রহমান মৃধা
জন্মের পর বেড়ে ওঠাটা সঠিকভাবে না হয়, পরে কি তা ঠিক করা সম্ভব? এর উত্তর পেতে জানতে হবে সঠিকভাবে গড়ে না ওঠা বলতে কী বোঝায়?
কেউ দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠে; তার গড়ে ওঠার মধ্যে থাকে দারিদ্র্যের কারণে সৃষ্ট নানা বাস্তবতার ছাপ। কেউ-বা বাবা-মা ছাড়া গড়ে ওঠে, কেউ অসৎ বা দুর্নীতির মধ্যে গড় ওঠে, আবার অনেকে সুন্দর পরিবেশে গড়ে ওঠে। হতে পারে কারও জীবনে সুশিক্ষার অভাব আছে। আবার সবকিছুর মিশ্রণেও গড়ে ওঠে কেউ কেউ। মোটাদাগে জীবনের শুরুতে কম-বেশি সবকিছুতেই ভালো-মন্দের মিশ্রণ থাকে। জীবন ফুলশয্যা নয়। তাই এই সঠিকভাবে গড়ে ওঠার কোনো সুনির্দিষ্ট ধরন নির্ধারণ খুবই কঠিন। তবে একটি উদাহরণ নিয়ে কথাটি এগোনো যেতে পারে।
আজ বাংলাদেশ নয় কথা হবে একজন ইরানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিককে নিয়ে। ধর্মরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ ইরানের রাজনীতির একেবারে মূলে রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরের সংবিধান এবং ১৯৮৯ সালে এর সংশোধনীতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্রমের সংজ্ঞা রয়েছে। এতে সরাসরি বলা আছে, ইসলামের শিয়া মতাবলম্বীদের দ্বাদশ ইমাম মাহদির ধারাই হবে ইরানের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। এটি এবং সঙ্গে আরও নানা কারণে ইরান ছেড়ে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার ঝোঁক আছে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে।
যে ইরানির কথা বলা হচ্ছে, তাঁর নাম আরদালান শেখারাবি; জন্ম ১৯৭৮ সালে নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। বেড়ে ওঠেন ইরানে। ১৯৮৯ সালে মায়ের সঙ্গে ইরান ছেড়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন সুইডেনে। শরণার্থী হিসেবে অনুমোদন না পাওয়ায় সুইডেনে একরকম পলাতক জীবনই যাপন করতে হয়েছিল তাঁকে। পরে মানবিক কারণে সুইডিশ অভিবাসন বিভাগ তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন দেয়।
শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ছাত্ররাজনীতিতে আরদালান জড়িয়ে পড়েন। শেষে সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও হন। সে সময় তিনি নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যেমন, সংগঠনের যে টাকা ব্যয় হওয়ার কথা ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্টে, সে টাকা নিজের নির্বাচনী প্রচারে ব্যয় করেন। এমনকি ভোট চুরি করে সে নির্বাচনে জয়ী হতে চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সে জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়। এর জেরে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ থেকে ২০০৫ সালে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আবার একই পদে তিনি ফিরে আসেন ২০১৩ সালে।
শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার পদে নিযুক্ত হন আরদালান। তাঁর ক্ষমতাকালে বহু শরণার্থীকে বাধ্য হয়ে সুইডেন ছাড়তে হয়েছে। বর্তমান তিনি সুইডেনের সোশ্যাল ইনস্যুরেন্স মিনিস্টার। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন আইনজীবী, বিবাহিত এবং তিন সন্তানের বাবা। তাঁর স্ত্রী একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
সামাজিক বিমামন্ত্রী হিসেবে আরদালান শেখারাবির নতুন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যারা সারা জীবন কাজ করে কর দিয়েছেন, তাঁরা যেন যারা কর্মহীন ছিল এবং কর দেয়নি, তাঁদের চেয়ে বেশি পেনশন পান, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। বলা প্রয়োজন, রাষ্ট্রীয় এই সেবা সাধারণত অভিবাসীরাই বেশি নেন।
আরদালান তাঁর নতুন চ্যালেঞ্জে হয়তো জয়ী হবেন, হয়তো হবেন না। আবার হয়তো কিছুটা এগোবেন, কিছুটা পিছিয়ে থাকবেন। পুরোটাই নির্ভর করছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তাঁর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কার্যকারিতার ওপর। তবে আমার আলোচনার বিষয় সেটি নয়। আমার মনোযোগ সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে বহু শরণার্থীর সুইডেন ছাড়তে বাধ্য হওয়ার বিষয়টিতে। কারণ, আরদালান নিজেই এক সময় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন সুইডেনে। চাওয়ামাত্র পাননি। অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। এমনকি শরণার্থী হিসেবে সুইডেনে তাঁর অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ হয়েছিল। শেষে মানবিক কারণে তিনি সে দেশে থাকার অনুমতি পান । অথচ নীতিনির্ধারণী দায়িত্বে আসার পর তিনিই শত শত বাবা-মা, পরিবার হারা মানুষকে সুইডেন থেকে বের করে দেন। তাঁর গল্প আসলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা একজন মানুষেরই গল্প।
যে বিষয়টি আমাকে বেশি অবাক করেছে, সেটা হলো সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকেই বেছে নিয়েছে কাজটি করতে। আরদালান শেখারাবি নিজে শরণার্থী হয়ে অন্য শরণার্থীদের সুইডেন থেকে বের করতে দ্বিধা করেননি।
কয়েক দিন আগে সুইডিশ টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরদালানকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি নিজে জানো কী কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যে তোমার জীবন কেটেছিল, যখন তোমার সুইডেনে থাকার কোনো বৈধতা ছিল না। সেই তুমি কীভাবে পারলে সেই একই কাজ করতে?’ আরদালান শেখারাবি উত্তর ছিল, তিনি যা করেছেন, তা সুইডেনের মঙ্গলের জন্যই করেছেন।
তাঁর সাক্ষাৎকার দেখে আমার মনে হলো পৃথিবীতে এমন মানুষের অভাব নেই, যারা ভুলে যায় পরোপকারের কথা, ভুলে যায় অতীত। তাই তো পৃথিবীর অবস্থা এমন! একই সঙ্গে ভাবনায় ঢুকেছে রাজনীতি সত্যিই বড় নিষ্ঠুর এক দুনিয়া, যেখানে নেই কোনো নৈতিকতা; আছে শুধু স্বার্থপরতা। আর একবার সে দুনিয়ায় ঘাঁটি গাড়লে লোকেরা নিজের স্বার্থে সবকিছু করতে পারে। সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকে দিয়ে যে কাজগুলো করাচ্ছে, তাতে মনে হলো—তারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলছে।
জীবনে অনেক কিছু ফিরে পাওয়া সম্ভব। যেমন অর্থ গেলে অর্থ পাওয়া যায়, স্বাস্থ্য গেলে স্বাস্থ্য ফিরে পাওয়া যায়, চরিত্র গেলে বা দুর্নীতিগ্রস্ত হলেও পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু যদি কেউ স্বার্থপর হয়, তবে সম্ভবত আর ফিরে আসার পথ থাকে না। তারা কখনো ফেরে না।
এ লেখায় আরদালান শেখারাবির ব্যক্তিক জীবন না টানলেও হয়তো হতো। কিন্তু ওই যে শুরুতেই বলেছি, জীবনের শুরুতে গড়ে ওঠার পর্যায়টাই ঠিক করে দেয় মানুষের গতিপথ কোনদিকে হবে। আরদালানের বর্তমান কাজের ফিরিস্তি দিয়ে শুধু নিন্দা করলে তাই আর চুকেবুকে যায় না। ঠিকঠাক বুঝতে হলে তাঁর অতীতটা জানা জরুরি। আমি মূলত তাঁর চরিত্র, তাঁর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জ এবং এসব মিলে তাঁর মানসিক গড়নটির দিকে নজর দিতে চাই। একজনকে স্বার্থপর বা এমন কিছু তো সহজেই বলে দেওয়া যায়। কিন্তু কেন এবং কীভাবে একজন মানুষ এমন হয়—সেদিকেও তো নজর দেওয়া দরকার।
পাঠকেরা মনে করতেই পারেন ধর্ম ও রাজনীতির নামে সৃষ্ট সামাজিক প্রতিষ্ঠান, এগুলোর ভেতরে থাকা নানা বিশৃঙ্খলা এবং ক্ষমতার লোভে নেতাদের দ্বারা সৃষ্ট নিষ্ঠুর কাঠামো ও অবিচারের সংস্কৃতিরই প্রতিফলন আরদালান শেখারাবি। এটা কিছুটা সত্য। আরদালান শেখারাবিকে অনেকটা সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে। তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে একটু থাকার নিশ্চয়তার জন্য। এই পরিস্থিতি যেকোনো মানুষকেই ভেতর থেকে কঠোর করে তোলে। তাঁর কাছে আর কাউকেই যদি আপন মনে না হয়, তবে তা তাঁর দোষ বলা যায় না। আর এমনই এক মানসিক অবস্থায় থাকা এক লোককেই সুইডিশ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সরকার ব্যবহার করেছে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ, তারা জানে আরদালান চাইবেন সুইডিশ রাষ্ট্রের কাছে নিজেকে সঠিক মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে। তাঁর যদি ব্যক্তিগত খুঁত থাকে, তবে এই প্রমাণের চেষ্টা আরও বেশি থাকবে। দুর্নীতির অভিযোগে নিজের সংগঠন থেকে বহিষ্কার হওয়ার আরদালানের সেই খুঁত ছিল। ফলে তাঁকে অনেক বেশি নিজেকে প্রমাণ করতে হচ্ছে। আর এটিই সুইডিশ রাষ্ট্রকাঠামোকে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, আরদালান শরণার্থী-অভিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি অনেক বেশি নিষ্ঠুর হবেন। তিনি তা হয়েছেনও। নিজের ভিতটিকে টিকিয়ে রাখতে ও আরও মজবুত করতে তিনি স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন। নিষ্ঠুর হচ্ছেন। এমন স্বার্থপর মানুষের নিষ্ঠুরতার গল্প গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে।
লেখক: সুইডেনপ্রবাসী, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার
জন্মের পর বেড়ে ওঠাটা সঠিকভাবে না হয়, পরে কি তা ঠিক করা সম্ভব? এর উত্তর পেতে জানতে হবে সঠিকভাবে গড়ে না ওঠা বলতে কী বোঝায়?
কেউ দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠে; তার গড়ে ওঠার মধ্যে থাকে দারিদ্র্যের কারণে সৃষ্ট নানা বাস্তবতার ছাপ। কেউ-বা বাবা-মা ছাড়া গড়ে ওঠে, কেউ অসৎ বা দুর্নীতির মধ্যে গড় ওঠে, আবার অনেকে সুন্দর পরিবেশে গড়ে ওঠে। হতে পারে কারও জীবনে সুশিক্ষার অভাব আছে। আবার সবকিছুর মিশ্রণেও গড়ে ওঠে কেউ কেউ। মোটাদাগে জীবনের শুরুতে কম-বেশি সবকিছুতেই ভালো-মন্দের মিশ্রণ থাকে। জীবন ফুলশয্যা নয়। তাই এই সঠিকভাবে গড়ে ওঠার কোনো সুনির্দিষ্ট ধরন নির্ধারণ খুবই কঠিন। তবে একটি উদাহরণ নিয়ে কথাটি এগোনো যেতে পারে।
আজ বাংলাদেশ নয় কথা হবে একজন ইরানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিককে নিয়ে। ধর্মরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ ইরানের রাজনীতির একেবারে মূলে রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরের সংবিধান এবং ১৯৮৯ সালে এর সংশোধনীতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্রমের সংজ্ঞা রয়েছে। এতে সরাসরি বলা আছে, ইসলামের শিয়া মতাবলম্বীদের দ্বাদশ ইমাম মাহদির ধারাই হবে ইরানের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। এটি এবং সঙ্গে আরও নানা কারণে ইরান ছেড়ে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার ঝোঁক আছে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে।
যে ইরানির কথা বলা হচ্ছে, তাঁর নাম আরদালান শেখারাবি; জন্ম ১৯৭৮ সালে নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। বেড়ে ওঠেন ইরানে। ১৯৮৯ সালে মায়ের সঙ্গে ইরান ছেড়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন সুইডেনে। শরণার্থী হিসেবে অনুমোদন না পাওয়ায় সুইডেনে একরকম পলাতক জীবনই যাপন করতে হয়েছিল তাঁকে। পরে মানবিক কারণে সুইডিশ অভিবাসন বিভাগ তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন দেয়।
শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ছাত্ররাজনীতিতে আরদালান জড়িয়ে পড়েন। শেষে সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও হন। সে সময় তিনি নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যেমন, সংগঠনের যে টাকা ব্যয় হওয়ার কথা ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্টে, সে টাকা নিজের নির্বাচনী প্রচারে ব্যয় করেন। এমনকি ভোট চুরি করে সে নির্বাচনে জয়ী হতে চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সে জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়। এর জেরে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ থেকে ২০০৫ সালে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আবার একই পদে তিনি ফিরে আসেন ২০১৩ সালে।
শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার পদে নিযুক্ত হন আরদালান। তাঁর ক্ষমতাকালে বহু শরণার্থীকে বাধ্য হয়ে সুইডেন ছাড়তে হয়েছে। বর্তমান তিনি সুইডেনের সোশ্যাল ইনস্যুরেন্স মিনিস্টার। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন আইনজীবী, বিবাহিত এবং তিন সন্তানের বাবা। তাঁর স্ত্রী একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
সামাজিক বিমামন্ত্রী হিসেবে আরদালান শেখারাবির নতুন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যারা সারা জীবন কাজ করে কর দিয়েছেন, তাঁরা যেন যারা কর্মহীন ছিল এবং কর দেয়নি, তাঁদের চেয়ে বেশি পেনশন পান, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। বলা প্রয়োজন, রাষ্ট্রীয় এই সেবা সাধারণত অভিবাসীরাই বেশি নেন।
আরদালান তাঁর নতুন চ্যালেঞ্জে হয়তো জয়ী হবেন, হয়তো হবেন না। আবার হয়তো কিছুটা এগোবেন, কিছুটা পিছিয়ে থাকবেন। পুরোটাই নির্ভর করছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তাঁর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কার্যকারিতার ওপর। তবে আমার আলোচনার বিষয় সেটি নয়। আমার মনোযোগ সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে বহু শরণার্থীর সুইডেন ছাড়তে বাধ্য হওয়ার বিষয়টিতে। কারণ, আরদালান নিজেই এক সময় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন সুইডেনে। চাওয়ামাত্র পাননি। অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। এমনকি শরণার্থী হিসেবে সুইডেনে তাঁর অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ হয়েছিল। শেষে মানবিক কারণে তিনি সে দেশে থাকার অনুমতি পান । অথচ নীতিনির্ধারণী দায়িত্বে আসার পর তিনিই শত শত বাবা-মা, পরিবার হারা মানুষকে সুইডেন থেকে বের করে দেন। তাঁর গল্প আসলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা একজন মানুষেরই গল্প।
যে বিষয়টি আমাকে বেশি অবাক করেছে, সেটা হলো সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকেই বেছে নিয়েছে কাজটি করতে। আরদালান শেখারাবি নিজে শরণার্থী হয়ে অন্য শরণার্থীদের সুইডেন থেকে বের করতে দ্বিধা করেননি।
কয়েক দিন আগে সুইডিশ টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরদালানকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি নিজে জানো কী কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যে তোমার জীবন কেটেছিল, যখন তোমার সুইডেনে থাকার কোনো বৈধতা ছিল না। সেই তুমি কীভাবে পারলে সেই একই কাজ করতে?’ আরদালান শেখারাবি উত্তর ছিল, তিনি যা করেছেন, তা সুইডেনের মঙ্গলের জন্যই করেছেন।
তাঁর সাক্ষাৎকার দেখে আমার মনে হলো পৃথিবীতে এমন মানুষের অভাব নেই, যারা ভুলে যায় পরোপকারের কথা, ভুলে যায় অতীত। তাই তো পৃথিবীর অবস্থা এমন! একই সঙ্গে ভাবনায় ঢুকেছে রাজনীতি সত্যিই বড় নিষ্ঠুর এক দুনিয়া, যেখানে নেই কোনো নৈতিকতা; আছে শুধু স্বার্থপরতা। আর একবার সে দুনিয়ায় ঘাঁটি গাড়লে লোকেরা নিজের স্বার্থে সবকিছু করতে পারে। সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকে দিয়ে যে কাজগুলো করাচ্ছে, তাতে মনে হলো—তারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলছে।
জীবনে অনেক কিছু ফিরে পাওয়া সম্ভব। যেমন অর্থ গেলে অর্থ পাওয়া যায়, স্বাস্থ্য গেলে স্বাস্থ্য ফিরে পাওয়া যায়, চরিত্র গেলে বা দুর্নীতিগ্রস্ত হলেও পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু যদি কেউ স্বার্থপর হয়, তবে সম্ভবত আর ফিরে আসার পথ থাকে না। তারা কখনো ফেরে না।
এ লেখায় আরদালান শেখারাবির ব্যক্তিক জীবন না টানলেও হয়তো হতো। কিন্তু ওই যে শুরুতেই বলেছি, জীবনের শুরুতে গড়ে ওঠার পর্যায়টাই ঠিক করে দেয় মানুষের গতিপথ কোনদিকে হবে। আরদালানের বর্তমান কাজের ফিরিস্তি দিয়ে শুধু নিন্দা করলে তাই আর চুকেবুকে যায় না। ঠিকঠাক বুঝতে হলে তাঁর অতীতটা জানা জরুরি। আমি মূলত তাঁর চরিত্র, তাঁর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জ এবং এসব মিলে তাঁর মানসিক গড়নটির দিকে নজর দিতে চাই। একজনকে স্বার্থপর বা এমন কিছু তো সহজেই বলে দেওয়া যায়। কিন্তু কেন এবং কীভাবে একজন মানুষ এমন হয়—সেদিকেও তো নজর দেওয়া দরকার।
পাঠকেরা মনে করতেই পারেন ধর্ম ও রাজনীতির নামে সৃষ্ট সামাজিক প্রতিষ্ঠান, এগুলোর ভেতরে থাকা নানা বিশৃঙ্খলা এবং ক্ষমতার লোভে নেতাদের দ্বারা সৃষ্ট নিষ্ঠুর কাঠামো ও অবিচারের সংস্কৃতিরই প্রতিফলন আরদালান শেখারাবি। এটা কিছুটা সত্য। আরদালান শেখারাবিকে অনেকটা সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে। তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে একটু থাকার নিশ্চয়তার জন্য। এই পরিস্থিতি যেকোনো মানুষকেই ভেতর থেকে কঠোর করে তোলে। তাঁর কাছে আর কাউকেই যদি আপন মনে না হয়, তবে তা তাঁর দোষ বলা যায় না। আর এমনই এক মানসিক অবস্থায় থাকা এক লোককেই সুইডিশ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সরকার ব্যবহার করেছে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ, তারা জানে আরদালান চাইবেন সুইডিশ রাষ্ট্রের কাছে নিজেকে সঠিক মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে। তাঁর যদি ব্যক্তিগত খুঁত থাকে, তবে এই প্রমাণের চেষ্টা আরও বেশি থাকবে। দুর্নীতির অভিযোগে নিজের সংগঠন থেকে বহিষ্কার হওয়ার আরদালানের সেই খুঁত ছিল। ফলে তাঁকে অনেক বেশি নিজেকে প্রমাণ করতে হচ্ছে। আর এটিই সুইডিশ রাষ্ট্রকাঠামোকে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, আরদালান শরণার্থী-অভিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি অনেক বেশি নিষ্ঠুর হবেন। তিনি তা হয়েছেনও। নিজের ভিতটিকে টিকিয়ে রাখতে ও আরও মজবুত করতে তিনি স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন। নিষ্ঠুর হচ্ছেন। এমন স্বার্থপর মানুষের নিষ্ঠুরতার গল্প গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে।
লেখক: সুইডেনপ্রবাসী, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার
বাংলার সুবেদার মীর জুমলা তাঁর আসাম অভিযানের সময় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের (তৎকালীন খিজিরপুর) সংযোগকারী সড়কের পাগলা এলাকায় শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগস্থলে নির্মাণ করেন পাগলা সেতু।
২ দিন আগেগান করে থাকি সেটা তো অন্যায় হতে পারে না! তো সেই দিক থেকে আমি অন্তত ক্ষমা চাইতে পারি। কারণ এটা আমি পেশা করেছি। এটা আলটিমেটলি পেশা করতে বাধ্য হয়েছি। আমি কিন্তু গান শিখিনি নাম করার জন্য, যে আমার কবে সুখ্যাতি কে করবে, আমি কবে জনপ্রিয় হব তার জন্য গান শিখিনি। আমার বাবা-মা কোনো দিন আমাকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে...
৩ দিন আগেমুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় একাত্তরের ১০ এপ্রিল। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় ১৭ এপ্রিল।
৪ দিন আগেকাশ্মীর প্রিন্সেস—৭০ বছর আগে এক ট্র্যাজেডির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এয়ার ইন্ডিয়ার এই উড়োজাহাজ। ১৯৫৫ সালের ১০ এপ্রিল মুম্বাই থেকে যাত্রীদের নিয়ে হংকংয়ের কাই তাক বিমানবন্দরে পৌঁছায় উড়োজাহাজটি। পরদিন, চীনা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কথা ছিল সেটির।
৮ দিন আগে