খান মুহাম্মদ রুমেল
তৃতীয় দিনে বইমেলার প্রবেশমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রবেশমুখে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তল্লাশি করে সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ, তবে কিছুটা ঢিলেঢালা। গেটে মানুষের লম্বা লাইন দেখে মনে হয়, বেচাবিক্রি জমে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু মেলার মাঠে ঢুকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে সব। স্টলগুলোর বেশির ভাগই ফাঁকা। ফাঁকা মানে—একেবারেই সুনসান! দু-একটি স্টলের সামনে যা-ও কিছুটা ভিড় আছে—হাতে গোনা যায়। এত মানুষ তাহলে গেল কোথায়? গেট দিয়ে ঢুকে নিশ্চয় বাতাসে মিলিয়ে যায়নি তারা? হাঁটতে থাকি আপনমনে। পরিচিত কারও খোঁজ মেলে না। হঠাৎ ফোন করেন মনি হায়দার। জনপ্রিয় লেখক, বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক! মনি ভাইয়ের উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠ।
— কোথায় তুমি?
— এই তো ভাই, মেলায় ঢুকলাম মাত্র।
— কোথায় আছ?
— হাঁটছি।
— আমিও আছি, দেখা হবে!
— জি, দেখা হবে।
ফোন রেখে দেন মনি হায়দার। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দাঁড়াই অনিন্দ্য প্রকাশের সামনে। বই নেড়েচেড়ে দেখি। বিষণ্ন মুখে বসে আছেন বিক্রয়কর্মীরা। আমাকে দেখে আগ্রহ জাগে তাঁদের মনে। হয়তো ভাবেন, একজন ক্রেতা তো পাওয়া গেল।
— দাদা?
পেছন থেকে ডেকে ওঠেন কেউ একজন! তাকিয়ে দেখি অরুণ কুমার বিশ্বাস। এই শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোয়েন্দা কাহিনি লিখে এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন। কিশোর থ্রিলার, ভ্রমণকাহিনি এবং বড়দের জন্যও লেখেন তিনি। এবারও মেলায় এসেছে তাঁর বেশ কয়েকটি বই। এর মধ্যে অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে এসেছে গোয়েন্দা কাহিনি— সিগনেট।
— কাহিনি কী বইয়ের? জিজ্ঞেস করি আমি।
— এটা আমার অলোকেশ রায় সিরিজের একটি বই। সম্পূর্ণ গোয়েন্দা কাহিনি।
— আপনার অলোকেশ রায় সিরিজ খুব পাঠকপ্রিয় হয়েছে।
— হুম্, এটা ঠিক। বাংলাদেশে গোয়েন্দা কাহিনির পাঠক বাড়ছে। আমি ছাড়াও আর যাঁরা লিখছেন, সবাই ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
— জি দাদা। এমনটাই দেখছি।
দুজন গণমাধ্যমকর্মী এসে দাঁড়ান আমাদের পাশে। অরুণ কুমার বিশ্বাসের সাক্ষাৎকার নেবেন তাঁরা। ক্যামেরা প্রস্তুত হচ্ছে।
— দাদা, তাহলে আপনি কথা বলেন। আমি সামনের দিকে যাই।
— জি দাদা, ভালো থাকবেন। দেখা হবে আবার।
যাই সামনের দিকে। আস্তে আস্তে ডুবছে সূর্যটা। কমে আসছে দিনের আলো। স্টলগুলোয় জ্বলে উঠছে সাদা হলুদ বাতি। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি শিশুচত্বরে। এদিকটায় ভীষণ ভিড়। বেচাকেনাও চলছে ধুমসে। সাধারণত শুক্র-শনিবার ছাড়া শিশুদের এত সমাগম হয় না। কিন্তু সোমবারে এত ভিড়ের হেতু কী? সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে, এদিন সরস্বতীপূজা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। আর এ জন্যই বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিয়ে ছুটে এসেছেন মেলায়। প্রায় সব শিশুর হাতেই বইয়ের প্যাকেট, একাধিক। বাবা-মায়ের হাত ধরে স্টলে স্টলে ঘুরছে তারা। ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে শিশুদের কলকাকলি দেখে।
হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি মেলার পুব দিকে একেবারে শেষ মাথায়। এদিকটায় সারি সারি অসংখ্য খাবারের দোকান। দোকানগুলোর সামনে চেয়ার-টেবিল পাতা। কোনো টেবিলই খালি নেই। চেয়ার না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক মানুষ। তা-ও বিক্রেতারা হাঁকডাক করে ডাকছেন মানুষজনকে— আসেন আসেন, ভালো কাবাব আছে...চটপটি ফুচকা আছে...আসেন...আসেন...বসেন! এবার আমার বোধোদয় হয়, প্রবেশমুখের উপচে পড়া মানুষ থাকার পরেও মেলার মাঠ কেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল! মানুষ বেশির ভাগ এসে ভিড় জমিয়েছেন খাবারের দোকানে!
হাঁটা পথে দেখা হয়ে যায় মনি হায়দারের সঙ্গে। মনি হায়দার মানেই উচ্ছল প্রাণবন্ত আড্ডা আর প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি। তবে এদিন মনি হায়দারের সঙ্গে মাত্র একজন মানুষ। খুব শান্ত নিরিবিলি গোছের। মনি ভাই পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সঙ্গে। ড. সাগর রশিদ সাভার অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। খুবই পড়াশোনা জানা মানুষ। মেলায় এবার আসছে তাঁর লেখা বই—বাংলা বানান সংস্কার: বাংলাদেশ। ড. সাগর রশিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে বাংলা পড়াতে পড়াতে তাঁর মনে হয়েছে ব্যাকরণ ও বানান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভীতি আছে। এ ছাড়া সঠিক নির্দেশনাও পায় না তারা। সেই তাগিদ থেকেই এই বই লেখা। বেশ আগ্রহ জাগে তাঁকে ঘিরে! কথা বলে মনে হয়, এ বিষয়ে তাঁর পড়াশোনাও প্রচুর। বানান নিয়ে নানা আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে। কিছু প্রচলিত শব্দের বানানের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেন তিনি। যেমন ‘তৈরি’ শব্দটি সাধারণত এখন আমরা হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লিখি। কিন্তু সাগর রশিদ জানান, এটি দীর্ঘ ই–কার দিয়েও লেখা যায়।
— সেটা কেমন? কৌতূহলী জিজ্ঞাসা আমার!
— যেমন ধরেন, আপনি বলছেন আমার জন্য এক কাপ চা তৈরি করো। এখানে র-এর ওপর হ্রস্ব ই-কার হবে। আবার, আমার জন্য একটি জামা তৈরী করুন। এখানে র-এর ওপর দীর্ঘ ই-কার হবে।
— বাহ্, বেশ মজা তো!
— হুম্, বাংলা বানানে এমন আরও অনেক মজা আছে। এসব বিষয়ই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি বইটিতে।
— আচ্ছা, বলুন তো, বানান নিয়ে আমাদের মধ্যে এত সংশয়, গোলমাল কেন?
— আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন? খুব শান্ত স্বরে বলেন সাগর রশিদ।
— মানে, বাংলা একাডেমি কিছুদিন পরপর বানানরীতি পরিবর্তন করে। আর সেটা নিয়ে তৈরি হয় দ্বিধা। যেমন বাংলা একাডেমি একবার বলল—‘ঈদ’ না লিখে ‘ইদ’ লেখার জন্য। এই পরিবর্তনটা বেশির ভাগ মানুষ গ্রহণ করেননি। তবে এখন যেটা হচ্ছে ‘ইদ’ এবং ‘ঈদ’ দুটোই চলছে। যে যার মতো লিখছে। আবার ধরুন, ‘কাহিনী’ নাকি ’কাহিনি’—কোনটা লিখব। এ নিয়েও দেখি বাহাস আছে। এমন আরও অনেক উদাহরণ দিতে পারব।
— আচ্ছা, একটা গল্প বলি আপনাকে। একবার সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বললেন—গুরুজি, এখন থেকে আমি এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি করে বলতে চাই। আর ‘গরু’ না লিখে ‘গোরু’ লিখতে চাই। রবীন্দ্রনাথ বললেন—হ্যাঁ, এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি—তুমি বলতেই পারো। আর গরুতে ও-কার দিলে গরুগুলো একটু মোটাতাজা হবে এই আরকি! এ ছাড়া আর বিশেষ কোনো হেরফের হবে বলে আমি মনে করিনে!
ড. সাগর রশিদের কথা শুনে হাহা করে হেসে ওঠেন মনি হায়দার। হাসতে থাকি আমিও। হাসেন সাগর রশিদও।
বিশেষ কী কাজ আছে বলে চলে যেতে চান মনি হায়দার।
— এত তাড়া কিসের আপনার? বলি আমি।
— তাড়া কিছু নেই। তবে তুমি লিখে দিয়ো—‘মোকাম সদরঘাট’ নিয়ে অস্থির হয়ে আছে মনি হায়দার।
— আচ্ছা ভাই। লিখব।
আবার সেই প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি মনি হায়দারের।
মোকাম সদরঘাট নামে একটা উপন্যাস বের হওয়ার কথা রয়েছে এবার মনি হায়দারের। চলে যান তিনি। আমিও বিদায় নিই সাগর রশিদের কাছ থেকে। ধীর পায়ে বের হয়ে আসি মেলা থেকে। ঢোকার মুখে ভিড় আরও বেড়েছে। মানুষের চাপ সামলে কোনোমতে বের হয়ে ফুটপাতে দাঁড়াই। টিএসসির দিক থেকে ভেসে আসছে গানের সুর—
জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না।
আসবার কালে কী জাত ছিলে
এসে তুমি কী জাত নিলে...
তৃতীয় দিনে বইমেলার প্রবেশমুখে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রবেশমুখে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তল্লাশি করে সবাইকে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ, তবে কিছুটা ঢিলেঢালা। গেটে মানুষের লম্বা লাইন দেখে মনে হয়, বেচাবিক্রি জমে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু মেলার মাঠে ঢুকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে সব। স্টলগুলোর বেশির ভাগই ফাঁকা। ফাঁকা মানে—একেবারেই সুনসান! দু-একটি স্টলের সামনে যা-ও কিছুটা ভিড় আছে—হাতে গোনা যায়। এত মানুষ তাহলে গেল কোথায়? গেট দিয়ে ঢুকে নিশ্চয় বাতাসে মিলিয়ে যায়নি তারা? হাঁটতে থাকি আপনমনে। পরিচিত কারও খোঁজ মেলে না। হঠাৎ ফোন করেন মনি হায়দার। জনপ্রিয় লেখক, বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক! মনি ভাইয়ের উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠ।
— কোথায় তুমি?
— এই তো ভাই, মেলায় ঢুকলাম মাত্র।
— কোথায় আছ?
— হাঁটছি।
— আমিও আছি, দেখা হবে!
— জি, দেখা হবে।
ফোন রেখে দেন মনি হায়দার। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দাঁড়াই অনিন্দ্য প্রকাশের সামনে। বই নেড়েচেড়ে দেখি। বিষণ্ন মুখে বসে আছেন বিক্রয়কর্মীরা। আমাকে দেখে আগ্রহ জাগে তাঁদের মনে। হয়তো ভাবেন, একজন ক্রেতা তো পাওয়া গেল।
— দাদা?
পেছন থেকে ডেকে ওঠেন কেউ একজন! তাকিয়ে দেখি অরুণ কুমার বিশ্বাস। এই শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোয়েন্দা কাহিনি লিখে এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন। কিশোর থ্রিলার, ভ্রমণকাহিনি এবং বড়দের জন্যও লেখেন তিনি। এবারও মেলায় এসেছে তাঁর বেশ কয়েকটি বই। এর মধ্যে অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে এসেছে গোয়েন্দা কাহিনি— সিগনেট।
— কাহিনি কী বইয়ের? জিজ্ঞেস করি আমি।
— এটা আমার অলোকেশ রায় সিরিজের একটি বই। সম্পূর্ণ গোয়েন্দা কাহিনি।
— আপনার অলোকেশ রায় সিরিজ খুব পাঠকপ্রিয় হয়েছে।
— হুম্, এটা ঠিক। বাংলাদেশে গোয়েন্দা কাহিনির পাঠক বাড়ছে। আমি ছাড়াও আর যাঁরা লিখছেন, সবাই ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
— জি দাদা। এমনটাই দেখছি।
দুজন গণমাধ্যমকর্মী এসে দাঁড়ান আমাদের পাশে। অরুণ কুমার বিশ্বাসের সাক্ষাৎকার নেবেন তাঁরা। ক্যামেরা প্রস্তুত হচ্ছে।
— দাদা, তাহলে আপনি কথা বলেন। আমি সামনের দিকে যাই।
— জি দাদা, ভালো থাকবেন। দেখা হবে আবার।
যাই সামনের দিকে। আস্তে আস্তে ডুবছে সূর্যটা। কমে আসছে দিনের আলো। স্টলগুলোয় জ্বলে উঠছে সাদা হলুদ বাতি। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি শিশুচত্বরে। এদিকটায় ভীষণ ভিড়। বেচাকেনাও চলছে ধুমসে। সাধারণত শুক্র-শনিবার ছাড়া শিশুদের এত সমাগম হয় না। কিন্তু সোমবারে এত ভিড়ের হেতু কী? সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে, এদিন সরস্বতীপূজা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। আর এ জন্যই বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিয়ে ছুটে এসেছেন মেলায়। প্রায় সব শিশুর হাতেই বইয়ের প্যাকেট, একাধিক। বাবা-মায়ের হাত ধরে স্টলে স্টলে ঘুরছে তারা। ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে শিশুদের কলকাকলি দেখে।
হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি মেলার পুব দিকে একেবারে শেষ মাথায়। এদিকটায় সারি সারি অসংখ্য খাবারের দোকান। দোকানগুলোর সামনে চেয়ার-টেবিল পাতা। কোনো টেবিলই খালি নেই। চেয়ার না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক মানুষ। তা-ও বিক্রেতারা হাঁকডাক করে ডাকছেন মানুষজনকে— আসেন আসেন, ভালো কাবাব আছে...চটপটি ফুচকা আছে...আসেন...আসেন...বসেন! এবার আমার বোধোদয় হয়, প্রবেশমুখের উপচে পড়া মানুষ থাকার পরেও মেলার মাঠ কেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল! মানুষ বেশির ভাগ এসে ভিড় জমিয়েছেন খাবারের দোকানে!
হাঁটা পথে দেখা হয়ে যায় মনি হায়দারের সঙ্গে। মনি হায়দার মানেই উচ্ছল প্রাণবন্ত আড্ডা আর প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি। তবে এদিন মনি হায়দারের সঙ্গে মাত্র একজন মানুষ। খুব শান্ত নিরিবিলি গোছের। মনি ভাই পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সঙ্গে। ড. সাগর রশিদ সাভার অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। খুবই পড়াশোনা জানা মানুষ। মেলায় এবার আসছে তাঁর লেখা বই—বাংলা বানান সংস্কার: বাংলাদেশ। ড. সাগর রশিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে বাংলা পড়াতে পড়াতে তাঁর মনে হয়েছে ব্যাকরণ ও বানান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভীতি আছে। এ ছাড়া সঠিক নির্দেশনাও পায় না তারা। সেই তাগিদ থেকেই এই বই লেখা। বেশ আগ্রহ জাগে তাঁকে ঘিরে! কথা বলে মনে হয়, এ বিষয়ে তাঁর পড়াশোনাও প্রচুর। বানান নিয়ে নানা আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে। কিছু প্রচলিত শব্দের বানানের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেন তিনি। যেমন ‘তৈরি’ শব্দটি সাধারণত এখন আমরা হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লিখি। কিন্তু সাগর রশিদ জানান, এটি দীর্ঘ ই–কার দিয়েও লেখা যায়।
— সেটা কেমন? কৌতূহলী জিজ্ঞাসা আমার!
— যেমন ধরেন, আপনি বলছেন আমার জন্য এক কাপ চা তৈরি করো। এখানে র-এর ওপর হ্রস্ব ই-কার হবে। আবার, আমার জন্য একটি জামা তৈরী করুন। এখানে র-এর ওপর দীর্ঘ ই-কার হবে।
— বাহ্, বেশ মজা তো!
— হুম্, বাংলা বানানে এমন আরও অনেক মজা আছে। এসব বিষয়ই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি বইটিতে।
— আচ্ছা, বলুন তো, বানান নিয়ে আমাদের মধ্যে এত সংশয়, গোলমাল কেন?
— আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন? খুব শান্ত স্বরে বলেন সাগর রশিদ।
— মানে, বাংলা একাডেমি কিছুদিন পরপর বানানরীতি পরিবর্তন করে। আর সেটা নিয়ে তৈরি হয় দ্বিধা। যেমন বাংলা একাডেমি একবার বলল—‘ঈদ’ না লিখে ‘ইদ’ লেখার জন্য। এই পরিবর্তনটা বেশির ভাগ মানুষ গ্রহণ করেননি। তবে এখন যেটা হচ্ছে ‘ইদ’ এবং ‘ঈদ’ দুটোই চলছে। যে যার মতো লিখছে। আবার ধরুন, ‘কাহিনী’ নাকি ’কাহিনি’—কোনটা লিখব। এ নিয়েও দেখি বাহাস আছে। এমন আরও অনেক উদাহরণ দিতে পারব।
— আচ্ছা, একটা গল্প বলি আপনাকে। একবার সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বললেন—গুরুজি, এখন থেকে আমি এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি করে বলতে চাই। আর ‘গরু’ না লিখে ‘গোরু’ লিখতে চাই। রবীন্দ্রনাথ বললেন—হ্যাঁ, এমএ ক্লাসের ছাত্রদের তুমি—তুমি বলতেই পারো। আর গরুতে ও-কার দিলে গরুগুলো একটু মোটাতাজা হবে এই আরকি! এ ছাড়া আর বিশেষ কোনো হেরফের হবে বলে আমি মনে করিনে!
ড. সাগর রশিদের কথা শুনে হাহা করে হেসে ওঠেন মনি হায়দার। হাসতে থাকি আমিও। হাসেন সাগর রশিদও।
বিশেষ কী কাজ আছে বলে চলে যেতে চান মনি হায়দার।
— এত তাড়া কিসের আপনার? বলি আমি।
— তাড়া কিছু নেই। তবে তুমি লিখে দিয়ো—‘মোকাম সদরঘাট’ নিয়ে অস্থির হয়ে আছে মনি হায়দার।
— আচ্ছা ভাই। লিখব।
আবার সেই প্রাণখোলা ঠা ঠা হাসি মনি হায়দারের।
মোকাম সদরঘাট নামে একটা উপন্যাস বের হওয়ার কথা রয়েছে এবার মনি হায়দারের। চলে যান তিনি। আমিও বিদায় নিই সাগর রশিদের কাছ থেকে। ধীর পায়ে বের হয়ে আসি মেলা থেকে। ঢোকার মুখে ভিড় আরও বেড়েছে। মানুষের চাপ সামলে কোনোমতে বের হয়ে ফুটপাতে দাঁড়াই। টিএসসির দিক থেকে ভেসে আসছে গানের সুর—
জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না।
আসবার কালে কী জাত ছিলে
এসে তুমি কী জাত নিলে...
১৯৭১ সালের ১ মার্চ দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৩ মার্চ আসন্ন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। এই প্রতিহিংসামূলক সিদ্ধান্তে শুধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দই ক্ষুব্ধ হননি, রাস্তায় নামে বিক্ষুব্ধ সাধারণ জনতা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
২ দিন আগে...ভাইস চ্যান্সেলর সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেনের কথা বলতে যেয়েই অধ্যাপক রাজ্জাক বললেন: ১৯৫২-তে ভাষা আন্দোলনের সময়ে, আর কিছুর জন্য নয়, সাহসের অভাবে, হি (সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন) অকেজন্ড মাচ ট্রাবল। আমার মনে আছে যেদিন গুলিটা হলো, ইউনিভার্সিটির ঐ পুরানা দালানে (বর্তমান মেডিকেল কলেজ হসপিটাল বিল্ডিং-এর দক্ষিণ দিক)..
৩ দিন আগেযদি কেউ ভালোবাসা দিবসে তাঁর সঙ্গীর জন্য একটি কার্ড কিনে থাকেন, তাহলে সহজেই বলে দেওয়া যায়—কার্ড কেনা মানুষটি একজন পুরুষ। কারণ সাধারণত পুরুষেরাই নারীদের তুলনায় বেশি রোমান্টিক। এটি একটি সর্বজনবিদিত সত্য, তবে স্বীকৃতি খুবই কম।
১৬ দিন আগেএক বছরেও শুকায়নি হৃদয়ের ক্ষত। রক্তাক্ত স্মৃতি বুকে নিয়ে ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। তাঁদের উদ্দেশ্য শুধু ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করা নয়, বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জনও প্রধান লক্ষ্য।
১৮ দিন আগে