Ajker Patrika

নারীদের নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গাটা এখনো অস্পষ্ট

ফিচার ডেস্ক
নারীদের নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গাটা এখনো অস্পষ্ট

দেশে সবকিছু নিয়ে একটি পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু নারীদের নিরাপত্তা, তাঁদের অধিকার, তাঁদের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে অংশগ্রহণের বিষয়গুলো নিয়ে কতটুকু কথা হচ্ছে? নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে কথা হচ্ছে। এর মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? রাজনৈতিক দলগুলোতে নারী নেতৃত্বের অবস্থা এবং তাঁদের উপস্থিতি কতটুকু নিশ্চিত? এসব বিষয় নিয়ে মালেকা বানু, মারজিয়া প্রভা ও সীমা দত্ত জানিয়েছেন নিজেদের কথা।

মালেকা বানু। ছবি: সংগৃহীত
মালেকা বানু। ছবি: সংগৃহীত

নেতৃত্ব কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় আসা নিয়েই সমস্যা

সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

নারীকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তেমন কোনো তৎপরতা দেখছি না। নারীদের শক্তিশালী করে তুলতে তাঁদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনে নারীদের মনোনয়ন দিয়ে সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার গঠনে নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য নারীদের সংরক্ষিত আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ রাখতে হবে। কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত আসন রাখতে হবে। কমিটিগুলোতে নারী নেতৃত্বকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সচেতনভাবেই কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নারী যেন কমিটিগুলোতে থাকেন। নতুন হোক বা পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোতে দেখা যাচ্ছে, নারীরা স্পেস পাচ্ছেন না। তাঁরা রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বের হয়ে আসছেন। কিন্তু তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কোনো স্পেস দেওয়া হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে দলগুলোকে।

নারী আন্দোলনে যারা যুক্ত আছি, তারা সংরক্ষিত নারী আসন বাতিলের সুপারিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি। এটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। সবাই সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চায়। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। এরপরে ঐকমত্য কমিশনের তরফ থেকে তারা নিজেরাও সেই সুপারিশ বাতিল করে আরও একটা সুপারিশ করে যে ৫০টি আসন একটি নির্দিষ্ট সাল পর্যন্ত থাকবে, ৫ শতাংশ মনোনয়ন। এই সব কটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে নারী অধিকার কর্মীদের তরফ থেকে।

এই দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ এখনো প্রান্তিক। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও নারীরা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেননি এখনো। তাদের মতে, নারীরা দেশে রেমিট্যান্স আনবে, সংসারের কাজ করবে, সংসারের বাইরে কাজ করবে—এগুলো গ্রহণ অযোগ্য। নারীরা আয় করবেন, তাঁরাই খরচ করবেন। এখানে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু নারীরা সিদ্ধান্ত নেবেন, এই বিষয়ে সবার আপত্তি। তাঁদের নেতৃত্ব নিয়েই সমস্যা। সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোতেও এই বিষয়ে পশ্চাৎপদ দৃষ্টিভঙ্গি। মিছিল, মিটিংয়ে নারী সামনে থাকবেন, তাঁর ভোট দেওয়ার ক্ষমতা ব্যবহার করা হবে, কিন্তু নেতৃত্ব কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় নিয়ে আসা নিয়েই সমস্যা।

দলগুলো নারীদের নেতৃত্বে আনে না, কিন্তু কমিটিতে নারী উইং থাকে। মনোনয়ন প্রার্থী নারীর সংখ্যা অনেক। নারীরা আগ্রহী, কিন্তু দলগুলো তাঁদের মনোনয়ন দিচ্ছে না। আবার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দিচ্ছে।

ফলে দলীয় আনুগত্য হিসেবে তাঁদের রাখা হচ্ছে। এ কারণে সেই নারীদের কোনো ক্ষমতা থাকছে না। এত দিন আমরা দেখেছি, তাঁরা শুধু ইয়েস ভোট দিচ্ছেন। সত্যিকার অর্থে নির্বাচনী এলাকা থেকে নারীরা কাজ করার সুযোগ পান না। তিনি একটা মর্যাদাহীন অবস্থানে থাকেন। এতে তাঁদের রাজনীতি করার আকাঙ্ক্ষা কমে যায়। অনেক সংসদ সদস্যই এটা চান না। এখনো দেখছি, কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

সীমা দত্ত। ছবি: সংগৃহীত
সীমা দত্ত। ছবি: সংগৃহীত

নারীদের অংশগ্রহণ আলংকারিক অর্থে রেখেছে দলগুলো

সভাপতি, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র

বড় বড় রাজনৈতিক দলে নারীদের জন্য কোনো ভাবনা নেই। তারা রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ আলংকারিক অর্থে রেখেছে। রাজনীতিতে আসতে হলে যে ধরনের সংবেদনশীল, উদার, গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রয়োজন, তা এই রাজনৈতিক দলগুলোতে নেই। বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ রয়েছে। একে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জাতীয় সংসদে নারীদের কার্যকর ও সমান প্রতিনিধিত্ব এখনো নিশ্চিত না হওয়ার অন্যতম কারণ ক্ষমতাকেন্দ্রিক মানসিকতা। গণতন্ত্রহীনতা, রাজনৈতিক দলগুলোর নিষ্ক্রিয়তা, সর্বোপরি পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতাকেন্দ্রিক মানসিকতা, যা নারীকে মানুষ ভাবতে দেয় না। যত দিন পর্যন্ত নারীদের সম-অধিকার সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হবে, নারীকে গৃহস্থালি কাজের বেড়াজাল থেকে ছিন্ন করা না যাবে, তত দিন সংরক্ষণ প্রয়োজন। যাঁরা সংরক্ষণ বাতিলের সুপারিশ করছেন, তাঁরা একটা বিষয় খেয়াল করছেন না যে এ সমাজে এখনো নারীকে সামন্তীয় দৃষ্টিতে দেখা হয়। নারীর চলার পথের বাধা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরসন না করলে সংরক্ষণ তুলে দেওয়া নারীর জন্য শুভকর কিছু হবে না। বাংলাদেশের বাম প্রগতিশীল নারী সংগঠনগুলো নারী আসন সংরক্ষিত এবং সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে সোচ্চার। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বড় বড় রাজনৈতিক দলের নারী সংগঠনগুলো ভীষণভাবে উদাসীন এই বিষয়ে।

মারজিয়া প্রভা। ছবি: সংগৃহীত
মারজিয়া প্রভা। ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক বাধা উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে

নারী অধিকার কর্মী

রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করছে কি না, এটা প্রাথমিকভাবে দেখতে চাইলে, প্রথমে আমি দলগুলোর রাজনৈতিক ফিলোসফি দেখতে ইচ্ছুক। নারী প্রসঙ্গে তাদের অবস্থান কী? বাংলাদেশের যে প্রথাগত বড় রাজনৈতিক দলগুলো আমরা দেখে থাকি, নারী প্রসঙ্গে তাদের কোনো সলিড অবস্থান নেই। তারা নারীর ক্ষমতায়ন চায়, সেটা বিভিন্ন জায়গায় বলে। কিন্তু কীভাবে সেই ক্ষমতায়ন তৈরি হবে, সেটা পরিষ্কার করে না।

যখন একটা দল জানবে না ‘নারীর রাজনীতি’ আসলে কীভাবে চিহ্নিত হবে, তখন স্বাভাবিকভাবে তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না নারীকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা। আরও বেশি সম্পৃক্ত করা। তাই নারী তাদের কাছে একটা ‘ইনক্লুসিভ দেখানো টোকেন’।

এই ইনক্লুসিভ টোকেন রাষ্ট্রে আছে, শিক্ষাক্ষেত্রে আছে, প্রতিষ্ঠানে আছে। সেই ছায়া রাজনৈতিক দলেও আছে। প্রথাগত দলগুলোর বাইরে অপ্রথাগত দলগুলো (বাম দলগুলো) কিছু ক্ষেত্রে নারীর রাজনীতি নিয়ে পরিষ্কার থাকলেও তারা নারীকে শক্তিশালী করতে পারছে না। এর মূল কারণ, তারা আসলে জনগণকেই শক্তিশালী করতে পারছে না। নারীও সে রকম যুক্ত হচ্ছেন না তাদের দলে। এ ক্ষেত্রে নারীর নিজস্ব কিছু সামাজিক বাধাও আছে। আমি অনেক দুর্দান্ত নারী শিক্ষার্থীকে দেখেছি, যাঁরা রাজনৈতিকভাবে অদম্য ভয়েস রেখেছেন শিক্ষাজীবনে, কিন্তু পরে হারিয়ে গেছেন। এটা পুরুষের ক্ষেত্রেও হয়। চাকরিজীবন তাঁকে দলীয় রাজনীতিতে রাখতে পারে না। কারণ, রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর সামাজিক বাধা সব সময় বেশি। এখন এই বাধা উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে, স্পেস ভাবতে হবে। না হলে এই জায়গা শক্তিশালী হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলা যাবে না

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত