Ajker Patrika

প্রদোষে প্রাকৃতজনের প্রস্তুতি

সম্পাদকীয়
প্রদোষে প্রাকৃতজনের প্রস্তুতি

‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ উপন্যাসটি কি শুধু কল্পনা দিয়ে লেখা যেত, যদি অভিজ্ঞতা না থাকত? যেকোনো মহৎ উপন্যাস লেখার জন্যই প্রয়োজন হয় অভিজ্ঞতার। সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে কল্পনার মিশেলেই তৈরি হয় তা।

শওকত আলীর বর্ণাঢ্য জীবন। ১৯৫৪ সালে ৯২ (ক) ধারা জারি হওয়ার পর ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছিল। সে সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন তিনি। ধরা পড়লেন। আট-নয় মাস জেল খাটলেন। বের হয়ে বিএ ক্লাসের টেস্ট পরীক্ষা দিলেন। সে সময় থেকেই ঢাকা আর কলকাতায় তাঁর লেখা ছাপা হতো। দৈনিক মিল্লাতে চাকরি শুরু করলেন। আবার ধরপাকড় শুরু হলে ঢাকা থেকে পালিয়ে দিনাজপুর আর ঠাকুরগাঁওয়ের মাঝামাঝি নীলগঞ্জ নামের একটি জায়গায় নেমে পড়লেন। কপালগুণে সেখানকার হাইস্কুলে পেয়ে গেলেন মাস্টারির কাজ। কিছু টাকাপয়সা জোগাড় হয়ে যাওয়ার পর ফিরলেন ঢাকায়। পড়াশোনা শুরু করলেন আবার। সিকান্দার আবু জাফরের সমকালে ছাপা হলো তাঁর গল্প। এমএ পরীক্ষা দেওয়ার পর এল আইয়ুব খানের মার্শাল ল। আবার পালালেন। এবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জে হেডমাস্টার। ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে পেয়ে গেলেন চাকরি।

‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ কিংবা অন্যান্য গল্প-উপন্যাসের মানুষগুলোর সন্ধান কিন্তু পাওয়া যাবে এখানেই।

সাধারণ মানুষদের জীবনযাপন, আদিবাসীদের জীবন, কৃষকদের জীবন, কৃষক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন ইত্যাদি উঠে এসেছে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে। কারণ ওই লোকদের সঙ্গেই ছিল শওকত আলীর ওঠাবসা।

সেখানেই সাঁওতাল আদিবাসীদের সঙ্গে, ক্ষত্রিয়দের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল।

প্রদোষ কাল হলো রাত্রি শেষ ও সূর্য ওঠার মধ্যবর্তী সময়টা। এটা পরিবর্তনের মধ্যে থাকে। সেই পরিবর্তনের মাঝখানে যে পরিবর্তনটা এল, তখন লক্ষ্মণ সেনের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর পরের পরিবর্তনটা চলেছে দীর্ঘ চার-পাঁচ শ বছর ধরে। এই সময়টাতে মাটির কাছের মানুষ কেমন ছিল, সেটাই খুঁজে বেড়িয়েছেন শওকত আলী। তখনই মাথায় এসেছে উপন্যাসটি লেখার কথা। 

সূত্র: লোপা মমতাজ, ইতিহাসের ফুটনোট, পৃষ্ঠা ৩৩-৩৫  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত