Ajker Patrika

ধৈর্য ও দক্ষতায় ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাফল্য আসে

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯: ৩৯
Thumbnail image

দেশে প্রায় ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করেন। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। আহমাদুল বশির রবিনরকি রায় সফল দুই তরুণ ফ্রিল্যান্সার। তাঁরা শুনিয়েছেন তাঁদের সাফল্যের গল্প। পাশাপাশি নতুনদের জন্য দিয়েছেন বিভিন্ন পরামর্শ। লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

দক্ষতা ও ধৈর্য সাফল্য আনে : আহমাদুল বশির রবিন 
আহমাদুল বশির রবিন (এ বি রবিন) ২০১৭ সালে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। বর্তমানে ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছেন। মাসে তাঁর আয় লাখ টাকার বেশি। ২০১৯ সাল থেকে তিনি কোডম্যানবিডি আইটি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি ওয়েব ডিজাইন ব্যাচের মেন্টর। এ পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সিংয়ে তাঁর মোট আয় ৫০ হাজার ডলারের বেশি।

বরিন এমসিইটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রনিকস বিভাগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন ২০১৫ সালে। ২০২৩ সালে বেস্ট এডু-টেক মেন্টর হিসেবে রাইজিং ইয়ুথ পুরস্কার পান। ফাইবারে লেভেল ২ এবং আপওয়ার্কে টপ রেটেড সেলার রবিন। 

তরুণদের কাজ না পাওয়ার কারণ
প্রধানত দুটো কারণ আছে এ ক্ষেত্রে। এক. ভালোভাবে না শেখা এবং দুই. দ্রুত সাফল্য খোঁজা।

রবিন জানান, যিনি শিখিয়েছেন, তিনি কতটুকু জানেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে মেন্টরদের ভালো জানাশোনা না থাকলে শিক্ষার্থীদের সঠিক পথ দেখাতে পারবেন না। আর যাঁরা অল্প সময়ে সাফল্য পেতে চান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরাই ব্যর্থ হন। মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ পেতে হলে ভালোভাবে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

যেসব বিষয়ে দক্ষতা দরকার 
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সর্বাধিক চাহিদার কিছু কাজ হচ্ছে ওয়েব ডিজাইন, ওয়াডপ্রেস, ওয়েব প্রোগ্রামিং, জাভা স্ত্রিপ্ট, সিএসএস, এইচটিএমএল, পিএইচপি, এপিআই, গ্রাফিক ডিজাইন করা। যাঁরা মার্কেটিং ও কাস্টমার সার্ভিস সেক্টরে আছেন, তাঁরা এগুলো থেকে যেকোনো একটি স্কিল বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, এসইও, বিটুবি মার্কেটিং, ইনস্টাগ্রাম, মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, ই-মেইল মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষ মানুষদেরও চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে।

চটকদার বিজ্ঞাপন থেকে দূরে থাকুন : রকি রায়
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস রকি রায়ের ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা ২০১৯ সালে। তিনি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প থেকে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কোর্স করেন। রকি সব সময় অনলাইনে আয় করার চেয়ে দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসার অল্প কিছুদিনের মধ্যে রকি ৫ ডলারের কাজ পান। এরপর পেছন ফিরে তাকাননি তিনি। বাসায় বসে তিনি এখন মাসে লাখ দেড়েক টাকা আয় করেন। এক মাসে তিনি সর্বোচ্চ চার লাখ টাকার বেশি আয় করেছেন। মার্কেটোগাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি। ১০ জনের বেশি লোক সেখানে কাজ করেন।

রকি রায়রকি মূলত অনলাইনে সেলিব্রিটিদের খ্যাতি বাড়ানোসংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ করেন। এগুলোর মধ্যে আছে গুগল নলেজ প্যানেল তৈরি, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ভেরিফিকেশন, আর্টিকেল পাবলিশ করাসহ বিভিন্ন ডিজিটাল মার্কেটিং। দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান, ইউটিউবার আর এস ফাহিম চৌধুরী, টেক ইউটিউবার সোহাগ৩৬০, ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক অ্যাথলেট কোবিয়া ব্রীডি, স্কাইডাইভিং অ্যাথলেট ফ্রাঙ্ক মায়ারসহ শতাধিক সেলিব্রিটির সঙ্গে কাজ  করেছেন তিনি। ২০২১ সালে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং সিলেট বিভাগের একটি ব্যাচের টপ আর্নার ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হন তিনি।

লাখোপতি হতে চাইলে
ফ্রিল্যান্সিংয়ে লাখ টাকা আয় করা যায়। তবে এটা এক বা দুদিনে হয় না বলে মনে করেন রকি। তিনি জানিয়েছেন, যেকোনো কাজে প্রথমে দক্ষ হতে হবে। দক্ষতা অর্জনের জন্য ইউটিউব, গুগলের সাহায্য নেওয়া যেতেই পারে। তবে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শিখে নিলে দ্রুত সাফল্য পাওয়া সম্ভব। 

তরুণেরা কেন ঝরে পড়ে
অনেক আগ্রহ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগতে আসা তরুণ-তরুণীদের অধিকাংশই অল্প দিনে ঝরে পড়েন। এর কারণ হিসেবে রকি দক্ষতা ও ধৈর্যের অভাবকে দায়ী করেন। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি আন্তর্জাতিক। এখানে শুধু দক্ষতা দিয়ে আয় করা সম্ভব। 

সতর্ক থাকুন
ইউটিউব কিংবা ফেসবুকে কিছু কোর্স করলেই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব—এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের বিষয়ে নতুনদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন রকি। তিনি মনে করেন, কোর্স করলেই সব হবে না। পাশাপাশি দিনের পর দিন নিজের লেগে থাকতে হবে। কোর্স যাঁরা করান, তাঁরা পথ দেখান। কিন্তু সেই পথে এগিয়ে গন্তব্যে পৌঁছার দায়িত্ব নিজের।

সাফল্য পেতে করণীয়
সাফল্য কখনোই এমনি এমনি ধরা দেয় না। প্রত্যেক সফল মানুষের সাফল্যের নেপথ্যে কিছু গোপন বিষয় থাকে যেটা তাঁকে এগিয়ে রাখে অন্যদের চেয়ে। রকিরও তেমনি কিছু সিক্রেট আছে। তিনি ক্লায়েন্ট প্রজেক্টের বর্ণনায় মূলত কী বলেছে বা কী চেয়েছে, সেটা ভালোভাবে দুই থেকে তিনবার পড়েন। এরপর সংক্ষিপ্ত করে সেই বিষয়ের ওপর ক্লায়েন্টকে প্রস্তাব দেন। কপি ও পেস্ট প্রপোজাল দেন না তিনি। ক্লায়েন্ট তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁকে ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তিনি কাজটি বুঝতে পেরেছেন এবং তাঁকে কাজ দিলে সময়মতো কাজ বুঝিয়ে দেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত