জাহীদ রেজা নূর
গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। তাতেই আমি অনেকক্ষণ উড়ছিলাম কল্পনার আকাশে।
আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
করোনা তার হাত প্রসারিত করছিল যখন, তখন থেকেই সন্জীদা খাতুনের বাড়িতে যাওয়া নিষেধ হয়ে গিয়েছিল সবার জন্য। সে সময় মাঝে মাঝেই তিনি ফোন করতেন আমাকে। ২০২০ সালে করোনার বিভীষিকার মধ্যে নববর্ষের অনুষ্ঠান কীভাবে করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এতগুলো মানুষকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর মত ছিল না। যখন কথাগুলো বলছিলেন আমাকে, বোঝা যাচ্ছিল, তিনি চাইছেন তাঁর এই ভাবনাকে যেন আমি সমর্থন করি। আমিও নির্দ্বিধায় বলেছি, যেভাবে রোগটা ছড়াচ্ছে তাতে এত দিন একসঙ্গে এত মানুষের রিহার্সাল করা ঠিক হবে না। সেবার রমনার বটমূলে অনুষ্ঠান হয়নি। ভার্চুয়ালি হয়েছিল।
তখন সারা বিশ্বেই কেমন সময় আমরা সবাই মিলে কাটিয়েছি, সেটা কাউকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে না। প্রত্যেকেই ভুক্তভোগী। কাউকে বলে দিতে হবে না, তখন থেকে একের পর এক মানুষ মুড়ি-মুড়কির মতো মারা যেতে থাকলেন। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, মৃত্যুতালিকায় যোগ হতে থাকলেন কাছের মানুষেরা। মনে হচ্ছিল, এভাবেই ভয়াল রোগটা তার থাবা বাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে গ্রাস করবে বলে। কেউ একজন মারা গেছেন, সে কথা জানাতে ফোন করেছি যাঁকে, তিনিও তার কিছুদিন পর এই একই অতিমারিতে ভুগে মারা গেছেন।
তখন মাঝে মাঝেই কথা বলতেন তিনি। এক একটা মৃত্যু তাঁকে বিমর্ষ করে দিচ্ছিল। সে বছর তাঁর যে দুটো বই বের হয়েছিল, সে দুটো আমাকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাইরের মানুষের সামনে দরজা খোলা মানা। তাই ফোনে বলেছিলেন, ‘বাড়ির দারোয়ানের কাছে বই দেওয়া থাকবে, সেখান থেকে নিয়ে যাবি।’
আমি নিয়ে এসেছিলাম।
এরপর ২০২১ সালে একেবারে নিকটাত্মীয়দের হারাতে শুরু করলাম যখন, তখন থেকে আমার নিজেরও কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে হতো না। সন্জীদা খাতুনও আর খুব বেশি ফোন করতেন না। এ সময় তিনি জানতে পারলেন, তাঁর চোখে এই বয়সে আর অপারেশন করা সম্ভব নয়। অপারেশন করার পর যা যা মানতে হবে, শরীর তাতে সায় দেবে না। তাই পড়ার ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হলো। হাঁটতে সমস্যা হতে শুরু করল। প্রচণ্ডরকমভাবে জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা মানুষটি নিজের ওপর বিরক্ত হলেন।
সেই মানুষটি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে গিয়ে একবার তাঁকে চোখে দেখা সম্ভব।
২.
সেই পরিচিত বাড়ি! যখন বলেছেন, তখনই এই বাড়িতে এসে হাজির হয়েছি। কখনো কখনো তাঁর কথা রেকর্ড করেছি মোবাইল ফোনে। জন্মদিনগুলোতে তিনি যদি কথা বলতে রাজি হতেন, তাহলে কী যে আনন্দে ভরে যেত মন! আমরা সতীর্থ অনেকেই একসঙ্গে গিয়ে হাজির হতাম তাঁর বাড়িতে। লুচি আর তরকারি ছাড়াও আরও অনেক খাবারে ভরা থাকত টেবিল। কারও ইচ্ছে হলে খেয়ে নিত। কেউ তাঁকে শোনাত গান, কেউ করত আবৃত্তি। এবার সে সুযোগ ছিল না।
আমি যখন পৌঁছলাম, তখন নিচ থেকে বোঝা যাচ্ছিল না, লিফটের সাতে আসলে কী হচ্ছে। বাড়ির দারোয়ানদের বললাম, ‘কেউ কি এসেছে?’
তাঁরা বললেন, ‘একজন ওপরে গেছেন।’
আমি আগের দিনের কথামতো ঠিক করে রেখেছি, দরজা খোলা হলে কেকটা বাড়ির ভেতর রেখে তাঁকে একবার দূর থেকে দেখে ফিরে আসব।
সেভাবেই দরজায় দোরঘণ্টি বাজালাম। দরজা খুলে গেল। দেখলাম, আপা বসে আছেন। সামনে বসে আছেন ওয়াদুদ ভাই।
আমি দরজায় দাঁড়িয়েই বললাম, ‘শুভ জন্মদিন। বহুদিন পর দেখা হলো আপনার সঙ্গে!’
কোমল স্বরে তিনি বললেন, ‘ভেতরে আয়।’
আগের দিন বলেছিলেন, করোনা ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় এখন আগের মতো সতর্কতা অবলম্বন করেন না।
ঘরে ঢুকেই বুঝলাম একটু বেশি সকালে চলে এসেছি। তিনি তখনো শাড়ি বদলে পরিপাটি হয়ে বসেননি।
চোখে চশমা নেই।
আমি আমার অধিকার খাটিয়ে বললাম, ‘চশমা কোথায়?’
দেখিয়ে দিলেন সামনেই রয়েছে চশমার বাক্সটা।
বললাম, ‘আপনাকে চশমা ছাড়া ভালো লাগে না।’
এবার চশমা দিলেন চোখে। বললেন, ‘কাল রুচিরা শাড়ি বের করে দিয়ে গেছে। এখনো পরতে পারিনি।’
‘ছায়ানটের কর্মীরা কখন আসবে?’
‘নটার পর। বোধ হয়, সাড়ে নটার দিকে। পার্থ এসে ঘরদোর সব ঠিকঠাক করে গেছে। সে সময় পার্থ আবার আসবে। লিসার নাকি খুব জরুরি কাজ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ও সকালে সেখানে গেছে।’
৩.
ওয়াদুদ ভাইয়ের সঙ্গে সংগীত নিয়ে কিছু কথা বললেন তিনি। তার একটা হলো, স্বাভাবিকভাবে যারা গান শুরু করেছে, তাদের মধ্যে উচ্চাঙ্গসংগীতের জুজু ঢুকিয়ে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু এখনকার শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সহজাত ভঙ্গির মধ্যে জোর করে উচ্চাঙ্গসংগীত ঢুকিয়ে দিতে চান বলে অনেক নতুন শিল্পীই গানের ওপর উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
গান হতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত।
কথার ফাঁকে ফাঁকে টেলিফোন আসতে থাকে। তিনি আজ সবগুলো ফোন ধরবেন। যাঁরা ফোন করছেন, তাঁরা গভীর ভালোবাসা থেকেই আজকের দিনটিতে তাঁকে স্মরণ করছেন। তিনি সবার সঙ্গেই একটু একটু করে কথা বলছেন।
গতকাল বলেছিলেন, পড়তে অসুবিধা হয়, হাঁটতে অসুবিধা হয়। আজ দেখলাম, কে ফোন করছে সেটাও টেলিফোনের দিকে তাকিয়ে পড়ে ফেলতে পারছেন। বললেন, বেশিক্ষণ কোনো দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। ঝাপসা হয়ে আসে চোখ। ছোট মেয়ে রুচিরা একটা জিনিস কিনে দিয়েছেন, যা দিয়ে দেখলে অক্ষরগুলো বড় দেখা যায়। আশাপূর্ণা দেবীর ‘৫০টি গল্প’ নামে একটি বই মাঝে মাঝে পড়ছেন এখন। গল্পগুলোর কোনো কোনোটি ভালো হলেও কোনো কোনোটি ভালো লাগেনি তাঁর, সে কথাও বললেন।
৪.
এ সময় একেবারেই যুক্তিহীনভাবে আমি তাঁকে বললাম, ‘একটা গান করেন।’
চোখেমুখে রাগ ফুটিয়ে তুলে বললেন, ‘না।’
বললাম, ‘আমার জন্য দুটো লাইন গান। ভালো লাগবে।’
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। গান করবেন কি করবেন না, সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু যখন গানের কয়েকটি লাইন তুলে আনলেন কণ্ঠে, তখন বুঝলাম, এদিনের সঙ্গে যায়, এমন একটি গানই খুঁজছিলেন এই মৌনতার সময়।
গাইলেন:
‘কী গাব আমি, কী শোনাব আজি আনন্দধামে’।
৫.
তাঁর দুটো ফোনে একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা আসতে শুরু করল।
এর মধ্যে কানাডা থেকে ফোন করলেন পার্থ সারথি শিকদার। মস্কোতে পার্থদার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। চিঠি চালাচালি হতো। এরপর ফোন করলেন মাছওয়ালা। বাড়ির কাজের সহযোগী মেয়েটা কড়া ভাষায় জানাল, এখন মাছ কেনার দরকার নেই।
মাছওয়ালা লোভ দেখাচ্ছিল বড় মাছের। কিন্তু এর আগে সম্ভবত মাছ বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো অসততা করায় সে কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি। একটু পরে মনে হলো মনটা নরম হয়েছে, বাড়ির সহযোগীকে বললেন, ‘গুলশা মাছ দিতে চাইছে, নেব?’
ওয়াদুদ ভাইয়ের আনা ফুল গোছাতে গোছাতে এবার সেই রাগত মেয়েটাও নরম সুরে বলল, ‘দিতে বলেন।’
একটু পরেই ছায়ানটের কর্মীরা আসবে। তাই আমি বললাম, ‘আজ আসি!’
তারপর বললাম, ‘আপনি তো জানেন আমি প্রণাম, সালাম কিছুই করি না। কিন্তু মন থেকে যাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা এমনিতেই আসে, তাঁদের পা ছুঁই!’
‘না না’ করলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, ‘আমার হাতটা ধর তাহলে!’
তাঁর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ গালের সঙ্গে ধরে রাখলাম। তারপর বললাম, ‘কাল টেলিফোনে যা যা বললেন, তা আমার ভালো লাগেনি। আপনাকে বাঁচতে হবে। অনেক দিন বাঁচতে হবে। মৃত্যুর কথা বলা চলবে না।’
হেসে বললেন, ‘আবার আসিস!’
গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। তাতেই আমি অনেকক্ষণ উড়ছিলাম কল্পনার আকাশে।
আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
করোনা তার হাত প্রসারিত করছিল যখন, তখন থেকেই সন্জীদা খাতুনের বাড়িতে যাওয়া নিষেধ হয়ে গিয়েছিল সবার জন্য। সে সময় মাঝে মাঝেই তিনি ফোন করতেন আমাকে। ২০২০ সালে করোনার বিভীষিকার মধ্যে নববর্ষের অনুষ্ঠান কীভাবে করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এতগুলো মানুষকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর মত ছিল না। যখন কথাগুলো বলছিলেন আমাকে, বোঝা যাচ্ছিল, তিনি চাইছেন তাঁর এই ভাবনাকে যেন আমি সমর্থন করি। আমিও নির্দ্বিধায় বলেছি, যেভাবে রোগটা ছড়াচ্ছে তাতে এত দিন একসঙ্গে এত মানুষের রিহার্সাল করা ঠিক হবে না। সেবার রমনার বটমূলে অনুষ্ঠান হয়নি। ভার্চুয়ালি হয়েছিল।
তখন সারা বিশ্বেই কেমন সময় আমরা সবাই মিলে কাটিয়েছি, সেটা কাউকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে না। প্রত্যেকেই ভুক্তভোগী। কাউকে বলে দিতে হবে না, তখন থেকে একের পর এক মানুষ মুড়ি-মুড়কির মতো মারা যেতে থাকলেন। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, মৃত্যুতালিকায় যোগ হতে থাকলেন কাছের মানুষেরা। মনে হচ্ছিল, এভাবেই ভয়াল রোগটা তার থাবা বাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে গ্রাস করবে বলে। কেউ একজন মারা গেছেন, সে কথা জানাতে ফোন করেছি যাঁকে, তিনিও তার কিছুদিন পর এই একই অতিমারিতে ভুগে মারা গেছেন।
তখন মাঝে মাঝেই কথা বলতেন তিনি। এক একটা মৃত্যু তাঁকে বিমর্ষ করে দিচ্ছিল। সে বছর তাঁর যে দুটো বই বের হয়েছিল, সে দুটো আমাকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাইরের মানুষের সামনে দরজা খোলা মানা। তাই ফোনে বলেছিলেন, ‘বাড়ির দারোয়ানের কাছে বই দেওয়া থাকবে, সেখান থেকে নিয়ে যাবি।’
আমি নিয়ে এসেছিলাম।
এরপর ২০২১ সালে একেবারে নিকটাত্মীয়দের হারাতে শুরু করলাম যখন, তখন থেকে আমার নিজেরও কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে হতো না। সন্জীদা খাতুনও আর খুব বেশি ফোন করতেন না। এ সময় তিনি জানতে পারলেন, তাঁর চোখে এই বয়সে আর অপারেশন করা সম্ভব নয়। অপারেশন করার পর যা যা মানতে হবে, শরীর তাতে সায় দেবে না। তাই পড়ার ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হলো। হাঁটতে সমস্যা হতে শুরু করল। প্রচণ্ডরকমভাবে জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা মানুষটি নিজের ওপর বিরক্ত হলেন।
সেই মানুষটি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে গিয়ে একবার তাঁকে চোখে দেখা সম্ভব।
২.
সেই পরিচিত বাড়ি! যখন বলেছেন, তখনই এই বাড়িতে এসে হাজির হয়েছি। কখনো কখনো তাঁর কথা রেকর্ড করেছি মোবাইল ফোনে। জন্মদিনগুলোতে তিনি যদি কথা বলতে রাজি হতেন, তাহলে কী যে আনন্দে ভরে যেত মন! আমরা সতীর্থ অনেকেই একসঙ্গে গিয়ে হাজির হতাম তাঁর বাড়িতে। লুচি আর তরকারি ছাড়াও আরও অনেক খাবারে ভরা থাকত টেবিল। কারও ইচ্ছে হলে খেয়ে নিত। কেউ তাঁকে শোনাত গান, কেউ করত আবৃত্তি। এবার সে সুযোগ ছিল না।
আমি যখন পৌঁছলাম, তখন নিচ থেকে বোঝা যাচ্ছিল না, লিফটের সাতে আসলে কী হচ্ছে। বাড়ির দারোয়ানদের বললাম, ‘কেউ কি এসেছে?’
তাঁরা বললেন, ‘একজন ওপরে গেছেন।’
আমি আগের দিনের কথামতো ঠিক করে রেখেছি, দরজা খোলা হলে কেকটা বাড়ির ভেতর রেখে তাঁকে একবার দূর থেকে দেখে ফিরে আসব।
সেভাবেই দরজায় দোরঘণ্টি বাজালাম। দরজা খুলে গেল। দেখলাম, আপা বসে আছেন। সামনে বসে আছেন ওয়াদুদ ভাই।
আমি দরজায় দাঁড়িয়েই বললাম, ‘শুভ জন্মদিন। বহুদিন পর দেখা হলো আপনার সঙ্গে!’
কোমল স্বরে তিনি বললেন, ‘ভেতরে আয়।’
আগের দিন বলেছিলেন, করোনা ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় এখন আগের মতো সতর্কতা অবলম্বন করেন না।
ঘরে ঢুকেই বুঝলাম একটু বেশি সকালে চলে এসেছি। তিনি তখনো শাড়ি বদলে পরিপাটি হয়ে বসেননি।
চোখে চশমা নেই।
আমি আমার অধিকার খাটিয়ে বললাম, ‘চশমা কোথায়?’
দেখিয়ে দিলেন সামনেই রয়েছে চশমার বাক্সটা।
বললাম, ‘আপনাকে চশমা ছাড়া ভালো লাগে না।’
এবার চশমা দিলেন চোখে। বললেন, ‘কাল রুচিরা শাড়ি বের করে দিয়ে গেছে। এখনো পরতে পারিনি।’
‘ছায়ানটের কর্মীরা কখন আসবে?’
‘নটার পর। বোধ হয়, সাড়ে নটার দিকে। পার্থ এসে ঘরদোর সব ঠিকঠাক করে গেছে। সে সময় পার্থ আবার আসবে। লিসার নাকি খুব জরুরি কাজ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ও সকালে সেখানে গেছে।’
৩.
ওয়াদুদ ভাইয়ের সঙ্গে সংগীত নিয়ে কিছু কথা বললেন তিনি। তার একটা হলো, স্বাভাবিকভাবে যারা গান শুরু করেছে, তাদের মধ্যে উচ্চাঙ্গসংগীতের জুজু ঢুকিয়ে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু এখনকার শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সহজাত ভঙ্গির মধ্যে জোর করে উচ্চাঙ্গসংগীত ঢুকিয়ে দিতে চান বলে অনেক নতুন শিল্পীই গানের ওপর উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
গান হতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত।
কথার ফাঁকে ফাঁকে টেলিফোন আসতে থাকে। তিনি আজ সবগুলো ফোন ধরবেন। যাঁরা ফোন করছেন, তাঁরা গভীর ভালোবাসা থেকেই আজকের দিনটিতে তাঁকে স্মরণ করছেন। তিনি সবার সঙ্গেই একটু একটু করে কথা বলছেন।
গতকাল বলেছিলেন, পড়তে অসুবিধা হয়, হাঁটতে অসুবিধা হয়। আজ দেখলাম, কে ফোন করছে সেটাও টেলিফোনের দিকে তাকিয়ে পড়ে ফেলতে পারছেন। বললেন, বেশিক্ষণ কোনো দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। ঝাপসা হয়ে আসে চোখ। ছোট মেয়ে রুচিরা একটা জিনিস কিনে দিয়েছেন, যা দিয়ে দেখলে অক্ষরগুলো বড় দেখা যায়। আশাপূর্ণা দেবীর ‘৫০টি গল্প’ নামে একটি বই মাঝে মাঝে পড়ছেন এখন। গল্পগুলোর কোনো কোনোটি ভালো হলেও কোনো কোনোটি ভালো লাগেনি তাঁর, সে কথাও বললেন।
৪.
এ সময় একেবারেই যুক্তিহীনভাবে আমি তাঁকে বললাম, ‘একটা গান করেন।’
চোখেমুখে রাগ ফুটিয়ে তুলে বললেন, ‘না।’
বললাম, ‘আমার জন্য দুটো লাইন গান। ভালো লাগবে।’
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। গান করবেন কি করবেন না, সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু যখন গানের কয়েকটি লাইন তুলে আনলেন কণ্ঠে, তখন বুঝলাম, এদিনের সঙ্গে যায়, এমন একটি গানই খুঁজছিলেন এই মৌনতার সময়।
গাইলেন:
‘কী গাব আমি, কী শোনাব আজি আনন্দধামে’।
৫.
তাঁর দুটো ফোনে একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা আসতে শুরু করল।
এর মধ্যে কানাডা থেকে ফোন করলেন পার্থ সারথি শিকদার। মস্কোতে পার্থদার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। চিঠি চালাচালি হতো। এরপর ফোন করলেন মাছওয়ালা। বাড়ির কাজের সহযোগী মেয়েটা কড়া ভাষায় জানাল, এখন মাছ কেনার দরকার নেই।
মাছওয়ালা লোভ দেখাচ্ছিল বড় মাছের। কিন্তু এর আগে সম্ভবত মাছ বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো অসততা করায় সে কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি। একটু পরে মনে হলো মনটা নরম হয়েছে, বাড়ির সহযোগীকে বললেন, ‘গুলশা মাছ দিতে চাইছে, নেব?’
ওয়াদুদ ভাইয়ের আনা ফুল গোছাতে গোছাতে এবার সেই রাগত মেয়েটাও নরম সুরে বলল, ‘দিতে বলেন।’
একটু পরেই ছায়ানটের কর্মীরা আসবে। তাই আমি বললাম, ‘আজ আসি!’
তারপর বললাম, ‘আপনি তো জানেন আমি প্রণাম, সালাম কিছুই করি না। কিন্তু মন থেকে যাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা এমনিতেই আসে, তাঁদের পা ছুঁই!’
‘না না’ করলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, ‘আমার হাতটা ধর তাহলে!’
তাঁর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ গালের সঙ্গে ধরে রাখলাম। তারপর বললাম, ‘কাল টেলিফোনে যা যা বললেন, তা আমার ভালো লাগেনি। আপনাকে বাঁচতে হবে। অনেক দিন বাঁচতে হবে। মৃত্যুর কথা বলা চলবে না।’
হেসে বললেন, ‘আবার আসিস!’
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৩ দিন আগে১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৪ দিন আগেচলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৫ দিন আগেবিরিয়ানি কিংবা কাবাব-পরোটা খেতে মন চাইলে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের কথা মনে পড়তেই পারে। এসব খেয়ে কেউ কেউ বিউটি কিংবা নূরানীর লাচ্ছি খেয়ে ভোজ শেষ করতে পারেন। আবার কেউ ধোঁয়া ওঠা গরম চা পিরিচে নিয়ে ফুঁকে ফুঁকে গলায় ঢালতে পারেন। যাঁরা নিয়মিত যান নাজিরাবাজারে, তাঁরা জানেন এসব চা-প্রেমীর ভিড় লেগে...
৬ দিন আগেকুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।
গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
০৪ এপ্রিল ২০২২১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৪ দিন আগেচলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৫ দিন আগেবিরিয়ানি কিংবা কাবাব-পরোটা খেতে মন চাইলে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের কথা মনে পড়তেই পারে। এসব খেয়ে কেউ কেউ বিউটি কিংবা নূরানীর লাচ্ছি খেয়ে ভোজ শেষ করতে পারেন। আবার কেউ ধোঁয়া ওঠা গরম চা পিরিচে নিয়ে ফুঁকে ফুঁকে গলায় ঢালতে পারেন। যাঁরা নিয়মিত যান নাজিরাবাজারে, তাঁরা জানেন এসব চা-প্রেমীর ভিড় লেগে...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম
গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
০৪ এপ্রিল ২০২২কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৩ দিন আগেচলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৫ দিন আগেবিরিয়ানি কিংবা কাবাব-পরোটা খেতে মন চাইলে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের কথা মনে পড়তেই পারে। এসব খেয়ে কেউ কেউ বিউটি কিংবা নূরানীর লাচ্ছি খেয়ে ভোজ শেষ করতে পারেন। আবার কেউ ধোঁয়া ওঠা গরম চা পিরিচে নিয়ে ফুঁকে ফুঁকে গলায় ঢালতে পারেন। যাঁরা নিয়মিত যান নাজিরাবাজারে, তাঁরা জানেন এসব চা-প্রেমীর ভিড় লেগে...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯
গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
০৪ এপ্রিল ২০২২কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৩ দিন আগে১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৪ দিন আগেবিরিয়ানি কিংবা কাবাব-পরোটা খেতে মন চাইলে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের কথা মনে পড়তেই পারে। এসব খেয়ে কেউ কেউ বিউটি কিংবা নূরানীর লাচ্ছি খেয়ে ভোজ শেষ করতে পারেন। আবার কেউ ধোঁয়া ওঠা গরম চা পিরিচে নিয়ে ফুঁকে ফুঁকে গলায় ঢালতে পারেন। যাঁরা নিয়মিত যান নাজিরাবাজারে, তাঁরা জানেন এসব চা-প্রেমীর ভিড় লেগে...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়
বিরিয়ানি কিংবা কাবাব-পরোটা খেতে মন চাইলে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের কথা মনে পড়তেই পারে। এসব খেয়ে কেউ কেউ বিউটি কিংবা নূরানীর লাচ্ছি খেয়ে ভোজ শেষ করতে পারেন। আবার কেউ ধোঁয়া ওঠা গরম চা পিরিচে নিয়ে ফুঁকে ফুঁকে গলায় ঢালতে পারেন। যাঁরা নিয়মিত যান নাজিরাবাজারে, তাঁরা জানেন এসব চা-প্রেমীর ভিড় লেগে থাকে পান্নু খান টি স্টোরে।
পান্নুর চা নামেই সমধিক পরিচিত কাজী আলাউদ্দিন রোডের ৩৭/২ নম্বরের ছোট দোকানটি। সাধারণ চায়ের পাশাপাশি মালাই চা, কফি চা, পনির চা, বাদাম চা—এ রকম নানা চায়ের সঙ্গে চাইলে বিস্কুট, পাউরুটি বা বাকরখানি ডুবিয়ে খেতে পারেন, এই দোকানে বসে। বসার জায়গা পাওয়াটা বেশির ভাগ সময় দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই দাঁড়িয়েই নিতে হয় পান্নুর চায়ের স্বাদ। ২০০৮ সালে প্রথমে নিউমার্কেটে চালু হলেও দোকানটি এখন নাজিরাবাজারে। খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এর চা।
ছবি: মেহেদী হাসান
বিরিয়ানি কিংবা কাবাব-পরোটা খেতে মন চাইলে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের কথা মনে পড়তেই পারে। এসব খেয়ে কেউ কেউ বিউটি কিংবা নূরানীর লাচ্ছি খেয়ে ভোজ শেষ করতে পারেন। আবার কেউ ধোঁয়া ওঠা গরম চা পিরিচে নিয়ে ফুঁকে ফুঁকে গলায় ঢালতে পারেন। যাঁরা নিয়মিত যান নাজিরাবাজারে, তাঁরা জানেন এসব চা-প্রেমীর ভিড় লেগে থাকে পান্নু খান টি স্টোরে।
পান্নুর চা নামেই সমধিক পরিচিত কাজী আলাউদ্দিন রোডের ৩৭/২ নম্বরের ছোট দোকানটি। সাধারণ চায়ের পাশাপাশি মালাই চা, কফি চা, পনির চা, বাদাম চা—এ রকম নানা চায়ের সঙ্গে চাইলে বিস্কুট, পাউরুটি বা বাকরখানি ডুবিয়ে খেতে পারেন, এই দোকানে বসে। বসার জায়গা পাওয়াটা বেশির ভাগ সময় দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই দাঁড়িয়েই নিতে হয় পান্নুর চায়ের স্বাদ। ২০০৮ সালে প্রথমে নিউমার্কেটে চালু হলেও দোকানটি এখন নাজিরাবাজারে। খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এর চা।
ছবি: মেহেদী হাসান
গতকাল অভয় দিয়ে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে তাঁর বাড়িতে যাওয়া যাবে। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে দেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাবে। আজ, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টার আগেই পৌঁছে গেলাম তাঁর বাড়িতে। আজ তাঁর ৯০তম জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
০৪ এপ্রিল ২০২২কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৩ দিন আগে১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৪ দিন আগেচলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৫ দিন আগে