Ajker Patrika

নাচতে নাচতেই যারা মরেছিল

ফজলুল কবির
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২২, ১৫: ৪৮
নাচতে নাচতেই যারা মরেছিল

‘বিপুল গভীর মধুর মন্দ্রে/কে বাজাবে সেই বাজনা!/উঠিবে চিত্ত করিয়া নৃত্য,/বিস্মৃত হবে আপনা।’ আপনাকে ভুলিয়ে দেওয়ার মতো করে রবিঠাকুরের চিত্ত কখনো নেচে উঠেছিল কি না, কিংবা সেই অন্তরের নৃত্য বহিরাঙ্গে প্রকাশ পেয়েছিল কি না, নাকি সেই বাজনদারের অভাবে আর নাচটা হয়ে ওঠেনি, তার তত্ত্বতালাশ রবি-বিশেষজ্ঞ দিতে পারবেন। কিন্তু বাজনদারের অপেক্ষা ছাড়াই যে কতজন আক্ষরিক অর্থেই নাচতে নাচতে মরে গেল, তার খোঁজ কে রাখে। 

শুনে একটু কেমন লাগলেও ঘটনা কিন্তু সত্য। ভাবুন, কোনো একজন বা একদল লোক নেচে যাচ্ছে, অনবরত, সকাল থেকে সন্ধ্যা, দিনের পর দিন, এমনকি সপ্তাহ পেরিয়ে। তাদের থামানো যাচ্ছে না। যারা আসছে তাদের দেখতে, তাদেরও কেউ কেউ যোগ দিচ্ছে নাচে। বহর বাড়ছে। ‘আপনা’ বিস্মৃত হয়ে তারা শুধু নেচেই যাচ্ছে। শহরের বাঁধানো রাস্তা বা পাহাড়ি পথে তারা নাচছে। তাদের কেউ কেউ হয়তো নাচতে নাচতে উঠছে পাহাড়ে, চলছে পথ। একেবারে অপ্রতিরোধ্য তাদের এই নৃত্যরোখ। 

এমন ঘটনা একটি-দুটি নয়, অনেকগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও বিখ্যাত ঘটনাটি ফরাসি দেশের। ফ্রান্সের স্ত্রাসবুগ শহরে ১৫১৮ সালে দেখা মিলেছিল এই নৃত্যরোখের। রোখ বলা হচ্ছে কারণ, ওই নাচ ছিল একেবারে অনিয়ন্ত্রিত। সেই নাচ ও মৃত্যুর আখ্যান নিয়ে লেখা হয়েছে বিস্তর কবিতা, গদ্য, গল্প, আরও কত- কী। 

জুলাই মাস। গ্রীষ্মকাল। বেশ গরম পড়েছে। বৃষ্টির দেখাহীন সেই জুলাইয়ের এক দুপুরে ফো তোফ নামের এক নারী স্ত্রাসবুগ শহরের একটি চত্বরে এগিয়ে এলেন। কোনো বাজনদার নেই আশপাশে। নেই কোনো আয়োজন। তবু সেই নারী নাচতে শুরু করলেন। প্রকাশ্য পথে এই নাচ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সময় লাগেনি। আশপাশের পথচলতি মানুষেরা একটু একটু করে আগ্রহী হয়ে উঠল। তাকে ঘিরে ভিড় হয়ে গেল। তারা এমন এক নারীর নাচ দেখতে লাগলেন, যে কখনো থামতে পারবে না, থামার শক্তিই নেই তার। সংগীতের আয়োজনহীন সেই নাচ চলল প্রায় এক সপ্তাহ। না, এই একটানা নাচ তিনি একইভাবে নেচে যেতে পারেননি। তিনি শক্তি হারিয়েছেন। তাঁর পদস্খলন হয়েছে। মাটিতে পড়ে গেছেন। আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। যেন এ এক দারুণ দায়, যা তাঁকে চোকাতে হবে। কিন্তু নেচে নেচে তিনি কোথায় কিসের দায়ভোগ করছেন? 

যতক্ষণে ফো তোফকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলো, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরও অনেকে যোগ দিয়েছে সেই নাচে। দল ভারী হয়ে গেছে। কতজন? বিবিসি বলছে, শত শত। কোনো ব্যাখ্যা নেই। তারা নেচেছে বাধ্যের মতো, যেন নাচতে তাদের হবেই। পা থেকে রক্ত ঝরছে, পেশিতেও পড়েছে টান, তবু থামার নাম নেই কারও। যেন এই নেচে যাওয়াই নিয়তি। সে সময়ের এক পত্রিকায় সে ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছিল, উন্মুক্ত বাজারে রাত-দিন যে নারী-পুরুষেরা নাচতে শুরু করেছিল, শুরু করেছিল খোঁড়ানো, তারা সেই রোগ থেকে সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত শুধু নেচেই গেছে। আরেক খবরে জানা যায়, বাজনদার আসতে সময় লাগেনি। কর্তৃপক্ষ এই নাচ থামাতে একজন সত্যিকারের নৃত্যশিল্পীকে নিয়োগও দিয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। 

১৫১৮ সালে ফ্রান্সে এভাবে নাচতে নাচতে মারা গিয়েছিল প্রায় ১০০ মানুষ। প্রতীকী অন্য আরেক পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ওই ‘নৃত্যপাগল’ মানুষদের কর্তৃপক্ষ নিয়ে গিয়েছিল শহরের বাইরে সেন্ট ভিটাস সমাধিতে। সেখানে তাদের দেওয়া হয় ছোট ছোট ক্রুশ, আর লাল জুতো। 

কী হয়েছিল সেই মানুষদের? তারা কি নাচ থামিয়েছিল? না। অনেকে নাচতে নাচতে মরে গিয়েছিল। কেউ হার্ট অ্যাটাকে, কেউ স্ট্রোকে, তবু নাচ থামেনি। কতজন মরেছিল? এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা জানাচ্ছে, নাচতে নাচতে মরে যাওয়া লোকের সংখ্যা ১০০-এর আশপাশে। ইতিহাসে এই ঘটনা ‘ড্যান্স প্লেগ’ নামে পরিচিত। 

কথা হলো ড্যান্স প্লেগ কি শুধু এই একবারই দেখা দিয়েছিল। সত্যিকারের নৃত্যপাগল মানুষের দেখা কি আর মেলেনি? মিলেছে। মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের প্রথম পর্বে এমন নজির আছে ইউরোপেই। কখনো জার্মানি, কখনো ইংল্যান্ডে এমন ঘটনা ঘটেছে। তার আগেও হয়েছে। জানা ইতিহাসে প্রথম এমন ঘটনা ঘটেছিল সপ্তম শতকে জার্মানির বার্নবার্গে। ১০২০ সালে সেই একই এলাকায় এর পুনরাবৃত্তি ঘটে। এরপর ১২৩৭ সালে আবার। এবারও জার্মানি। এবার নাচে মশগুল হলো একদল শিশু। তারা নাচতে নাচতে জার্মানির আরফার্ট থেকে আর্নস্টাড শহরে গেল। এই দুই শহরের দূরত্ব কত? ১২ মাইল বা ২০ কিলোমিটার। ১২৭৮ সালে জার্মানির মাইজা নদীর ওপর এক সেতুতে উঠে গেল ২০০ লোক। তারা সেই সেতুর ওপরই নাচতে শুরু করল। ফলাফল? সেতুটি আর টিকল না। ভেঙে নাচে মশগুল সবাইকে নিয়ে জলে গেল সেই সেতু। ১৩৭৩ থেকে ১৩৭৪ সময়ে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ডে এই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ল। 

এর সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে সামনে আছে নিউইয়র্ক। ২০১১ সালে নিউইয়র্কের লি রয় জুনিয়র-সিনিয়র হাইস্কুলে ১২ জন কিশোরী হঠাৎ শরীর বাঁকানো শুরু করে। কোনোভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষক্রিয়া হতে পারে—এমন যেকোনো ধরনের খাবার নিষিদ্ধ করে। 

কথা হলো কেন এমন হয়? আগে একসময় বলা হতো এটা দৈব ঘটনা। কেউ বলত, এই নৃত্যপাগলেরা স্বর্গীয় আশীর্বাদপুষ্ট, আবার কেউ বলত, তাদের ওপর শয়তানের আছর হয়েছে। এদের প্রতি নির্দয় আচরণ করা হতো। যাজকেরা নেমে আসতেন উচিত শিক্ষা দিতে। স্ত্রসবুগের ধর্মযাজক সেবাস্তিয়ান ব্রাঁ এক প্রহসনে লিখেছিলেন, ‘নাচ ও পাপ সমগোত্রীয়।’ 

নাচের এই রোগ কিন্তু এর পর আরও দেখা দিয়েছিল, সর্বশেষটি ঘটেছিল নিউইয়র্কে ২০১১ সালে। কিন্তু এই পাপ-বিষয়ক ধারণায় মানুষ অন্ধ হয়ে বসে থাকেনি। তারা এর কারণ অনুসন্ধান করেছে। স্ত্রসবুগের ঘটনার কয়েক বছর পর প্যারাসেলাস নামের এক চিকিৎসক বললেন, এটা দৈব কিছু নয়, বরং মর্ত্যের কারবার। শরীরের শিরা-উপশিরায় এমন কিছু ঘটে, যাতে মানুষ আর স্থির থাকতে পারে না। অঙ্গগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই নিয়ন্ত্রণহীন অঙ্গসঞ্চালন ততক্ষণ পর্যন্ত চলে, যতক্ষণ না তার উন্মত্ত রক্ত স্থির না হয়। 

না, প্যারাসেলাসের এই ব্যাখ্যা পরে পাল্টেছে। এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে। প্যারাসেলাস এমন ঘটনার জন্য শয়তান বা ঈশ্বর নয়, বরং কল্পনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করেছিলেন। তাঁর এই শেষ কারণটি কিন্তু এখনকার তত্ত্বগুলোর সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়। এখন এই ধরনের ঘটনার জন্য মানসিক অসুস্থতাকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়। আর এই মানসিক অসুস্থতার পেছনে ভঙ্গুর রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা হয় কোনো কোনো তত্ত্বে। 

শুরুতে অবশ্য অনেক ধরনের ব্যাখ্যা দাঁড়িয়েছিল। এর মধ্যে আছে রাই শস্যের ডালপালা খাওয়া বা অনুরূপ কিছু খাওয়ার কারণে বিষক্রিয়ার কথাও। একে একেবারে উড়িয়ে দেননি বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, কিছু প্রাকৃতিক গাছ-গাছড়া আছে, যেগুলো একধরনের কল্পনার জগতে নিয়ে যায় মানুষকে। যেগুলোতে ঠিক সেই ধর্ম আছে, যা আছে হালের হাইকাডেলিক ড্রাগ লিসারজিক অ্যাসিড ডাইইথাইলঅ্যামাইডের (এলএসডি) মধ্যে। 

ইতিহাসবিদ জন ওয়েলারকে উদ্ধৃত করে হিস্টোরি ডেইলি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, এই প্লেগ সম্ভবত গণহিস্টিরিয়ার একটি উদাহরণ হতে পারে, যা দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলেই দেখা দিয়েছিল। এখন বিজ্ঞানীরা অবশ্য এসব কারণকে উড়িয়ে না দিয়েই জানাচ্ছেন এক স্নায়বিক রোগের কথা, যাকে বলা হচ্ছে ডিসকিনেসিয়াস। আর সাধারণ্যে একে ডাকা হয় কোরিওম্যানিয়া নামে, যার অর্থ ‘নাচের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি’। এর মূল এসেছে গ্রিক থেকে। অর্থাৎ গ্রিসও এর বাইরে ছিল না। এশিয়ায় এর খোঁজ মিলেছিল সিঙ্গাপুরে ১৯৭৩-৭৮ সময়ে। সে সময় দেশটির কিছু কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে এই রোগ দেখা দিয়েছিল। এই বঙ্গে কখনো দেখা দিয়েছিল কি না, কে জানে। 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চিপসের প্যাকেটকে বন্দুক ভেবে কিশোরকে পুলিশে দিল এআই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২৯
চিপসের প্যাকেটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বন্দুক হিসেবে সনাক্ত করেছে। ছবি: জেমিনি
চিপসের প্যাকেটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বন্দুক হিসেবে সনাক্ত করেছে। ছবি: জেমিনি

চিপস খেতে খেতে রাস্তায় হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের স্কুলপড়ুয়া কিশোর টাকি অ্যালেন। হঠাৎ আটটি পুলিশের গাড়ি এসে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাকে। গাড়ি থামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা তার দিকে বন্দুক তাক করে হাঁটু গেড়ে বসতে বললেন। এমন আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব ১৬ বছর বয়সী এই কিশোর বুঝে উঠতে পারছে না, কী তার ভুল। পুলিশের নির্দেশ মানার পর হাতে পড়ল হাতকড়া।

টাকি অ্যালেনকে কিশোর বয়সে এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। অ্যালেনের হাতে থাকা চিপসকে বন্দুক হিসেবে শনাক্ত করেছে এক এআই সিস্টেম!

স্থানীয় গণমাধ্যম ডব্লিউএমএআর-২ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাকি অ্যালেন বলে, ‘হঠাৎ দেখি প্রায় আটটা পুলিশ কার এসে গেল। তারপর সবাই বন্দুক তাক করে আমাকে মাটিতে শুতে বলছে।’

অ্যালেন বলতে থাকে, ‘ফুটবল অনুশীলনের পর এক প্যাকেট ডোরিটোস চিপস খেয়ে খালি প্যাকেটটি পকেটে রেখে দিই। এর ২০ মিনিট পরই এই ঘটনা। একজন অফিসার আমাকে হাঁটু গেড়ে বসতে বলেন, তারপর আমাকে আটক করে হাতকড়া পরান।

তবে বাল্টিমোর কাউন্টি পুলিশ বিভাগ বিবিসি নিউজের কাছে দাবি করে, অ্যালেনকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল, গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এক বিবৃতিতে তারা জানায়, কোনো হুমকি নেই নিশ্চিত হওয়ার পর বিষয়টি নিরাপদে সমাধান করা হয়।

এই ঘটনার পর থেকে ফুটবল অনুশীলন শেষে স্কুলের ভেতরে চলে যায় অ্যালেন। সে জানায়, বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়, বিশেষ করে চিপস খাওয়া বা কিছু পান করা।

বাল্টিমোর কাউন্টি পুলিশ বিভাগ জানায়, সেই মুহূর্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যথোপযুক্ত ও আনুপাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাদের কর্মকর্তারা।

বিভাগটি আরও জানায়, এআই সতর্কবার্তাটি মানব পর্যালোচকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা এতে কোনো হুমকি পাননি। এই বার্তা স্কুলের প্রিন্সিপালের কাছে পাঠানো হলেও তিনি এ তথ্যটি দেখেননি এবং স্কুলের নিরাপত্তা টিমকে জানান। তারা পুলিশকে ডাকে।

অভিভাবকদের উদ্দেশে এক চিঠিতে স্কুলের প্রিন্সিপাল কেট স্মিথ বলেন, স্কুলের নিরাপত্তা দল দ্রুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এবং কোনো অস্ত্র না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রাথমিক সতর্কতা বাতিল করে।

তিনি আরও জানান, ‘আমাদের স্কুল রিসোর্স অফিসারকে (এসআরও) বিষয়টি জানানো হলে তিনি অতিরিক্ত সহায়তার জন্য স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ কর্মকর্তারা স্কুলে এসে ওই শিক্ষার্থীকে তল্লাশি করেন এবং দ্রুত নিশ্চিত হন যে তার কাছে কোনো অস্ত্র নেই।’

এআই টুল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওমনিলার্ট এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বিবিসি নিউজকে জানায়, ‘ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের উদ্বেগ জানাতে চাই।’

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের সিস্টেম প্রথমে এমন কিছু শনাক্ত করে যা দেখতে আগ্নেয়াস্ত্রের মতো লাগছিল। ছবিটি পরে তাদের পর্যালোচনা দল যাচাই করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেই তথ্য ও ছবি বাল্টিমোর কাউন্টি পাবলিক স্কুলের নিরাপত্তা দলের কাছে মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয়।

নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, তাদের সিস্টেমে ‘সমাধান হয়েছে’ বলে চিহ্নিত হওয়ার পরই এ বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ততা শেষ হয়। তাদের সিস্টেম ‘যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল, সেভাবেই কাজ করেছে।’

অ্যালেন মন্তব্য করেছে, ‘আমার মনে হয় না কোনো চিপসের প্যাকেটকে কখনো বন্দুক হিসেবে ভুল ধরা উচিত।’

এই ঘটনায় স্কুলগুলোতে এমন প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছে অনেকে। স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা ঘটনাটি নিয়ে আরও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বাল্টিমোর কাউন্টির স্থানীয় কাউন্সিলর ইজি পাকোটা ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি বাল্টিমোর কাউন্টি পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি তাদের এআই-চালিত অস্ত্র শনাক্তকরণ ব্যবস্থার প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিচিত্র /ল্যুভরের লুট এখন ভাইরাল বিজ্ঞাপন, চোরদের মইটি ছিল জার্মান কোম্পানির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ১২
ল্যুভর মিউজিয়ামে ঢুকতে ব্যবহৃতটি মইটি ছিল এক জার্মান কোম্পানির। ছবি: এএফপি
ল্যুভর মিউজিয়ামে ঢুকতে ব্যবহৃতটি মইটি ছিল এক জার্মান কোম্পানির। ছবি: এএফপি

প্যারিসের বিশ্ববিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মহামূল্যবান অলংকার চুরির ঘটনায় ব্যবহৃত বিশেষ একটি ফার্নিচারের প্রস্তুতকারক জার্মান কোম্পানি বোকার। এই চুরির ঘটনাকে এখন নিজেদের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে কোম্পানিটি। তারা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের পণ্যের গুণগান গেয়ে হাস্যরসাত্মক বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।

গত সপ্তাহের রোববার সকালে ল্যুভর মিউজিয়াম খোলার পরই চোরেরা একটি ট্রাক মিউজিয়ামের অ্যাপোলো গ্যালারির নিচে থামায়। এই ট্রাকে লাগানো ছিল বোকার কোম্পানির তৈরি একটি ভাঁজযোগ্য মই। দিনের আলোয় তারা সেই মই বেয়ে ওপরে উঠে যায়, জানালা কেটে ভেতরে ঢোকে এবং ডিসপ্লে কেস ভেঙে গয়না চুরি করে।

পুরো অপারেশনটি শেষ করতে চোরদের সময় লেগেছিল মাত্র সাত মিনিট। চুরি হওয়া অলংকারগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের দেওয়া একটি পান্না ও হীরার নেকলেস এবং সম্রাজ্ঞী ইউজিনির মুকুট। এই মুকুটে প্রায় ২ হাজার হীরা খচিত।

জার্মানির ডর্টমুন্ডের কাছে অবস্থিত লিফটিং সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি বোকারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলেক্সান্ডার বোক এবং তাঁর স্ত্রী রোববার খবরটি দেখার সময়ই ব্যবহৃত মইটি চিনতে পারেন।

সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আলেক্সান্ডার বোক জানান, তাঁর স্ত্রী, যিনি কোম্পানির বিপণন প্রধানও, তিনিই প্রথম বিষয়টি খেয়াল করেন। তিনি বলেন, ‘যখন পরিষ্কার হলো যে চুরির ঘটনায় কেউ আহত হয়নি, তখন আমরা বিষয়টিকে একটু হালকা চালে নিই।’

আলেক্সান্ডার স্বীকার করেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ! সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সর্বাধিক পরিদর্শন করা জাদুঘরটির খ্যাতি কাজে লাগিয়ে আমাদের কোম্পানির জন্য কিছুটা দৃষ্টি আকর্ষণ করার এ-ই সুযোগ।’ তবে তিনি এ-ও স্পষ্ট করেন, ‘এই অপরাধ অবশ্যই নিন্দনীয়, এটা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।’

এই সুযোগে বোকার দ্রুতই একটি প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ল্যুভরের বাইরে লাগানো সেই মইয়ের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছে: ‘যখন আপনার দ্রুত ফেরার তাড়া থাকে!’

বিজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, তাদের তৈরি ‘Agilo’ নামের ডিভাইসটি ২৩০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক মোটর এবং ‘ফিসফিসানির মতো শান্ত’ শব্দের ইঞ্জিনের সাহায্যে ৪০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত মালপত্র বহন করতে পারে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চোরেরা মইটির ডেমোনস্ট্রেশন নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল এবং প্রদর্শনের সময়ই এটি তারা চুরি করে নিয়ে যায়। তারা গাড়ির লাইসেন্স প্লেট ও গ্রাহকের লেবেলিং পর্যন্ত সরিয়ে ফেলেছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোকারের পোস্টগুলো সাধারণত ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার বার দেখা হয়। তবে এই বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকে ৪৩ লাখের বেশি ভিউ পেয়েছে। যদিও প্রচারণার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকে এটিকে ‘স্মার্ট’ ও মজার বলে অভিহিত করেছেন, আবার অনেকে নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আলেক্সান্ডার বোক বলেন, তিনি জানেন এটি ‘খুবই সূক্ষ্ম ভেদরেখা’, কিন্তু কেউ আহত না হওয়ায় তাঁরা এই পথে এগিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, এই প্রচারণার অর্থ অপরাধকে সমর্থন করা নয়।

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সম্পূর্ণ বিরোধী। আমরা নিঃসন্দেহে সিরিয়াস কোম্পানি। জার্মানিতে আমাদের ৬২০ জন কর্মচারী আছে। সবকিছু জার্মানিতেই তৈরি হয়। আমরা নিরাপত্তার পক্ষে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কিশোরের পেট থেকে বের হলো ১০০টি শক্তিশালী চুম্বক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিউজিল্যান্ডে এক কিশোরের পেট থেকে বের করা হলো ১০০টি চুম্বক। ছবি: নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নাল
নিউজিল্যান্ডে এক কিশোরের পেট থেকে বের করা হলো ১০০টি চুম্বক। ছবি: নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নাল

নিউজিল্যান্ডে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরের পেট থেকে প্রায় ১০০টি শক্তিশালী চুম্বক অপসারণ করেছেন চিকিৎসকেরা। জরুরি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার অন্ত্রের কিছু টিস্যুও অপসারণ করতে হয়েছে। চিকিৎসকেরা গতকাল শুক্রবার এই অস্ত্রোপচারের কথা প্রকাশ করেন। চুম্বকগুলো কেনা হয়েছিল জনপ্রিয় অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম টেমু থেকে।

এই ঘটনা অনলাইন শপ থেকে কেনা শিশুদের পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার দিন ধরে পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে কিশোরটিকে নর্থ আইল্যান্ডের টরাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিশোরটি ভর্তির প্রায় এক সপ্তাহ আগে প্রায় ৮০ থেকে ১০০টি (৫ x ২ মিলিমিটার আকারের) শক্তিশালী নিওডিমিয়াম চুম্বক গিলে ফেলেছিল। এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, এই চুম্বকগুলো তার অন্ত্রের ভেতরে চারটি সরলরেখায় জড়ো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, চুম্বকীয় শক্তির কারণে অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ একসঙ্গে আটকে যাওয়ায় তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলে টিস্যু মারা যায়।

সার্জনরা দ্রুত অপারেশন করে মৃত টিস্যু অপসারণ করেন এবং আটকে থাকা চুম্বকগুলো বের করে আনেন। চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেন, কিশোরটির ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদন্ত্রের অংশ ক্যাসেম-এর চারটি জায়গায় টিস্যু মারা গিয়েছিল। আট দিন হাসপাতালে থাকার পর শিশুটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনের লেখক ড. বিনুরা লেখামালেজ, লুসিন্ডা ডানক্যান-ওয়ার এবং নিকোলা ডেভিস সতর্ক করেছেন, এই ঘটনা কেবল চুম্বক গিলে ফেলার বিপদই নয়, বরং শিশুদের জন্য অনলাইন শপের বিপদকেও তুলে ধরে।

উল্লেখ্য, এই শক্তিশালী চুম্বকগুলো নিউজিল্যান্ডে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে নিষিদ্ধ।

চিকিৎসকেরা আরও জানিয়েছেন, চুম্বক গিলে ফেলার জন্য অস্ত্রোপচার ভবিষ্যতে অন্ত্রে বাধা, পেটে হার্নিয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে।

এদিকে, চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট টেমু এই ঘটনা জানার পর দুঃখ প্রকাশ করেছে। একজন মুখপাত্র বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আমরা একটি অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা শুরু করেছি এবং নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নালের লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’

টেমু আরও জানায়, তারা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি যে চুম্বকগুলো টেমু থেকেই কেনা হয়েছিল কি না। তবে তারা প্রাসঙ্গিক পণ্য তালিকা খতিয়ে দেখছে। অবৈধ পণ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বাজারেও টেমু ইতিমধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফোন নম্বর ‘মোটু’ নামে সেভ করায় ডিভোর্স দিলেন স্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৫৯
তুরস্কে ফোন নম্বর মোটু নামে সেভ করায় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন এক নারী। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
তুরস্কে ফোন নম্বর মোটু নামে সেভ করায় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন এক নারী। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

আপনি কি আপনার স্ত্রীকে ‘মোটু বা গুলুমুলু’ ডাকেন? তাহলে এখনই সাবধান হয়ে যান। কারণ, তুরস্কের এক ব্যক্তি তাঁর ফোনে স্ত্রীর ফোন নম্বর সেভ করেছিলেন, ‘Chubby-চাবি’ দিয়ে। যার অর্থ প্রচলিত বাংলায় দাঁড়ায় ‘মোটু বা গুলুমুলু।’ অনেক সময় এই ডাকনাম আদুরে শোনালেও বিষয়টি মোটেও ভালো লাগেনি তুর্কি ওই ব্যক্তির স্ত্রীর। তিনি সোজা আদালতে গিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। এমনকি তাঁদের বিচ্ছেদ হয়েও যায়।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহের খবরে বলা হয়েছে, তুরস্কের ওই ব্যক্তি তাঁর মোবাইল ফোনের কনট্যাক্টে স্ত্রীর নাম সেভ করেছিলেন ‘চাবি’ নাম দিয়ে। এই ঘটনাকে আদালত ‘অসম্মানজনক’ ও ‘বিবাহের জন্য ক্ষতিকর’ বলে রায় দিয়েছেন।

পশ্চিম তুরস্কের উশাক প্রদেশের ওই নারী এই ঘটনার পর স্বামীর বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন। অন্যদিকে স্বামী পাল্টা মামলা করে স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ তোলেন। তাঁদের সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে, তবে তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

আদালতের শুনানিতে ওই নারী জানান, তাঁর স্বামী বারবার তাঁকে হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠাতেন। এক বার্তায় তিনি লিখেছিলেন, ‘দূর হও, তোমাকে আর দেখতে চাই না।’ আরেকটিতে বলেছিলেন, ‘তোমার মুখ শয়তানকে দেখাও গে।’ এ ছাড়া তিনি নিজের বাবার অস্ত্রোপচারের খরচ বাবদ স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা দাবি করেন।

শুনানির সময় আদালতে সবচেয়ে আলোচিত হয় স্বামীর ফোনে স্ত্রীর নাম ‘তোম্বিক—তুর্কি ভাষার এই শব্দের অর্থ মোটা) নামে সংরক্ষিত থাকার বিষয়টি। ওই নারীর দাবি, এই ডাকনাম তাঁকে অপমান করেছে এবং তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে। আদালত তাঁর দাবিকে সমর্থন করে জানায়, ওই নাম ও বার্তাগুলো ‘মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতা’র শামিল।

অন্যদিকে স্বামী দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বাড়িতে এনেছিলেন। কিন্তু তদন্তে জানা যায়, ওই ব্যক্তি কেবল একটি বই পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে কোনো অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ মেলেনি। আদালত রায়ে বলে, স্বামীর অপমানজনক ভাষা ও অর্থনৈতিক চাপ ছিল আরও গুরুতর। তাই মূল দায় তাঁরই।

তুর্কি আইনে কারও মর্যাদা বা ব্যক্তিগত সম্মান আঘাত করে এমন ভাষা বা আচরণের জন্য, সেটা বার্তা মারফত হোক বা সরাসরি, দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। শেষ পর্যন্ত দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা পরকীয়ার অভিযোগ খারিজ করা হয়। স্বামীকে তাঁর সাবেক স্ত্রীকে মানসিক ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক প্রকাশ করা হয়নি।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একজন লিখেছেন, ‘মোটু বা গুলুমুলু ডাক আসলে বেশ মিষ্টি শোনায়। মোটা হওয়া কোনো অপরাধ না, আর মোটা বলে ডাকা সব সময় অপমানও নয়।’ আরেকজন বলেছেন, ‘এটা ন্যায্য রায়। স্বামী তাঁর স্ত্রীকে একের পর এক অপমানজনক বার্তা পাঠিয়েছে—সেখানেই সীমা অতিক্রম করেছে।’ তৃতীয় এক ব্যক্তি মজা করে লিখেছেন, ‘আমার বন্ধুদের নম্বরগুলো এখনই যাচাই করব, যেন কোনো আপত্তিকর কিছু না থাকে।’

এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গত মে মাসে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক ব্যক্তি প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেন। কারণ, প্রেমিকার ফোনটি তাঁদের প্রথমবার একসঙ্গে যাওয়া এক হোটেলের কামরায় ওয়াইফাইয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত হয়ে যায়।

এর ফলে ওই পুরুষি মনে করেন, এর মানে ওই নারী আগে অন্য কারও সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে প্রতারণা করেছেন। অপমানিত হয়ে ওউ নারী স্থানীয় এক টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত