তুহিন কান্তি দাস, ঢাকা

পাঁচ মাসের গর্ভবতী এক নারী বস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিলেন কুমার নদে। তাঁর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। তারপর স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে উদ্ধার ও বেঁচে ফেরা। একেবারে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা সেই নারী এরপর থানা-আদালত ঘুরে ফিরেছিলেন স্বামীর কাছে; কিন্তু থাকা হয়নি। গর্ভে থাকা সেই পাঁচ মাসের ভ্রূণ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুকে নিয়েই তাঁকে ঘুরতে হয়েছে আখড়া থেকে আখড়ায় এবং সেই সূত্রে গানের সঙ্গে গাঁটছড়া। মাঝে মুক্তিযুদ্ধ, ভারতে আশ্রয়, সেখানেও গানই হয়ে থাকল তাঁর একমাত্র সখা। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলো, বাংলাদেশ এগিয়ে গেল অনেকটাই, সেই নারীও ক্রমে এক আইকনে পরিণত হলেন, কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান থেকে ফেরা হলো না। তাঁর নাম কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
কাঙ্গালিনী সুফিয়া সেই নাম, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরানের বান্ধবের খোঁজে বুড়িয়ে যাওয়া এক জীবনের দীর্ঘশ্বাস। সাধক ওয়াহিদের লেখা এই গান সুফিয়ার কণ্ঠের জাদুতে বাংলা লোকসংগীতের এক অনন্য নিদর্শন হয়ে আছে। বাউলশিল্পী হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করা এই শিল্পীর ব্যক্তিজীবনের সংগ্রাম সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা? নজর পড়েছে কি কখনো শিল্পীর আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক অদম্য নারীর আত্মমগ্নতায়?
এই দেশে নারীর একজীবনে তাকে যে কত নাম নিতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। তারপরও কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নামের হদিস নিতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। এক দরিদ্র জেলে পরিবারের টুনি কিংবা অনিতা হালদার থেকে কালের পরিক্রমায় সুফিয়া খাতুন, সুফিয়া খাতুন থেকে বাউল সুফিয়া, আবার বাউল সুফিয়া থেকে কাঙ্গালিনী সুফিয়া হয়ে ওঠার সেই অজানা গল্পের প্রতিটি বাঁকে রয়েছে এক নারীর আজীবন ইস্পাতকঠিন লড়াইয়ের কাহিনি।
সুফিয়ার আসল নাম ছিল অনিতা হালদার বা টুনি হালদার, ডাকনাম বুচি। কমলা হালদার ও খোকন হালদার দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলের সর্বশেষ টুনি হালদার। শৈশব থেকেই জেলে পরিবারের আবহমান অভাব-অনটনে বড় হয়েছেন। সুফিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে ১৯৫৫-৫৬ সালে তাঁর জন্ম। তবে পাসপোর্টে তাঁর জন্মসাল লেখা ১৯৬২।
ছোটকাল থেকেই গানের প্রতি সহজাত টানের দরুন পাশের সোনাপুরের বৈষ্ণব আখড়ায় সুফিয়া ছুটে গেছেন বহুবার। সব সময় গুনগুন করে গাইতেন পল্লিগান। একবার শুনেই যেকোনো গান মনে রাখতে পারতেন অবিকল। কিন্তু এই সংগীতযাত্রায় ঠিকভাবে নামার আগেই বদলে গেল সব। ভাগ্যের ফেরে বারো-তেরো বছর বয়সে সুধীর হালদারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।
সুদর্শন সুধীর হালদার পাতলা গড়নের শ্যামলা অনিতাকে পছন্দ করতেন না। ফলে প্রায় সময়ই স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন অনিতা। পাঁচ মাসের গর্ভবতী অনিতাকে একবার অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর স্বামী বস্তাবন্দী করে ফেলে দেন কুমার নদে।
সেখান থেকে খোলা চুল দেখে মাছ ধরতে আসা জেলেরা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান অনিতাকে। খবর পেয়ে মা-বাবা এসে স্বামীর বাড়ি থেকে নিয়ে যান মেয়েকে। নির্যাতন মামলায় স্বামী কয়েক মাস কারাবাসের পর স্ত্রী-কন্যার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়ার শর্তে সমঝোতা হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান মেলেনি। ফলে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি পালিয়ে যান অনিতা। পরে মেয়ে পুষ্পকে রেখে মায়ের সহযোগিতায় বাবার হাত ধরে আশ্রয় নেন বৈষ্ণব আখড়ায়। ফেরা হলো গানের জগতে।
অনিতা বৈষ্ণব ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করে প্রায় পাঁচ বছর সোনাপুর আশ্রমে কাটান। সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় দেবেন ক্ষ্যাপা ও গৌর মোহন্তের। তাঁদের গুরু মেনে বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের পাঠ নেন তিনি।
এই আখড়াতেই অনিতা হালদারের নাম বদলে হয় অনিতা ক্ষ্যাপী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা বৈষ্ণব আখড়ায় হামলা চালালে দেশ ত্যাগ করে তিনি আশ্রয় নেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা ও সীমান্তবর্তী লালগোলায়। সেখানকার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে প্রায়ই তিনি গান শুনিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ দিতেন, প্রেরণা জোগাতেন। ক্যাম্পে গান গাইতে গাইতে পরিচয় হয় মুক্তিযোদ্ধা মান্দার ফকিরের সঙ্গে। দেশ স্বাধীন হলে অনিতা ক্ষ্যাপী মান্দার ফকিরের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চলে যান। সেখানে গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে নিজ নাম বদলে রাখেন সুফিয়া খাতুন।
গানের জগতে বিচরণের জন্য সুফিয়া খাতুন ভাঙ্গা থেকে আবার চলে আসেন তৎকালীন পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ও বর্তমান সিরাজগঞ্জ সদরে। এই সময়ে তিনি পালাগানের নতুন জগৎ গড়ে তোলেন। পাল্লা দিয়ে গান গাইতে গাইতে তিনি বাউল সুফিয়া হিসেবে পরিচিতি পান।
সমসাময়িক শিল্পীদের পরামর্শে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে ১৯৭৬ সালের দিকে ঢাকায় চলে আসেন বাউল সুফিয়া। সুফিয়ার ভাষায়, ‘একজন শিল্পী বলছিল ঢাকায় না গেলে নামকরা শিল্পী হওয়া যাবে না। তুমি ঢাকায় যাও, দেখবা একদিন নামকরা শিল্পী হইবা।’
সুফিয়া ঢাকার বাড্ডায় শাহাজাদপুরে এসে ওঠেন। হাইকোর্টের মাজারের মজমায় গান গাইতেন নিয়মিত। বিভিন্ন মজমায় লালন ও বাউলগান গেয়ে সংসার চালাতেন তিনি। সেই মজমাতেই একদিন কবি আসাদ চৌধুরী দেখা পান বাউল সুফিয়ার।
হাইকোর্ট মাজারের সামনে শিল্পী কানাইলাল শীলের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী এবং আরও কয়েকজন। সেখানে গান গাইতে আসেন বাউল সুফিয়া। অসাধারণ কণ্ঠে তিনি মুগ্ধ করেন সবাইকে। অনুষ্ঠান শেষে আসাদ চৌধুরী সুফিয়াকে বাংলা একাডেমিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এভাবেই বাংলা লোকসংগীতের কালজয়ী ফেরিওয়ালা কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে আবিষ্কার করেছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী।
আসাদ চৌধুরী সে সময় বাংলা একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বিটিভিতে ‘প্রচ্ছদ’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। সেই অনুষ্ঠানে এবং পরে বাংলা একাডেমিতে সুফিয়াকে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি। তৎকালীন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। তিনি কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের প্রধান হিসেবে সহকর্মীদের অনুরোধ করেন গ্রামবাংলার প্রতিভাবান কোনো শিল্পীর সন্ধান করতে।
সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে সহকর্মীরা মুস্তাফা মনোয়ারের কাছে নিয়ে আসেন সুফিয়াকে। সুফিয়ার অপূর্ব গায়কি, ভাব-আবেগ মুগ্ধ করে মুস্তাফা মনোয়ারকে। সুফিয়াকে গান গাইতে কোরিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু সুফিয়া তখন ছিলেন আর্থিকভাবে নাজেহাল। তাঁর এই করুণ চিত্র দেখেই মুস্তাফা মনোয়ার তাঁর নাম দিয়েছিলেন সুফিয়া কাঙ্গালিনী। সময়ের বিবর্তনে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
শেষ এই নামটিই আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন সুফিয়া। যদিও তাঁর জীবনের ভাঁজে ভাঁজে রয়ে গেছেন সেই বুচি, টুনি বা অনিতা হালদারেরা। রয়ে গেছে আখড়ায় বা বৈষ্ণবদের কাছ থেকে পাওয়া অনিতা ক্ষ্যাপী নামটি। মজমায় মজমায় গান গেয়ে বেড়ানো সুফিয়া এক আজন্ম বাউল। বয়সী এই মানুষটির সঙ্গী হিসেবে রয়ে গেছে শুধু দুটি জিনিস—গান আর পুষ্প। মায়ের মতো পুষ্পও গান করেন। কুমার নদে বস্তাবন্দী পড়ে থাকা সুফিয়া বা অনিতার পক্ষে একজীবনে সব বাধা ভাঙা সম্ভব না হলেও, সব লড়াইয়ে জয় পাওয়া সম্ভব না হলেও বহু মানুষকে তিনি লড়াইয়ের শক্তি জুগিয়েছেন, যেমন জুগিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময়।

পাঁচ মাসের গর্ভবতী এক নারী বস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিলেন কুমার নদে। তাঁর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। তারপর স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে উদ্ধার ও বেঁচে ফেরা। একেবারে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা সেই নারী এরপর থানা-আদালত ঘুরে ফিরেছিলেন স্বামীর কাছে; কিন্তু থাকা হয়নি। গর্ভে থাকা সেই পাঁচ মাসের ভ্রূণ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুকে নিয়েই তাঁকে ঘুরতে হয়েছে আখড়া থেকে আখড়ায় এবং সেই সূত্রে গানের সঙ্গে গাঁটছড়া। মাঝে মুক্তিযুদ্ধ, ভারতে আশ্রয়, সেখানেও গানই হয়ে থাকল তাঁর একমাত্র সখা। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলো, বাংলাদেশ এগিয়ে গেল অনেকটাই, সেই নারীও ক্রমে এক আইকনে পরিণত হলেন, কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান থেকে ফেরা হলো না। তাঁর নাম কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
কাঙ্গালিনী সুফিয়া সেই নাম, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরানের বান্ধবের খোঁজে বুড়িয়ে যাওয়া এক জীবনের দীর্ঘশ্বাস। সাধক ওয়াহিদের লেখা এই গান সুফিয়ার কণ্ঠের জাদুতে বাংলা লোকসংগীতের এক অনন্য নিদর্শন হয়ে আছে। বাউলশিল্পী হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করা এই শিল্পীর ব্যক্তিজীবনের সংগ্রাম সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা? নজর পড়েছে কি কখনো শিল্পীর আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক অদম্য নারীর আত্মমগ্নতায়?
এই দেশে নারীর একজীবনে তাকে যে কত নাম নিতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। তারপরও কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নামের হদিস নিতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। এক দরিদ্র জেলে পরিবারের টুনি কিংবা অনিতা হালদার থেকে কালের পরিক্রমায় সুফিয়া খাতুন, সুফিয়া খাতুন থেকে বাউল সুফিয়া, আবার বাউল সুফিয়া থেকে কাঙ্গালিনী সুফিয়া হয়ে ওঠার সেই অজানা গল্পের প্রতিটি বাঁকে রয়েছে এক নারীর আজীবন ইস্পাতকঠিন লড়াইয়ের কাহিনি।
সুফিয়ার আসল নাম ছিল অনিতা হালদার বা টুনি হালদার, ডাকনাম বুচি। কমলা হালদার ও খোকন হালদার দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলের সর্বশেষ টুনি হালদার। শৈশব থেকেই জেলে পরিবারের আবহমান অভাব-অনটনে বড় হয়েছেন। সুফিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে ১৯৫৫-৫৬ সালে তাঁর জন্ম। তবে পাসপোর্টে তাঁর জন্মসাল লেখা ১৯৬২।
ছোটকাল থেকেই গানের প্রতি সহজাত টানের দরুন পাশের সোনাপুরের বৈষ্ণব আখড়ায় সুফিয়া ছুটে গেছেন বহুবার। সব সময় গুনগুন করে গাইতেন পল্লিগান। একবার শুনেই যেকোনো গান মনে রাখতে পারতেন অবিকল। কিন্তু এই সংগীতযাত্রায় ঠিকভাবে নামার আগেই বদলে গেল সব। ভাগ্যের ফেরে বারো-তেরো বছর বয়সে সুধীর হালদারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।
সুদর্শন সুধীর হালদার পাতলা গড়নের শ্যামলা অনিতাকে পছন্দ করতেন না। ফলে প্রায় সময়ই স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন অনিতা। পাঁচ মাসের গর্ভবতী অনিতাকে একবার অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর স্বামী বস্তাবন্দী করে ফেলে দেন কুমার নদে।
সেখান থেকে খোলা চুল দেখে মাছ ধরতে আসা জেলেরা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান অনিতাকে। খবর পেয়ে মা-বাবা এসে স্বামীর বাড়ি থেকে নিয়ে যান মেয়েকে। নির্যাতন মামলায় স্বামী কয়েক মাস কারাবাসের পর স্ত্রী-কন্যার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়ার শর্তে সমঝোতা হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান মেলেনি। ফলে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি পালিয়ে যান অনিতা। পরে মেয়ে পুষ্পকে রেখে মায়ের সহযোগিতায় বাবার হাত ধরে আশ্রয় নেন বৈষ্ণব আখড়ায়। ফেরা হলো গানের জগতে।
অনিতা বৈষ্ণব ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করে প্রায় পাঁচ বছর সোনাপুর আশ্রমে কাটান। সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় দেবেন ক্ষ্যাপা ও গৌর মোহন্তের। তাঁদের গুরু মেনে বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের পাঠ নেন তিনি।
এই আখড়াতেই অনিতা হালদারের নাম বদলে হয় অনিতা ক্ষ্যাপী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা বৈষ্ণব আখড়ায় হামলা চালালে দেশ ত্যাগ করে তিনি আশ্রয় নেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা ও সীমান্তবর্তী লালগোলায়। সেখানকার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে প্রায়ই তিনি গান শুনিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ দিতেন, প্রেরণা জোগাতেন। ক্যাম্পে গান গাইতে গাইতে পরিচয় হয় মুক্তিযোদ্ধা মান্দার ফকিরের সঙ্গে। দেশ স্বাধীন হলে অনিতা ক্ষ্যাপী মান্দার ফকিরের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চলে যান। সেখানে গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে নিজ নাম বদলে রাখেন সুফিয়া খাতুন।
গানের জগতে বিচরণের জন্য সুফিয়া খাতুন ভাঙ্গা থেকে আবার চলে আসেন তৎকালীন পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ও বর্তমান সিরাজগঞ্জ সদরে। এই সময়ে তিনি পালাগানের নতুন জগৎ গড়ে তোলেন। পাল্লা দিয়ে গান গাইতে গাইতে তিনি বাউল সুফিয়া হিসেবে পরিচিতি পান।
সমসাময়িক শিল্পীদের পরামর্শে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে ১৯৭৬ সালের দিকে ঢাকায় চলে আসেন বাউল সুফিয়া। সুফিয়ার ভাষায়, ‘একজন শিল্পী বলছিল ঢাকায় না গেলে নামকরা শিল্পী হওয়া যাবে না। তুমি ঢাকায় যাও, দেখবা একদিন নামকরা শিল্পী হইবা।’
সুফিয়া ঢাকার বাড্ডায় শাহাজাদপুরে এসে ওঠেন। হাইকোর্টের মাজারের মজমায় গান গাইতেন নিয়মিত। বিভিন্ন মজমায় লালন ও বাউলগান গেয়ে সংসার চালাতেন তিনি। সেই মজমাতেই একদিন কবি আসাদ চৌধুরী দেখা পান বাউল সুফিয়ার।
হাইকোর্ট মাজারের সামনে শিল্পী কানাইলাল শীলের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী এবং আরও কয়েকজন। সেখানে গান গাইতে আসেন বাউল সুফিয়া। অসাধারণ কণ্ঠে তিনি মুগ্ধ করেন সবাইকে। অনুষ্ঠান শেষে আসাদ চৌধুরী সুফিয়াকে বাংলা একাডেমিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এভাবেই বাংলা লোকসংগীতের কালজয়ী ফেরিওয়ালা কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে আবিষ্কার করেছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী।
আসাদ চৌধুরী সে সময় বাংলা একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বিটিভিতে ‘প্রচ্ছদ’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। সেই অনুষ্ঠানে এবং পরে বাংলা একাডেমিতে সুফিয়াকে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি। তৎকালীন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। তিনি কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের প্রধান হিসেবে সহকর্মীদের অনুরোধ করেন গ্রামবাংলার প্রতিভাবান কোনো শিল্পীর সন্ধান করতে।
সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে সহকর্মীরা মুস্তাফা মনোয়ারের কাছে নিয়ে আসেন সুফিয়াকে। সুফিয়ার অপূর্ব গায়কি, ভাব-আবেগ মুগ্ধ করে মুস্তাফা মনোয়ারকে। সুফিয়াকে গান গাইতে কোরিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু সুফিয়া তখন ছিলেন আর্থিকভাবে নাজেহাল। তাঁর এই করুণ চিত্র দেখেই মুস্তাফা মনোয়ার তাঁর নাম দিয়েছিলেন সুফিয়া কাঙ্গালিনী। সময়ের বিবর্তনে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
শেষ এই নামটিই আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন সুফিয়া। যদিও তাঁর জীবনের ভাঁজে ভাঁজে রয়ে গেছেন সেই বুচি, টুনি বা অনিতা হালদারেরা। রয়ে গেছে আখড়ায় বা বৈষ্ণবদের কাছ থেকে পাওয়া অনিতা ক্ষ্যাপী নামটি। মজমায় মজমায় গান গেয়ে বেড়ানো সুফিয়া এক আজন্ম বাউল। বয়সী এই মানুষটির সঙ্গী হিসেবে রয়ে গেছে শুধু দুটি জিনিস—গান আর পুষ্প। মায়ের মতো পুষ্পও গান করেন। কুমার নদে বস্তাবন্দী পড়ে থাকা সুফিয়া বা অনিতার পক্ষে একজীবনে সব বাধা ভাঙা সম্ভব না হলেও, সব লড়াইয়ে জয় পাওয়া সম্ভব না হলেও বহু মানুষকে তিনি লড়াইয়ের শক্তি জুগিয়েছেন, যেমন জুগিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময়।
তুহিন কান্তি দাস, ঢাকা

পাঁচ মাসের গর্ভবতী এক নারী বস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিলেন কুমার নদে। তাঁর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। তারপর স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে উদ্ধার ও বেঁচে ফেরা। একেবারে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা সেই নারী এরপর থানা-আদালত ঘুরে ফিরেছিলেন স্বামীর কাছে; কিন্তু থাকা হয়নি। গর্ভে থাকা সেই পাঁচ মাসের ভ্রূণ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুকে নিয়েই তাঁকে ঘুরতে হয়েছে আখড়া থেকে আখড়ায় এবং সেই সূত্রে গানের সঙ্গে গাঁটছড়া। মাঝে মুক্তিযুদ্ধ, ভারতে আশ্রয়, সেখানেও গানই হয়ে থাকল তাঁর একমাত্র সখা। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলো, বাংলাদেশ এগিয়ে গেল অনেকটাই, সেই নারীও ক্রমে এক আইকনে পরিণত হলেন, কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান থেকে ফেরা হলো না। তাঁর নাম কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
কাঙ্গালিনী সুফিয়া সেই নাম, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরানের বান্ধবের খোঁজে বুড়িয়ে যাওয়া এক জীবনের দীর্ঘশ্বাস। সাধক ওয়াহিদের লেখা এই গান সুফিয়ার কণ্ঠের জাদুতে বাংলা লোকসংগীতের এক অনন্য নিদর্শন হয়ে আছে। বাউলশিল্পী হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করা এই শিল্পীর ব্যক্তিজীবনের সংগ্রাম সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা? নজর পড়েছে কি কখনো শিল্পীর আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক অদম্য নারীর আত্মমগ্নতায়?
এই দেশে নারীর একজীবনে তাকে যে কত নাম নিতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। তারপরও কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নামের হদিস নিতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। এক দরিদ্র জেলে পরিবারের টুনি কিংবা অনিতা হালদার থেকে কালের পরিক্রমায় সুফিয়া খাতুন, সুফিয়া খাতুন থেকে বাউল সুফিয়া, আবার বাউল সুফিয়া থেকে কাঙ্গালিনী সুফিয়া হয়ে ওঠার সেই অজানা গল্পের প্রতিটি বাঁকে রয়েছে এক নারীর আজীবন ইস্পাতকঠিন লড়াইয়ের কাহিনি।
সুফিয়ার আসল নাম ছিল অনিতা হালদার বা টুনি হালদার, ডাকনাম বুচি। কমলা হালদার ও খোকন হালদার দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলের সর্বশেষ টুনি হালদার। শৈশব থেকেই জেলে পরিবারের আবহমান অভাব-অনটনে বড় হয়েছেন। সুফিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে ১৯৫৫-৫৬ সালে তাঁর জন্ম। তবে পাসপোর্টে তাঁর জন্মসাল লেখা ১৯৬২।
ছোটকাল থেকেই গানের প্রতি সহজাত টানের দরুন পাশের সোনাপুরের বৈষ্ণব আখড়ায় সুফিয়া ছুটে গেছেন বহুবার। সব সময় গুনগুন করে গাইতেন পল্লিগান। একবার শুনেই যেকোনো গান মনে রাখতে পারতেন অবিকল। কিন্তু এই সংগীতযাত্রায় ঠিকভাবে নামার আগেই বদলে গেল সব। ভাগ্যের ফেরে বারো-তেরো বছর বয়সে সুধীর হালদারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।
সুদর্শন সুধীর হালদার পাতলা গড়নের শ্যামলা অনিতাকে পছন্দ করতেন না। ফলে প্রায় সময়ই স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন অনিতা। পাঁচ মাসের গর্ভবতী অনিতাকে একবার অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর স্বামী বস্তাবন্দী করে ফেলে দেন কুমার নদে।
সেখান থেকে খোলা চুল দেখে মাছ ধরতে আসা জেলেরা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান অনিতাকে। খবর পেয়ে মা-বাবা এসে স্বামীর বাড়ি থেকে নিয়ে যান মেয়েকে। নির্যাতন মামলায় স্বামী কয়েক মাস কারাবাসের পর স্ত্রী-কন্যার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়ার শর্তে সমঝোতা হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান মেলেনি। ফলে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি পালিয়ে যান অনিতা। পরে মেয়ে পুষ্পকে রেখে মায়ের সহযোগিতায় বাবার হাত ধরে আশ্রয় নেন বৈষ্ণব আখড়ায়। ফেরা হলো গানের জগতে।
অনিতা বৈষ্ণব ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করে প্রায় পাঁচ বছর সোনাপুর আশ্রমে কাটান। সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় দেবেন ক্ষ্যাপা ও গৌর মোহন্তের। তাঁদের গুরু মেনে বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের পাঠ নেন তিনি।
এই আখড়াতেই অনিতা হালদারের নাম বদলে হয় অনিতা ক্ষ্যাপী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা বৈষ্ণব আখড়ায় হামলা চালালে দেশ ত্যাগ করে তিনি আশ্রয় নেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা ও সীমান্তবর্তী লালগোলায়। সেখানকার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে প্রায়ই তিনি গান শুনিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ দিতেন, প্রেরণা জোগাতেন। ক্যাম্পে গান গাইতে গাইতে পরিচয় হয় মুক্তিযোদ্ধা মান্দার ফকিরের সঙ্গে। দেশ স্বাধীন হলে অনিতা ক্ষ্যাপী মান্দার ফকিরের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চলে যান। সেখানে গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে নিজ নাম বদলে রাখেন সুফিয়া খাতুন।
গানের জগতে বিচরণের জন্য সুফিয়া খাতুন ভাঙ্গা থেকে আবার চলে আসেন তৎকালীন পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ও বর্তমান সিরাজগঞ্জ সদরে। এই সময়ে তিনি পালাগানের নতুন জগৎ গড়ে তোলেন। পাল্লা দিয়ে গান গাইতে গাইতে তিনি বাউল সুফিয়া হিসেবে পরিচিতি পান।
সমসাময়িক শিল্পীদের পরামর্শে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে ১৯৭৬ সালের দিকে ঢাকায় চলে আসেন বাউল সুফিয়া। সুফিয়ার ভাষায়, ‘একজন শিল্পী বলছিল ঢাকায় না গেলে নামকরা শিল্পী হওয়া যাবে না। তুমি ঢাকায় যাও, দেখবা একদিন নামকরা শিল্পী হইবা।’
সুফিয়া ঢাকার বাড্ডায় শাহাজাদপুরে এসে ওঠেন। হাইকোর্টের মাজারের মজমায় গান গাইতেন নিয়মিত। বিভিন্ন মজমায় লালন ও বাউলগান গেয়ে সংসার চালাতেন তিনি। সেই মজমাতেই একদিন কবি আসাদ চৌধুরী দেখা পান বাউল সুফিয়ার।
হাইকোর্ট মাজারের সামনে শিল্পী কানাইলাল শীলের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী এবং আরও কয়েকজন। সেখানে গান গাইতে আসেন বাউল সুফিয়া। অসাধারণ কণ্ঠে তিনি মুগ্ধ করেন সবাইকে। অনুষ্ঠান শেষে আসাদ চৌধুরী সুফিয়াকে বাংলা একাডেমিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এভাবেই বাংলা লোকসংগীতের কালজয়ী ফেরিওয়ালা কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে আবিষ্কার করেছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী।
আসাদ চৌধুরী সে সময় বাংলা একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বিটিভিতে ‘প্রচ্ছদ’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। সেই অনুষ্ঠানে এবং পরে বাংলা একাডেমিতে সুফিয়াকে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি। তৎকালীন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। তিনি কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের প্রধান হিসেবে সহকর্মীদের অনুরোধ করেন গ্রামবাংলার প্রতিভাবান কোনো শিল্পীর সন্ধান করতে।
সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে সহকর্মীরা মুস্তাফা মনোয়ারের কাছে নিয়ে আসেন সুফিয়াকে। সুফিয়ার অপূর্ব গায়কি, ভাব-আবেগ মুগ্ধ করে মুস্তাফা মনোয়ারকে। সুফিয়াকে গান গাইতে কোরিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু সুফিয়া তখন ছিলেন আর্থিকভাবে নাজেহাল। তাঁর এই করুণ চিত্র দেখেই মুস্তাফা মনোয়ার তাঁর নাম দিয়েছিলেন সুফিয়া কাঙ্গালিনী। সময়ের বিবর্তনে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
শেষ এই নামটিই আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন সুফিয়া। যদিও তাঁর জীবনের ভাঁজে ভাঁজে রয়ে গেছেন সেই বুচি, টুনি বা অনিতা হালদারেরা। রয়ে গেছে আখড়ায় বা বৈষ্ণবদের কাছ থেকে পাওয়া অনিতা ক্ষ্যাপী নামটি। মজমায় মজমায় গান গেয়ে বেড়ানো সুফিয়া এক আজন্ম বাউল। বয়সী এই মানুষটির সঙ্গী হিসেবে রয়ে গেছে শুধু দুটি জিনিস—গান আর পুষ্প। মায়ের মতো পুষ্পও গান করেন। কুমার নদে বস্তাবন্দী পড়ে থাকা সুফিয়া বা অনিতার পক্ষে একজীবনে সব বাধা ভাঙা সম্ভব না হলেও, সব লড়াইয়ে জয় পাওয়া সম্ভব না হলেও বহু মানুষকে তিনি লড়াইয়ের শক্তি জুগিয়েছেন, যেমন জুগিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময়।

পাঁচ মাসের গর্ভবতী এক নারী বস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিলেন কুমার নদে। তাঁর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। তারপর স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে উদ্ধার ও বেঁচে ফেরা। একেবারে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা সেই নারী এরপর থানা-আদালত ঘুরে ফিরেছিলেন স্বামীর কাছে; কিন্তু থাকা হয়নি। গর্ভে থাকা সেই পাঁচ মাসের ভ্রূণ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুকে নিয়েই তাঁকে ঘুরতে হয়েছে আখড়া থেকে আখড়ায় এবং সেই সূত্রে গানের সঙ্গে গাঁটছড়া। মাঝে মুক্তিযুদ্ধ, ভারতে আশ্রয়, সেখানেও গানই হয়ে থাকল তাঁর একমাত্র সখা। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলো, বাংলাদেশ এগিয়ে গেল অনেকটাই, সেই নারীও ক্রমে এক আইকনে পরিণত হলেন, কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান থেকে ফেরা হলো না। তাঁর নাম কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
কাঙ্গালিনী সুফিয়া সেই নাম, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরানের বান্ধবের খোঁজে বুড়িয়ে যাওয়া এক জীবনের দীর্ঘশ্বাস। সাধক ওয়াহিদের লেখা এই গান সুফিয়ার কণ্ঠের জাদুতে বাংলা লোকসংগীতের এক অনন্য নিদর্শন হয়ে আছে। বাউলশিল্পী হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করা এই শিল্পীর ব্যক্তিজীবনের সংগ্রাম সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা? নজর পড়েছে কি কখনো শিল্পীর আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক অদম্য নারীর আত্মমগ্নতায়?
এই দেশে নারীর একজীবনে তাকে যে কত নাম নিতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। তারপরও কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নামের হদিস নিতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। এক দরিদ্র জেলে পরিবারের টুনি কিংবা অনিতা হালদার থেকে কালের পরিক্রমায় সুফিয়া খাতুন, সুফিয়া খাতুন থেকে বাউল সুফিয়া, আবার বাউল সুফিয়া থেকে কাঙ্গালিনী সুফিয়া হয়ে ওঠার সেই অজানা গল্পের প্রতিটি বাঁকে রয়েছে এক নারীর আজীবন ইস্পাতকঠিন লড়াইয়ের কাহিনি।
সুফিয়ার আসল নাম ছিল অনিতা হালদার বা টুনি হালদার, ডাকনাম বুচি। কমলা হালদার ও খোকন হালদার দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলের সর্বশেষ টুনি হালদার। শৈশব থেকেই জেলে পরিবারের আবহমান অভাব-অনটনে বড় হয়েছেন। সুফিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে ১৯৫৫-৫৬ সালে তাঁর জন্ম। তবে পাসপোর্টে তাঁর জন্মসাল লেখা ১৯৬২।
ছোটকাল থেকেই গানের প্রতি সহজাত টানের দরুন পাশের সোনাপুরের বৈষ্ণব আখড়ায় সুফিয়া ছুটে গেছেন বহুবার। সব সময় গুনগুন করে গাইতেন পল্লিগান। একবার শুনেই যেকোনো গান মনে রাখতে পারতেন অবিকল। কিন্তু এই সংগীতযাত্রায় ঠিকভাবে নামার আগেই বদলে গেল সব। ভাগ্যের ফেরে বারো-তেরো বছর বয়সে সুধীর হালদারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।
সুদর্শন সুধীর হালদার পাতলা গড়নের শ্যামলা অনিতাকে পছন্দ করতেন না। ফলে প্রায় সময়ই স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন অনিতা। পাঁচ মাসের গর্ভবতী অনিতাকে একবার অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর স্বামী বস্তাবন্দী করে ফেলে দেন কুমার নদে।
সেখান থেকে খোলা চুল দেখে মাছ ধরতে আসা জেলেরা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান অনিতাকে। খবর পেয়ে মা-বাবা এসে স্বামীর বাড়ি থেকে নিয়ে যান মেয়েকে। নির্যাতন মামলায় স্বামী কয়েক মাস কারাবাসের পর স্ত্রী-কন্যার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়ার শর্তে সমঝোতা হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান মেলেনি। ফলে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি পালিয়ে যান অনিতা। পরে মেয়ে পুষ্পকে রেখে মায়ের সহযোগিতায় বাবার হাত ধরে আশ্রয় নেন বৈষ্ণব আখড়ায়। ফেরা হলো গানের জগতে।
অনিতা বৈষ্ণব ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করে প্রায় পাঁচ বছর সোনাপুর আশ্রমে কাটান। সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় দেবেন ক্ষ্যাপা ও গৌর মোহন্তের। তাঁদের গুরু মেনে বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের পাঠ নেন তিনি।
এই আখড়াতেই অনিতা হালদারের নাম বদলে হয় অনিতা ক্ষ্যাপী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা বৈষ্ণব আখড়ায় হামলা চালালে দেশ ত্যাগ করে তিনি আশ্রয় নেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা ও সীমান্তবর্তী লালগোলায়। সেখানকার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে প্রায়ই তিনি গান শুনিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ দিতেন, প্রেরণা জোগাতেন। ক্যাম্পে গান গাইতে গাইতে পরিচয় হয় মুক্তিযোদ্ধা মান্দার ফকিরের সঙ্গে। দেশ স্বাধীন হলে অনিতা ক্ষ্যাপী মান্দার ফকিরের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চলে যান। সেখানে গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে নিজ নাম বদলে রাখেন সুফিয়া খাতুন।
গানের জগতে বিচরণের জন্য সুফিয়া খাতুন ভাঙ্গা থেকে আবার চলে আসেন তৎকালীন পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ও বর্তমান সিরাজগঞ্জ সদরে। এই সময়ে তিনি পালাগানের নতুন জগৎ গড়ে তোলেন। পাল্লা দিয়ে গান গাইতে গাইতে তিনি বাউল সুফিয়া হিসেবে পরিচিতি পান।
সমসাময়িক শিল্পীদের পরামর্শে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে ১৯৭৬ সালের দিকে ঢাকায় চলে আসেন বাউল সুফিয়া। সুফিয়ার ভাষায়, ‘একজন শিল্পী বলছিল ঢাকায় না গেলে নামকরা শিল্পী হওয়া যাবে না। তুমি ঢাকায় যাও, দেখবা একদিন নামকরা শিল্পী হইবা।’
সুফিয়া ঢাকার বাড্ডায় শাহাজাদপুরে এসে ওঠেন। হাইকোর্টের মাজারের মজমায় গান গাইতেন নিয়মিত। বিভিন্ন মজমায় লালন ও বাউলগান গেয়ে সংসার চালাতেন তিনি। সেই মজমাতেই একদিন কবি আসাদ চৌধুরী দেখা পান বাউল সুফিয়ার।
হাইকোর্ট মাজারের সামনে শিল্পী কানাইলাল শীলের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী এবং আরও কয়েকজন। সেখানে গান গাইতে আসেন বাউল সুফিয়া। অসাধারণ কণ্ঠে তিনি মুগ্ধ করেন সবাইকে। অনুষ্ঠান শেষে আসাদ চৌধুরী সুফিয়াকে বাংলা একাডেমিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এভাবেই বাংলা লোকসংগীতের কালজয়ী ফেরিওয়ালা কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে আবিষ্কার করেছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী।
আসাদ চৌধুরী সে সময় বাংলা একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বিটিভিতে ‘প্রচ্ছদ’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। সেই অনুষ্ঠানে এবং পরে বাংলা একাডেমিতে সুফিয়াকে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি। তৎকালীন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। তিনি কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের প্রধান হিসেবে সহকর্মীদের অনুরোধ করেন গ্রামবাংলার প্রতিভাবান কোনো শিল্পীর সন্ধান করতে।
সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে সহকর্মীরা মুস্তাফা মনোয়ারের কাছে নিয়ে আসেন সুফিয়াকে। সুফিয়ার অপূর্ব গায়কি, ভাব-আবেগ মুগ্ধ করে মুস্তাফা মনোয়ারকে। সুফিয়াকে গান গাইতে কোরিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু সুফিয়া তখন ছিলেন আর্থিকভাবে নাজেহাল। তাঁর এই করুণ চিত্র দেখেই মুস্তাফা মনোয়ার তাঁর নাম দিয়েছিলেন সুফিয়া কাঙ্গালিনী। সময়ের বিবর্তনে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
শেষ এই নামটিই আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন সুফিয়া। যদিও তাঁর জীবনের ভাঁজে ভাঁজে রয়ে গেছেন সেই বুচি, টুনি বা অনিতা হালদারেরা। রয়ে গেছে আখড়ায় বা বৈষ্ণবদের কাছ থেকে পাওয়া অনিতা ক্ষ্যাপী নামটি। মজমায় মজমায় গান গেয়ে বেড়ানো সুফিয়া এক আজন্ম বাউল। বয়সী এই মানুষটির সঙ্গী হিসেবে রয়ে গেছে শুধু দুটি জিনিস—গান আর পুষ্প। মায়ের মতো পুষ্পও গান করেন। কুমার নদে বস্তাবন্দী পড়ে থাকা সুফিয়া বা অনিতার পক্ষে একজীবনে সব বাধা ভাঙা সম্ভব না হলেও, সব লড়াইয়ে জয় পাওয়া সম্ভব না হলেও বহু মানুষকে তিনি লড়াইয়ের শক্তি জুগিয়েছেন, যেমন জুগিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময়।

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
২ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৭ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

পাঁচ মাসের গর্ভবতী এক নারী বস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিলেন কুমার নদে। শরীরে তাঁর নির্যাতনের চিহ্ন। তারপর স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে উদ্ধার ও বেঁচে ফেরা। একেবারে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা সেই নারী জীবনের নানা ধাপে লড়াই করতে করতে পরিণত হন এক আইকনে। তিনি কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
০৮ মার্চ ২০২২
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৭ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৮ দিন আগেকুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।

পাঁচ মাসের গর্ভবতী এক নারী বস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিলেন কুমার নদে। শরীরে তাঁর নির্যাতনের চিহ্ন। তারপর স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে উদ্ধার ও বেঁচে ফেরা। একেবারে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা সেই নারী জীবনের নানা ধাপে লড়াই করতে করতে পরিণত হন এক আইকনে। তিনি কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
০৮ মার্চ ২০২২
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
২ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৭ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

পাঁচ মাসের গর্ভবতী এক নারী বস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিলেন কুমার নদে। শরীরে তাঁর নির্যাতনের চিহ্ন। তারপর স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে উদ্ধার ও বেঁচে ফেরা। একেবারে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা সেই নারী জীবনের নানা ধাপে লড়াই করতে করতে পরিণত হন এক আইকনে। তিনি কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
০৮ মার্চ ২০২২
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
২ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

পাঁচ মাসের গর্ভবতী এক নারী বস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিলেন কুমার নদে। শরীরে তাঁর নির্যাতনের চিহ্ন। তারপর স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে উদ্ধার ও বেঁচে ফেরা। একেবারে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা সেই নারী জীবনের নানা ধাপে লড়াই করতে করতে পরিণত হন এক আইকনে। তিনি কাঙ্গালিনী সুফিয়া।
০৮ মার্চ ২০২২
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
২ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৭ দিন আগে