Ajker Patrika

যে শহরের প্রতিটি বাড়িতেই আছে উড়োজাহাজ 

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১৫: ৫৬
যে শহরের প্রতিটি বাড়িতেই আছে উড়োজাহাজ 

গল্পটি এমন এক শহরের, যেখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছোট ছোট উড়োজাহাজ বা প্লেন আছে। গাড়ির গ্যারেজ যেমন আমাদের কাছে এখন খুব পরিচিত একটি বিষয়, ওই শহরে উড়োজাহাজের হ্যাঙ্গারও তেমনি। সেখানে এমনকি গাড়ির পাশাপাশি রাস্তায় দেখা পাবেন উড়োজাহাজেরও।

শুনতে যতই অস্বাভাবিক লাগুক, এমন শহর বা বসতি সত্যি আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ওই এলাকার নাম ক্যামেরন এয়ারপার্ক স্টেটস। এখানে প্রত্যেকেই তাঁদের বাড়ির সামনেই উড়োজাহাজে চেপে চলে আসতে পারেন। যেখানে যেতে চান, নিজের ব্যক্তিগত ছোট্ট প্লেনটায় চেপে বসলেই হলো। এই আজব শহরের ছবি ও ভিডিও অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ আলোড়ন তুলেছে।

মজার ঘটনা, শহরটির নকশাই করা হয়েছে পাইলটদের কথা ভেবে। একটি বিমানবন্দর ঘিরেই গড়ে তোলা হয়েছে শহরটি। যেন পাইলটেরা সেখান থেকে সহজে বাড়িতে আসতে এবং বাড়ি থেকে কোথাও যেতে পারেন। তাঁদের বাড়িতে গ্যারেজ যদি না-ও থাকে, উড়োজাহাজ রাখার হ্যাঙ্গার ঠিকই আছে। অফিসে কিংবা বেড়াতে গেলে তাঁদের বড় ভরসা এই উড়োজাহাজ।

ক্যামেরন এয়ারপার্কের রাস্তায় গাড়ির পাশাপাশি দেখা মেলে উড়োজাহাজেরএবার বরং এ রকম একটি শহরের গোড়াপত্তন কীভাবে হলো তা জেনে নেওয়া যাক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক এয়ারফিল্ডই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। পাইলটের সংখ্যা ১৯৩৯ সালে যেখানে ছিল ৩৪ হাজার, ১৯৪৬ সালে তা বেড়ে হয় ৪ লাখ। সেখানকার সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি দেশজুড়ে আবাসিক এয়ারফিল্ড গড় তোলার প্রস্তাব দিল। এর একটি উদ্দেশ্য অব্যবহৃত এয়ারফিল্ডগুলো কাজে লাগনো। অপরটি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক পাইলটদেরও একটি ভালো ব্যবস্থা হওয়া। তাই এমন সব বসতি গড়ে উঠল, যেখানে সবাই কোনো না কোনোভাবে উড়োজাহাজ চালনার সঙ্গে সম্পর্কিত। আর এমনই একটি আবাসিক এয়ারপার্ক ক্যামেরন এয়ার পার্ক। 

পৃথিবীতে এ ধরনের কয়েক শ এয়ারপার্ক থাকলেও ক্যামেরন এয়ারপার্ক এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগিয়েছে। যদ্দুর জানা যায়, ১৯৬৩ সালে গড়ে ওঠা এই শহরে ১২৪টি বাড়ি আছে। 

শহরের রাস্তা পেরিয়ে খুব সহজে বিমানবন্দরের রানওয়েতে উঠে যেতে পারে প্লেনগুলো। ছবি: ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্ট ডিস্ট্রিক্টক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্টের একসময়কার ম্যানেজার কুকসি এক সাক্ষাৎকারে বিজনেস ইনসাইডারকে বলেছিলেন, এয়ারপার্কের রাস্তাগুলো এয়ারপোর্টের রানওয়ে থেকে চওড়া। কারণ রানওয়েতে কেবল উড়োজাহাজই চলে। অন্যদিকে উড়োজাহাজ ও গাড়ি যেন পাশাপাশি নিরাপদে একে অপরকে অতিক্রম করে যেতে পারে, সেটা মাথায় রেখেই এখানকার রাস্তার নকশা করা। 

তাই ওই শহরে গেলে গাড়ি আর উড়োজাহাজকে রাস্তায় পাশাপাশি চলতে দেখলে চোখ কচলানোর কোনো কারণ নেই। এটাই সেখানকার অতি স্বাভাবিক চিত্র। 
 
এই আজব শহরের আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, এখানকার রাস্তার সাইন ও ডাকবাক্সগুলো বেশ নিচু করে বানানো, সেটা এমনকি তিন ফুটের নিচে। এর কারণ হলো উড়োজাহাজের ডানার সঙ্গে যেন এগুলোর সংঘর্ষ না হয়। রাস্তার নামগুলো উড়োজাহাজের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত। যেমন বোয়িং রোড, সেসানা ড্রাইভ ইত্যাদি। এখানকার বাসিন্দাদের কাছে রিমোট থাকে, যেটা দিয়ে বৈদ্যুতিক গেট খুলে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারেন তাঁরা।

স্বাভাবিকভাবেই উড়োজাহাজপ্রেমীদের আবাসস্থল এই শহর। ২০০৩ সালে বে এরিয়া থেকে ক্যামেরন এয়ারপার্ক এস্টেটসে ঘাঁটি গাড়েন বার্ল স্ক্যাগস। একটা কারণ, এখানকার বাড়ির দাম তখন বেশ কম ছিল, তবে আসল কারণ তাঁর একটা ব্যক্তিগত প্লেন আছে আর ক্যামেরনের প্রতিটি বাড়ির সঙ্গেই বড়সড় হ্যাঙ্গার আছে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়া পর্যন্ত পরের সাত বছর এই প্রকৌশলী পালো আল্টোতে নিজের কর্মস্থলে যেতেন উড়োজাহাজে। এভাবে যানজটে আটকা না পড়ায় প্রতিদিন বেশ কতকটা সময় বাঁচিয়ে ফেলতে পারতেন। 

‘আড়াই-তিন ঘণ্টা গাড়ি চালানোর বদলে ৩৫-৪০ মিনিটেই উড়োজাহাজে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারতাম,’ স্ক্যাগস বলেন, ‘এখন আর কর্মস্থলে যেতে না হলেও এখনো একটি প্লেন আছে আমার।’

ক্যামেরন পার্ক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ‘এখান থেকে অন্য কোনো বিমানবন্দরে যেতে এক ঘণ্টা লাগবে। তারপর সেখানে অপেক্ষা করতে হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তামূলক পরীক্ষা করা হবে। এখানে কেবল গ্যারেজের দরজা খুলে প্লেনে উঠে বসবেন। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যে রানওয়েতে ওঠে পড়বেন, আর আকাশে উড়বে আপনার উড়োজাহাজ।’ বলেন শহরটিতে গড়ে ওঠা সংগঠন ফ্রেন্ডস অব ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্টের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল কুরিচক। 

ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যে একটি বিশেষ জেলা এই ক্যামেরন এয়ারপার্ক স্টেটস। পাঁচ সদস্যের নির্বাচিত একটি বোর্ড এটি পরিচালনা করেন। এখানে যেসব মানুষের বাস, তাঁদের বেশির ভাগই পাইলট। তাঁরা নিজেরাই নিজেদের প্লেন চালান। শনিবার সকালে এখানকার অধিবাসীরা একত্র হয়ে স্থানীয় এয়ারপোর্টে যান।

জুলিয়া ক্লার্কের বাসও এই শহরে। তিনি আকাশে উড়োজাহাজ নিয়ে নানা কৌশল দেখাতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী বাণিজ্যিক পাইলটদের একজন তিনি। ১৯৮৩ সাল থেকে এখানে বাস তাঁর। 

তিনি জানান, এই শহরের বাসিন্দারা একে অপরের খুব কাছের। একজন আরেকজনকে ভালোভাবে জানেন। এমনকি নিজের নষ্ট হয়ে যাওয়া উড়োজাহাজটিকেও জুলিয়া মেরামত করে কাজে লাগান। নিজের অনেক কাজই সেখানে করেন। ‘আমার কাজগুলো উড়োজাহাজের ভেতরেই করি।’

গাড়ির গ্যারেজের মতো প্রতিটি বাড়িতে আছে প্লেনের হ্যাঙ্গারওস্ক্যাগস জানান, এখানকার যেসব মানুষ গাড়ি ভালোবাসেন, তাঁদেরও বিশাল হ্যাঙ্গারগুলো পছন্দ। তবে তিনি স্বীকার করেন, এখন শহরে বাস করা শতভাগ লোকই প্রবলভাবে উড়োজাহাজপ্রেমী নয়। 

কাজেই পাঠক মার্কিন মুল্লুকে ভ্রমণে গেলে এমন একটি শহরে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি। বলা যায় না, কথা বলার পর ভালো লেগে গেলে এখানকার কোনো বাসিন্দা ছোট্ট একটি উড়োজাহাজ ভ্রমণে সঙ্গীও করে নিতে পারে আপনাকে।  

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, টাইমস অব ইন্ডিয়া, পিপা নিউজ,

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিমানের ডানায় আটকে গেল প্যারাস্যুট, অলৌকিকভাবে বাঁচলেন স্কাইডাইভার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৯
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডে গত ২০ সেপ্টেম্বর ঘটে বিস্ময়কর সেই দুর্ঘটনাটি। সেদিন প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন এক স্কাইডাইভার। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরোর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটির বিস্তারিত উঠে এসেছে।

এই বিষয়ে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডের টুলি এয়ারপোর্টের আকাশে ১৭ জন প্যারাস্যুটার একটি ‘সিক্সটিন-ওয়ে ফরমেশন জাম্পে’ অংশ নিচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথমজন যখন বিমান থেকে বের হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাঁর রিজার্ভ প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেলটি বিমানের উইং ফ্ল্যাপে আটকে যায়। এর ফলে মুহূর্তের মধ্যেই রিজার্ভ প্যারাস্যুট খুলে যায় এবং বাতাসের হঠাৎ টানে পেছনের দিকে ছিটকে গিয়ে বিমানের ডানায় ধাক্কা খান এবং আটকে যান ওই স্কাইডাইভার। এতে বিমানের ডানায় ও স্ট্যাবিলাইজারে গুরুতর ক্ষতি হয়।

প্যারাস্যুটের দড়ি স্ট্যাবিলাইজারের চারপাশে পেঁচিয়ে যাওয়ায় স্কাইডাইভার ঝুলন্ত অবস্থায় অচল হয়ে পড়েন। অন্য প্যারাস্যুটারেরা জাম্প সম্পন্ন করলেও দুজন দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছিলেন। ঝুলে থাকা প্যারাস্যুটার জীবন বাঁচাতে তাঁর হুক নাইফ বের করে রিজার্ভ প্যারাস্যুটের ১১টি লাইন কেটে নিজেকে মুক্ত করেন। এরপর তিনি মূল প্যারাস্যুট খুলতে সক্ষম হন, যদিও রিজার্ভ প্যারাস্যুটের কিছু লাইন তখনো তাঁকে জড়িয়ে ছিল।

এদিকে পাইলট হঠাৎ বিমানটিকে ওপরের দিকে ঢলে যেতে এবং গতি কমে যেতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন বিমানটিতে ত্রুটি হয়েছে। পরে তাঁকে জানানো হয়, একজন স্কাইডাইভার বিমানের পেছনে ডানায় ঝুলে আছেন। এ অবস্থায় পাইলট জরুরি ‘মে ডে’ বার্তা পাঠান এবং প্রয়োজনে নিজেও বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

অবশেষে ২,৫০০ ফুট উচ্চতায় এসে পাইলট বুঝতে পারেন, বিমানটি তাঁর নিয়ন্ত্রণেই আছে। ছোট-খাটো আঘাত নিয়ে নিরাপদেই অবতরণ করেন ওই স্কাইডাইভার এবং পাইলটও ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

এই ঘটনার পর স্কাইডাইভারদের প্রতি এক সতর্কবার্তায় ‘অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরো’ বলেছে—বিমানের দরজার কাছে প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেল সম্পর্কে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে এবং জরুরি অবস্থার জন্য হুক নাইফ অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ব্যুরো আরও জানিয়েছে, বিমানের ওজন ও ভারসাম্য নির্ণয় স্কাইডাইভিং অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতীতে এসব কারণে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সময়ের আগে অফিসে যাওয়ায় চাকরিচ্যুত নারী

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৯
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

নিয়ম শৃঙ্খলা বড়ই আজব জিনিস। যেমন, সময় মতো অফিসে উপস্থিত হওয়া নিয়মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সময়ের আগে যদি নিয়মিত নিয়ম নেমে অফিস করতে শুরু করেন, আর তাতে যদি অফিস আপত্তি জানায়, সেটা আবার শৃঙ্খলা ভঙ্গের মধ্যে পড়তে পারবে! অন্তত স্পেনের একটি আদালত তাই বলছেন। নির্দিষ্ট সময়ে বা আগে অফিসে উপস্থিত হয়ে চাকরি হারিয়েছেন সে দেশের এক নারী কর্মী! চাকরি ফিরে পেতে তিনি গিয়েছিলেন আদালতে। আদালত জানিয়েছেন, তিনিই আসলে দোষ করেছেন!

স্পেনের আলিকান্তে অঞ্চলের একটি লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২২ বছর বয়সী এক নারী কর্মীর চাকরিচ্যুতি দেশটিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, তিনি নিয়মিত নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিসে পৌঁছাতেন। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, এই আচরণ বরং কাজের প্রবাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল।

চাকরিচ্যুত হওয়ার পর সেই নারী আদালতে মামলা করেছেন। তথ্য অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমতিতে সময়ের আগে অফিসে হাজিরা দেওয়ার এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রি করার অভিযোগে তাঁকে বরখাস্ত করে। তিনি এই বরখাস্তের বিরুদ্ধে ভ্যালেন্সিয়ার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আদালতে তাঁর যুক্তি, অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে আগে আসা প্রমাণসাপেক্ষ না হওয়ায় গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। ফলে প্রাথমিকভাবে বরখাস্তের রায় শ্রম আইন অনুযায়ী বৈধ ধরা হয়েছে।

নিয়মিত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে অফিসে পৌঁছানো

নারী কর্মীর চাকরির চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, তাঁর কর্মঘণ্টা শুরু হবে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু তিনি প্রায় প্রতিদিনই নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগে, অর্থাৎ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছাতেন। এই অভ্যাস দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এতে তাঁর সুপারভাইজারদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিরক্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি হতে থাকে। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে সতর্ক করার জন্য একাধিকবার মৌখিকভাবে এবং লিখিত নোটিশ জারি করে। নোটিশে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, কর্মীকে অবশ্যই চুক্তিভিত্তিক সময় মেনে অফিসে উপস্থিত হতে হবে। তবে এসব সতর্কতা উপেক্ষা করে তিনি আগেভাগে অফিসে আসা চালিয়ে যান, যা কর্মক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।

সতর্কতার পরও অভ্যাস না বদলানো

প্রতিষ্ঠানের একাধিক সতর্কতা অগ্রাহ্য করে তিনি আরও ১৯ বার সময়ের আগে অফিসে এসে হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি ডিউটি শুরুর আগেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশনে লগইন করতেও উদ্যোগ নেন, যা প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম বিরোধী।

প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ

আদালতে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তি দিয়েছে, আগেভাগে আসাকে ইতিবাচক মনে হলেও বাস্তবে তা দলগত কাজে কোনো সুফল আনছিল না। প্রতিষ্ঠানটি জানায়—

  • ওই সময় সহকর্মীদের প্রস্তুতি ছাড়া তাঁকে কোনো কাজ দেওয়া যেত না।
  • কাজের প্রবাহ নির্দিষ্ট সমন্বয়ের ওপর নির্ভরশীল।
  • তাঁর আগাম উপস্থিতি কর্মপ্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট করছিল।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে আগাম কাজ শুরুর চেষ্টা দলগত সহযোগিতা ব্যাহত করছিল।

কর্মীর যুক্তি আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি

কর্মী দাবি করেন, অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে তাঁর বেশি সময় প্রয়োজন ছিল। তবে আদালতে এই দাবি প্রমাণ করার মতো কোনো নথি তিনি দিতে পারেননি। সময়ের আগে অফিসে আসার বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে অফিসের অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত একটি গাড়ি বিক্রি করার গুরুতর অভিযোগ ওঠে।

বিচারকের সিদ্ধান্ত

বিচারক রায়ে বলেন, কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য, নিয়মভঙ্গ এবং একই আচরণ বারবার পুনরাবৃত্তি স্প্যানিশ শ্রম আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাঁকে বরখাস্ত করা আইনসম্মত।

শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ আলবের্তো পায়া মন্তব্য করেন, এই রায় প্রমাণ করে, কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক

ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পর স্প্যানিশ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘দেরি করলে শাস্তি, আগে এলে বরখাস্ত। তাহলে কর্মীর মূল্যায়ন কোথায়!’ অন্যদিকে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলছেন, নির্ধারিত নিয়ম ভাঙা কোনোভাবেই প্রশংসনীয় নয়।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৩ লাখ টাকার ‘ডিম’ গিলে ফেললেন যুবক, এক সপ্তাহ পর যেভাবে উদ্ধার করল পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ

এক চুরির ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেল নিউজিল্যান্ডে। এক ব্যক্তি একটি বহুমূল্য হীরকখচিত লকেট চুরি করতে গিয়ে তা গিলে ফেলেন। তবে অবশেষে সেই লকেটটি ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়’ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়েছে, লকেটটি উদ্ধার করতে ‘মেডিকেল হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়নি’।

৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্যারট্রিজ জুয়েলার্সের দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, লকেটটি গিলে ফেলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁকে ধরা হয়। চুরির প্রায় এক সপ্তাহ পরে এই মূল্যবান জিনিসটি উদ্ধার করা সম্ভব হলো।

ফেবার্গে এগ-এর আদলে তৈরি এই লকেটটির মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৩ লাখ টাকার বেশি)। জুয়েলারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গিলে ফেলা এই লকেটটিতে ৬০টি সাদা হিরা এবং ১৫টি নীলকান্তমণি বসানো রয়েছে। লকেটটি খুললে এর ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি একটি ছোট অক্টোপাস দেখা যায়। এই কারণে লকেটটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অক্টোপাস ডিম’। ১৯৮৩ সালের জেমস বন্ড ছবি ‘অক্টোপাসি’ থেকে অনুপ্রাণিত।

চুরি করার পর থেকেই পুলিশ ওই ব্যক্তিকে নিজেদের হেফাজতে রেখে লাগাতার নজরদারি চালাচ্ছিল। নিউজিল্যান্ড পুলিশ এর আগে জানিয়েছিল, যেহেতু এই ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন, তাই যা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য।

ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আগামী ৮ ডিসেম্বর তাঁকে ফের আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু এই লকেট চুরিই নয়, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরি করেছিলেন তিনি। এর একদিন পরে একটি ব্যক্তিগত ঠিকানা থেকে ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের লিটার এবং ফ্লি কন্ট্রোল (মাছি নিয়ন্ত্রণ) পণ্য চুরি করেন।

প্যারট্রিজ জুয়েলার্স জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া এই বিরল ফেবার্গে লকেটটি নির্মাতাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৯ হাজার ডলারের ‘ডিম’ গিলে যুবক কারাগারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডে এক ব্যক্তি হীরাখচিত লকেট চুরি করেছেন এমন এক উপায়ে, যা শুনলে সিনেমার দৃশ্যই মনে হয়। দোকানদারেরা টের পাওয়ার আগেই তিনি লকেটটি গিলে ফেলেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে পুলিশ জানিয়েছে, গিলে ফেলা ফ্যাবারজে এগ লকেট, যার মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (১৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার) এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, গত শুক্রবার বিকেলে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে পারট্রিজ জুয়েলার্সে পুলিশ ডাকা হলে ৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

জুয়েলারির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যে ফ্যাবারজে এগ চুরি করা হয়েছে, তাতে রয়েছে ৬০টি সাদা হীরা এবং ১৫টি নীল নীলা। ডিমটি খুললে দেখা যায়, ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার একটি ছোট্ট অক্টোপাস।

ডিমটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অক্টোপাসি এগ’, যা ১৯৮৩ সালের একই নামের জেমস বন্ড চলচ্চিত্র থেকে অনুপ্রাণিত; যার কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে এক জটিল ফ্যাবারজে এগ চুরির ঘটনা।

ফ্যাবারজে দুই শতাব্দীর বেশি আগে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এক বিশ্বখ্যাত জুয়েলারি ব্র্যান্ড, যা রত্ন ও মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি ডিম-আকৃতির শিল্পকর্মের জন্য পরিচিত।

বিবিসি জানিয়েছে, ৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তির। তিনি গত ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরির অভিযোগেও অভিযুক্ত। পরদিন ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের বর্জ্য পরিষ্কারের সামগ্রী ও পিঁপড়া নিয়ন্ত্রণের পণ্য চুরির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত