যমুনা নদী

ভোরবেলায় জীবিকার সন্ধানে ছোটেন দিনমজুর স্বামী। সারা দিন শ্রম বেচে ফেরেন সন্ধ্যায়। এদিকে স্বামীকে বিদায় দিয়ে গৃহস্থালির কাজ শেষ করতেই বেজে যায় সকাল ১০টা। এ সময় হাতে তেমন কাজও থাকে না। তাই নারীরা ছোটেন বাড়তি আয়ের আশায় যমুনার দিকে। সঙ্গে একটি পাতিল। উদ্দেশ্য মাছ ধরা হলেও বড়শি বা জালের মতো তেমন কিছু...

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ নামের ওই প্রকল্পের জন্য যমুনা নদীর তীরে ৮৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

হঠাৎ করে সারা দেশের নদীর পাড়গুলোতে প্রচণ্ড ভাঙন শুরু হয়েছে। দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, সবদিক থেকেই ছোট-বড় অনেক নদীপাড়ের মানুষ ভাঙন-আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। হিমালয়ের পাদদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় সিকিম, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে বন্যা হওয়ার পর ছোট-বড় সব নদী দিয়ে ধেয়ে আসে সেই পান

সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি আরও ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টার সময় বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়

জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা নদীর পানি বাড়ছেই। এতে উপজেলার সাপধরী ইউনিয়ন যমুনার পানিতে টইটম্বুর। ডুবে গেছে সব রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শত শত একর রোপা আমনখেত, বীজতলা ও শাকসবজির খেত। তীব্র ভাঙনে ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অনেক বাড়িঘর। ভাঙনের মুখে রয়েছে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত ইন্দুল্লামার

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা-জামথল ঘাটে সি-ট্রাক চলাচল  ৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এর আগে ১২ আগস্ট থেকে ওই ঘাটে প্রতিদিন একবার করে 'শহীদ আবদুর রউফ সেরনিয়াবাত' নামে সি-ট্রাক চলাচল শুরু হয়। কিন্তু গত রোববার সেই সি-ট্রাকের ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ার পর থেকেই যাত্রী পারাপার বন্ধ আছে।   

কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েক দিন ধরেই যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা নদীর পানি। এতে যমুনা নদীর চরগুলোর বেশির ভাগই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

ফারাক্কা থেকে নেমে আসা পানিতে ভেসে যাচ্ছে পদ্মা। ভারী বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে যমুনাও এখন উপচে পড়া। এই দুই নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে শাখা নদীগুলোর ওপরও। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি বইছে কোথাও কোথাও। প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।

ছোট যমুনা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন জয়পুরহাট জেলার মোহাম্মেদাবাদ এবং আইমারসুলপুর ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন থেকে এলাকাবাসী দুর্ভোগে আছেন তাঁরা। 

চলছে বন্যা মৌসুম। যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। সমান তালে পানি বাড়ছে বড়াল, হুড়াসাগর, করতোয়া, গুমানী, আত্রাই নদীতেও। তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, চৌহালী, এনায়েতপুর, বেলকুচি, পাবনার বেড়া উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকার রাস্তাঘাট।

যমুনা নদীর ৩০০ ফিট উজানে ট্রেন চলাচলের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে মূল সেতুর পিয়ারের পাইলিং কাজ চলছে। করোনা সংক্রমণের কারণে প্রকল্পের কাজে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিদিনই প্রকল্পের কেউ না কেউ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পের সার্বিক কাজে

গাইবান্ধা সাঘাটা উপজেলার যমুনা নদীর ভাঙনে দুই শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর, বসতভিটা, শতাধিক বিঘা আবাদি জমি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে স্কুল, বাজার, শত শত একর আবাদি জমি, জনজীবনসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন কবলিত এলাকা রক্ষা করার চেষ্টা করছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলাতে যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। যমুনা নদীর করাল গ্রাসে ভিটে-মাটি নয়, একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষের স্বপ্ন। প্রতিদিনই যেন যমুনার করাল গ্রাস স্বপ্নগুলো টুকরো টুকরো করে খেয়ে ফেলছে