মারুফ ইসলাম

আজ এক বন্ধুকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবসের শুভেচ্ছা জানালাম। তিনি ‘হাসির বদলে হাসি’ না দিয়ে সামান্য জ্ঞান ঝাড়লেন।
জ্ঞানী অধ্যাপকদের মতো গলা খাঁকারি দিয়ে বন্ধুটি বললেন, ‘এসব বই দিবস টিবস পালন করে হয়টা কি বল তো? কোনো লাভ আছে? পৃথিবীতে যখন বই ছিল না, তখন কি মানুষ জ্ঞান বিনিময় করেনি? জ্ঞান টিকে থাকেনি? আরে, বই ছাপানোর ইতিহাস তো খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র ১ হাজার ১৫৪ বছর আগে পৃথিবীর প্রথম বইটি ছাপা হয়েছিল চীনে। তখনো বিদ্যুৎ-চালিত মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। কাঠের ব্লক তৈরি করে হস্তচালিত যন্ত্র দিয়ে ছাপা হয়েছিল সেই বই। তার আগে কি পৃথিবী জ্ঞানশূন্য ছিল? জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়নি? এসব দিবস টিবস চালু করার উদ্দেশ্য ব্যবসা, বুঝলি? ব্যবসা।’
আমি ছোট্ট করে ‘হুঁ’ বলে প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করলাম। পৃথিবীতে নৈরাশ্যবাদী মানুষের তো অভাব নেই। ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, বিশ্বে ৩০ কোটি মানুষ নিরাশায় ভুগছে। এত দিন সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে নিশ্চয়। আমার বন্ধুটি সেই ৩০ কোটিরও বেশি নৈরাশ্যবাদী মানুষের মধ্যে একজন।
এঁদের বাইরেরও কোটি কোটি মানুষ আছেন, যাঁরা পৃথিবীটাকে ভিন্ন চোখে দেখেন। ইতিবাচক কিছু করতে চান। ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেস ছিলেন তেমন একজন। বাস করতেন স্পেনে। বাতিক ছিল লেখালেখির। পরিচয় দিতেন লেখক হিসেবে। তাঁর মনে একবার প্রশ্নের উদয় হলো, ‘আচ্ছা, বই নিয়ে একটি দিন উদ্যাপন করলে কেমন হয়? সারা দিন মানুষ বই নিয়ে নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা করল, অনুষ্ঠান আয়োজন করল? ব্যাপারটা মন্দ হয় না নিশ্চয়!’ ব্যাপারটা আরও ভালো হয়, যদি বিখ্যাত কাউকে সম্মান জানিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা যায়, মনে মনে ভাবলেন ভিসেন্তে। তারপর ১৯২২ সালের এক সুন্দর সকালে তিনি প্রস্তাব করলেন, ‘স্পেনের বিখ্যাত লেখক মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসকে সম্মান জানানো যেতে পারে বই দিবস পালনের মাধ্যমে।’ তাঁর প্রস্তাব স্পেন সরকার তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করেনি বটে, তবে চার বছর পর মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের জন্মদিন ৭ অক্টোবরে স্পেনে প্রথম বই দিবস পালন করা হয়। এরপর ১৯৩০ সালে দিনটি পরিবর্তন করে মিগুয়েলের মৃত্যুর দিন ২৩ এপ্রিল বই দিবস পালন করতে শুরু করে স্পেন।
তারপর মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়াল। অসংখ্যবার সূর্যের চারদিকে ঘুরে এল পৃথিবী। ক্যালেন্ডার উল্টে এল ১৯৯৫ সাল। ওই বছর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকো তাদের সম্মেলনে মানুষকে বই পড়ায় এবং বই লেখায় উৎসাহিত করার জন্য একটি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। দিবসটি পালনের জন্য তারা ২৩ এপ্রিলকে বেছে নেয়।
কেন ২৩ এপ্রিল? কারণ স্পেনের বাসিন্দারা সেই ১৯৩০ সাল থেকে দিনটিকে বই দিবস হিসেবে পালন করছে। তা ছাড়া দিনটি পৃথিবী বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এবং ইনকা গারসিলাসো দে লা ভেগার মৃত্যুদিন। এই দিনটিকে বই দিবস এবং মেধাস্বত্ব দিবস হিসেবে উদ্যাপন করলে ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেসের পাশাপাশি শেক্সপিয়ার ও গারসিলাসোকেও শ্রদ্ধা জানানো হবে।
আরও একটি কাজ হবে বলে মনে করে ইউনেসকো। সেটি হলো—বই পড়তে উৎসাহিত হবে মানুষ। বই লিখতেও উৎসাহিত হবে। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হবে।
সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
ইউনেসকো আরও একটি কাজ করে। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর একটি শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হচ্ছে। এ বছর মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হয়েছে। সারা বছর এ শহরে বই নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। বই কীভাবে সহিংসতা মোকাবিলা করে এবং শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলে, সেসব নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ বছর কর্মসূচিগুলো তিনটি বিষয়কে লক্ষ্য করে করা হবে। সেগুলো হচ্ছে, গণপরিসর উদ্ধার করা, সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলা এবং সংহতি প্রতিষ্ঠা করা।
সে যাই হোক। বিশ্ব বই দিবসের বৈশ্বিক স্বীকৃতির পর কেটে গেছে ২৭টি বছর। কিন্তু বাংলাদেশে দিবসটি নিয়ে তেমন হেলদোল চোখে পড়ে না। নেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যাপন। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও দেখা যায় না। অনেকেই হয়তো জানেন না আজ বিশ্ব বই দিবস। এমনটি অনেক লেখকও হয়তো ওয়াকিবহাল নন যে তাঁদের মেধাস্বত্ব নিয়ে একটি দিন আছে।
এখন তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রমরমা সময়। নানা দিবসকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে নীল-সাদার ফেসবুক দুনিয়া। কিন্তু বই দিবসে কি তেমন তৎপরতা চোখে পড়েছে আপনাদের? বই নিয়ে বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপ আছে আমাদের দেশে। লাখ লাখ সদস্য সেসব গ্রুপে। নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, পর্যালোচনা ও তুলোধুনা চলে সেখানে। কিন্তু দিবসে তেমন কিছুই চোখে পড়ল না।
তবু আশাহত হলে চলবে না। আমরা তো জানিই—‘আশা তার একমাত্র ভেলা’। সেই ভেলায় ভেসে বলতে পারি, কোনো একদিন ঢাকা শহরকেও বই শহর ঘোষণা করবে ইউনেসকো। বই নিয়ে তৎপরতা বাড়বে মানুষের মধ্যে। বই হয়ে উঠবে নিত্যসঙ্গী।
বই এমন এক মাধ্যম যার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বই অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দেয়’। আবার চাণক্য বলেছেন, ‘বিদ্যা যাহাদের নাই, তাহারা ‘‘সভামধ্যে ন শোভন্তে’’।’ আর কে না জানে, বিদ্যা অর্জন করার এক অনবদ্য অনুষঙ্গ হচ্ছে বই।
কাজেই বই দিবস সাড়ম্বরে পালন করা হোক আর না হোক, বইয়ের আবেদন কখনো ফুরাবে বলে মনে হয় না। যত দিন পৃথিবী থাকবে, তত দিন মানুষের নিঃসঙ্গ প্রহরে বই জ্বেলে দেবে মঙ্গলপ্রদীপ। কোনো শ্রান্ত দুপুরে, কিংবা বিষণ্ন বিকেলে বই হয়ে উঠবে প্রিয় সঙ্গী। ঘুম ঘুম শীতের রাতে অচিন কুয়াশার মতো জড়িয়ে ধরবে বই। একটি বই অনেক কিছু মনে করিয়ে দেবে আমাদের। বই দিবস অমর হোক।
সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, দিয়ারিও এএস (স্পেনের পত্রিকা), ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ও রবীন্দ্র রচনাবলি
বই সম্পর্কিত পড়ুন:

আজ এক বন্ধুকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবসের শুভেচ্ছা জানালাম। তিনি ‘হাসির বদলে হাসি’ না দিয়ে সামান্য জ্ঞান ঝাড়লেন।
জ্ঞানী অধ্যাপকদের মতো গলা খাঁকারি দিয়ে বন্ধুটি বললেন, ‘এসব বই দিবস টিবস পালন করে হয়টা কি বল তো? কোনো লাভ আছে? পৃথিবীতে যখন বই ছিল না, তখন কি মানুষ জ্ঞান বিনিময় করেনি? জ্ঞান টিকে থাকেনি? আরে, বই ছাপানোর ইতিহাস তো খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র ১ হাজার ১৫৪ বছর আগে পৃথিবীর প্রথম বইটি ছাপা হয়েছিল চীনে। তখনো বিদ্যুৎ-চালিত মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। কাঠের ব্লক তৈরি করে হস্তচালিত যন্ত্র দিয়ে ছাপা হয়েছিল সেই বই। তার আগে কি পৃথিবী জ্ঞানশূন্য ছিল? জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়নি? এসব দিবস টিবস চালু করার উদ্দেশ্য ব্যবসা, বুঝলি? ব্যবসা।’
আমি ছোট্ট করে ‘হুঁ’ বলে প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করলাম। পৃথিবীতে নৈরাশ্যবাদী মানুষের তো অভাব নেই। ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, বিশ্বে ৩০ কোটি মানুষ নিরাশায় ভুগছে। এত দিন সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে নিশ্চয়। আমার বন্ধুটি সেই ৩০ কোটিরও বেশি নৈরাশ্যবাদী মানুষের মধ্যে একজন।
এঁদের বাইরেরও কোটি কোটি মানুষ আছেন, যাঁরা পৃথিবীটাকে ভিন্ন চোখে দেখেন। ইতিবাচক কিছু করতে চান। ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেস ছিলেন তেমন একজন। বাস করতেন স্পেনে। বাতিক ছিল লেখালেখির। পরিচয় দিতেন লেখক হিসেবে। তাঁর মনে একবার প্রশ্নের উদয় হলো, ‘আচ্ছা, বই নিয়ে একটি দিন উদ্যাপন করলে কেমন হয়? সারা দিন মানুষ বই নিয়ে নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা করল, অনুষ্ঠান আয়োজন করল? ব্যাপারটা মন্দ হয় না নিশ্চয়!’ ব্যাপারটা আরও ভালো হয়, যদি বিখ্যাত কাউকে সম্মান জানিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা যায়, মনে মনে ভাবলেন ভিসেন্তে। তারপর ১৯২২ সালের এক সুন্দর সকালে তিনি প্রস্তাব করলেন, ‘স্পেনের বিখ্যাত লেখক মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসকে সম্মান জানানো যেতে পারে বই দিবস পালনের মাধ্যমে।’ তাঁর প্রস্তাব স্পেন সরকার তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করেনি বটে, তবে চার বছর পর মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের জন্মদিন ৭ অক্টোবরে স্পেনে প্রথম বই দিবস পালন করা হয়। এরপর ১৯৩০ সালে দিনটি পরিবর্তন করে মিগুয়েলের মৃত্যুর দিন ২৩ এপ্রিল বই দিবস পালন করতে শুরু করে স্পেন।
তারপর মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়াল। অসংখ্যবার সূর্যের চারদিকে ঘুরে এল পৃথিবী। ক্যালেন্ডার উল্টে এল ১৯৯৫ সাল। ওই বছর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকো তাদের সম্মেলনে মানুষকে বই পড়ায় এবং বই লেখায় উৎসাহিত করার জন্য একটি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। দিবসটি পালনের জন্য তারা ২৩ এপ্রিলকে বেছে নেয়।
কেন ২৩ এপ্রিল? কারণ স্পেনের বাসিন্দারা সেই ১৯৩০ সাল থেকে দিনটিকে বই দিবস হিসেবে পালন করছে। তা ছাড়া দিনটি পৃথিবী বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এবং ইনকা গারসিলাসো দে লা ভেগার মৃত্যুদিন। এই দিনটিকে বই দিবস এবং মেধাস্বত্ব দিবস হিসেবে উদ্যাপন করলে ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেসের পাশাপাশি শেক্সপিয়ার ও গারসিলাসোকেও শ্রদ্ধা জানানো হবে।
আরও একটি কাজ হবে বলে মনে করে ইউনেসকো। সেটি হলো—বই পড়তে উৎসাহিত হবে মানুষ। বই লিখতেও উৎসাহিত হবে। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হবে।
সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
ইউনেসকো আরও একটি কাজ করে। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর একটি শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হচ্ছে। এ বছর মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হয়েছে। সারা বছর এ শহরে বই নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। বই কীভাবে সহিংসতা মোকাবিলা করে এবং শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলে, সেসব নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ বছর কর্মসূচিগুলো তিনটি বিষয়কে লক্ষ্য করে করা হবে। সেগুলো হচ্ছে, গণপরিসর উদ্ধার করা, সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলা এবং সংহতি প্রতিষ্ঠা করা।
সে যাই হোক। বিশ্ব বই দিবসের বৈশ্বিক স্বীকৃতির পর কেটে গেছে ২৭টি বছর। কিন্তু বাংলাদেশে দিবসটি নিয়ে তেমন হেলদোল চোখে পড়ে না। নেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যাপন। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও দেখা যায় না। অনেকেই হয়তো জানেন না আজ বিশ্ব বই দিবস। এমনটি অনেক লেখকও হয়তো ওয়াকিবহাল নন যে তাঁদের মেধাস্বত্ব নিয়ে একটি দিন আছে।
এখন তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রমরমা সময়। নানা দিবসকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে নীল-সাদার ফেসবুক দুনিয়া। কিন্তু বই দিবসে কি তেমন তৎপরতা চোখে পড়েছে আপনাদের? বই নিয়ে বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপ আছে আমাদের দেশে। লাখ লাখ সদস্য সেসব গ্রুপে। নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, পর্যালোচনা ও তুলোধুনা চলে সেখানে। কিন্তু দিবসে তেমন কিছুই চোখে পড়ল না।
তবু আশাহত হলে চলবে না। আমরা তো জানিই—‘আশা তার একমাত্র ভেলা’। সেই ভেলায় ভেসে বলতে পারি, কোনো একদিন ঢাকা শহরকেও বই শহর ঘোষণা করবে ইউনেসকো। বই নিয়ে তৎপরতা বাড়বে মানুষের মধ্যে। বই হয়ে উঠবে নিত্যসঙ্গী।
বই এমন এক মাধ্যম যার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বই অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দেয়’। আবার চাণক্য বলেছেন, ‘বিদ্যা যাহাদের নাই, তাহারা ‘‘সভামধ্যে ন শোভন্তে’’।’ আর কে না জানে, বিদ্যা অর্জন করার এক অনবদ্য অনুষঙ্গ হচ্ছে বই।
কাজেই বই দিবস সাড়ম্বরে পালন করা হোক আর না হোক, বইয়ের আবেদন কখনো ফুরাবে বলে মনে হয় না। যত দিন পৃথিবী থাকবে, তত দিন মানুষের নিঃসঙ্গ প্রহরে বই জ্বেলে দেবে মঙ্গলপ্রদীপ। কোনো শ্রান্ত দুপুরে, কিংবা বিষণ্ন বিকেলে বই হয়ে উঠবে প্রিয় সঙ্গী। ঘুম ঘুম শীতের রাতে অচিন কুয়াশার মতো জড়িয়ে ধরবে বই। একটি বই অনেক কিছু মনে করিয়ে দেবে আমাদের। বই দিবস অমর হোক।
সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, দিয়ারিও এএস (স্পেনের পত্রিকা), ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ও রবীন্দ্র রচনাবলি
বই সম্পর্কিত পড়ুন:
মারুফ ইসলাম

আজ এক বন্ধুকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবসের শুভেচ্ছা জানালাম। তিনি ‘হাসির বদলে হাসি’ না দিয়ে সামান্য জ্ঞান ঝাড়লেন।
জ্ঞানী অধ্যাপকদের মতো গলা খাঁকারি দিয়ে বন্ধুটি বললেন, ‘এসব বই দিবস টিবস পালন করে হয়টা কি বল তো? কোনো লাভ আছে? পৃথিবীতে যখন বই ছিল না, তখন কি মানুষ জ্ঞান বিনিময় করেনি? জ্ঞান টিকে থাকেনি? আরে, বই ছাপানোর ইতিহাস তো খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র ১ হাজার ১৫৪ বছর আগে পৃথিবীর প্রথম বইটি ছাপা হয়েছিল চীনে। তখনো বিদ্যুৎ-চালিত মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। কাঠের ব্লক তৈরি করে হস্তচালিত যন্ত্র দিয়ে ছাপা হয়েছিল সেই বই। তার আগে কি পৃথিবী জ্ঞানশূন্য ছিল? জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়নি? এসব দিবস টিবস চালু করার উদ্দেশ্য ব্যবসা, বুঝলি? ব্যবসা।’
আমি ছোট্ট করে ‘হুঁ’ বলে প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করলাম। পৃথিবীতে নৈরাশ্যবাদী মানুষের তো অভাব নেই। ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, বিশ্বে ৩০ কোটি মানুষ নিরাশায় ভুগছে। এত দিন সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে নিশ্চয়। আমার বন্ধুটি সেই ৩০ কোটিরও বেশি নৈরাশ্যবাদী মানুষের মধ্যে একজন।
এঁদের বাইরেরও কোটি কোটি মানুষ আছেন, যাঁরা পৃথিবীটাকে ভিন্ন চোখে দেখেন। ইতিবাচক কিছু করতে চান। ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেস ছিলেন তেমন একজন। বাস করতেন স্পেনে। বাতিক ছিল লেখালেখির। পরিচয় দিতেন লেখক হিসেবে। তাঁর মনে একবার প্রশ্নের উদয় হলো, ‘আচ্ছা, বই নিয়ে একটি দিন উদ্যাপন করলে কেমন হয়? সারা দিন মানুষ বই নিয়ে নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা করল, অনুষ্ঠান আয়োজন করল? ব্যাপারটা মন্দ হয় না নিশ্চয়!’ ব্যাপারটা আরও ভালো হয়, যদি বিখ্যাত কাউকে সম্মান জানিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা যায়, মনে মনে ভাবলেন ভিসেন্তে। তারপর ১৯২২ সালের এক সুন্দর সকালে তিনি প্রস্তাব করলেন, ‘স্পেনের বিখ্যাত লেখক মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসকে সম্মান জানানো যেতে পারে বই দিবস পালনের মাধ্যমে।’ তাঁর প্রস্তাব স্পেন সরকার তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করেনি বটে, তবে চার বছর পর মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের জন্মদিন ৭ অক্টোবরে স্পেনে প্রথম বই দিবস পালন করা হয়। এরপর ১৯৩০ সালে দিনটি পরিবর্তন করে মিগুয়েলের মৃত্যুর দিন ২৩ এপ্রিল বই দিবস পালন করতে শুরু করে স্পেন।
তারপর মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়াল। অসংখ্যবার সূর্যের চারদিকে ঘুরে এল পৃথিবী। ক্যালেন্ডার উল্টে এল ১৯৯৫ সাল। ওই বছর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকো তাদের সম্মেলনে মানুষকে বই পড়ায় এবং বই লেখায় উৎসাহিত করার জন্য একটি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। দিবসটি পালনের জন্য তারা ২৩ এপ্রিলকে বেছে নেয়।
কেন ২৩ এপ্রিল? কারণ স্পেনের বাসিন্দারা সেই ১৯৩০ সাল থেকে দিনটিকে বই দিবস হিসেবে পালন করছে। তা ছাড়া দিনটি পৃথিবী বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এবং ইনকা গারসিলাসো দে লা ভেগার মৃত্যুদিন। এই দিনটিকে বই দিবস এবং মেধাস্বত্ব দিবস হিসেবে উদ্যাপন করলে ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেসের পাশাপাশি শেক্সপিয়ার ও গারসিলাসোকেও শ্রদ্ধা জানানো হবে।
আরও একটি কাজ হবে বলে মনে করে ইউনেসকো। সেটি হলো—বই পড়তে উৎসাহিত হবে মানুষ। বই লিখতেও উৎসাহিত হবে। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হবে।
সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
ইউনেসকো আরও একটি কাজ করে। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর একটি শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হচ্ছে। এ বছর মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হয়েছে। সারা বছর এ শহরে বই নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। বই কীভাবে সহিংসতা মোকাবিলা করে এবং শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলে, সেসব নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ বছর কর্মসূচিগুলো তিনটি বিষয়কে লক্ষ্য করে করা হবে। সেগুলো হচ্ছে, গণপরিসর উদ্ধার করা, সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলা এবং সংহতি প্রতিষ্ঠা করা।
সে যাই হোক। বিশ্ব বই দিবসের বৈশ্বিক স্বীকৃতির পর কেটে গেছে ২৭টি বছর। কিন্তু বাংলাদেশে দিবসটি নিয়ে তেমন হেলদোল চোখে পড়ে না। নেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যাপন। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও দেখা যায় না। অনেকেই হয়তো জানেন না আজ বিশ্ব বই দিবস। এমনটি অনেক লেখকও হয়তো ওয়াকিবহাল নন যে তাঁদের মেধাস্বত্ব নিয়ে একটি দিন আছে।
এখন তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রমরমা সময়। নানা দিবসকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে নীল-সাদার ফেসবুক দুনিয়া। কিন্তু বই দিবসে কি তেমন তৎপরতা চোখে পড়েছে আপনাদের? বই নিয়ে বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপ আছে আমাদের দেশে। লাখ লাখ সদস্য সেসব গ্রুপে। নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, পর্যালোচনা ও তুলোধুনা চলে সেখানে। কিন্তু দিবসে তেমন কিছুই চোখে পড়ল না।
তবু আশাহত হলে চলবে না। আমরা তো জানিই—‘আশা তার একমাত্র ভেলা’। সেই ভেলায় ভেসে বলতে পারি, কোনো একদিন ঢাকা শহরকেও বই শহর ঘোষণা করবে ইউনেসকো। বই নিয়ে তৎপরতা বাড়বে মানুষের মধ্যে। বই হয়ে উঠবে নিত্যসঙ্গী।
বই এমন এক মাধ্যম যার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বই অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দেয়’। আবার চাণক্য বলেছেন, ‘বিদ্যা যাহাদের নাই, তাহারা ‘‘সভামধ্যে ন শোভন্তে’’।’ আর কে না জানে, বিদ্যা অর্জন করার এক অনবদ্য অনুষঙ্গ হচ্ছে বই।
কাজেই বই দিবস সাড়ম্বরে পালন করা হোক আর না হোক, বইয়ের আবেদন কখনো ফুরাবে বলে মনে হয় না। যত দিন পৃথিবী থাকবে, তত দিন মানুষের নিঃসঙ্গ প্রহরে বই জ্বেলে দেবে মঙ্গলপ্রদীপ। কোনো শ্রান্ত দুপুরে, কিংবা বিষণ্ন বিকেলে বই হয়ে উঠবে প্রিয় সঙ্গী। ঘুম ঘুম শীতের রাতে অচিন কুয়াশার মতো জড়িয়ে ধরবে বই। একটি বই অনেক কিছু মনে করিয়ে দেবে আমাদের। বই দিবস অমর হোক।
সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, দিয়ারিও এএস (স্পেনের পত্রিকা), ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ও রবীন্দ্র রচনাবলি
বই সম্পর্কিত পড়ুন:

আজ এক বন্ধুকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবসের শুভেচ্ছা জানালাম। তিনি ‘হাসির বদলে হাসি’ না দিয়ে সামান্য জ্ঞান ঝাড়লেন।
জ্ঞানী অধ্যাপকদের মতো গলা খাঁকারি দিয়ে বন্ধুটি বললেন, ‘এসব বই দিবস টিবস পালন করে হয়টা কি বল তো? কোনো লাভ আছে? পৃথিবীতে যখন বই ছিল না, তখন কি মানুষ জ্ঞান বিনিময় করেনি? জ্ঞান টিকে থাকেনি? আরে, বই ছাপানোর ইতিহাস তো খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র ১ হাজার ১৫৪ বছর আগে পৃথিবীর প্রথম বইটি ছাপা হয়েছিল চীনে। তখনো বিদ্যুৎ-চালিত মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। কাঠের ব্লক তৈরি করে হস্তচালিত যন্ত্র দিয়ে ছাপা হয়েছিল সেই বই। তার আগে কি পৃথিবী জ্ঞানশূন্য ছিল? জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়নি? এসব দিবস টিবস চালু করার উদ্দেশ্য ব্যবসা, বুঝলি? ব্যবসা।’
আমি ছোট্ট করে ‘হুঁ’ বলে প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করলাম। পৃথিবীতে নৈরাশ্যবাদী মানুষের তো অভাব নেই। ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, বিশ্বে ৩০ কোটি মানুষ নিরাশায় ভুগছে। এত দিন সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে নিশ্চয়। আমার বন্ধুটি সেই ৩০ কোটিরও বেশি নৈরাশ্যবাদী মানুষের মধ্যে একজন।
এঁদের বাইরেরও কোটি কোটি মানুষ আছেন, যাঁরা পৃথিবীটাকে ভিন্ন চোখে দেখেন। ইতিবাচক কিছু করতে চান। ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেস ছিলেন তেমন একজন। বাস করতেন স্পেনে। বাতিক ছিল লেখালেখির। পরিচয় দিতেন লেখক হিসেবে। তাঁর মনে একবার প্রশ্নের উদয় হলো, ‘আচ্ছা, বই নিয়ে একটি দিন উদ্যাপন করলে কেমন হয়? সারা দিন মানুষ বই নিয়ে নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা করল, অনুষ্ঠান আয়োজন করল? ব্যাপারটা মন্দ হয় না নিশ্চয়!’ ব্যাপারটা আরও ভালো হয়, যদি বিখ্যাত কাউকে সম্মান জানিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা যায়, মনে মনে ভাবলেন ভিসেন্তে। তারপর ১৯২২ সালের এক সুন্দর সকালে তিনি প্রস্তাব করলেন, ‘স্পেনের বিখ্যাত লেখক মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসকে সম্মান জানানো যেতে পারে বই দিবস পালনের মাধ্যমে।’ তাঁর প্রস্তাব স্পেন সরকার তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করেনি বটে, তবে চার বছর পর মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের জন্মদিন ৭ অক্টোবরে স্পেনে প্রথম বই দিবস পালন করা হয়। এরপর ১৯৩০ সালে দিনটি পরিবর্তন করে মিগুয়েলের মৃত্যুর দিন ২৩ এপ্রিল বই দিবস পালন করতে শুরু করে স্পেন।
তারপর মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়াল। অসংখ্যবার সূর্যের চারদিকে ঘুরে এল পৃথিবী। ক্যালেন্ডার উল্টে এল ১৯৯৫ সাল। ওই বছর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকো তাদের সম্মেলনে মানুষকে বই পড়ায় এবং বই লেখায় উৎসাহিত করার জন্য একটি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। দিবসটি পালনের জন্য তারা ২৩ এপ্রিলকে বেছে নেয়।
কেন ২৩ এপ্রিল? কারণ স্পেনের বাসিন্দারা সেই ১৯৩০ সাল থেকে দিনটিকে বই দিবস হিসেবে পালন করছে। তা ছাড়া দিনটি পৃথিবী বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এবং ইনকা গারসিলাসো দে লা ভেগার মৃত্যুদিন। এই দিনটিকে বই দিবস এবং মেধাস্বত্ব দিবস হিসেবে উদ্যাপন করলে ভিসেন্তে ক্লেভেল আন্দ্রেসের পাশাপাশি শেক্সপিয়ার ও গারসিলাসোকেও শ্রদ্ধা জানানো হবে।
আরও একটি কাজ হবে বলে মনে করে ইউনেসকো। সেটি হলো—বই পড়তে উৎসাহিত হবে মানুষ। বই লিখতেও উৎসাহিত হবে। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হবে।
সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
ইউনেসকো আরও একটি কাজ করে। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর একটি শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হচ্ছে। এ বছর মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা শহরকে ‘বই শহর’ ঘোষণা করা হয়েছে। সারা বছর এ শহরে বই নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। বই কীভাবে সহিংসতা মোকাবিলা করে এবং শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলে, সেসব নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ বছর কর্মসূচিগুলো তিনটি বিষয়কে লক্ষ্য করে করা হবে। সেগুলো হচ্ছে, গণপরিসর উদ্ধার করা, সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলা এবং সংহতি প্রতিষ্ঠা করা।
সে যাই হোক। বিশ্ব বই দিবসের বৈশ্বিক স্বীকৃতির পর কেটে গেছে ২৭টি বছর। কিন্তু বাংলাদেশে দিবসটি নিয়ে তেমন হেলদোল চোখে পড়ে না। নেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যাপন। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও দেখা যায় না। অনেকেই হয়তো জানেন না আজ বিশ্ব বই দিবস। এমনটি অনেক লেখকও হয়তো ওয়াকিবহাল নন যে তাঁদের মেধাস্বত্ব নিয়ে একটি দিন আছে।
এখন তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রমরমা সময়। নানা দিবসকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে নীল-সাদার ফেসবুক দুনিয়া। কিন্তু বই দিবসে কি তেমন তৎপরতা চোখে পড়েছে আপনাদের? বই নিয়ে বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপ আছে আমাদের দেশে। লাখ লাখ সদস্য সেসব গ্রুপে। নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, পর্যালোচনা ও তুলোধুনা চলে সেখানে। কিন্তু দিবসে তেমন কিছুই চোখে পড়ল না।
তবু আশাহত হলে চলবে না। আমরা তো জানিই—‘আশা তার একমাত্র ভেলা’। সেই ভেলায় ভেসে বলতে পারি, কোনো একদিন ঢাকা শহরকেও বই শহর ঘোষণা করবে ইউনেসকো। বই নিয়ে তৎপরতা বাড়বে মানুষের মধ্যে। বই হয়ে উঠবে নিত্যসঙ্গী।
বই এমন এক মাধ্যম যার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বই অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দেয়’। আবার চাণক্য বলেছেন, ‘বিদ্যা যাহাদের নাই, তাহারা ‘‘সভামধ্যে ন শোভন্তে’’।’ আর কে না জানে, বিদ্যা অর্জন করার এক অনবদ্য অনুষঙ্গ হচ্ছে বই।
কাজেই বই দিবস সাড়ম্বরে পালন করা হোক আর না হোক, বইয়ের আবেদন কখনো ফুরাবে বলে মনে হয় না। যত দিন পৃথিবী থাকবে, তত দিন মানুষের নিঃসঙ্গ প্রহরে বই জ্বেলে দেবে মঙ্গলপ্রদীপ। কোনো শ্রান্ত দুপুরে, কিংবা বিষণ্ন বিকেলে বই হয়ে উঠবে প্রিয় সঙ্গী। ঘুম ঘুম শীতের রাতে অচিন কুয়াশার মতো জড়িয়ে ধরবে বই। একটি বই অনেক কিছু মনে করিয়ে দেবে আমাদের। বই দিবস অমর হোক।
সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, দিয়ারিও এএস (স্পেনের পত্রিকা), ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ও রবীন্দ্র রচনাবলি
বই সম্পর্কিত পড়ুন:

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
২ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৭ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
২৩ এপ্রিল ২০২২
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৭ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৮ দিন আগেকুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা শাহীনা সোবহান।
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবু নাসের রাজীবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, কুমারখালী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি রহমান আজিজ, কবি রজত হুদা ও কবি সবুর বাদশা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সোহেল আমিন বাবু, কবি বাবলু জোয়ার্দার, কবি ও সাংবাদিক মাহমুদ শরীফ, জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক কাজী সাইফুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (মাল্টিমিডিয়া) সোহাগ মাহমুদ প্রমুখ।
এ সাহিত্য আড্ডায় কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা অংশ নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী জিয়াউর রহমান মানিক।

সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
২৩ এপ্রিল ২০২২
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
২ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৭ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির সরদার ভবনে সরে আসে নান্না মিয়ার ব্যবসা। দোকানের নাম হয় হাজি নান্না বিরিয়ানি।
একে একে লালবাগ চৌরাস্তা, নবাবগঞ্জ বাজার, ফকিরাপুল ও নাজিমুদ্দিন রোডে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। একই নামে শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও আসল নান্নার মোরগ পোলাওয়ের স্বাদকে টেক্কা দিতে পারেনি কেউ। তাই তো ভোজনপ্রেমীরা ঠিকই চিনে নেন আদি রেসিপিটি। মোরগ পোলাওয়ের পাশাপাশি হাজি নান্না বিরিয়ানিতে পাওয়া যায় খাসির বিরিয়ানি, খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, টিকিয়া, লাবাং ও ফিরনি। প্রতি মাসের ৫ তারিখে থাকে বিশেষ আয়োজন—আস্ত মুরগির পোলাও। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
২৩ এপ্রিল ২০২২
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
২ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না।
৮ দিন আগেসম্পাদকীয়

চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

চলচ্চিত্র নির্মাণের পদ্ধতি-টদ্ধতি বুঝি না মশাই। আমার কাছে আজও প্রমথেশ বড়ুয়া ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালক। আমরা কেউই তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নই। আমার আজও মনে পড়ে ‘গৃহদাহ’র সেই অসম্ভব ট্রানজিশন—সেই যে হাইহিল জুতো-পরা দুটো পা থেকে সোজা কেটে দুটো আলতা-মাখা পা পালকি থেকে নামছে—আমি কখনো ভুলব না। ব্যাপারটা ভদ্রলোক করেছিলেন ১৯৩৬ সালে, এ কথা ভুলবেন না। আর সেই যে সেই ‘উত্তরায়ণ’-এ বড়ুয়া সাহেবের জ্বর হওয়ার পরে ক্যামেরা সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল—সেটাই কি ভোলা যায়! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন ভদ্রলোক ডেভিড লিনের ‘অলিভার টুইস্ট’-এর বহু আগে। সাবজেকটিভ ক্যামেরা সম্পর্কে অনেক কথা আজকাল শুনতে পাই, বিভিন্ন পরিচালক নাকি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছেন।
...আমার কাছে গুলিয়ে গেছে সিনেমার প্রাচীন আর আধুনিক বলতে আপনারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এসব ধরনের কথা শুনলে আমার একটা কথাই মনে হয়, কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
...চলচ্চিত্রের সামাজিক দায়িত্ব সব সময়ে হয়েছে। হয় পজিটিভ, না হয় নেগেটিভভাবে। ছবিটাকে আমি একটা শিল্প বলি। কাজেই মনে করি সর্বশিল্পের শর্ত পালিত হচ্ছে এখানেও। আমি মনে করি না যে সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ চ্যাপলিনের ‘এসানে’ যুগের এক রিলের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন।
১৯২৫ সালে তোলা আইজেনস্টাইনের ‘স্ট্রাইক’ ছবির চেয়ে বেশি সমাজসচেতন ছবি কি আজ পর্যন্ত তোলা হয়েছে? পাবস্ট-এর ‘কামেরা ডে শেফট’ আজও পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি সমাজসচেতন একটি ছবি। চারু রায়ের ‘বাংলার মেয়ে’ বহু আগে তোলা—প্রথম বাংলা ছবি, যাতে আউটডোর ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশিভাবে, তাতেও সমাজচেতনা পরিপূর্ণ ছিল।
...রবিঠাকুর মশায় একটা বড় ভালো কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘শিল্পকে শিল্প হতে হলে সর্বাগ্রে সত্যনিষ্ঠ হতে হয়, তারপরে সৌন্দর্যনিষ্ঠ’। কথাটা ভাবার মতো। যদি পারেন ভেবে দেখবেন।
সূত্র: ঋত্বিক ঘটকের গৃহীত সাক্ষাৎকার, ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’, শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও সন্দীপন ভট্টাচার্য সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

সেই থেকে ২৩ এপ্রিল পৃথিবীব্যাপী বিশ্ব বই দিবস ও মেধাস্বত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করে দেয় ইউনেসকো। এ বছর বিশ্ব বই দিবসের প্রতিপাদ্য—‘পড়ুন...পড়লে কখনোই একা বোধ করবেন না।’
২৩ এপ্রিল ২০২২
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
২ দিন আগে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কবি শাহীনা সোবহানের সম্মানে কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাহিত্য আড্ডা। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমারখালী পৌর শহরের সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘরে ড. নাসের ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই আড্ডার আয়োজন করা হয়।
৫ দিন আগে
১৯৬০-এর দশকে হাজি নান্না মিয়া তাঁর দুই ভাই জুম্মুন মিয়া ও চান মিয়ার সঙ্গে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ছোট্ট একটা দোকানে পাতলা মাদুর বিছিয়ে তাঁরা পরিবেশন করতেন মোরগ পোলাও। সেই মোরগ পোলাওয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে এর সুখ্যাতি ছড়াতে সময় লাগেনি। মৌলভীবাজার থেকে পরে বেচারাম দেউড়ির...
৭ দিন আগে