Ajker Patrika

সুবিল পাখি থেকে সাবধান! 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৪, ১১: ৫২
Thumbnail image

একে অনেকেই খুব ভয়ংকর ও বিপজ্জনক পাখি মনে করে। যাদের সে শিকার করে, তাদের জন্য তো এটি অবশ্যই ভয়ংকর। কখনো কখনো একে দেখতে উৎসুক পর্যটক কিংবা ছবি তুলতে যাওয়া পর্যটকদেরও বিকট অঙ্গভঙ্গি করে চমকে দেয়। এ ছাড়া নিজেদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া আরও নানা বিষয় পাখিটির প্রতি আগ্রহ জন্মানোর জন্য যথেষ্ট। 

১৮৪০-এর দশকে ইউরোপীয় প্রকৃতিবিদরা পাখিটিকে পরিচয় করিয়ে দেন
ফার্দিনান্দ ভেয়ারনে নামের এক জার্মান কূটনৈতিক ও অভিযাত্রী প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে সুবিলের (Shoebill) কথা শোনেন। ১৮৪০ সালে হোয়াইট নীলের উৎসের খোঁজে আফ্রিকা অভিযানে যান তিনি। এ সময় ক্যাম্প করেন লেক নোতে। ১২ হাজার বর্গকিলোমিটারের সাদ নামের একটি জলাভূমির অংশ এটি। জায়গাটি পড়েছে বর্তমান দক্ষিণ সুদানে। ভেয়ারনের আদিবাসী গাইড তাঁকে বলেন, ‘আশ্চর্য এক পাখি দেখেছে তারা, যেটি উটের মতো বড়, ঠোঁট পেলিকানের মতো, তবে এর গলায় পেলিকানের মতো কোনো থলে কিংবা উটের মতো কুঁজ নেই।’ 

১০ বছর পর মানসফিল্ড পারকিনস নামের এক সংগ্রাহক সুবিলের দুটি চামড়া নিয়ে আসেন। তিনিই ব্রিটিশ প্রাণীবিদদের বিচিত্র পাখিটির গঠন সম্পর্কে কিছুটা আভাস পাওয়ার সুযোগ করে দেন। ১৮৫১ সালে ব্রিটিশ জুওলজিক্যাল সোসাইটির সদস্যদের এক সভায় প্রকৃতিবিদ জন গুল্ড পারকিনসের আনা নমুনার ভিত্তিতে সুবিলের বর্ণনা দেন এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম রাখেন বেলায়েনিসেপস রেক্স। 

ডিম পাড়া ও বাচ্চা দেওয়া
সুবিল তিন থেকে চার বছর বয়সে প্রজননের উপযোগী হয়। এই পাখিদের একা থাকাটাই পছন্দ। এমনকি যখন প্রজনন মৌসুমে জোড় বাঁধে, তখনো পাখি দুটি নিজেদের এলাকার দুই পাশে খায় বা শিকার করে। এরা জলে ভাসমান বিভিন্ন গাছপালার মধ্যে বাসা তৈরি করে। এ ধরনের বাসা আট ফুট পর্যন্ত চওড়া হতে পারে। বর্ষাকালের শেষ দিকে স্ত্রী পাখি সাধারণ দুটি ডিম পাড়ে। 

অনেকেই খুব ভয়ংকর ও বিপজ্জনক পাখি বলে মনে করে। ছবি: উইকিপিডিয়ানিজের গায়ে মলত্যাগ
সুবিলরা নিজের গায়ে মল ত্যাগ করে। শরীরের তাপমাত্রা কমানোর একটি প্রক্রিয়া এটি পাখিদের। প্রকৃতপক্ষে, এই বৈশিষ্ট্য জীববিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করেছিল অতীতে। অনেকেই তখন ধরে নেন এই আচরণ একে সত্যিকারের সারসদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে। কারণ সারসরাও শীতল হওয়ার জন্য তাদের নিজেদের মল ব্যবহার করে। 

অবশ্য ঠান্ডা থাকার জন্য আরেকটি পদ্ধতিও ব্যবহার করে এরা। তাপ হ্রাসের জন্য গলার পেশি কাঁপাতে থাকে সুবিলেরা। 

লম্বা পা
সুবিলদের পা লম্বা, পাতলা। এতে বড় বড় পা ফেলে সহজেই নীল নদের পানিতে সমৃদ্ধ মিঠা পানির জলাভূমিতে গাছপালার মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে পারে। 

শব্দ করে কম
এরা যেমন একাকী থাকতে পছন্দ করে তেমনি সাধারণত চুপচাপ থাকে। তবে কখনো ঠোঁট দিয়ে একধরনের ঠনঠন আওয়াজ করে। এটি মূলত আনন্দ প্রকাশ করতে এবং বাসা বানানোর সময় করে। ছানারা কখনো কখনো ক্ষুধার্ত হলে হেঁচকির মতো শব্দ করে। 

ভয়ংকর প্রাণী হিসেবে নাম কামিয়েছে
‘খুব শক্তিশালী কামড় দিতে পারে সুবিল’ লিখেছেন উনিশ শতকের প্রাণিবিদ স্ট্যানলি এস ফ্লাওয়ার, ‘এটি কোনোভাবেই এর সম্পর্কে জানে না এমন একজনের জন্য নিরাপদ পাখি নয়। শৌখিন আলোকচিত্রীরা অনেক সময়ই বিভ্রান্ত হন। পাখিটি আত্মরক্ষার জন্য তীক্ষ্ণ চিৎকার করার পাশাপাশি যখন লাফ দেওয়ার ভঙ্গি করে, তখন এর ফাঁক হওয়া ঠোঁট এবং আধ ছড়ানো ডানা মিলিয়ে ভয়ংকর এক দৃশ্যের অবতারণা হয়, যা তরুণ আলোকচিত্রীদের এই পাখির ছবি তোলার আগ্রহ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। 

পূর্ব আফ্রিকার জলাভূমি এলাকায় দেখা মেলে এই পাখিদের। ছবি: সান ডিয়াগো জুবিলুপ্তির ঝুঁকিতে
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকা অনুসারে পৃথিবীতে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৫ হাজার ৩০০ সুবিল টিকে আছে। এদের সংখ্যা দিনকে দিন কমছে। খামার স্থাপনের কারণে জলাভূমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়া, গবাদি পশু চরানো, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, দাবানল, দূষণ—এ সবকিছুই পাখিটির জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া কালোবাজারে চড়া দাম একে আরও ঝুঁকিতে ফেলেছে। বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া ও জাম্বিয়ার সুবিলের বিচরণ আছে এমন জায়গাগুলোতে পোচিং বন্ধে কাজ করছে। তবে এদের রক্ষায় আরও তৎপরতা জরুরি। 

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, মেন্টাল ফ্লস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত