নাহিদ ইসলাম
২০২০ সালের গোড়ার দিকে যখন কভিড–১৯ দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ সংকট চলছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও ট্যাবের মতো পার্সোনাল কম্পিউটিং ডিভাইস থেকে শুরু করে সব ধরনের কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক পণ্য, সিকিউরিটি ক্যামেরা, বৈদ্যুতিক গাড়ি এমনকি উড়োজাহাজ ও মহাকাশযানেও নানা ধরনের চিপ প্রয়োজন হয়। অতিমারির ভয়ে যখন কলকারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট সব বন্ধ করে আমরা সপরিবারে ঘরবন্দী হলাম, তখন সব ধরনের পণ্য উৎপাদন প্রায় স্থবির হয়ে গেল। এর প্রভাব পড়ল সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ ব্যবস্থার ওপরেও।
সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে অসংখ্য উপকরণ প্রয়োজন হয়। আর এগুলোর একেকটি তৈরি হয় পৃথিবীর একেক দেশে। সেমিকন্ডাক্টর তৈরির কাঁচামাল বেশি পরিমাণে আসে চীন থেকে। তাই যখন চীন কভিডের আঘাতে জর্জরিত, শিপিংসহ সব পরিবহন স্তব্ধ তখন সেমিকন্ডাক্টরের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এই সংকটের পেছনে একটি কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিমারির সময় রিমোট ওয়ার্ক নীতি গ্রহণ করা। ঘরে বসে সব কাজ আর পড়াশোনা করার জন্য সবারই একটু ভালো পারফরম্যান্সের পিসি প্রয়োজন হয়। ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ট্যাব ইত্যাদি সব পার্সোনাল কম্পিউটিং পণ্যের চাহিদা হুট করে বেড়ে যায়। তার পাশাপাশি চাহিদা বাড়ে ইন্টারনেটের জন্য রাউটারের, বিনোদনের জন্য স্মার্ট টিভি, গেমিং কনসোলসহ সব ইলেকট্রনিক পণ্যেরই।
বর্তমানে যেহেতু প্রায় সব শিল্পপণ্যেই ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে তাই, সেমিকন্ডাক্টরের জোগান ব্যাহত হওয়ার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রায় সব ধরনের শিল্প খাতে। তার মাঝে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চারটি খাত।
গাড়ি নির্মাণ শিল্প
যদিও গাড়ির কথা ভাবতে গেলে আমাদের প্রথমেই মনে পড়ে ইঞ্জিনের গর্জন আর টায়ারের স্কিড মার্ক, তবে অনেক বছর ধরেই গাড়ি নির্মাণ শিল্পে সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। শুধু ইলেকট্রিক কার নয়, ডিজেল-পেট্রল ইঞ্জিনের গাড়িতেও যত রকমের এন্টারটেইনমেন্ট আর নেভিগেশনের জন্য ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ আছে, তার সবকিছুতেই সেমিকন্ডাক্টর প্রয়োজন। চিপ সংকটে তাই গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলির দুরবস্থা শুরু হয় ২০২০–এর শেষ ভাগ থেকেই।
কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক
বলার অপেক্ষা রাখে না যে চিপের অভাবে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শিল্প খাতে উৎপাদন কতটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্যামসাংয়ের মতো ব্র্যান্ড পর্যন্ত স্ন্যাপড্রাগন আর এক্সিনসের বাইরে গিয়ে, নানা রকম হাসি তামাশার উপাদান হিসেবে খ্যাত কিছু ব্র্যান্ডের এসওসি ব্যবহার করে তাদের স্মার্টফোন বাজারে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। গ্যালাক্সি ফোনে এসব চিপ দেখে অনেক গ্রাহকের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার আগেই, দাম শুনে তারা কুপোকাত হয়েছেন।
এলইডি প্যানেল
শুধু স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেই নয়, কোরীয় কোম্পানি স্যামসাং তাদের বিশ্বসেরা এলইডি প্যানেল তৈরির ক্ষেত্রেও অনেক বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছে। একই দশায় আছে আরেক কোরীয় ব্র্যান্ড এলজি। চীনের টিসিএল, জাপানের সনি সবার জন্যই বর্ধিত চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন বাড়ানো ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ। অবশ্য এলইডি প্যানেল শিল্পে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই প্রয়োজনীয় চিপ খুব বড় আকারে স্টক করে রাখার কারণে তাদের ওপর প্রভাবটা কম পড়েছে।
রিনিউয়েবল এনার্জি
শুধু সোলার প্যানেলে সৌর শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তির রূপান্তর নয়, বায়ু কিংবা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনেও টারবাইনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন হয় হরেক রকম স্মার্ট মেশিন। আর এ সবকিছুর জন্য চাই সেমিকন্ডাক্টর। এই খাতেও বেশ ভালো রকমের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
হুট করে সৃষ্টি হওয়া এই চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতার সংকট সামলে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে দুনিয়ার তাবৎ নামকরা চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের। সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে সবার চেয়ে এগিয়ে টিএসএমসি। অ্যাপল, ইন্টেল, স্ন্যাপড্রাগন, মিডিয়াটেক, এএমডি, ইউনি এসওসিসহ হেন কোনো নামকরা কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ড নেই যাদের জন্য এই তাইওয়ান ভিত্তিক কোম্পানিটি চিপ প্রস্তুত করে না। হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আগে, হাইসিলিকন কিরিন প্রসেসরগুলোও টিএসএমসি থেকেই আসত। টিএসএমসির পদস্থ ব্যক্তিরা গত বছর আশঙ্কা করছিলেন, চিপ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। তবে সম্প্রতি ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, টিএসএমসির প্রধান জানিয়েছেন যে,২০২৩ সালের মাঝেই চিপ সংকট অনেকটা কমে আসবে।
ভিন্ন কথা বলছে আরেক বড় চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেল। সিএনিবিসি–তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইন্টেলের সিইও প্যাট্রিক পি জেলসিংগার জানিয়েছেন, চিপ নিয়ে এই সংকট ২০২৩–এর মধ্যে সমাধান হওয়ার নয়। জার্মান গাড়ি নির্মাতা ফক্সওয়্যাগন, এই কথার সঙ্গে একমত। তবে আশার কথা শুনিয়েছে বিশ্বখ্যাত সুইডিশ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এবিবি-র চেয়ারম্যান পিটার ভোসের। তাঁর মতে, শিল্প খাতে ব্যবহৃত চিপের সরবরাহ আর জোগানে ভারসাম্য চলে আসবে এই বছরের শেষ নাগাদ। এই প্রত্যাশা ভিত্তিহীন নয়, কারণ দুনিয়াজুড়ে চিপ উৎপাদনকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিয়েছে উৎপাদন বাড়াবার জন্য। ইন্টেল, টিএসএমসি এবং টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্ট্স মিলে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট নির্মাণে। এই প্ল্যান্টগুলো বছরের শেষ দিকে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পিছিয়ে নেই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সরকারগুলোও। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৫২ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি বরাদ্দ করেছে সেমিকন্ডাক্টর গবেষণা ও উৎপাদনের জন্য। এ ছাড়া নতুন চিপ তৈরির কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে কর রেয়াত সুবিধা দিতে ২৪ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহের ক্ষেত্রে, নিজেদের অংশীদারত্ব ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘দি চিপস অ্যাক্ট’ এর খসড়া বিল পাস করেছে। গবেষণা ও উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ইউরোপের সক্ষমতা বাড়াতে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ইউরো তারা ধাপে ধাপে ব্যয় করবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার নিজ দেশের সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রির জন্য ৪৫০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে প্রস্তুত। আর জাপানের সরকার টিএসএমসি এবং নিজ দেশের সনি কোম্পানির সঙ্গে মিলে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ একটি নতুন সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করতে যাচ্ছে।
এত এত রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি খাতের উদ্যোগের ফলে আশা করা যায়, এ বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর চিপের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের অনেকটা ভারসাম্য ফিরে আসবে। তবে সাপ্লাই চেইন সংক্রান্ত সমস্যা কতটা দূর হবে তা নির্ভর করছে জ্বালানি ও পরিবহন শিল্পের ওপর।
২০২০ সালের গোড়ার দিকে যখন কভিড–১৯ দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ সংকট চলছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও ট্যাবের মতো পার্সোনাল কম্পিউটিং ডিভাইস থেকে শুরু করে সব ধরনের কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক পণ্য, সিকিউরিটি ক্যামেরা, বৈদ্যুতিক গাড়ি এমনকি উড়োজাহাজ ও মহাকাশযানেও নানা ধরনের চিপ প্রয়োজন হয়। অতিমারির ভয়ে যখন কলকারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট সব বন্ধ করে আমরা সপরিবারে ঘরবন্দী হলাম, তখন সব ধরনের পণ্য উৎপাদন প্রায় স্থবির হয়ে গেল। এর প্রভাব পড়ল সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ ব্যবস্থার ওপরেও।
সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে অসংখ্য উপকরণ প্রয়োজন হয়। আর এগুলোর একেকটি তৈরি হয় পৃথিবীর একেক দেশে। সেমিকন্ডাক্টর তৈরির কাঁচামাল বেশি পরিমাণে আসে চীন থেকে। তাই যখন চীন কভিডের আঘাতে জর্জরিত, শিপিংসহ সব পরিবহন স্তব্ধ তখন সেমিকন্ডাক্টরের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এই সংকটের পেছনে একটি কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিমারির সময় রিমোট ওয়ার্ক নীতি গ্রহণ করা। ঘরে বসে সব কাজ আর পড়াশোনা করার জন্য সবারই একটু ভালো পারফরম্যান্সের পিসি প্রয়োজন হয়। ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ট্যাব ইত্যাদি সব পার্সোনাল কম্পিউটিং পণ্যের চাহিদা হুট করে বেড়ে যায়। তার পাশাপাশি চাহিদা বাড়ে ইন্টারনেটের জন্য রাউটারের, বিনোদনের জন্য স্মার্ট টিভি, গেমিং কনসোলসহ সব ইলেকট্রনিক পণ্যেরই।
বর্তমানে যেহেতু প্রায় সব শিল্পপণ্যেই ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে তাই, সেমিকন্ডাক্টরের জোগান ব্যাহত হওয়ার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রায় সব ধরনের শিল্প খাতে। তার মাঝে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চারটি খাত।
গাড়ি নির্মাণ শিল্প
যদিও গাড়ির কথা ভাবতে গেলে আমাদের প্রথমেই মনে পড়ে ইঞ্জিনের গর্জন আর টায়ারের স্কিড মার্ক, তবে অনেক বছর ধরেই গাড়ি নির্মাণ শিল্পে সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। শুধু ইলেকট্রিক কার নয়, ডিজেল-পেট্রল ইঞ্জিনের গাড়িতেও যত রকমের এন্টারটেইনমেন্ট আর নেভিগেশনের জন্য ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ আছে, তার সবকিছুতেই সেমিকন্ডাক্টর প্রয়োজন। চিপ সংকটে তাই গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলির দুরবস্থা শুরু হয় ২০২০–এর শেষ ভাগ থেকেই।
কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক
বলার অপেক্ষা রাখে না যে চিপের অভাবে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শিল্প খাতে উৎপাদন কতটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্যামসাংয়ের মতো ব্র্যান্ড পর্যন্ত স্ন্যাপড্রাগন আর এক্সিনসের বাইরে গিয়ে, নানা রকম হাসি তামাশার উপাদান হিসেবে খ্যাত কিছু ব্র্যান্ডের এসওসি ব্যবহার করে তাদের স্মার্টফোন বাজারে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। গ্যালাক্সি ফোনে এসব চিপ দেখে অনেক গ্রাহকের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার আগেই, দাম শুনে তারা কুপোকাত হয়েছেন।
এলইডি প্যানেল
শুধু স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেই নয়, কোরীয় কোম্পানি স্যামসাং তাদের বিশ্বসেরা এলইডি প্যানেল তৈরির ক্ষেত্রেও অনেক বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছে। একই দশায় আছে আরেক কোরীয় ব্র্যান্ড এলজি। চীনের টিসিএল, জাপানের সনি সবার জন্যই বর্ধিত চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন বাড়ানো ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ। অবশ্য এলইডি প্যানেল শিল্পে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই প্রয়োজনীয় চিপ খুব বড় আকারে স্টক করে রাখার কারণে তাদের ওপর প্রভাবটা কম পড়েছে।
রিনিউয়েবল এনার্জি
শুধু সোলার প্যানেলে সৌর শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তির রূপান্তর নয়, বায়ু কিংবা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনেও টারবাইনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন হয় হরেক রকম স্মার্ট মেশিন। আর এ সবকিছুর জন্য চাই সেমিকন্ডাক্টর। এই খাতেও বেশ ভালো রকমের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
হুট করে সৃষ্টি হওয়া এই চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতার সংকট সামলে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে দুনিয়ার তাবৎ নামকরা চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের। সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে সবার চেয়ে এগিয়ে টিএসএমসি। অ্যাপল, ইন্টেল, স্ন্যাপড্রাগন, মিডিয়াটেক, এএমডি, ইউনি এসওসিসহ হেন কোনো নামকরা কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ড নেই যাদের জন্য এই তাইওয়ান ভিত্তিক কোম্পানিটি চিপ প্রস্তুত করে না। হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আগে, হাইসিলিকন কিরিন প্রসেসরগুলোও টিএসএমসি থেকেই আসত। টিএসএমসির পদস্থ ব্যক্তিরা গত বছর আশঙ্কা করছিলেন, চিপ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। তবে সম্প্রতি ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, টিএসএমসির প্রধান জানিয়েছেন যে,২০২৩ সালের মাঝেই চিপ সংকট অনেকটা কমে আসবে।
ভিন্ন কথা বলছে আরেক বড় চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেল। সিএনিবিসি–তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইন্টেলের সিইও প্যাট্রিক পি জেলসিংগার জানিয়েছেন, চিপ নিয়ে এই সংকট ২০২৩–এর মধ্যে সমাধান হওয়ার নয়। জার্মান গাড়ি নির্মাতা ফক্সওয়্যাগন, এই কথার সঙ্গে একমত। তবে আশার কথা শুনিয়েছে বিশ্বখ্যাত সুইডিশ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এবিবি-র চেয়ারম্যান পিটার ভোসের। তাঁর মতে, শিল্প খাতে ব্যবহৃত চিপের সরবরাহ আর জোগানে ভারসাম্য চলে আসবে এই বছরের শেষ নাগাদ। এই প্রত্যাশা ভিত্তিহীন নয়, কারণ দুনিয়াজুড়ে চিপ উৎপাদনকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিয়েছে উৎপাদন বাড়াবার জন্য। ইন্টেল, টিএসএমসি এবং টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্ট্স মিলে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট নির্মাণে। এই প্ল্যান্টগুলো বছরের শেষ দিকে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পিছিয়ে নেই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সরকারগুলোও। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৫২ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি বরাদ্দ করেছে সেমিকন্ডাক্টর গবেষণা ও উৎপাদনের জন্য। এ ছাড়া নতুন চিপ তৈরির কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে কর রেয়াত সুবিধা দিতে ২৪ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহের ক্ষেত্রে, নিজেদের অংশীদারত্ব ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘দি চিপস অ্যাক্ট’ এর খসড়া বিল পাস করেছে। গবেষণা ও উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ইউরোপের সক্ষমতা বাড়াতে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ইউরো তারা ধাপে ধাপে ব্যয় করবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার নিজ দেশের সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রির জন্য ৪৫০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে প্রস্তুত। আর জাপানের সরকার টিএসএমসি এবং নিজ দেশের সনি কোম্পানির সঙ্গে মিলে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ একটি নতুন সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করতে যাচ্ছে।
এত এত রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি খাতের উদ্যোগের ফলে আশা করা যায়, এ বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর চিপের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের অনেকটা ভারসাম্য ফিরে আসবে। তবে সাপ্লাই চেইন সংক্রান্ত সমস্যা কতটা দূর হবে তা নির্ভর করছে জ্বালানি ও পরিবহন শিল্পের ওপর।
যখন ডিপসিকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি পুরো বিশ্বের নজর কাড়ছে, তখন একটি পুরোনো জাপানি ধারণা আবার আলোচনায় উঠে এসেছে। আর সেটি হলো ‘কাইজেন’। এর অর্থ অবিচ্ছিন্ন উন্নতি। আজকাল কাইজেনের ধারণাটি শুধু জাপান নয়, চীনের জন্যও শক্তিশালী এক কৌশল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। পশ্চিমা বিশ্বের জন্য এটি উদ্বেগ
১৩ ঘণ্টা আগেআগামী ৪ মার্চ নতুন পণ্য উন্মোচনের ঘোষণা দিয়েছে লন্ডন ভিত্তিক স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি নাথিং। সেই ইভেন্টে ‘নাথিং ফোন ৩ এ’ এবং ‘ফোন ৩এ প্রো’ উন্মোচন করা হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ফোন দুটি সম্পর্কে কোনো তথ্য না দিলেও কোম্পানিটির সম্ভাব্য মডেলের ছবি অনলাইনে ফাঁস হয়ে গেছে। এই ছবি
১৮ ঘণ্টা আগেচীনের ডিপসিকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেলগুলো নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন অ্যাপলের সিইও টিম কুক। তাঁর মতে, মডেলটি ‘দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্ভাবন’ হিসেবে কাজ করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার সময় কুক এই মন্তব্য করে।
২০ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের জন্য আলোচনা করছে জাপানের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সফটব্যাংক। নতুন বিনিয়োগের ফলে ওপেনএআই–এর মোট বাজারমূল্য ৩০০ বিলয়ন ডলার হবে। এই আলোচনা সফল হলে, এটি একক ফান্ডিং রাউন্ডে সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ
২০ ঘণ্টা আগে