Ajker Patrika

একদা ব্যর্থ প্রযুক্তিই স্মার্টফোনের জায়গা দখল করবে, বলছে গুগল ও মেটা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, ১২: ২৪
গুগল–মেটার মতো কোম্পানিগুলো আগেও ক্যামেরা, স্পিকার ও ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টসহ চশমা তৈরি করেছিল। ছবি: গ্রোথ এক্স নিউজলেটার
গুগল–মেটার মতো কোম্পানিগুলো আগেও ক্যামেরা, স্পিকার ও ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টসহ চশমা তৈরি করেছিল। ছবি: গ্রোথ এক্স নিউজলেটার

এক দশক আগের গুগল গ্লাস ব্যর্থ হলেও প্রযুক্তি জগতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও স্মার্ট চশমার দিকে ঝুঁকছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন অনেক পরিণত এবং সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গুগল, মেটা, স্ন্যাপচ্যাটসহ বড় কোম্পানিগুলো নতুন প্রজন্মের স্মার্ট গ্লাস তৈরি করছে।

সম্প্রতি স্ন্যাপ ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২০২৬ সালে বাজারে আনছে এআইভিত্তিক স্মার্ট চশমা, যার নাম হতে পারে ‘স্পেক্স’। গুগল ও মেটা ইতিমধ্যে উন্নত সংস্করণের স্মার্ট চশমা নিয়ে কাজ করছে। এই নতুন প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে প্রযুক্তির বিশ্বে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্মার্টফোনের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়া এবং এআইকে কেন্দ্র করে নতুন ধরনের হার্ডওয়্যার তৈরির আগ্রহ থেকেই স্মার্ট গ্লাস নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।

নতুন ধাঁচের স্মার্ট চশমা

স্মার্ট চশমার ধারণা একেবারে নতুন নয়। গুগল, মেটা, স্ন্যাপ ও আমাজনের মতো কোম্পানিগুলো আগেও ক্যামেরা, স্পিকার ও ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টসহ চশমা তৈরি করেছিল। তবে সেগুলো স্মার্টফোনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি।

২০১৩ সালেই স্মার্ট গ্লাস নিয়ে আসে গুগল। তবে এই গ্লাসের স্ক্রিন ছিল ছোট, ব্যাটারি লাইফ কম আর দাম বেশি। ফ্যাশনের সঙ্গে মানানসই না হওয়াতেও জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে আধুনিক স্মার্ট চশমাগুলো অনেক বেশি পরিপক্ব।

উদাহরণস্বরূপ, গুগলের প্রোটোটাইপ স্মার্ট গ্লাসে ব্যবহারকারী চশমার সাহায্যে তাকানো বোতল দেখে জেমিনি এআই অ্যাসিস্ট্যান্টের কাছে ককটেল আইডিয়া জানতে পারেন। এমনকি চশমা মনে রাখতে পারে আপনি কী দেখেছেন এবং পরে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।

মেটার রে-বেন মেটা এআই গ্লাসে ব্যবহারকারী জানতে পারেন, দোকানে থাকা মরিচটি ঝাল কি না বা চোখের সামনে থাকা কথোপকথনের তাৎক্ষণিক অনুবাদও করতে পারেন। মেটা রে-বেনের মূল কোম্পানি এসিলরলুকসোটিকা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে ইতিমধ্যে ২০ লাখ ইউনিট বিক্রি হয়েছে।

এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবিআই রিসার্চের পরিচালক অ্যান্ড্রু জিগনানি বলেন, ‘আগে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হলেও এখন কিছু কার্যকর ধারণা বাজারে এসেছে।’

এবিআই রিসার্চ বলছে, ২০২৪ সালে ৩৩ লাখ ইউনিট স্মার্ট গ্লাস বাজারজাত হলেও ২০২৬ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হবে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখে। আন্তর্জাতিক ডেটা করপোরেশন (আইডিসি) বলছে, মেটার মতো স্মার্ট গ্লাস ২০২৫ সালে ৮৮ লাখ থেকে ২০২৬ সালে ১ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছাবে।

এই গ্লাসের স্ক্রিন ছিল ছোট, ব্যাটারি লাইফ কম আর দাম বেশি। ছবি: সংগৃহীত
এই গ্লাসের স্ক্রিন ছিল ছোট, ব্যাটারি লাইফ কম আর দাম বেশি। ছবি: সংগৃহীত

বাজারে যা আনছে কোম্পানিগুলো

স্ন্যাপ তাদের চশমার ব্যাপারে বিস্তারিত জানায়নি। তবে বলেছে, এই চশমা ‘চারপাশের বিশ্বকে বুঝতে পারবে।’

কোম্পানিটি জানায়, ‘ছোট স্মার্টফোন আমাদের কল্পনাকে সীমিত করেছে। আমাদের নিচের দিকে তাকাতে হয়েছে স্ক্রিনে, ওপরের দিকে নয়।’

এদিকে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, অ্যাপলও নাকি এমন স্মার্ট চশমা নিয়ে কাজ করছে, যেটি আগামী বছর বাজারে আসবে এবং মেটার চশমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

আমাজনের ডিভাইস বিভাগের প্রধান পানোস প্যানায় জানিয়েছেন, তারা ক্যামেরাযুক্ত আলেক্সা চশমা নিয়ে ভাবছেন, যা মেটার মতো হতে পারে।

এদিকে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি ও গুগলের জেমিনি অ্যাপ ইতিমধ্যে ফোনের ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে চারপাশ বিশ্লেষণ করে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। ওপেনএআই তাদের প্রযুক্তি অ্যাপল ডিজাইনার জনি আইভের সঙ্গে মিলে একটি নতুন ডিভাইসও আনছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

গত বছর স্মার্টগ্লাস ওরিওন উন্মোচন করে মেটা। ছবি: সংগৃহীত
গত বছর স্মার্টগ্লাস ওরিওন উন্মোচন করে মেটা। ছবি: সংগৃহীত

গুগল ঘোষণা দিয়েছে, তারা সার্চ অ্যাপে আরও বেশি ক্যামেরাভিত্তিক ব্যবহার চালু করবে। অ্যাপল তাদের ভিজ্যুয়াল ইন্টেলিজেন্স টুলে এমন সুবিধা দিয়েছে, যেখানে ফোনের স্ক্রিন বা আশপাশের জিনিস দেখে প্রশ্ন করা যাবে।

মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ বলেন, ‘ভবিষ্যতে কনটেন্ট ব্যবহারের মূল মাধ্যম হবে এআই এবং স্মার্ট গ্লাস ও হলোগ্রামের মতো প্রযুক্তি।’

স্মার্ট গ্লাসের পথে প্রধান বাধা—ব্যক্তিগত গোপনীয়তা। গুগল গ্লাসের ব্যর্থতার অন্যতম কারণই ছিল এটি। যদিও মেটা ও গুগলের গ্লাসে রেকর্ডিং চলাকালে লাইট জ্বলে ওঠে। তবে এই ফিচার থাকার পরও লোকজনের আশঙ্কা থেকেই যায়।

আরেকটি চ্যালেঞ্জ—এমন পণ্য বিক্রি করা, যা প্রতিদিন মুখে পরে থাকতে যাদের চোখের সমস্যা নেই বা চশমা পরার প্রয়োজন হয় না, তাদের কাছে এই প্রযুক্তি কতটা প্রাসঙ্গিক হবে—সেটাও একটি বড় প্রশ্ন।

মূল্যও বড় একটি বিষয়। মেটার রে-বেন গ্লাসের দাম প্রায় ৩০০ ডলার, যা একটি স্মার্টওয়াচের সমান। যদিও অ্যাপলের ভিশন প্রোর মতো হেডসেটের তুলনায় তা অনেক সস্তা, তবু এটি অনেকের জন্য বাড়তি খরচ।

ডেটা বলছে, স্মার্টওয়াচের বিক্রি কমছে। চলতি বছরের মার্চে গ্লোবাল স্মার্টওয়াচ শিপমেন্টে প্রথমবারের মতো পতন দেখা গেছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মানুষের আগ্রহ কমছে।

তবু বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে বিনিয়োগ করতে রাজি। কারণ তারা নিশ্চিত হতে চায়—যদি স্মার্টফোনের স্থলাভিষিক্ত হয় স্মার্ট গ্লাস, তারা যেন সেই সুযোগ হাতছাড়া না করে।

আইডিসি বিশ্লেষক জিতেশ উব্রানি বলেন, ‘স্মার্টফোন আজ বা কাল নয়, অনেক বছর পর হয়তো স্মার্ট চশমা বা অনুরূপ কোনো প্রযুক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপিত হবে। তাই কোম্পানিগুলো এখনই প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত