Ajker Patrika

যে শহরে দালানের ভেতর দিয়ে রেলগাড়ি যায়

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ৪৭
Thumbnail image

হঠাৎ যদি একটি দালান ফুঁড়ে বা ভেদ করে ট্রেন যেতে দেখেন, কেমন লাগবে বলুন তো? বিষয়টি পিলে চমকে দেওয়ার মতো। তাই বলে আবার গালগপ্পো ভাববেন না। এ ধরনের ঘটনা দেখার জন্য আপনাকে যেতে হবে চীনের এক শহরে।

চীনের জনবহুল শহরগুলোর একটি চংকিং। চারপাশে পাহাড়ঘেরা শহরটিতে স্বাভাবিকভাবেই দালানকোঠার কোনো অভাব নেই। তাই স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদদের শহরের ভেতর দিয়ে মনোরেল লাইনের ব্যবস্থা করার জন্য নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা পুরোটা ঢেলে দিতে হয়েছে। যার ফলাফল, ১৯ তলা এক দালানের ভেতর দিয়ে ট্রেন চলে যাওয়া।

চংকিংয়ের উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণে দাবা, উশান, উলিং ও দালৌ পর্বত। তাই শহরটির অনেকটা জুড়েই পাহাড়ি ঢালের বিস্তার। তারপর আবার বিপুল জনসংখ্যার শহরটিতে উঁচু অট্টালিকার অভাব নেই। তাই সবকিছু মিলিয়ে উপযুক্ত জায়গার সংকটে ভুগতে হয় নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিদের। ২০০৪ সালে যখন রেল ট্রানজিট-২ নামের একটি মনোরেলের প্রকল্প পাস হলো, তখন দেখা গেল রেললাইন যে পথ দিয়ে যাবে, তার মাঝখানে পড়ছে ১৯ তলা একটি দালান। 

দালানের মাঝখান দিয়ে চলে যাচ্ছে ট্রেন। ছবি: ফেসবুকএই পরিস্থিতিতে দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি বেছে নিতে হতো, গোটা দালানটাই ভেঙে রেলের জায়গা করে দেওয়া, নতুবা দুটি তলা পরিষ্কার করে সেই জায়গায় একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করে ট্রেন চলাচলের পথ বের করা। কিছুটা প্রথাবিরোধী হলেও দ্বিতীয় পথটিই বেছে নিলেন তাঁরা। কাজটি যে তাঁরা খারাপ করেননি এটা নিশ্চিত। কারণ এই দালান ফুঁড়ে চলে যাওয়া ট্রেনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর গোটা মনোরেলটা যেমন বিখ্যাত হয়ে গেছে, তেমনি শহরটিকে আরও ভালোভাবে চিনেছে বিশ্ববাসী।

দালানটির ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক এলাকা। ৯ থেকে ১৯ তলা পর্যন্ত আবাসিক ফ্ল্যাট। ট্রেনটি যায় সপ্তম ও অষ্টম তলার মধ্য দিয়ে। এখন একটি অট্টালিকার ভেতর দিয়ে ট্রেন চলে যাচ্ছে, শুধু এতটুকুতে যদি আপনার মন না ভরে, তবে জানিয়ে রাখছি, দালানটির সপ্তম-অষ্টম তলায় যাত্রী ওঠানামার জন্য স্টেশনও আছে। এটির নাম লিজবা স্টেশন। কাজেই আক্ষরিক অর্থেই বাসার সদর দরজা থেকে বের হয়েই লাফ দিয়ে ট্রেনে উঠে পড়তে পারেন এই দালানে বাস করা মানুষ।

পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এই আশ্চর্য ট্রেন। ছবি: ফেসবুকআপনি হয়তো ভাবতে পারেন, যে দালানের ভেতর দিয়ে কয়েকবার ট্রেন চলে যায়, তার ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টগুলোর নিশ্চয় দাম কমে গেছে। বরং উল্টোটা সত্যি। এখন ওগুলোর দাম আকাশচুম্বী। কারণ ঘরের দোরগোড়া থেকে ট্রেনে ওঠার সুযোগ আর কোথায় মিলবে! 

এখন আপনি নিশ্চয় ভাবছেন, এভাবে এত কাছ দিয়ে ট্রেন চলে যাওয়ায় নিশ্চয় ওই দালানের বাসিন্দাদের কান ঝালাপালা হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। দালানটিতে বসানো হয়েছে শব্দ কমানোর যন্ত্রপাতি। 

দালানটির বাসিন্দারাও ট্রেনের কারণে সেই অর্থে শব্দদূষণের শিকার হন না বলে জানিয়েছেন। ছবি: ফেসবুকএর বাসিন্দারাও ট্রেনের কারণে সেই অর্থে শব্দদূষণের শিকার হন না বলে জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, ট্রেন যাওয়ার সময় ডিশওয়াসার যেমন শব্দ করে, তেমন একটি শব্দ কেবল শুনতে পান। নবম তলায় বাস করা এক বাসিন্দা আরেক কাঠি সরেস। তাঁর দাবি, চারপাশ খুব নীরব থাকলেই কেবল ট্রেন আসা-যাওয়ার শব্দ শুনতে পান।

তবে সব সুবিধার মধ্যে টুকটাক অসুবিধা যে নেই তা নয়। যেমন—বছর কয়েক আগে অদ্ভুত এক কারণে চালককে ট্রেন থামাতে হয়। একটি ফ্ল্যাট থেকে কীভাবে যেন বড়সড় একটি কম্বল এসে পড়ে রেলট্র্যাকের ওপরে। একটি লাঠির সাহায্যে কম্বলটা সরিয়ে আবার ট্রেন সচল করেন চালক।

ট্রেনটি যায় সাত ও আটতলার মধ্য দিয়ে। ছবি: ফেসবুকবিখ্যাত এই রেলট্র্যাকের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর চংকিং শহরটির আলাদা পরিচিতি পেলে এখানে দেখার মতো আরও অনেক কিছু আছে। পাহাড়ি শহরটি গড়ে উঠেছে এক নদীর তীরে। অসাধারণ সব ফ্লাইওভার আর উঁচু উঁচু পদচারী সেতুও এখানকার বড় আকর্ষণ।  পাঁচতলা এক দালানের ছাদ দিয়ে যাওয়া দুই লেনের রাস্তাটির কথা ভুললেও চলবে না।

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল, এনডিটিভি, চায়না ডেইলি, ম্যাশেবল ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত