Ajker Patrika

টাকা দিয়ে কি সুখ কেনা যায়? 

আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২২, ২১: ৪২
টাকা দিয়ে কি সুখ কেনা যায়? 

টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় কি না—এ প্রশ্ন চিরন্তন। প্রসঙ্গটি বিতর্কিত এবং এ নিয়ে বাদানুবাদেরও অন্ত নেই। এক দল বলছেন, জীর্ণ কুটিরে ছিন্নবাসে থেকেও সুখী হওয়া যায়, যদি মনে অশান্তি না থাকে। অন্যদিকে লাখ টাকার পালঙ্কে শুয়েও অনেকই সুখী হতে পারছে না। কারণ, রাতে ঘুমের ওষুধ না খেলে ঘুম আসে না তাঁদের। এই দুই গোত্রের মানুষের জীবনে সুখ নির্ধারণে টাকার কোনো ভূমিকাই নেই। 

তবে গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক জন জ্যাচিমোভিচ সম্প্রতি ৫২২ জন মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। গত বছর তাঁদের প্রত্যেকের আয় ছিল ১০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের মধ্যে। অধ্যাপক জ্যাচিমোভিচ তাঁদের ৩০ দিনের জন্য একটি ডায়েরি দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, ডায়েরিতে তাঁদের প্রতিদিনের কাজকর্ম লিখতে হবে এবং ওই কাজগুলো করতে গিয়ে তাঁদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল, তা লিপিবদ্ধ করতে হবে। 

এক মাস পর জ্যাচিমোভিচ দেখলেন—যার টাকা যত বেশি, তার মানসিক চাপ তত কম ছিল। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একই ধরনের কষ্টদায়ক ঘটনার সম্মুখীন করা হয়েছিল। একই ধরনের ঘটনায় প্রত্যেকে একই ধরনের হতাশা ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু যাদের আয় তুলনামূলক বেশি ছিল, তাঁরা মানসিকভাবে চাপ ও অস্থিরতা কম অনুভব করেছেন। 

এই গবেষণার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হচ্ছে, যাদের আয় বেশি, তাঁরা নেতিবাচক, অস্বস্তিকর, কষ্টদায়ক ঘটনার ওপর বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারেন। ফলে তাঁরা বেশির ভাগ সময় মানসিক চাপমুক্ত থাকেন। বেশি আয়ের মানুষেরা জীবনের বেশির ভাগ ঝামেলা টাকা দিয়ে মিটিয়ে ফেলতে পারে। 

উচ্চ আয় মানুষকে উন্নত জীবন দান করে এবং উন্নত জীবন মানুষকে সুখী করে। গবেষণায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছেন, জীবন নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট। 

জ্যাচিমোভিচ বলেছেন, ধনীদের কোনো সমস্যা নেই, এমন নয়। তবে তাঁরা টাকা দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন। 

টাকা কীভাবে কাজ করে
টাকা কীভাবে মানুষের জীবনকে সহজ করে, তা নিয়ে আরও একটি গবেষণা করেছেন জ্যাচিমোভিচ ও তাঁর গবেষক বন্ধুরা। সেই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ৪০০ জন অংশগ্রহণকারী। যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের প্রতিদিনের জীবনযাপন ছিল সমস্যাসংকুল। যেমন রান্না করার জন্য সময় বের করতে না পারা, খারাপ যানবাহন ব্যবহার করে ঘুরতে যাওয়া, বাসার মধ্যে ছোট্ট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে অফিসের কাজ করা ইত্যাদি। 

অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়েছিল, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আপনারা নগদ অর্থ ব্যবহার করবেন, নাকি বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সহায়তা নেবেন? 

জ্যাচিমোভিচ বলেছেন, ‘আমরা গবেষণার ফলাফলে দেখেছি, প্রায় সবাই পরিবার ও বন্ধুদের ওপর ঝুঁকছেন। বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারীই বন্ধু ও পরিবারের সাহায্য নেওয়ার কথা বলেছেন।’ 

তবে একই প্রশ্নের উত্তরে অপেক্ষাকৃত ধনীরা বলেছেন, তাঁরা নগদ টাকা দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করবেন। যেমন খারাপ যানবাহনের সমস্যা মেটাবেন উবার কল করে। 

লজ্জা ভেঙে দেয় টাকা
জ্যাচিমোভিচ ও তাঁর গবেষক বন্ধুরা তাঁদের গবেষণাপত্রে লিখেছেন, যাঁরা আর্থিক সমস্যার মধ্যে থাকেন, তাঁরা লজ্জা অনুভব করেন। ফলে তাঁরা সমস্যা মোকাবিলা করার চেয়ে এড়িয়ে যেতে পছন্দ করেন। এই পলায়ন প্রবণতা তাঁদের আরও বেশি সমস্যায় ফেলে দেয়। তাঁদের লাজুক প্রবণতার জন্য অর্থের অভাবই দায়ী। 

হার্ভার্ডের এই গবেষক বলেছেন, ‘আমরা সমাজে এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছি যে, আপনার দোষেই আপনি দরিদ্র, তাই আপনার লজ্জিত হওয়া উচিত। ফলে আমাদের সামাজিক কাঠামোটা গরিবদের জন্য সত্যিই কঠিন হয়ে উঠেছে।’ 

আর্থিক সংকটের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে কম দক্ষতা, দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তহীনতা, কারও সঙ্গে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি না হওয়া ইত্যাদি সমস্যার সম্পর্ক রয়েছে বলে তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে। 

জ্যাচিমোভিচ তাঁর গবেষণা প্রবন্ধে বলেছেন, ‘যারা দরিদ্র, তাঁর মনে রাখা উচিত যে, তাঁদের জীবনের ওপর তাঁদেরও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সুখী জীবন শুধু ধনীদেরই নিয়ন্ত্রণে থাকবে—এমনটা আমরা কেন ভাবছি? এই ভাবনা, এই লজ্জা আমাদের ভেঙে ফলতে হবে।’ 

অনেকেই মনে করেন, নগদ টাকা দিয়ে শুধুই ‘বিলাসিতা’ কেনা যায়। যেমন, ব্যয়বহুল ডিনার, বিলাসবহুল রিসোর্টে অবকাশযাপন ইত্যাদি। আদতে তা নয়। বরং নগদ টাকা দিয়ে মানুষের প্রতিদিনের অনেক ঝামেলা এড়ানো যায়। ফলে জীবন সহজ হয়, মানসিক চাপ কমে এবং জীবনে সুখ অনুভূত হয়। 

কেন এই গবেষণা
জ্যাচিমোভিচ যখন স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন, তখন তাঁকে অনেক আর্থিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। তখন তাঁর বাবা তাঁকে বলেছিলেন, ‘সমস্যার সমাধানে কীভাবে অর্থ ব্যয় করতে হবে, তা তোমাকে শিখতে হবে।’ 

বাবার সেই কথাটা জ্যাচিমোভিচের খুব মনে ধরেছিল। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এ বিষয়ে গবেষণা করবেন। অনেক পরে গবেষণা চালিয়ে দেখলেন, মানুষের জীবনের সন্তুষ্টির সঙ্গে অর্থের সত্যিই সংযোগ রয়েছে। 

জ্যাচিমোভিচের সঙ্গে গবেষণা করেছেন সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, গ্রোনিঞ্জেন ইউনিভার্সিটি এবং কলাম্বিয়া বিজনেস স্কুলের গবেষকেরা। তাঁরা দেখেছেন, মানুষের সুখী হওয়ার সঙ্গে টাকার সম্পর্ক রয়েছে। 

সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

আক্কেলপুরে পুলিশের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত