প্লেটে করে চমচম এলো। ‘খাও।’ বললেন তিনি। চোখে মুখে তখনও কৌতুক।
চমচম আর চা খেয়ে ‘আবার দেখা হবে’ বলে ফিরে আসার চেষ্টা করতেই আহমদ রফিকের মুখ আলোয় উদ্ভাসিত হলো। বললেন, ‘সূচিপত্র দেখলে, উল্টে-পাল্টে দু’একটা প্রবন্ধের দিকেও চোখ রাখলে, কিন্তু উৎসর্গপত্রটার দিকে চোখ গেল না তোমার?’
হ্যাঁ, এবার দুরুদুরু বুকে উৎসর্গপত্রটি দেখলাম।
‘প্রগতিবাদী বিশ্বের আগ্রহী পদাতিক,
জাহীদ রেজা নূর,
প্রীতিভাজনেষু।’
আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর মানুষকে বইটি উৎসর্গ করেছেন তিনি! স্নেহ যে নিম্নগামী, সে কথা কে না জানে। কিন্তু কখনো কখনো স্নেহের ভার যে গুরুভার হয়ে দাঁড়ায়, তা আমি আজও টের পাই।
জাহীদ রেজা নূর

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি। তাই, অফিসের কাজ সেরে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফোন করলাম তাঁকে। প্রথমে সাড়া নেই। ফোন বেজেই চলল। ধরলেন না। কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করলাম। এবার সফল হলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আমি জাহীদ বলছিলাম।’
‘কোন জাহীদ?’
তাঁর এই প্রশ্নটিই বলে দেয়, তিনি অভিমান করেছেন। আমার কণ্ঠ কিংবা আমার নাম তাঁর কাছে অপরিচিত থাকার কথা নয়।
‘আমি প্রথম আলোর জাহীদ।’ ইচ্ছে করেই বুঝতে দিই না, তাঁর অভিমানটা আমি ধরতে পেরেছি।
‘ও আপনি! আপনাকে মনে হয় দুদিন ধরে অনবরত ফোন করেছিলাম। আপনি ধরেননি।’
‘আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে ফোন তো সাইলেন্ট করা থাকে, তাই কখন ফোন করেছিলেন বুঝতে পারিনি। তারপরও ক্ষমা চাইছি।’
এবার অবশ্য ‘তুমি’তে নামলেন। ‘তোমাকে একটা খবর দিতে চাইছি, অথচ তুমি ফোন ধরছ না। তুমি নিজেকে কী মনে করো?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই চুপ করে থাকি।
একটু বুঝি শান্ত হন। বলেন, ‘বলো তো কেন তোমাকে খুঁজছি?’
‘সে তো বলতে পারব না। নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে। আপনি বললে এখনই চলে আসতে পারি।’
‘শোনো, আমি আর একটু পর ঘুমাতে যাব। আজ আমার এখানে আসার দরকার নেই। কাল সময় করে এসো।’
‘নিশ্চয়ই আসব।’ বলে ফোন রাখলাম।
এরপর কী হয়েছিল, সে কথা বলব শেষে। এখানে শুধু বলে রাখি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েই প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসা। সে সময় প্রথম আলোতে কাজ করি। ২০০৬ সালের দিকে সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিলেন পত্রিকার প্রথম পাতায় টানা ২১ দিন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য। আমি বইপত্র খুলে বসলাম। যতদিকে যত তথ্য-উপাত্তের উৎস আছে, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঠিক আগের বছর সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় মহাফেজখানা ঘেটে চারটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম সম্পাদকীয় পাতায়। তারই জের হিসেবে আমার এই দায়িত্ব প্রাপ্তি। বার্তা বিভাগের সেলিম খানের ওপর দায়িত্ব ছিল লেখাগুলো ঠিকভাবে পাতায় তোলার। তিনি প্রতিটি লেখার আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হচ্ছে, তখন একদিন একটি ফোন পেলাম। ফোনটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ওপারে ছিলেন আহমদ রফিক। তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনি কি জাহীদ?’
‘জ্বি।’
‘আপনাদের সম্পাদকের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বরটা নিলাম। আমার নাম আহমদ রফিক।’
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। আহমদ রফিক ফোন করেছেন, তার মানে নিশ্চয়ই প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া আমার লেখাগুলো নিয়ে কিছু বলবেন।
কথা শুরু হওয়ার পরই আমার মন প্রশান্ত হয়ে উঠল। তিনি যা বললেন, তার নির্যাস হলো, সব পত্রিকাতেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি করে প্রতিবেদন যায়। তাতে অনেক ভুল থাকে। কিন্তু আমি যে কাজটি করছি, তা তিনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন এবং তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল নেই। আমাকে উৎসাহিত করে তিনি ফোন রাখলেন।
এই কথোপকথনটি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। এ সময় বেঁচে থাকা ভাষা সংগ্রামীদের ব্যাপারে আমার মনে আগ্রহ জন্ম নেয়। যতদূর মনে পড়ে এ সময় কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, সাঈদ হায়দার, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আবদুল মতিন, মুর্তজা বশীর প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এরপর থেকে প্রতি বছর একুশের কাছাকাছি হলেই আহমদ রফিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কখনো ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গেছি শহীদ মিনারে, সেখানে শুনেছি তাদের স্মৃতিচারণ। কখনো কিশোর বয়সীদের নিয়ে গেছি তাঁর বাড়িতে, তিনি শুনিয়েছেন একুশের গল্প। কখনও চলে গেছি একা তাঁর কাছে। নিয়েছি সাক্ষাৎকার। আর এই চলাচলের কারণেই আমাকে তিনি বেঁধেছিলেন স্নেহের বন্ধনে। আমার ওপর তাঁর একটা অধিকার বোধও জন্মেছিল।
মনে আছে, প্রথম আলো ছেড়ে আসার কিছুকাল আগে হঠাৎ মনে হলো, বায়ান্নর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, তার ছবি তুলে ঘটনার বর্ণনা করা হলে নতুনভাবে একুশকে দেখা যাবে। কোথায় বরকত, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কোথায় গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার, কোথায় বসেছিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের বৈঠক—এই সব ছবি তোলা হচ্ছিল। ছবি তুলছিলেন স্বনামধন্য ফটোশিল্পী লতিফ ভাই। জগন্নাথ হলের যে জায়গাটায় প্রাদেশিক পরিষদের বৈঠক বসত, সেটি এখন আর নেই। আছে শুধু কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সেখানেই একটি ফলকে লেখা আছে ইতিহাস।
সব তো হলো, এখন সবচেয়ে জরুরি যে জায়গাটা, অর্থাৎ যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল মিছিল, সে জায়গাটা চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুশকিল আসানের জন্য ফোন করলাম আহমদ রফিককে। পরিকল্পনা যখন করেছিলাম, তখনই তাঁকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেননি। এখনও মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ফোন করে বার বার এ জায়গা থেকে ও জায়গা করতে করতে সভাটি কোথায় বসেছিল, সে জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। এখনও মনে আছে ২২ মিনিট ধরে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন, ‘এখানে নয়, আরেকটু এগিয়ে যাও। এবার বাঁয়ে তাকিয়ে দেখ। কী দেখছ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা।’
২২ মিনিট কথা হয়েছিল, সেটা মনে আছে, কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারির বিষয়ে ২২ মিনিট কথা বলেছি, এ রকমভাবে সময়টা মনে রেখেছিলাম।
বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সহযোগী আছেন। ছবি তোলার কাজ শেষ হলে প্রথম আলোর গ্রাফিকস বিভাগের মুনির ভাই সুন্দর একটি ডামি তৈরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় চলে গিয়েছিলাম আহমদ রফিকের বাড়িতে। একটা হাল্কা চাদর গায়ে বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য। বায়ান্নর ছবির সঙ্গে এখনকার ছবিগুলো মিলিয়ে দেওয়ার সময় আপ্লুত হয়েছিলেন। সেদিন তাঁর বাড়িতে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এরপর সম্ভবত আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। টেলিফোনে কুশল সংবাদ নিয়েছি বটে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি সঙ্গপ্রিয় মানুষ। এখন তিনি অসুস্থ, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে নিয়ে খানিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কষ্টও হচ্ছে। তাঁর গুরুগম্ভীর মুখে শিশুর মতো হাসির কথা স্মরণে আনছি।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করি।
তিনি আমাকে যেতে বলেছেন তাঁর বাড়িতে। নিউ ইস্কাটনের সেই চেনা বাড়ির ড্রইংরুমে গিয়ে বসে আছি। বেশ অনকক্ষণ বসে থাকার পর তিনি এলেন সেই ঘরে। কুশল বিনিময়ের পর বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বাড়িয়ে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বইটি হাতে নিলাম। ভাবলাম, নতুন বই বেরিয়েছে, তার একটি কপি আমাকে উপহার দিতে চাইছেন, কিন্তু আমি ফোন ধরিনি। তাই অভিমান করেছেন।
আমার হাতে বইটি দিয়ে আহমদ রফিক মিটিমিটি হাসছেন। ‘বইটি হাতে নিয়ে বসে আছ কেন? একটু উল্টে-পাল্টে দেখ!’
বইটির নাম সংঘাতময় বিশ্বরাজনীতি’। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন নিয়েই বইটি।
একটু পর প্লেটে করে চমচম এলো। ‘খাও।’ বললেন তিনি। চোখে মুখে তখনও কৌতুক।
চমচম আর চা খেয়ে ‘আবার দেখা হবে’ বলে ফিরে আসার চেষ্টা করতেই আহমদ রফিকের মুখ আলোয় উদ্ভাসিত হলো। বললেন, ‘সূচিপত্র দেখলে, উল্টে-পাল্টে দু’একটা প্রবন্ধের দিকেও চোখ রাখলে, কিন্তু উৎসর্গপত্রটার দিকে চোখ গেল না তোমার?’
হ্যাঁ, এবার দুরুদুরু বুকে উৎসর্গপত্রটি দেখলাম।
‘প্রগতিবাদী বিশ্বের আগ্রহী পদাতিক,
জাহীদ রেজা নূর,
প্রীতিভাজনেষু।’
আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর মানুষকে বইটি উৎসর্গ করেছেন তিনি! স্নেহ যে নিম্নগামী, সে কথা কে না জানে। কিন্তু কখনো কখনো স্নেহের ভার যে গুরুভার হয়ে দাঁড়ায়, তা আমি আজও টের পাই।

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি। তাই, অফিসের কাজ সেরে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফোন করলাম তাঁকে। প্রথমে সাড়া নেই। ফোন বেজেই চলল। ধরলেন না। কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করলাম। এবার সফল হলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আমি জাহীদ বলছিলাম।’
‘কোন জাহীদ?’
তাঁর এই প্রশ্নটিই বলে দেয়, তিনি অভিমান করেছেন। আমার কণ্ঠ কিংবা আমার নাম তাঁর কাছে অপরিচিত থাকার কথা নয়।
‘আমি প্রথম আলোর জাহীদ।’ ইচ্ছে করেই বুঝতে দিই না, তাঁর অভিমানটা আমি ধরতে পেরেছি।
‘ও আপনি! আপনাকে মনে হয় দুদিন ধরে অনবরত ফোন করেছিলাম। আপনি ধরেননি।’
‘আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে ফোন তো সাইলেন্ট করা থাকে, তাই কখন ফোন করেছিলেন বুঝতে পারিনি। তারপরও ক্ষমা চাইছি।’
এবার অবশ্য ‘তুমি’তে নামলেন। ‘তোমাকে একটা খবর দিতে চাইছি, অথচ তুমি ফোন ধরছ না। তুমি নিজেকে কী মনে করো?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই চুপ করে থাকি।
একটু বুঝি শান্ত হন। বলেন, ‘বলো তো কেন তোমাকে খুঁজছি?’
‘সে তো বলতে পারব না। নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে। আপনি বললে এখনই চলে আসতে পারি।’
‘শোনো, আমি আর একটু পর ঘুমাতে যাব। আজ আমার এখানে আসার দরকার নেই। কাল সময় করে এসো।’
‘নিশ্চয়ই আসব।’ বলে ফোন রাখলাম।
এরপর কী হয়েছিল, সে কথা বলব শেষে। এখানে শুধু বলে রাখি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েই প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসা। সে সময় প্রথম আলোতে কাজ করি। ২০০৬ সালের দিকে সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিলেন পত্রিকার প্রথম পাতায় টানা ২১ দিন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য। আমি বইপত্র খুলে বসলাম। যতদিকে যত তথ্য-উপাত্তের উৎস আছে, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঠিক আগের বছর সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় মহাফেজখানা ঘেটে চারটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম সম্পাদকীয় পাতায়। তারই জের হিসেবে আমার এই দায়িত্ব প্রাপ্তি। বার্তা বিভাগের সেলিম খানের ওপর দায়িত্ব ছিল লেখাগুলো ঠিকভাবে পাতায় তোলার। তিনি প্রতিটি লেখার আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হচ্ছে, তখন একদিন একটি ফোন পেলাম। ফোনটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ওপারে ছিলেন আহমদ রফিক। তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনি কি জাহীদ?’
‘জ্বি।’
‘আপনাদের সম্পাদকের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বরটা নিলাম। আমার নাম আহমদ রফিক।’
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। আহমদ রফিক ফোন করেছেন, তার মানে নিশ্চয়ই প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া আমার লেখাগুলো নিয়ে কিছু বলবেন।
কথা শুরু হওয়ার পরই আমার মন প্রশান্ত হয়ে উঠল। তিনি যা বললেন, তার নির্যাস হলো, সব পত্রিকাতেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি করে প্রতিবেদন যায়। তাতে অনেক ভুল থাকে। কিন্তু আমি যে কাজটি করছি, তা তিনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন এবং তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল নেই। আমাকে উৎসাহিত করে তিনি ফোন রাখলেন।
এই কথোপকথনটি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। এ সময় বেঁচে থাকা ভাষা সংগ্রামীদের ব্যাপারে আমার মনে আগ্রহ জন্ম নেয়। যতদূর মনে পড়ে এ সময় কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, সাঈদ হায়দার, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আবদুল মতিন, মুর্তজা বশীর প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এরপর থেকে প্রতি বছর একুশের কাছাকাছি হলেই আহমদ রফিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কখনো ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গেছি শহীদ মিনারে, সেখানে শুনেছি তাদের স্মৃতিচারণ। কখনো কিশোর বয়সীদের নিয়ে গেছি তাঁর বাড়িতে, তিনি শুনিয়েছেন একুশের গল্প। কখনও চলে গেছি একা তাঁর কাছে। নিয়েছি সাক্ষাৎকার। আর এই চলাচলের কারণেই আমাকে তিনি বেঁধেছিলেন স্নেহের বন্ধনে। আমার ওপর তাঁর একটা অধিকার বোধও জন্মেছিল।
মনে আছে, প্রথম আলো ছেড়ে আসার কিছুকাল আগে হঠাৎ মনে হলো, বায়ান্নর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, তার ছবি তুলে ঘটনার বর্ণনা করা হলে নতুনভাবে একুশকে দেখা যাবে। কোথায় বরকত, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কোথায় গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার, কোথায় বসেছিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের বৈঠক—এই সব ছবি তোলা হচ্ছিল। ছবি তুলছিলেন স্বনামধন্য ফটোশিল্পী লতিফ ভাই। জগন্নাথ হলের যে জায়গাটায় প্রাদেশিক পরিষদের বৈঠক বসত, সেটি এখন আর নেই। আছে শুধু কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সেখানেই একটি ফলকে লেখা আছে ইতিহাস।
সব তো হলো, এখন সবচেয়ে জরুরি যে জায়গাটা, অর্থাৎ যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল মিছিল, সে জায়গাটা চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুশকিল আসানের জন্য ফোন করলাম আহমদ রফিককে। পরিকল্পনা যখন করেছিলাম, তখনই তাঁকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেননি। এখনও মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ফোন করে বার বার এ জায়গা থেকে ও জায়গা করতে করতে সভাটি কোথায় বসেছিল, সে জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। এখনও মনে আছে ২২ মিনিট ধরে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন, ‘এখানে নয়, আরেকটু এগিয়ে যাও। এবার বাঁয়ে তাকিয়ে দেখ। কী দেখছ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা।’
২২ মিনিট কথা হয়েছিল, সেটা মনে আছে, কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারির বিষয়ে ২২ মিনিট কথা বলেছি, এ রকমভাবে সময়টা মনে রেখেছিলাম।
বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সহযোগী আছেন। ছবি তোলার কাজ শেষ হলে প্রথম আলোর গ্রাফিকস বিভাগের মুনির ভাই সুন্দর একটি ডামি তৈরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় চলে গিয়েছিলাম আহমদ রফিকের বাড়িতে। একটা হাল্কা চাদর গায়ে বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য। বায়ান্নর ছবির সঙ্গে এখনকার ছবিগুলো মিলিয়ে দেওয়ার সময় আপ্লুত হয়েছিলেন। সেদিন তাঁর বাড়িতে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এরপর সম্ভবত আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। টেলিফোনে কুশল সংবাদ নিয়েছি বটে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি সঙ্গপ্রিয় মানুষ। এখন তিনি অসুস্থ, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে নিয়ে খানিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কষ্টও হচ্ছে। তাঁর গুরুগম্ভীর মুখে শিশুর মতো হাসির কথা স্মরণে আনছি।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করি।
তিনি আমাকে যেতে বলেছেন তাঁর বাড়িতে। নিউ ইস্কাটনের সেই চেনা বাড়ির ড্রইংরুমে গিয়ে বসে আছি। বেশ অনকক্ষণ বসে থাকার পর তিনি এলেন সেই ঘরে। কুশল বিনিময়ের পর বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বাড়িয়ে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বইটি হাতে নিলাম। ভাবলাম, নতুন বই বেরিয়েছে, তার একটি কপি আমাকে উপহার দিতে চাইছেন, কিন্তু আমি ফোন ধরিনি। তাই অভিমান করেছেন।
আমার হাতে বইটি দিয়ে আহমদ রফিক মিটিমিটি হাসছেন। ‘বইটি হাতে নিয়ে বসে আছ কেন? একটু উল্টে-পাল্টে দেখ!’
বইটির নাম সংঘাতময় বিশ্বরাজনীতি’। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন নিয়েই বইটি।
একটু পর প্লেটে করে চমচম এলো। ‘খাও।’ বললেন তিনি। চোখে মুখে তখনও কৌতুক।
চমচম আর চা খেয়ে ‘আবার দেখা হবে’ বলে ফিরে আসার চেষ্টা করতেই আহমদ রফিকের মুখ আলোয় উদ্ভাসিত হলো। বললেন, ‘সূচিপত্র দেখলে, উল্টে-পাল্টে দু’একটা প্রবন্ধের দিকেও চোখ রাখলে, কিন্তু উৎসর্গপত্রটার দিকে চোখ গেল না তোমার?’
হ্যাঁ, এবার দুরুদুরু বুকে উৎসর্গপত্রটি দেখলাম।
‘প্রগতিবাদী বিশ্বের আগ্রহী পদাতিক,
জাহীদ রেজা নূর,
প্রীতিভাজনেষু।’
আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর মানুষকে বইটি উৎসর্গ করেছেন তিনি! স্নেহ যে নিম্নগামী, সে কথা কে না জানে। কিন্তু কখনো কখনো স্নেহের ভার যে গুরুভার হয়ে দাঁড়ায়, তা আমি আজও টের পাই।

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেকুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে