Ajker Patrika

ব্যবহারকারীর অবৈধ পোস্টের দায় নিতে হবে সোশ্যাল মিডিয়াকেই: ব্রাজিলের সুপ্রিম কোট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব নির্ধারণে একটি অভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: র‍্যাপলার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব নির্ধারণে একটি অভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: র‍্যাপলার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহারকারীদের করা অবৈধ পোস্টের জন্য সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলোকে দায়ী করার পক্ষে মত দিয়েছেন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের অধিকাংশ বিচারপতি। এটি শুধু ব্রাজিল নয়, পুরো লাতিন আমেরিকার জন্য একটি নজিরবিহীন এবং দিকনির্দেশক রায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায়ের সম্ভাব্য প্রভাব শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ পরিমণ্ডলেই নয়, যুক্তরাষ্ট্র-ব্রাজিল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপরও পড়তে পারে।

দুটি ভিন্ন মামলার রায়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব নির্ধারণে একটি অভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট। অনলাইনে প্রতারণা, শিশু পর্নোগ্রাফি ও কিশোরদের সহিংসতার মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমালোচকেরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হুমকিতে পড়তে পারে। কারণ, এতে প্ল্যাটফর্মগুলো আগেভাগেই সম্ভাব্য বিতর্কিত কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে পারে।

ব্যবহারকারীর অবৈধ পোস্টের দায়ভার সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর বর্তাবে কি না, তার পক্ষে ও বিপক্ষে ব্রাজিলে ভোট গ্রহণ শুরু হয় গতকাল বুধবার। বিচারপতি গিলমার মেন্ডেস সুপ্রিম কোর্টের ১১ জন বিচারপতির মধ্যে ষষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে রায়ের পক্ষে ভোট দেন। তাঁর এই ভোটের ফলে মেটা, এক্স (সাবেক টুইটার), মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর পোস্টের জন্য মামলা করা ও জরিমানা করার পথ সহজ হয়ে গেল।

রায় ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সেন্সরশিপে জড়িত বিদেশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দেন। এমন একজন আলোচিত ব্যক্তি হলেন ব্রাজিলের বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরায়েস, যিনি কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্রাজিলের আইন অমান্যের অভিযোগে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

এ পর্যন্ত কেবল বিচারপতি আন্দ্রে মেন্ডোসা এই রায়ের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সরকারের, রাজনৈতিক এলিটদের ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে।’

প্রথম ভোটদানকারী বিচারপতি ফ্লাভিও ডিনো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের স্কুলে হামলার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে উসকানির ফল। তিনি সে সময় এক ব্যবহারকারীর পোস্ট পড়ে শোনান, ওই ব্যবহারকারী বলেছিলেন, ‘মৃত শিশুদের পরিবারকে কাঁদতে, রক্ত ঝরাতে ও মরতে দেখে আমি আনন্দ পাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠ করার চেয়ে মানবতার খারাপ দিককেই উসকে দিয়েছে।’

ভোট সম্পন্ন ও রায়ের ফল প্রকাশের পর এই প্রস্তাব আইন হিসেবে কার্যকর হবে। তবে ব্রাজিলের কংগ্রেস চাইলে পরবর্তীকালে নতুন আইন পাস করে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারবে।

বর্তমান আইনে বলা হয়েছে, কোনো ক্ষতিকর কনটেন্ট আদালতের নির্দেশের পরেও অপসারণ না করলে তবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো দায়ী হবে।

২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর সমর্থকেরা কংগ্রেস, প্রেসিডেনশিয়াল প্রাসাদ ও সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালানোর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের আলোচনা জোরদার হয়।

ব্রাজিলের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় গেটুলিও ভারগাস ফাউন্ডেশনের আইনের অধ্যাপক আলভারো পালমা দে জর্জ বলেন, ‘প্ল্যাটফর্মগুলোকে অবশ্যই আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে, শুধু আদালতের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করে থাকলে হবে না।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে ব্রাজিল।

তবে এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ব্রাজিলিয়ান চেম্বার অব ডিজিটাল ইকোনমি। তারা বলেছে, ‘এ ধরনের দায়বদ্ধতা কেবল বড় কোম্পানিগুলোকেই সুবিধা দেবে, যাদের শক্তিশালী আইনি কাঠামো আছে। এতে ছোট, স্থানীয় কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং উদ্ভাবনের পথ রুদ্ধ হবে।’

তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও এপি নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

যমুনা রেলসেতুর পিলারে ফাটল, কর্তৃপক্ষ বলছে গঠনগত কোনো সমস্যা নয়

এলাকার খবর
Loading...