সেলিম জাহান

পয়লা বৈশাখ এসে গেছে। জানি, বাংলাদেশ এখন তৈরি হয়েছে নববর্ষকে বরণ করে নিতে। ঠিক পয়লা বৈশাখে বাংলাদেশের আনাচ-কানাচ রং আর রেখায় ভরে যায়। রং উঠে আসে মেয়েদের শাড়িতে, ছেলেদের পাঞ্জাবিতে, নানান ফুলের সমাহারে, তোরণের বর্ণচ্ছটায়। রেখা তার স্থান করে নেয় দেয়ালে, আলপনায়, প্রতিচিত্রে।
ঠিক পয়লা বৈশাখের আগের দিন আর্ট কলেজের ছেলে-মেয়েরা সারা রাত জেগে ঢাকার রাস্তায় আলপনা আঁকে, দেয়াল চিত্র শেষ করে নানান রঙের আর ঢংয়ের মুখোশ বানায়, রঙিন কাগজের প্রতিমূর্তি গড়ে পরদিন প্রভাতের শোভাযাত্রার জন্য। উন্মাদনা, উৎসাহের জোয়ার দেখা যায় চারদিকে—আনন্দ, স্ফূর্তি আর উৎসবের আমেজ অনুভব করা যায় আকাশে-বাতাসে।
বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে প্রীতি-সম্ভাষণে, গানে, আমোদে আর মুখরোচক খাদ্যে। মেলা বসে নানান জায়গায়, রমনার বটমূলে বসে গানের আসর, চিরায়ত বাঙালি খাবার উঠে আসে আমাদের রসনায়। নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো, শিশুদের কলকাকলিতে ঘন হয়ে আসে আকাশ-বাতাস।
এই চালচিত্র থেকেই উঠে আসে স্মৃতি-অতীতের স্মৃতি। সেই স্মৃতির আলপনা-রেখার পথ ধরে মন চলে যায় সুদূর অতীতে। মনে পড়ে কত কথা, ৬০ বছর আগের কথা। ছবির মতো বরিশাল শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই ছিল লাল সুরকির। ব্রজমোহন কলেজসংলগ্ন আমাদের দোতলা কাঠের বাড়ির ধার ঘেঁষে যে পথটি চলে গেছে, তা শহর পেরিয়ে কাশীপুর হয়ে চলে গেছে। ঐ পথ ধরেই বাস যেত রহমতপুর, ভূরঘাটা, গৌরনদী, চাখার আরও কত জায়গায়। যতবার বাস যেত, ততবারই একটি লাল ধুলোর ঘূর্ণি উঠত রাস্তার ওপরে ক্ষণিকের জন্য। তারপর তা মিলিয়ে যেত। কিন্তু একদিন সেই লাল ধুলোর ঘূর্ণি ঘন হয়ে বসে যেত বাতাসে।
এবং সেটা ওই পয়লা বৈশাখেই। সারা বরিশাল শহরে ঐ পথ ধরে রওনা হতো পশ্চিমে বেলা ৩টায় শুরু হওয়া কাশীপুরের বৈশাখী মেলার দিকে। রিকশায়, সাইকেলে, পদব্রজে লোকের যাত্রা শুরু হয়ে যেত সেই দুপুর ১২টা থেকেই। সে জনস্রোতের একটা বিরাট অংশই ছিল শিশুরা, ঐ যে মেলার মাটির পুতুলের জন্য। গরুর খুরের সৃষ্ট ধূলি থেকে ‘গোধূলি’ শব্দটি এসেছে, কিন্তু আমাদের বরিশালে পয়লা বৈশাখে মানুষের হেঁটে চলার পায়ে-পায়ে যে মনুষ্যধূলির সৃষ্টি হতো, তার কাছে গোধূলি তো নস্যি।
বেশ মনে আছে, ছোটবেলায় বড় কারও হাত ধরে আমরা দুই ভাই-বোন প্রতিবছরই যেতাম সেই বৈশাখী মেলায়। বাবা না যেতে পারলেও পাঠিয়ে দিতেন বড় কারও সঙ্গে। আমাদের দুজনের হাতে দেওয়া হতো একটি করে টাকা, পুতুল বা যা খুশি তা কেনার জন্য। সেই সঙ্গে মিলত মাটির বটুয়ায় জমানো আমাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়। মায়ের নিষেধাজ্ঞা ছিল বাইরের খাবার না কেনার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা? মেলার ধূলিমিশ্রিত নকুল দানা, কিংবা চৌকো করে কাটা তিলের খাজা, অথবা ঝুরঝুরে ঝুরিভাজার স্বর্গীয় স্বাদ কি ঘরের বানানো খাবারে হয়? সুতরাং মায়ের নিষেধাজ্ঞা তত্ত্বেই থাকত, বাস্তবে নয়।
মেলায় গিয়ে পড়তে হতো এক কঠিন সমস্যায়। এত সব সুন্দর সুন্দর মাটির পুতুল—ঘোড়া, বর-বৌ, গরু, হাতি, পাখি কোনটা ছেড়ে কোনটা নেই। পোড়ামাটির ওপরে সুন্দর উজ্জ্বল রঙে চোখ-মুখ আঁকা ঐ সব পুতুলদের দিকে তৃষিত নয়নে তাকিয়ে থাকতাম। মনে হতো, দুহাতে আঁকড়ে ধরে সব পুতুল নিয়ে নেই। কিন্তু সাধ আর সাধ্যে যে বিরাট ফারাক। তারই মধ্যে ছোট্ট মাথা খাঁটিয়ে পছন্দ করতাম কিছু পুতুল। কুমোরেরা যখন তাঁদের ডালি থেকে পুতুলগুলো আমাদের কচি হাতে তুলে দিতেন, তখন মনে হতো, হাতে স্বর্গ পাওয়া গেল।
বাড়ি ফিরে সেই সব ঘোড়া, হাতি আর পাখিদের উল্টেপাল্টে কতবার যে দেখা হতো। রাতে ঘুমোনো হতো ঐ সব পুতুলদের বালিশের পাশে সাজিয়ে। দুটো ঘটনার কথা মনে আছে। একবার নিজের সঞ্চয় থেকে মায়ের জন্য একটা শিশু কোলে মা-পুতুল নিয়ে এসেছিলাম। সেদিন মায়ের মুখে যে খুশির আভা দেখেছিলাম, তা কখনো ভুলব না। আর একবার আমার হাত থেকে আমার ঘোড়া পুতুলটা ভেঙে গিয়েছিল। আমার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আমার বোন তার ঘোড়াটা আমাকে দিয়ে দিয়েছিল। তার মূল্য তখন হয়তো বুঝিনি, আজ বুঝি।
সন্ধ্যের দিকে আবার শুরু হতো আরেক পালা, হালখাতা। বাবা আমাকে নিয়ে বেরোতেন মাখন কাকা আর হারাধন জেঠার বইয়ের দোকানে, জহুর চাচার কাপড়ের প্রতিষ্ঠান ‘চিটাগং বস্ত্রালয়ে’, অশ্বিনীদার কাঠের কারখানায়। সুবেশ বিপণি মালিকেরা আমাদের যত্ন করে বসাতেন, সুস্বাদু সব খাবার আসত। তাকিয়ে দেখতাম লাল রঙের নতুন হালখাতা। যত দূর মনে পড়ে বাবা একটা রুপোর টাকা প্রতীকী হিসেবে তাঁদের হাতে তুলে দিতেন।
সেই সব কর্মকাণ্ডে আমার যে কী যত্ন-আত্তি! কাকা-দাদারা হাঁক দিচ্ছেন তাঁদের কর্মচারীদের গরম গরম রসালো মিষ্টান্ন আনার জন্য, পরম যত্নে তুলে দিচ্ছেন আমার পাতে, জোর করছেন এটা ওটা খাবার জন্য। তারই ফাঁকে ফাঁকে বাবার কাছে আশীর্বাদ চাইছেন যাতে সারা বছরটা ভালো যায়। খাবার শেষে পেতলের ঘটি-গেলাসে জল আসত, বাবা একটা পান তুলে নিতেন হাতে, বিপণি মালিকেরা দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন।
কিন্তু সব সময়ে যা আমার দৃষ্টি কাড়ত, তা হচ্ছে ঐ হালখাতা। সাদা সুতোয় বাঁধা লাল খাতাটা এলিয়ে থাকত টাকা-পয়সার বাক্সের পাশে। অদূরেই পেতলের ঘটিতে জলে পাঁচটি আমপাতা মুখ উঁচিয়ে থাকত। তার পাশেই কলম আর দোয়াত হিসেব লেখার জন্য। আমি প্রায়ই ঐ লাল খাতাটির ওপরে হাত বুলোতাম। লালসালুর ঐ খাতাটি দেখতে দেখতে কেমন যেন ঘোর লেগে যেত।
তারপর সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসত। বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নেমে চোখে পড়ত, পাশের বাড়ির বন্দনা মাসিমা ওঁদের উঠোনের মাঝখানে তুলসীতলায় দাঁড়িয়ে। সামনে মাটির প্রদীপ জ্বলছে আর তার আভায় সিঁদুর রাঙা সিঁথি ও জ্বলজ্বলে টিপে মাসিমাকে দেবীর মতো মনে হতো। তাঁর গলায় জড়ানো লাল-সাদা শাড়ির আঁচলে আর তাঁর নিমগ্নতায় কী যে সুন্দর লাগত তাঁকে। বাবা খুব নরম করে বলতেন, ‘যাও, মাসিকে প্রণাম করে এসো।’
আমি ওঁদের উঠোনের দিকে যেতে যেতে মনে হতো, কাল রাতে আমার ঘরের জানালা থেকে দেখেছি, বন্দনা মাসি তাঁদের তুলসীতলা নিকিয়েছেন, বারান্দায় আলপনা এঁকেছেন চালের গুঁড়োর, মঙ্গলঘট বসিয়েছেন সিঁড়ির দুধারে। আজ খুব ভোরে ঘুম চোখে দেখেছি, ওঁদের বাড়ির পেছনের ছোট্ট পুকুরটা এক ডুবে পার হয়ে ওপারের ছোট্ট আমগাছটা থেকে দুটো কচি আম তুলে আবার এক ডুবে ফিরে এসেছেন এ পাড়ের ঘাটে। আমার পায়ের সাড়া পেয়ে বন্দনা মাসিমার তন্ময়তা ভেঙে যেত। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলতেন, ‘কি রে, বাবার সঙ্গে গিয়ে পেটপুজো সেরে এলি’?
আমি কিছু না বলে বন্দনা মাসিমার পায়ের কাছে প্রণত হই। টের পেতাম, মাসিমার স্নেহময় হাত আমার পিঠে। আজ মনে হয়, ঐ আশীর্বাদ, ঐ মমতা আর মায়াই তো ঘিরে রেখেছে আমাকে—শুধু বছরের প্রথম দিনে নয়, সারা বছর এবং সারা জীবনও বটে।
লেখক: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ,জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

পয়লা বৈশাখ এসে গেছে। জানি, বাংলাদেশ এখন তৈরি হয়েছে নববর্ষকে বরণ করে নিতে। ঠিক পয়লা বৈশাখে বাংলাদেশের আনাচ-কানাচ রং আর রেখায় ভরে যায়। রং উঠে আসে মেয়েদের শাড়িতে, ছেলেদের পাঞ্জাবিতে, নানান ফুলের সমাহারে, তোরণের বর্ণচ্ছটায়। রেখা তার স্থান করে নেয় দেয়ালে, আলপনায়, প্রতিচিত্রে।
ঠিক পয়লা বৈশাখের আগের দিন আর্ট কলেজের ছেলে-মেয়েরা সারা রাত জেগে ঢাকার রাস্তায় আলপনা আঁকে, দেয়াল চিত্র শেষ করে নানান রঙের আর ঢংয়ের মুখোশ বানায়, রঙিন কাগজের প্রতিমূর্তি গড়ে পরদিন প্রভাতের শোভাযাত্রার জন্য। উন্মাদনা, উৎসাহের জোয়ার দেখা যায় চারদিকে—আনন্দ, স্ফূর্তি আর উৎসবের আমেজ অনুভব করা যায় আকাশে-বাতাসে।
বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে প্রীতি-সম্ভাষণে, গানে, আমোদে আর মুখরোচক খাদ্যে। মেলা বসে নানান জায়গায়, রমনার বটমূলে বসে গানের আসর, চিরায়ত বাঙালি খাবার উঠে আসে আমাদের রসনায়। নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো, শিশুদের কলকাকলিতে ঘন হয়ে আসে আকাশ-বাতাস।
এই চালচিত্র থেকেই উঠে আসে স্মৃতি-অতীতের স্মৃতি। সেই স্মৃতির আলপনা-রেখার পথ ধরে মন চলে যায় সুদূর অতীতে। মনে পড়ে কত কথা, ৬০ বছর আগের কথা। ছবির মতো বরিশাল শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই ছিল লাল সুরকির। ব্রজমোহন কলেজসংলগ্ন আমাদের দোতলা কাঠের বাড়ির ধার ঘেঁষে যে পথটি চলে গেছে, তা শহর পেরিয়ে কাশীপুর হয়ে চলে গেছে। ঐ পথ ধরেই বাস যেত রহমতপুর, ভূরঘাটা, গৌরনদী, চাখার আরও কত জায়গায়। যতবার বাস যেত, ততবারই একটি লাল ধুলোর ঘূর্ণি উঠত রাস্তার ওপরে ক্ষণিকের জন্য। তারপর তা মিলিয়ে যেত। কিন্তু একদিন সেই লাল ধুলোর ঘূর্ণি ঘন হয়ে বসে যেত বাতাসে।
এবং সেটা ওই পয়লা বৈশাখেই। সারা বরিশাল শহরে ঐ পথ ধরে রওনা হতো পশ্চিমে বেলা ৩টায় শুরু হওয়া কাশীপুরের বৈশাখী মেলার দিকে। রিকশায়, সাইকেলে, পদব্রজে লোকের যাত্রা শুরু হয়ে যেত সেই দুপুর ১২টা থেকেই। সে জনস্রোতের একটা বিরাট অংশই ছিল শিশুরা, ঐ যে মেলার মাটির পুতুলের জন্য। গরুর খুরের সৃষ্ট ধূলি থেকে ‘গোধূলি’ শব্দটি এসেছে, কিন্তু আমাদের বরিশালে পয়লা বৈশাখে মানুষের হেঁটে চলার পায়ে-পায়ে যে মনুষ্যধূলির সৃষ্টি হতো, তার কাছে গোধূলি তো নস্যি।
বেশ মনে আছে, ছোটবেলায় বড় কারও হাত ধরে আমরা দুই ভাই-বোন প্রতিবছরই যেতাম সেই বৈশাখী মেলায়। বাবা না যেতে পারলেও পাঠিয়ে দিতেন বড় কারও সঙ্গে। আমাদের দুজনের হাতে দেওয়া হতো একটি করে টাকা, পুতুল বা যা খুশি তা কেনার জন্য। সেই সঙ্গে মিলত মাটির বটুয়ায় জমানো আমাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়। মায়ের নিষেধাজ্ঞা ছিল বাইরের খাবার না কেনার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা? মেলার ধূলিমিশ্রিত নকুল দানা, কিংবা চৌকো করে কাটা তিলের খাজা, অথবা ঝুরঝুরে ঝুরিভাজার স্বর্গীয় স্বাদ কি ঘরের বানানো খাবারে হয়? সুতরাং মায়ের নিষেধাজ্ঞা তত্ত্বেই থাকত, বাস্তবে নয়।
মেলায় গিয়ে পড়তে হতো এক কঠিন সমস্যায়। এত সব সুন্দর সুন্দর মাটির পুতুল—ঘোড়া, বর-বৌ, গরু, হাতি, পাখি কোনটা ছেড়ে কোনটা নেই। পোড়ামাটির ওপরে সুন্দর উজ্জ্বল রঙে চোখ-মুখ আঁকা ঐ সব পুতুলদের দিকে তৃষিত নয়নে তাকিয়ে থাকতাম। মনে হতো, দুহাতে আঁকড়ে ধরে সব পুতুল নিয়ে নেই। কিন্তু সাধ আর সাধ্যে যে বিরাট ফারাক। তারই মধ্যে ছোট্ট মাথা খাঁটিয়ে পছন্দ করতাম কিছু পুতুল। কুমোরেরা যখন তাঁদের ডালি থেকে পুতুলগুলো আমাদের কচি হাতে তুলে দিতেন, তখন মনে হতো, হাতে স্বর্গ পাওয়া গেল।
বাড়ি ফিরে সেই সব ঘোড়া, হাতি আর পাখিদের উল্টেপাল্টে কতবার যে দেখা হতো। রাতে ঘুমোনো হতো ঐ সব পুতুলদের বালিশের পাশে সাজিয়ে। দুটো ঘটনার কথা মনে আছে। একবার নিজের সঞ্চয় থেকে মায়ের জন্য একটা শিশু কোলে মা-পুতুল নিয়ে এসেছিলাম। সেদিন মায়ের মুখে যে খুশির আভা দেখেছিলাম, তা কখনো ভুলব না। আর একবার আমার হাত থেকে আমার ঘোড়া পুতুলটা ভেঙে গিয়েছিল। আমার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আমার বোন তার ঘোড়াটা আমাকে দিয়ে দিয়েছিল। তার মূল্য তখন হয়তো বুঝিনি, আজ বুঝি।
সন্ধ্যের দিকে আবার শুরু হতো আরেক পালা, হালখাতা। বাবা আমাকে নিয়ে বেরোতেন মাখন কাকা আর হারাধন জেঠার বইয়ের দোকানে, জহুর চাচার কাপড়ের প্রতিষ্ঠান ‘চিটাগং বস্ত্রালয়ে’, অশ্বিনীদার কাঠের কারখানায়। সুবেশ বিপণি মালিকেরা আমাদের যত্ন করে বসাতেন, সুস্বাদু সব খাবার আসত। তাকিয়ে দেখতাম লাল রঙের নতুন হালখাতা। যত দূর মনে পড়ে বাবা একটা রুপোর টাকা প্রতীকী হিসেবে তাঁদের হাতে তুলে দিতেন।
সেই সব কর্মকাণ্ডে আমার যে কী যত্ন-আত্তি! কাকা-দাদারা হাঁক দিচ্ছেন তাঁদের কর্মচারীদের গরম গরম রসালো মিষ্টান্ন আনার জন্য, পরম যত্নে তুলে দিচ্ছেন আমার পাতে, জোর করছেন এটা ওটা খাবার জন্য। তারই ফাঁকে ফাঁকে বাবার কাছে আশীর্বাদ চাইছেন যাতে সারা বছরটা ভালো যায়। খাবার শেষে পেতলের ঘটি-গেলাসে জল আসত, বাবা একটা পান তুলে নিতেন হাতে, বিপণি মালিকেরা দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন।
কিন্তু সব সময়ে যা আমার দৃষ্টি কাড়ত, তা হচ্ছে ঐ হালখাতা। সাদা সুতোয় বাঁধা লাল খাতাটা এলিয়ে থাকত টাকা-পয়সার বাক্সের পাশে। অদূরেই পেতলের ঘটিতে জলে পাঁচটি আমপাতা মুখ উঁচিয়ে থাকত। তার পাশেই কলম আর দোয়াত হিসেব লেখার জন্য। আমি প্রায়ই ঐ লাল খাতাটির ওপরে হাত বুলোতাম। লালসালুর ঐ খাতাটি দেখতে দেখতে কেমন যেন ঘোর লেগে যেত।
তারপর সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসত। বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নেমে চোখে পড়ত, পাশের বাড়ির বন্দনা মাসিমা ওঁদের উঠোনের মাঝখানে তুলসীতলায় দাঁড়িয়ে। সামনে মাটির প্রদীপ জ্বলছে আর তার আভায় সিঁদুর রাঙা সিঁথি ও জ্বলজ্বলে টিপে মাসিমাকে দেবীর মতো মনে হতো। তাঁর গলায় জড়ানো লাল-সাদা শাড়ির আঁচলে আর তাঁর নিমগ্নতায় কী যে সুন্দর লাগত তাঁকে। বাবা খুব নরম করে বলতেন, ‘যাও, মাসিকে প্রণাম করে এসো।’
আমি ওঁদের উঠোনের দিকে যেতে যেতে মনে হতো, কাল রাতে আমার ঘরের জানালা থেকে দেখেছি, বন্দনা মাসি তাঁদের তুলসীতলা নিকিয়েছেন, বারান্দায় আলপনা এঁকেছেন চালের গুঁড়োর, মঙ্গলঘট বসিয়েছেন সিঁড়ির দুধারে। আজ খুব ভোরে ঘুম চোখে দেখেছি, ওঁদের বাড়ির পেছনের ছোট্ট পুকুরটা এক ডুবে পার হয়ে ওপারের ছোট্ট আমগাছটা থেকে দুটো কচি আম তুলে আবার এক ডুবে ফিরে এসেছেন এ পাড়ের ঘাটে। আমার পায়ের সাড়া পেয়ে বন্দনা মাসিমার তন্ময়তা ভেঙে যেত। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলতেন, ‘কি রে, বাবার সঙ্গে গিয়ে পেটপুজো সেরে এলি’?
আমি কিছু না বলে বন্দনা মাসিমার পায়ের কাছে প্রণত হই। টের পেতাম, মাসিমার স্নেহময় হাত আমার পিঠে। আজ মনে হয়, ঐ আশীর্বাদ, ঐ মমতা আর মায়াই তো ঘিরে রেখেছে আমাকে—শুধু বছরের প্রথম দিনে নয়, সারা বছর এবং সারা জীবনও বটে।
লেখক: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ,জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
সেলিম জাহান

পয়লা বৈশাখ এসে গেছে। জানি, বাংলাদেশ এখন তৈরি হয়েছে নববর্ষকে বরণ করে নিতে। ঠিক পয়লা বৈশাখে বাংলাদেশের আনাচ-কানাচ রং আর রেখায় ভরে যায়। রং উঠে আসে মেয়েদের শাড়িতে, ছেলেদের পাঞ্জাবিতে, নানান ফুলের সমাহারে, তোরণের বর্ণচ্ছটায়। রেখা তার স্থান করে নেয় দেয়ালে, আলপনায়, প্রতিচিত্রে।
ঠিক পয়লা বৈশাখের আগের দিন আর্ট কলেজের ছেলে-মেয়েরা সারা রাত জেগে ঢাকার রাস্তায় আলপনা আঁকে, দেয়াল চিত্র শেষ করে নানান রঙের আর ঢংয়ের মুখোশ বানায়, রঙিন কাগজের প্রতিমূর্তি গড়ে পরদিন প্রভাতের শোভাযাত্রার জন্য। উন্মাদনা, উৎসাহের জোয়ার দেখা যায় চারদিকে—আনন্দ, স্ফূর্তি আর উৎসবের আমেজ অনুভব করা যায় আকাশে-বাতাসে।
বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে প্রীতি-সম্ভাষণে, গানে, আমোদে আর মুখরোচক খাদ্যে। মেলা বসে নানান জায়গায়, রমনার বটমূলে বসে গানের আসর, চিরায়ত বাঙালি খাবার উঠে আসে আমাদের রসনায়। নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো, শিশুদের কলকাকলিতে ঘন হয়ে আসে আকাশ-বাতাস।
এই চালচিত্র থেকেই উঠে আসে স্মৃতি-অতীতের স্মৃতি। সেই স্মৃতির আলপনা-রেখার পথ ধরে মন চলে যায় সুদূর অতীতে। মনে পড়ে কত কথা, ৬০ বছর আগের কথা। ছবির মতো বরিশাল শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই ছিল লাল সুরকির। ব্রজমোহন কলেজসংলগ্ন আমাদের দোতলা কাঠের বাড়ির ধার ঘেঁষে যে পথটি চলে গেছে, তা শহর পেরিয়ে কাশীপুর হয়ে চলে গেছে। ঐ পথ ধরেই বাস যেত রহমতপুর, ভূরঘাটা, গৌরনদী, চাখার আরও কত জায়গায়। যতবার বাস যেত, ততবারই একটি লাল ধুলোর ঘূর্ণি উঠত রাস্তার ওপরে ক্ষণিকের জন্য। তারপর তা মিলিয়ে যেত। কিন্তু একদিন সেই লাল ধুলোর ঘূর্ণি ঘন হয়ে বসে যেত বাতাসে।
এবং সেটা ওই পয়লা বৈশাখেই। সারা বরিশাল শহরে ঐ পথ ধরে রওনা হতো পশ্চিমে বেলা ৩টায় শুরু হওয়া কাশীপুরের বৈশাখী মেলার দিকে। রিকশায়, সাইকেলে, পদব্রজে লোকের যাত্রা শুরু হয়ে যেত সেই দুপুর ১২টা থেকেই। সে জনস্রোতের একটা বিরাট অংশই ছিল শিশুরা, ঐ যে মেলার মাটির পুতুলের জন্য। গরুর খুরের সৃষ্ট ধূলি থেকে ‘গোধূলি’ শব্দটি এসেছে, কিন্তু আমাদের বরিশালে পয়লা বৈশাখে মানুষের হেঁটে চলার পায়ে-পায়ে যে মনুষ্যধূলির সৃষ্টি হতো, তার কাছে গোধূলি তো নস্যি।
বেশ মনে আছে, ছোটবেলায় বড় কারও হাত ধরে আমরা দুই ভাই-বোন প্রতিবছরই যেতাম সেই বৈশাখী মেলায়। বাবা না যেতে পারলেও পাঠিয়ে দিতেন বড় কারও সঙ্গে। আমাদের দুজনের হাতে দেওয়া হতো একটি করে টাকা, পুতুল বা যা খুশি তা কেনার জন্য। সেই সঙ্গে মিলত মাটির বটুয়ায় জমানো আমাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়। মায়ের নিষেধাজ্ঞা ছিল বাইরের খাবার না কেনার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা? মেলার ধূলিমিশ্রিত নকুল দানা, কিংবা চৌকো করে কাটা তিলের খাজা, অথবা ঝুরঝুরে ঝুরিভাজার স্বর্গীয় স্বাদ কি ঘরের বানানো খাবারে হয়? সুতরাং মায়ের নিষেধাজ্ঞা তত্ত্বেই থাকত, বাস্তবে নয়।
মেলায় গিয়ে পড়তে হতো এক কঠিন সমস্যায়। এত সব সুন্দর সুন্দর মাটির পুতুল—ঘোড়া, বর-বৌ, গরু, হাতি, পাখি কোনটা ছেড়ে কোনটা নেই। পোড়ামাটির ওপরে সুন্দর উজ্জ্বল রঙে চোখ-মুখ আঁকা ঐ সব পুতুলদের দিকে তৃষিত নয়নে তাকিয়ে থাকতাম। মনে হতো, দুহাতে আঁকড়ে ধরে সব পুতুল নিয়ে নেই। কিন্তু সাধ আর সাধ্যে যে বিরাট ফারাক। তারই মধ্যে ছোট্ট মাথা খাঁটিয়ে পছন্দ করতাম কিছু পুতুল। কুমোরেরা যখন তাঁদের ডালি থেকে পুতুলগুলো আমাদের কচি হাতে তুলে দিতেন, তখন মনে হতো, হাতে স্বর্গ পাওয়া গেল।
বাড়ি ফিরে সেই সব ঘোড়া, হাতি আর পাখিদের উল্টেপাল্টে কতবার যে দেখা হতো। রাতে ঘুমোনো হতো ঐ সব পুতুলদের বালিশের পাশে সাজিয়ে। দুটো ঘটনার কথা মনে আছে। একবার নিজের সঞ্চয় থেকে মায়ের জন্য একটা শিশু কোলে মা-পুতুল নিয়ে এসেছিলাম। সেদিন মায়ের মুখে যে খুশির আভা দেখেছিলাম, তা কখনো ভুলব না। আর একবার আমার হাত থেকে আমার ঘোড়া পুতুলটা ভেঙে গিয়েছিল। আমার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আমার বোন তার ঘোড়াটা আমাকে দিয়ে দিয়েছিল। তার মূল্য তখন হয়তো বুঝিনি, আজ বুঝি।
সন্ধ্যের দিকে আবার শুরু হতো আরেক পালা, হালখাতা। বাবা আমাকে নিয়ে বেরোতেন মাখন কাকা আর হারাধন জেঠার বইয়ের দোকানে, জহুর চাচার কাপড়ের প্রতিষ্ঠান ‘চিটাগং বস্ত্রালয়ে’, অশ্বিনীদার কাঠের কারখানায়। সুবেশ বিপণি মালিকেরা আমাদের যত্ন করে বসাতেন, সুস্বাদু সব খাবার আসত। তাকিয়ে দেখতাম লাল রঙের নতুন হালখাতা। যত দূর মনে পড়ে বাবা একটা রুপোর টাকা প্রতীকী হিসেবে তাঁদের হাতে তুলে দিতেন।
সেই সব কর্মকাণ্ডে আমার যে কী যত্ন-আত্তি! কাকা-দাদারা হাঁক দিচ্ছেন তাঁদের কর্মচারীদের গরম গরম রসালো মিষ্টান্ন আনার জন্য, পরম যত্নে তুলে দিচ্ছেন আমার পাতে, জোর করছেন এটা ওটা খাবার জন্য। তারই ফাঁকে ফাঁকে বাবার কাছে আশীর্বাদ চাইছেন যাতে সারা বছরটা ভালো যায়। খাবার শেষে পেতলের ঘটি-গেলাসে জল আসত, বাবা একটা পান তুলে নিতেন হাতে, বিপণি মালিকেরা দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন।
কিন্তু সব সময়ে যা আমার দৃষ্টি কাড়ত, তা হচ্ছে ঐ হালখাতা। সাদা সুতোয় বাঁধা লাল খাতাটা এলিয়ে থাকত টাকা-পয়সার বাক্সের পাশে। অদূরেই পেতলের ঘটিতে জলে পাঁচটি আমপাতা মুখ উঁচিয়ে থাকত। তার পাশেই কলম আর দোয়াত হিসেব লেখার জন্য। আমি প্রায়ই ঐ লাল খাতাটির ওপরে হাত বুলোতাম। লালসালুর ঐ খাতাটি দেখতে দেখতে কেমন যেন ঘোর লেগে যেত।
তারপর সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসত। বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নেমে চোখে পড়ত, পাশের বাড়ির বন্দনা মাসিমা ওঁদের উঠোনের মাঝখানে তুলসীতলায় দাঁড়িয়ে। সামনে মাটির প্রদীপ জ্বলছে আর তার আভায় সিঁদুর রাঙা সিঁথি ও জ্বলজ্বলে টিপে মাসিমাকে দেবীর মতো মনে হতো। তাঁর গলায় জড়ানো লাল-সাদা শাড়ির আঁচলে আর তাঁর নিমগ্নতায় কী যে সুন্দর লাগত তাঁকে। বাবা খুব নরম করে বলতেন, ‘যাও, মাসিকে প্রণাম করে এসো।’
আমি ওঁদের উঠোনের দিকে যেতে যেতে মনে হতো, কাল রাতে আমার ঘরের জানালা থেকে দেখেছি, বন্দনা মাসি তাঁদের তুলসীতলা নিকিয়েছেন, বারান্দায় আলপনা এঁকেছেন চালের গুঁড়োর, মঙ্গলঘট বসিয়েছেন সিঁড়ির দুধারে। আজ খুব ভোরে ঘুম চোখে দেখেছি, ওঁদের বাড়ির পেছনের ছোট্ট পুকুরটা এক ডুবে পার হয়ে ওপারের ছোট্ট আমগাছটা থেকে দুটো কচি আম তুলে আবার এক ডুবে ফিরে এসেছেন এ পাড়ের ঘাটে। আমার পায়ের সাড়া পেয়ে বন্দনা মাসিমার তন্ময়তা ভেঙে যেত। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলতেন, ‘কি রে, বাবার সঙ্গে গিয়ে পেটপুজো সেরে এলি’?
আমি কিছু না বলে বন্দনা মাসিমার পায়ের কাছে প্রণত হই। টের পেতাম, মাসিমার স্নেহময় হাত আমার পিঠে। আজ মনে হয়, ঐ আশীর্বাদ, ঐ মমতা আর মায়াই তো ঘিরে রেখেছে আমাকে—শুধু বছরের প্রথম দিনে নয়, সারা বছর এবং সারা জীবনও বটে।
লেখক: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ,জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

পয়লা বৈশাখ এসে গেছে। জানি, বাংলাদেশ এখন তৈরি হয়েছে নববর্ষকে বরণ করে নিতে। ঠিক পয়লা বৈশাখে বাংলাদেশের আনাচ-কানাচ রং আর রেখায় ভরে যায়। রং উঠে আসে মেয়েদের শাড়িতে, ছেলেদের পাঞ্জাবিতে, নানান ফুলের সমাহারে, তোরণের বর্ণচ্ছটায়। রেখা তার স্থান করে নেয় দেয়ালে, আলপনায়, প্রতিচিত্রে।
ঠিক পয়লা বৈশাখের আগের দিন আর্ট কলেজের ছেলে-মেয়েরা সারা রাত জেগে ঢাকার রাস্তায় আলপনা আঁকে, দেয়াল চিত্র শেষ করে নানান রঙের আর ঢংয়ের মুখোশ বানায়, রঙিন কাগজের প্রতিমূর্তি গড়ে পরদিন প্রভাতের শোভাযাত্রার জন্য। উন্মাদনা, উৎসাহের জোয়ার দেখা যায় চারদিকে—আনন্দ, স্ফূর্তি আর উৎসবের আমেজ অনুভব করা যায় আকাশে-বাতাসে।
বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে প্রীতি-সম্ভাষণে, গানে, আমোদে আর মুখরোচক খাদ্যে। মেলা বসে নানান জায়গায়, রমনার বটমূলে বসে গানের আসর, চিরায়ত বাঙালি খাবার উঠে আসে আমাদের রসনায়। নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো, শিশুদের কলকাকলিতে ঘন হয়ে আসে আকাশ-বাতাস।
এই চালচিত্র থেকেই উঠে আসে স্মৃতি-অতীতের স্মৃতি। সেই স্মৃতির আলপনা-রেখার পথ ধরে মন চলে যায় সুদূর অতীতে। মনে পড়ে কত কথা, ৬০ বছর আগের কথা। ছবির মতো বরিশাল শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই ছিল লাল সুরকির। ব্রজমোহন কলেজসংলগ্ন আমাদের দোতলা কাঠের বাড়ির ধার ঘেঁষে যে পথটি চলে গেছে, তা শহর পেরিয়ে কাশীপুর হয়ে চলে গেছে। ঐ পথ ধরেই বাস যেত রহমতপুর, ভূরঘাটা, গৌরনদী, চাখার আরও কত জায়গায়। যতবার বাস যেত, ততবারই একটি লাল ধুলোর ঘূর্ণি উঠত রাস্তার ওপরে ক্ষণিকের জন্য। তারপর তা মিলিয়ে যেত। কিন্তু একদিন সেই লাল ধুলোর ঘূর্ণি ঘন হয়ে বসে যেত বাতাসে।
এবং সেটা ওই পয়লা বৈশাখেই। সারা বরিশাল শহরে ঐ পথ ধরে রওনা হতো পশ্চিমে বেলা ৩টায় শুরু হওয়া কাশীপুরের বৈশাখী মেলার দিকে। রিকশায়, সাইকেলে, পদব্রজে লোকের যাত্রা শুরু হয়ে যেত সেই দুপুর ১২টা থেকেই। সে জনস্রোতের একটা বিরাট অংশই ছিল শিশুরা, ঐ যে মেলার মাটির পুতুলের জন্য। গরুর খুরের সৃষ্ট ধূলি থেকে ‘গোধূলি’ শব্দটি এসেছে, কিন্তু আমাদের বরিশালে পয়লা বৈশাখে মানুষের হেঁটে চলার পায়ে-পায়ে যে মনুষ্যধূলির সৃষ্টি হতো, তার কাছে গোধূলি তো নস্যি।
বেশ মনে আছে, ছোটবেলায় বড় কারও হাত ধরে আমরা দুই ভাই-বোন প্রতিবছরই যেতাম সেই বৈশাখী মেলায়। বাবা না যেতে পারলেও পাঠিয়ে দিতেন বড় কারও সঙ্গে। আমাদের দুজনের হাতে দেওয়া হতো একটি করে টাকা, পুতুল বা যা খুশি তা কেনার জন্য। সেই সঙ্গে মিলত মাটির বটুয়ায় জমানো আমাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়। মায়ের নিষেধাজ্ঞা ছিল বাইরের খাবার না কেনার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা? মেলার ধূলিমিশ্রিত নকুল দানা, কিংবা চৌকো করে কাটা তিলের খাজা, অথবা ঝুরঝুরে ঝুরিভাজার স্বর্গীয় স্বাদ কি ঘরের বানানো খাবারে হয়? সুতরাং মায়ের নিষেধাজ্ঞা তত্ত্বেই থাকত, বাস্তবে নয়।
মেলায় গিয়ে পড়তে হতো এক কঠিন সমস্যায়। এত সব সুন্দর সুন্দর মাটির পুতুল—ঘোড়া, বর-বৌ, গরু, হাতি, পাখি কোনটা ছেড়ে কোনটা নেই। পোড়ামাটির ওপরে সুন্দর উজ্জ্বল রঙে চোখ-মুখ আঁকা ঐ সব পুতুলদের দিকে তৃষিত নয়নে তাকিয়ে থাকতাম। মনে হতো, দুহাতে আঁকড়ে ধরে সব পুতুল নিয়ে নেই। কিন্তু সাধ আর সাধ্যে যে বিরাট ফারাক। তারই মধ্যে ছোট্ট মাথা খাঁটিয়ে পছন্দ করতাম কিছু পুতুল। কুমোরেরা যখন তাঁদের ডালি থেকে পুতুলগুলো আমাদের কচি হাতে তুলে দিতেন, তখন মনে হতো, হাতে স্বর্গ পাওয়া গেল।
বাড়ি ফিরে সেই সব ঘোড়া, হাতি আর পাখিদের উল্টেপাল্টে কতবার যে দেখা হতো। রাতে ঘুমোনো হতো ঐ সব পুতুলদের বালিশের পাশে সাজিয়ে। দুটো ঘটনার কথা মনে আছে। একবার নিজের সঞ্চয় থেকে মায়ের জন্য একটা শিশু কোলে মা-পুতুল নিয়ে এসেছিলাম। সেদিন মায়ের মুখে যে খুশির আভা দেখেছিলাম, তা কখনো ভুলব না। আর একবার আমার হাত থেকে আমার ঘোড়া পুতুলটা ভেঙে গিয়েছিল। আমার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আমার বোন তার ঘোড়াটা আমাকে দিয়ে দিয়েছিল। তার মূল্য তখন হয়তো বুঝিনি, আজ বুঝি।
সন্ধ্যের দিকে আবার শুরু হতো আরেক পালা, হালখাতা। বাবা আমাকে নিয়ে বেরোতেন মাখন কাকা আর হারাধন জেঠার বইয়ের দোকানে, জহুর চাচার কাপড়ের প্রতিষ্ঠান ‘চিটাগং বস্ত্রালয়ে’, অশ্বিনীদার কাঠের কারখানায়। সুবেশ বিপণি মালিকেরা আমাদের যত্ন করে বসাতেন, সুস্বাদু সব খাবার আসত। তাকিয়ে দেখতাম লাল রঙের নতুন হালখাতা। যত দূর মনে পড়ে বাবা একটা রুপোর টাকা প্রতীকী হিসেবে তাঁদের হাতে তুলে দিতেন।
সেই সব কর্মকাণ্ডে আমার যে কী যত্ন-আত্তি! কাকা-দাদারা হাঁক দিচ্ছেন তাঁদের কর্মচারীদের গরম গরম রসালো মিষ্টান্ন আনার জন্য, পরম যত্নে তুলে দিচ্ছেন আমার পাতে, জোর করছেন এটা ওটা খাবার জন্য। তারই ফাঁকে ফাঁকে বাবার কাছে আশীর্বাদ চাইছেন যাতে সারা বছরটা ভালো যায়। খাবার শেষে পেতলের ঘটি-গেলাসে জল আসত, বাবা একটা পান তুলে নিতেন হাতে, বিপণি মালিকেরা দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন।
কিন্তু সব সময়ে যা আমার দৃষ্টি কাড়ত, তা হচ্ছে ঐ হালখাতা। সাদা সুতোয় বাঁধা লাল খাতাটা এলিয়ে থাকত টাকা-পয়সার বাক্সের পাশে। অদূরেই পেতলের ঘটিতে জলে পাঁচটি আমপাতা মুখ উঁচিয়ে থাকত। তার পাশেই কলম আর দোয়াত হিসেব লেখার জন্য। আমি প্রায়ই ঐ লাল খাতাটির ওপরে হাত বুলোতাম। লালসালুর ঐ খাতাটি দেখতে দেখতে কেমন যেন ঘোর লেগে যেত।
তারপর সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসত। বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নেমে চোখে পড়ত, পাশের বাড়ির বন্দনা মাসিমা ওঁদের উঠোনের মাঝখানে তুলসীতলায় দাঁড়িয়ে। সামনে মাটির প্রদীপ জ্বলছে আর তার আভায় সিঁদুর রাঙা সিঁথি ও জ্বলজ্বলে টিপে মাসিমাকে দেবীর মতো মনে হতো। তাঁর গলায় জড়ানো লাল-সাদা শাড়ির আঁচলে আর তাঁর নিমগ্নতায় কী যে সুন্দর লাগত তাঁকে। বাবা খুব নরম করে বলতেন, ‘যাও, মাসিকে প্রণাম করে এসো।’
আমি ওঁদের উঠোনের দিকে যেতে যেতে মনে হতো, কাল রাতে আমার ঘরের জানালা থেকে দেখেছি, বন্দনা মাসি তাঁদের তুলসীতলা নিকিয়েছেন, বারান্দায় আলপনা এঁকেছেন চালের গুঁড়োর, মঙ্গলঘট বসিয়েছেন সিঁড়ির দুধারে। আজ খুব ভোরে ঘুম চোখে দেখেছি, ওঁদের বাড়ির পেছনের ছোট্ট পুকুরটা এক ডুবে পার হয়ে ওপারের ছোট্ট আমগাছটা থেকে দুটো কচি আম তুলে আবার এক ডুবে ফিরে এসেছেন এ পাড়ের ঘাটে। আমার পায়ের সাড়া পেয়ে বন্দনা মাসিমার তন্ময়তা ভেঙে যেত। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলতেন, ‘কি রে, বাবার সঙ্গে গিয়ে পেটপুজো সেরে এলি’?
আমি কিছু না বলে বন্দনা মাসিমার পায়ের কাছে প্রণত হই। টের পেতাম, মাসিমার স্নেহময় হাত আমার পিঠে। আজ মনে হয়, ঐ আশীর্বাদ, ঐ মমতা আর মায়াই তো ঘিরে রেখেছে আমাকে—শুধু বছরের প্রথম দিনে নয়, সারা বছর এবং সারা জীবনও বটে।
লেখক: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ,জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

পয়লা বৈশাখের এখনকার চালচিত্র থেকেই উঠে আসে স্মৃতি-অতীতের স্মৃতি। সেই স্মৃতির আলপনা-রেখার পথ ধরে মন চলে যায় সুদূর অতীতে। মনে পড়ে কত কথা, ৬০ বছর আগের কথা। ছবির মতো বরিশাল শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই ছিল লাল সুরকির।
১৪ এপ্রিল ২০২৪
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেকুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।

পয়লা বৈশাখের এখনকার চালচিত্র থেকেই উঠে আসে স্মৃতি-অতীতের স্মৃতি। সেই স্মৃতির আলপনা-রেখার পথ ধরে মন চলে যায় সুদূর অতীতে। মনে পড়ে কত কথা, ৬০ বছর আগের কথা। ছবির মতো বরিশাল শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই ছিল লাল সুরকির।
১৪ এপ্রিল ২০২৪
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

পয়লা বৈশাখের এখনকার চালচিত্র থেকেই উঠে আসে স্মৃতি-অতীতের স্মৃতি। সেই স্মৃতির আলপনা-রেখার পথ ধরে মন চলে যায় সুদূর অতীতে। মনে পড়ে কত কথা, ৬০ বছর আগের কথা। ছবির মতো বরিশাল শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই ছিল লাল সুরকির।
১৪ এপ্রিল ২০২৪
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

পয়লা বৈশাখের এখনকার চালচিত্র থেকেই উঠে আসে স্মৃতি-অতীতের স্মৃতি। সেই স্মৃতির আলপনা-রেখার পথ ধরে মন চলে যায় সুদূর অতীতে। মনে পড়ে কত কথা, ৬০ বছর আগের কথা। ছবির মতো বরিশাল শহরের বেশির ভাগ রাস্তাই ছিল লাল সুরকির।
১৪ এপ্রিল ২০২৪
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে