Ajker Patrika

সাগরের ওপরে এক ঝুলন্ত হ্রদ

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ৩৮
Thumbnail image

ডেনমার্কের ফারো দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় হ্রদ সোভাসনভ্যান। ৩.৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের হ্রদটির সবচেয়ে মজার বিষয় হলো দূর থেকে দেখলে মনে হবে সাগরের ওপর ঝুলে আছে এটি। নিশ্চয় ভাবছেন একটি হ্রদ কীভাবে সাগরের ওপরে ঝুলে থাকা সম্ভব? ঝুলন্ত হ্রদের বিষয়টি খোলাসা করছি এখন। 

হ্রদটি সাগরের ওপরে থাকলেও একেবারে ঝুলে আছে বলে মনে হওয়ার পেছনে কিছুটা দৃষ্টিবিভ্রমও কাজ করছে। মূল বিষয় হলো, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মোটামুটি ১০০ মিটার খাঁড়া উঠে গেছে একটি পাহাড় বা ক্লিফ। হ্রদটির অবস্থান পাহাড়ের চূড়া থেকে ৭০ মিটার নিচে, আরও পরিষ্কারভাবে বললে সাগর থেকে ৩০ মিটার উচ্চতায় এটি। হ্রদটির আকার ও আলোর খেলায় নির্দিষ্ট কোণ থেকে মনে হয় পাহাড়ের ও লেকের উচ্চতা সমান, আর মোটামুটি শ খানিক মিটার উচ্চতা থেকেই এটি উত্তর আটলান্টিকের ওপর ঝুলে আছে। 

হ্রদের ঠিক নিচেই আটলান্টিক মহাসাগরহ্রদটির চারপাশের পাহাড়ের কারণে এর সব জল সাগরে গিয়ে পড়ারও কোনো সুযোগ নেই। তবে একটি জায়গা দিয়ে জলপ্রপাত হয়ে হ্রদের কিছু পানি সাগরে গিয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। এটির নাম বসদালফসার। শীতের মাসগুলোতে হ্রদের জল জমে বরফ হয়ে যায়। তখন আইস ফিশিংয়ের জন্য এর চেয় চমৎকার জায়গা পাবেন কমই।

ফারো দ্বীপপুঞ্জের ভ্যাগার দ্বীপে দেখা পাবেন হ্রদটির। মজার ঘটনা, দ্বীপপুঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক ফজালাভাতানের অবস্থানও একই দ্বীপে। হ্রদটির নাম নিয়ে আশপাশের দুটি বসতির মানুষদের মধ্যে কিছুটা বিতর্ক আছে। সোভাগারের বাসিন্দারা এর সোভাসনভ্যান নাম নিয়ে বেশ গর্ব অনুভব করেন। অন্যদিকে মিয়োভগারের বাসিন্দারা হ্রদটিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন লেইতসভাতান নামে। কারণ হ্রদের তাদের দিকে একটি জায়গা আছে লেইতি নামে।

হ্রদটি সাগর থেকে ত্রিশ মিটার উচ্চতায় হলেও আরও বেশি উচ্চতায় বলে মনে হয়তবে হ্রদটির নাম সোভাসনভ্যান হয়ে যাওয়াটা এক হিসেবে একটু অদ্ভুত ব্যাপারই। কারণ মিয়োভগার গ্রামটি সোভাগারের তুলনায় হ্রদের বেশি কাছে। একটা কারণ হতে পারে, সোভাগার মিয়োভগারের তুলনায় অনেক পুরোনো গ্রাম।

লেক থেকে জলপ্রপাত হয়ে সাগরে ঝরে পড়ছে পানিদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনারা লেকের পশ্চিমে একটি এয়ারফিল্ড তৈরি করে, যেটি পরে ভ্যাগার বিমানবন্দরে রূপান্তর করা হয়। এ সময় সি প্লেনগুলো অবতরণে সুবিধার জন্য একটি স্টেশনও স্থাপন করা হয়। হ্রদে অবতরণ করা প্রথম সি প্লেন ছিল রাফ কোস্টাল কমান্ডের একটি ক্যাটালিনা।

হ্রদটির আয়তন ৩.৪ বর্গকিলোমিটারসারা পৃথিবীর পর্যটকদের টানে হ্রদটি। বিশেষ করে সাগরের ওপর ঝুলে থাকা ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর গোটা বিশ্বেই এর জনপ্রিয়তা বাড়ে। তবে ঘটনা হলো, ফারো দ্বীপপুঞ্জে দেখার মতো আরও অনেক প্রাকৃতিক বিস্ময় আছে। একবার কষ্ট করে সেখানে গেলে গোটা ফারো দ্বীপপুঞ্জই ঘুরেফিরে দেখতে পারবেন।

হঠাৎ দেখে মনে হয় মহাসাগরের ওপর ঝুলে আছে হ্রদএবার কীভাবে হ্রদটিতে পৌঁছাবেন জেনে নেওয়া যাক। ফারো দ্বীপপুঞ্জের ন্যাশনাল এয়ারলাইন হলো আটলান্টিক এয়ারওয়েজ। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলগুলোসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে সরাসরি ফ্লাইট আছে। ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড থেকে ফেরিও আছে। উড়োজাহাজে গেলে আপনি পৌঁছাবেন ভ্যাগার বিমানবন্দরে। সেখান থেকে হ্রদটির দূরত্ব মোটে তিন মাইল। একটি গাড়ি ভাড়া করে লেকসহ ঘুরতে পারবেন ফারো দ্বীপপুঞ্জের সুন্দর সব জায়গায় । 

সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, মাই বেস্ট প্লেস, মেটাডোর নেটওয়ার্ক, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত