রাকিব হাসান, ঢাকা
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) ছাত্র ছিলাম; কাজ করছিলাম দৈনিক আমাদের সময়ে সহসম্পাদক হিসেবে। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার একটু আগে বা পরে হবে। সেদিন সকালের ক্লাসটি আগেই শেষ হয়েছিল নাকি হয়নি—এখন ঠিক মনে করতে পারছি না। বন্ধুরাসহ ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। কে যেন এসে বলল বিডিআর সদর দপ্তরের ভেতরে গন্ডগোল হচ্ছে, দ্রুত নিচে নামলাম।
ধানমন্ডি ৪/এ সড়ক থেকে বিডিআর সদর দপ্তরের ৪ নম্বর গেটের মুখে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের দিকে একটু আগাই। এক রিকশাচালককে ওই দিক থেকে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছে মামা?’ রিকশাচালক বললেন, র্যাব আর বিডিআর গোলাগুলি হচ্ছে। বিডিআর সদর দপ্তরের মুখে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াতেই পাশ থেকে আরও একজন বলল, ভেতরে বিডিআর ও সেনাবাহিনীর গোলাগুলি...। তবে কেন, কী কারণে কেউ কিছু বলতে পারছে না।
ভেতর থেকে কালো ধোঁয়া কুণ্ডলি পাকিয়ে ওপরে উঠছে; বিডিআর সদরের আকাশ কালো হয়ে আছে। একটু পরে দেখলাম সিটি কলেজের দিক থেকে র্যাবের একটা টহল গাড়ি বিডিআর ৪ নম্বর গেটের দিকে আসছে (তৎকালীন রাইফেলস স্কয়ারের পাশের গেট)। তৎক্ষণাৎ বিডিআরের ভেতর থেকে এক পশলা গুলি ছুটে গেল র্যাবের গাড়ি লক্ষ্য করে। র্যাবের গাড়িটি ফোঁস করে বাঁক নিয়ে উল্টো ঘুরে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল।
পকেট থেকে নকিয়া ফোনটি বের করে দীপঙ্কর দাকে ফোন করলাম। দীপঙ্কর লাহিড়ী তখন আমাদের সময়ের ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক ছিলেন। দাদাকে বললাম, দাদা, বিডিআরে গোলাগুলি হচ্ছে, জানেন কিছু? তাঁরা তখন বাংলামোটরের অফিসে রিপোর্টারদের মিটিংয়ে। তিনি বললেন, থাকেন ওখানে, আমাদের ক্যামেরাম্যান (রাজ ভাই) আর রিপোর্টার রওনা হয়েছেন। পরের ফোনটি দিলাম কলেজজীবনের এক বড় ভাইকে। তিনি তখন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে দায়িত্বরত। কিছু জানেন কি না, জিজ্ঞেস করতেই বললেন, এমন কিছু শুনিনি, দাঁড়া খোঁজ নিয়ে দেখি। একটু পর তাঁর ফিরতি ফোন–বেশ উত্তেজিত গলায় বললেন, স্যাররা কেউ মুখ খুলছে না। বাসায় চলে যা, পরিস্থিতি ভালো না।
ততক্ষণে এসএসএফের দুটি গাড়ি চাকার কর্কশ আওয়াজ তুলে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াল। আবারও একই কাণ্ড—বিডিআরের ভেতর থেকে ঠা-ঠা করে গুলি। এবার লক্ষ্য এসএসএফের গাড়ি। এসএসএফ সদস্যরা খানিকটা নিরাপদ আশ্রয়ে দাঁড়ালেন। কিন্তু একটা গুলি এসে লাগল এক উৎসুক পথশিশুর আঙুলে। লোকজন ওকে ধরাধরি করে ইউল্যাবের পাশে একটা হাসপাতালে নিয়ে গেল। সেদিন সম্ভবত প্রথম কোনো সংঘাতে সাধারণ মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা দেখলাম। এদিকে আমি কী মনে করে যেন মোবাইল ফোন দিয়ে এসএসএফের ছবি তুললাম। তাঁরা তখন মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে দিচ্ছেন। আমাকে ছবি তুলতে দেখে এসে জামার কলার চেপে ধরল। পরিচয় দেওয়ার পর ছবি মুছে ফেলতে বললেন। চ্যাংড়া সাংবাদিক, তর্কে না গিয়ে ছবি মুছে ফেললাম।
ঘড়ির কাঁটায় সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ক্যামেরা চোখে পড়ল। বুম, ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় আধশোয়া হয়ে তারা ফুটেজ নিতে ব্যস্ত। ততক্ষণে পুলিশের কয়েকটা গাড়িও নজরে পড়ল, রাইফেলস স্কয়ারের সামনে দেখলাম আর জিগাতলার উল্টো পাশে। তারা হ্যান্ডমাইকে সাধারণ মানুষকে সরে যেতে বলছে। আমি ততক্ষণে উৎসুক জনতার ভিড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। মানুষ যে যার মতো করে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছে।
সকাল সাড়ে ১০টা বা ১১টা হবে। আমার সেই বড় ভাই কুমিল্লা থেকে ফোন করে আবার বললেন, ‘পরিস্থিতি ভালো না, বাসায় চলে যা।’ বুঝলাম বড় কিছু ঘটে গেছে। কিন্তু আসলে কী ঘটেছে জানি না। ততক্ষণে ইউল্যাবের গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত ক্লাস হবে না বলে একটা ঘোষণা দেওয়া হয়ে গেছে।
বেলা বেড়ে গেছে, বিডিআরের ভেতর থেকে এলোপাতাড়ি গুলির শব্দ শুনছি। মানুষ এখন আর জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে নেই। সবাই পেছনে ৪/এ-এর দিকে ভিড় করেছে। পুলিশ, এসএসএফ, র্যাব সবাই নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে। তাদের মুখ দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল ঘটনা বেশ বড় এবং তারা কী করবে এ বিষয়ে কারো কোনো ধারণা নেই।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) ছাত্র ছিলাম; কাজ করছিলাম দৈনিক আমাদের সময়ে সহসম্পাদক হিসেবে। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার একটু আগে বা পরে হবে। সেদিন সকালের ক্লাসটি আগেই শেষ হয়েছিল নাকি হয়নি—এখন ঠিক মনে করতে পারছি না। বন্ধুরাসহ ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। কে যেন এসে বলল বিডিআর সদর দপ্তরের ভেতরে গন্ডগোল হচ্ছে, দ্রুত নিচে নামলাম।
ধানমন্ডি ৪/এ সড়ক থেকে বিডিআর সদর দপ্তরের ৪ নম্বর গেটের মুখে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের দিকে একটু আগাই। এক রিকশাচালককে ওই দিক থেকে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছে মামা?’ রিকশাচালক বললেন, র্যাব আর বিডিআর গোলাগুলি হচ্ছে। বিডিআর সদর দপ্তরের মুখে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াতেই পাশ থেকে আরও একজন বলল, ভেতরে বিডিআর ও সেনাবাহিনীর গোলাগুলি...। তবে কেন, কী কারণে কেউ কিছু বলতে পারছে না।
ভেতর থেকে কালো ধোঁয়া কুণ্ডলি পাকিয়ে ওপরে উঠছে; বিডিআর সদরের আকাশ কালো হয়ে আছে। একটু পরে দেখলাম সিটি কলেজের দিক থেকে র্যাবের একটা টহল গাড়ি বিডিআর ৪ নম্বর গেটের দিকে আসছে (তৎকালীন রাইফেলস স্কয়ারের পাশের গেট)। তৎক্ষণাৎ বিডিআরের ভেতর থেকে এক পশলা গুলি ছুটে গেল র্যাবের গাড়ি লক্ষ্য করে। র্যাবের গাড়িটি ফোঁস করে বাঁক নিয়ে উল্টো ঘুরে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল।
পকেট থেকে নকিয়া ফোনটি বের করে দীপঙ্কর দাকে ফোন করলাম। দীপঙ্কর লাহিড়ী তখন আমাদের সময়ের ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক ছিলেন। দাদাকে বললাম, দাদা, বিডিআরে গোলাগুলি হচ্ছে, জানেন কিছু? তাঁরা তখন বাংলামোটরের অফিসে রিপোর্টারদের মিটিংয়ে। তিনি বললেন, থাকেন ওখানে, আমাদের ক্যামেরাম্যান (রাজ ভাই) আর রিপোর্টার রওনা হয়েছেন। পরের ফোনটি দিলাম কলেজজীবনের এক বড় ভাইকে। তিনি তখন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে দায়িত্বরত। কিছু জানেন কি না, জিজ্ঞেস করতেই বললেন, এমন কিছু শুনিনি, দাঁড়া খোঁজ নিয়ে দেখি। একটু পর তাঁর ফিরতি ফোন–বেশ উত্তেজিত গলায় বললেন, স্যাররা কেউ মুখ খুলছে না। বাসায় চলে যা, পরিস্থিতি ভালো না।
ততক্ষণে এসএসএফের দুটি গাড়ি চাকার কর্কশ আওয়াজ তুলে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াল। আবারও একই কাণ্ড—বিডিআরের ভেতর থেকে ঠা-ঠা করে গুলি। এবার লক্ষ্য এসএসএফের গাড়ি। এসএসএফ সদস্যরা খানিকটা নিরাপদ আশ্রয়ে দাঁড়ালেন। কিন্তু একটা গুলি এসে লাগল এক উৎসুক পথশিশুর আঙুলে। লোকজন ওকে ধরাধরি করে ইউল্যাবের পাশে একটা হাসপাতালে নিয়ে গেল। সেদিন সম্ভবত প্রথম কোনো সংঘাতে সাধারণ মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা দেখলাম। এদিকে আমি কী মনে করে যেন মোবাইল ফোন দিয়ে এসএসএফের ছবি তুললাম। তাঁরা তখন মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে দিচ্ছেন। আমাকে ছবি তুলতে দেখে এসে জামার কলার চেপে ধরল। পরিচয় দেওয়ার পর ছবি মুছে ফেলতে বললেন। চ্যাংড়া সাংবাদিক, তর্কে না গিয়ে ছবি মুছে ফেললাম।
ঘড়ির কাঁটায় সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ক্যামেরা চোখে পড়ল। বুম, ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় আধশোয়া হয়ে তারা ফুটেজ নিতে ব্যস্ত। ততক্ষণে পুলিশের কয়েকটা গাড়িও নজরে পড়ল, রাইফেলস স্কয়ারের সামনে দেখলাম আর জিগাতলার উল্টো পাশে। তারা হ্যান্ডমাইকে সাধারণ মানুষকে সরে যেতে বলছে। আমি ততক্ষণে উৎসুক জনতার ভিড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। মানুষ যে যার মতো করে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছে।
সকাল সাড়ে ১০টা বা ১১টা হবে। আমার সেই বড় ভাই কুমিল্লা থেকে ফোন করে আবার বললেন, ‘পরিস্থিতি ভালো না, বাসায় চলে যা।’ বুঝলাম বড় কিছু ঘটে গেছে। কিন্তু আসলে কী ঘটেছে জানি না। ততক্ষণে ইউল্যাবের গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত ক্লাস হবে না বলে একটা ঘোষণা দেওয়া হয়ে গেছে।
বেলা বেড়ে গেছে, বিডিআরের ভেতর থেকে এলোপাতাড়ি গুলির শব্দ শুনছি। মানুষ এখন আর জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে নেই। সবাই পেছনে ৪/এ-এর দিকে ভিড় করেছে। পুলিশ, এসএসএফ, র্যাব সবাই নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে। তাদের মুখ দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল ঘটনা বেশ বড় এবং তারা কী করবে এ বিষয়ে কারো কোনো ধারণা নেই।
আমরা অনেক নীতিনৈতিকতার বকবকানির সমাজ, রিয়্যাকশনারি সমাজ। আর গুরুত্বপূর্ণ কথা এই যে, আমি শ্লীলতার রাজনীতির বাইরে মাঠের লড়াই নিয়ে বলতে চাইছি। এখানে গল্পে-কাহিনিতে ক্ষমতাহীন ও ক্ষমতাশালী মানুষের মধ্যেকার লড়াইটা পুরো অস্তিত্ববাদী। সেটা এই অর্থে যে, এখানে ক্ষমতাহীন মানুষ তার অস্তিত্বের ফিলোসফিক্যাল...
৬ দিন আগে১৯৮০ সালে তাইওয়ান সরকার ভাবল দেশটির একটা জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘর থাকা উচিত। যেই ভাবা সেই কাজ। ঘোষণাও দেওয়া হয়ে গেল—জাদুঘর হবে। ঘোষণা দিয়ে আর তো বসে থাকা যায় না। পরের বছরই ভবনের নকশার কাজ শুরু হয়। ১৯৮৬ সালে নর্থ জেলার তাইচুং শহরে নতুন বছরের প্রথম দিনই উদ্বোধন হয় ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল সায়েন্স।
৭ দিন আগে১৮২৫ সালে রাশিয়ার সম্রাট প্রথম পাভেল তাঁর পুত্র গ্র্যান্ড ডিউক মিখাইল পাভলোভিচ ও তাঁর নববধূ এলেনা পাভলোভনাকে বিয়ের উপহার হিসেবে সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করে দেন। প্রথমে ভবনটির নাম ছিল মিখাইলোভস্কি প্রাসাদ। যদিও মৃত্যুর পর এটি হয়ে যায় তাঁর স্ত্রীর নামে—দ্য প্যালেস অব দ্য গ্র্যান্ড...
৮ দিন আগেযখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের গদিতে ছিলেন হ্যারি এস ট্রুম্যান, তখন ১৯৪৬ সালে তাঁর এক স্বাক্ষরে কংগ্রেস আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় ন্যাশনাল এয়ার মিউজিয়াম। ১৮৭৬ সালে ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর কিছু নিদর্শন এই জাদুঘরের নিদর্শনের তালিকাভুক্ত হয়। মূলত চায়নিজ ইম্পেরিয়াল কমিশন কিছু...
১০ দিন আগে