রহমান মৃধা

জন্মের পর বেড়ে ওঠাটা সঠিকভাবে না হয়, পরে কি তা ঠিক করা সম্ভব? এর উত্তর পেতে জানতে হবে সঠিকভাবে গড়ে না ওঠা বলতে কী বোঝায়?
কেউ দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠে; তার গড়ে ওঠার মধ্যে থাকে দারিদ্র্যের কারণে সৃষ্ট নানা বাস্তবতার ছাপ। কেউ-বা বাবা-মা ছাড়া গড়ে ওঠে, কেউ অসৎ বা দুর্নীতির মধ্যে গড় ওঠে, আবার অনেকে সুন্দর পরিবেশে গড়ে ওঠে। হতে পারে কারও জীবনে সুশিক্ষার অভাব আছে। আবার সবকিছুর মিশ্রণেও গড়ে ওঠে কেউ কেউ। মোটাদাগে জীবনের শুরুতে কম-বেশি সবকিছুতেই ভালো-মন্দের মিশ্রণ থাকে। জীবন ফুলশয্যা নয়। তাই এই সঠিকভাবে গড়ে ওঠার কোনো সুনির্দিষ্ট ধরন নির্ধারণ খুবই কঠিন। তবে একটি উদাহরণ নিয়ে কথাটি এগোনো যেতে পারে।
আজ বাংলাদেশ নয় কথা হবে একজন ইরানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিককে নিয়ে। ধর্মরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ ইরানের রাজনীতির একেবারে মূলে রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরের সংবিধান এবং ১৯৮৯ সালে এর সংশোধনীতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্রমের সংজ্ঞা রয়েছে। এতে সরাসরি বলা আছে, ইসলামের শিয়া মতাবলম্বীদের দ্বাদশ ইমাম মাহদির ধারাই হবে ইরানের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। এটি এবং সঙ্গে আরও নানা কারণে ইরান ছেড়ে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার ঝোঁক আছে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে।
যে ইরানির কথা বলা হচ্ছে, তাঁর নাম আরদালান শেখারাবি; জন্ম ১৯৭৮ সালে নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। বেড়ে ওঠেন ইরানে। ১৯৮৯ সালে মায়ের সঙ্গে ইরান ছেড়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন সুইডেনে। শরণার্থী হিসেবে অনুমোদন না পাওয়ায় সুইডেনে একরকম পলাতক জীবনই যাপন করতে হয়েছিল তাঁকে। পরে মানবিক কারণে সুইডিশ অভিবাসন বিভাগ তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন দেয়।
শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ছাত্ররাজনীতিতে আরদালান জড়িয়ে পড়েন। শেষে সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও হন। সে সময় তিনি নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যেমন, সংগঠনের যে টাকা ব্যয় হওয়ার কথা ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্টে, সে টাকা নিজের নির্বাচনী প্রচারে ব্যয় করেন। এমনকি ভোট চুরি করে সে নির্বাচনে জয়ী হতে চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সে জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়। এর জেরে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ থেকে ২০০৫ সালে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আবার একই পদে তিনি ফিরে আসেন ২০১৩ সালে।
শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার পদে নিযুক্ত হন আরদালান। তাঁর ক্ষমতাকালে বহু শরণার্থীকে বাধ্য হয়ে সুইডেন ছাড়তে হয়েছে। বর্তমান তিনি সুইডেনের সোশ্যাল ইনস্যুরেন্স মিনিস্টার। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন আইনজীবী, বিবাহিত এবং তিন সন্তানের বাবা। তাঁর স্ত্রী একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
সামাজিক বিমামন্ত্রী হিসেবে আরদালান শেখারাবির নতুন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যারা সারা জীবন কাজ করে কর দিয়েছেন, তাঁরা যেন যারা কর্মহীন ছিল এবং কর দেয়নি, তাঁদের চেয়ে বেশি পেনশন পান, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। বলা প্রয়োজন, রাষ্ট্রীয় এই সেবা সাধারণত অভিবাসীরাই বেশি নেন।
আরদালান তাঁর নতুন চ্যালেঞ্জে হয়তো জয়ী হবেন, হয়তো হবেন না। আবার হয়তো কিছুটা এগোবেন, কিছুটা পিছিয়ে থাকবেন। পুরোটাই নির্ভর করছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তাঁর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কার্যকারিতার ওপর। তবে আমার আলোচনার বিষয় সেটি নয়। আমার মনোযোগ সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে বহু শরণার্থীর সুইডেন ছাড়তে বাধ্য হওয়ার বিষয়টিতে। কারণ, আরদালান নিজেই এক সময় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন সুইডেনে। চাওয়ামাত্র পাননি। অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। এমনকি শরণার্থী হিসেবে সুইডেনে তাঁর অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ হয়েছিল। শেষে মানবিক কারণে তিনি সে দেশে থাকার অনুমতি পান । অথচ নীতিনির্ধারণী দায়িত্বে আসার পর তিনিই শত শত বাবা-মা, পরিবার হারা মানুষকে সুইডেন থেকে বের করে দেন। তাঁর গল্প আসলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা একজন মানুষেরই গল্প।
যে বিষয়টি আমাকে বেশি অবাক করেছে, সেটা হলো সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকেই বেছে নিয়েছে কাজটি করতে। আরদালান শেখারাবি নিজে শরণার্থী হয়ে অন্য শরণার্থীদের সুইডেন থেকে বের করতে দ্বিধা করেননি।
কয়েক দিন আগে সুইডিশ টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরদালানকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি নিজে জানো কী কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যে তোমার জীবন কেটেছিল, যখন তোমার সুইডেনে থাকার কোনো বৈধতা ছিল না। সেই তুমি কীভাবে পারলে সেই একই কাজ করতে?’ আরদালান শেখারাবি উত্তর ছিল, তিনি যা করেছেন, তা সুইডেনের মঙ্গলের জন্যই করেছেন।
তাঁর সাক্ষাৎকার দেখে আমার মনে হলো পৃথিবীতে এমন মানুষের অভাব নেই, যারা ভুলে যায় পরোপকারের কথা, ভুলে যায় অতীত। তাই তো পৃথিবীর অবস্থা এমন! একই সঙ্গে ভাবনায় ঢুকেছে রাজনীতি সত্যিই বড় নিষ্ঠুর এক দুনিয়া, যেখানে নেই কোনো নৈতিকতা; আছে শুধু স্বার্থপরতা। আর একবার সে দুনিয়ায় ঘাঁটি গাড়লে লোকেরা নিজের স্বার্থে সবকিছু করতে পারে। সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকে দিয়ে যে কাজগুলো করাচ্ছে, তাতে মনে হলো—তারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলছে।
জীবনে অনেক কিছু ফিরে পাওয়া সম্ভব। যেমন অর্থ গেলে অর্থ পাওয়া যায়, স্বাস্থ্য গেলে স্বাস্থ্য ফিরে পাওয়া যায়, চরিত্র গেলে বা দুর্নীতিগ্রস্ত হলেও পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু যদি কেউ স্বার্থপর হয়, তবে সম্ভবত আর ফিরে আসার পথ থাকে না। তারা কখনো ফেরে না।
এ লেখায় আরদালান শেখারাবির ব্যক্তিক জীবন না টানলেও হয়তো হতো। কিন্তু ওই যে শুরুতেই বলেছি, জীবনের শুরুতে গড়ে ওঠার পর্যায়টাই ঠিক করে দেয় মানুষের গতিপথ কোনদিকে হবে। আরদালানের বর্তমান কাজের ফিরিস্তি দিয়ে শুধু নিন্দা করলে তাই আর চুকেবুকে যায় না। ঠিকঠাক বুঝতে হলে তাঁর অতীতটা জানা জরুরি। আমি মূলত তাঁর চরিত্র, তাঁর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জ এবং এসব মিলে তাঁর মানসিক গড়নটির দিকে নজর দিতে চাই। একজনকে স্বার্থপর বা এমন কিছু তো সহজেই বলে দেওয়া যায়। কিন্তু কেন এবং কীভাবে একজন মানুষ এমন হয়—সেদিকেও তো নজর দেওয়া দরকার।
পাঠকেরা মনে করতেই পারেন ধর্ম ও রাজনীতির নামে সৃষ্ট সামাজিক প্রতিষ্ঠান, এগুলোর ভেতরে থাকা নানা বিশৃঙ্খলা এবং ক্ষমতার লোভে নেতাদের দ্বারা সৃষ্ট নিষ্ঠুর কাঠামো ও অবিচারের সংস্কৃতিরই প্রতিফলন আরদালান শেখারাবি। এটা কিছুটা সত্য। আরদালান শেখারাবিকে অনেকটা সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে। তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে একটু থাকার নিশ্চয়তার জন্য। এই পরিস্থিতি যেকোনো মানুষকেই ভেতর থেকে কঠোর করে তোলে। তাঁর কাছে আর কাউকেই যদি আপন মনে না হয়, তবে তা তাঁর দোষ বলা যায় না। আর এমনই এক মানসিক অবস্থায় থাকা এক লোককেই সুইডিশ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সরকার ব্যবহার করেছে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ, তারা জানে আরদালান চাইবেন সুইডিশ রাষ্ট্রের কাছে নিজেকে সঠিক মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে। তাঁর যদি ব্যক্তিগত খুঁত থাকে, তবে এই প্রমাণের চেষ্টা আরও বেশি থাকবে। দুর্নীতির অভিযোগে নিজের সংগঠন থেকে বহিষ্কার হওয়ার আরদালানের সেই খুঁত ছিল। ফলে তাঁকে অনেক বেশি নিজেকে প্রমাণ করতে হচ্ছে। আর এটিই সুইডিশ রাষ্ট্রকাঠামোকে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, আরদালান শরণার্থী-অভিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি অনেক বেশি নিষ্ঠুর হবেন। তিনি তা হয়েছেনও। নিজের ভিতটিকে টিকিয়ে রাখতে ও আরও মজবুত করতে তিনি স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন। নিষ্ঠুর হচ্ছেন। এমন স্বার্থপর মানুষের নিষ্ঠুরতার গল্প গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে।
লেখক: সুইডেনপ্রবাসী, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার

জন্মের পর বেড়ে ওঠাটা সঠিকভাবে না হয়, পরে কি তা ঠিক করা সম্ভব? এর উত্তর পেতে জানতে হবে সঠিকভাবে গড়ে না ওঠা বলতে কী বোঝায়?
কেউ দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠে; তার গড়ে ওঠার মধ্যে থাকে দারিদ্র্যের কারণে সৃষ্ট নানা বাস্তবতার ছাপ। কেউ-বা বাবা-মা ছাড়া গড়ে ওঠে, কেউ অসৎ বা দুর্নীতির মধ্যে গড় ওঠে, আবার অনেকে সুন্দর পরিবেশে গড়ে ওঠে। হতে পারে কারও জীবনে সুশিক্ষার অভাব আছে। আবার সবকিছুর মিশ্রণেও গড়ে ওঠে কেউ কেউ। মোটাদাগে জীবনের শুরুতে কম-বেশি সবকিছুতেই ভালো-মন্দের মিশ্রণ থাকে। জীবন ফুলশয্যা নয়। তাই এই সঠিকভাবে গড়ে ওঠার কোনো সুনির্দিষ্ট ধরন নির্ধারণ খুবই কঠিন। তবে একটি উদাহরণ নিয়ে কথাটি এগোনো যেতে পারে।
আজ বাংলাদেশ নয় কথা হবে একজন ইরানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিককে নিয়ে। ধর্মরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ ইরানের রাজনীতির একেবারে মূলে রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরের সংবিধান এবং ১৯৮৯ সালে এর সংশোধনীতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্রমের সংজ্ঞা রয়েছে। এতে সরাসরি বলা আছে, ইসলামের শিয়া মতাবলম্বীদের দ্বাদশ ইমাম মাহদির ধারাই হবে ইরানের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। এটি এবং সঙ্গে আরও নানা কারণে ইরান ছেড়ে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার ঝোঁক আছে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে।
যে ইরানির কথা বলা হচ্ছে, তাঁর নাম আরদালান শেখারাবি; জন্ম ১৯৭৮ সালে নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। বেড়ে ওঠেন ইরানে। ১৯৮৯ সালে মায়ের সঙ্গে ইরান ছেড়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন সুইডেনে। শরণার্থী হিসেবে অনুমোদন না পাওয়ায় সুইডেনে একরকম পলাতক জীবনই যাপন করতে হয়েছিল তাঁকে। পরে মানবিক কারণে সুইডিশ অভিবাসন বিভাগ তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন দেয়।
শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ছাত্ররাজনীতিতে আরদালান জড়িয়ে পড়েন। শেষে সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও হন। সে সময় তিনি নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যেমন, সংগঠনের যে টাকা ব্যয় হওয়ার কথা ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্টে, সে টাকা নিজের নির্বাচনী প্রচারে ব্যয় করেন। এমনকি ভোট চুরি করে সে নির্বাচনে জয়ী হতে চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সে জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়। এর জেরে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ থেকে ২০০৫ সালে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আবার একই পদে তিনি ফিরে আসেন ২০১৩ সালে।
শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার পদে নিযুক্ত হন আরদালান। তাঁর ক্ষমতাকালে বহু শরণার্থীকে বাধ্য হয়ে সুইডেন ছাড়তে হয়েছে। বর্তমান তিনি সুইডেনের সোশ্যাল ইনস্যুরেন্স মিনিস্টার। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন আইনজীবী, বিবাহিত এবং তিন সন্তানের বাবা। তাঁর স্ত্রী একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
সামাজিক বিমামন্ত্রী হিসেবে আরদালান শেখারাবির নতুন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যারা সারা জীবন কাজ করে কর দিয়েছেন, তাঁরা যেন যারা কর্মহীন ছিল এবং কর দেয়নি, তাঁদের চেয়ে বেশি পেনশন পান, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। বলা প্রয়োজন, রাষ্ট্রীয় এই সেবা সাধারণত অভিবাসীরাই বেশি নেন।
আরদালান তাঁর নতুন চ্যালেঞ্জে হয়তো জয়ী হবেন, হয়তো হবেন না। আবার হয়তো কিছুটা এগোবেন, কিছুটা পিছিয়ে থাকবেন। পুরোটাই নির্ভর করছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তাঁর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কার্যকারিতার ওপর। তবে আমার আলোচনার বিষয় সেটি নয়। আমার মনোযোগ সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে বহু শরণার্থীর সুইডেন ছাড়তে বাধ্য হওয়ার বিষয়টিতে। কারণ, আরদালান নিজেই এক সময় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন সুইডেনে। চাওয়ামাত্র পাননি। অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। এমনকি শরণার্থী হিসেবে সুইডেনে তাঁর অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ হয়েছিল। শেষে মানবিক কারণে তিনি সে দেশে থাকার অনুমতি পান । অথচ নীতিনির্ধারণী দায়িত্বে আসার পর তিনিই শত শত বাবা-মা, পরিবার হারা মানুষকে সুইডেন থেকে বের করে দেন। তাঁর গল্প আসলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা একজন মানুষেরই গল্প।
যে বিষয়টি আমাকে বেশি অবাক করেছে, সেটা হলো সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকেই বেছে নিয়েছে কাজটি করতে। আরদালান শেখারাবি নিজে শরণার্থী হয়ে অন্য শরণার্থীদের সুইডেন থেকে বের করতে দ্বিধা করেননি।
কয়েক দিন আগে সুইডিশ টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরদালানকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি নিজে জানো কী কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যে তোমার জীবন কেটেছিল, যখন তোমার সুইডেনে থাকার কোনো বৈধতা ছিল না। সেই তুমি কীভাবে পারলে সেই একই কাজ করতে?’ আরদালান শেখারাবি উত্তর ছিল, তিনি যা করেছেন, তা সুইডেনের মঙ্গলের জন্যই করেছেন।
তাঁর সাক্ষাৎকার দেখে আমার মনে হলো পৃথিবীতে এমন মানুষের অভাব নেই, যারা ভুলে যায় পরোপকারের কথা, ভুলে যায় অতীত। তাই তো পৃথিবীর অবস্থা এমন! একই সঙ্গে ভাবনায় ঢুকেছে রাজনীতি সত্যিই বড় নিষ্ঠুর এক দুনিয়া, যেখানে নেই কোনো নৈতিকতা; আছে শুধু স্বার্থপরতা। আর একবার সে দুনিয়ায় ঘাঁটি গাড়লে লোকেরা নিজের স্বার্থে সবকিছু করতে পারে। সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকে দিয়ে যে কাজগুলো করাচ্ছে, তাতে মনে হলো—তারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলছে।
জীবনে অনেক কিছু ফিরে পাওয়া সম্ভব। যেমন অর্থ গেলে অর্থ পাওয়া যায়, স্বাস্থ্য গেলে স্বাস্থ্য ফিরে পাওয়া যায়, চরিত্র গেলে বা দুর্নীতিগ্রস্ত হলেও পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু যদি কেউ স্বার্থপর হয়, তবে সম্ভবত আর ফিরে আসার পথ থাকে না। তারা কখনো ফেরে না।
এ লেখায় আরদালান শেখারাবির ব্যক্তিক জীবন না টানলেও হয়তো হতো। কিন্তু ওই যে শুরুতেই বলেছি, জীবনের শুরুতে গড়ে ওঠার পর্যায়টাই ঠিক করে দেয় মানুষের গতিপথ কোনদিকে হবে। আরদালানের বর্তমান কাজের ফিরিস্তি দিয়ে শুধু নিন্দা করলে তাই আর চুকেবুকে যায় না। ঠিকঠাক বুঝতে হলে তাঁর অতীতটা জানা জরুরি। আমি মূলত তাঁর চরিত্র, তাঁর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জ এবং এসব মিলে তাঁর মানসিক গড়নটির দিকে নজর দিতে চাই। একজনকে স্বার্থপর বা এমন কিছু তো সহজেই বলে দেওয়া যায়। কিন্তু কেন এবং কীভাবে একজন মানুষ এমন হয়—সেদিকেও তো নজর দেওয়া দরকার।
পাঠকেরা মনে করতেই পারেন ধর্ম ও রাজনীতির নামে সৃষ্ট সামাজিক প্রতিষ্ঠান, এগুলোর ভেতরে থাকা নানা বিশৃঙ্খলা এবং ক্ষমতার লোভে নেতাদের দ্বারা সৃষ্ট নিষ্ঠুর কাঠামো ও অবিচারের সংস্কৃতিরই প্রতিফলন আরদালান শেখারাবি। এটা কিছুটা সত্য। আরদালান শেখারাবিকে অনেকটা সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে। তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে একটু থাকার নিশ্চয়তার জন্য। এই পরিস্থিতি যেকোনো মানুষকেই ভেতর থেকে কঠোর করে তোলে। তাঁর কাছে আর কাউকেই যদি আপন মনে না হয়, তবে তা তাঁর দোষ বলা যায় না। আর এমনই এক মানসিক অবস্থায় থাকা এক লোককেই সুইডিশ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সরকার ব্যবহার করেছে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ, তারা জানে আরদালান চাইবেন সুইডিশ রাষ্ট্রের কাছে নিজেকে সঠিক মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে। তাঁর যদি ব্যক্তিগত খুঁত থাকে, তবে এই প্রমাণের চেষ্টা আরও বেশি থাকবে। দুর্নীতির অভিযোগে নিজের সংগঠন থেকে বহিষ্কার হওয়ার আরদালানের সেই খুঁত ছিল। ফলে তাঁকে অনেক বেশি নিজেকে প্রমাণ করতে হচ্ছে। আর এটিই সুইডিশ রাষ্ট্রকাঠামোকে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, আরদালান শরণার্থী-অভিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি অনেক বেশি নিষ্ঠুর হবেন। তিনি তা হয়েছেনও। নিজের ভিতটিকে টিকিয়ে রাখতে ও আরও মজবুত করতে তিনি স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন। নিষ্ঠুর হচ্ছেন। এমন স্বার্থপর মানুষের নিষ্ঠুরতার গল্প গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে।
লেখক: সুইডেনপ্রবাসী, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার
রহমান মৃধা

জন্মের পর বেড়ে ওঠাটা সঠিকভাবে না হয়, পরে কি তা ঠিক করা সম্ভব? এর উত্তর পেতে জানতে হবে সঠিকভাবে গড়ে না ওঠা বলতে কী বোঝায়?
কেউ দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠে; তার গড়ে ওঠার মধ্যে থাকে দারিদ্র্যের কারণে সৃষ্ট নানা বাস্তবতার ছাপ। কেউ-বা বাবা-মা ছাড়া গড়ে ওঠে, কেউ অসৎ বা দুর্নীতির মধ্যে গড় ওঠে, আবার অনেকে সুন্দর পরিবেশে গড়ে ওঠে। হতে পারে কারও জীবনে সুশিক্ষার অভাব আছে। আবার সবকিছুর মিশ্রণেও গড়ে ওঠে কেউ কেউ। মোটাদাগে জীবনের শুরুতে কম-বেশি সবকিছুতেই ভালো-মন্দের মিশ্রণ থাকে। জীবন ফুলশয্যা নয়। তাই এই সঠিকভাবে গড়ে ওঠার কোনো সুনির্দিষ্ট ধরন নির্ধারণ খুবই কঠিন। তবে একটি উদাহরণ নিয়ে কথাটি এগোনো যেতে পারে।
আজ বাংলাদেশ নয় কথা হবে একজন ইরানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিককে নিয়ে। ধর্মরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ ইরানের রাজনীতির একেবারে মূলে রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরের সংবিধান এবং ১৯৮৯ সালে এর সংশোধনীতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্রমের সংজ্ঞা রয়েছে। এতে সরাসরি বলা আছে, ইসলামের শিয়া মতাবলম্বীদের দ্বাদশ ইমাম মাহদির ধারাই হবে ইরানের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। এটি এবং সঙ্গে আরও নানা কারণে ইরান ছেড়ে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার ঝোঁক আছে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে।
যে ইরানির কথা বলা হচ্ছে, তাঁর নাম আরদালান শেখারাবি; জন্ম ১৯৭৮ সালে নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। বেড়ে ওঠেন ইরানে। ১৯৮৯ সালে মায়ের সঙ্গে ইরান ছেড়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন সুইডেনে। শরণার্থী হিসেবে অনুমোদন না পাওয়ায় সুইডেনে একরকম পলাতক জীবনই যাপন করতে হয়েছিল তাঁকে। পরে মানবিক কারণে সুইডিশ অভিবাসন বিভাগ তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন দেয়।
শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ছাত্ররাজনীতিতে আরদালান জড়িয়ে পড়েন। শেষে সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও হন। সে সময় তিনি নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যেমন, সংগঠনের যে টাকা ব্যয় হওয়ার কথা ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্টে, সে টাকা নিজের নির্বাচনী প্রচারে ব্যয় করেন। এমনকি ভোট চুরি করে সে নির্বাচনে জয়ী হতে চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সে জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়। এর জেরে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ থেকে ২০০৫ সালে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আবার একই পদে তিনি ফিরে আসেন ২০১৩ সালে।
শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার পদে নিযুক্ত হন আরদালান। তাঁর ক্ষমতাকালে বহু শরণার্থীকে বাধ্য হয়ে সুইডেন ছাড়তে হয়েছে। বর্তমান তিনি সুইডেনের সোশ্যাল ইনস্যুরেন্স মিনিস্টার। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন আইনজীবী, বিবাহিত এবং তিন সন্তানের বাবা। তাঁর স্ত্রী একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
সামাজিক বিমামন্ত্রী হিসেবে আরদালান শেখারাবির নতুন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যারা সারা জীবন কাজ করে কর দিয়েছেন, তাঁরা যেন যারা কর্মহীন ছিল এবং কর দেয়নি, তাঁদের চেয়ে বেশি পেনশন পান, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। বলা প্রয়োজন, রাষ্ট্রীয় এই সেবা সাধারণত অভিবাসীরাই বেশি নেন।
আরদালান তাঁর নতুন চ্যালেঞ্জে হয়তো জয়ী হবেন, হয়তো হবেন না। আবার হয়তো কিছুটা এগোবেন, কিছুটা পিছিয়ে থাকবেন। পুরোটাই নির্ভর করছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তাঁর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কার্যকারিতার ওপর। তবে আমার আলোচনার বিষয় সেটি নয়। আমার মনোযোগ সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে বহু শরণার্থীর সুইডেন ছাড়তে বাধ্য হওয়ার বিষয়টিতে। কারণ, আরদালান নিজেই এক সময় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন সুইডেনে। চাওয়ামাত্র পাননি। অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। এমনকি শরণার্থী হিসেবে সুইডেনে তাঁর অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ হয়েছিল। শেষে মানবিক কারণে তিনি সে দেশে থাকার অনুমতি পান । অথচ নীতিনির্ধারণী দায়িত্বে আসার পর তিনিই শত শত বাবা-মা, পরিবার হারা মানুষকে সুইডেন থেকে বের করে দেন। তাঁর গল্প আসলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা একজন মানুষেরই গল্প।
যে বিষয়টি আমাকে বেশি অবাক করেছে, সেটা হলো সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকেই বেছে নিয়েছে কাজটি করতে। আরদালান শেখারাবি নিজে শরণার্থী হয়ে অন্য শরণার্থীদের সুইডেন থেকে বের করতে দ্বিধা করেননি।
কয়েক দিন আগে সুইডিশ টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরদালানকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি নিজে জানো কী কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যে তোমার জীবন কেটেছিল, যখন তোমার সুইডেনে থাকার কোনো বৈধতা ছিল না। সেই তুমি কীভাবে পারলে সেই একই কাজ করতে?’ আরদালান শেখারাবি উত্তর ছিল, তিনি যা করেছেন, তা সুইডেনের মঙ্গলের জন্যই করেছেন।
তাঁর সাক্ষাৎকার দেখে আমার মনে হলো পৃথিবীতে এমন মানুষের অভাব নেই, যারা ভুলে যায় পরোপকারের কথা, ভুলে যায় অতীত। তাই তো পৃথিবীর অবস্থা এমন! একই সঙ্গে ভাবনায় ঢুকেছে রাজনীতি সত্যিই বড় নিষ্ঠুর এক দুনিয়া, যেখানে নেই কোনো নৈতিকতা; আছে শুধু স্বার্থপরতা। আর একবার সে দুনিয়ায় ঘাঁটি গাড়লে লোকেরা নিজের স্বার্থে সবকিছু করতে পারে। সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকে দিয়ে যে কাজগুলো করাচ্ছে, তাতে মনে হলো—তারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলছে।
জীবনে অনেক কিছু ফিরে পাওয়া সম্ভব। যেমন অর্থ গেলে অর্থ পাওয়া যায়, স্বাস্থ্য গেলে স্বাস্থ্য ফিরে পাওয়া যায়, চরিত্র গেলে বা দুর্নীতিগ্রস্ত হলেও পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু যদি কেউ স্বার্থপর হয়, তবে সম্ভবত আর ফিরে আসার পথ থাকে না। তারা কখনো ফেরে না।
এ লেখায় আরদালান শেখারাবির ব্যক্তিক জীবন না টানলেও হয়তো হতো। কিন্তু ওই যে শুরুতেই বলেছি, জীবনের শুরুতে গড়ে ওঠার পর্যায়টাই ঠিক করে দেয় মানুষের গতিপথ কোনদিকে হবে। আরদালানের বর্তমান কাজের ফিরিস্তি দিয়ে শুধু নিন্দা করলে তাই আর চুকেবুকে যায় না। ঠিকঠাক বুঝতে হলে তাঁর অতীতটা জানা জরুরি। আমি মূলত তাঁর চরিত্র, তাঁর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জ এবং এসব মিলে তাঁর মানসিক গড়নটির দিকে নজর দিতে চাই। একজনকে স্বার্থপর বা এমন কিছু তো সহজেই বলে দেওয়া যায়। কিন্তু কেন এবং কীভাবে একজন মানুষ এমন হয়—সেদিকেও তো নজর দেওয়া দরকার।
পাঠকেরা মনে করতেই পারেন ধর্ম ও রাজনীতির নামে সৃষ্ট সামাজিক প্রতিষ্ঠান, এগুলোর ভেতরে থাকা নানা বিশৃঙ্খলা এবং ক্ষমতার লোভে নেতাদের দ্বারা সৃষ্ট নিষ্ঠুর কাঠামো ও অবিচারের সংস্কৃতিরই প্রতিফলন আরদালান শেখারাবি। এটা কিছুটা সত্য। আরদালান শেখারাবিকে অনেকটা সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে। তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে একটু থাকার নিশ্চয়তার জন্য। এই পরিস্থিতি যেকোনো মানুষকেই ভেতর থেকে কঠোর করে তোলে। তাঁর কাছে আর কাউকেই যদি আপন মনে না হয়, তবে তা তাঁর দোষ বলা যায় না। আর এমনই এক মানসিক অবস্থায় থাকা এক লোককেই সুইডিশ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সরকার ব্যবহার করেছে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ, তারা জানে আরদালান চাইবেন সুইডিশ রাষ্ট্রের কাছে নিজেকে সঠিক মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে। তাঁর যদি ব্যক্তিগত খুঁত থাকে, তবে এই প্রমাণের চেষ্টা আরও বেশি থাকবে। দুর্নীতির অভিযোগে নিজের সংগঠন থেকে বহিষ্কার হওয়ার আরদালানের সেই খুঁত ছিল। ফলে তাঁকে অনেক বেশি নিজেকে প্রমাণ করতে হচ্ছে। আর এটিই সুইডিশ রাষ্ট্রকাঠামোকে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, আরদালান শরণার্থী-অভিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি অনেক বেশি নিষ্ঠুর হবেন। তিনি তা হয়েছেনও। নিজের ভিতটিকে টিকিয়ে রাখতে ও আরও মজবুত করতে তিনি স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন। নিষ্ঠুর হচ্ছেন। এমন স্বার্থপর মানুষের নিষ্ঠুরতার গল্প গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে।
লেখক: সুইডেনপ্রবাসী, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার

জন্মের পর বেড়ে ওঠাটা সঠিকভাবে না হয়, পরে কি তা ঠিক করা সম্ভব? এর উত্তর পেতে জানতে হবে সঠিকভাবে গড়ে না ওঠা বলতে কী বোঝায়?
কেউ দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠে; তার গড়ে ওঠার মধ্যে থাকে দারিদ্র্যের কারণে সৃষ্ট নানা বাস্তবতার ছাপ। কেউ-বা বাবা-মা ছাড়া গড়ে ওঠে, কেউ অসৎ বা দুর্নীতির মধ্যে গড় ওঠে, আবার অনেকে সুন্দর পরিবেশে গড়ে ওঠে। হতে পারে কারও জীবনে সুশিক্ষার অভাব আছে। আবার সবকিছুর মিশ্রণেও গড়ে ওঠে কেউ কেউ। মোটাদাগে জীবনের শুরুতে কম-বেশি সবকিছুতেই ভালো-মন্দের মিশ্রণ থাকে। জীবন ফুলশয্যা নয়। তাই এই সঠিকভাবে গড়ে ওঠার কোনো সুনির্দিষ্ট ধরন নির্ধারণ খুবই কঠিন। তবে একটি উদাহরণ নিয়ে কথাটি এগোনো যেতে পারে।
আজ বাংলাদেশ নয় কথা হবে একজন ইরানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিককে নিয়ে। ধর্মরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ ইরানের রাজনীতির একেবারে মূলে রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরের সংবিধান এবং ১৯৮৯ সালে এর সংশোধনীতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্রমের সংজ্ঞা রয়েছে। এতে সরাসরি বলা আছে, ইসলামের শিয়া মতাবলম্বীদের দ্বাদশ ইমাম মাহদির ধারাই হবে ইরানের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। এটি এবং সঙ্গে আরও নানা কারণে ইরান ছেড়ে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার ঝোঁক আছে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে।
যে ইরানির কথা বলা হচ্ছে, তাঁর নাম আরদালান শেখারাবি; জন্ম ১৯৭৮ সালে নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। বেড়ে ওঠেন ইরানে। ১৯৮৯ সালে মায়ের সঙ্গে ইরান ছেড়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন সুইডেনে। শরণার্থী হিসেবে অনুমোদন না পাওয়ায় সুইডেনে একরকম পলাতক জীবনই যাপন করতে হয়েছিল তাঁকে। পরে মানবিক কারণে সুইডিশ অভিবাসন বিভাগ তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন দেয়।
শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ছাত্ররাজনীতিতে আরদালান জড়িয়ে পড়েন। শেষে সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও হন। সে সময় তিনি নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যেমন, সংগঠনের যে টাকা ব্যয় হওয়ার কথা ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্টে, সে টাকা নিজের নির্বাচনী প্রচারে ব্যয় করেন। এমনকি ভোট চুরি করে সে নির্বাচনে জয়ী হতে চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সে জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়। এর জেরে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ থেকে ২০০৫ সালে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আবার একই পদে তিনি ফিরে আসেন ২০১৩ সালে।
শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার পদে নিযুক্ত হন আরদালান। তাঁর ক্ষমতাকালে বহু শরণার্থীকে বাধ্য হয়ে সুইডেন ছাড়তে হয়েছে। বর্তমান তিনি সুইডেনের সোশ্যাল ইনস্যুরেন্স মিনিস্টার। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন আইনজীবী, বিবাহিত এবং তিন সন্তানের বাবা। তাঁর স্ত্রী একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
সামাজিক বিমামন্ত্রী হিসেবে আরদালান শেখারাবির নতুন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যারা সারা জীবন কাজ করে কর দিয়েছেন, তাঁরা যেন যারা কর্মহীন ছিল এবং কর দেয়নি, তাঁদের চেয়ে বেশি পেনশন পান, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। বলা প্রয়োজন, রাষ্ট্রীয় এই সেবা সাধারণত অভিবাসীরাই বেশি নেন।
আরদালান তাঁর নতুন চ্যালেঞ্জে হয়তো জয়ী হবেন, হয়তো হবেন না। আবার হয়তো কিছুটা এগোবেন, কিছুটা পিছিয়ে থাকবেন। পুরোটাই নির্ভর করছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তাঁর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কার্যকারিতার ওপর। তবে আমার আলোচনার বিষয় সেটি নয়। আমার মনোযোগ সুইডিশ সিভিল মিনিস্টার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে বহু শরণার্থীর সুইডেন ছাড়তে বাধ্য হওয়ার বিষয়টিতে। কারণ, আরদালান নিজেই এক সময় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন সুইডেনে। চাওয়ামাত্র পাননি। অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। এমনকি শরণার্থী হিসেবে সুইডেনে তাঁর অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ হয়েছিল। শেষে মানবিক কারণে তিনি সে দেশে থাকার অনুমতি পান । অথচ নীতিনির্ধারণী দায়িত্বে আসার পর তিনিই শত শত বাবা-মা, পরিবার হারা মানুষকে সুইডেন থেকে বের করে দেন। তাঁর গল্প আসলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা একজন মানুষেরই গল্প।
যে বিষয়টি আমাকে বেশি অবাক করেছে, সেটা হলো সুইডিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকেই বেছে নিয়েছে কাজটি করতে। আরদালান শেখারাবি নিজে শরণার্থী হয়ে অন্য শরণার্থীদের সুইডেন থেকে বের করতে দ্বিধা করেননি।
কয়েক দিন আগে সুইডিশ টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরদালানকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি নিজে জানো কী কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যে তোমার জীবন কেটেছিল, যখন তোমার সুইডেনে থাকার কোনো বৈধতা ছিল না। সেই তুমি কীভাবে পারলে সেই একই কাজ করতে?’ আরদালান শেখারাবি উত্তর ছিল, তিনি যা করেছেন, তা সুইডেনের মঙ্গলের জন্যই করেছেন।
তাঁর সাক্ষাৎকার দেখে আমার মনে হলো পৃথিবীতে এমন মানুষের অভাব নেই, যারা ভুলে যায় পরোপকারের কথা, ভুলে যায় অতীত। তাই তো পৃথিবীর অবস্থা এমন! একই সঙ্গে ভাবনায় ঢুকেছে রাজনীতি সত্যিই বড় নিষ্ঠুর এক দুনিয়া, যেখানে নেই কোনো নৈতিকতা; আছে শুধু স্বার্থপরতা। আর একবার সে দুনিয়ায় ঘাঁটি গাড়লে লোকেরা নিজের স্বার্থে সবকিছু করতে পারে। সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি আরদালানকে দিয়ে যে কাজগুলো করাচ্ছে, তাতে মনে হলো—তারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলছে।
জীবনে অনেক কিছু ফিরে পাওয়া সম্ভব। যেমন অর্থ গেলে অর্থ পাওয়া যায়, স্বাস্থ্য গেলে স্বাস্থ্য ফিরে পাওয়া যায়, চরিত্র গেলে বা দুর্নীতিগ্রস্ত হলেও পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু যদি কেউ স্বার্থপর হয়, তবে সম্ভবত আর ফিরে আসার পথ থাকে না। তারা কখনো ফেরে না।
এ লেখায় আরদালান শেখারাবির ব্যক্তিক জীবন না টানলেও হয়তো হতো। কিন্তু ওই যে শুরুতেই বলেছি, জীবনের শুরুতে গড়ে ওঠার পর্যায়টাই ঠিক করে দেয় মানুষের গতিপথ কোনদিকে হবে। আরদালানের বর্তমান কাজের ফিরিস্তি দিয়ে শুধু নিন্দা করলে তাই আর চুকেবুকে যায় না। ঠিকঠাক বুঝতে হলে তাঁর অতীতটা জানা জরুরি। আমি মূলত তাঁর চরিত্র, তাঁর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জ এবং এসব মিলে তাঁর মানসিক গড়নটির দিকে নজর দিতে চাই। একজনকে স্বার্থপর বা এমন কিছু তো সহজেই বলে দেওয়া যায়। কিন্তু কেন এবং কীভাবে একজন মানুষ এমন হয়—সেদিকেও তো নজর দেওয়া দরকার।
পাঠকেরা মনে করতেই পারেন ধর্ম ও রাজনীতির নামে সৃষ্ট সামাজিক প্রতিষ্ঠান, এগুলোর ভেতরে থাকা নানা বিশৃঙ্খলা এবং ক্ষমতার লোভে নেতাদের দ্বারা সৃষ্ট নিষ্ঠুর কাঠামো ও অবিচারের সংস্কৃতিরই প্রতিফলন আরদালান শেখারাবি। এটা কিছুটা সত্য। আরদালান শেখারাবিকে অনেকটা সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে। তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে একটু থাকার নিশ্চয়তার জন্য। এই পরিস্থিতি যেকোনো মানুষকেই ভেতর থেকে কঠোর করে তোলে। তাঁর কাছে আর কাউকেই যদি আপন মনে না হয়, তবে তা তাঁর দোষ বলা যায় না। আর এমনই এক মানসিক অবস্থায় থাকা এক লোককেই সুইডিশ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সরকার ব্যবহার করেছে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ, তারা জানে আরদালান চাইবেন সুইডিশ রাষ্ট্রের কাছে নিজেকে সঠিক মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে। তাঁর যদি ব্যক্তিগত খুঁত থাকে, তবে এই প্রমাণের চেষ্টা আরও বেশি থাকবে। দুর্নীতির অভিযোগে নিজের সংগঠন থেকে বহিষ্কার হওয়ার আরদালানের সেই খুঁত ছিল। ফলে তাঁকে অনেক বেশি নিজেকে প্রমাণ করতে হচ্ছে। আর এটিই সুইডিশ রাষ্ট্রকাঠামোকে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, আরদালান শরণার্থী-অভিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি অনেক বেশি নিষ্ঠুর হবেন। তিনি তা হয়েছেনও। নিজের ভিতটিকে টিকিয়ে রাখতে ও আরও মজবুত করতে তিনি স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন। নিষ্ঠুর হচ্ছেন। এমন স্বার্থপর মানুষের নিষ্ঠুরতার গল্প গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে।
লেখক: সুইডেনপ্রবাসী, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৪ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আরদালান শেখারাবিকে অনেকটা সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে। তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে একটু থাকার নিশ্চয়তার জন্য। এই পরিস্থিতি যেকোনো মানুষকেই ভেতর থেকে কঠোর করে তোলে। তাঁর কাছে আর কাউকেই যদি আপন মনে না হয়, তবে তা তাঁর দোষ বলা যায় না। আর এমনই এক মানসিক অবস্থায় থাকা এক লোককেই সুইডিশ রাজনৈতিক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৪ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেকুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।

আরদালান শেখারাবিকে অনেকটা সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে। তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে একটু থাকার নিশ্চয়তার জন্য। এই পরিস্থিতি যেকোনো মানুষকেই ভেতর থেকে কঠোর করে তোলে। তাঁর কাছে আর কাউকেই যদি আপন মনে না হয়, তবে তা তাঁর দোষ বলা যায় না। আর এমনই এক মানসিক অবস্থায় থাকা এক লোককেই সুইডিশ রাজনৈতিক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

আরদালান শেখারাবিকে অনেকটা সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে। তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে একটু থাকার নিশ্চয়তার জন্য। এই পরিস্থিতি যেকোনো মানুষকেই ভেতর থেকে কঠোর করে তোলে। তাঁর কাছে আর কাউকেই যদি আপন মনে না হয়, তবে তা তাঁর দোষ বলা যায় না। আর এমনই এক মানসিক অবস্থায় থাকা এক লোককেই সুইডিশ রাজনৈতিক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৪ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

আরদালান শেখারাবিকে অনেকটা সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে। তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে একটু থাকার নিশ্চয়তার জন্য। এই পরিস্থিতি যেকোনো মানুষকেই ভেতর থেকে কঠোর করে তোলে। তাঁর কাছে আর কাউকেই যদি আপন মনে না হয়, তবে তা তাঁর দোষ বলা যায় না। আর এমনই এক মানসিক অবস্থায় থাকা এক লোককেই সুইডিশ রাজনৈতিক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
১ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৪ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৬ দিন আগে