ফিচার ডেস্ক
আত্মহত্যা মানে শুধু একজন মানুষের মৃত্যু নয়; সেটি সমাজের একেকটি ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্বব্যাপী নারীর মৃত্যুহার পুরুষের তুলনায় কম হলেও আত্মহত্যার ঝুঁকি ও কারণগুলো জটিল এবং বহুস্তরীয়। পারিবারিক নির্যাতন, সামাজিক চাপ, অর্থনৈতিক অক্ষমতা, সাংস্কৃতিক নিয়ম, মানসিক রোগ—সব মিলিয়ে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার সম্ভাব্য ঝুঁকি বাড়ায়।
বিষয়টি আরও গভীরভাবে বুঝতে প্রয়োজন নারী-নির্দিষ্ট গবেষণা ও সহায়ক কাঠামো। এই চিত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান জানায়। নারীর আত্মহত্যা শুধু একটি ‘মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা’ নয়; বরং একটি কাঠামোগত সামাজিক ব্যর্থতা। যেসব নারী সংসারে নির্যাতিত, আর্থিকভাবে পরনির্ভরশীল কিংবা নিজের জীবন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা পান না, তাঁদের বেঁচে থাকার ইচ্ছা কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। অথচ সমাজ দিনের পর দিন তাঁদের বলে চলে, ‘তোমাকে তো অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে’, ‘এমন কিছু হলে লজ্জা হবে’ অথবা ‘নারীরা কাঁদে না, সহ্য করে’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের গ্লোবাল হেলথ এস্টিমেট অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। তাঁদের মধ্যে নারীর সংখ্যা আনুমানিক ২ লাখ ৩০ হাজার। এর মানে, প্রতি ১০০ মৃত্যুর মধ্যে একটি আত্মহত্যা। নারীদের আত্মহত্যার পেছনে রয়েছে বহুমাত্রিক সামাজিক, মানসিক ও সাংস্কৃতিক কারণ।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, পুরুষের তুলনায় নারীর আত্মহননের হার অনেক দেশে কম হলেও তাঁদের আত্মহত্যার কারণগুলো অনেক বেশি জটিল ও গভীর। ডব্লিউএইচওর ২০১৯ সালের তথ্যে দেখা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার বিশ্ব গড়ের চেয়ে বেশি। ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টস ২০২৪ সালের মার্চে প্রকাশিত একটি জরিপে জানায়, ৫৯ শতাংশ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নারীদের মানসিক অসুস্থতার মূল চালক হলো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ৪৯ শতাংশ চিকিৎসক সম্পর্কের জটিলতা এবং ৪৮ শতাংশ চিকিৎসক গৃহস্থালি চাপকে দায়ী করেছেন। গবেষণায় আরও দেখা যায়, যৌন হয়রানি, জোর করে বিয়ে, দাম্পত্যকলহ, সম্পর্কবিষয়ক জটিলতা ছিল আত্মহত্যার পেছনের মূল ঘটনা। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে নারীদের আত্মহত্যার হার ছিল প্রতি ১ লাখে ৫ দশমিক ৭ জন। সংখ্যাটি গত ৩০ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে এটি ছিল
৫ দশমিক ৪।
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও আত্মহত্যার হার কমিয়ে আনা ছিল অন্যতম লক্ষ্য। ২০৩০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে মানসিক রোগ শনাক্তকরণের হার কম। এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, সামাজিক লজ্জা, মানসিক চিকিৎসার অভাব এবং বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা না হওয়া।
বাংলাদেশে নারী আত্মহত্যা শুধু একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নয়; বরং এটি পারিবারিক, সামাজিক
ও কাঠামোগত নিপীড়নের ফল। এখানেও আত্মহত্যা একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা; বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীদের মধ্যে। আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ৬১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। আত্মহত্যার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের
মধ্যে ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী; বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ঝুঁকিতে ছিল। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের আত্মহত্যার মূল চালকগুলোর মধ্যে পারিবারিক ঘটনা, আগে আত্মহত্যার চেষ্টা এবং যৌন নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে।
নারীদের আত্মহত্যা অনেক সময় হয় অভিযুক্ত হওয়ার আগেই শাস্তি পেয়ে যাওয়ার মতো। গর্ভপাত, প্রেমে প্রত্যাখ্যান, যৌতুকের জন্য গৃহত্যাগ অথবা সন্তান জন্ম দিতে না পারার মতো ‘অপরাধে’ নারী সমাজের চোখে অবাঞ্ছিত হয়ে ওঠে।
এ বছর দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়, ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৪৫১ জন গর্ভবতী নারী মারা গেছেন। এই মৃত্যুর ২০ শতাংশ ছিল আত্মহত্যার ঘটনা। বাংলাদেশে এমন তথ্য না থাকলেও গবেষণাগুলো গর্ভাবস্থা-পরবর্তী বিষণ্নতাকে অন্যতম ঝুঁকি হিসেবে দেখায়। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রসার, সহিংসতা এবং লৈঙ্গিক ভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণ আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ফারজানা রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে কিশোর-কিশোরী ও বিবাহিত নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতার কারণগুলো হয় বিবাহবিচ্ছেদ বা দাম্পত্যকলহ, সম্পর্কের জটিলতা, পারিবারিক সহিংসতা, লেখাপড়ার খারাপ ফল, মা-বাবা কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে দূরত্ব, মনোমালিন্য, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি।’
প্রযুক্তির দাপটের এ সময়ে এটি নিজেই আত্মহত্যার বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর স্মার্টফোন কিনে না দেওয়ায় বাগেরহাটের ফকিরহাটে এক কিশোরী ‘আত্মহত্যা’ করেছে। গত ১১ এপ্রিল আত্মহত্যা করে ১৬ বছর বয়সী অ্যাডাম রেইন। এ ঘটনা ধরে সেই কিশোরের মা-বাবার করা মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগে সে কয়েক মাস ধরে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে আত্মহত্যা নিয়ে কথোপকথন চালিয়ে গিয়েছিল। এ কারণে আত্মহত্যা করা কিশোরের মা-বাবা গত আগস্টে ওপেনএআই ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
এই প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন আত্মহত্যার হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। স্ক্রিন আসক্তি কিশোরদের মধ্যে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকি তৈরি করে। সোশ্যাল মিডিয়া বেশি ব্যবহৃত হলে তরুণদের আত্মহত্যার হারের পারস্পরিক সম্পর্ক বেশি দেখা যায়। তবে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা নিয়ে কাজ করছে বহু সংস্থা ও ব্যক্তি। জেএএমএ (জামা) নেটওয়ার্কে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের আত্মহত্যার হার ৬২ শতাংশ বেড়েছে। এ জন্য প্রযুক্তি; বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার অন্যতম উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
মানুষের জীবন ও সমাজের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মতো ঘটনা এক ব্যাপক বিপর্যয়। নারীদের ক্ষেত্রে
এর যে অভিঘাত, তা ভয়াবহ। এটি বন্ধ করার জন্য সচেতনতার প্রচারসহ সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
আত্মহত্যা মানে শুধু একজন মানুষের মৃত্যু নয়; সেটি সমাজের একেকটি ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্বব্যাপী নারীর মৃত্যুহার পুরুষের তুলনায় কম হলেও আত্মহত্যার ঝুঁকি ও কারণগুলো জটিল এবং বহুস্তরীয়। পারিবারিক নির্যাতন, সামাজিক চাপ, অর্থনৈতিক অক্ষমতা, সাংস্কৃতিক নিয়ম, মানসিক রোগ—সব মিলিয়ে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার সম্ভাব্য ঝুঁকি বাড়ায়।
বিষয়টি আরও গভীরভাবে বুঝতে প্রয়োজন নারী-নির্দিষ্ট গবেষণা ও সহায়ক কাঠামো। এই চিত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান জানায়। নারীর আত্মহত্যা শুধু একটি ‘মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা’ নয়; বরং একটি কাঠামোগত সামাজিক ব্যর্থতা। যেসব নারী সংসারে নির্যাতিত, আর্থিকভাবে পরনির্ভরশীল কিংবা নিজের জীবন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা পান না, তাঁদের বেঁচে থাকার ইচ্ছা কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। অথচ সমাজ দিনের পর দিন তাঁদের বলে চলে, ‘তোমাকে তো অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে’, ‘এমন কিছু হলে লজ্জা হবে’ অথবা ‘নারীরা কাঁদে না, সহ্য করে’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের গ্লোবাল হেলথ এস্টিমেট অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। তাঁদের মধ্যে নারীর সংখ্যা আনুমানিক ২ লাখ ৩০ হাজার। এর মানে, প্রতি ১০০ মৃত্যুর মধ্যে একটি আত্মহত্যা। নারীদের আত্মহত্যার পেছনে রয়েছে বহুমাত্রিক সামাজিক, মানসিক ও সাংস্কৃতিক কারণ।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, পুরুষের তুলনায় নারীর আত্মহননের হার অনেক দেশে কম হলেও তাঁদের আত্মহত্যার কারণগুলো অনেক বেশি জটিল ও গভীর। ডব্লিউএইচওর ২০১৯ সালের তথ্যে দেখা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার বিশ্ব গড়ের চেয়ে বেশি। ব্রিটেনের রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টস ২০২৪ সালের মার্চে প্রকাশিত একটি জরিপে জানায়, ৫৯ শতাংশ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নারীদের মানসিক অসুস্থতার মূল চালক হলো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ৪৯ শতাংশ চিকিৎসক সম্পর্কের জটিলতা এবং ৪৮ শতাংশ চিকিৎসক গৃহস্থালি চাপকে দায়ী করেছেন। গবেষণায় আরও দেখা যায়, যৌন হয়রানি, জোর করে বিয়ে, দাম্পত্যকলহ, সম্পর্কবিষয়ক জটিলতা ছিল আত্মহত্যার পেছনের মূল ঘটনা। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে নারীদের আত্মহত্যার হার ছিল প্রতি ১ লাখে ৫ দশমিক ৭ জন। সংখ্যাটি গত ৩০ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে এটি ছিল
৫ দশমিক ৪।
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও আত্মহত্যার হার কমিয়ে আনা ছিল অন্যতম লক্ষ্য। ২০৩০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে মানসিক রোগ শনাক্তকরণের হার কম। এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, সামাজিক লজ্জা, মানসিক চিকিৎসার অভাব এবং বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা না হওয়া।
বাংলাদেশে নারী আত্মহত্যা শুধু একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নয়; বরং এটি পারিবারিক, সামাজিক
ও কাঠামোগত নিপীড়নের ফল। এখানেও আত্মহত্যা একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা; বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীদের মধ্যে। আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ৬১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। আত্মহত্যার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের
মধ্যে ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী; বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ঝুঁকিতে ছিল। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের আত্মহত্যার মূল চালকগুলোর মধ্যে পারিবারিক ঘটনা, আগে আত্মহত্যার চেষ্টা এবং যৌন নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে।
নারীদের আত্মহত্যা অনেক সময় হয় অভিযুক্ত হওয়ার আগেই শাস্তি পেয়ে যাওয়ার মতো। গর্ভপাত, প্রেমে প্রত্যাখ্যান, যৌতুকের জন্য গৃহত্যাগ অথবা সন্তান জন্ম দিতে না পারার মতো ‘অপরাধে’ নারী সমাজের চোখে অবাঞ্ছিত হয়ে ওঠে।
এ বছর দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়, ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৪৫১ জন গর্ভবতী নারী মারা গেছেন। এই মৃত্যুর ২০ শতাংশ ছিল আত্মহত্যার ঘটনা। বাংলাদেশে এমন তথ্য না থাকলেও গবেষণাগুলো গর্ভাবস্থা-পরবর্তী বিষণ্নতাকে অন্যতম ঝুঁকি হিসেবে দেখায়। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রসার, সহিংসতা এবং লৈঙ্গিক ভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণ আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ফারজানা রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে কিশোর-কিশোরী ও বিবাহিত নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতার কারণগুলো হয় বিবাহবিচ্ছেদ বা দাম্পত্যকলহ, সম্পর্কের জটিলতা, পারিবারিক সহিংসতা, লেখাপড়ার খারাপ ফল, মা-বাবা কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে দূরত্ব, মনোমালিন্য, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি।’
প্রযুক্তির দাপটের এ সময়ে এটি নিজেই আত্মহত্যার বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর স্মার্টফোন কিনে না দেওয়ায় বাগেরহাটের ফকিরহাটে এক কিশোরী ‘আত্মহত্যা’ করেছে। গত ১১ এপ্রিল আত্মহত্যা করে ১৬ বছর বয়সী অ্যাডাম রেইন। এ ঘটনা ধরে সেই কিশোরের মা-বাবার করা মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগে সে কয়েক মাস ধরে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে আত্মহত্যা নিয়ে কথোপকথন চালিয়ে গিয়েছিল। এ কারণে আত্মহত্যা করা কিশোরের মা-বাবা গত আগস্টে ওপেনএআই ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
এই প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন আত্মহত্যার হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। স্ক্রিন আসক্তি কিশোরদের মধ্যে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকি তৈরি করে। সোশ্যাল মিডিয়া বেশি ব্যবহৃত হলে তরুণদের আত্মহত্যার হারের পারস্পরিক সম্পর্ক বেশি দেখা যায়। তবে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা নিয়ে কাজ করছে বহু সংস্থা ও ব্যক্তি। জেএএমএ (জামা) নেটওয়ার্কে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের আত্মহত্যার হার ৬২ শতাংশ বেড়েছে। এ জন্য প্রযুক্তি; বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার অন্যতম উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
মানুষের জীবন ও সমাজের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মতো ঘটনা এক ব্যাপক বিপর্যয়। নারীদের ক্ষেত্রে
এর যে অভিঘাত, তা ভয়াবহ। এটি বন্ধ করার জন্য সচেতনতার প্রচারসহ সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
মাজুলি, আসাম। এখন এর পরিচিতি বিশ্বের বৃহত্তম নদীদ্বীপ হিসেবে। তবে সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই দ্বীপ এখন ভয়ংকর এক বাস্তবতার মুখোমুখি। বন্যা, ভাঙন আর ভূমিক্ষয়ের দুঃখ যেন এখানে প্রত্যেক মানুষকে গ্রাস করছে। সেই বাস্তবতার মাঝে নতুন আশার আলো নিয়ে এগিয়ে এসেছেন ২৫ বছরের এক তরুণী—মুনমুনি পায়েং...
৭ ঘণ্টা আগে৩১ আগস্ট ২০২৫। আফগানিস্তানের কুনার ও নানগারহার প্রদেশে ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প সবকিছু তছনছ করে দেয়। সরকারি তথ্যমতে, সে দেশে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। এ ছাড়া ধ্বংস হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ঘরবাড়ি। ভূমিকম্পে অনেক পরিবার সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়েছে...
৮ ঘণ্টা আগেআমার বয়স ৪০ বছর। আমি গানের শিক্ষক। বাসায় গান শেখাই। বিয়ে হয়েছে ২০১৮ সালে। এরপর বুঝতে পারি, স্বামী নেশাগ্রস্ত। আমার দুই বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। ইদানীং স্বামী কথায় কথায় আমার ওপর নির্যাতন করছে। সেটা আবার আমার ছেলের সামনেই। এই সংসারে আর থাকতে চাই না। কিন্তু এ বিষয়ে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুতও করতে...
৯ ঘণ্টা আগেনারীবাদী ইতিহাস, বিজ্ঞান ও দর্শনের সংযোগস্থলে এক উজ্জ্বল আলো এমিলি দ্যু শাতলে। নিউটনের লেখা ‘পেইনসিপিয়া ম্যাথম্যাটিকা’ বইটি তিনি লাতিন ভাষা থেকে ফরাসিতে অনুবাদ করেছিলেন। এমনকি বইটিতে বিশ্লেষণাত্মক টীকা ও ব্যাখ্যা যোগ করেছিলেন। সেটিকে এখনো নির্ভরযোগ্য ফরাসি অনুবাদ হিসেবে ধরা হয়...
৯ ঘণ্টা আগে